You dont have javascript enabled! Please enable it! Timeline 1971 | Daily incidents 1971 | দিনপঞ্জি একাত্তর | মুক্তিযুদ্ধের প্রতি দিনের ঘটনা - সংগ্রামের নোটবুক

Timeline 1971 | Daily incidents 1971 | দিনপঞ্জি একাত্তর | মুক্তিযুদ্ধের প্রতি দিনের ঘটনা

১ জানুয়ারি, ১৯৭১
• চট্টগ্রাম শিল্প এবং বণিক সমিতি এবং ঢাকা শিল্প ও বণিক সমিতি গত ৩১ ডিসেম্বর ঘোষিত নয়া আমদানী নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন। ঢাকা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, নয়া আমদানী নীতিতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে। তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী পূর্ব পাকিস্তানের কোন অর্থনৈতিক সমস্যার কথাও উল্লেখ করেন নি। যদিও পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমস্যা বিশ্বদৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে। আর এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, কিছু সুনির্দিষ্ট দাবি, যেমন ফ্রিলিষ্ট ও বোনাস ভাউচারের বিলোপ সরকারের নজরে পড়েনি। এসব দাবি-দাওয়া পূর্ব পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্প্রদায় তাদের বাণিজ্যিক সংগঠনের মাধ্যমে পাঁচ বছর যাবৎ বারবার উত্থাপন করে আসছে।
• পাকিস্তানের পিপল্স পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচীতে জানান যে, তিনি তার প্রস্তাবিত ঢাকা সফর সাময়িকভাবে বাতিল করে দিয়েছেন। পাকিস্তান আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে ৩ জানুয়ারি তার ঢাকা সফর করার কথা ছিল। ক্লিফটনস্থ স্বীয় বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক ঘরোয়া বৈঠকে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য পশ্চিম পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের ৬টি নির্বাচনী এলাকায় তাকে সময় দিতে হচ্ছে বলে উক্ত সফর পরিকল্পনা সাময়িকভাবে বাতিল করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তিনি তার পরিবর্তে পাঞ্জাব পিপলস পার্টির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা খারকে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য ঢাকা পাঠাতে চেয়েছেন। এ ব্যাপারে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তিনি টেলিফোনে যোগাযোগ করতেও ব্যর্থ হন। ফলে জনাব খারকে তার বিমানের টিকিট বাতিল করে দিতে হয় বলে তিনি জানান।
• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে কাশ্মীরীদের পূর্ণ সমর্থনদানের আশ্বাস দেন। খাজা সানাউল্লাহ শামিমের নেতৃত্বে কাশ্মীর মুসলিম সম্মেলনের পাঁচজন নেতা আজ বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি তাঁদের উপরোক্ত আশ্বাস দেন। কাশ্মীরী নেতৃবৃন্দ সাম্প্রতিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক বিজয়ের জন্য আজাদ কাশ্মীরের প্রেসিডেন্ট সরদার আবদুল কাইয়ুমের একটি অভিনন্দনবাণী বঙ্গবন্ধুর নিকট পৌঁছে দেন। এছাড়া পশ্চিম পাকিস্তান হতে বেশ কিছু সংখ্যক নব-নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য ও পশ্চিম পাকিস্তানি আওয়ামী লীগ নেতা গতকাল বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এসব নেতা ৩ জানুয়ারি রমনা রেসকোর্সে আওয়ামী লীগের শপথ দিবসের সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশ্যে ঢাকা পৌঁছেছেন।
• পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউটে প্যালেস্টাইন বিপ্লব শুরুর ষষ্ঠ বার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বলেন যে, ন্যায়, সত্য ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জন্মভূমি পুনরুদ্ধারের মরণপণ সংগ্রামে লিপ্ত প্যালেস্টাইন মুক্তি সংস্থা আল-ফাতাহর জয় হবেই। কারণ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়ের সংগ্রামের বিজয় অনিবার্য। অনুষ্ঠানে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, পূর্ব পাকিস্তানে নিযুক্ত আল ফাতাহর প্রতিনিধি আবু মুনির এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী বদরুন্নেসা আহমেদ বক্তব্য রাখেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন তাঁর সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন এবং বলেন প্যালেস্টাইনী কমান্ডোরা দেশপ্রেমেরই প্রতিমূর্তি।
• পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যকরী পরিষদের সভা করাচী ও রাওয়ালপিন্ডি সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে দৈনিক পাকিস্তান অবজারভারের রাওয়ালপিন্ডিস্থ প্রতিনিধি সৈয়দ নজিউল্লাহ এবং ‘ইন্টার উইং’- এর সম্পাদক এ.আর. শামসুদ্দোহাকে মুক্তিদানের আহবান জানান। সভায় সমালোচনা করা হয় যে, যেসময় দেশে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের সুযোগ করা হয়েছে সেসময় কোন সাংবাদিককে তাঁর নিজস্ব মতামত প্রকাশের জন্য শাস্তি দেয়া উচিত নয়।
২ জানুয়ারি, ১৯৭১
• ভুট্টোর দূত, গোলাম মোস্তফা খার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের মধ্যে আজ অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, আগামী ১৭ জানুয়ারির পর আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ও পিপলস পার্টি প্রধান জেড. এ. ভুট্টো শাসনতান্ত্রিক প্রশ্ন আলোচনার জন্য ঢাকায় বৈঠকে মিলিত হবেন। গোলাম মোস্তফা খার বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে তাঁর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন এবং তাঁরা উভয়েই শাসনতন্ত্র রচনা সম্পর্কে দুই দলের সহযোগিতার ব্যাপারে আলোচনা করেন। জনাব খার আজ লাহোরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন।
• ঘূর্ণিদুর্গত এলাকায় সাহায্য কাজের অগ্রগতি বিবেচনার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সভাপতিত্বে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের চীফ সেক্রেটারি, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন চেয়ারম্যান, পিএডিসি’র চেয়ারম্যান, অর্থ দফতরের সেক্রেটারি, কৃষি দফতরের সেক্রেটারি এবং রিলিফ কমিশনার উক্ত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, দুর্গত লোকজনকে যথাশীঘ্র সম্ভব আত্ম-নির্ভরশীল করে তোলার উদ্দেশ্যে টেস্ট রিলিফ ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। দুর্গত এলাকায় কৃষকদের কৃষিঋণ ও বীজ প্রদান এবং চাষ কাজে ট্রাক্টর সরবরাহ করার জন্যও উক্ত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
• ঢাকায় নিখিল পাকিস্তান সংবাদপত্র সমিতির আঞ্চলিক কমিটির জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলস কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একতরফাভাবে নিউজপ্রিন্টের মূল্যবৃদ্ধিতে দুঃখ প্রকাশ করা হয়। প্রতিটনে ৩২৫ টাকা করে নিউজপ্রিন্টের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিটন ১৫৪০ টাকা বর্ধিত হারে নতুন করে লেটার অব ক্রেডিট খোলার অনুরোধ জানিয়ে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলসের প্রেরিত পত্র নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে ১৯৭০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত নিখিল পাকিস্তান সংবাদপত্র সিমিতির কার্যকরী কমিটির জরুরি সভায় এক প্রস্তাব এবং পরবর্তী সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সাথে সংবাদপত্র শিল্পের প্রতিনিধিদের আলোচনার কথা স্মরণ করা হয়। সেই আলোচনা শেষে প্রাদেশিক সরকার কর্তৃক এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিলো যে, খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল কর্তৃপক্ষের নিউজপ্রিন্টের মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে না। সরকার সংবাদপত্র শিল্পকে আশ্বাস দান করেছিল যে, এই বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত প্রতিনিধিদের সাথে যথাযথ আলোচনার পরই করা হবে।
৩ জানুয়ারি, ১৯৭১
•  ঢাকার রমনা রেসকোর্স ময়দানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ সমাবেশে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নবনিবার্চিত আওয়ামী লীগ দলীয় ৪১৯ জন সদস্য শপথ গ্রহণ করেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সমাবেশে তাঁর নীতি নির্ধারণী বক্তব্য দান করেন। সমাবেশে নব নির্বাচিত পরিষদ সদস্যগণ দেশে শোষণ, অবিচার ও বৈষম্যমুক্ত এক নয়া সমাজ গড়ার জন্য ১১ দফা ও ৬ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের শপথ গ্রহণ করেন। শপথ গহণ শেষে ঘূর্ণিঝড় ও সামুুদ্রিক জলোচ্ছাসে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত এবং ৭ কোটি বাঙালির ঐক্য কামনা করে এক বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে উপস্থিত হাজার হাজার জনতার সামনে নির্বাচিত গণপ্রতিধিরা শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন।
আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান রমান রেসকোর্স ময়দানের বিশাল জনসভায় বক্তৃতাকালে সাবধান করে বলেন, ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। জনতাকে উদ্দেশ্য করে বঙ্গবন্ধু বলেন, চরম ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকবেন। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ঘোষণা করেন যে, ৬-দফার শাসনতন্ত্র প্রণীত হবেই, কেউ এটা ঠেকাতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রদত্ত নীতি নির্ধারণী বক্তৃতায় শাসনতন্ত্র প্রণয়নের প্রশ্নে ঘোষণা করেন যে, সংখ্যায় বেশি আছি বলে একথা বলবো না যে, কারো সহযোগিতা চাই না। আমরা সহযোগিতা চাই, তবে নীতির প্রশ্নে কোন আপোষ নেই। তিনি বলেন, ৬ দফা ও ১১ দফা আওয়ামী লীগ বা মুজিবের সম্পত্তি না, জনতার সম্পত্তি। একে রদবদল করার অধিকার সদস্যদের নেই।
বক্তৃতাকালে বঙ্গবন্ধু সাজাপ্রাপ্ত ও বিনাবিচারে আটক সকল রাজনৈতিক নেতা কর্মী ছাত্র ও শ্রমিকদের মুক্তি ও সাজা মওকুফের দাবি জানান।তিনি উত্তরবঙ্গবাসীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, যমুনার উপর নিশ্চয় সেতু হবে, টাকার অভাব হবে না। শীতলক্ষ্যা ও মেঘনার উপরও সেতু নির্মাণের প্রচেষ্টা চালানো হবে। তবে আস্তে আস্তে।আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে কাশ্মীর ও ফারাক্কা বিরোধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার প্রচেষ্টা চালাবেন বলে তিনি ঘোষণা করেন।
• মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী তানশ্রী সার্দস তিন দিনব্যাপী পূর্ব পাকিস্তান সফর শেষে সন্ধ্যায় স্বাদেশের পথে ঢাকা থেকে ব্যাঙ্কক যাত্রা করেন। ঢাকা বিানবন্দরে মালয়েশীয় মন্ত্রীকে পাকিস্তানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. মালিক এবং ঢাকাস্থ ইন্দোনেশীয় ভাইস কন্সাল বিদায় সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করেন। পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানকালে মালয়েশীয় মন্ত্রী পটুয়াখালী জেলার ঘূর্ণিদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন।
• প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এক সামরিক আইন জারির মাধ্যমে পাকিস্তান সরকারের প্রাইসেস ও সাপ্লাইজ বিভাগের কন্ট্রোলার জেনারেলের উপর বিক্রেতা, আমদানীকারক ও প্রস্তুতকারকদের দ্বারা বিক্রয়যোগ্য মোটরগাড়ির সর্ব্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব অর্পণ করে। সামরিক আইনের এই ৭১ নং বিধানের নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত দামে মোটরগাড়ি কেনাবেচা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিধি অনুসারে কন্ট্রোলার জেনারেলকে বিধি জারির ৭ দিনের মধ্যে মোটরগাড়ির হিসাব গ্রহণের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এই বিধি অমান্য করলে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড কিংবা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে এবং বিধি অমান্যকারীর মোটরগাড়ি বাজেয়াপ্ত হবে।
৪ জানুয়ারি, ১৯৭১
• পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের ২৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে রমনা গ্রীনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণদানকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এবারের নির্বাচনে এক বাস্তব কর্মসূচির প্রতি রায় দিয়েছে। তিনি বলেন, ৭ কোটি বাঙালি ব্যতীত অন্য কারো ৬ দফা কর্মসূচি পরিবর্তনের অধিকার নেই। নির্বাচনে এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে, বাঙালিরা চিরদিনই বাঙালি হিসেবে বেঁচে থাকবে। অতীতেও বাঙালিরা যে কোন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে, এখনও তারা বাঙালি হিসেবেই পরিস্থিতির মোকাবেলা করছে।
বঙ্গবন্ধু বলেন, অতীতে বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার জন্য প্রচেষ্টা চালানো হয়। এমনকি আরবী হরফে বাংলা লেখার প্রচলনের চেষ্টাও করা হয়। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রতিহত করেছি। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কবি নজরুল ইসলামকে বাদ দিয়ে আমরা বাংলা সাহিত্যকে ভাবতে পারি না। তিনি বৃটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালিদের ত্যাগের দৃষ্টান্তস্বরূপ চট্টগ্রাম ও বারাকপুর অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের কথা উল্লেখ করেন। সেসব দেশপ্রেমিকদের সংগ্রামের স্মরণে আওয়ামী লীগ কর্তৃক জালালাবাদে (চট্টগ্রাম) একটি জাতীয় স্মৃতি মিনার নির্মাণ করার কথা তিনি ঘোষণা করেন।ভোরে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পতাকা উত্তোলন এবং সকাল আটটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রলীগ কর্মীগণ পুষ্প অর্পণ করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণকে তাদের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আরো আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকার আহবান জানান। বঙ্গবন্ধু দেশের ভাবী শাসনতন্ত্র প্রণয়ন সম্পর্কে বলেন, তাঁর দল একাই শাসনতন্ত্র প্রণয়নে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানের নির্বাচিত সদস্যদের এ ব্যাপারে সাদর আমন্ত্রণ জানাবে। অবশ্য তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, যে কোনো অবস্থাতেই তিনি নীতির প্রশ্নে আপোষ করবেন না। বঙ্গবন্ধু আরো বলেন যে, একই স্বার্থবাদী মহল কর্তৃক পশ্চিম পাকিস্তানের দরিদ্র জনসাধারণ সমভাবে শোষিত হয়েছে, সে শোষিত জনগণের স্বার্থেও তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
• পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস এডমিরাল এস. এম আহসান আজ রাওয়ালপিন্ডি যাত্রা করেন। তিনি ৭ জানুয়ারির দিকে এখানে প্রত্যাবর্তন করবেন।
• আজ সমাপ্ত প্রাদেশিক ন্যাপের কার্যকরী কমিটি তিনদিনব্যাপী বর্ধিত সভায় পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব, রাজবন্দিদের মুক্তি এবং খাদ্যসহ নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদির মূল্যহ্রাসের দাবিতে আগামী ২৪ জানুয়ারি প্রদেশব্যাপী দাবি দিবস পালনের আহবান জানিয়েছে। এছাড়া সভার আলোচনা মূলত ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্রের রূপরেখা, সকল জাতিসত্তার সমানাধিকার ও জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমানাধিকারের নিশ্চয়তা সম্বলিত শাসনতন্ত্র প্রণয়ন এবং গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইনগত কাঠামোর সৃষ্ট বিঘœ অপসারণের পদ্ধতি সম্পর্কেই অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ত্ব করেন প্রাদেশিক ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ।
৫ জানুয়ারি, ১৯৭১
• ঢাকায় সংবাদপত্রসূত্রে প্রকাশ পূর্ব পাকিস্তান এবং ত্রিপুরার (ভারত) ভূমি রেকর্ড ও জরিপ ডিরেক্টরগণ গত শনিবার এখানে সমাপ্ত চারদিনের সম্মেলনে প্রদেশের চারটি জেলার সাথে ত্রিপুরার সীমান্ত চিহ্নিতকরণ ও অন্যান্য প্রশ্ন আলোচনা করেন। ত্রিপুরার ভূমি রেকর্ড ও জরিপ ডিরেক্টর টি হোসেন পকিস্তানি দলের নেতৃত্ব করেন। সরকারি সূত্রে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানের ভূমি রেকর্ড ও জরিপ ডিরেক্টর সম্মেলনে ফেনী নদী বরাবর চট্টগ্রাম/পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং মাতামুহুরী নদী এলাকার নোয়াখালী/ কুমিল্লার সাথে ত্রিপুরার সীমানা চিহ্নিতকরণ প্রশ্ন উত্থাপন করেন। ভারতীয় পক্ষ সংশ্লিষ্ট মানচিত্রসমূহ পরীক্ষা করেন এবং পরীক্ষাকার্য সমাপ্ত করার জন্য আরো সময় চান। পূর্ববর্তী বছর সম্পাদিত খণ্ড জরিপ সংক্রান্ত ১২টি সিটের প্রাথমিক প্রমান সমীক্ষাও বিনিময় করা হয়।
• রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে ১৯৭০-৭১ সালের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি পর্যালোচনা করা হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। এনইসি’র এই বৈঠকে যোগদান করেন পিন্ডিতে উপস্থিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীগণ, পাদেশিক গভর্নরগন, প্রেসিডেন্টের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এসজিএমএম পীরজাদা, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এম.এম. আহমদ ও পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান এম এইচ সুফী। আলোচনা প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে।
৬ জানুয়ারি, ১৯৭১
• শেখ মুজিবুর রহমান দলীয় অফিসে অনুষ্ঠিত সভায় গণ-বিরোধী চক্রান্তকারীদের যে কোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবকদের সজাগ থাকার আহবান জানান। যে কোনো উস্কানির মুখে সুশৃঙ্খল থেকে বিগত নির্বাচনের সময়ের মত ঐতিহ্য বজায় রাখতে বলেন। তিনি তাদেরকে জনগণ বিরক্ত হয় এমন কাজ না করতে উপদেশ দেন। তিনি বলেন, জনগণ আওয়ামী লীগের কর্মসূচির প্রতি যে রায় দিয়েছে বিশ্ব ইতিহাসে তা বিরল। অতএব দলীয় কর্মীদের সদা সতর্ক থাকতে হবে। আত্মরক্ষার্থে আপনারা লাঠি তৈরি রাখুন, তবে হাই কমান্ডের অনুমতি ছাড়া আপনারা লাঠির ব্যবহার করতে পারবেন না। সহ্যের সব সীমা অতিক্রম হলে সঠিক নির্দেশ দেওয়া হবে। সভায় দলের সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও সম্পাদক জনাব তাজউদ্দিন আহমদও বক্তৃতা করেন।
• প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান রাওয়ালপিন্ডিতে বলেন, শীঘ্রই তিনি আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে বৈঠকে মিলিত হবেন। ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডো ও বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথের পাকিস্তান সফরের পরই শেখ মুজিবের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যেই পিপলস পার্টির চেয়াম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন।
• কানাডার প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডো চারদিনব্যাপী পাকিস্তান সফরের উদ্দেশ্যে অপরাহ্নে রাওয়ালপিন্ডি এসে পৌঁছান। বিমানবন্দরে প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান তাঁকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন। এরপর প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চীফ অব জেনারেল স্টাফ আবদুল হামিদ খান, পাকিস্তান বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর প্রতিনিধিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। বিমানবন্দরে এক বিবৃতিতে কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও পাকিস্তানি অফিসারদের সাথে দ্বি-স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বহু বিষয়ে মতামত বিনিময়ের তিনি আশা রাখেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান ও কানাডার মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব সম্পর্ক রয়েছে। উভয় দেশই কলম্বো পরিকল্পনা ও কমনওয়েলথভুক্ত রয়েছে। আগামীকাল তিনি ইয়াহিয়ার সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে মিলিত হবেন।
• পাকিস্তানস্থ হাঙ্গেরীয় দূতাবাসের বাণিজ্যিক উপদেষ্টা পি. ইগারভেরী বাণিজ্য সম্প্রসারণের সম্ভাবনা পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে বর্তমানে ঢাকা সফর করছেন। রাতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল-এ তাঁকে সংবর্ধনা জানানো হয়। বেগম ও জনাব এ. সালাম আয়োজিত উক্ত অনুষ্ঠানে নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী, কূটনৈতিক মিশনসমূহের সদস্যবর্গ, শিল্পপতি এবং শহরের বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ যোগদান করেন।
• পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ের প্রায় ১৮ হাজার শ্রমিক ও কর্মচারি তাদের ১৯ দফা দাবি আদায়ের জন্য ‘ইপরেল’ পাহাড়তলী শাখা ও ওপেন লাইন শাখার উদ্যোগে ভোর ছয়টা হতে ধর্মঘট শুরু করেছে। উল্লেখ্য, তাদের ১৯ দফার মধ্যে বন্যা-বাবদ দুই মাসের অগ্রিম বেতনের দাবিও রয়েছে।
৭ জানুয়ারি, ১৯৭১
• প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এবং সফররত কানাডার প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডো রাওয়ালপিন্ডিতে বিশ্ব শান্তির প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করেন এবং উভয় দেশের সাধারণ স্বার্থ নীতিসমূহের সাদৃশ্যের কথা উল্লেখ করেন। ইয়াহিয়া খান কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সম্মানার্থে ভোজসভার আয়োজন করেন। উক্ত ভোজসভায় নেতৃদ্বয় পাকিস্তান এবং কানাডার মধ্যে বর্তমান বন্ধুসুলভ সম্পর্ক, সহযোগিতা ও সমঝোতার কথাও উল্লেখ করেন। ভোজসভায় মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, প্রধান নির্বাচনী কমিশনার বিচারপতি আব্দুস সাত্তার এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারিবৃন্দ যোগদান করেন। প্রেসিডেন্ট কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে একজন বন্ধু, বিশ্ব রাষ্ট্রনায়ক এবং এক মহান দেশের নেতা হিসেবে স্বাগত জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন যে, তাঁর সফর দুুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ককে আরো দৃঢ় করবে। তিনি বলেন, উভয় দেশই বিশ্বশান্তি ও শুভেচ্ছা অক্ষুন্ন রাখতে আগ্রহী এবং কমনওয়েলথের ভিতরে বাইরে সাধারণ স্বার্থসংশ্লিষ্ট অধিকাংশ ব্যাপারে অনুরূপ নীতির অনুসারী। প্রেসিডেন্ট প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বন্ধত্বসুলভ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। অবশ্য তিনি প্রতিবেশী ভারতের সাথে সম্পর্ক কাশ্মীর এবং ফারাক্কা বিরোধের নিষ্পত্তি না হওয়ার দরুন মনোমালিন্যপূর্ণই রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
• ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক সমিতি গঠন করা হয়। ভূঁইয়া মোহাম্মদ ইকবাল ও চিন্ময় মুৎসুদ্দিকে যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে সমিতির ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহক পরিষদ নির্বাচিত করা হয়। উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক সংবাদপত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কার্যরত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এই প্রথম এ জাতীয় একটি সমিতি গঠন করলেন। শীঘ্রই সমিতির কার্যনির্বাহক পরিষদের সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে অভিষিক্ত হবেন।
• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাণনাশের চেষ্টার অভিযোগে রাতে জনৈক যুবককে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যুবকটি স্বীকার করেছে যে, সে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার জন্যই গিয়েছিলো। সে আরও স্বীকার করে, সংগঠিত দলের (গ্যাং) পক্ষ থেকে তাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধুর প্রাণনাশের জন্য ট্রেনিং ও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানা যায় যে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সুযোগের সদ্ব্যবহারের জন্য একটি অত্যন্ত শক্তিশালী সংগঠিত চক্র বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন রয়েছে।
৮ জানুয়ারি, ১৯৭১
• বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথ পাকিস্তানে দুইদিনব্যাপী সরকারি সফর উপলক্ষে বিমানযোগে রাজধানী নগরী ইসলামাবাদে পৌঁছলে শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। পরে তিনি পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খান এবং সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর প্রতিনিধিদেরকে মি. হীথের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এই সফরে বৃৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে আগতদের মধ্যে রয়েছেন: বৃটিশ মন্ত্রীসভা সচিব স্যার বার্কট্রেন্ড, পার্লামেন্টারি প্রাইভেট সেক্রেটারি টি পি জে কিটসন এবং বৈদেশিক ও কমওয়েলথ দফতরের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান আই জে এম সুদারল্যান্ড।
• খুলনা নিউজপ্রিন্টের মূল্যবৃদ্ধির একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে সংবাদপত্র শিল্পে উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করানোর জন্য পূর্ব পাকিস্তানের দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর একটি দল তাঁর সাথে দেখা করেছেন। বঙ্গবন্ধু ধৈর্যের সাথে প্রতিনিধিদলের বক্তব্য শোনেন এবং তাঁদেরকে আশ্বাস দেন যে, জাতীয় সংবাদপত্রকে এই সমস্যা হতে রক্ষা করার জন্য তিনি চেষ্টা করবেন। আরো জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও গভর্নর ভাইস এডমিরাল এস এম আহসানের কাছে বার্তা প্রেরণ করেছেন।
• পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রাদেশিক শাখার যুগ্ম-সম্পাদক কামাল হাসান রিজভী ব্যাংক, বীমা ও পাট ব্যবসায় জাতীয়করণের ব্যাপারে শেখ মুজিব একটি বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় তাঁর দলের পক্ষে তাঁকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, শেখ মুজিবের এ ঘোষণার ফলে দেশের কোটি কোটি নির্যাতিত জনগণের মধ্যে এক নয়া জীবনের সূচনা হয়েছে। তিনি বলেন যে, তার দলের চরম লক্ষ্য দেশে একটি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটানো এবং মূলত এই উদ্দেশ্যেই গত নির্বাচনে পিপলস পার্টি পশ্চিম পাকিস্তানে সাম্রাজ্যবাদী তথা প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে।
৯ জানুয়ারি ১৯৭১
• পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি আবদুল ওয়ালী খান পেশোয়ারে এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর প্রাণনাশের পরিকল্পনার নিন্দা করেন এবং চক্রান্তকারীদের উদ্ঘাটন করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানান।
• বঙ্গবন্ধুর প্রাণনাশের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানও স্বস্তি প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধুর নিকট প্রেরিত এক বাণীতে তিনি বলেন, আপনার জীবননাশের চেষ্টার সংবাদ পেয়ে আমি ব্যথিত হয়েছি, তবে সর্বশক্তিমান আল্লাহকে ধন্যবাদ যে, এই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে এবং আপনি রক্ষা পেয়েছেন।
• পিডিপি প্রধান নুরুল আমিন বঙ্গবন্ধুর প্রাণনাশের চেষ্টার তীব্র নিন্দা করে বলেন, দেশের দীর্ঘ প্রতিক্ষীত শাসনতন্ত্র প্রণয়নের শুরুতে নানাস্থানে নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রদের ওপর হামলা খুব ভালো লক্ষণ না । তিনি একজন প্রাক্তন হাইকোর্ট বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
• কুমিল্লার বাঞ্ছারামপুর থেকে প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য গোলাম মহিউদ্দিন (আফতাব) এক বিবৃতিতে ৭ কোটি বাঙালির কণ্ঠস্বর বঙ্গবন্ধুর প্রাণনাশের চেষ্টার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপনপূর্বক এ ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।
• মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তাঁর টাঙ্গাইলের সন্তোষস্থিত বাসভবনের সামনে অনুষ্ঠিত “জাতীয় সম্মেলন”-এ ভাষণদানকালে ১৯৪০ সনের লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান। তিনি কৃষক শ্রমিকের চূড়ান্ত মুক্তির জন্য সমাজতন্ত্র কায়েমের ওপর জোর দেন। লাহোর প্রস্তাব সম্পর্কে বলেন, লাহোর প্রস্তাব না হলে বাংলার মুসলমানরা পাকিস্তানে শরীক হতো না, কলকাতাসহ ১৪টি জেলা হারাতো। তিনি বলেন, কায়েদে আজম বোকা ছিলেন না। তাই তিনি নিজেই লাহোর প্রস্তাবের খসড়া প্রণয়নের সময় ইংরেজী ‘স্টেটস’ (রাষ্ট্রসমূহ) কথাটি প্রস্তাবের মধ্যে রাখেন। অর্থাৎ লাহোর প্রস্তাবে পরিস্কারভাবে দুইটি রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও মুসলিম লীগ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। অথচ সেদিন দওলতানা, খালেকুজ্জামান, রাজা মাহমুদাবাদ প্রমুখ পাঞ্জাবি, সিন্ধি, বেলুচ, পাঠান নির্বিশেষে কোন নেতাই আপত্তি করেনি। মওলানা আবারও ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান’ দাবির কথা উল্লেখ করেন। তবে তিনি এও বলেন যে, পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে এখানে কোন রাজনীতি চলবে না- এতে খুব সংকট রয়েছে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ও পররাষ্ট্র দফতরে পূর্ব পাকিস্তানি নেই বললেই চলে। অগাধ সম্পদ থাকা সত্ত্বেও কুটির শিল্প ও ভারী শিল্প হয়নি। এ প্রসঙ্গে তিনি আত্মনির্ভরশীল হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, এদেশে কয়লা, তেল, পেট্রোল ইত্যাদি সম্পদ এতো রয়েছে যে, আত্মনির্ভরশীল না হয়ে যায় না। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, আমরা পশ্চিম পাকিস্তানের শোষিত জনতার বিরুদ্ধে নই।
• কানাডার প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডো চারদিনের পাকিস্তান সফর শেষে আজ করাচী থেকে নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পাকিস্তান ত্যাগের প্রাক্কালে কানাডীয় প্রধানমন্ত্রীকে সিন্ধুর গভর্নর লে. জেনারেল রাহমান গুল করাচী বিমানবন্দরে আন্তরিক বিদায় জানান।
• পূর্ব বাংলার শ্রমিক ফেডারেশণের কার্যকরী সভাপতি মাহফুজ ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক হায়দার আকবর খান রনো ২০ জানুয়ারি প্রদেশের সকল স্কুল-কলেজ, দোকানপাট, অফিস-আদালতে পূর্ণ হরতালের মাধ্যমে “আসাদ দিবস” পালনের জন্য আহবান জানান। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন যে, ১৯৬৯ সালের এই দিনে বুকের রক্ত দিয়ে আসাদুজ্জামান সেদিনের আন্দোলনে এক নতুন বিপ্লবী উপাদান সংযোজন করেন। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, সেদিন সেই আন্দোলন স্বৈরাচারী আইয়ুব শাহীর পতনের মধ্যে দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে। বিবৃতিতে তাঁরা আশা প্রকাশ করে বলেন যে, পূর্ব বাংলার জাগ্রত জনতা আসাদকে ভোলেনি।
১০ জানুয়ারি, ১৯৭১
• পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো পেশোয়ার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় চক আরবার রোডের পাশে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় পুনরায় দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেন যে, তাঁর দল পাকিস্তানের সামগ্রিক সংহতির কথা মনে রেখে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য সর্বাধিক সহযোগিতা প্রদান করবে। উক্ত জনসভায় বক্তৃতাদানকালে তিনি আরো বলেন, শাসনতন্ত্র প্রণয়ন একটি সূক্ষ্ম বিষয়, তাই তিনি একে রাস্তায় টেনে আনতে চান না। শাসনতন্ত্র প্রণয়ণের কাজে পূর্ণ মনোযোগ নিবদ্ধ করবো বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন।
• মিসরীয় জাতীয় পরিষদের স্পিকার ড. লাবিব শুকায়ের ঢাকায় বলেন যে, ইসরাইলের অবৈধ অধিকার থেকে কুক্ষিগত আরব এলাকা মুক্ত না করা পর্যন্ত আরব দেশগুলো তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। আফ্রো-এশীয় গণসংহতি সংস্থার পূর্ব পাকিস্তান কমিটির উদ্যোগে হোটেল পূর্বাণীতে এক সংবর্ধনা সভায় তিনি ভাষণ দেন। ছয় সদস্য বিশিষ্ট এক মিশরীয় পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি দল নিয়ে তিনি দুইদিনের সফরে এখানে এসেছেন। আরবদের অধিকারের প্রতি প্রতিনিয়ত সমর্থন করায় তিনি পাকিস্তানি জনগণের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, উপনিবেশবাদী শক্তির সমর্থনপুষ্ট ইসরাইল ক্রমে ক্রমে আরব ভূমি কুক্ষিগত করার নীতি নিয়েছে। আরব ভূমিতে জঘন্য হামলা অব্যাহত রাখার কাজে ইসরাইল বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর কাছে থেকে সাহায্য পাচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। এর আগে মিসরীয় প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে গণসংহতি সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কিউ জি আজমেরী আশ্বাস দিয়ে বলেন যে, আরবদের সাথে পাকিস্তানি জনগণ একাত্ম হয়ে থাকবে।সভাপতির ভাষণে আবুল হাশিম বলেন, প্যালেস্টাইনের মুক্তির জন্য এবং ইহুদীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে পাকিস্তানের জনগণ সবসময় আরবদের পাশে থাকবে। এই প্রতিনিধিদল গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান এবং সেখানে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। তাঁরা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও খাজা নাজিমুদ্দিনের মাজারও জিয়ারত করেন।
• বঙ্গবন্ধু আজ পটুয়াখালীতে ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশের ন্যায়সঙ্গত দাবি পূরণ ও তাদের নিজেদের ভাগ্য ও সম্পদ নিয়ন্ত্রণের অধিকার আর ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব না, কারণ জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমেই এ ব্যাপারে তাদের রায় দিয়েছে। গণবিরোধী শক্তি নির্বাচনের ফলাফলে বিভ্রান্ত হয়ে পড়লেও তাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী আবার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। এছাড়া তাঁর জীবনের উপর সাম্প্রতিক হামলার উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণশত্র“রা পরাজিত হয়ে বাংলার মানুষের কণ্ঠরোধের জন্য অন্য পন্থা অবলম্বন করেছে। বঙ্গবন্ধু নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরাট সাফল্যের সাথেই পাবনার দলীয় নবনির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, খুলনায় একজন আওয়ামী লীগ কর্মী হত্যারও উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধুর বর্তমান উপকূল এলাকায় সফরকালে আরো কয়েকজন নেতা তাঁর সাথে রয়েছেন। তাঁরা হলেন: জাতীয় পরিষদের নবনির্বাচিত সদস্য মোহাম্মদ মোহসীন, নূরুল ইসলাম মঞ্জু ও কোরবান আলী এবং নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোস্তফা সারওয়ার।
• জাতীয় পরিষদের নবনির্বাচিত সদস্য এবং চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজ শেষরাতে করোনারী থ্রমবোসিস রোগে মাত্র ৫০ বছর বয়সে প্রাণত্যাগ করেন। এ দিন জনাব আজিজ অত্যন্ত কর্মব্যস্ত ছিলেন। তিনি দুইটি জনসভা ও তাঁর সম্মানার্থে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। বিকাল পাঁচটায় বহদ্দর হাটের জনসভায় বক্তৃতাদানের পর নানুপুরের জনসভায় বক্তৃতা দিতে যান এবং সেখানে রাত এগারোটা পর্যন্ত অবস্থান করেন।
• পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর আমীর মওলানা মওদুদী দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন যে, দলের সদস্যপদ বা আমীরের পদ থেকে পদত্যাগের কোন ইচ্ছা তাঁর নেই।
১১ জানুয়ারি, ১৯৭১
• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এসে পৌঁছেন। দীর্ঘ সফরে ক্লান্ত বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের সাথে কথা প্রসঙ্গে বলেন, চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের নব নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য এম. এ আজিজের মৃত্যুর জন্য তাঁকে অবিলম্বে চট্টগ্রাম যেতে হয়েছিলো। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ, খন্দকার মোস্তাক আহমদ এবং ড. কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু আগামীকাল কোন একসময় প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাৎ করবেন।
• প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তাঁর সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও ভুট্টোর ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। প্রেসিডেন্ট তেজগাঁও বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেন, “তাঁদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে দিন। আমি কেউ না। আমি কোন আলাদা শক্তিও না। আমি রাষ্ট্রের প্রধান এবং আমার স্বার্থ হলো তাঁদের সাথে মিলিত হওয়া এবং আলোচনা করা।” এক প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট বলেন যে, তিনি এখনও জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠানের তারিখ সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি বলেন, “যখন আমি তারিখ ঠিক করে ফেলবো তখন আপনাদের জানাবো।” তিনি কখন বঙ্গবন্ধুর সাথে মিলিত হবেন জানতে চাইলে বলেন, “তিনি ব্যস্ত মানুষ, আমিও ব্যস্ত মানুষ। যখন তাঁর সময় হবে এবং যখন আমারও সময় হবে তখনই আমরা মিলিত হবো।” তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে কী বিষয়ে আলোচনা করবেন জানতে চাইলে বলেন, “এ ব্যাপারে আপনাদের কাছে বলার আমার কিছুই নাই।”
• তেজগাঁও বিমানবন্দরে রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের মুক্তিদানের ব্যাপারে ইয়াহিয়া খান বলেন, আমি পূর্বেও বলেছি যে, কোন রাজবন্দী নেই। তখন জনৈক সাংবাদিক সুুনির্দিষ্টভাবে জননেতা মণি সিং-এর নাম উল্লেখ করেন। জবাবে প্রেসিডেন্ট বলেন, “মণি সিং কে?” সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক জানান, “মণি সিং নিরাপত্তা আইনে আটক রয়েছেন। তিনি ভিন্ন রাজনৈতিক মত পোষণ করেন।” জবাবে প্রেসিডেন্ট বলেন, “কী সেই ভিন্ন মত?” এর জবাবে অপর একজন সাংবাদিক বলেন, “মণি সিং বামপন্থী মতাদর্শের অনুসারী।” তখন প্রেসিডেন্ট ‘বামপন্থী’ কথাটির পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ‘তাহলে রাইট কে?’ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যে যে মত পোষণ করুণ আমার কোন মত নেই। আমাকে ১২ কোটি লোককে দেখতে হয়। একজন মণি সিং- এর প্রতি আমি নজর দিতে পারি না।’
• প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তিনদিনব্যাপী পূর্ব পাকিস্তান সফরে ঢাকা আগমন করেন। বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে এই বৎসরের শেষ নাগাদ ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা পোষণ করেন কি না জানতে চাইলে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘কেন এতো দীর্ঘ সময়? যদিও আইনগত কাঠামো আদেশে ১শত ২০ দিন সময় ধার্য করে দেওয়া হয়েছে, তবুও এটি ১০ দিনেও হতে পারে বলে আমি আশা করি।’
• পাকিস্তান ন্যাপ-এর সভাপতি খান আবদুল ওয়ালী খান জাতীয় একটি গ্রহণযোগ্য শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ব্যাপারে সকল শক্তি নিয়োজিত করার জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান। তিনি পেশোয়ারে এক জনসভায় ভাষণদানকালে প্রাদেশিক রাজনীতিতে আব্দুল কাইয়ুম খানের ষড়যন্ত্র ও কোন্দল প্রচেষ্টায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, গত সাধারণ নির্বাচনে জনগণ তথাকথিত জাতীয় আদর্শের রক্ষকদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। অতএব এখন এ জাতীয় ষড়যন্ত্রের অবকাশ নেই। তিনি উপস্থিত জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, এখন প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা গঠন করা, ভাঙ্গার সময় না। ন্যাপ প্রধান আরও বলেন, দেশের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে সম্পদের সুষম বণ্টন করা যাতে বঞ্চিত জনগণ জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনীয় সুযোগ লাভ করতে পারে।
১২ জানুয়ারি, ১৯৭১
• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সকালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে অনুষ্ঠিত উক্ত বৈঠকের পর বঙ্গবন্ধু অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের আলোচনা সন্তোষজনক হয়েছে। তিনি আগামীকাল তাঁর দলের কয়েকজন নেতাসহ আবার প্রেসিডেন্টের সাথে মিলিত হবেন বলে জানান। প্রেসিডেন্টের সাথে তিনি কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন তা সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বলেন, তিনি এখন কোন কিছু বলবেন না। আগামীকাল প্রেসিডেন্টের সাথে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে তাজউদ্দিন আহমদ, ডক্টর কামাল হোসেন এবং খন্দকার মুশতাক আহমদসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর সাথে থাকবেন।
• আইএ কর্মচারীরা আজ রাওয়ালপিন্ডিতে ধর্মঘট শুরু করেন। কর্মচারীরা বেলা নয়টার পর কাজ বন্ধ করে দেয় বলে পিআইএ’র জনৈক কর্মকর্তা জানান। এদিকে করাচী থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, পিআইএ কর্পোরেশন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি এস. এম ইকবাল বলেছেন, পিআইএ কর্মকর্তারা আমাদের দাবি দাওয়া মেনে না নেওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। জনাব ইকবাল সংগ্রাম পরিষদেরও সভাপতি।
• পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস এডমিরাল এম. এম আহসান সাভারে জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধন করেন।
১৩ জানুয়ারি, ১৯৭১
• ঢাকায় প্রেসিডেন্ট ভবনে বঙ্গবন্ধু এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মধ্যে ৩ ঘণ্টাব্যাপী এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডিস্থ স্বীয় বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিসহ জাতীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে প্রেসিডেন্টের সাথে তাঁর আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনায় আমরা সন্তষ্ট হয়েছি।” প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনার সময় বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলেন – সৈয়দ নজরুল ইসলাম, খোন্দকার মোস্তাক আহমদ, তাজউদ্দিন আহমদ, মনসুর আলী ও কামরুজ্জামান। আলোচনায় প্রেসিডেন্টের সাথে কারা উপস্থিত ছিলেন তা জানা যায়নি। বঙ্গবন্ধু বলেন, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ঢাকাতেই অনুষ্ঠিত হবে। তবে অধিবেশনের তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি। অধিবেশনের বিভিন্ন সম্ভাব্য তারিখ সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। নিকটবর্তী যে কোন সুবিধামত তারিখে অধিবেশন শুরু হবে। বৈঠকে প্রেসিডেন্টের সাথে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কেই আলোচনা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের সাথে বঙ্গবন্ধুর আর বৈঠক হবে না বিধায় তিনি সাংবাদিকদের আর কোন প্রশ্ন না করার অনুরোধ জানান।
• পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জেড. এ ভুট্টো রাওয়ালপিন্ডিতে এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, দেশের জন্য তিনি একটি গ্রহণযোগ্য ও স্থায়ী শাসনতন্ত্র চান। দেশ হবে একটি খাঁটি ফেডারেশন এবং এভাবে তিনি আওয়ামী লীগের ৬-দফার প্রথম দফাটি সোজাসুজি স্বীকার করে নেন। ভুট্টো বলেন, চলতি মাসের শেষ দিকে তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, একটি ফেডারেশনের জন্য শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ব্যাপারে মতৈক্য হওয়া উচিত।
•  ইডেন গার্লস কলেজ ছাত্র ইউনিয়ন শাখার নবীন বরণ ও বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তন সহ-সভানেত্রী এবং পূর্ব পাকিস্তান মহিলা পরিষদের আহবায়িকা মালেকা বেগম। বিশেষ আমন্ত্রণক্রমে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি নূরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। সবশেষে নবাগতাদের সম্মানে এক বিচিত্রানুষ্ঠান হয়। বিচিত্রানুষ্ঠানে সঙ্গীতে অংশগ্রহণ করেন, তাজিম সুলতানা, হেলেন আরজু, মেরী, খুকুমণি, পারভীন, লুৎফা, রাণী, রোজী, আজমেরী ও লুলু। কবিতা পাঠ করেন লুলু ফায়েজী, ইফফত মীর্জা। নৃত্য পরিবেশন করেন পলি। অনুষ্ঠানে পুরনোদের পক্ষ থেকে বক্তৃতা করেন দীপা দেব। নতুনদের পক্ষ থেকে আয়েশা সিদ্দিকা শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
• জে. এম সেন হলে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর বিপ্লবী নেতা সূর্য সেনের স্মৃতি দিবস উদযাপন করা হয়। প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক আবুল ফজলের সভাপতিত্বে মাস্টার দা সূর্য সেনের বিপ্লবী জীবনের বিভিন্ন দিক আলোকপাত করে বক্তৃতা করেন সূর্য সেনের অন্যতম সহযোগী পূর্ণেন্দু দস্তিদার, কালিপদ চক্রবর্তী, আবদুস সাত্তার, বিনোদবিহারী চৌধুরী, মওলানা আহমেদুর রহমান আজমী ও অনিল গুহ। মাস্টারদার স্মরণে কবিতা পাঠ করেন দীপক জ্যোতি আইচ। সভায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়:-
১. মাস্টার দা সূর্যসেনের স্মৃতি রক্ষায় রাউজান থানার নয়াপাড়া গ্রামে তাঁর ভিটিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ।
২. ১৯৫৬ সালে জালালাবাদে শহীদ স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ব পাকিস্তান পরিষদে যে সর্বসম্মতি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল আইয়ুবের স্বৈরাচারী শাসনের জন্য তা প্রতিষ্ঠিত করা হয়নি- এখন ঐ প্রস্তাবকে অবিলম্বে কার্যকর করা হোক।
৩. এই সভা চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ সম্পাদক ও নব নির্বাচিত এম. এন. এ. এম. এ আজিজের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে এবং তাঁর মৃত্যুতে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন  করার শপথ গ্রহণ করছে এবং তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছে।
১৪ জানুয়ারি, ১৯৭১
• প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর সাথে দুই দিনের বৈঠক শেষে করাচীর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। ঢাকা ত্যাগের পূর্বে বঙ্গবন্ধুর সাথে তিনি কী আলোচনা করেছেন জানতে চাইলে প্রেসিডেন্ট বলেন, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান দেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। শেখ সাহেব ভার নিলে আমি থাকবো না। তিনি আরও বলেন, শ্রীঘ্রই শেখ মুজিবের সরকার হতে যাচ্ছে।
• এনা পরিবেশিত খবরে প্রকাশ, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান করাচীর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগের পূর্বে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “উত্তরাধিকার সূত্রে আমি খারাপ অর্থনৈতিক অবস্থা পেয়েছি এবং আমি তা শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে দিতে যাচ্ছি।” তিনি বলেন, “১৯৬৮ সাল থেকে দেশে ব্যাপক হারে ‘ঘেরাও ও জ্বালাও’ চলে এবং তারপর আসে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যা অর্থনৈতিক অবস্থাকে পর্যুদস্ত করার পক্ষে যথেষ্ট।” প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, “আমার কাছে কোন যাদুদণ্ড নেই এবং অগ্রগতি সাধনের কোন সংক্ষিপ্ত পন্থা নেই।”
• রোকেয়া হল ছাত্রী সংসদের উদ্যোগে রোকেয়া হলের নির্মনায়মাণ শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী।
১৫ জানুয়ারি, ১৯৭১
• মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী রাজশাহীতে স্থানীয় মাদ্রাসা ময়দানে এক জনসভায় ভাষণদানকালে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শোষণের অবসান ঘটানোর জন্য জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম শুরু করার আহবান জানান। তিনি লাহোর প্রস্তাবের আশু বাস্তবায়নের দাবি জানান। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এ দাবি সমর্থন করে কিনা তা নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রতি আহবান জানান। ভাসানী বলেন, তিনি জনগণের অন্তরের কথাই ধ্বনিত করছেন। তথাকথিত সংহতির সস্তা শ্লোগান ও ‘ইসলাম বিপন্ন’ এ ধুয়ায় জনগণকে আর বিভ্রান্ত করা যাবে না। তিনি বলেন, বিগত ২৩ বছরে জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্পপতিদের হাতে শোষিত হয়েছে। মওলানা ভাষানী অভিযোগ করে বলেন, শোষকের গুলিতে প্রাণ বিসর্জন দিতে তিনি প্রস্তুত কিন্তু জনগণের অধিকারের প্রশ্নে আপোষ করবেন না। এই সভায় জনাব মশিউর রহমানও বক্তৃতা করেন।
• প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আজ করাচীতে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর স্মৃতিসৌধ নির্মাণ সমাপ্তি উপলক্ষে তা পরিদর্শনকালে বলেন, যে মহান ব্যক্তির বিচক্ষণতা, আন্তরিক ও নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগে পাকিস্তান অর্জিত হয়েছে কায়েদে আজমের স্মৃতিসৌধ তার স্মৃতিচিহ্ন হয়ে থাকবে। প্রেসিডেন্ট মাজারে ফাতেহা পাঠ করেন।
• পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জেড. এ. ভুট্টো বলেন, জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন এবং পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও সংহতির গ্যারান্টি সম্বলিত শাসনতন্ত্র প্রণয়নে তার দল সবরকম সহযোগিতা প্রদান করবে। ভুট্টো সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন, প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী বা এরূপ কোনো পদ লাভের অভিলাষ তাঁর নেই। তিনি বলেন, তাঁর দল জনগণের কাছে একটি কর্মসূচি ও ঘোষণাপত্র প্রদান করেছে। সব রকমের শোষণের অবসান ঘটানোর জন্য এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচি রদবদল বা তা হতে সরে যাওয়া যায় না।
• ‘দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার’- এর সংবাদদাতা বিচারাধীন আসামী সৈয়দ নজিউল্লাহকে চিকিৎসার জন্য বিশেষ সামরিক আদালতের নির্দেশে আজ সকালে সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। পরে সন্ধ্যায় তাঁকে স্থানীয় কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।
১৬ জানুয়ারি, ১৯৭১
• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল সমিতির এক প্রতিনিধি দলকে সাক্ষাৎ দান করেন এবং ধৈর্যের সাথে তাঁদের বক্তব্য শোনেন। প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব করেন সমিতির সভাপতি ডা. মোহাম্মদ সালেহ চৌধুরী।
• মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব স্যার সলিমুল্লার ৫৫তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে ঢাকা শহর কাউন্সিল মুসলিম লীগ এক সভার আয়োজন করে। সভায় মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তাঁর ঐতিহাসিক ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়।
• আজ সরকারি মহল সূত্রে ঘোষণা করা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান আগামীকাল দুই দিনের সফরে করাচী থেকে লারকানায় পৌঁছবেন। উক্ত সূত্রে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট সকাল ১১টায় বিমানযোগে মহেঞ্জোদারো পৌঁছবেন ও সেখান থেকে ভুট্টোর লারকানাস্থ বাসভবনে আল মুর্তজায় যাবেন। সেখানে তিনি ভুট্টোর সাথে আলোচনায় মিলিত হবেন। পরদিন সকালে প্রেসিডেন্ট হাঁস শিকারের জন্য ব্রিজ লেক যাত্রা করবেন। সেখান থেকে প্রেসিডেন্ট করাচী প্রত্যাবর্তন করবেন। সকালে প্রেসিডেন্ট কায়েকজন এম. এন. এ এবং কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথে স্থানীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবেন। এ ব্যাপারে ভুট্টোর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তিনি জরুরি কাজে ব্যস্ত আছেন বলে পিপলস পার্টি সূত্রে জানা যায়। পরে ভুট্টো সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামীকাল সম্পর্কে তাঁর কিছু বলার নেই।’
১৭ জানুয়ারি, ১৯৭১
• পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জেড এ ভুট্টো এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, তাঁর দল জনগণের কাছ থেকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন এবং দৃঢ়ভাবে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বন ও গণতন্ত্র পুঃনপ্রতিষ্ঠার পক্ষে ম্যান্ডেট লাভ করেছে। তিনি তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেন, নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে উল্লেখযোগ্য সমঝোতায় আসতে তাঁর দল চেষ্টার কসুর করবে না। টেলিভিশনে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির খান আবদুল ওয়ালী খান, কাইয়ুম মুসলিম লীগের সভাপতি মিয়া মমতাজ মোহাম্মদ খান দৌলতানাসহ অন্যান্য দলীয় নেতারও নির্বাচনোত্তর সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়।
• প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দুই দিনব্যাপী লারকানা সফরের উদ্দেশ্যে করাচী থেকে মহেঞ্জোদারো বিমানবন্দরে পৌঁছার পর সাংবাদিকদের সাথে আলোচনায় মিলিত হন। তিনি তাঁর দৃঢ় অবস্থান পুনরুল্লেখ করে বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শাসনতন্ত্র প্রণয়ন সমাপ্ত হবে। আলোচনাকালে প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি ইচ্ছা করে শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের ভাবি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নামকরণ করেননি। কিন্তু তিনি তাই পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি বলেন, কারণ শেখ মুজিব সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা এবং পার্লামেন্টরী পদ্ধতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাই প্রধানমন্ত্রী হয়ে থাকেন। যাই হোক, শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রী নাও হতে পারেন। আমি তাঁকে জোর করতে পারি না বলে তিনি উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য প্রেসিডেন্ট লারকানা সফরকালে ভুট্টোর সাথে বৈঠক করবেন। ভুট্টোর পর আর কোনো নেতার সাথে বৈঠকে বসবেন কিনা এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সব গোপন কথা বলে দেব না, এ ব্যাপারে কিছু করার সময় হয়নি। প্রেসিডেন্টকে ভুট্টোর সাথে বৈঠক সম্পর্কে বলতে অনুরোধ করলে তিনি বলেন, আমি জনাব ভুট্টোর অতিথি। তিনিই আগে কিছু বলবেন, আমি পরে কিছু বলতে পারি। এসময় ভুট্টো যোগ দিয়ে বলেন, রাষ্ট্রপ্রধানই বলার বিষয় ঠিক করবেন।
• ভুট্টোর লারকানাস্থ বাসভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও ভুট্টো এক দীর্ঘ আলোচনা বৈঠকে মিলিত হন। তাদের দু’জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনার বিষয় সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। তবে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে ভুট্টো সন্ধ্যার দিকে প্রেরিত এক বাণীতে বলেন, আজ সংবাদপত্রের জন্য বলার কিছু নেই। আগামীকাল কিছু বলা যাবে। অবগত মহলের মতে বৈঠক ভুট্টো ও প্রেসিডেন্টের মধ্যে বেশিরভাগ সময় সীমাবদ্ধ থাকে। তবে কিছুক্ষণের জন্য সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খান ও প্রেসিডেন্টের সঙ্গী লে. জে. পীরজাদা বৈঠকে যোগ দেন।
• আজ থেকে প্রদেশব্যাপী ‘১১- দফা সপ্তাহ’ শুরু। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন ১১- দফার শহীদদের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে প্রথম দিনের অনুষ্ঠানের সূচনা করবে। ১১- দফা সপ্তাহের প্রতিটি কর্মসূচিকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য ছাত্র ইউনিয়ন সকল ছাত্র-ছাত্রী ও জনগণের প্রতি আহবান জানিয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগও ১১-দফা সপ্তাহ পালনে সকাল সাতটায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণের মাধ্যমে প্রথম দিনের কর্মসূচি পালন করবে।
• মওলানা ভাসানী পাঁচবিবিতে তাঁর নিজ বাসভবনে এক সাক্ষাৎকারে লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ়তা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তান সব সময় শোষিত হয়েছে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের কায়েমী স্বার্থবাদী মহল ও শাসক শ্রেণী দ্বারা নিপীড়িত হয়েছে। এই শোষণ নিপীড়ন লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নের মাধ্যমেই বন্ধ হতে পারে বলে তিনি দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করেন। ভাসানী অধিকৃত- কাশ্মীরে শেখ আবদুল্লাহ ও তাঁর সহযোগীদের উপর কাশ্মীরে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা আরোপের নিন্দা করেন। তিনি এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানান। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ ব্যাপারে দোষীদের গ্রেফতার করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানান। তিনি উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলিতে অনিয়মিত ট্রেন চলাচলের সমালোচনা করে যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত দাবি করেন।
১৮ জানুয়ারি, ১৯৭১
• পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন আহুত ১১- দফা সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন। এ উপলক্ষে ঢাকায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক ছাত্র হলগুলোতে কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, ইডেন গার্লস কলেজ ও টি এন্ড টি কলেজসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মী সভায় মিলিত হয়।
• প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সকালে লারকানা থেকে ২১ মাইল দূরে ড্রিগ হ্রদে পাখি শিকারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে ভুট্টোর বাসভবনে সমবেত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য এবং লারকানার বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রতি বলেন, দেশে জনগণের সরকার ক্ষমতাসীন হলে বর্তমান অনিশ্চিত অবস্থার শীঘ্রই অবসান ঘটবে। প্রেসিডেন্ট আজ করাচীর উদ্দেশ্যে লারকানা ত্যাগের পূর্বে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে বলেন, ভুট্টোর সাথে তার আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা খোলামনে মতবিনিময় করেছি। ভুট্টো ও আমার মত অনেক ব্যাপারেই মিলে গেছে। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি কোনো কিছু বলা যাবে না। তিনি বলেন যে, ভুট্টো ও শেখ মুজিবুর রহমান পরস্পরের সাথে আলোচনা করবেন। প্রেসিডেন্ট এই সফরকে তাঁর অবকাশ সফর বলে জানান।
১৯ জানুয়ারি, ১৯৭১
• ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ জন বিশিষ্ট শিক্ষক এক যুক্ত বিবৃতিতে জাতীয় পুনর্গঠন সংস্থাকে (বিএনআর) জাতীয় একাডেমীতে রূপান্তরিত করার প্রচেষ্টার বিরোধিতা করে অবিলম্বে পূর্ব বাংলার সাংস্কৃতিক স্বার্থ-বিরোধী এই সংস্থা বিলোপের দাবি জানান। উল্লেখ্য, ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান এই সংস্থা (বিএনআর) প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এর কার্যকলাপ গণমনে সন্দেহের সৃষ্টি করে। এই সংস্থা আজো পূর্ব বাংলার সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকে ধ্বংস করার প্রয়াসে নিযুক্ত প্রতিক্রিয়ার ঘাঁটি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এই সংস্থা বিলোপের বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন, ড. মুহাম্মদ এনামুল হক (বাংলা), ড. মোফাজ্জল আহমদ চৌধুরী (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), ড. ওয়াহিদুল হক (অর্থনীতি), ড. আহমদ শরীফ (বাংলা), অধ্যাপক রেহমান সোবহান (অর্থনীতি), ড. রমজান আলী সরদার (গণিত), অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (বাংলা), অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ মিয়া (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), ড. হানিফ ফউক (উর্দু), ড. আবুল খায়ের (ইতিহাস), ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (ইংরেজী), ড. বিলায়েত হোসেন (পদার্থবিদ্যা), ড. জিল্লুর রহমান খান (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), ড. অজয় রায় (পদার্থবিদ্যা), অধ্যাপক জয়নুল আবেদীন (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), অধ্যাপক সাদ উদ্দিন (সমাজবিজ্ঞান), অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন (ইতিহাস), অধ্যাপক আহসানুল হক (ইংরেজী) ও অধ্যাপক লুৎফুল হক (ভূগোল)।
• পূর্ব পাকিস্তান মহিলা পরিষদের আহবানে দ্রব্যমূল্য হ্রাস ও মহিলাদের চলাফেরার নিশ্চয়তা বিধানের দাবিতে রাজধানীতে সমাবেশ, মিছিল ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকারী মহিলারা মিছিল করে প্রাদেশিক গভর্নর ভবনের সামনে যান এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল গভর্নরের সাথে দেখা করেন, স্মারকলিপি পেশের চেষ্টা করেন; কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার জন্য তাঁরা ব্যর্থ হন। পূর্ব পাকিস্তান মহিলা পরিষদের সভানেত্রী কবি সুফিয়া কামাল এই সমাবেশে সভানেত্রীত্ব করেন। সভায় বক্তৃতা করেন মিসেস হামিদা রহমান। তিনি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং মহিলাদের চলাফেরায় নিরাপত্তাসহ বন্যা সমস্যার জরুরি সমাধান দাবি করেন। সভায় মতিয়া চৌধুরীও বক্তৃতা করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও ছাত্রদের গ্রেফতারের সময় প্রশাসন কর্তৃপক্ষ একেবারে ‘ন্যাকা’ সেজে থাকেন। তিনি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। সভানেত্রীর ভাষণে বেগম সুফিয়া কামাল মহিলাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় মহিলাদের সংগঠনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হতে আহবান জানান।
• রাওয়ালপিন্ডির সাপ্তাহিক ‘ইন্টার উইং’ পত্রিকায় একটি নিবন্ধ প্রকাশের অভিযোগে বিচারাধীন শামসুদ্দোহা ও সৈয়দ নজিউল্লাহ আজ তাঁদের কৌশলী প্রত্যাহার করেছেন। তাঁরা আদালতকে জানান, তাঁরা আদালতে সরকারি সাক্ষীদের কোনো জেরা অথবা আদালতে কোনো বিবাদী সাক্ষী দাঁড় করাবেন না। তারা বলেন, আমরা এটা আদালতের কৃপার উপর ছেড়ে দিয়েছি। আদালত শামসুদ্দোহার জামিনের আবেদন নাকচ করে দেয়। অন্যদিকে কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতাল থেকে সৈয়দ নজিউল্লাহর স্বাস্থ্য সম্পর্কিত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তাঁর জামিনের আবেদন বিবেচনাধীন রয়েছে।
• সিন্ধু জাতীয় ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আহমদ খান জামিলী নয়া শাসনতন্ত্রে পাকিস্তানকে একটি বহুজাতিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করার জন্য জাতীয় পরিষদের সদস্যদের প্রতি আহবান জানান। এক বিবৃতিতে তিনি নয়া শাসনতন্ত্রে সকল প্রদেশকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদানের দাবি জানান। তিনি বলেন, সিন্ধি, বেলুচ, পশতু ও পাঞ্জাবিকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা এবং সংশ্লিষ্ট প্রদেশের সরকারি ভাষা ঘোষণা করা উচিত। তিনি দ্বি- কক্ষ আইন পরিষদ এবং জমির মালিকানার সর্বোচ্চ সীমা একশত একর ধার্য করার সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, সিন্ধুর সরকারি ভাষা শুধুমাত্র সিন্ধি হওয়া উচিত এবং সিন্ধি ভাষায় সিন্ধু পরিষদের কার্যবিবরণী পরিচালনার দাবি জানান।
২০ জানুয়ারি, ১৯৭১
• ১১- দফা সপ্তাহের আজ চতুর্থ দিন। এ উপলক্ষে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের পৃথক আহবানে শহরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণ ধর্মঘট পালিত হয়। ১১- দফা সপ্তাহের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের আহবানে বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্র জমায়েত, সকালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে যথাক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় বটতলা ও মধুর কেন্টিনে ছাত্র সভা। বিকালে পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে পল্টন ময়দানে এক জনসভা ও ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর উদ্যোগে গণ-সঙ্গীতের আসর অনুষ্ঠিত হয়।
• প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ৫দিন করাচীতে অবস্থানের পর আজ সকালে রাওয়ালপিন্ডি এসে পৌঁছেন।
• পাঞ্জাব কাউন্সিল সুসলিম লীগের সভাপতি সরদার শওকত হায়াত খাঁ প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং কিছু সময় তাঁর সাথে অবস্থান করেন।
২১ জানুয়ারি, ১৯৭১
• ২১-দফা সপ্তাহ পালনের আজ পঞ্চম দিন। এ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রদের এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল ইসলাম এবং বক্তৃতা করেন ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা শহর সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক নিজামউদ্দিন আজাদ, কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সম্পাদক আবুল কাশেম, কেন্দ্রীয় সংসদের সহ সভানেত্রী আয়শা খানম। সভায় অবিলম্বে নিরাপত্তা আইনে আটক জননেতা মণি সিংসহ সকল ছাত্র, শ্রমিক ও রাজবন্দীর মুক্তি, আইনগত কাঠামো আদেশ বাতিল, গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র রচনার দাবি কমিউনিস্ট পার্টির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার প্রভৃতি দাবি সম্বলিত প্রস্তাব গৃহীত হয়।
• আজ ‘শহীদ আনোয়ারা দিবস’। এ উপলক্ষে নাখালপাড়া আওয়ামী লীগ মহিলা শাখার উদ্যোগে ৫০৭ নং নাখালপাড়ায় এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভানেত্রীত্ব করেন বেগম জেবুন্নেসা এবং প্রধান অতিথির আসন গ্রহণ করেন নগর আওয়ামী লীগ মহিলা সম্পাদিকা বেগম সাজেদা চৌধুরী। এছাড়া ‘শহীদ আনোয়ারা দিবস’ উপলক্ষে সকাল সাতটায় শহীদ আনোয়ারার বাসভবনে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণপূর্বক খালি পায়ে মিছিল করে শহীদ আনোয়ারার মাজারে গমন এবং সেখানে ফুল দেয়ার পর মোনাজাত করা হয়।
• কো-অর্ডিন্যান্স কাউন্সিল অব এসোসিয়েশন অব দি পাবলিক এমপ্লয়িজ অব পাকিস্তান (কোকাপেপ) কর্তৃক এ. জি. ই. পি প্রাঙ্গণে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কর্মচারীদের এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় জীবনধারণের ব্যয়বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে অনতিবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন বেতন মঞ্জুর করার দাবি জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন এম এ রশীদ।
২২ জানুয়ারি, ১৯৭১
• রাওয়ালপিন্ডিতে ‘ইন্টার উইং’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধের জন্য ‘পাকিস্তান অবজারভার’ এর প্রতিনিধি সৈয়দ নজিউল্লাহ ও ‘ইন্টার উইং’ পত্রিকার সম্পাদক এ আর দোহার বিরুদ্ধে আনীত মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। তাঁরা তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ খণ্ডন করে আজ জবাব দান করেন। তাঁরা যুক্তি দাখিল করে বলেন যে, তাঁরা দোষী নন। উক্ত সাপ্তাহিকীর মুদ্রাকরকে প্রেস এন্ড পাবলিকেশন অর্ডিন্যান্সের আলোকে জেরা করা হয়। এর আগেও তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছিল। অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে জেলে প্রথম শ্রেণীর ব্যবস্থা করা ও রাওয়ালপিন্ডিতে রাখার জন্য আবেদন করা হয়েছে।
• ঢাকায় নিযুক্ত যুগোস্লোভিয়ার কন্সাল মি. মিরকোই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খন্দকার মোস্তাক আহমেদের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন।
• পাকিস্তান গার্ল গাইড সমিতির কমিশনার বেগম জি.এ.খান প্রেসিডেন্টের পূর্ব পাকিস্তান সাহায্য তহবিলে সমিতির পক্ষ থেকে দশ হাজার টাকা সাহায্য প্রদান করেন। এ নিয়ে সমিতির পক্ষ থেকে সর্বমোট পঁচিশ হাজার টাকা সাহায্য দেওয়া হয়।
২৩ জানুয়ারি, ১৯৭১
• পিপলস পার্টির হাই কমান্ড ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি আজ সকালে জেড. এ. ভুট্টোর ক্লিফটনস্থ বাসভবনে তাঁর সভাপতিত্বে বৈঠকে মিলিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, জনাব ভুট্টো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাতের জন্য ২৭ জানুয়ারি ঢাকায় ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করবেন। বৈঠকের প্রথম অধিবেশনের পর পিপলস পার্টির করাচী অঞ্চলের চেয়ারম্যান এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল হাফিজ পীরজাদা সাংবাদিকদের উক্ত তথ্য প্রদান করে বলেন, তাদের দলীয় প্রতিনিধিদল পাঁচদিন ঢাকায় অবস্থান করবে।
• টঙ্গী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির উদ্যোগে টঙ্গী বোর্ড বাজারে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় ১১-দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা, বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের জাতিগত সমস্যা সমাধানের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকারসহ পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রদানের দাবি জানানো হয়। জনসভায় ন্যাপ নেতা শ্রী মণীন্দ্র গোস্বামী সভাপতিত্ব করেন। এছাড়া প্রাদেশিক ন্যাপ সম্পাদক সৈয়দ আলতাফ হোসেন টঙ্গী জয়দেবপুর থানা ন্যাপ শাখার সভাপতি সিরাজুল হক বক্তৃতা করেন। সৈয়দ আলতাফ হোসেন ১১-দফা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন যে, ন্যাপ এর লক্ষ্যে উপণীত হওয়ার জন্য বিরামহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। সভায় গৃহীত প্রস্তাবে মণি সিংসহ সকল রাজবন্দীর অবিলম্বে মুক্তি দাবি করা হয়।
• পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন আহূত ১১-দফা সপ্তাহের আজ শেষ দিন। এ উপলক্ষে ঢাকায় ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে ‘মশাল মিছিল’ বের করা হয়। ‘মশাল মিছিল’ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বের হয়ে বিভিন্ন রাজপথ প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে ‘১১-দফার সংগ্রাম চলবেই’, ‘শোষক গোষ্ঠীকে খতম কর’, ‘বিপ্লবী সংগ্রাম গড়ে তোলো’, ‘জেলের তালা ভাঙবো রাজবন্দীদের আনবো’, ‘জননেতা মণি সিং-এর মুক্তি চাই’, ‘কমুনিস্ট পার্টিকে বেআইনী রাখা চলবে না’, ‘চাল ডাল তেলের দাম কমাতে হবে’, ‘অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা চাই নইলে এবার রক্ষা নাই’ ইত্যাদি স্লোগান প্রদান করে। সবশেষে মিছিলটি বাহাদুর শাহ পার্কে এসে সংক্ষিপ্ত সভায় মিলিত হয়। সেখানে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল ইসলামের ভাষণের মধ্য দিয়ে ১১-দফা সপ্তাহের কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
• ১১-দফা সপ্তাহের শেষ দিনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের উদ্যোগেও ঢাকার বায়তুল মোকাররম থেকে ‘মশাল মিছিল’ বের করা হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে।
২৪ জানুয়ারি, ১৯৭১
