You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ২৬শে সেপ্টেম্বর, শুক্রবার, ১১ই আশ্বিন, ১৩৮০

আজ বিমান বাহিনী দিবস

স্বাধীনতা সংগ্রামের সে দুর্যোগময় দিনগুলোর শেষের দিকে ২৮শে সেপ্টেম্বর সামান্য কিছু উপকরণ নিয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠিত হয়। সেই ক্ষুদে বিমান বাহিনী কিন্তু আমাদের মুক্তি সংগ্রামে কোন ক্ষুদ্র ভূমিকা গ্রহণ করেনি। ৩রা ডিসেম্বর আকাশ যুদ্ধে শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে সহায়ক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী অপরিসীম বীরত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। সেই শুরু। ৩রা ডিসেম্বর থেকে ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন পর্যন্ত শত্রুবাহিনীর ওপর তীব্র থেকে তীব্রতর হামলা চালিয়ে এসেছে তারা।
প্রতিষ্ঠার দু’বছর পর আজ ২৮শে ডিসেম্বর উদযাপিত হচ্ছে বিমান বাহিনী দিবস। দু’বছরে অনেক উন্নতি হয়েছে বাহিনীর। এখন তাদের হাতে রয়েছে সর্বাধুনিক সব উপকরণ। সুপারসনিক মিগ-২১ জঙ্গী বিমান বহর, এ্যলভেট ও এমন আই-৮ হেলিকপ্টার বহর, এবং ই, এন-২৬ বিমানে সজ্জিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনী বর্তমানে আমাদের আকাশসীমা রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর মতো জাগ্রত।
বস্তুতঃ একটা বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক অবস্থা যখন সারাদেশের প্রগতি এবং সমৃদ্ধির পথে চ্যালেঞ্জ তখন এত স্বল্প সময়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এমন শক্তি এবং উপকরণ সত্যিই বিস্ময়কর। এ ব্যাপারে মিত্র দেশ সমূহের সাহায্য এবং সহযোগিতার কথা উল্লেখ না করলে ভুল করা হবে। বিমান বাহিনী দিবস উপলক্ষে এয়ার ভাইস মার্শাল সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গড়ে তোলার ব্যাপারে প্রথম থেকেই সাহায্য এবং সহযোগিতা জুগিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, আমরা যেভাবে বিমানবাহিনীকে গড়ে তুলতে চাই সেভাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার ব্যাপারে সরকার সম্পূর্ণ সচেতন রয়েছেন।
দেশের আকাশসীমা রক্ষার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উত্তরোত্তর সাফল্য লাভকে আমরা অভিনন্দন জানাই। দেশরক্ষার যে পবিত্র দায়িত্ব আমাদের বীর বৈমানিকরা নিয়োজিত রয়েছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং স্বাধীনতা-উত্তরকালে কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনে তাদের আন্তরিকতা প্রশংসাই। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী অতন্ত্র প্রহরীর মতো কাজ করে যাবেন, আজকের দিনটিতে আমরা সেই কামনাই করি।

উত্তর ভিয়েতনামের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সুদৃঢ় হোক

উত্তর ভিয়েতনামের প্রথম রাষ্ট্রদূত গত পরশুদিন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরীর নিকট তার পরিচয় পত্র পেশ করেছেন। পরিচয়পত্র পেশ করার সময় উভয়ের মধ্যে কিছুক্ষণ আলাপ আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তর ভিয়েতনামের সরকার ও জনগণের সম্পর্ক দিন দিন সুদৃঢ় হবে। তার মতে ভৌগলিক নৈকট্য ও জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে একই ধরনের অভিজ্ঞতা থাকার ফলে উত্তর ভিয়েতনামের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি বাংলাদেশ গভীরভাবে সহানুভূতিশীল। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার ভিয়েতনাম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের জনগণ ও সরকারের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ও আন্তরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাবে। এ প্রসঙ্গে তিনি সার্বভৌমত্বের প্রতি স্বীকৃতি, রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বিনিময় দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রমাণ বলে মনে করেন। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হ্যানয় সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন -এশীয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হ্যানয় সফরই প্রথম।
বস্তুতপক্ষে বিয়েত নামের মানুষ ও সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সুদৃঢ় করার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ একটি রক্তাক্ত বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ভিয়েতনামও তেমনি একটি মহা রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করেছে। দুটো সংগ্রামের মধ্যে চরিত্রগত, সময়, পরিধি, আদর্শ ইত্যাদির ব্যাপারে পার্থক্য থাকলেও রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস রচনায় দু’টো দেশের মিল অবিচ্ছেদ্য। বাংলাদেশ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভিয়েতনামের মানুষ বহুকালের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সমাজতন্ত্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছে। সমাজতন্ত্রের অভিযাত্রী হিসেবে আমাদেরকে তাই অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশের মতোই উত্তর ভিয়েতনামের সংগ্রামের অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞান আহরণ করতে হবে। কিছুদিন পূর্বে বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধিদল হ্যানয় সফরে গিয়েছিলেন সে দেশের শান্তিকামী মানুষের আমন্ত্রণে। প্রতিনিধিদল ঢাকায় ফিরে তাদের অভিজ্ঞতার কথা সংবাদপত্রের মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে মোটামুটি তুলে ধরেছেন। তাঁদের মতেও উত্তর ভিয়েতনামের মানুষের জ্ঞান অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের অনেক কিছু শিখবার রয়েছে। সমাজতন্ত্রের শিক্ষা ছাড়া যেমন সে আন্দোলন পরিচালনা করা অসম্ভব তেমনি সমাজতান্ত্রিক দেশের সংগ্রামী অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ ছাড়াও বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ায় অনেক অসুবিধা। তাই বিয়েত নামের মানুষের অভিজ্ঞতা আমাদের আহরণ করার প্রয়োজনীয়তা হেতুই দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন আওয়াজ অপরিহার্য। আমাদের বিশ্বাস সরকারেই আলোকেই উত্তর ভিয়েতনামের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দ্রুত দৃঢ়তর করার প্রচেষ্টা চালাবে।

রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে –

গতকালকের ‘বাংলার বানীতে’ প্রকাশিত খবর অনুসারে জানা গেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যে সমস্ত কলেজগুলোতে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হয়েছে সেসব কলেজে উক্ত কোর্সে অধ্যায়নরত কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
না প্রকাশিত খবর অনুসারে সরকার গত বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রংপুর কারমাইকেল কলেজ, রাজশাহী সরকারি কলেজ, পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ ও খুলনার দৌলতপুর কলেজে স্নাতকোত্তর কোর্স খোলার অনুমতি দেওয়ায় জনশিক্ষা বিভাগও সে সব কলেজে স্নাতকোত্তর কোর্স চালুর অনুমতি দান করেন।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, কেবলমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর কোর্সে পড়ার সুযোগ থাকায় প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ব্যাপারে এক বিরাট চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে উচ্চশিক্ষা গ্রহণেচ্ছু বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীকে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে বাড়ী না ফিরে উপায় থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষেও প্রতিবছর ভর্তির আসন সংখ্যা পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। কেননা ভর্তির আসন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আবাসিক সমস্যা, ক্লাশ ঘরের অপর্যাপ্ততা, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক ও অন্যান্য জিনিসপত্রের অভাব ইত্যাদি জড়িত। সুতরাং বছর বছর এই সব সমস্যা গুলোর সমাধান সম্ভব হয়ে ওঠেনা। এবং সেই জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্বচ্ছল কলেজগুলোতে স্নাতকোত্তর কোর্স খোলার জন্য ছাত্ররা দাবি জানায় এবং সরকার গত বছর ছাত্র দের সে দাবি মেনে নিয়ে কতকগুলো কলেজে স্নাতকোত্তর কোর্স খোলার অনুমতি প্রদান করেন।
আমরা জানি কলেজ শিক্ষা এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা দু’টি পৃথক সংস্থার অধীন। অর্থাৎ প্রথমটি জনশিক্ষা পরিচালকের পরিচালনাধীন এবং দ্বিতীয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আওতাভুক্ত। কলেজগুলোতে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করতে হলে যেমন জনশিক্ষা পরিচালকের কাছ থেকে অনুমতি নেয়া প্রয়োজন, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের স্বীকারোক্তিও আবশ্যক। তিন পক্ষের মধ্যে দুই পক্ষ অর্থাৎ সরকার ও জনশিক্ষা বিভাগ যে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অনুমতি দান করেছেন সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন সেসব কলেজগুলোকে মঞ্জুরী প্রদান করলেন না বা করছেন না তা আমরা ভেবে পাচ্ছিনা।
বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এর ক্ষমতা অপরিসীম। আমরা জানি না সেই অপারেশন ক্ষমতা কিংবা অন্য কোনো কারণেই আজ কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন অনিশ্চিতের পথে কিনা কে জানে। ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে উলুখাগড়ার প্রাণ যায়’ বলে একটা কথা চালু আছে। অবস্থাদৃষ্টে কিন্তু তাই মনে হচ্ছে। আমরা মনে করি নানান সমস্যাসঙ্কুল গ্রাম বাংলার কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী জীবনে উদ্ভূত শিক্ষাজীবনের অনিশ্চয়তার একটা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সরকার অবশ্যই এগিয়ে আসবেন।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!