• শোষণমুক্তির সংগ্রামের নবতর বলিষ্ঠ শপথ গ্রহণের মাধ্যমে প্রদেশের সর্বত্র ১১-দফার মহান ‘গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ পালিত হয়। এই দিবসে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন, পূর্ব বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলা ছাত্রলীগ, নবকুমার ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা গঠিত মতিউর স্মৃতি কমিটি- প্রভাতফেরী, মিছিল, পথসভা ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করে। বিভিন্ন কলকারখানার শ্রমিক ও অন্যান্য সংগঠনও এই দিবস পালন করে। ঢাকা শহর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় শ্রমিক লীগ পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগের কর্মসূচি বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করে। সব অনুষ্ঠানেই ১১-দফার পূর্ণ বাস্তবায়ন, ১১-দফা ভিত্তিক স্বায়ত্তশাসন, রাজবন্দীদের মুক্তি, দ্রব্যমূল্য হ্রাস, বকেয়া খাজনা মওকুফ ও সর্বোপরি জাতীয় পরিষদের সার্বভৌমত্বের দাবি সোচ্চার হয়ে ওঠে।
• গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগ আহূত জনসভায় সভাপতির ভাষণে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সভাপতি নূর-এ-আলম সিদ্দিকী বলেন যে, দেশের ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্রে যদি ৬-দফা ও ১১- দফার একটি দাড়ি-কমাও বাদ দেওয়া হয় তাহলে তুমুল প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে যাতে খাজনা-ট্যাক্স প্রদান বন্ধ হবে, অফিস আদালত, কল-কারখানায় তালা ঝুলানো হবে। জনসভায় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি আ. স. ম আব্দুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস মাখন, ছাত্রলীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ও নব-নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য খালেদ মোহম্মদ আলী প্রমুখ বক্তৃতা করেন। সভাশেষে একটি গণসঙ্গীতের আসর অনুষ্ঠিত হয়।
• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সঙ্গীত শিল্পীসমাজ কর্তৃক তাঁর সন্মানে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। ভাষণদানকালে তিনি বলেন যে, বাংলার মহান কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও অন্যান্যদের প্রতি উপযুক্ত সন্মান প্রদর্শন করা হয়নি। তিনি শিল্পী ও সংস্কৃতিসেবীদের আশ্বাস প্রদান করেন যে, দেশের এই অংশে পৃথক ও সাধারণ একাডেমী প্রতিষ্ঠা করা হবে। বঙ্গবন্ধু অভিযোগ করে বলেন, বিগত বছরগুলিতে আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিকে শাসকগোষ্ঠী ও প্রতিক্রিয়াশীল চক্র নিজেদের স্বার্থে বিকৃত করেছে। রেডিও পাকিস্তান নজরুল সঙ্গীতের শব্দ পরিবর্তন করে প্রচার করেছে। আমাদের মেয়েরা কপালে টিপ পরলে তাদের হিন্দু আখ্যায়িত করার জন্য তথাকথিত পূজারীরা উঠে পড়ে লাগতো। তিনি বলেন, অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শুধু জনগণ এবং রাজনীতিকদের একার দায়িত্ব নয়। জাতীয় কল্যাণে শিল্পীরাও বিরাট দায়িত্ব পালন করতে পারে। বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, দেশাত্ববোধক সঙ্গীত রচনা করার জন্যই বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামকে কারাগারে যেতে হয়েছিল। অনুষ্ঠানে সভানেত্রীত্ব করেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী লায়লা আর্জুমান্দ বানু। বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তৃতা করেন সঙ্গীতশিল্পীদের পক্ষ থেকে সুরশিল্পী সমর দাস, কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌসী রহমান, সৈয়দ আবদুল হাদী, আঞ্জুমান আরা বেগম, মুস্তফা জামান আব্বাসী প্রমুখ।
• ১১- দফা গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম বীর শহীদ কিশোর মতিউর রহমানের আজ দ্বিতীয় স্মৃতিবার্ষিকী। এ উপলক্ষে ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউটে এক ছাত্র জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই ছাত্র জনসভায় শহীদ মতিউর রহমানের পিতা আজহারুল হক মল্লিক, ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি আ. স. ম আব্দুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন প্রমূখ বক্তৃতা করেন। এছাড়া শহীদ মতিউর স্মৃতি স্মরণে নবকুমার ইনস্টিটিউটের ছাত্ররা কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরী, কোরআনখানি প্রভৃতি কর্মসূচি পালন করে।
• পাকিস্তান ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কে. জি মোস্তফা পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের তিনদিন ব্যাপী বার্ষিক সাধারণ সভার উদ্বোধনী ভাষণে সাংবাদিকদের দ্বিতীয় বেতন বোর্ড অবিলম্বে সক্রিয় করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। তিনি প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স অর্ডিন্যান্স বাতিল, জাতীয় পুনর্গঠন ব্যুরো ও পাকিস্তান কাউন্সিল বিলুপ্তির দাবি করেন। উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল্লাহ কায়সার। তিনি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অব্যাহত রাখার জন্য আহবান জানান এবং অবিলম্বে সৈয়দ নজিউল্লাহ ও শামসুদ্দোহাসহ দেশের সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবি করেন। উদ্বোধনী অধিবেশনে কূটনৈতিক মিশনের সদস্য ছাড়াও বেশকিছু গণ্যমান্য অতিথি যোগদান করেন।
২৫ জানুয়ারি, ১৯৭১
• প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক ঘোষণা সত্ত্বেও ছাত্রনেতা মাহবুব উল্লাহসহ বহু রাজবন্দী মুক্তি না পাওয়ায় প্রদেশের ১১ জন বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও কবি এক যুক্ত বিবৃতিতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে ছাত্রনেতা মাহবুব উল্লাহসহ সকল রাজনৈতিক নেতা, ছাত্র ও শ্রমিক বন্দীর মুক্তি দাবি করেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষর দাতারা হলেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, আলী আশরাফ, আতাউস সামাদ, হাসান হাফিজুর রহমান, কামাল লোহানী, নির্মল সেন, ফজল শাহাবুদ্দিন, সানাউল্লাহ নূরী, আহমেদ হুমায়ুন, ফকির আশরাফ ও শামসুর রহামন।
• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ভুট্টোর আসন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের প্রথম পর্যায়ে পিপলস পার্টির চার সদস্যের একটি দল ঢাকার উদ্দেশ্যে করাচী ত্যাগ করে। দলের মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিরাজ মোহাম্মদ খান, ড. মোবাসসির, হানিফ রামে, জহির মোহাম্মদ খান। দলীয় নেতা তারিক আজিজ দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধি দলের সাথে থাকবেন।
• বিশ্বব্যাংক প্রকল্পসমূহের প্রধান বার্নার্ড চাদেনেট চারদিনব্যাপী পূর্ব পাকিস্তান সফরের উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটন থেকে ঢাকা আগমন করেন। পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানকালে তিনি ঘূর্ণিবার্তা বিধ্বস্ত অঞ্চলের পুনর্গঠন কর্মসূচি এবং প্রদেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যকরী কর্মসূচির পর্যালোচনা করবেন।
• ভুট্টো করাচীতে বলেন যে, সিন্ধুর জনগণের ইচ্ছানুযায়ী ভাষা সমস্যার একটি কার্যকরী ও ন্যায়সঙ্গত সমাধান বের করার উদ্দেশ্যে তার দল শীঘ্রই একটি কমিটি গঠন করার পক্ষপাতি। প্রস্তাবিত কমিটি ভাষাবিদ ও শিক্ষাবিদদের নিয়ে গঠন করা হবে এবং তারা সামগ্রিক ভাষা প্রশ্নটি পর্যালোচনা করে সিন্ধু প্রদেশের জনগণের ইচ্ছানুযায়ী এর সমাধান করবেন। সিন্ধু প্রদেশে উর্দু ও সিন্ধু উভয় ভাষাই যোগ্যস্থান লাভ করবে বলে ভুট্টো জানান। তিনি বলেন, শীঘ্রই একটি গণসরকার গঠিত হতে যাচ্ছে। কাজেই ভাষার এই প্রশ্নটি মিমাংসার দায়িত্ব গণপ্রতিনিধির ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। ভুট্টো বলেন যে, সরকার গঠন করা আমাদের প্রথম কাজ। কেননা জনগণ এরই ম্যান্ডেট প্রদান করেছে। ভাষা প্রশ্ন নিয়ে বিরোধে অবতীর্ণ না হওয়া এবং নিজেদের কায়েমী স্বার্থবাদীদের দ্বারা বিভ্রান্ত না হতে দেওয়ার জন্য ভুট্টো সিন্ধি ও অসিন্ধিদের প্রতি আবেদন জানান।
২৬ জানুয়ারি, ১৯৭১
• মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকনাথ ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন, একমাত্র লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সার্বভৌম পূর্ব পাকিস্তান গঠনের মাধ্যমেই বাঙালিদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সকল প্রকার শোষণের অবসান হতে পারে। এর জন্য অবিলম্বে ৭ কোটি পূর্ব পাকিস্তানির আন্দোলন শুরু করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ১৯৪৭ সাল থেকে তিনি লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছেন। এতে পূর্ব বাংলা স্বাধীন রাজ্য গঠনের প্রস্তাব ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। নিজেদের মুক্তিলাভের জন্য তিনি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে সর্বস্ব ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকার আহবান জানান। শাসক শ্রেণীকে জনগণের মনোভাব উপলব্ধি এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতি নতি স্বীকার কারার আহবান জানান। তিনি আরও বলেন, বৃটিশ সরকার এদেশ থেকে হাত গুটিয়ে নিলেও এখনও এদেশে শোষণের অবসান হয়নি, বরং জনগণ এখন অন্য ধরনের সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা শোষিত হচ্ছে। শোষণের ধারা ও তার পরিণতি সম্পর্কে জনগণের পরিস্কার ধারণা সৃষ্টি হয়েছে এবং জনগণের মুক্তি আন্দোলন ঠেকাতে পারে এমন কোন শক্তি পৃথিবীতে নেই।
• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে নিখিল পাকিস্তান স্বর্ণকার ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির এক প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে প্রতিনিধিদল স্বর্ণকার ও স্বর্ণব্যবসায়ীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সম্পর্কিত একটি স্মারকলিপি বঙ্গবন্ধুর কাছে পেশ করেন। তারা স্বর্ণের ওপর ধার্যকৃত ১০ ভাগ বিক্রয় করের দরুণ উদ্ভুত পরিস্থিতি ব্যাখ্যাকালে জানান, এর ফলে ইতিমধ্যেই বহু স্বর্ণালঙ্কার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ৫০ লক্ষ লোক বেকার হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব করেন সমিতির আহবায়ক চৌধুরী খুরশীদ আহমদ নাসের, সাধারণ সম্পাদক নাসের আহমদ নাসের।
• করাচীতে প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এম. এম. আহম্মদ করাচীস্থ শিল্প ও বণিক সমিতির সভায় বলেন, দেশের রফতানি বাণিজ্যে সহায়তা করার জন্য শীঘ্রই আমদানি রফতানি ব্যাংক ধরনের একটি অত্যন্ত বিশেষজ্ঞ ব্যাংক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে। সভায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারি খাতে হবে কী না তা এ মুহূর্তে তার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। অপর এক প্রশ্নকর্তাকে তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তটি একটি স্বতন্ত্র সিদ্ধান্ত এবং সম্প্রতি ঋণের ব্যাপারে যে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে তার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। অপর এক খবরে প্রকাশ, এম. এম. আহম্মদকে উক্ত সভায় জনৈক সদস্য মুদ্রামান হ্রাস করার সম্ভাবনা আছে কি না জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।
২৭ জানুয়ারি, ১৯৭১
• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার উদ্দেশ্যে পিপলস পার্টি প্রধান ভুট্টো করাচী থেকে ঢাকা আগমন করেন। ঢাকা বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান, আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান, তাজউদ্দিন আহমদ ও জহীরুদ্দিন। পিপলস পার্টির কর্মী, সমর্থকগণ বিভিন্ন স্লোগান সহকারে বিমানবন্দরে ভুট্টোকে অভ্যর্থনা জানায়। ঢাকা পৌঁছার পর ভুট্টো বাংলা ভাষা আন্দোলনের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিদর্শন করেন।
• ভুট্টো তেজগাঁও বিমানবন্দরে পৌঁছার পর ভি আই পি লাউঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনায় মিলিত হন। আলোচনাকালে আওয়ামী লীগ যদি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করে তাহলে তাঁর মনোভাব কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে আমি শ্রদ্ধা করি।” তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের পক্ষে সরকার গঠন এবং পরিচালনা করা সম্ভব, কিন্তু একটি ফেডারেল রাষ্ট্র কাঠামোর শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ব্যাপারে “ঐকমত্যই হচ্ছে গণতন্ত্রের সারবস্তু।” ভুট্টো আওয়ামী লীগের ৬-দফা পড়ে দেখেছেন কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আপনি কী মনে করেন আমি আমার ঘরের পড়াশুনা করি না।” ৬-দফার প্রথম দফাটি তিনি যেখানে মেনে নিয়েছেন, সেখানে বাকি ৫টি দফা সম্পর্কে তাঁর মনোভাব কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাঁচটি দফা আলোচনা করা হবে। তিনি জানান, এ বিষয়ে আর কিছু বলবেন না। কারণ এতে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে এবং আওয়ামী লীগের সাথে তাঁর আলোচনা বিঘ্নিত হতে পারে।
• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভুট্টো শাসনতন্ত্র বিষয়ে আলোচনার জন্য বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডিস্থ বাসভবনে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠক শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তান সময় সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে এবং শেষ হয় ৮টা ২৫ মিনিটে। ৭৫ মিনিট স্থায়ী এই বৈঠকে তাঁদের সাথে কোন সহযোগী ছিলেন না। বৈঠক শেষে ভুট্টো প্রথমেই অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করতে পেরে আমি আনন্দিত। আমরা বহু বিষয়ে আলোচনা করেছি।” বঙ্গবন্ধু বলেন, “আমরা সবেমাত্র আলোচনা শুরু করেছি এবং তা অব্যাহত রাখবো।” বঙ্গবন্ধু এবং ভুট্টো যখন বৈঠক চালাচ্ছিলেন তখন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, কামরুজ্জামান প্রমুখ আওয়ামী লীগ নেতা এবং পিপলস পার্টির অন্যান্য নেতা অপর একটি কক্ষে অপেক্ষা করছিলেন। আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম একবার বৈঠক কক্ষে কয়েক মিনিটের জন্য ঢুকে বের হয়ে আসেন।
• পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস এডমিরাল এস. এম. আহসান ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীর বার্ষিক কুচকাওয়াজে বক্তৃতাকালে পুলিশ বাহিনীকে জনসাধারণের জন্য ন্যায়বিচার ও নিরপেক্ষতার সাথে কর্তব্য পালনের আহবান জানিয়েছেন। গভর্নর পুলিশ বাহিনীর কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সাহসিকতার জন্য কায়েদে আজম পুলিশ পদক ও প্রেসিডেন্টের পুুলিশ পদক বিতরণ করেন। গভর্নর বিগত নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, স্থিতিশীল সমাজব্যবস্থা  ছাড়া দেশের অগ্রগতি হতে পারে না। কাজেই পুলিশ বাহিনীকে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
২৮ জানুয়ারি, ১৯৭১
• বঙ্গবন্ধু ও ভুট্টোর মধ্যে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ভুট্টোর কক্ষে দ্বিতীয় দফা রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শুরু হয় বিকাল পৌঁনে পাঁচটায় এবং শেষ হয় ৫টা ৫৫ মিনিটে। দীর্ঘ ৭০ মিনিটকাল আলোচনার পর তা আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবি রাখা হয়। জাতীয় পরিষদ অধিবেশনের তারিখ নির্ধারণ সম্পর্কে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কী না এ প্রশ্নের জবাবে ভুট্টো বলেন, “আমাদের আলোচনার ক্ষেত্র বিশাল- তার কিছু আমরা আলোচনা করেছি আর বহু বিষয়ে আমরা আলোচনা করবো।”
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, “জাতীয় সকল সমস্যা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।” তাঁদের আলোচনা সন্তোষজনক বলে জানা গেছে। তবে তাঁরা কী আলোচনা করেছেন তা প্রকাশ পায়নি।
• পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (হাজারভী)-এর সভাপতি পীর মোহসেন উদ্দিন আহমদ (দুদু মিয়া) এক বিবৃতিতে মুজিব-ভুট্টো বৈঠকের সাফল্য কামনা করেছেন বলে এপিপি’র খবরে প্রকাশ।
• তুরস্কের সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এহসান সাবরী কাগলায়াঙ্গীল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডিস্থ বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন।
• মওলানা ভাসানী ফেনীতে এক জনসভায় বক্তৃতাকালে বলেন, কেবলমাত্র লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নের মাধ্যমেই পশ্চিমাঞ্চলীয়দের সকল প্রকার শোষণ বন্ধ করা সম্ভব। তিনি বলেন, পাক-ভারত উপমহাদেশের ১০ কোটি মুসলমানের প্রতিনিধি উক্ত প্রস্তাবে সম্মতি দান করেন। তিনি লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তান গঠনের দাবি জানান এবং বাঙালিরা যাতে সব রকমের শোষণ থেকে মুক্তি পেতে পারে তার জন্য তিনি লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছেন। ৭ কোটি বাঙালির আশা আকাক্সক্ষা পূরণ করার জন্য তিনি নবনির্বাচিত এম এন এ দের প্রতি আহবান জানান। বঙ্গবন্ধুর প্রতি আশীর্বাদ জ্ঞাপন করে তিনি বলেন, খোদা যেন শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশের অশুভ শক্তির মোকাবেলা করার মতো শক্তি দান করেন। আওয়ামী লীগের সাথে সংঘর্ষে না আসার জন্য তিনি দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দেন। নব-নির্বাচিত এম এন এ দের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মওলানা ভাসানী বলেন, তাঁরা বাংলার জনগণের দাবি পূরণ না করলে বাঙালিরা তাঁদের ক্ষমা প্রদর্শন করবে না।
• ইরানের সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরদেশীয় জাহেদী সকালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ভুট্টোর সাথে এবং বিকালে বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর ধানমন্ডিস্থ বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। জাহেদী ভুট্টোর সাথে ৭০ মিনিট এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে প্রায় আধাঘণ্টা অতিবাহিত করেন বলে এপিপি ও এনা পরিবেশিত খবরে প্রকাশ।
• সিন্ধুর গভর্নর লে. জেনারেল রাখমান গুল একদিনের সফরে এসে শুক্কুর রেল স্টেশনে সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করে বলেন, ভাষা এমন একটি সমস্যা নয়, যা নিয়ে এ স্তরে একটি আন্দোলন যুক্তিযুক্ত হতে পারে। এ ধরণের আন্দোলনের কোন কারণ আমি খুঁজে পাই না, যদি না এর পিছনে কোন মতলব থাকে। গভর্নর বলেন, ভাষা সমস্যাটি গণতান্ত্রিকভাবে নিষ্পত্তি করা যেতে পারে। আমরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেছি, এই প্রতিনিধিরা আইন পরিষদে বসে গণতান্ত্রিকভাবে এই সমস্যাটির নিষ্পত্তি করতে পারেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। ভাষা সমস্যার মতো সমস্যাগুলো সাধারণত পরিষদেই নিষ্পত্তি হয়ে থাকে বলে তিনি জানান।
• ঢাকার হাইকোর্টের ৩২ জন আইনজীবী এক যুক্ত বিবৃতিতে ঘূর্ণিদুর্গতদের সাহায্যে এ যাবৎ প্রাপ্ত অর্থ ও সাহায্য দ্রব্যাদি যেখানে যা ব্যয় করা হয়েছে তা-সহ সমুদয় প্রাপ্ত ত্রাণের পূর্ণ হিসাব প্রকাশের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। তাঁরা একই সঙ্গে স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রদত্ত বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণ যেসব এলাকায় যে যে শর্তে ব্যয় করা হয়েছে তা-সহ প্রাপ্ত সকল বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণের পূর্ণ হিসাব প্রকাশের জন্যও পাকিস্তান সরকারের কাছে দাবি জানান।
২৯ জানুয়ারি, ১৯৭১
• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভুট্টোর প্রাথমিক আলোচনা ঢাকায় শেষ হয়েছ। তাঁরা শাসনতন্ত্র প্রণয়নসহ বিভিন্ন জাতীয় সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। আলোচনায় কেউ মতৈক্যে পৌঁছতে পারেননি। উভয়ই আরও আলোচনার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। ভুট্টো আওয়ামী লীগের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দলীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করবেন। তিনি ঢাকা ত্যাগের আগে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তৃতা করবেন এবং সেখানে বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর আলোচনার ধরন সম্পর্কে আভাস দিবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
• বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবানের পরামর্শ দিয়েছেন বলে এপিপি পরিবেশিত খবরে প্রকাশ। বঙ্গবন্ধু ভুট্টোর সাথে আজ তৃতীয় ও শেষ দফা বৈঠকের পর সাংবাদিকদের জানান, তিনি ভুট্টোকেও একথা বলেছেন যে, শাসনতন্ত্র প্রণয়ণের জন্য এবং একটি বেসামরিক সরকার গঠন তরান্বিত করার জন্য অবিলম্বে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহূত হওয়া দরকার।
• ঘূর্ণি উপদ্রুত এলাকা সফরকালে ভুট্টো সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণদানকালে বলেন, কিছু সংখ্যক লোক শাসনতন্ত্র প্রণয়ন ও জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। পিপলস পার্টির নেতা ড. মোবাশির আলী ভুট্টোর সাথে উপদ্রুত এলাকা সফর শেষে ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের পর সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্য প্রকাশ করেন। ভুট্টো তাঁর দলের সাতজন সদস্য প্রাদেশিক রিলিফ কমিশনার আসাদুজ্জামান ও জনৈক সামরিক অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে একটি সামরিক বিমানে করে ঘূর্ণি উপদ্রুত এলাকা সফর করেন। পটুয়াখালীতে একটি আইনজীবী প্রতিনিধিদল ভুট্টোর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
• সিন্ধু জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন ও বেলুচ জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন যৌথভাবে আইনগত কাঠামো আদেশ (এলএফও) বাতিল এবং পাকিস্তানের সকল ফেডারেটিং ইউনিটের পূর্ণ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানান। সিন্ধু জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মেহের হোসেন শাহ এবং বেলুচিস্থান জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি নাসির বালুচ করাচীতে ডাউ মেডিক্যাল কলেজ ক্যান্টিনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই মর্মে যৌথভাবে অভিমত প্রকাশ করেন যে, পাকিস্তান একটি বহু ভাষাভাষী দেশ। তারা সিন্ধী, পাঞ্জাবি পাখতুন ও বেলুচী ভাষাকে জাতীয় ভাষার মর্যাদা দানের দাবি জানান।
• চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে বজলুস সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বক্তৃতাদানকালে বলেন, “বাংলার জনগণ অবশ্যই স্বাধীন ও সার্বভৌম পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করবে। এ জন্য বাঙালিরা যে কোন মূল্যদান এমনকি চরম ত্যাগ করতে হলেও পশ্চাদপদ হবে না।” তিনি বলেন, একমাত্র সমাজতন্ত্রই বাংলার মানুষের ভাগ্যোান্নয়ন করতে পারে। সমাজতন্ত্র অনুসরণ ছাড়া ফেরেস্তাও যদি ক্ষমতা গ্রহণ করেন তথাপি বাংলার কৃষক ও শ্রমিকের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না। কৃষক শ্রমিক রাজ প্রতিষ্ঠার জন্য বিপ্লব অপরিহার্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এছাড়া সাধারণ মানুষের সর্ববিধ মঙ্গল সাধিত হতে পারে না। এই পর্যায়ে জনসভায় দলীয় কর্মীগণ স্লোগান দেন-‘মুক্তির একই পথ বিপ্লব বিপ্লব’। তিনি জয় বাংলা স্লোগানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা না করার জন্য নব-নির্বাচিত আইন পরিষদ সদস্যদের হুঁশিয়ার করে দেন। জনসভায় তিনি লাহোর প্রস্তাব ব্যাখ্যা করেন এবং গত ২৩ বছর যাবৎ পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অবিচারের কাহিনীও বর্ণনা করেন।
৩০ জানুয়ারি, ১৯৭১
• পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়াম্যান জেড. এ. ভুট্টো সন্ধ্যা ছয়টায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আহুত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন, তিনি এবং তাঁর পার্টি জাতীয় ঐক্যের আওতার মধ্যে একটি কার্যক্রম ও গ্রহণযোগ্য শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য একটি স্থায়ী ফর্মূলা বের করতে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাবেন। তিনি বলেন, তাঁদের এখানে আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে মতৈক্যের ক্ষেত্রসমূহ খুঁজে বের করা এবং সাধারণ বিষয়গুলির অনুসন্ধান করা এবং ভ্রাতৃত্ব, সমঝোতা ও সহযোগিতার মনোভাব পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করা। বঙ্গবন্ধুর সাথে অনুষ্ঠিত তাঁর বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আলোচনার ক্ষেত্রে আমরা এমন এক জায়গায় এসে ঠেকেছি যা অত্যন্ত কঠিন। আলাপ আলোচনার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভুট্টো সংবাদপত্রসমূহকে নিরপেক্ষতা অবলম্বনের অনুরোধ জানান।
• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভুট্টো এম. এল নাবিক লঞ্চে চড়ে পাঁচ ঘণ্টা নৌ-ভ্রমণ করেন। দুই নেতার উক্ত নৌ-বিহারে শরীক ছিলেন এমন একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায় যে, বঙ্গবন্ধু ও ভুট্টোর ৭০ জনের বিরাট দলসহ নৌযানটি কিছুদূর যাওয়ার পর দুই নেতা একটি আলাদা ছোট্ট লঞ্চে আরোহণ করেন। তাঁরা সেখানে দুইঘণ্টাকাল আলোচনা করেন। তাঁদের মধ্যে এই দীর্ঘ আলোচনা সম্পর্কে দলের অন্যরা যদিও অজ্ঞ তথাপি তাঁদের মতে উভয় নেতা গত তিনদিনের বৈঠকের জের টেনে আলোচনা করেন। নৌ-বিহারে আওয়ামী লীগ দলের সৈয়দ নজরুল ইসলাম, খন্দকার মোস্তাক, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, মিজানুর রহমান, আবদুল মোমিন, নূরজাহান মোর্শেদ, বদরুন্নেসা আহমদ, সাজেদা চৌধুরী, গাজী গোলাম মোস্তফা, মোস্তফা সারওয়ার ও আওয়ামী লীগ দলীয় এম. এন. এ এবং এমপিএ-গণ ছিলেন বলে এপিপি’র খবরে প্রকাশ। পিপলস পার্টির মধ্যে ছিলেন জে. এ. রহিম, পীরজাদা আবদুল হাফিজ, হানিফ রামে, শেখ রশিদ, রফিক রাজা এবং মেজর জেনারেল থ্যাকার ও অন্যান্য নেতা। পিপলস পার্টি সূত্রে প্রকাশ ড. মোবাশ্বের হাসান এই দলে ছিলেন না, কারণ তিনি গতকাল লাহোরের পথে ঢাকা ত্যাগ করেন।
• জননেতা মণি সিং রাজশাহী জেল থেকে এক তারবার্তায় হাবিবুর রহমানের মুক্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করে তাঁকে অভিনন্দন জানান।এখানে উল্লেখ্য যে, দেশে দ্বিতীয় দফা সামরিক আইন জারীর পর জননেতা মণি সিং ও হাবিবুর রহমানকে নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়।
• দুইজন তরুণ কাশ্মীর ভারতীয় এয়ার লাইন্সের একটি ফকার ফ্রেন্ডশীপ বিমান অপহরণ করে জোরপূর্বক পাইলটকে বিমানটি লাহোরে অবতরণ করতে বাধ্য করে। অপহরণকারীরা নিজেদের অধিকৃত কাশ্মীরের মুক্তিযোদ্ধাদের সংস্থা জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট এর সদস্য বলে দাবি করে। বিমানে ২৮ জন যাত্রী এবং ৪ জন বৈমানিক ছিলেন। বিমানটি শ্রীনগর থেকে জম্মু যাচ্ছিলো। অপহরণকারীদ্বয় যাত্রীদের মধ্যেই ছিলো। অপহৃত বিমানের বৈমানিকগণ হলেন ক্যাপ্টেন জি. এস. ওবেরিও, ক্যাপ্টেন এম. কে. কাচরু, ফ্লাইটটির পারসার এস. ডি. কৌশিক এবং বিমানবালা কিরণ কোহলী। ট্রানজিট ক্যাম্পে সহকারী পাইলট সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে বলেন, জম্মু থেকে মাইল দশেক দূরে যাওয়ার পর অপহরণকারীদের একজন পিস্তল ও হাতবোমা নিয়ে পাইলটকে বিমানটি পাকিস্তানের দিকে ঘুরানোর নির্দেশ দেয়। যাত্রী ও বিমানের নিরাপত্তার খাতিরে পাইলট অপহরণকারীদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
৩১ জানুয়ারি, ১৯৭১
• পাঞ্জাব কাউন্সিল মুসলিম লীগের সভাপতি সর্দার শওকত হায়াৎ খান ঢাকায় বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হওয়ার বদৌলতে আওয়ামী লীগ দেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের যথেষ্ট ক্ষমতা রাখে। সবার মতৈক্য হওয়া অবশ্যই ভালো কিন্তু তা বাধ্যতামূলক নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। সর্দার শওকত হায়াৎ খান সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সফরে লাহোর থেকে ঢাকা আগমন করেন। বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে তিনি জানান, জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে বিরাট সাফল্য অর্জনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অভিনন্দন জানাতে তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করবেন এবং বঙ্গবন্ধু যদি তাঁর সাথে রাজনৈতিক আলোচনা করতে চান তবে, বঙ্গবন্ধুর পছন্দমতো বিষয়গুলি নিয়েই তিনি আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ৬ দফাকে অতীতে যদিও “দেশকে খণ্ড-বিখণ্ড করার ফাঁদ” বলে মনে করা হতো এখন তা সম্পূর্ণরূপে বিবেচনা করার দরকার, কারণ পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ একে সমর্থন করেছে। তিনি বলেন, ৬-দফা বাংলাসহ পাকিস্তানের যে কোন প্রদেশের চেয়ে পাঞ্জাবের বেশি অনুকূলে যাবে।
সেনাবাহিনীতে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব জনসংখ্যার ভিত্তিতেই হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ১৫ ফেব্র“য়ারি জাতীয় পরিষদ অধিবেশন আহবানের পক্ষে সুবিধাজনক হবে না। তবে শাসনতন্ত্র গৃহীত হবে বলেই দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করেন। ২৩ মার্চের আগেই যদি এটা গৃহীত হয় আমিই সবচাইতে খুশি হবো বলে তিনি মন্তব্য করেন।
• ঢাকার উন্মেষ সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ কর্তৃক পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক সভায় গৃহীত প্রস্তাবে কাগজের মূল্য বৃদ্ধির তীব্র প্রতিবাদ ও কাগজের উপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার এবং হ্যান্ডলিং এজেন্ট বাতিলের জোর দাবি জানানো হয়। অপর প্রস্তাবে ঘূর্ণি বিধ্বস্ত চরাঞ্চলে পর্যাপ্ত রিলিফ প্রদান এবং প্রেস এন্ড পাবলিকেশন অর্ডিনেন্স ও জাতীয় পুনর্গঠন সংস্থার (বিএনআর) বিলোপ দাবি করা হয়। উন্মেষের সভাপতি জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে উক্ত সভায় বক্তৃতা করেন পল্লীকবি জসিম উদ্দিন, প্রখ্যাত সাহিত্যিক-সাংবাদিক রণেশ দাশগুপ্ত, সন্তোষ গুপ্ত, আজিজ মিসির প্রমুখ কবি সাহিত্যিক শিল্পী ও চিন্তাবিদগণ। রণেশ দাশ গুপ্ত বলেন, কাগজের মূল্য বৃদ্ধির দরুণ একদিকে শিক্ষাক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে চরম সঙ্কট, অপরদিকে কবি সাহিত্যিক শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের ফেলেছে উৎকণ্ঠার মধ্যে। তিনি বিএনআর-এর বিলোপ দাবি করে এর ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেন, বিএনআর কে রাখার অর্থই হচ্ছে আইয়ুব মোনায়েমী আমলের অভিশাপ ও স্মৃতি চিহ্নকে আকড়িয়ে রাখা। তিনি একই সঙ্গে প্রেস ট্রাস্টেরও বিলোপ দাবি করেন। উক্ত সভায় সন্তোষ গুপ্ত বক্তৃতাকালে প্রেস এন্ড পাবলিকেশন অর্ডিন্যান্স অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানান। পল্লীকবি জসিমউদ্দিন সভায় বক্তৃতাকালে ঘূর্ণি উপদ্রুত এলাকাসমূহে রিলিফ তৎপরতা বৃদ্ধি ও পর্যাপ্ত রিলিফ প্রেরণের দাবি জানান। তিনি অভিযোগ করেন, পূর্ব বাংলার উপর দিয়ে এতো কিছু ঘটে গেল, সকল বিদেশী রাষ্ট্র আমাদের দুঃখে পাশে এনে দাঁড়ালো, অথচ আমাদের দুর্গত মানুষের ‘আর্ত আহাজারী’ পশ্চিম পাকিস্তানে পৌঁছলো না। সভাশেষে গণসাহিত্য সঙ্গীতের আসর ও জলোচ্ছ্বাসের জারির আসর এবং সবশেষে ১২ নভেম্বর মহাপ্রলয়ের উপর মহসীন শস্ত্রপাণী রচিত ‘শবের মিছিলে জীবনের জয়গান’ শীর্ষক একটি একাঙ্কিকা মঞ্চস্থ হয়।
• প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক সংক্ষিপ্ত সফরে মুলতান থেকে করাচী পৌঁছেছেন।
• প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে সমতার ভিত্তিতে ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে নয়া রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলেই কেবলমাত্র পাকিস্তান একটি ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক কাঠামো হিসেবে টিকে থাকতে পারে। একে মূলভিত্তি করে শেখ মুজিবুর রহমান ও ভুট্টোর শাসনতান্ত্রিক কাঠামো রচনা করা উচিত। সরকারের সদর দফতরের বেলাও এর ব্যতিক্রম করা চলবে না। তিনি বলেন, রাষ্ট্রকাঠামোই যেহেতু সনাতনী নয় সেহেতু সরকার সনাতনী হওয়ার কোন অবকাশ নেই। দ্বৈত কেন্দ্রই কেবলমাত্র একটি ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র কাঠামোর সুনিশ্চয়তা বিধান করতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এর ফলে দুই অংশের জনগণ তাদের নিজ ভূমিতে বসে সমভাবে তাদের সার্বভৌমত্ব প্রয়োগ করতে পারে। তিনি বলেন, “বিশেষ করে ভুট্টোর প্রতি আমার আবেদন, দেশের শোষণকারী অংশের প্রতিনিধিত্ব তাঁকে করতে হচ্ছে। সেই অংশের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ যা এ যাবৎ উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাঁকে তা অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে।
• চারদিনব্যাপী সফর শেষে ভুট্টো লাহোরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে তেজগাঁও বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে তিনি বলেন, জাতীয় রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে একটি স্থায়ী শাসনকার্য পদ্ধতি প্রণয়নের সাধারণ লক্ষ্য অর্জনে শাসনতান্ত্রিক প্রশ্নে সমঝোতা ও মতৈক্য খুঁজে বের করতে আমরা চেষ্টা চালাবো। আমরা যদি সহযোগিতা ও সমঝোতার দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখি, তাহলে আমাদের জাতীয় রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে একটি স্থায়ী শাসনকার্য পদ্ধাতি বের করার ব্যাপারে নিরাশ হওয়া উচিত নয়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও দুই নেতার মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কী না প্রশ্ন করা হলে  ভুট্টো বলেন, “প্রকৃতপক্ষে আমি কখনই কোন ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তাব করিনি। আমি শুধু বলেছি যদি আমাদের তিনজনের মতৈক্য হয় তাহলে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য ১২০ দিনও লাগবে বলে আমি মনে করি না।”
বিমানবন্দরে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এ এইচ এম কামরুজ্জামান এবং তাজউদ্দিন আহমদসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ভুট্টোকে বিদায় জানান।
১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• পাঞ্জাব কাউন্সিল মুসলিম লীগের সভাপতি সর্দার শওকত হায়াত খান ঢাকাতে বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হওয়ার বদৌলতে আওয়ামী লীগ দেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের যথেষ্ট ক্ষমতা রাখে। সকলের মতের ঐক্য হওয়া অবশ্যই ভাল কিন্তু তা বাধ্যতামূলক নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
• পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জনাব জেড. এ. ভুট্টো চারদিনব্যাপী সফর শেষে ঢাকা ত্যাগ করার আগে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, জাতীয় রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে একটি স্থায়ী শাসনকার্য পদ্ধতি প্রণয়নের সাধারণ লক্ষ্য অর্জন-কল্পে শাসনতান্ত্রিক প্রশ্নে সমঝোতা এবং মতৈক্য খুঁজে বের করতে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করব। তিনি আরো বলেন, উভয়ের সমঝোতার দৃষ্টিভঙ্গি বজায় থাকলে আমাদের জাতীয় রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে একটি স্থায়ী শাসনকার্য পদ্ধতি বের করার ব্যাপারে নিরাশ হওয়া উচিত নয়।
• প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিশিষ্ট সাহিত্যিক জনাব আবুল মনসুর আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে সমতার ভিত্তিতে শেখ মুজিবুর রহমান এবং জনাব ভুট্টোর শাসনতান্ত্রিক কাঠামো রচনা করা উচিত।
• আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জের এক জনসভায় পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেন যে, তাঁরা যদি ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানে বিশ্বাস করেন তবে ৬-দফার ভিত্তিতে রচিত শাসনতন্ত্রের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাথে সহযোগিতা করা উচিত
২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টোকে লাহোরে কাউন্সিল মুসলিম লীগের সভাপতি জনাব মিয়া মমতাজ দৌলতানা একটি কার্যকরী ফেডারেশন শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য নিজের এবং তাঁর দলের পক্ষ থেকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দেন।
• পাঞ্জাব কৃষক সমিতির সভাপতি ও গুজরাট জাতীয় পরিষদের সদস্য জনাব আমানউল্লাহ এবং লায়ালপুর হতে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব খান সাহেব আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা দেশের বিভিন্ন সমস্যা এবং ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্র সম্পর্কে আলোচনা করেন।
• পূর্ব পাকিস্তানের জন্য প্রস্তাবিত ক্যাপিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠা নীতিগতভাবে স্থিরীকৃত হলেও পার্লামেন্টারি সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকের উদ্বোধন বিলম্বিত হতে পারে বলে প্রকাশ। উল্লেখ্য ৩ কোটি টাকা মূলধন নিয়ে ব্যাংক তার কার্যক্রম চালু করবে, যার দেড় কোটি টাকার শেয়ার সরকার ক্রয় করবে।
• তথাকথিত কাশ্মীর যুক্তফ্রন্টের দুই তরুণ কর্তৃক ভারত থেকে হাইজ্যাককৃত বিমানের ২৫ জন যাত্রী এবং ৪জন ক্রুকে পাকিস্তান ভারতের নিকট সমর্পণ করে। পাক পররাষ্ট্র দপ্তরের জনৈক মুখপাত্র বলেন, বিমান হাইজ্যাকের ঘটনা অধিকৃত কাশ্মীরে নির্যাতন ও দমনমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
• মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী স্যার শিবসাগর রামগোপাল পাকিস্তানে ছয় দিনের শুভেচ্ছা সফরে ঢাকায় আসেন। ঢাকা অবস্থানকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আদমজী জুট মিলস পরিদর্শন করবেন।
• চট্টগ্রামে ‘এনা’র সাথে এক সাক্ষাৎকারে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বলেন, ভুট্টো এবং শেখ মুজিবুর রহমান যদি তাঁদের সমাজতন্ত্র কায়েমের প্রতিশ্র“তির মর্যাদা রক্ষা করেন তা হলে দীর্ঘকাল তাঁরা শাসনকার্য পরিচালনায় সক্ষম হবেন।
৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• কাশ্মীরী দুই তরুণ তাঁদের দ্বারা হাইজ্যাক করা ভারতীয় ফকার ফ্রেন্ডশিপ বিমানটি বিস্ফোরণের মাধ্যমে উড়িয়ে দেয় এবং পরে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। পাকিস্তান এ-জন্য ভারতের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে।
• লাহোর এবং রাওয়ালপিন্ডি হতে নির্বাচিত পিপলস পার্টির এম. এন. এ- দের বৈঠকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, আওয়ামী লীগের ৬-দফায় পূর্ব পকিস্তানের জনগণের যেসব ন্যায়সঙ্গত দাবি-দাওয়া সন্নিবেশিত হয়েছে পিপলস পার্টির ঘোষণাপত্রের আলোকে জাতীয় ঐক্যের কাঠামোতে সেগুলোর প্রতি সর্বাধিক সমর্থন দেয়া হবে। ৭ ঘণ্টা স্থায়ী ঐ বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন সদস্য ছাড়াও লাহোর, শাহিওয়াল ও মূলতানের কয়েকজন এম. এন. এ যোগদান করেন।
• পাঞ্জাব কাউন্সিল মুসলিম লীগের সভাপতি সরদার শওকত হায়াত খান ঢাকায় আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দুই ঘণ্টা ব্যাপী আলোচনা শেষে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, তাঁর দল জাতীয় সংহতি, ঐক্য ও আদর্শের খাতিরে শাসনতান্ত্রিক বিষয়ে যে কোনোরকম আঞ্চলিক চুক্তি এড়িয়ে চলবেন। তিনি বলেন, ৬ দফায় পাঞ্জাব বেশি লাভবান হবে। তিনি শাসনতন্ত্র প্রণয়নে আওয়ামী লীগ প্রধানকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের কথাও বলেন।
• দিল্লীস্থ পাকিস্তানি হাই কমিশনার সাজ্জাদ হায়দার এবং আরো কয়েকজন পাকিস্তানি কর্মকর্তার প্রাণনাশের হুমকিতে পাকিস্তান সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পাকিস্তান সরকার ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনারকে ডেকে তাঁদের উদ্বেগ সম্পর্কে অবহিত করেন।
• লাহোরে মিয়া আরিফ ইফতিখারের বাসভবনে জুলফিকার আলী ভুট্টোর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের নববির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের এক সভা শেষে পিপলস পার্টির জনৈক মুখপাত্র সাংবাদিকদের কাছে বলেন, আওয়ামী লীগের ছয় দফা দেশের জন্য একটি শাসনতন্ত্র প্রণয়নের পক্ষে বিঘœ স্বরূপ। আওয়ামী লীগের ছয় দফা দেশকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।
৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় এক বিবৃতিতে লাহোরে হাইজ্যাক করা ভারতীয় বিমান ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, পরিস্থিতি ঘোলাটে করে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরকে ‘স্যাবোটাজ’ করার বিশেষ মতলব নিয়ে দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টির কায়েমী স্বার্থবাদী প্রয়াস এটা। তিনি জনগণের প্রতি সম্পূর্ণ সজাগ থাকার জন্য আহবান জানান।
• কাশ্মীরী কমান্ডো কর্তৃক ভারতীয় বিমান উড়িয়ে দেয়ার পর ভারত সরকার সেদেশের উপর দিয়ে পাকিস্তানের সামরিক বিমান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই কাজের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে বলেন, এ-ধরনের কার্যকলাপে উৎসাহ প্রদান পাকিস্তানের জন্য গুরুতর পরিণতি ডেকে আনবে।
• জমিয়তে উলেমায়ে পাকিস্তানের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ঐ সাক্ষাতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্র সম্পর্কে আলোচনা হয়। উভয় পক্ষ যথাশীঘ্র স্বল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠানে সম্মত হয়।
• পাকিস্তান কাউন্সিল মুসলিম লীগের সভাপতি মিয়া মমতাজ দৌলতানা বলেন যে, শাসনতান্ত্রিক প্রশ্নে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল ও শক্তিসমূহের মধ্যে সমঝোতা আনার জন্য তাঁর দল চেষ্টা চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আজ যারা আওয়ামী লীগ ও পিপলস পার্টির মধ্যে কিংবা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানিদের মধ্যে বিরোধের কথা বলাবলি করছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই সজ্ঞানে ইতিহাসের এই সঙ্কট মুহূর্তে অহেতুক সন্দেহ সৃষ্টির প্রয়াস পাচ্ছেন।
• পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জনাব ভুট্টো করাচী প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন। তাঁরা বেশ কিছুক্ষণ শাসনতান্ত্রিক ও অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেন।
৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্র লীগের ২৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে রমনা গ্রীনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বলেন, নির্বাচনে একথাই প্রমাণিত হয়েছে যে বাঙালিরা চিরদিন বাঙালি হিসেবেই বেঁচে থাকবে। তিনি আরও বলেন, ৭ কোটি বাঙালি ব্যতীত অন্য কারো ৬-দফা কর্মসূচিকে পরিবর্তন করার অধিকার নেই।
• ভারত তার আকাশসীমার ওপর দিয়ে সকল পাকিস্তানি বিমান চলাচল নিষিদ্ধ কয়ে দেয়। ইতিপূর্বে পাকিস্তানের সামরিক বিমান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছিল। কাশ্মীরী কমান্ডো কর্তৃক ভারতীয় ফকার বিমান ধ্বংস করার প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে দিল্লী সরকার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এর ফলে পাক সরকার কলম্বো হয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে আন্ত-আঞ্চলিক ফ্লাইটের বিমান পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
• পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনোত্তরকালে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট তারিখের জন্য যুক্তিসঙ্গত সময়-সীমা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির প্রথম বৈঠক ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ডাকা হয়। সমসাময়িককালে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাবলী বিবেচনা এবং আওয়ামী লীগ দল, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির কর্তব্য নির্ধারণের জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকও ডাকা হয়।
• পাকিস্তান সরকার নয়াদিল্লীস্থ পাকিস্তানি হাই কমিশন ভবনের চতুঃপার্শ্বে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতির জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। ইসলামাবাদস্থ ভারতীয় হাই কমিশনার বি. কে আচার্যকে দু’বার পররাষ্ট্র দফতরে ডেকে পাঠানো হয় এবং পাকিস্তানের গভীর উদ্বেগের কথা জানানো হয়।
• পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, ডাকসুর সহ-সভাপতি আ. স. ম আব্দুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস মাখন এক যুক্ত বিবৃতিতে ভারতীয় বিমান অপহরণ এবং তা ধ্বংস করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং এর তীব্র নিন্দা জানান। এক বিবৃতিতে তাঁরা ঘটনাকে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর ব্যাহত করারই চক্রান্ত বলে উল্লেখ করেন।
৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কার্যকরী কমিটির বর্ধিত সভায় গৃহীত রাজনৈতিক প্রস্তাবে দেশের ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্রে পাকিস্তানের পাঁচটি ভাষাভাষী জাতির বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকারসহ আত্মনিয়ন্ত্রণের পূর্ণ স্বীকৃতি নিশ্চিত এবং ১১-দফা কর্মসূচি ও জাতিসমূহের সমানাধিকারের নীতি অনুযায়ী শাসনতন্ত্র প্রণয়নের আহবান জানানো হয়। ঐ সভায় জননেতা মনি সিং, অজয় রায়, দেবেন শিকদার, পীর হাবিবুর রহমান প্রমুখ আটক সকল রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীর মুক্তির দাবি করা হয়।
• পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী এক বিবৃতিতে লাহোর বিমান বন্দরে অপহৃত ভারতীয় বিমান ধ্বংসের তীব্র নিন্দা জানায়। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ পাক-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন সঙ্কট সৃষ্টি করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের অগ্রগতিতে যেকোন বাধা সৃষ্টির চক্রান্ত সহ্য করা হবে না বলে উল্লেখ করেন।
• পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠকের প্রস্তুতি হিসাবে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি ৬-দফা সম্পর্কে ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর আলোচনার সারমর্ম এবং এ ব্যাপারে পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের মতামত জানার জন্য তাঁর বর্তমান প্রচেষ্টা সম্পর্কে প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেন।
• আকাশবাণীর খবরে বলা হয় যে, ভারতীয় সামুদ্রিক বন্দরগুলোতে পাকিস্তানের কোন জাহাজ ভিড়তে দেয়া হবে না। এমনকি করাচী বন্দর হতে আসা কোন বিদেশী জাহাজকেও ভারতীয় সমুদ্র বন্দরে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এই নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
• কয়েক হাজার ভারতীয় ছাত্র নয়াদিল্লীস্থ পাকিস্তানি দূতাবাসের ওপর হামলা চালায়। দূতাবাসের গেটে ছাত্র ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে দুই শতাধিক পুলিশ ও ছাত্র আহত হয়। পুলিশ গুলিবর্ষণ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালায়।
• পূর্ব পাকিস্তানের জামাতে ইসলামীর আমীর গোলাম আজম বিমান হাইজ্যাককে কেন্দ্র করে ভারত সরকার, তাঁর ভাষায়, যে অযৌক্তিক ও কঠোর মনোভাব দেখিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা করেন। তিনি শাসনতন্ত্র প্রণয়ন এবং জনগণের সরকার গঠনের পথে যাতে কোন বিঘœ সৃষ্টি না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
• প্রেসিডেন্ট জেনারেল এ. এম. ইয়াহিয়া খান রাওয়ালপিন্ডিতে বলেন, পাকিস্তান সরকার কারিগরী ও অন্যান্য ক্ষেত্রে মরিশাসকে সাধ্যমত সাহায্য-সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। মরিশাসের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানার্থে দেয়া মধ্যাহ্ন ভোজসভায় তিনি একথা বলেন।
৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• যথাযোগ্য পবিত্রতার মধ্য দিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হয়। বিভিন্ন ঈদের জামাতে দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং সাম্রাজ্যবাদী ইহুদিবাদের বিরুদ্ধে প্যালেস্টাইনীদের মুক্তি সংগ্রামে সাফল্য কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। আউটার স্টেডিয়ামে ঢাকার প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রাদেশিক গভর্নর ভাইস এডমিরাল এম. এম. আহসান ঈদের প্রথম জামাতে নামাজ পড়েন। আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানমন্ডি ক্লাব ময়দানে অনুষ্ঠিত ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করেন।
• স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের গভর্নর জনাব এম. রশিদ শিল্প, কাঁচামাল, শেয়ার ও সিকিউরিটি এবং রপ্তানির উদ্দেশ্যে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতাকে ৫ লক্ষ টাকা অগ্রীম দানে কোন প্রকার বাধা না দেয়ার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঢাকাতে এক নির্দেশ দেন।
• মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী ড. শিবসাগর রামগোলাম ৬ দিনব্যাপী পাকিস্তান সফর শেষে পাকিস্তান ও মরিশাসের এক যুক্ত ইস্তেহারে জাতিসংঘের প্রস্তাবের বাস্তবায়ন দ্বারা আন্তর্জাতিক উত্তেজনা প্রশমিতকরণ এবং শান্তি দীর্ঘায়িত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
• পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান রাওয়ালপিন্ডির জিএইচকিউ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজের পর তিনি বহু সংখ্যক লোকের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
• মুদ্রাস্ফীতি প্রতিরোধ ব্যবস্থার ছদ্মবেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি ঋণ প্রদানের উপর যে বিধি নিষেধ আরোপ করেছে, এর ফলে শীঘ্রই পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতির উপর বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে ঢাকা বণিক সমিতির প্রেসিডেন্ট এবং জাতীয় পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান মত প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে জনাব রহমান বলেন, এই ব্যবস্থা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের নিশ্চিহ্ন করবে যার অর্থ সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর অবলুপ্তি।
৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলতাফ হোসেন যথাশীঘ্র জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করা এবং জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান। তাঁরা অভিযোগ করেন যে, প্রতিক্রিয়াশীল মহল গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টিতে বাধা দান করছে। এ প্রসঙ্গে তাঁরা লাহোর বিমানবন্দরে ভারতীয় বিমান অপহরণ ও তা ধ্বংসের ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, উক্ত ঘটনার ফলে নির্বাচিত গণ-প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর দেরি হচ্ছে। তাঁরা পাক-ভারতের মধ্যে তিক্ততার অবসান কামনা করেন।
• জেনেভার লীগ অব রেডক্রস সোসাইটির সেক্রেটারি জেনারেল মি. হেনরিক বিয়ার পূর্ব পাকিস্তানে ৩ দিনের সফরে ঢাকায় আসেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের ঘূর্ণি উপদ্রুত এলাকায় রেডক্রস পরিচালিত রিলিফ কর্মসূচি এবং পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে রেডক্রসের ভূমিকা সম্পর্কে পাকিস্তান রেডক্রস সোসাইটির চেয়ারম্যান, ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বি. এ. সিদ্দিকীর সাথে আলোচনায় মিলিত হন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান রেডক্রস সোসাইটির চেয়ারম্যান বিচারপতি নুরুল ইসলাম ও অন্যান্য সদস্যের সাথেও মিলিত হন।
• আজাদ কাশ্মীর ও জম্মুর প্রেসিডেন্ট সরদার আবদুল কাইয়ুম খান কাশ্মীরবাসীর স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সমর্থনদানের জন্য মুসলিম বিশ্বের প্রতি আবেদন জানান। মুসলিম বিশ্বের সামনে যেসব সমস্যা রয়েছে তা উপলব্ধির ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ এবং প্রতিটি সমস্যা সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করার জন্য সরদার আবদুল কাইয়ুম খান মুসলমানদের প্রতি আহবান জানান।
৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• ভারতীয় বেতারে বলা হয়, লাহোরে দুইজন হাইজ্যাকার কর্তৃক ভারতীয় বিমান উড়িয়ে দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পর জনতা কতগুলো দোকান এবং গৃহে আগুন লাগিয়ে দেয়। একই ঘটনায় আহমেদাবাদে ১৬ ঘণ্টাব্যাপী কারফিউ জারি করা হয়।
• পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলতাফ হোসেন সংবাদপত্রে এক বিবৃতির মাধ্যমে অবিলম্বে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন আহবানের জন্য পেসিডেন্টের প্রতি অনুরোধ জানান। বিবৃতিতে তঁাঁরা বলেন, দেশে এক শ্রেণীর পতিক্রিয়াশীল ও চরম সাম্প্রদায়িক শক্তি লাহোরে ভারতীয় বিমান হাইজ্যাক এবং তা উড়িয়ে দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টির মাধ্যমে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন আহবান এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব ঘটানোর চেষ্টা করছে।
• জেনেভাস্থ লীগ অব রেডক্রস সোসইটিজ-এর সেক্রেটারি জেনারেল হেনরিক বিয়ার তিনদিনের সফরে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় অবস্থানকালে তিনি বিচারপতি বি. এ. সিদ্দিকী ও বিচারপতি নূরুল ইসলামের সাথে আলোচনা করেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান রেডক্রস সোসাইটির ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সাথে এক আলোচনা বৈঠকে মিলিত হন। ঐ আলোচনায় পূর্ব পাকিস্তানের ঘূর্ণিদূর্গত এলাকায় রেডক্রসের সাহায্য ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়ন কর্মসূচি পর্যালোচনা করা হয়।
• প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী স্যার শিবসাগর রামগোলামকে পাকিস্তান ও ভারতের বর্তমান সম্পর্কের বিষয় অবহিত করেন এবং এই দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সকল বিরোধ ও সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। দুই নেতা আন্তর্জাতিক উত্তেজনা হ্রাস ও দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘ প্রস্তাবাবলী বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
• দক্ষিণ ভিয়েতনামী স্থলবাহিনী এবং মার্কিন হেলিকপ্টারে দক্ষিণ ভিয়েতনামী প্যারাট্রুপাররা সকালে লাওসে প্রবেশ করে। দক্ষিণ ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট থিউ তাঁর বাহিনীকে লাওসে উত্তর ভিয়েতনামী ঘাঁটিগুলো আক্রমণের নির্দেশ দেন। মার্কিন হাই কমান্ড থেকে বলা হয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ হামলায় বিমান সমর্থন ও সাহায্য দেবে, তবে মার্কিন স্থল বাহিনীর কোন লোক বা কোন উপদেষ্টা এতে জড়িত হবেন না।
১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ৬-দফার ভিত্তিতে দেশে শাসনতন্ত্র প্রণয়নে তাঁর দলের দৃঢ় সংকল্পের কথা পুনরুল্লেখ করে বলেন, ৬-দফার প্রশ্নে নীতিগতভাবে কোন প্রকার আপোষ সম্ভব নয়। তিনি বলেন, জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ শুধু বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলই নয়, সারাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। কাজেই শাসনতন্ত্র আওয়ামী লীগ একাই প্রণয়ন করতে পারে। তবে আমরা এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা কামনা করি। কেউ যদি সহযোগিতা না করে তবে তার দায়িত্ব উক্ত দলেরই।
• আকাশবাণীর বরাত দিয়ে দৈনিক পাকিস্তান লিখেছে, ভারত সরকার পাকিস্তান হাই কমিশনারকে চিঠি দিয়ে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, অবিলম্বে লাহোরে বিনষ্ট ভারতীয় বিমানের ক্ষতিপূরণ না দিলে এবং দু’জন হাইজ্যাককারীকে ফেরৎ না দিলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পরে এবং যেকোন পরিস্থিতির জন্য পাকিস্তানকেই দায়ী হতে হবে। চিঠিতে বলা হয়েছে যে, ভারত সরকার এ সম্পর্কে যেসব প্রমাণ পেয়েছেন তাতে স্পষ্টই বিশ্বাস করবার কারণ রয়েছে যে, ভারতের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক কার্যের ষড়যন্ত্রের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক রয়েছে।
• পিডিপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আলী ভারতের উপর দিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক বিমান চলাচল একতরফাভাবে নিষিদ্ধ করে দেয়ার কার্যক্রমে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নিন্দা করে এক বিবৃতিতে বলেন, ভারতের এই আচরণ বিশ্বের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ও শান্তিকামী রাষ্ট্রসমূহের কাছে পাকিস্তানের সার্বভৌম অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
• ইসলামাবাদের ভারতীয় হাই কমিশনার ভবনের অফিসে কতিপয় ব্যক্তি জোরপূর্বক প্রবেশ করে আসবাবপত্র এবং অফিসের মূল্যবান কাগজপত্র তছনছ করে। পুলিশ দূতাবাস ভবন হতে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। বিকেলে মহিলারা হাই কমিশনারের অফিস ভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ আসন্ন শহীদ দিবস পালন উপলক্ষে এক বিবৃতিতে বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রয়াস ও জনপ্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর বানচাল করার জন্য গণবিরোধী শক্তি এবং কায়েমী স্বার্থবাদী মহল ষড়যন্ত্র করছে। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, ২৩ বছর পরে এই প্রথমবারের মত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং স্বল্পকালের মধ্যে শাসনতন্ত্র প্রণীত হতে যাচ্ছে। সরকার জনগণের প্রতিনিধির নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রতিশ্র“তিবদ্ধ।
• ইসলামাবাদের ভারতীয় দূতাবাসে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ ছাত্রদের উপর গুলি বর্ষণ এবং ব্যাটন চার্জ করে। ফলে বহু ছাত্র আহত হয়। ছাত্রদের ইটপাথর নিক্ষেপের ফলে পুলিশের ৬০ জন আহত হয়। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ এবং অস্ত্রবহন নিষিদ্ধ করা হয়।
• দুইজন কাশ্মীরী যুবক কর্তৃক ভারতীয় বিমান ছিনতাই এবং তা ধ্বংস করে দেয়ার মধ্য দিয়ে পাক-ভারত সম্পর্কে যে অবনতি ঘটেছে সে সম্পর্কে অবহিত করার জন্য পাকিস্তান সরকার পররাষ্ট্র দফতরে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠান।
• আজাদ কাশ্মীরের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং জম্মু ও কাশ্মীর মুসলিম লীগের সভাপতি কে. এইচ. খুরশিদ আজাদ কাশ্মীর সরকারকে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টের পূর্বেকার সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদাসহ সমগ্র জম্মু ও কাশ্মীরের সরকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানান। ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলনে জনাব খুরশিদ গিলগিট ও বালটিস্থানকে আজাদ কাশ্মীরের অন্তুর্ভুক্তির দাবি জানান।
• মুলতানে নব নির্বাচিত এম. এন. এ এবং এমপিদের এক সমাবেশে পাকিস্তান পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো তাঁর ভাষায় ৬-দফার ব্যাপারে শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সহযোগীদের অনড় মনোভাবের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ৬-দফার ভিত্তিতে পাকিস্তানের শাসনন্ত্র প্রণীত হলে তিনি এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করবেন।
১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে এক নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানের প্রতি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, পাকিস্তান সরকার যদি ধ্বংসকৃত ভারতের বিমানের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দান এবং হাইজ্যাকারদ্বয়কে ভারতের হাতে ফেরৎ না দেয় তবে সংঘর্ষমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তিনি আরো বলেন, দেশ যখন সাধারণ নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তখন ভারতীয় জনসাধারণকে বিভক্ত করার উদ্দেশ্যে বিমান হাইজ্যাকের ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
• পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচী বিমানবন্দরে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, জাতি আজ যে শাসনতান্ত্রিক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে তা থেকে উত্তরণের জন্য তাঁর পার্টি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, বিগত ২৩ বছরকাল ধরেই শাসনতান্ত্রিক সঙ্কট বিদ্যমান রয়েছে। এ- সঙ্কট থেকে উত্তরণের ফরমুলা উদ্ভাবন করে তার মাধ্যমে যাতে আমরা একটা কার্যকর ও স্থায়ী শাসনতন্ত্র পেতে পারি, সেদিকেই আমাদের সকল প্রচেষ্টা নিয়োজিত রয়েছে।
• ৬-দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণীত হলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করবেন বলে পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টোর বক্তব্য সম্পর্কে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, ডাকসু সহসভাপতি আ. স. ম আব্দুর রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, দেশের বর্তমান সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে তাঁর এই বিবৃতি কেবল দুঃখজনকই নয় বরং গণতন্ত্রের মূলনীতির পরিপন্থী এবং প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাবের শাসনতন্ত্র রচনার একটি গণভোট।
• হায়দরাবাদের বিশিষ্ট হারী নেতা জামসাদ সাকী লাহোরে বলেন, দেশে এক শ্রেণীর আমলা এবং ফ্যাসিস্ট যুদ্ধ উন্মাদনা সৃস্টি করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধা সৃষ্টি করে চলছে। তিনি বলেন, জনগণ এই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি আরো বলেন, কাশ্মীর, ইসলাম, পাকিস্তান বিপন্ন- এইসব সস্তা শ্লোগানে জনগণ আর বিভ্রান্ত হবে না।
• পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি সভাপতি খান আবদুল ওয়ালী খান বলেন, ভুট্টোর সাথে তাঁর আসন্ন বৈঠকে তিনি দেশের সংহতি এবং পাকিস্তানের সকল অঞ্চলের অধিকার এবং অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য শাসনতান্ত্রিক ফরমুলা উদ্ভাবনের ব্যাপারে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, তাঁর দল এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান বেলুচিস্তানের রাজনৈতিক নেতা নওয়াব আকবর খান বুগতির সাথে হোটেল পূর্বাণীতে দেড় ঘণ্টা স্থায়ী এক আলোচনায় ৬-দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের প্রশ্নে ঐকমত্যে উপনীত হন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ৬-দফা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, তা বেলুচিস্তান এবং অন্যান্য দেশের জন্যও প্রযোজ্য।
• পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট জেনারেল এ. এম. ইয়াহিয়া খানের সাথে রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ভবনে এক সাক্ষাৎকারে মিলিত হন। তাঁরা উভয়ে শাসনতান্ত্রিক বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেন।
• পূর্ব পাকিস্তান সরকার নিত্যব্যবাহার্য সামগ্রীর মূল্য ও বন্টন নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নির্দেশ জারি করে। ‘পূর্ব পাকিস্তান নিত্যব্যবহার্য দ্রব্য মূল্য ও বন্টন নির্দেশ ১৯৭০’ নামক নির্দেশে তা অবিলম্বে কার্যকর করার জন্য বলা হয়।
• ভারত সরকার ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে সংঘঠিত ঘটনার ব্যাপারে পাকিস্তানের কাছে কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে একটি নোট প্রেরণ করেন। ভারতে অবস্থিত পাকিস্তান হাই কমিশন এবং ইসলামাবাদে পররাষ্ট্র অফিসে উক্ত নোটটি হস্তান্তর করা হয়।
• ভারতের দেশরক্ষা মন্ত্রী জগজীবন রাম ভারতীয় বিমান হাইজ্যাককারী দুইজন কাশ্মীরী কমান্ডোকে ভারতের কাছে হস্তান্তর এবং উড়িয়ে দেয়া বিমানের ক্ষতিপূরণ দানের ব্যাপারে পাকিস্তানের সাথে কোন আলাপ আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দেন।
১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করে বলেন যে, শাসনতন্ত্র প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ৩ মার্চ সকাল ৯টায় ঢাকাস্থ প্রাদেশিক পরিষদ ভবনে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরু হবে। পিপিআই’র উদ্ধৃতি দিয়ে দৈনিক পাকিস্তান লিখেছে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবানের সিদ্ধান্তকে ঢাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল স্বাগত জানিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ মহল এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি।
• নয়াদিল্লীর প্রতি বেতার মাধ্যমে হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে গণচীন জানায়, ভারতের আক্রমণাত্মক নীতির পরিণামে যদি পাক-ভারত উপমহাদেশে শান্তি বিঘিœত হয়, তা হলে তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব ভারতকেই বহন করতে হবে। পিকিং বেতারে পাকিস্তানি জনগণের প্রতি চীনের সমর্থনের বিষয় পুনরায় ঘোষণা করে বলা হয় যে, চীনা জনগণ পাকিস্তানের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য পাকিস্তানি জনগণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাবে।
• বিলুচিস্তানের বিশিষ্ট নেতা নবাব আকবর খান বুগতি নারায়ণগঞ্জ আদমজি জুট মিলে এক শ্রমিক সমাবেশে বলেন, ৬-দফা ও ১১-দফা আদায়ের সংগ্রামে বেলুচিস্তানের সাধারণ মানুষ যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, বেলুচিস্তানের জনগণ বহু অত্যাচার সহ্য করেছে কিন্তু কোনদিন নতি স্বীকার করেনি।
• বিমান হাইজ্যাকিং সম্পর্কে ভারতীয় অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে পাক সরকার নয়াদিল্লী সরকারের নিকট প্রতিবাদ চিঠিতে বলেন, “পাকিস্তান ইতিপূর্বে যে বাস্তবমুখী প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত তাতে সাড়া না দিয়ে বরং জোর করে নামানো বিমানের ক্ষতিপূরণ আদায়ে বলপ্রয়োগ এবং হুমকি প্রদানের নীতিতে অবিচল আছে। অহেতুক দোষারোপ না করে আলোচনার মাধ্যমে মিমাংসায় ব্রতী হউন।”
• পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো পেশোয়ারে পাকিস্তান মুসলিম লীগ প্রধান খান আব্দুল কাইয়ুম খান এবং জমিয়তুল উলেমা-ই-ইসলামের জেনারেল সেক্রেটারি মওলানা মুফতি মাহমুদের সাথে শাসনতান্ত্রিক প্রশ্নে আলোচনা করেন। বৈঠক শেষে আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে তিনি নিরাশাবাদী নন।
১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আগা শাহী নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্টের কাছে পত্র পাঠিয়ে দুইজন কাশ্মীরী কর্র্র্তৃক ভারতীয় বিমান হাইজ্যাকের পর ভারতের উপর দিয়ে পাকিস্তানি বিমান চলাচল নিষিদ্ধ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও সরকার কর্তৃক হুমকিমূলক বক্তৃতা ও বিবৃতিতে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যে গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার অনুরোধ করেন।
• দেশের সাধারণ নির্বাচনের পর ঢাকায় প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ও পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় শাসনতান্ত্রিক প্রশ্নে আলোচনা এবং দলের ৬-দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নে দলীয় ভূমিকার কথা পুনরুল্লেখ করা হয়।
• এককভাবে কোন রাজনৈতিক দল শাসনতন্ত্র প্রণয়নে সক্ষম হলেও কায়েমী স্বার্থবাদীদের আক্রমণ হতে শাসনতন্ত্র রক্ষা করার মত শক্তি এককভাবে কোন রাজনৈতিক দলের নেই। ঢাকায় এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে নির্যাতিত বেলুচ নেতা নওয়াব আকবর খান বুগতি উপরোক্ত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান এবং অন্য সকল প্রদেশের জন্যই ৬-দফা ও ১১-দফা ভিত্তিক স্বায়ত্তশাসন প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ক্ষমতা তার রয়েছে।
• স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ২৩ বছর বাঙালি তাদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির স্বাধীনতা ভোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, যার জন্য আজ বাংলাভাষা আর সংস্কৃতির বাস্তবিক অর্থে কোন উন্নতি হয়নি। রমনা উদ্যানে ২১ ফেব্রুয়ারি স্মরণে বাংলা ছাত্র লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণদানকালে ড. কাজী মোতাহার হোসেন উল্লিখিত কথাগুলো বলেন।
• পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলতাফ হোসেন এক যৌথ বিবৃতিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস পালনের আহবান জানান। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ভাষা আন্দোলন ছিল পূর্ব বাংলার জনগণের জাতীয় বিকাশের আকাক্সক্ষারই অভিব্যক্তি। গণতন্ত্র ও জাতীয় অধিকার আদায়ের প্রশ্নে এই দিবসটি তাই এত গুরুত্বপূর্ণ।
• ঢাকাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির সদস্যদের যৌথ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ৬-দফা ও ১১-দফা এবং দলীয় মেনিফেস্টোর ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা, দেশের রাজনৈতিক ও ক্রমাবনতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভারতীয় বিমান হাইজ্যাকিং-এর পর উদ্ভুত পরিস্থিতির আলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দান করবেন।
১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• জামাতে ইসলামের আমীর মওলানা আবুল আলা মওদুদী বলেন, জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের সকলেরই অধিবেশনে অংশগ্রহণ করা উচিত। তিনি বলেন যে, সংখ্যালঘিষ্ঠ ছোট বড় সব পার্টির নিজস্ব শাসনতান্ত্রিক খসড়া পেশ করা উচিত নয়। কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠ দলেরই খসড়া পেশ করা উচিত এবং খসড়ার যে সব অংশ দেশের ইসলামী চরিত্র, সংহতি, গণতান্ত্রিক নীতি, মৌলিক অধিকার ও অর্থনৈতিক ন্যায় বিচারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ তা গ্রহণ করা উচিত। আর যা পরিপন্থী সেগুলির তীব্র বিরোধিতা করা উচিত।
• কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মিয়া মমতাজ মোহম্মদ খান দৌলতানা প্রেসিডেন্ট জেনারেল মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান-এর সাথে প্রেসিডেন্ট ভবনে সাক্ষাৎ করেন। তিনি প্রেসিডেন্ট এর সাথে কিছু সময় অতিবাহিত করেন।
• পাকিস্তান জমিয়তে উলামা-ই-ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মওলানা মুফতি মাহমুদ জাতীয় সংহতি ও অখণ্ডতার স্বার্থে জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে ধৈর্য ও সহনশীলতা বজায় রাখার আহবান জানান। ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের ব্যাপারে পিপলস পার্টির সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, জাতীয় অখণ্ডতার স্বার্থ যাতে উন্নিত হয় রাজনৈতিক নেতাদের তেমন ভূমিকা গ্রহণ করা উচিত। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, শেখ মুজিব তাঁর ৬-দফা কর্মসূচির সমন্বয় সাধন করবেন।
• সিন্ধু জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্রে বাংলাদেশের ন্যায় সিন্ধুসহ অন্যান্য প্রদেশেও পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদানের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য জাতীয় পরিষদের সদস্যদের প্রতি আহবান জানান। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আহমদ খান জামিলী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জাতীয় পরিষদের সদস্যদের প্রতি আহবান জানানো হয় যে, প্রতিটি প্রদেশের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান সম্বলিত এমন শাসনতন্ত্র প্রদান করতে হবে যাতে এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে শোষণের অভিযোগ আনতে না পারে। বিবৃতিতে দ্রুত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানানো হয়।
১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• কাইয়ুম মুসলিম লীগের প্রধান খান আবদুল কাইয়ুম খান ও কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল নূর খান বিকেলে প্রেসিডেন্ট হাউজে প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের সাথে আলাদা আলাদা বৈঠকে মিলিত হন।
• পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী এক বিবৃতিতে জুলফিকার আলী ভুট্টোর জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বয়কটের সিদ্ধান্তের নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন। তাঁরা বলেন, ভুট্টোর আচরণ ও গণতন্ত্র বিরোধী ঘোষণার দ্বারা গভীরভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো যে, দেশী ও বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীলদের গণবিরোধী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে।
• সম্পাদকমণ্ডলী ষড়যন্ত্রকারীদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, “গণতন্ত্র এবং জাতীয় অধিকার বিরোধী দেশী ও বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীল মহলকে আমরা জানিয়ে দিতে চাই যে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন ও শাসনক্ষমতা গণপ্রতিনিধিদের হাতে হস্তান্তরের পথে যে কোনো প্রকার ষড়যন্ত্র অবিলম্বে বন্ধ করা না হলে পূর্ববাংলার সংগ্রামী ছাত্র সমাজ নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করবে না। যে কোনো ষড়যন্ত্র প্রতিরোধের জন্য ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে প্রস্তুত থাকতে আমরা ছাত্র-জনতার প্রতি আহবান জানাচ্ছি। এই সংকট মুহূর্তে ছাত্র সংগঠন সমূহের ঐক্যের গুরুত্বের কথা আমরা আবার আমাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নেতা ও কর্মী ভাইদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।”
• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে কেন্দ্রীয় শিল্পমন্ত্রী এ. কে. এম হাফিজউদ্দিন আজ তাঁর বাসভবনে দেখা করেন।
• বীর শহীদদের স্মরণে আয়োজিত ঢাকা শহর আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু ’৫২-র ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ১৯ বছর আগের মহান ভাষা আন্দোলন শুধু বাংলা ভাষার স্বীকৃতিতে সীমিত নয়, বরং তা গণ অধিকার আদায়েরও সংগ্রাম ছিল। তিনি বলেন, শহীদের আত্মত্যাগ যাতে বিফল না হয় সে জন্য জনগণের শপথ নিতে হবে। তিনি আমাদের জীবনের সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য ফুটিয়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, বাঙালিদের আর দমন করা যাবে না, এটাই ভাষা আন্দোলনের শিক্ষা।
• প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের সভাপতিত্বে আজ প্রেসিডেন্টের মন্ত্রীপরিষদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীতে উপস্থিত মন্ত্রীপরিষদের সদস্যগণ এতে যোগদান করেন। এই সভায় যোগদানকারীরা হলেন, প্রেসিডেন্টের প্রধান স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল পীরজাদা, প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এম. এম. আহমদ, পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান জনাব এম. এইচ. সুফী।
• পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ আজ ঢাকায় এক বিবৃতিতে বলেন, জনাব ভুট্টো জাতীয় পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে যোগদান না করার সম্পর্কে যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে জনগণের মনে বিরুপ সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, জনাব ভুট্টো বলেছেন, তার শর্ত পূরণ না হলে আগামী ৩ মার্চ ঢাকার জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে যোগদান করবেন না। ন্যাপ প্রধান অভিযোগ করেন যে, গণতন্ত্রের সম্ভাবনা, বিভিন্ন জাতীয় অধিকার, কৃষক শ্রমিক সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার অধিকার নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশনে বিচ্ছিন্নতার অধিকারসহ সকল জাতির আত্মনিয়ন্ত্রনাধীকারের নিশ্চয়তা বিধানপূর্বক একটি বিল পাশ করার জন্য জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ও অন্যান্য দলের প্রতি আহবান জানান। তিনি মনে করেন, বিভিন্ন জাতিকে উক্ত অধিকার প্রদান করা হলে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে। কারণ, বিভিন্ন দল ও জাতি তখন দ্বিধাহীনভাবে আলোচনায় এগিয়ে আসতে পারবে।
১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• জেলা শিক্ষক সমিতির দ্বাদশ বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে বাংলার প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক রণেশ দাশগুপ্ত বলেন, “নতুন সমাজ গড়ার কারিগর হিসেবে আমাদের দেশের শিক্ষক সমাজকেই দেশের প্রকৃত মালিক কৃষক-শ্রমিকের ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো জ্বেলে দেওয়ার বিপ্লবী দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে।” ঢাকা জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াসিন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দুইদিন ব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অধিবেশনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন, পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও নব নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য কামরুজ্জমান, সমিতির কার্যকরী সাধারণ সম্পাদিকা হেনা দাস, তারেকুল ইসলাম, রুহুল আমীন, গাজী আবদুল কাদের, সৈয়দ এহসান উদ্দিন আহমদ, আবু সাঈদ আহমদ, বেগম নূরজাহান, এমদাদ হোসেন, রেজাউল হক, আবদুল মান্নান প্রমুখ। অধিবেশন শেষে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর পরিবেশনায় একটি গণসঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
• পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়াম্যান জেড. এ. ভুট্টো করাচীস্থ পার্টির স্থানীয় দফতরে দলীয় কর্মীদের এক সভায় ভাষণদানকালে শাসনতান্ত্রিক প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ও পিপলস পার্টির মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার জন্য কোনরূপ মধ্যস্থতা বা সালিসের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। তিনি বলেন দেশে বর্তমানে তিনটি শক্তিই রয়েছে, তা হল আওয়ামী লীগ, পিপলস পার্টি  ও সশস্ত্র বাহিনী। কোন চতুর্থ শক্তিকেই আমরা স্বীকার করি না। তিনি বলেন, কোন কোন হতাশ মহল পিপলস পার্টির সাথে শত্র“তাবশত এ কথা বলেছে যে, ভুট্টো একটি বিশেষ অঞ্চলের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে। ভুট্টো বলেন, “পাকিস্তানের চেয়ে আমার কাছে প্রিয়তম অন্যকিছু নয়। আমি সবার আগে বলব ‘জয় পাকিস্তান’ তারপর দশবারও বলতে পারি ‘জয় বাংলা’, ‘জয় সিন্ধু’, ‘জয় পাঞ্জাব’, ‘জয় বেলুচিস্থান, ‘জয় সীমান্ত’।” তিনি তাঁর সিদ্ধান্তের কথা আবার উল্লেখ করে বলেন, জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান না করার জন্য তাঁর দল যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তা অপরিবর্তনীয়। তিনি বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমানকে আমরা যখন বড় ভাই হিসেবে গ্রহণ করেছি তখন তাঁর ছোট ভাইদের বক্তব্য শোনা উচিত।”
• পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ তাদের একুশে স্মরণে ঘোষিত সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির চতুর্থ দিনে আজ ‘ড. জোহা দিবস’ পালন করে। এ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
• দুই সপ্তাহ পূর্বের ভারতীয় বিমান অপহরণের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা গ্রহণ ভারত প্রত্যাখ্যান করায় পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
• ন্যাশনাল জুট মিলস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফকির শামসুদ্দিন দীর্ঘদিন সামরিক আইনে কারাদণ্ড ভোগের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন।
১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• অমর একুশে স্মরণে বাংলা একাডেমীর সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির “একুশের সৃষ্টি” শীর্ষক সাহিত্য সভায় আলোচনাকালে প্রখ্যাত সাংবাদিক সাহিত্যিক রণেশ দাশগুপ্ত বলেন, “এদেশের গণসংগ্রামকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এই আন্দোলনের তত্ত্বমূলক দর্শন ও তার রূপরেখার সাথে জনগণকে একাত্ম করার গুরুদায়িত্ব কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের উপর ন্যস্ত।” কর্মসূচির তৃতীয় অনুষ্ঠানে সভানেত্রীত্ব করেন কবি সুফিয়া কামাল। অনুষ্ঠানে “একুশের সৃষ্টি” হতে পাঠ, আবৃত্তি এবং আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. মাজহারুল ইসলাম, ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, জনাব মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ও সভানেত্রী স্বয়ং।
• মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চট্টগ্রাম পাহাড়তলী শাহজাহার ময়দানে এক বিরাট শ্রমিক সভায় ভুট্টোকে উদ্দেশ্য করে পশ্চিম পাকিস্তানে বসে তাঁর নিজস্ব শাসনতন্ত্র প্রণয়ন ও পূর্ব পাকিস্তানে আসার তকলিফ স্বীকার না করার উপদেশ দেন। উক্ত সভায় বক্তৃতাকালে মওলানা ভাসানী বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের নিজস্ব শাসনতন্ত্র শোষণ জুলুম ও নির্যাতন থেকে মুক্তির নিশ্চয়তা দেবে। তিনি বলেন, গত দশকে দৌলতানা, খুরো ও ভুট্টোরা পূর্ব পাকিস্তানিদের শোষণ করে শূন্য করেছে। তারা আবার পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থ নস্যাতের জন্য উদ্যোগী হয়েছে। তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের এমন শাসনতন্ত্র রচনা করা উচিত যাতে অফিসার ও শ্রমিকদের বেতনের সীমা নির্ধারিত এবং সব ধর্মের লোকদের নিজ নিজ ধর্মকর্মের অধিকার থাকবে।
• অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল নূর খান ঢাকার হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে বৈঠক শেষে এপিপি’র সাথে আলোচনাকালে বলেন যে, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরুর আগে শাসনতান্ত্রিক সমস্যাবলী আলোচনার জন্য শেখ মুজিবুর রহমান পশ্চিম পাকিস্তান নেতৃবৃন্দকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানাবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে কোনো বাণী তিনি বহন করে আনেন নি এবং ঢাকা থেকেও কোনো বাণী নিয়ে যাবেন না। তিনি বঙ্গবন্ধু ছাড়া পি ডি পি প্রধান নূরুল আমীন এবং ভাসানীপন্থী ন্যাপ নেতা মশিহুর রহমানের সাথেও দেখা করেন।
২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন কর্তৃক ‘শহীদ দিবস’ উপলক্ষে আজ থেকে তিনদিন ব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। অমর একুশে স্মরণে কর্মসূচির প্রথম দিনে বায়তুল মোকাররম থেকে ছাত্র ইউনিয়নের ‘মশাল মিছিল’ বের হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীরা ভাষা আন্দোলন তথা স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রথম সংগ্রামী একুশের বীর শহীদদের স্মৃতির স্মরণে- “শহীদ স্মৃতি অমর হউক”, “একুশের রক্ত বৃথা যেতে যেবো না”, “সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু কর”, “রাজবন্দীদের মুক্তি চাই, নইলে এবার রক্ষা নাই”, “জননেতা মণি সিংহ-এর মুক্তি চাই”, বিপ্লবী সংগ্রাম গড়ে তোলো, শাসকগোষ্ঠী খতম করো”, “কম্যুনিস্ট পার্টি বে-আইনী রাখা চলবে না”, “গণমুখী শাসনতন্ত্র রচনা কর”, “ইয়াহিয়া ভুট্টো হুঁশিয়ার” প্রভৃতি শ্লোগান প্রদান করে।
• ভুট্টোর সভাপতিত্বে করাচিতে আজ পিপলস পার্টির দুইদিন ব্যাপী পার্লামেন্টারি বৈঠক শুরু হয়। উদ্বোধনী বৈঠক শেষে পিপলস পার্টির সভাপতি আবদুল হাফিজ পীরজাদা সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় পরিষদ ও পশ্চিম পাকিস্তানের চারটি প্রাদেশিক পরিষদে পিপলস পার্টির নির্বাচিত প্রত্যেক সদস্য ৬-দফা ভিত্তিক শাসনতন্ত্র সম্পর্কে দলীয় নীতিতে অটল থাকার পরিপ্রেক্ষিতে স্বেচ্ছায় পার্টি চেয়ারম্যান জেড, এ, ভুট্টোর কাছে পদত্যাগপত্র দাখিল করতে রাজি হয়েছেন।
• পাকিস্তান কাউন্সিল মুসলিম লীগ সভাপতি মিয়া মমতাজ মোহাম্মদ খান দৌলতানা আশা প্রকাশ করেন, প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে বর্তমানে বিরাজমান অতি সামান্য মতবিরোধ দূর করার চেষ্টা করবেন। এক বিবৃতিতে দৌলতানা বলেন, আমরা মনে করি যে, পূর্ণাঙ্গ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন সম্বলিত ফেডারেল শাসনতন্ত্রে কর, বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক সাহায্যকে ফেডারেল বিষয় করা না হলে তাকে ফেডারেল শাসনতন্ত্র তো বলা যায়ই না, এমন কী একটি দেশের শাসনতন্ত্রও বলা যায় না।
• জমিয়তে ওলেমায়ে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মওলানা মুফতি মাহমুদ রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন, ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্রে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির নিশ্চয়তা থাকতে হবে। তাঁর সাথে পশ্চিম পাকিস্তান জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক গোলাম গাউস হাজারিও ছিলেন। মওলানা মুফতি মাহমুদ বলেন, জাতীয় স্বার্থে ৬-দফায় বর্ণিত মুদ্রা, বাণিজ্য ও ট্যাক্স প্রথা সংক্রান্ত বিধিগুলিতে প্রয়োজনীয় রদবদল হওয়া উচিত। তিনি বলেন, শাসনতান্ত্রিক বিষয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার জন্য মওলানা গোলাম গাউস ও অন্যান্য নেতার সাথে তিনি ঢাকায় যাবেন।
২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। বর্ষ পরিক্রমায় সংগ্রামের পথ ধরে আবার ফিরে এসেছে ভাষা শহীদের রক্তসিক্ত একুশে। শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও নাম না জানা শহীদানের পবিত্র স্মৃতি বিজড়িত আজকের এই দিনে সূর্য ওঠার আগে সকল স্তরের মানুষ খালি পায়ে, কালো ব্যাজ ধারণ করে, কালো পতাকা তুলে ধীর পয়ে এগিয়ে যাবে মিছিলের পর মিছিল নিয়ে আজিমপুর গোরস্তানের পবিত্র ভূমিতে। আবালবৃদ্ধবণিতা শ্রদ্ধাবনত মস্তকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন সেখানে। তারপর তাঁরা একে একে এসে মিলিত হবেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ফুলে ফুলে ভরে তুলবেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এরপর তারা গ্রহণ করবেন সংগ্রামের নবতর শপথ।
• আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাত পৌনে ১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন। শহীদ মিনারে প্রদত্ত এক ভাষণে তিনি ঘরে ঘরে প্রস্তুত থাকার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, ’৫২তে যে ষড়যন্ত্রের শুরু, সেই ষড়যন্ত্র আজও অব্যাহত আছে। ভবিষ্যতে আরও কঠিন হতে পারে।
• পাকিস্তানে আগত কতিপয় বিদেশী বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনাকালে সাবেক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ব্যাপারে ভুট্টোর নীতি সমর্থন করে বলেন, পাকিস্তান একটি সংকটময় অবস্থার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। যে কোনো ভুল পদক্ষেপ দেশের জন্য ক্ষতিসাধন করবে। আইয়ুব খান তাঁর পদত্যাগের কথা উল্লেখ করে বলেন, গোল-টেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারী রাজনীতিকদের পরামর্শ গ্রহণ করা হলে দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হতো। তিনি বলেন, ভুট্টো অতীতে কিছু ভুল করেছেন, কিন্তু এখন তিনি পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পারছেন।
• জাতীয় পরিষদ কিংবা প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনের পূর্বে স্বীয় পদে ইস্তফা দানের অনুমতি দিয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান একটি নির্দেশ জারী করেন। বিবৃতিতে বলা হয়- নির্দেশটি ১৯৭১ সালের আইনগত কাঠামো (সংশোধনী) আদেশ (প্রেসিডেন্টের ১৯৭১ সালের ১নং    আদেশ) নামে অভিহিত হবে। আদেশটি ১৯৭০ সালের আইনগত কাঠামো আদেশ সংশোধন করে এল. এফ. ও’র ১১নং অনুচ্ছেদে নিম্নলিখিত ধারা যোগ করবেÑ সদস্য হওয়ার জন্য নির্বাচিত কোন ব্যক্তি পরিষদের প্রথম অধিবেশনের পূর্বে স্বীয় পদে ইস্তফা দিতে চাইলে কমিশনারকে স্বহস্তে লিখিত নোটিশ প্রদান করতে হবে।
২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কাইয়ুম গ্র“প) ৬-দফার প্রশ্নে তাদের ভাষায় আওয়ামী লীগের অনমনীয় মনোভাবের প্রক্ষিতে ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ৯০ মিনিট স্থায়ী সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে খান আবদুল কাইয়ুম খান বলেন যে, অন্যান্য ফেডারেল ইউনিটের বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ করা হবে বলে শেখ মুজিবুর রহমানের আশ্বাস ছাড়া তাঁর দলের এম. এন. এ-দের জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে যোগদান করা নিরর্থক।
• পাকিস্তান সরকারের কেবিনেট সেক্রেটারিয়েটের এক ইশতেহারে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান তাঁর মন্ত্রিসভা বাতিল করে দিয়েছেন এবং এই ব্যবস্থা আজ ভোর থেকে কার্যকর হয়েছে। ঐ ইশতেহারে আরো বলা হয় যে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। উল্লেখ্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৬৯ সালের ৪ আগস্ট ৭ সদস্য বিশিষ্ট এক মন্ত্রিসভা গঠন করেন।
• সকল প্রদেশের গভর্নর ও সামরিক প্রশাসকদের এক বিশেষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট জেনারেল এ. এম ইয়াহিয়া খান সভাপতিত্ব করেন। সহকারী প্রধান সামরিক প্রশাসক জেনারেল আবদুল হামিদ খান এবং প্রেসিডেন্টের প্রধান স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল এস. জি. এম. পীরজাদাও সম্মেলনে যোগদান করেন। পিপিআইর খবরে প্রকাশ সরকারি ঘোষণায় ঐ সম্মেলনে আলাপ আলোচনায় বিষয়বস্তু সম্পর্কে কিছু বলা না হলেও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েই আলোচনা হয় বলে অনুমান করা হচ্ছে।
• নয়াদিল্লীস্থ পাকিস্তানি হাই কমিশন ভারতীয় বৈদেশিক দফতরের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করছে। পকিস্তানি দূতাবাসের মূল ভবনের মধ্যে প্রবেশ করে সম্প্রতি বিক্ষোভকারীরা জিনিসপত্রের যে ক্ষতিসাধন করেছে পাকিস্তান সরকার তার ক্ষতিপূরণ বাবদ ৯৩ হাজার ৭৭০ টাকা ৬৫ পয়সা দাবি করেছে।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• ঢাকায় নিযুক্ত সোভিয়েত কন্সাল জেনারেল ভ্যালেন্টিন এস. পপোভ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাৎকারে মিলিত হন। বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডিস্থ বাসভবনে সোভিয়েত কূটনীতিককে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সমাজসেবা সম্পাদক মোস্তফা সারওয়ার সংবর্ধনা জানান। তারপর সোভিয়েত কন্সাল জেনারেল বঙ্গবন্ধুর সাথে দেড়ঘণ্টা যাবৎ আলোচনা করেন।
• পাকিস্তান ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কে. জি. মোস্তফা অবিলম্বে সৈয়দ নজিউল্লাহ ও দোহাকে মুক্তিদানের জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি আবেদন জানান। তিনি বলেন, করাচী সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক নজিউল্লাহ এবং ইন্টার উইং উইকলী রিভিউ’র সম্পাদক এ. আর. এস. দোহাকে শাস্তিদানে আমি বিব্রত বোধ করছি। তিনি আরও বলেন, সৈয়দ নজিউল্লাহর স্ত্রীর স্বাস্থ্য ভালো না। তাঁর পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড তাঁর স্ত্রীর প্রতি কঠোর আঘাত হানবে। এর ফলে তাঁর স্বাস্থ্যের আরও অবনতি ঘটতে পারে। সৈয়দ নজিউল্লাহর স্বাস্থ্যও ভালো যাচ্ছে না। এসব বিষয় বিবেচনা করে আমি সৈয়দ নজিউল্লাহ এবং দোহা উভয়কে অবিলম্বে মুক্তিদানের জন্য প্রেসিডেন্টের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি।
• মওলানা ভাসানী সিলেট থেকে ঢাকা আসার সময় ভৈরব রেল স্টেশনে আজ ‘এনা’ প্রতিনিধিদের সাথে আলাপকালে এই মর্মে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন যে, আসন্ন জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের জন্য পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ভুট্টো শেষ পর্যন্ত ঢাকায় না এলে সারা দেশে ত্রাসের রাজত্ব শুরু হবে। তাঁর বক্তব্য ব্যাখা করে মওলানা ভাসানী বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা কায়েমের জন্য জনগণ ১১ বছর ধরে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম পরিচালনা করছে। জনগণ তাদের ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছেছে। জাতীয় পরিষদ বাতিল হলে জনগণ কী করবে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এই অবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য অন্য পন্থা অবলম্বন করতে বাধ্য হবে।
২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস এডমিরাল এস. এম. আহসান ইসলামাবাদের প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করেন। প্রাদেশিক গভর্নরবৃন্দ এবং সামরিক শাসন পরিচালকদের নিয়ে আয়োজিত এক সম্মেলনে যোগদান শেষে চাকলালা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হচ্ছে।
• জামায়াতে ইসলামীর প্রধান মাওলানা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী লাহোরে বলেন, ৬-দফা প্রশ্নে জামায়াত স্বীয় ভূমিকা পরিবর্তন করেনি। জামায়াত প্রথম হতে আজ পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্যও ৬-দফা সমর্থন করেনি। স্থানীয় একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রতিনিধির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ঐ মন্তব্য করেন।
• কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বাতিল করে দেয়ার ফলে পূর্ব পাকিস্তানে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে এই শূন্যতা পূরণের ব্যবস্থা না করা হলে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট আরো ব্যাপক হয়ে উঠবে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করে। গত বছরের শেষ দিকে কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের গতি তরান্বিত করর জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন করে। তখন থেকে পরিকল্পনা প্রণয়ন, অনুমোদন ও বাস্তবায়নের ক্ষমতা প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষের হাতে ন্যস্ত করার লক্ষ্যে প্রাদেশের উন্নয়ন বোর্ডকে সম্প্রসারণ করে কেন্দ্রীয় সরকারের সেক্রেটারির নেতৃত্বে পুনর্গঠিত করা হয়েছিল। (স্টাফ রিপোর্টার: দৈনিক পাকিস্তান)
• মন্ত্রিসভা বাতিলের ফলে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণের জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তাঁর কয়েকজন উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। এই উপদেষ্টাদের মধ্যে কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী ও অবসরপ্রাপ্ত অফিসার অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন বলে খবরে প্রকাশ।
২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• আওয়ামী লীগ দফতরে আহুত এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করার সংগ্রামের জন্য পাকিস্তানের নির্যাতিত জনগণ এবং বাংলাদেশের জাগ্রত কৃষক-শ্রমিক-ছাত্রজনতাকে প্রস্তুত থাকার আহবান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও পশ্চিম পাকিস্তানের নির্যাতিত জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্যই ৬-দফার অপব্যাখা করা হচ্ছে, বাংলাদেশকে ঔপনিবেশিক অবস্থা থেকে রক্ষা করার জন্যই ৬-দফা। প্রধানত দেশের অপরাংশের কায়েমী স্বার্থবাদীরা বাংলাদেশের ৭ কোটি জনগণের ওপর ঔপনিবেশিক শোষণ চালিয়েছে এবং বাংলাদেশের সম্পদ পাচার করেছে।
• এই সাংবাদিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান হতে এক হাজার মাইল দূরে লাওস এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অপরাপর অংশে মার্কিন হামলার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন।
• পাকিস্তান পিপলস পার্টির অন্তত ৬ জন জাতীয় পরিষদ সদস্য ২ মার্চ ঢাকা আসার জন্য পিআইএ-তে তাদের আসন সংরক্ষণ করেছেন। ঐ ৬ জন জাতীয় পরিষদ সদস্য হলেন গোলাম মোস্তফা জাতোই, পীর গোলাম রসুল, মখদুম মোহাম্মদ জামান, মখদুম মোহাম্মদ আমিন, মালিক মোজাফফর খান এবং হাকিম আলী জারদারী। জাতীয় পরিষদ সদস্যদের ঢাকা আসার ব্যাপারে পিআইএ কড়াকড়িভাবে গোপনীয়তা পালন করছে।
• জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের পূর্বেই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১ মার্চ ঢাকায় এসে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনা করবেন। উভয় নেতা দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি এবং শাসনতন্ত্র প্রণয়ন সম্পর্কে আলোচনা করবেন বলে জানা যায়।
• পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলতাফ হোসেন এক যুক্ত বিবৃতিতে নির্ধারিত তারিখে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠান, গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র প্রণয়ন ও অনুমোদন দান এবং সর্বোপরি জনপ্রতিনিধিদের নিকট শাসনক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা এই দাবিতে সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ-মিছিল প্রভৃতির মাধ্যমে জনমত গঠন করে গণবিরোধী শক্তিসমূহের চক্রান্তের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে পার্টির সকল ইউনিটের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন।
২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং পাকিস্তান ন্যাশনাল লীগের সভাপতি আতাউর রহমান খান এক বিবৃতিতে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ ৬-দফা কর্মসূচির জন্য ভোট প্রদান করেছেন এবং এটাই হলো রাজনৈতিক বাস্তবতা। একে অবশ্যই স্বীকার করে নিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনসাধারণ গত ৭ ডিসেম্বর তাদের সার্বভৌমত্ব আদায় করেছে। একে বানচাল করার যে কোন প্রচেষ্টার পরিণতি হবে মারাত্মক।
• ঢাকার জগন্নাথ কলেজের আসন্ন কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কলেজ ছাত্রলীগ শাখার দুই গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পিস্তলের গুলিতে দুইজন ছাত্র আহত হয়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
• পাবনা টাউন হল ময়দানে এক জনসভায় বক্তৃতাকালে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি দলের নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পশ্চিম পাকিস্তানি কায়েমী শোষক গোষ্ঠির চক্রান্তের বিরুদ্ধে সুদৃঢ় ও সতর্ক থাকার জন্য আহবান জানিয়ে বলেন, কায়েমী শোষকরা গত ২৩ বছরে বাঙালিদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত নির্মমভাবে শোষণ করেছে। তিনি আরো বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা যদিও জনসাধারণের উপর আঘাত হানার সুযোগের প্রতীক্ষা করছে তথাপি দেশে এক নয়া সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, ঐক্যবদ্ধ ও শোষিত জনসাধারণের কাছে তাদের এই চক্রান্তের খেলা ব্যর্থ হতে বাধ্য।
• প্রেসিডেন্ট নিক্সন ওয়াশিংটনে বলেন যে, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বিরোধ অব্যাহত থাকলে সংশ্লিষ্ট এলাকা অবাঞ্ছিতভাবে বিদেশী  প্রভাবাধীন হয়ে পড়বে। তিনি আরো বলেন, উভয় দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক শত্র“তা হতে সহযোগিতায় পরিণত করাই মার্কিন নীতির লক্ষ্য। কংগ্রেসের ৬৫ হাজার শব্দ সম্বলিত বার্ষিক পররাষ্ট্র নীতি রিপোর্টে তিনি এ কথা বলেন।
• নওয়াব শাহে (পশ্চিম পাকিস্তান) অবস্থিত পাকিস্তান পিপলস পার্টির জনৈক নেতার বাসভবনের বাইরে এক জনসভায় জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দানকালে জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, যদিও বর্তমানে দেশ চরম শাসনতান্ত্রিক সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে; তবু ইনশাআল্লাহ আমরা অবশ্যই একটা সংবিধান রচনায় এবং শাসনতান্ত্রিক গণসরকার কায়েমে কৃতকার্য হবো। তিনি বলেন, গণসরকার কায়েম প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য দেশে বিশেষ মহল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।
২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস এডমিরাল আহসান পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠান ও শাসনতন্ত্র প্রণয়ন প্রশ্নে পশ্চিম পাকিস্তানের যে রাজনৈতিক আবর্তের সৃষ্টি হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে এই বৈঠক খুবই অর্থবহ। আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এডমিরাল আহসান বলেন, তাঁরা জাতীয় ও প্রাদেশিক সমস্যাবলী নিয়ে আলোচনা করেছেন।
• পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জেড. এ. ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট এ. এম. ইয়াহিয়া খানের সাথে এক সাক্ষাৎকারে মিলিত হন। পিপলস পার্টি প্রধান প্রেসিডেন্টের সাথে দুই ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে দেশের শাসনতান্ত্রিক সঙ্কট নিয়ে আলোচনা করেন।
• পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো হায়দরাবাদে এক জনসভায় বক্তৃতাকালে বলেন, তাঁর দল আসন্ন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বর্জন করেনি। তাঁদের অভিমত শোনা হবে এবং যুক্তিসঙ্গত হলে তা গ্রহণ করা হবে এমন আশ্বাস পেলেই তাঁরা অধিবেশনে যোগদান করবেন। তিনি বলেন, তাঁর দলের আন্তরিক ইচ্ছা যে দেশ একটি কার্যকর ও কার্যোপযোগী শাসনতন্ত্র পাক এবং অনতিবিলম্বে জনসাধারণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হোক।
• পাকিস্তানে নিযুক্ত বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক আইভান নেনোভ সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর বাসভবনে এক সাক্ষাৎকারে মিলিত হন। উভয় নেতা পরস্পর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেন।
• পশ্চিম পাকিস্তান পিডিপির প্রেসিডেন্ট নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি জাতীয় পরিষদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যাতে আইন কাঠামো আদেশের আওতার মধ্যে থেকে কাজ করে সেদিকে লক্ষ্য রাখার আবেদন জানান। তিনি বলেন যে, আইন কাঠামো আদেশের আলোকে প্রেসিডেন্ট ৬-দফা ভিত্তিক কোন শাসনতন্ত্র অনুমোদন করবেন কিনা সে সম্পর্কে তিনি দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা করে বর্তমান সঙ্কটের অবসান ঘটাতে পারেন।
২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১
• পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণদানকালে পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, জাতীয় পরিষদের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতির উদ্ভব হবে। ১২০ দিনের মধ্যে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ অবশ্যই শেষ করতে হবে বলে যে শর্ত রয়েছে তার জন্যই পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠবে।
• আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির এক বৈঠকে দলীয় খসড়া শাসনতন্ত্র বিবেচনার জন্য পেশ করা হয়। পার্লামেন্টারি পার্টির অনুমোদনের পর এই খসড়া শাসনতন্ত্র জাতীয় পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে দলের পক্ষ থেকে পেশ করা হবে। আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর পার্লামেন্টারি পার্টির ১৮৮টি ধারাবিশিষ্ট খসড়া শাসনতন্ত্র বিবেচনা ও পরীক্ষার জন্য একটি ৩০ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। বৈঠক শেষে অপেক্ষামান সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু বলেন, খসড়া শাসনতন্ত্র পেশ করা ছাড়াও তাঁরা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
• ভুট্টোর পিপলস পার্টি ও কাইয়ুম লীগ ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য সমস্ত দলের এম. এন. এরা জাতীয় পরিষদের ৩ মার্চের ঢাকা বৈঠকে যোগদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কাউন্সিল মুসলিম লীগ, জমিয়তে ওলামায়ে পাকিস্তান তাদের পূর্ব সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
• কাইয়ুম লীগের সেক্রেটারি জেনারেল খান এ সবুর জনাব জেড. এ. ভুট্টোর প্রতি পূর্ব পাকিস্তানের ৭ কোটি লোকের রায় মেনে নিয়ে ঢাকা এবং ইসলামাবাদে দ্বৈত কেন্দ্র ভিত্তিক শাসনতন্ত্র প্রণয়নে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে জনসাধারণ যাতে তাদের নিজ ভূমিতে সার্বভৌমত্ব প্রয়োগ করতে পারে তার নিশ্চয়তা বিধানের আহবান জানান। খান এ সবুর বলেন, পাকিস্তান একটি রাষ্ট্র কিন্তু দুই অঞ্চল নিয়ে গঠিত। এই বাস্তব সত্যটি মেনে নিয়ে কেবল বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করা সম্ভব।
• পশ্চিম পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব গাউস বক্স বেজেঞ্জো এবং বেলুচিস্তান হতে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য বিশিষ্ট ন্যাপ নেতা ড. আবদুল হাই বেলুচ ঢাকায় আসেন। ঢাকায় আগমনের পর নিউমার্কেটে এক জনসভায় বক্তৃতাকালে বলেন, আগামী ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অবশ্যই হবে। জনাব বেজেঞ্জো পূর্ব বাংলার জনগণের সংগ্রামের প্রতি শ্রদ্ধা এবং বাংলার স্বায়ত্তশাসনের ন্যায় সঙ্গত দাবির প্রতি সমর্থন দান করে বলেন, বেলুচ ও পাকতুন জনগণও স্বায়ত্তশাসন ও জাতিগত অধিকারের দাবিতে একইরূপে নির্যাতন ভোগ করে আসছে।
১ মার্চ, ১৯৭১
March 1, 1971
• President Yahya in a sudden radio speech suspends the national committee session to be held on 3rd march for an indefinite period. He says, as one of the major parties of Pakistan, People’s Party and some other parties express that they are unwilling to join in the National (Parliamentary) committee session scheduled for March 3, this decision has been taken.

•  Upon hearing the news of suspension of the National (parliamentary) committee suspension by President Yahya Khan, Dhaka city erupts in anger and eventually group by group people of all classes take to the streets, and spontaneously all stores and business centers in the city close down as well.

• The cricket match being held in Dhaka stadium between BCCP and International XI is suspended. The audiences leave the stadium to take part in protests and they head towards Hotel Purbani in Motijheel to receive further directions from Awami League chief Sheikh Mujibur Rahman.

• Political leaders from Bangladesh deliver individual statements expressing ardent opposition against suspension of National parliamentary Committee session and refer to the president’s announcement as an initiative to abolish the process of re-establishing sovereignty of citizens and delivering/handing over the power to the people’s representatives.

• After the Parliamentary party meeting in Hotel Purbani in a crowded press conference Awami league chief Sheikh Mujibur Rahman expresses severe/deep objection to President Yahya Khan’s Announcement of suspending the national/Parliamentary committee meeting and also says that the people of the country have refused the decision and deem it unacceptable. In regard of this decision (Sheikh Mujibur Rahman) calls for a hartal/strike in Dhaka on 2nd March, countrywide strike on 3rd March and a rally in Race course field on 7th March as a part of an all pervading agitation or movement. He also says, in the Race course rally the complete policy implications, as a part of the total agitation will be announced. Regarding the current situation, he says, he will immediately hold talks with the political leaders.

• Later in the evening he talks about the changed political situation with various political leaders and after the evening he selects a representative to talk to Maulana Bhashani.

• Pakistan Muslim League Chief Khan Abdul Qayyum called the decision of the President as “the only correct decision” and welcomes it. In opposition to this secretary general Khan A. Shochib announces to resign as a member and secretary of the party.

• That night, President and Chief Marshall Law Administrator General A. M. Yahya Khan, appoints Lieutenant General Shahebzada M Eyakur Rahman, Kha region’s, Military dictator as the Civil administrator/ruler of the state. Deep into the night, Kha region’s Military ruler sends out a new order wherein no news or photograph that hurts the oneness and sovereignty of the nation can be published.

• The general strike that People’s Party have called in West Pakistan because of the National Parliamentary/Committee meeting scheduled to be held is called off after the President announces the suspension of the meeting.

১ মার্চ, ১৯৭১
•    প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আকস্মিক এক বেতার ভাষণে ৩ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের একটি প্রধান দল পিপলস পার্টি এবং অন্য কয়েকটি দল ৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান না করার ইচ্ছা প্রকাশ করায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
•  বেতারে প্রেসিডেন্টের জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণার বিবৃতি প্রচারের সাথে সাথে রাজধানী ঢাকা প্রচণ্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর ক্ষুব্ধ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে শহরের সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
•  ঢাকা স্টেডিয়ামে বিসিসিপি ও আন্তর্জাতিক একাদশের মধ্যে অনুষ্ঠানরত ক্রিকেট ম্যাচ ভণ্ডুল হয়ে যায়। দর্শকরা স্টেডিয়াম থেকে বের হয়ে মিছিলে শরীক হন। মিছিলগুলো আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে নির্দেশ লাভের জন্য মতিঝিলস্থ হোটেল পূর্বাণীর দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
• অধিবেশন স্থগিতের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকার বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা বিমানবন্দর এবং পি. আই. এর মতিঝিল অফিসের কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অফিস ছেড়ে চলে যান। ফলে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে প্রদেশের বিভিন্ন রুটে এবং আন্তঃদেশীয় রুটে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
• বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পৃথক বিবৃতিতে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে প্রেসিডেন্টের ঘোষণাকে জনগণের সার্বভৌমত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর নস্যাৎ করার উদ্যোগ বলে অভিহিত করেন।
• পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠক শেষে হোটেল পূর্বাণীতে এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট কর্তৃক জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলার জনগণ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে ২ মার্চ ঢাকা শহরে ও ৩ মার্চ সারা বাংলায় হরতাল পালন এবং ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভা অনুষ্ঠানের কথা ঘোষণা করেন। ৭ মার্চের জনসভায় বঙ্গবন্ধু সর্বাত্মক আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ কর্মপন্থা ঘোষণা করবেন বলে জানান। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি অবিলম্বে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করবেন।
•  রাতে বঙ্গবন্ধু তাঁর ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাসভবনে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সাথে আলোচনা বৈঠকে মিলিত হন। সন্ধ্যার পর তিনি সন্তোষে মাওলানা ভাসানীর সাথে আলোচনার জন্য তাঁর প্রতিনিধি প্রেরণ করেন।
• পাকিস্তান মুসলিম লীগের প্রধান আবদুল কাইয়ুম খান প্রেসিডেন্টের ঘোষণাকে ‘একমাত্র সঠিক সিদ্ধান্ত’ হিসেবে অভিহিত করে স্বাগত জানালে এর প্রতিবাদে মহাসচিব খান এ. সবুর দলের সদস্যপদ ও সম্পাদকের পদ ত্যাগের কথা ঘোষণা করেন।
•  রাতে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল এ. এম. ইয়াহিয়া খান ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক শাসনকর্তা লে. জেনারেল সাহেবজাদা এম. এয়াকুব খানকে প্রদেশের বেসামরিক শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। গভীর রাতে ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক প্রশাসক এক নতুন আদেশ জারী করে সংবাদপত্রে দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কোনো খবর বা ছবি প্রকাশ না করার নির্দেশ দেন।
• পিপলস পার্টি ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনুষ্ঠানের প্রতিবাদে ২ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানে যে সাধারণ ধর্মঘট পালনের আহবান জানিয়েছিল, প্রেসিডেন্টের ঘোষণার প্রেক্ষিতে সন্ধ্যায় তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
২ মার্চ, ১৯৭১
2nd March, 1971
• In a historic student rally held in Bottola of the Dhaka University Premises, the Bangladesh flag with the Map of Bangladesh inlaid in it is hoisted. The Flag is hoisted by Student leader A. S. M. Abdur Rob, along with him are present Chhatra Sangram Parishad leader Tofayel Ahmed,Abdul Quddus Makhan, and Nur-e-Alam Siddiqui are present.In this huge meeting, determination is expressed to undergo any sacrifice and continue to fight till the end. An oath is taken in the beginning of the meeting by the student body under the leadership of Bangabandhu to continue the fight for freedom. In the meeting, Chhatra League secretary Shahjahan Shiraj and Dakshur general secretary Abdul Quddus Makhan also give speeches. After the meeting ends a huge procession is lead out chanting Freedom/independence slogans ending at Baitul Mukarram.
• In the afternoon, the Pakistani flag is pulled down and the Bangladeshi Flag inlaid with Bangladesh map is hoisted in the Dhaka University and in the Secretariat premises.
• Suddenly that very night curfew is imposed in the Dhaka City through radio. As soon as the curfew is announced, students from student hostels and student-general people alike headed out from their houses to chant slogans opposing the curfew and took out processions.  Their slogan is “Shandho Ain Mani na”, “ Joy Bangla”, “Bir Bangali osthro dhoro, Bangladesh shadhin Koro”. Throughout the city the curfew is broken and barricades are formed. In DIT intersection, in front of the Morning News Newspaper office, at 09:30pm the military open fire on the people. When a huge procession of people break the curfew and head towards the Governor’s house, shots are fired at them as well. Apart from this, reckless shots are fired at everyone who broke the curfew in various areas.

২ মার্চ, ১৯৭১
• ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক ছাত্রসমাবেশে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। পাতাকা উত্তোলন করেন ছাত্রনেতা আ. স. ম আবদুর রব। সঙ্গে ছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা তোফারেল আহমদ, আবদুল কুদ্দুস মাখন এবং নূরে আলম সিদ্দিকী। বিশাল এই সভাতে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার এবং শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প ঘোষণা করা হয়। সভার শুরুতে সমবেত ছাত্রসমাজ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও নির্দেশ অনুযায়ী স্বাধীনতার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ গ্রহণ করে। সভায় ছাত্রলীগ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ এবং ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখনও বক্তৃতা করেন। সভা শেষে এক বিরাট শোভাযাত্রা স্বাধীনতার শ্লোগান দিতে দিতে বায়তুল মোকাররম গমন করে।
•  দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সচিবালয়ে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা পতাকা উড়ানো হয়।
• রাতে হঠাৎ বেতার মারফত ঢাকা শহরে কারফিউ জারীর ঘোষণা করা হয়। কারফিউ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও শ্রমিক এলাকা থেকে ছাত্র-জনতা ও শ্রমিকেরা কারফিউ-এর বিরুদ্ধে প্রবল শ্লোগান তুলে কারফিউ ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। তাদের শ্লোগান ছিল- “সান্ধ্য আইন মানি না”, “জয় বাংলা”, “বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো” ইত্যাদি। সমস্ত শহরে কারফিউ ভঙ্গ করে ব্যারিকেড রচনা করা হয়। ডি. আই. টি এভিনিউর মোড়, মর্নিং-নিউজ পত্রিকা অফিসের সামনে রাত সাড়ে নয়টায় সামরিক বাহিনী জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। বিরাট এক জনতা কারফিউ ভঙ্গ করে গভর্নর হাউজের দিকে এগিয়ে গেলে সেখানেও গুলি চালানো হয়। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে কারফিউ ভঙ্গকারীদের ওপর বেপরোয়া গুলি চলে।

৩ মার্চ, ১৯৭১
March 3, 1971.
• Called by Sheikh Mujibur Rahman, complete strikes are observed all through Bangladesh for the first time and in the Capital Dhaka for the second time. During the strike general going-on in the city comes to a complete standstill.
• During the strike, in the spontaneous processions brought about by general people, under fire of Pakistani Military many people die. Apart from Dhaka, curfew is imposed on Rangpur and Sylhet.
• In Rangpur, as fight breaks out between Pakistani army men and civilians, from 2:30pm in the afternoon a 24 hour curfew is imposed. In Sylhet the Curfew is imposed from 7:30 in the morning to 7:30 in the evening. Whereas in Dhaka the curfew time is softened and changed from 10:30 in the night to 6 in the morning.
• President Yahya Khan, in an announcement said that a meeting would be arranged on the coming 10th March between the political leaders. This is announced from the President Bhaban in Rawalpindi where it is also said that after the conference, within two weeks, the national Parliamentary/committee assembly will be held. Bangabandhu, instantly rejects the invitation by President Yahya Khan.
• Bangabandhu says in a speech directed towards Mr Bhutto, that “if you do not want a democratically elected government, then you can form your own government. We will form the government/constitution of Bangladesh” said Sheikh Mujibur Rahman.

৩ মার্চ, ১৯৭১
• শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঢাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো এবং সমগ্র বাংলাদেশে প্রথম দিনের জন্য সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। হরতালের সময় শহরের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যায়।
• হরতাল চলাকালে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত মিছিলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে ও বিভিন্ন ঘটনায় সারাদেশে শতাধিক ব্যক্তি নিহিত হয়। ঢাকা ছাড়াও রংপুর এবং সিলেটে কারফিউ জারী করা হয়।
• রংপুরে পাক সেনাবাহিনী ও জনতার মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে দুপুর আড়াইটা থেকে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী কারফিউ জারী করা হয়। সিলেটে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কারফিউ জারী করা হয়। ঢাকায় কারফিউয়ের মেয়াদ শিথিল করে রাত ১০টা থেকে সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বলবৎ করা হয়।
• প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক ঘোষণায় আগামী ১০ মার্চ ঢাকায় নেতৃবৃন্দের সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। রাওয়ালপিন্ডির প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে ঘোষনা করা হয়, এই সম্মেলন অনুষ্ঠানের পর দুই সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার আমন্ত্রণ তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখান করেন।
• বঙ্গবন্ধু জনাব ভুট্টোর উদ্দেশ্যে বলেন, গণতান্ত্রিক নিয়মে প্রণীত এক শাসনতন্ত্র যদি না চান তাহলে আপনাদের শাসনতন্ত্র আপনারা রচনা করুন। বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র আমরাই রচনা করবো।
• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বুলেটে আহতদের জীবন রক্ষার জন্য জনগণের প্রতি ব্লাড ব্যাংকে রক্তদানের উদাত্ত আহবান জানান। তিনি জনসাধারণকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বাংলার স্বাধিকার বিরোধী বিশেষ মহল নিজস্ব এজেন্টদের দিয়ে লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও উচ্ছৃঙ্খল ঘটনা ঘটাচ্ছে। স্বাধিকার আন্দোলন বিপথগামী করার এ অশুভ চক্রান্ত রুখতেই হবে।
৪ মার্চ, ১৯৭১
March 4, 1971
• During the strike, 6 people are martyred in Khulna, and in Chittagong, the death toll including March 4, falls at 121.
• Radio Pakistan Dhaka Kendra, starts broadcasting as Dhaka Betaar Kendra, and Pakistan television starts broadcasting as Dhaka Television. Radio-Television artists announce that until, the people and students of the country continue to fight, till then they will also not participate in any programs of television and radio.
• Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman in one speech says, without immense sacrifice no country has ever achieved independence. He says we need to stand up against this ploy to continue the repression and rule of a colonial era and applauds the nation’s courage in standing up against this.
• Awami League chief Sheikh Mujibur Rahman called for hartals on 5 & 6 March starting from 6am in the morning to 2pm in the afternoon. He also says, that those office-goers both public and private who have not yet received their salary, those offices will remain open from 2:30pm to 4pm.
• In a press conference in Karachi Press club, (Retired)  air marshal Asghar Khan urges Awami League to hand over power to keep the country from being separated.
• The students and 55 teachers in Dhaka University in individual statements  express anger over the role of Dhaka’s Pakistan Observer against public opinion
• In Pakistan,Karachi,  People’s Party Chairman, Z.A. Bhutto in a press conference said that to reduce the friction/ anger in the country  they would try their best to meet the 6 point demand.

৪ মার্চ, ১৯৭১
• জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা ও গণহত্যার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঢাকাসহ সারা বাংলায় সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। প্রদেশের বেসামরিক শাসনব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে।
• হরতাল চলাকালে খুলনায় সেনাবাহিনীর গুলিতে ৬ জন শহীদ হন। চট্টগ্রামে আজ দুদিনে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়ায় ১২১ জনে।
• বঙ্গবন্ধুর আহবানের পর স্বাধিকার আন্দোলনে গুলিতে আহত মুমূর্ষু বীর সংগ্রামীদের প্রাণরক্ষার্থে শত শত নারী-পুরুষ ও ছাত্রছাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংকে স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন।
• রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্র ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র’ এবং পাকিস্তান টেলিভিশন ‘ঢাকা টেলিভিশন’ হিসেবে সম্প্রচার শুরু করে। বেতার-টেলিভিশন শিল্পীরা ঘোষণা করেন, যতদিন পর্যন্ত দেশের জনগণ ও ছাত্রসমাজ সংগ্রামে লিপ্ত থাকবেন ততদিন পর্যন্ত ‘বেতার ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তাঁরা অংশ নেবেন না।’
• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, চরম ত্যাগ স্বীকার ছাড়া কোনদিন কোন জাতির মুক্তি আসেনি। তিনি উপনিবেশবাদী শোষণ ও শাসন অব্যাহত রাখার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহবানে সাড়া দেয়ায় বীর জাতিকে অভিনন্দন জানান।
• আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৫ ও ৬ মার্চ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালনের আহবান জানিয়ে বলেন, যেসব সরকারি ও বেসরকারি অফিসে কর্মচারীরা এখনো বেতন পাননি শুধু বেতন প্রদানের জন্য সেসব অফিস আড়াইটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
• করাচী প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান দেশকে বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের কাছে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান।
• পিডিপি প্রধান নূরুল আমীন এক বিবৃতিতে ১০ মার্চ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে প্রেসিডেন্টের প্রতি অবিলম্বে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ঢাকায় আহবান করার দাবি জানান।
• ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫ জন শিক্ষক পৃথক পৃথক বিবৃতিতে ঢাকার ‘পাকিস্তান অবজারভার’ পত্রিকার গণবিরোধী ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
• পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জেড. এ ভুট্টো করাচীতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, দেশের সংহতির জন্য তাঁর দল যদ্দুর সম্ভব ৬-দফার কাছাকাছি হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানের বিস্ফোরন্মুখ পরিস্থিতির অবসানের জন্য তিনি এখন জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে রাজি হবেন কী না- এ প্রশ্নের জবাবে জনাব ভুট্টো বলেন, ‘ঘটনাপ্রবাহ দ্রুত ঘটছে। এ সম্পর্কে অবহিত করার জন্য আমরা সাংবাদিকদের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করবো।’
৫ মার্চ, ১৯৭১
5th March 1971
• On the fifth day of the hartal, under fire from members of Armed forces 4 laborers while 25 of them get hurt in Tongi. Upon receiving this news, people in Dhaka city burst out in anger
• In Dhaka, announcements are made saying that the Army has been moved back to the barracks.
• In Rawalpindi, People’s Party Chairman Z. A. Bhutto talks to President Yahya in the Presidential residence for more than 5 hours.
• Retired Air Marshall Asghar Khan reaches Dhaka in the evening from Karachi and holds a meeting with Sheikh Mujibur Rahman in his Dhanmondi Residence
• That night Sheikh Mujibur Rahman completely shuns  the news broadcasted by foreign radio saying that he is willing to share and separate the country with Bhutto claiming that this news is ill fated and only imagined by Mr Bhutto.
• The main leader of the 11 point demand, Mr Tofayel Ahmed urges the radio station Dhaka Betaar to directly relay the speech to be made by Sheikh Mujibur Rahman on the upcoming 7th March rally on the Race Course Premises
• After the meeting between Z.A Bhutto and President Yahya in Rawalpindi, the spokesperson for Peoples Party says that the reaction and response of Awami league to the suspension of the National Committee meeting is utterly baseless and has no validity.

৫ মার্চ, ১৯৭১
• ৫ম দিনের মত হরতাল পালনকালে সশস্ত্রবাহিনী সদস্যদের গুলিতে টঙ্গী শিল্প এলাকায় ৪ জন শ্রমিক শহীদ হন এবং ২৫ জন শ্রমিক আহত হন। এ সংবাদে ঢাকায় জনসাধারণের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
• সন্ধ্যায় সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়, আজ ঢাকায় সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে।
• বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে হরতালের পর ব্যাংক খোলা থাকে। মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজের পর শহীদানের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদ সভা ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।
• লাহোরে দেশের পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক আন্দোলনে নিহত শহীদদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং সঙ্কটময় মুহূর্তে দেশের সংহতির জন্য বিভিন্ন মসজিদে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
• পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জেড. এ. ভুট্টো রাওয়ালপিন্ডির প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে ৫ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আলোচনা করেন।
• অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল আসগর খান বিকেলে করাচী থেকে ঢাকায় পৌঁছোন। তিনি রাতে বঙ্গবন্ধুর সাথে ধানমন্ডিস্থ বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন।
• রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদেশী বেতারে প্রচারিত ‘শেখ মুজিব জনাব ভুট্টোর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগ ভাটোয়ারা করতে রাজি আছেন’ সংক্রান্ত সংবাদকে ‘অসদুদ্দেশ্যমূলক’ ও ‘কল্পনার ফানুস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
• বঙ্গবন্ধুর স্বাধিকার আন্দোলনের আহবানে সাড়া দিয়ে বিকেলে কবি সাহিত্যিক ও শিক্ষকবৃন্দ মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে আসেন। ছাত্রলীগ ও ডাকসুর উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম থেকে মিছিল বের হয়।
• এগার দফা আন্দোলনের অন্যতম নেতা তোফায়েল আহমদ ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সরাসরি রিলে করার জন্য ঢাকা বেতার কেন্দ্রের প্রতি আহবান জানান।
• রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, ঢাকা চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর সিলেটসহ বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে মিলিটারির বুলেটে নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষ, শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্রদের হত্যা করা হচ্ছে। নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষকে এভাবে হত্যা করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়।
• রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে পিপলস পার্টির প্রধান জেড. এ. ভুট্টোর আলোচনা বৈঠক শেষে পার্টির মুখপাত্র আবদুল হাফিজ পীরজাদা মন্তব্য করেন, জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত রাখার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া যেভাই বিচার করা হোক না কেন, তা অত্যন্ত অবাঞ্ছিত এবং আদৌ যুক্তিযুক্ত নয়।
৬ মার্চ, ১৯৭১
6th March 1971
• Agitated Bengal is now high in the fervor of meetings-conferences and rallies. In
• Dhaka, the hartal continued for the 6th day and like Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman asked strikes kept continuing in a peaceful manner whilst people who did not get their salaries from their offices, as advised go to collect them after 2:30pm.
• At 11 in the morning, 321 prisoners break open the central jail to escape, during the escapade, 7 are shot whilst 30 are injured.
• Pakistan President Yahya Khan in the afternoon in a radio broadcast invites for the National Committee meeting to be held on the 25th March and also says that as long Pakistan Military is under his command and as long as he is the president he will ensure the solidarity of Pakistan unchallenged.
• Soon after the announcement by Yahya, spontaneous processions are led out by people in Narayanganj and Dhaka. In Rawalpindi, Peoples Party Chairman Z.A. Bhutto welcome the proposal by President Yahya and in a Press conference he says that his political party is interested in putting together a structure for the government even prior to the National committee meeting.
• In an interview in Lahore, Muslim League leader Air Marshall Nur Khan said that it is the legal right of Sheikh Mujibur Rahman to be able to rule the country. He urges that all barriers to the handover of power be overcome immediately and he also expresses remorse over the accusation on Sheikh Mujibur Rahman in regard to the deteriorating condition of the country brought about in the speech by the president.
• President and chief Marshall Law Administrator General Yahya Khan appointed Lieutenant General Tikka Khan as the Governor of East Pakistan.

৬ মার্চ, ১৯৭১
• সংগ্রামী বাংলা এখন সভা-সমাবেশ-মিছিলে উত্তাল। ঢাকায় ষষ্ঠ দিনের মতো হরতাল পালনকালে সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে আসে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন শেষে তাঁরই নির্দেশে বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক এবং যেসব বেসরকারি অফিসে ইতিপূর্বে বেতন দেয়া হয়নি সেসব অফিস বেতন প্রদানের জন্য খোলা থাকে।
• সকাল ১১ টার দিকে সেন্ট্রাল জেলের গেট ভেঙ্গে ৩৪১ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। পালানোর সময় পুলিশের গুলিতে ৭ জন কয়েদি নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়।
• পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দুপুরে এক বেতার ভাষণে ২৫ মার্চ জাতীয় পরষদের অধিবেশন আহবান করেন। ভাষণে তিনি বলেন, যাই ঘটুক না কেন যদ্দিন পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমার হুকুমে রয়েছে এবং আমি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান রয়েছি তদ্দিন পর্যন্ত আমি পূর্ণাঙ্গ ও নিরঙ্কুশভাবে পাকিস্তানের সংহতিরে নিশ্চয়তা বিধান করবো।
• প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণের অব্যবহিত পরেই বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাখার ওয়ার্কিং কমিটির এক যুক্ত জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণের আলোকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
• ইয়াহিয়া খানের বেতার ভাষণের পরপরই ঢাকা ও নারায়নগঞ্জে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। রাওয়ালপিন্ডিতে পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ভাষণকে স্বাগত জানিয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, তাঁর দল ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনের আগেই আলোচনার মাধ্যমে শাসনতন্ত্রের মোটামুটি একটি কাঠামো স্থির করতে চায়।
• লাহোরে কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা এয়ার মার্শাল নূর খান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ-শাসনের বৈধ অধিকার রয়েছে। ক্ষমতা হস্তান্তারের সব বাধা অবিলম্বে দূর করতে হবে। প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণে পরিস্থিতি অবনতির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর দোষারোপ করায় নূর খান দুঃখ প্রকাশ করেন।
• পেশোয়ারে পাকিস্তান মুসলিম লীগ প্রধান খান আবদুল কাইয়ুম খান ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবানের সিদ্ধান্তকে অভিনন্দিত করে বিবৃতিতে বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পিডিপি প্রধান নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান ও কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মিয়া মমতাজ দৌলতানা ইয়াহিয়া খানের ঘোষণাকে স্বাগত জানান।
• প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান লে. জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত করেন।
• ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান থেকে সরাসরি বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাংলাদেশের সকল বেতার কেন্দ্র থেকে রিলে করার দাবি জানান।
৭ মার্চ, ১৯৭১
7th March 1971
• In the evening Sheikh Mujibur Rahman, in a historical congregation of almost 10 lakh people in a 20 minute long speech announces “Ebarer Shongram amader muktir shongram, Ebarer shongram, shadhinotar Shongram” (This war is a war for independence, this war is a war for Freedom)
• Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman reached the Race course premises at 3:15 pm in a white Punjabi and Pajama with the characteristic Black overcoat. As he walked on the stage, the confluence of people welcomed him with Slogans of Joy Bangla. In his speech he urged everyone “raise forts in every house, fight the enemy with what you have at hand”. He also said, “I don’t want the premiership of the country, all I want is the right of the people of this land and if one fire is shot and if one my men is hurt and I am unable to give any advice then you fight, you fight the enemy with what you have at hand. Since we have already shed blood, we will shed even more blood, we will free the people of this country In’shaallah”
• People are chanting slogans in response to the speech urging all to fight for Bangladesh’s Freedom
• In opposition to the fact that Sheikh Mujib’s Speech is not relayed on Dhaka Betaar, all employed Bangladeshis working in Dhaka Betaar suspended the broadcast of all programs and  when the news of the relay reached the people, all Bangladeshis waited eagerly with radio in hand to listen to the historic speech. However the Military authorities decided to bar the speech from being broadcasted and this resulted in the complete breakdown of all work in the radio station.  Eventually authorities are forced to allow the speech to be broadcasted and in deep into the night Bangabandhu’s speech is decided to be aired and work resumes in the Dhaka radio station
• After the speech, in a Press conference in Dhaka, Air Marshall Retired Asghar Ali Khan asked for the handover of power to the Majority winning Party of Awami league and also urged the withdrawal of power from Military authorities.

৭ মার্চ, ১৯৭১
• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিকেলে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে দশ লক্ষাধিক লোকের অভূতপূর্ব সমাবেশে ভাষণ দেন। ২৬ মিনিটের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
• বেলা সোয়া তিনটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাস্থলে এসে উপস্থিত হন। সফেদ পাজামা-পাঞ্জাবি ও কালো কোট পরিহিত শেখ মুজিব মঞ্চে এসে দাঁড়ালে বীর জনতা করতালি ও ‘জয়বাংলা’ শ্লোগানের মধ্যদিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানান। বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু আহবান জানালেন, “প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।” তিনি ঘোষণা করেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই।… আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, আমি যদি হুকুম দিতে নাও পারি- তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।”
• বক্তৃতাকালে জনতার কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছিল শ্লোগান, “জাগো জাগো- বাঙালি জাগো”, “পাঞ্জাব না বাংলা- বাংলা বাংলা”, “তোমার আমার ঠিকানা- পদ্মা মেঘনা যমুনা”, “তোমার নেতা আমার নেতা- শেখ মুজিব, শেখ মুজিব”, “বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো- বাংলাদেশ স্বাধীন করো।”
• ঢাকা বেতারে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ রিলে না করার প্রতিবাদে বেতারে কর্মরত বাঙালি কর্মচারিরা কাজ বর্জন করেন এবং বিকেল থেকে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের সকল অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ রিলে করা হবে- এ ঘোষণার পর সারা বাংলায় শ্রোতারা অধীর আগ্রহে রেডিও সেট নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। শেষ মুহূর্তে সামরিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদে বেতার কেন্দ্রটি অচল হয়ে পড়ে। তখন কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েই অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। গভীর রাতে সামরিক কর্তৃপক্ষ ঢাকা বেতারে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পূর্ণ বিবরণ প্রচারের অনুমতি দিলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দিয়ে ঢাকা বেতার কেন্দ্র পুরনায় চালু হয়।
৮ মার্চ, ১৯৭১
৮ মার্চ, ১৯৭১
• সকাল সাড়ে আটটায় ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে সম্প্রচার কাজ শুরু হয়। প্রদেশের অন্যান্য বেতার কেন্দ্র থেকেও তা রিলে করা হয়।
• ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ এবং ডাকসুর সহ-সভাপতি আ. স. ম. আব্দুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, বাংলার বর্তমান মুক্তি আন্দোলনকে ‘স্বাধীনতার আন্দোলন’ ঘোষণা করে স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক সনসভায় যে প্রত্যক্ষ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন আমরা তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য বাংলার সংগ্রামী জনতার প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
• রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষিত নির্দেশের ব্যাখা প্রদান করেন। এতে বলা হয়, ব্যাংকসমূহ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ব্যাংকগুলো বাংলাদেশের ভেতরে নগদ জমা, বেতন ও মজুরী প্রদান, এক হাজার টাকা পর্যন্ত প্রদান এবং আন্তঃব্যাংক ক্লিয়ারেন্স ও নগদ লেনদেন করতে পারবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং প্রয়োজনীয় বিভাগগুলো খোলা থাকবে। সার সরবরাহ ও পাওয়ার পাম্পের ডিজেল সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। পোস্ট অফিস সেভিংস ব্যাংক খোলা থাকবে। পানি ও গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।
• আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ পৃথক আরেকটি বিবৃতিতে সামরিক শাসন কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত প্রেসনোটের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, প্রেসনোটে হতাহতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে বলা হয়েছে। অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ক্ষেত্রেই গুলিবর্ষণ করা হয়েছে বলে কথিত বক্তব্য সত্যের অপলাপ। নিজেদের অধিকারের স্বপক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভরত নিরস্ত্র বেসামরিক অধিবাসীদের ওপরই নিশ্চিতভাবে গুলি চালানো হয়েছে। পুলিশ ও ইপিআর গুলিবর্ষণ করেছে বলে যে প্রচারণা করা হয়েছে তা বাঙালিদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে।
• বৃটেনে প্রবাসী প্রায় ১০ হাজার বাঙালি লন্ডনস্থ পাকিস্তানি হাই কমিশনের সামনে স্বাধীন বাংলার দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
• ইসলামাবাদে পিপলস পার্টির চেয়াম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর দেয়া শর্ত সম্পর্কে সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

8th March 1971
• At 8:30am with the airing of Bangabandhu’s Race course speech work resumes in Dhaka radio station.
• Chhatra League president Nur-e-Alam Siddiqui, General Secretary Shahjahan Shiraj and Daksur Vice President A.S.M Abdur Rob and general secretary Abdul Quddus Makhan in a joint statement say that this present fight to be termed as a “Freedom Fight” and Bangabandhu as the father of the Nation. They also give their complete consent with the speech given at the Race course field along with the upcoming arrangements.
• Late that night in another statement by General secretary of Awami League, it is said that the Press note released by the Military authorities gives a gross and wrong depiction of events significantly lowering the number of casualties and deaths suffered by innocent civilians when they are involved in processions and rallies fighting for their rights.
• Almost 10 thousand Bangladeshis living in Britain gather in front of the Pakistani High commission in London demanding for an Independent Bangladesh.
• In Rajshahi, the Military authorities imposed curfew from 9pm in the night for an indefinite period and this is deemed as unreasonable and the military is urged to withdraw the curfew.
• In the morning, the Bangladeshi people working in PIA, march out of the Airport and take a procession to Sheikh Mujib’s Dhanmondi Residence

১০ মার্চ, ১৯৭১
10th March 1971
• Under the instruction of Sheikh Mujibur Rahman, all government and semi-government institutions remain closed for the tenth day. Whilst the Bangladeshi Flag inlaid with the Map of Bangladesh flies on the roof of every household, even Rajarbagh Police line, police stations, High court and the Justice Residence also hoisted the Bangladesh Flag.
• In Dhaka Bangabandhu in a statement said that the order that he had issued to keep offices, banks and other institutions to be closed is being followed through along with that he also said that this is a ploy to keep the country in the grips of a military led rule and to instigate emergency situation in the nation.
• In Karachi, in a press briefing, NAP chief Wali Khan tells the Journalists that he will head to Bangladesh to meet with Sheikh Mujibur Rahman on 13th March.
• People’s Party Chairman sent a telegram/telephone message Sheikh Mujibur Rahman Highlighting the plight of the nation, saying that the country is in grave uncertainty and the future of the country is in blurs, and says that both have responsibilities in this circumstance and they need to do whatever is required to protect the nation.
• In Karachi, Air Marshall Asghar Khan says that situation is changing very swiftly and to protect the country from being separated and in protecting the country’s future many responsibilities are there and steps need to be taken. And right now in Dhaka, Sheikh Mujibur Rahman is the acting government and his orders are being taken, and only in the cantonment premises are the flag of Pakistan flying and unless power is handed to the major vote winning party this issue cannot be solved.
১১ মার্চ, ১৯৭১
11th March 1971
• In demand of an independent Bangladesh, under the instruction of Sheikh Mujibur Rahman, all co-operation with the government is kept suspended. And keeping in lieu with Bangabandhu’s agitation the high court judge and administrative Secretary along with many office goers throughout the country quit office.
• Fighting civilians put up barriers and create obstacles in the process of procurement of day to day items by the Military authorities. In Sylhet, one convoy supplying rations is intercepted by the civilians.
• That night, 114 number military order is enforced saying that if any civilians willingly or unwillingly harms the government property or creates obstacles in the work of the military that will be punishable by law
• In Tangail, Bindubashini High school field, NAP leader Maulana Abdul Hamid Khan in a people’s rally announces his support for the freedom fight and says Sheikh Mujibur Rahman is the leader of 7 crore people and to follow his instructions. To achieve the goals all must unite and fight together.
March 12, 1971
12th March 1971
• Under the instruction of Sheikh Mujibur Rahman, all government, semi-government and private offices, educational institutions and banks remain closed whilst black flag continues to fly.
• In a press briefing in Lahore, Air Marshall Asgar Ali Khan said, that fate is playing an odd game, where the fault is of Lahore, yet shots are fired in Dhaka. He said the people of the East region want to live with equal rights, not be the slaves of west Pakistan, and now the only way to alleviate this problem is to hand over the power to the hands of Sheikh Mujibur Rahman.
• National Committee member Mohammed Zahiruddin gives up the title given by Pakistan Government.
• In Bogra, 27 prisoners escape by Jail break and following that in the open fire, one prisoner dies, whilst 15 get injured.
March 13, 1971
13th March, 1971
• Army/Military authorities enact 115 no. army order ordering all employed civilians to join the defence ministry by 10am, 15th of March. In this order, it is specified that if anyone failed to do so, they would be fired from the job and would be termed as fugitives, and court-martialed
• Right after this army/martial is ordered, Sheikh Mujibur Rahman gives a statement saying where People of Bangladesh are fighting against military rule, such statements are simply nothing but a provocation for people
• Eminent artist Jainul Abedin and former National Committee member give up the title and prize honored to them by Pakistan government.
• Former National committee member Afazuddin Fakir in a statement “Letter of Authority” urges the President Yahya Khan to hand over power. He asks that the defense ministry of the east be coordinated by  a Bangladeshi also adding that all the Battalions of the Bangladesh Regiment be managed by Bangladeshi officers and also to withdraw the excess influx of Military in East Bengal over the last month.
March 14, 1971
14th March 1971
• The non-cooperation agitation movement is in the last day of its second phase.
• On the topic of joining the National parliamentary committee meeting Sheikh Mujibur Rahman gave a 4 point prior condition- for the acceptance of these prior conditions many processions and rallies are taken out in Dhaka.
• NAP leader Abdul Wali Khan and Sheikh Mujibur Rahman get together in a meeting. The meeting is held in Bangabandhu’s Residence where other Awami League leaders are also present. And Sheikh Mujibur Rahman told the waiting Journalists that this fight is fight by the people to live independently in an independent country.
• Later that night Sheikh Mujibur Rahman in a statement urged Bangladeshis to continue the non-cooperation movement and also announced new orders for future. Adding that the Bangladeshi citizens fight cannot go to waste and we are indomitable because we are ready to die
• In Nishat Park of Karachi a rally is organized with the initiative of the people’s Party where PP’s Chairman Z. A. Bhutto proposed that power be handed over to the major parties of Pakistan and as the leader of the west Pakistan Majority party he urged for dialogues to begin with Bangabandhu.
• In a rally in Barisal, National League chief Ataur Rahman Khan calls for the formation of a temporary government by Sheikh Mujibur Rahman.
March 15, 1971
15th March 1971
• In the continuing peaceful agitations all offices and business places remained closed. Daylong meetings and rallies continued in the city and black flags continued to fly even on vehicles
• Amidst heavy security President Yahya Khan arrived in Dhaka from Karachi. Governor Lieutenant General Tikka Khan welcomed him in the airport. No Journalist or Bangladeshi is allowed there.
• Peoples Party Chairman Z. A. Bhutto in Karachi, in a new Press conference put forward a new set of demand saying that Awami League and Peoples party should form a new government in conjuncture.
• Awami League General secretary in a late night statement reaffirmed the support of people in Bangabandhu’s call for peaceful non-cooperation movements.
March 16, 1971
16th March
• Awami League Chief Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman met Agha Muhammad Yahya Khan for a long meeting behind closed doors.
• After the meeting Sheikh Mujibur briefed the press saying they talked about pressing political issues in the nation and they will meet again tomorrow.
• In a historic move India bans any plane from using or moving over the Indian air space. A ploy to ensure that no plane carrying military personnel could fly to East Pakistan from West Pakistan.
March 17, 1971
17th March 1971
• On the 16th day of the non-cooperation movement Sheikh Mujibur Rahman meet Yahya Khan for the second time in a meeting that went on for an hour. The press is briefed by Sheikh Mujibur Rahman after the meeting saying that until the goals are met the discussion will continue.
• President Yahya Khan invites People’s Party chairman Z.A. Bhutto to Dhaka.
• Plans for a third meeting between President Yahya Khan and Sheikh Mujibur Rahman is announced that night
• Military men attacked trucks in Tejgaon and Mohakhali where they mugged money and tortured the unarmed men. Which resulted in even more anger among the general people.
• “Irna Elizabeth” carrying food aid for Bangladeshis is intercepted in Chittagong and rerouted towards Karachi.
March 19, 1971
19th March 1971
• On the 18th day of the non-cooperation movement, in the outskirts of Dhaka, Joydebpur found itself in a fight between civilians and military where almost 200 people are hurt and eventually “shandho ain” is enacted.
• As the news of the attack spread, Dhaka city exploded in anger and spontaneous processions are led out
• After a break of one the third meeting between Yahya Khan and Sheikh Mujibur Rahman took place again.
• Even on this day, most schools, private offices and institutions remained closed.
March 20, 1971
20th March 1971
• Under intense security of the military the fourth meeting between president Yahya Khan and Sheikh Mujibur Rahman took place. 6 of Bangabandhu’s co-worker are also present in the meeting.
• Freedom crazed Bangladesh had been touched on a raw nerve as procession after procession is taken out chanting slogans headed towards Bangabandhu’s Residence where in short statements he said that no force in the world can stop seven and half crore Bangladeshi from achieving their independent Bangladesh.
March 21, 1971
21st March 1971
• Before meeting Yahya Khan for a fifth time Sheikh Mujibur Rahman met Lawyer A.K. Brohi in a short dialogue. And in his meeting with Yahya Khan, Tajuddin Ahmed is also present.
• On the 20th day of the agitation movement Dhaka City is riding on a wave of freedom crazed processions chanting slogans of “Joy Bangla” and “Joy Bangabandhu”
• In the evening People’s Party Chairman Z. A. Bhutto arrived in Dhaka and in preparation for his arrival excess military is disposed in the airport.
• Z. A. Bhutto meets the President in his resident behind
March 23, 1971
23rd March 1971
• With the member’s of Awami League Shwecchashebok Bahini, early in the morning the Bangladesh flag is hoisted in Bangabandhu’s Residence and “Joy Bangla, Banglar Joy” is sung.
• On “Pakistan Day” apart from President’s residence and Army offices, nowhere else are the Pakistani flag hoisted. Bangabandhu urged for this day to be celebrated as ‘Historic Lahore Resolution Day’ and also announced a government holiday on that day.
• On the 22nd day of the non-cooperation movement, freedom crazed Bangladeshi’s marched from morning to night with the Bangladeshi Flag in hand towards Bangabandhu’s Residence.
• On this day, Independent Bangladesh’s Central Student Agitation committee and Central Workers Agitation committee observed “Protirod Dibosh”.
March 24, 1971
24th March 1971
• From Morning to night without any rest, Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman continues to give speeches for the many processions that arrived at his doorstep. He said we don’t want any more discussions now we want an announcement. He said if no solution is reached within tomorrow, Bangladeshis will find a solution for themselves, no conspiracy can now hold us back, and we are united. If any decision is forced on us, that will not be accepted in any way.
• From 23rd March to 24th March morning, the Pakistan Army authorities surround and hold the Sayedpur Army cantonment along with the surrounding areas of Botlagari,  Golahaat and Kundul Gram and rage rampant in those villages killing almost a 100 people and leaving a 1000 injured. In the city, curfew is enacted and along with non-Bengalis the Army causes arson and carnage in the houses of Bangladeshis.
• A few civilians and Military authorities get locked in a battle in front of Rangpur Medical College and centering which the army runs carnage in the surrounding areas where reckless shots are fired killing 50 unarmed civilians
• In the evening a meeting is arranged between Awami league and the government side in the President residence where Awami League leaders Syed Nazrul Islam, Tajuddin Ahmed and Kamal Hossain are present. After the two hour meeting Tajuddin Ahmed told the waiting journalists that Awami League has given their part of the speech. And they have said that Awami league is not willing to continue the speech for an indefinite period.
• People’s Party chief went and joined the meeting at the President’s Residence in the afternoon and later came out and told the journalists that the present situation here is very dire and extremely unfortunate. He also said that he has immense love for the people of Bangladesh but he has a national responsibility in the face of such a grave crisis where he is ready to give up his life to ensure that Pakistan remains united.
25th March 1971
• This is a black night in the history of Bangladesh. In a preplanned move, Pakistani occupation forces run rampant as the clock struck one and this night became part of one the worst genocides to have ever taken place in the heart of any country. On this night Bangladesh bled as the military authorities looted and murdered innocent Bangladeshis fighting for their freedom. In Military terms this is known as “Operation Searchlight”
• That evening Yahya Khan quietly exits from Bangladesh without any word only remnants of his order to murder and massacre innocent Bangladeshi’s hanging in the heavy air of Dhaka.
• At 1:00am in the night, troops from 22nd Beluch Regiment head out as ordered and attack Pilkhana EPR. Even though there are 18 Bangladeshi Guards they are powerless in the face of such atrocities.
• As soon as Pilkhana is attacked entire Dhaka, including Rajarbagh, Dhaka university and Shankhari Bajaar face severe attacks and throughout the night this massacre continues where many women are raped, houses burned and looted and countless killed.
• Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, in the break of March 26, announces the Independence of Bangladesh and asks everyone to join the fight for freedom.
• Earlier a meeting is arranged between Yahya and Bhutto at the Presidential Residence along with the advisors of Pakistan People’s Party.
• The news of Yahya leaving Bangladesh reached Bangabandhu almost immediately and he said in the presence of many Awami league leaders that they tried their best to reach a peaceful solution yet are unsuccessful as President Yahya only pressed for the adoption of a military regime.
• At 1:00am in the night one group of Pakistani occupation forces comes across a barricade in Shukrabaad near the residence of Bangabandhu. Breaking the barriers, they reached his house and kept firing shots until eventually at 1:30am they captured him and took him to the Sher-e-Bangla Military office premises. Eventually he is handed over to the cantonment.

26th March 1971
• On March 26, the atrocities run by Pakistani occupation forces on unarmed Bangladeshis leads to the beginning of the freedom fight as Sheikh Mujibur Rahman announces that very day that they attacked innocent people in Dhaka, fights are going on in every road in Chittagong and he says that there is no way but to fight the enemy and throw them out of our country. He urges for international help.
• On the day that the independence of Bangladesh is announced not only in the capital Dhaka but throughout the country the red and green flag of a free Bangladesh is hoisted.
• In the morning in Dhaka Cantonment, the arrested Sheikh Mujibur Rahman is taken to the Flag staff house. Here he is kept the whole day and later in the evening taken to an unknown location
• The military authorities call for curfew after curfew and with machineguns and arms attacked houses, buildings, slums and Awami league leader’s houses. Area after area is lit on fire as arson, looting and murder continue in the hands of the Pakistan Military.
• With the help non-Bengali’s Pakistan military attack old Dhaka and continue their carnage till late into the night, along with that many news agencies such as Ittefaq, The People and Bangla’r Bani offices are damaged by the fire from tankers.
27th March 1971
• In the morning temporarily curfew is removed and the foreign journalists staying in Hotel intercontinental are removed and escorted to the Airport amidst tight security. In a special aircraft they are forced to abort Dhaka. However sneaking from the view of the military two of them manage to escape and stay back in Dhaka amidst grave danger. They are Simon Dring of the Daily Telegraph and AFP photographer Michelle.
• Throughout the city the remnants of many lifeless bodies are seen scattered- a stark reminder of the atrocities by the Pakistan military.
• On the other side of Buriganga in Jinjira the Freedom fighters continued to gather together.
• As soon as the curfew is lifted, groups of people leave Dhaka city for a safer places.
• Resistance begins in Chittagong city and in different areas. Intense fighting breaks out among the Pakistan military and the freedom fighters.
28th March 1971
• The curfew is loosened in Dhaka City from 7:00am in the morning to 4:00pm in the evening.
• Later that night help is sought from the people of the world via the “Shwadhin Bangla Biplobi Betar Kendro” from Chittagong
• Pakistan Navy fired shots in the port city in various areas. And in the port area, the Pakistan Navy disarms the Bangladeshi Navy men and murdered them
• On the other side of Dhaka, from Jinjira, freedom fighters and Pak Bahini exchange gunfire. Almost 3/4th of the country remains in control of the freedom
29th March 1971
• At 4:00pm, the 2nd East Bengal Battalion completes their rally work in Mymensingh. They gather together and pledge their support for Bangladesh and this congregation is convened by Major KM Saifullah.
• Pakistan Bahini congregates outside the Chittagong cantonment near the Medical college and surrounding areas and launches their first attack in the evening in which they lost to the Mukti Bahini.
• In the evening, Bangabandhu is flown via helicopter from the cantonment to the Tejgaon Airport. After which via a special aircraft of the military he is flown to Karachi.
• At night, about 100 Bangladeshi EPR men are separated from the President House by the Pakistan Military and barbarically murdered near the Ramna Kalibaari.
30th March 1971
• Barbaric Pak Bahini shot recklessly around the surrounding areas of the Rangpur Cantonment. In this incident many innocent people are killed. Apart from this rows of villages and houses are lighted on fire and many are tortured at the hands of the Pak Bahini.
• On behalf of Sheikh Mujibur Rahman, Chittagong’s (Shadhin Bangla Biplobi Betaar Kendro) urges the world and all democratic governments to come forward and help the Bangladeshis.
• At night the Pakistan Air Force bombed the Kalurghat Radio Station
• Chittagong city is encircled by the Pakistani occupation forces from all sides and bombed.
• In the evening under the command of Matin Patwari freedom fighters took hold of the Kushtia Police line.
• Major Zia explains and hands over command of Kalurghat to Captain Ali
31st March 1971
• More than one lakh refugees in search of a safe abode leave behind beloved Motherland and cross the border into India.
• In the Chittagong Hill tracts, a one-Kilowatt range/power independent Bangla radio station is established.
• The Indian Prime Minister Indira Gandhi pledges her and her people’s support for the fight for democracy and freedom of Bangladesh in the parliament.
• Apart from the cantonment the entire Jessore city is freed.  And so is Dinajpur.
1st April 1971
• In the Chittagong Medical college and on top of the hills, clashes between the Pakistan Army and the freedom Fighters takes a dangerous form. Under intense attack the freedom fighters have to retreat and return to Kalurghat at night
• Throngs of people leave their homeland and cross the borders into the refugee camps of India owing to the barbaric torture of the Pakistani Forces.
• Senator Edward Kennedy tells the senate about the breaking the agreement regarding  the Pakistani Military help agreement
• Bogra is freed from the enemy, Kushtia as well is freed from the Pak forces
2nd April 1971

• On the other side of the Buriganga River Pakistani forces attack innocent refugees. In the span of a few hours Pakistani armed forces kill hundreds and burned down villages after villages. Keraniganj is looted and many women are raped. This heinous incident is known as the Keraniganj Genocide in the history of the Liberation war.
• The curfew of 6am to 6pm in Dhaka is loosened.
• Retired Major M.T Hossain goes from Dhaka to Thakurgaon to join Liberation forces.
• Pakistani forces shell the freedom fighters on the Teesta bridge. Not facing any resistance from the Liberation forces the Pak forces advance. Once they are close the freedom fighters, they counter attack with grenades killing several in the process.
3rd April 1971

• In Sylhet’s Shamshernagar the Liberation forces fend off attacks from the Pakistan forces bravely.
• Along with Machine guns the Pak armies also attack with bombs in Chuadanga injuring a lot of people.
• In Bangladesh Red cross society is formed by Awami League leader Syed Nazrul Islam, and MP Dr. Ahsabul Haque Joardar is elected as the chairman
• Areas where the Liberation forces are stationed in Jessore face severe shelling from the Pak forces. In the north of the city the Pak forces station themselves in the areas dominated by the non-bengalis.
• EPR guerillas in Dhaka attack the Pak forces in
4th April 1971

• In Dhaka led by the chief of Pakistan Democratic Party Nazrul Amin, a representative team of 12 members meet the head of the West Pakistan armed forces general Tikka Khan. They pledge their full support to Tikka Khan and propose the formation of a citizen committee under the caretaker of the military.
• Pakistan forces attack Feni city by air, Many innocent civilians are killed and many more houses are burned to ashes and completely destroyed.
• The Bengal Regiment EPR,ANSAR and Mujahid together form a joint force
6th April 1971

• In Chittagong Dohajaari Mukti Bahini and Pakistan Military get involved in a serious battle. Unable to stay put in the fight Pakistan military retreat.
• In Sylhet Karimganj border Mukti Bahini and Pakistan Military get engaged in a fierce battle and the Pakistan Military have to retreat, admits the Military force in Dhaka later
• Soviet President Podgorny requests for the bloodshed to stop and sends a letter saying so to the Pakistan President Yahya Khan whilst President Yahya in reply says “no one should interfere in the internal matter of Pakistan.”
• Pakistan Military drop bombs in Chandpur PuranBajaar from planes. This is their first air attack.
• Ghulam Azam, Hamidul Haq Chowdhury and a few other people meet the infamous “Baluchistan Koshai” Tikka Khan.
• Barbaric Pakistani’s run havoc in Shahartoli of Sylhet where 25 innocent Bangladeshi’s lose their lives.
7th April 1971

• Two Pakistani Diplomats Shahabuddin Ahmed and Amjadul Haq, working in the Pakistani Embassy of New Delhi abort all relations with Pakistan and pledge their support for Bangladesh. They are the first diplomats to support Bangladesh.
• Muslim League Leader MA Sabur meet Marshall law administrator Lieutenant general Tikka Khan and assures him of further military assistance
• The provincial Amir of Jaamat-e-Islami  Golam Azam, along with Golam Sarwar and Maulana Nurujjaman in a joint statement said that we believe that as patriots of East Pakistan, anywhere that a freedom fighter is spotted, then and there they will be attacked. Also in eradicating these freedom fighters, utmost support will be provided to the military.
• Islamic Republic Party’s president Maulana Nurujjaman Khan says in a statement in Dhaka “the Pakistan Military authorities are deployed in daunting and eradicating the freedom fighters and patriotic citizens will support the military   in protecting the interest of the nation”
• The entire Sylhet region comes under the control of the Mukti Bahini  and the Pakistan military gathers around near the airport of Sylhet and Lakkatura Tea estate.
• Nilphamari  goes under the hold of the Pakistan army and the freedom fighters take defence in Khanshama.

8th April 1971

• In Chandpur, various political leaders get together in Hajiganj Post Bungalow and discuss about the resistance of Pakistan army. In this meeting Dr. Abdus Sattar, Dr Abu Yousuf, Habibur Rahman, Saidur Rahman, BM Kalimullah, and Ali Ahmed Pramukh are present.
• Noakhali Deputy Commissioner Manjurul Karim talk about the situation with “subedar Major Lutfur Rahman”  and talk about plans for resisting Noakhali.
• Brigadier Chittranjan Datt and Captain Aziz hatch up a plan to free Sylhet.
• on the Narail-Jessore Road, in an area called Daitala, the Pakistan army attack the freedom fighters. Here in a 5 hour long battle the Pakistan Army use mortar and artillery whilst the freedom fighters  retreat due to unavailability of firearms and take shelter in Narail.
• The freedom fighters in Bhushirbandar face attacks by the Pakistan Military. In this conflict the freedom fighters retreat and take defence in Dosh Mile.
• Indian BSF official Lieutenant colonel Limaiya and Major Chittranjan Datt and Captain Aziz meet and discuss the support of military authorities.
• Pakistan army move from the Shalutikor Airport and from Lakkatura Area and attack freedom fighters located in different areas.
• In Panchdona, freedom fighters are attacked by the Pakistan army and they fight back with oomph which killed 155 Pakistan Army men and after incurring severe losses they retreat.
• Near Kalihaati Bridge Freedom Fighters and Pakistan army get engaged in a tumultuous conflict and Pakistan Army suffer major damages.
• 9 refugee camps are opened in Tripura, India for the Bangladeshi Refugees.

9th April 1971

• Lieutenant General Tikka Khan takes oath as the governor of East Pakistan. The program is convened by the Judge of Dhaka High court BA Siddique.
• Khaja Khairuddin convenes the meeting in which a 140 member “shanti Committee” is formed. In the activities to disrupt the freedom fight this is a major move.
• The military authority present in Dhaka gives orders for radio transmission from the Indian Deputy High Commission.
• Pakistan Military and Freedom Fighters get engaged in a conflict in Modhupur of Mymensingh.
• Air attacks are administered in Narail Mohkuma and from Jugpoth Doitala, the Pakistan Miltary capture Narail.

10th April 1971

• Joseph Cisco   of the United States Foreign ministry says that the arms provided to Pakistan according to the agreement can only be used for internal protection
• Sher-e-Bangla’s son and national committee member A.K. Fazlul Haq says in a statement in Dhaka “ the fact that India is sending Military to East Pakistan can be perceived as nothing but an  ill initiative and they want to part our beloved motherland into two”
• To hamper the progress and to bar the attack of Pakistani Military the freedom fighters, with the help, of bombs completely damage the Daulatganj Bridge. This severs all ties between Lakhsham and Noakhali.
• In Sylhet, the Pakistan Military attacks the zones where the freedom fighters are stationed. in the face of the attack, the freedom fighters retreat and take position on the southern part of the Surma River.

11th April 1971

• Tajjuddin Ahmed gives a speech intended for the people of the nation. Here he says that the entire nation is involved in the fight for freedom today. We have to win in this war and win we will. He also says, the independent Bangladesh’s main goal is to free the nation from the grips of the enemy. In this war, there is no class, no religion, no status, here we have only one identity and that is we are Bangladeshis. And our enemy is killing us based on this identity. He adds that under Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman’s leadership this independent government is fighting to eradicate the reign of torture, inequality, and disorder to give way to a government of peace, equality and a socialist framework for a the society.
• China’s Prime Minister Cho N. Lai sends a letter to President Yahya Khan saying that what is happening in Pakistan now is their internal matter. He assures that if India attacks, then China will provide utmost support to the Pakistan Government in protecting their sovereignty.
• With the help of local agents Pakistanis first enter Gopalganj. Later they attack Monikhar where the freedom fighters are stationed. In the face of modern arms and attack of the Pakistan military the freedom fighters get scattered and quit the Monikhaar village. The village is left burned.
12th April 1971

• Via the Shwadhin Bangla Radio station, on this night the name of the government at war is announced. Sheikh Mujibur Rahman is declared as the President and the supreme leader behind the freedom fight. Syed Nazrul Islam is named the Vice-President and Tajuddin Ahmed named as the Prime minister responsible for convening the freedom fight. Khandaker Mushtaq Ahmed was named the foreign minister and other members of the ministry were AHM Kamrujjaman and Captain Monsur Ali.
• With the aid of tanks and modern arms Pakistan Army attack the Freedom Fighters in Habra Ghaati leaving them scattered.
• Four companies of Freedom Fighters and one support Platoon get together near the Lalmonirhaat airport and charge a major battle against the Pakistan Army stationed there. Subedar Aarob Ali is in command of the freedom fighters. Although some Pakistani army men are killed, in the face of their massive attack, the freedom fighters have to succumb and return to their stations.

13th April 1971

• In the  US Senate, Senator Fred Harris says in a statement “ I am horror-struck by the bloodshed of innocent civilians in East-Pakistan, the propaganda that is being relayed from that area makes it very hard for the outer world to get a real image of what is happening in East Pakistan. until the news of innocent civilian murders is proven wrong, I urge all monetary aid be suspended to Pakistan”
• Pakistan Army and Mukti Bahini get involved in a major conflict in Goalend Ghat. under the command of Subedar Shamsul Haq,  one vessel of the Pakistanis is drowned. In this conflict, the Pakistanis escape to protect themselves.
• Innumerable tea-estate labourers are shot to death in Lakkatura Sylhet by the Pakistan Military.
• Narail city goes under the control of the Pakistanis, so does Bogra
• Pakistan Army attacks freedom fighters in Badarganj with the use of tanks.  This forces the freedom fighters to retreat.

14th April 1971

• On the occasion of the Bengali New Year Tajuddin Ahmed sends an open invitation to all the news agencies in the world along with all political and diplomatic observers. And he also urges all agencies such as Red cross and so on to directly contact Bangladesh.
• Convened by Moulavi Farid Ahmed, the Shanti Bahini arranges a steering committee and also pledges that the freedom fight will be completely destroyed and this is nothing but a ploy.
• Throughout the day, Pakistan Military conducts air attacks in Brahmanbaria. Along side they also conduct air attacks in Ashuganj. Many innocent Bangladeshis and freedom fighters die in this attack.

15th April 1971

• Bhairab collapses under the attack of the Pakistan Military. Carnage and bloodshed mark the town and Pakistan military runs amok on the streets burning houses and killing innocent civilians.
• In the Nagarbari Ghat, the Pakistan Military fired mortars on the ferry carrying freedom fighters. They have to retreat 10 km and the freedom fighters take shelter in Daab bari of Bogra where they prepare a three pronged attack on the military.
• Pakistan Military runs major air attacks in Chuadanga and in this attack many innocent people lose their lives.
• On the East side of the Shahbajpur, Titas River, freedom fighters build up resistance.
• Jhenaidah collapses in the hands of the Pakistan Military.

16th April 1971

• In the Khagra rest house of Rangamati, a platoon of pakistani army along with an officer are attacked by freedom fighters headed by Captain Kader. In this attack 20 Pakistani army along with the officer are killed.
• In Comilla Gangasagar Bridge, the Pakistan Army in trying to resist the freedom fighters fire many shots.
• Dinjapur City goes completely under the control of Pakistan Military
17th April 1971

• Amidst loud cheers and huge gathering of people, in Kushtia, Meherpur, Mohkumar Bhaberpara village’s Mujib Nagar, Awami League Chief whip Professor Yousuf Ali read out the independence Warrant and through this the establishment of People’s Republic of Bangladesh is announced and the first People’s Republic of Bangladesh Government is established. By this official announcement the nation of Bangladesh through the announcement of Sheikh Mujibur Rahman on 26th March takes on a formal/ constitutional form. Almost 50 local and international journalists are present.
• At ‘Mujib Nagar’ in Bhaberpara village in Meherpur sub-division, official announcement of ‘Peoples’ Republic of Bangladesh’ is made and ‘Government of Peoples’ Republic of Bangladesh’ is formed amid loud cheer and applause through the recitation of the Declaration of Independence by Awami League Chief Whip Professor Yusuf Ali. Through this official announcement, Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman’s declaration independence on March 26 take on an institutional form. 50 local and foreign journalists ar e present during the event.
• In the newly formed Ministry, Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman becomes the President and Chief of Armed Forces and War of Independence, Syed Nazrul Islam becomes the Vice President and the Acting President, Tazuddin Ahmed the first  Prime Minister, Khondokar Mostaq Ahmad becomes Minister of Law and Foreign Affairs, Monsur Ali, Minister of Finance and Trade, A.H.M Kamruzzaman ,State Minister and Minister of Communication and Aid, and Colonel Osmani becomes the Chief of Bangladesh Liberation Forces named Muktibahini. This announcement is made at the event held at Mujib Nagar.
• At Burighat, in the midlands of Rangamati, a Pakistan Army launch with 20 soldiers on it come close to Muktibahini Defence Base while identifying the spot, and begins gunfire. Freedom fighters led by Captain Khalekuzzaman counter attacks in which the launch is destroyed with most of the soldiers on it.
• An artillery battalion of Pakistan Army attacked on freedom fighters based at Shahbazpur near the Titas Bridge area with their gunboats. After a whole night of battle 5 freedom fighters became martyrs, and freedom fighters retreated to Madhabpur and formed new base.

18th April 1971

• Posted in Kolkata, the Deputy High Commissioner of Pakistan Mr. M. V. Hossain Ali pledges his support again for Bangladesh and hoists the red and green flag of Bangladesh amidst loud cheers.
• In London, Lord Brockway expresses his deep regret against the action of the Pakistan Military in East Pakistan  saying “This is akin to the atrocities raged by Hitler in his time” in this program, he urges that Bangladesh be recognised as an independent country
• An aid association named “Justice for East Bengal” is formed in London. M.P. Bruce Douglasman who is the president of the association leaves London to pay a visit to the refugees.

19th April, 1971

• Convention Muslim League President Fazlul Kader Chowdhury and General Secretary Malik Mohammed Kashem meet General Tikka Khan in the Governor House. They assure maximum support to the governor from all parties.
• Pakistan People’s Party chairman Z. A. Bhutto gives statements in a rally saying that all who are fighting for the separation should be reported to the government.
• 18 point order warrant is given out by Mujibnagar Bangladesh. And Prime minister Tajuddin Ahmed requests everyone to follow through with the instructions of the government. The orders included that no Bangladeshi is to associate with the enemy side. All officials are to follow orders of the Bangladesh government.
20th April 1971

• Pakistani Military attacks Mukti Bahini quarters in Hili. In the counter attack by Mukti Bahini Pakistan Militaryare forced to retreat. In this attack, 6 brave freedom fighters are martyred.
• Governor and Marshall Law administrator Lieutenant General Tikka Khan, orders Awami league leader Tajuddin Ahmed, S. Nazrul Islam, Abdul Mannan, Tofayel Ahmed and the People’s Editor Abidur Rahman to be present at the Military court at 8 am in 26th April.

21st April 1971

• The temporary president of Bangladesh Government Syed Nazrul Islam appoints Justice Abu Saeed Chowdhury as the special representative of the Bangladesh Diplomatic mission in foreign countries
• One company of army men of the Bengal Regiment under the command of Major Imamuzzaman quit Laksham and moves to Mia Bazaar in Comilla and take defence there
• 20 freedom fighters attacked one group of Pakistan military in Jessore, Nabharon ghaati. This resulted in the death of 10 Pakistan military and left 15 injured.
22nd April

• Freedom Fighters ambush Pakistani militaries in Gangasagar of Comilla. without suffering any loss themselves, freedom fighters are able to kill 6 pakistani military men. From this battle, the freedom fighters aree able to recover a few thousand ammunitions and quite a few arms
• Disobeying international law, Pakistan Military attacked freedom fighters in Hili by crossing the border.
• Bogra collapses in the hands of the Pakistan Military
• Feni is attacked by the Pakistan Military from 3 sides, Comilla, Chittagong and Noakhali. In this battle however they are unable to capture Feni.
23rd April, 1971

• Prime Minister Tajuddin Ahmed welcomes British M.P. Douglas Mann in Benapole at the freedom fighter’s quarters.  Here they talk for more than an hour.
• Pakistani Military march towards Rangamati with almost 200 army men, but they are intercepted on the way by Captain Qader and Lieutenant Mahfuz.
• As Feni collapsed in the hands of the Pakistanis, the freedom fighters take refuge in various areas of India.

24th April 1971

• In Hili of India, stationed Freedom Fighters are attacked by Pakistan Military. And in that attack they are dispersed and have to retreat.
• Pakistan Military enters Madaripur via the road. Without any delay, with the assistance of local agents the Pakistan Military attack MP Asmat Ali Khan’s residence along with (Fonibhushon) Mozumder’s house, lighting many houses on fire and looting shops.
• In West Bengal’s Balurghat,  Bangalipur, Tiorpara and Modhupur Camps are stationed where freedom fighters receive training. In camps like these Freedom fighters are trained for a duration of one month and 15 days.
• A “flag meeting” is arranged between India and Pakistan. Here the Pakistan repeatedly pressurize the EPR to hand over power. But Indian BSF’s Major Bhedi, Captain Ghosh deny knowing anything about the EPR.
• One group of Pakistan Military headed towards via Naniabazaar, crossing Chingri Nodi to reach Mohalchori.

25th April 1971

• 10 USA senators in a joint statement say that as long as Pakistan recognizes and sends aid to the suffering Bangladeshis, till then no country along with United nations should not send aid or help the Pakistani.
• Four Miles away from Barisal City, Pakistan Army station themselves in Lakutia Jamindar Bari.
• A few miles away from Barisal city, in a place named Junahar, Pakistan Military and Freedom Fighters get engaged in a fierce battle.
26th April 1971

• In a sudden attack on a freedom Fighter camp in Sirajganj, Kashinathpur by the Pakistan Military results in the death of 30-40 freedom fighters.
• Unable to enter Sirajganj directly the Pakistan military start air attacks on Sirajganj.
• After capturing Barisal, Pakistan army start a procedural looting, murdering innocent civilians, raping women and burning houses. Unable to keep up the resistance the Freedom Fighters have to quit the city and take station in nearby villages.
27th April 1971

• Liberation forces and Pakistan military get engaged in a fierce battle in Miabazar, Pakistani Forces suffer many casualties in this conflict.
• Finding an opportune moment after the air attack Pakistani forces enter Shirajganj
• A huge group of Pakistani forces attack the headquarters of the Liberation Forces in Mohachori. In this conflict the liberation forces have to retreat and later take defence in Khagrachhari. Captain Qader succumbs to his injuries, suffered during the conflict with the enemy.
• Breaking the local people’s resistance the Pak forces enter Chakaria and subsequently attack the Hindupara in Chiringa. Barbaric Pak forces burned down Awami League leader S.K. Shamsul Huda, Delwar Hossain, Sharda Babu, Nurul Kabir and many other leader’s houses. In this attack Sharda Babu’s son and freedom fighter Habildar Abul’s brother are martyred.
28th April 1971

• In a radio broadcast on the Shadhin Bangla, Tajuddin Ahmed requests the neighboring country to recognize independent Bangladesh and also to help with arms support unconditionally.
• Soviet Prime Minister Alexy Kessigin in a message to Yahya Khan urges him to immediately stop the bloodshed and Mass murder in country’s East
• Early Morning in Dhaka city saw an attack between the Mukti Bahini on security rounds and Pakistani army in Mirpur and Mohammadpur. In the following gun fight 7 guerilla are martyred.

29th April 1971

• Liberation Forces and Pak Forces get engaged in a fierce battle in Borokamota of Comilla, on two occasions. Both times the Pak forces are defeated. Almost 5-6 thousand villagers also participate in this battle and this conflict is recognised as Borokamota battle in the history of the liberation war.
• Pak forces headed towards Koremhat-Hiyakool of Ramgor. One group of pakistani forces attack the liberation forces stationed near Shubpur bridge whilst another group of Pak military forces headed towards Guimara. In plans of resisting the pak forces Major Zia ordered Mir Shaukat to come over to Ramgor.
• In the northern part of the country, near the Hili border, Pak forces and freedom fighters exchange gun shots throughout the day
30th April 1971

• Close to Omborkhana stationed liberation forces in Maguramari are attacked by Pak forces. In this battle 2 freedom fighters are martyred, whilst 2 are severely injured.
• In Chikonchora of Chittagong, stationed liberation forces are attacked by Pakistani forces. In this conflict freedom fighters have to retreat and take station in Bagaanbari.
• Nepal Prime Minister expresses his sadness and shows his support for the innocent Bangladeshis. He expressed hope that Bangladesh would come out winners in the Liberation war.
May 1, 1971

• Nayek Siraj makes an ambush attack with a platoon of soldiers near Bogadiya Bridge in Comilla. When a Pakistan army jeep and three trucks come closer, the freedom fighters attack. 15-20 soldiers of Pakistan army killed and one of the lorries destroyed. Nayek Siraj lead the battle with infinite courage and valour. This battle is known as the ‘Battle of Bogadiya’ in the history of Liberation War of Bangladesh.
• Pakistan forces attack Borokamta in Comilla again to avenge their defeat on April 30. Pakistan army enters the village and burn down the houses.
• While visiting the refugee camp in Agartala, Indian minister of industry Mainul Haque Chowdhury says that Bangladesh is a reality. There is no doubt regarding its future. Bengalis will definitely win at the end of the day. The world must recognise it.
May 2, 1971

• Pakistan army makes two-fold attack on the headquarters of the freedom fighters of Chittagong in Ramgarh using cannons and mortars. After whole day of battle, the freedom fighters cross the border to take position in the Indian sub-room. Pakistan army enter in Ramgarh at night and commit atrocities including murder, rape and burning down houses.

• Freedom fighters make fierce attack on Pakistan forces in Kishoreganj. On the other hand, Pakistan forces make long distance attack from 10 miles away of Kishoreganj named Birol. Pakistan forces bomb a refugee camp in Radhikapur, a place in the Indian border. One person is killed in it along with many injured.
• In Pirojpur, Siraj Sikder form a committee to conduct guerilla styled wars. The committee elects Jahanara Begum (wife of Siraj Sikder) as the chairperson, Shahnewaz as the commander in chief, Mujib in the public relations and Mahtab as a member. The camp area is divided into several sectors.
• The number of Bangladeshi refugees in various states of India rise to 8 lakh 67 thousands 428.

May 3, 1971

• Pakistan army attack base of freedom fighters in Kirtipasha, Jahalakathi. Following the attack, Siraj Sikder divides his team and forms separate camps in Madra, Shotodol Kathi, Ata, and Vimruli villages.
• In the US Senate, Senator Edward Kennedy urges United Nations to take necessary steps regarding Bangladesh crisis. He also urges the US government to respond to the Indian government’s appeal for aid for the refugees from Bangladesh.

May 4- 1971

• An US committee for foreign relations proposes to stop all sorts of military assistance to Pakistan until the war comes to an end. The proposal states: let us stop all sorts of Military assistance to Pakistan until war in East Pakistan comes to an end and meanwhile let relief aid be sent to East Pakistan.
• Pakistan forces led by Colonel Atik and Captain Ezaz enter Pirojpur from Barisal via Hularhat and attacked Pirojpur from three directions. The barbaric army spreads panic by making assaults and burning houses on both sides of Kali Bari road in Machimpur, Palpara, Shikarpur, Rajarhat, Kukarpara, Dumurtola, Kodomtola, Namazpur, Alamkathi, Dhuligati, Ranipur, Parerhat, and Chingrakhali areas.
• Pakistan forces attack on Pushainagar in Sylhet and 15 innocent villagers are killed in their barbaric assault.
• A flag meeting is held between Indian BSF and Pakistan army. Pakistan forces inform that 50 Pakistan soldiers shot dead by freedom fighter EPR forces. They appeal to BSF officials to hand them over the Bengali members of EPR. But BSF inform that there is no EPR member in India.

May 5, 1971

• In order to free Barisal from the enemy occupation, Major Jalil starts his journey from Shamshernagar in India towards Bangladesh along with MP Nurul Islam Monjur, Lt. Naser, 40 soldiers and ample weapons and ammunitions on 2 launches. As their launches reach near Gabura Char on the bank of Kopotaksha River, Pakistan soldiers attack them on gun-boats. 26 freedom fighters including MP Mohiuddin and Advocate Sarder Jalal arrested and the 2 launches destroyed along with the weapons and ammunitions.
• Fierce clash break out between Muktibahini and Pakistan forces at Ramgarh border in Chittagong.
• In Pirojpur, Pakistan forces, with the assistance of their agents, arrest supporters of Liberation War SDO Abdur Razzak, Deputy Magistrate Mizanur Rahman, and SDPO Faizur Rahman.
• 26 innocent civilians killed in barbaric atrocities by Pakistan soldiers at Nania area in Sylhet.
May 6, 1971

• Freedom fighters make an ambush attack on Fenakata Pool area in Comilla on the Choumuhoni-Chandraganj road. When three Pakistan army trucks carrying soldiers reach Fenakata on their way from Chandraganj to Choumuhoni, they engage in a fierce conflict with the Muktibahini. Freedom fighter Ilias embraced martyrdom in this battle. In history of the Liberation War, this event is known as ‘Battle of Fenakata’.
• Two companies of Pakistan army ambush on headquarters of freedom fighters in Telipara. Pakistan forces soon compelled to retreat against fierce counter attack by the freedom fighters. High number of casualties on both sides.
• In Pirojpur, officer in charge of Department of Corruption Abatement Hirendra Mahajan (Chittagong), along with all the arrestees on May 5, namely SDO Abdur Razzak (Comilla), Deputy Magistrate Mizanur Rahman (Jessore), and SDPO Faizur Rahman (Mymensingh, father of writer Humayun Ahmed), brush-fired by Pakistan army on the bank of Baleshwar River. They all embrace martyrdom.
May 7, 1971

• Freedom fighters attack on Pakistan army at Rajapur village between Kosba and Akhaura. Pakistan forces forced to retreat in the severe conflict.
• In Kushtia, severe conflict breaks out between Muktibahini and Pakistan forces. 5 Pakistan soldiers killed in the conflict and a bunker of Pakistan forces is destroyed.
• In a Hindu-dominated village named Panchgaon under Rajnagar Police Station, 15 kilometres North of East to Moulovibazar Sub-division Central, Pakistan forces attack with the help of local agents. The Pakistan army tie up the villagers and drop them in a pond alive. When the helpless people struggled for a little breath, the barbarians brush-fired on them, and the noise broke the silence in the air. 59 innocent people died in this massacre

May 8, 1971

• Colonel MAG Osmani, Captain Nazrul Haque, Captain Nowajesh, Subeder Major Kazimuddin, and several Indian Army personnel meet in an important meeting at Kodomtola in India. Muktibahini Chief Colonel MAG Osmani discussed the plannings of war on behalf of the Bangladesh Government and gave orders based on it.
• The number of Bangladeshi refugees in various Indian states rose to 15, 72,220.

May 9, 1971

• At a place called Bogadiya in Comilla, Muktibahini and Pakistan forces engage in a severe conflict. Attacks and counter attacks continue for 4-5 hours. In the end Pakistan forces escape with casualties.
• Freedom fighters led by Hemayetuddin make a fierce attack on Pakistan soldiers at Kotalipara Police Station in Faridpur. Armed policemen and soldiers at the police station are panicked by the gunfire make by freedom fighters and escaped with their lives from the place.
• Freedom fighters led by Major Nazmul intercept a convoy of Pakistan soldiers and their local agents along with 5 trucks of weapons and ammunitions when it reached Hortokidanga village under Patnitola Police Station. A fierce conflict between the two sides in which the freedom fighters destroyed the convoy completely and took possession of ample weapons and ammunitions.
May 10, 1971

• Freedom fighters led by Captain Nazmul Huda confront Pakistan forces at Chougacha and Masaliya in Jessore. 8 Pakistan soldiers killed in the conflict. On the other hand, two valiant freedom fighters became martyrs.
• In Teliapara, a company of Pakistan soldiers attack the main base of Muktibahini. They incur heavy losses against counter attack by the freedom fighters and are forced to retreat.
May 11, 1971
• A company of Pakistan soldiers are ambushed on their way from Mukudapur in Sylhet to Azampur at a place called Narshinger in Comilla. 63 Pakistan soldiers are killed in this ambush.
• Freedom fighters make fierce attack on Pakistan forces at Mirganj in Comilla. Pakistan soldiers left their weapons and escaped in panic against the firing by the freedom fighters. They had several casualties. Freedom fighters took possession of ample weapons and ammunitions in this conflict.
May 12, 1971

• Pakistan forces attack the base of freedom fighters at Shubhopur Brdge area on the Dhaka- Chittagong Highway with tanks and cannons. After whole day of conflict freedom fighters left the bridge to safe shelter.
• Military Administration in Dhaka announces that Pakistan army have taken control of Sunamganj.

May 13, 1971

• Muktibahini ambush Pakistan soldiers at Shingerbeel area in Comilla. 3 Pakistan soldiers are killed.
• Lt. Morshed along with 12 freedom fighters ambush Pakistan army convoy in Bagsair village on Sylhet-Brahmanbaria Road in Teliapara. A Pakistan army jeep and a truck carrying soldiers are destroyed in the ambush.

May 14, 1971

• Pakistan soldiers engage in a conflict with villagers as they enter Bakai village in Barisal. Villagers kill 4 Pakistan soldiers with spears and cutlasses.
• Lt General AAK Niazi is assigned as Deputy Military Administrator in Bangladesh.

May 15, 1971
• On Sylhet- Brahmanbaria Road, near Nalua tea garden in Sylhet, freedom fighters ambush on a large military convoy of Pakistan army. A Pakistan army truck is destroyed and 27 Pakistan soldiers are killed in the ambush. Freedom fighter Captain Matiur Rahman took his comrades to safe place when Pakistan forces countered.
• A group of freedom fighters led by Lt Morshed ambush Pakistan forces on Sylhet-Dhaka Highway. A Pakistan army jeep and a truck are destroyed in the ambush. Lt Morshed then take his team to shelter when Pakistan forces retaliate.
• ‘Razakar Bahini’ is formed to assist Pakistan army against Muktibahini in the war.
May 16, 1971

• Freedom fighters led by Captain Matin ambush Pakistan soldiers near Teliapara on Chunarughat-Brahmanbaria road. A Pakistan army car is destroyed and many Pakistan soldiers are killed.
• In Rajshahi, commandos of Muktibahini make sudden attack on the Pakistan forces. 25 military cadets of Pakistan army are killed in the assault.
May 17, 1971

• A team of 60 freedom fighters of Muktibahini attack Hajiganj Police Station. 2 policemen and 9 Razakars are killed and lot of weapons and ammunitions are seized in this operation

May 18, 1971

• To free Gopalganj from enemy occupation, freedom fighters take positions with 150 soldiers led by Captain Jalal to the west of the town in Ghorechor village, Commander Omar leading a team to the east of the town in Bed village, and Nowsher Ali leading another team of 30 soldiers to the south of the town in Nabinbag.
• Freedom fighters attack Pakistan army base at Shingerbeel area in Comilla. 6 Pakistan soldiers are killed in this operation.
May 19, 1971

• Freedom fighters undertake an operation in Gopalganj. Severe gunfight take place between freedom fighters and local Pakistan agents. 3 Pakistan agents killed and ample weapons and ammunitions come in possession of freedom fighters.

• A group of freedom fighters led by Lt Morshed ambush two companies of Pakistan army on their way from Brahmanbaria to Sylhet at Teliapara tea garden area on Dhaka-Sylhet highway. A company of Pakistan soldiers are killed and three military cars destroyed. Freedom fighters seize one car and ample weapons and ammunitions.
• Pakistan army carry out a barbaric massacre at Galimpur in Sylhet. 31 innocent villagers are killed in this mass killing by the enemy forces.
May 20, 1971

• Two companies of Pakistan army cross Kushiara River and attack Sutarkandi and Borogram in Sylhet. Freedom fighters led by Captain Rob make counter attack. This conflict became known as ‘Battle of Sutarkandi’. 39 Pakistan soldiers are killed in the battle. On the other hand, two freedom fighters are held by the Pakistan soldiers.
• Pakistan soldiers, on their way back to base after looting Ballavpur Church in Kushtia, are attacked by the freedom fighters. 27 Pakistan soldiers are killed and 5-6 injured in this assault that lasted for almost an hour. Muktibahini seize a jeep and some weapon.
May 21, 1971

• Commandos of Muktibahini ambush Pakistan soldiers at Gouripur, south of Comilla. 9 Pakistan soldiers are killed in the assault.
• At Shaldah River area in Comilla, freedom fighters attack on a railway trolley carrying ration and ammunition for Pakistan soldiers and seize a lot of weapons and ammunitions.

May 22, 1971

• A guerrilla team of Muktibahini led by Mujahid Captain Abdul Haque attack Defense base of Pakistan army at Shaldah River area in Comilla. 4 Pakistan soldiers are killed and 11 injured in this assault.
• The number of Bangladeshi refugees who crossed border to India rise to 33 lakh 71 thousands 9 hundred 31.

May 23, 1971

• A platoon of soldiers from EPR led by Habilder Shamsul Haque attack on Pakistan forces positioned at Latu.
• Pakistan army attack on Romanathpur in Jhalakathi. Threatened of their lives, when civilians took refuge in Sharifbari mosque, Pakistan soldiers dragged 17 men including A. Mannan, A. Salam, A. Hashem Majhi, A. Razzak Khan, and A. Jabbar and shoot them by the pond side. Among them A. Razzak Khan and Nurul Islam Sharif stayed alive being fortunate, and rest of them became martyrs.
May 24, 1971

• With mortars and a platoon soldiers, Captain Oli attacks Chandgazi base of Pakistan army. Pakistan soldiers are forced to leave Chandgazi against severe assault by the Muktibahini.
• Pakistan army attack Sutarkandi base of Muktibahini in Sylhet. Although soldiers in Muktibahini are less in numbers, they damaged the Pakistan forces significantly. But later, Pakistan forces attacked and ammunitions of freedom fighters got exhausted, owing to which they are forced to leave their base. 39 Pakistan soldiers are killed in this conflict and 2 are held by the freedom fighters. On the other hand, 2 freedom fighters are held by the Pakistan army and a few are injured.
May 25, 1971

• A Muktibahini ambush a Pakistan army truck carrying soldiers and a jeep laden with rifles near Batpara Jorkanon at night. 20 Pakistan soldiers are killed and the truck and jeep are completely destroyed in this ambush.
• A small team of Muktibahini ambushes Pakistan army base near Shaldah River. One JCO and 5 soldiers of Pakistan army are killed in this ambush.
• Pakistan forces attack freedom fighters positioned at Ullapara in Sirajganj. Freedom fighters are forced to leave their base against attack by Pakistan forces and took shelter in Solop School.

May 26, 1971

• A team of Muktibahini led by Lt. Imamuzzaman ambushes Pakistan army base at Jagannathdighi in Comilla. Pakistan forces sustain 19 casualties in this assault.
• A patrol team of Muktibahini attacks Pakistan army camp near Ujaniya Bridge on Brahmanbaria-Comilla Road. 13 Pakistan soldiers are killed and 3 injured in this ambush and a span is demolished by explosion.
• Pakistan army commit mass killing at various places in Sylhet. At Burungabazar, 81 innocent people are tortured to death by the barbarians.
May 27, 1971

• A platoon soldiers of Muktibahini ambush Pakistan soldiers on C&B road near Shaldah River in Comilla. 9 Pakistan soldiers are killed and a jeep and a truck are destroyed in this ambush.
• A fierce conflict breaks out between Muktibahini and Pakistan army in Pateshwari. 14 freedom fighters became martyrs in this conflict owing to betrayal of an unknown maulana.

May 28, 1971

• On their way to Jangalbari, a company of Pakistan soldiers are ambushed by valiant freedom fighters on Comilla- Brahmanbaria Road. Pakistan forces sustained a casualty of 25 in this ambush. Pakistan forces retreat and then try to attack the freedom fighters later, but the ambush team of freedom fighters left the place to safe shelter. Later on Pakistan forces burnt down Magura and monohorpur village.
• In the morning freedom fighters attack a Pakistan army Bunker at Rajarmar Dighi to the south of Comilla. 4 Pakistan soldiers are killed and some weapons are seized in this operation.

May 29, 1971

• An ambush team of Muktibahini led by Subeder Abdur Rahman attack a petrol team of Pakistan army at Raghurampur to the north of Comilla. An officer of the patrol party and all 25 soldiers are killed in this assault.
• Soldiers of 4th Bengal ‘C’ Company led by Captain Gaffar attack Pakistan army bases at Shbpur, Bajra and Sagartola to the west of Shaldah River in Comilla. Major Durrani of 31st Baluch Regiment is killed in this assault along with 27 other casualties for Pakistan forces.
• A patrol team of Muktibahini ambush 2 Pakistan army cars at Botpara in Comilla. The cars are destroyed and 4 Pakistan soldiers are killed in the ambush.
• Freedom fighters ambush on Pakistan forces at Shingerbeel area in Comilla. 6 Pakistan soldiers are killed in the ambush.

May 30, 1971

• A guerilla team of Muktibahini led by Iqbal (Bacchu) attack Pakistan forces at their Bibibazar base near Gomti River Dam. 10 Pakistan soldiers are killed in the assault.
• Mortar platoon of Muktibahini ambush Pakistan army base at Shingerbeel in Comilla. 6 Pakistan soldiers are killed and 7 are injured in the ambush.
• A platoon of soldiers from 4th Bengal ‘B’ Company ambush a 27-member Pakistan army team at a place half mile north of Chouddogram on Chouddogram-Myanmar Road. 3 Pakistan soldiers are killed in the assault.

May 31, 1971

• A platoon of soldiers led by Lt. Mahbub ambush Pakistan army base at Jogmohonpur south of Comilla. 12 Pakistan soldiers are held casualties in the assault.
• Freedom fighters ambush Pakistan soldiers at Shingerbeel in Comilla. 13 Pakistan soldiers are killed in the ambush.
• A team of 6 freedom fighters led by Subeder Abdul Haque attacks on Shaldah Railway Station occupied by Pakistan army. 2 OP of Pakistan army are killed in this operation.
June 1, 1971

• Pakistan forces are forced to leave their camp at Mondobhag in Comilla and near Shalda river areas under intense attack by the freedom fighters, and set their new camps near Nayanpur Railway Station. This brought Mondobhag and Shalda river under the Muktibahini’s occupation.
• Activities by Razakar forces in Jhalakathi increase significantly. Police and Razakar forces abduct Jitendralal Dutta, an advocate at Barisal Court, his son Mihirlal Dutta, a journalist, Sudhirlal Dutta, along with many others from the Hindu community from Birat village within Nalchiti Police Station of Jhalakathi, and place them in custody of Pakistan forces.
• Pakistan army attack the hidden camps of the Muktibahini in Mymensingh, which did severe damage to the camps. On the other hand, Pakistan army arrest many young men allegedly involved in the Liberation War, and many innocent civilians are killed in the atrocities.
• In a press release from Dhaka University, it is informed that almost all the teachers have joined including Dr MN Huda, Dr ABM Habibullah, Dr Innas Ali, Dr AK Nojmul Karim, Dr Mafizullah Kabir, Professor Atikuzzaman Khan, Professor Munir Chowdhury, Dr Kazi Deen Muhammad, Dr Muhammad Enamul Haque, Dr Nilima Ibrahim, Dr SM Azizul Haque, Dr Mohammad Moniruzzaman, and Dr AK Rafikullah.

June 3, 1971

• A 300 member force including policemen, stick fighters and Pakistan Army men arrive on boats through Kotalipara and Paisar Haat canal to attack Muktibahini’s Kotalipara camp in Gopalganj. They are caught in an ambush attack by the Hemayet Bahini from both sides of the canal on their way. Pakistan forces are dispersed in the attack, and 24 supporters of the Pakistan forces including stick fighters and policemen are held by the freedom fighters. On the other hand, Ibrahim, a mighty fighter in the Hemayet Bahini, became a martyr.
• Pakistan Army carry out carnage in Jhalakathi. Under orders from CI Shah Alam and OC Sekender, the barbarians shoot 11 men to death including Sudhir Dutta at the mass killing ground in front of the municipality office and threw the corpses in the river.
• Pakistan forces attack the freedom fighters led by Subeder Abdul Matin Patwari under the Lalbazar Sub-sector. Initially the Pakistan army manage to capture the camp in this attack. Later on, the freedom fighters countered from all sides. In this counter attack 28 members of the Pakistan army are killed and 20 are injured. Muktibahini regain control of the camp.
• A 5-member representative team led by Khan Abdul Kaium Khan announces their decision to come to Dhaka with the aim to create anti-liberation war sentiments among the Bengalis and engage the anti-liberation war forces. The other members of this representative team are: Members of the National Assembly Mohammad Yousuf Khatok, Hanif Mohammod Khan, and Rafik Shah, Secretary of Sindh Muslim League A.A. Qureshi, and Joint Secretary of Karachi Muslim League Zia Abbas.
• Martial Law Administrator Lt General Tikka Khan issues Military Order No 149 in Dhaka, which states that the teachers would be fired/sacked/ relieved of their duties and prosecuted in the Martial/Military Court if they do not join their duties within 15 days.

June 4, 1972

• Two platoon fighters from 4th Bengal ‘A’ Company ambush Pakistan forces in their camp located in the Bagra Bazar area in the south of Shalda river. 17 soldiers in the Pakistan Army are killed and 5 injured. The freedom fighters make a second attack three hours later, in which 5 more soldiers in the Pakistan army are killed. The freedom fighters return to their camp unharmed.

• The Muktibahini attack Pakistan forces at Rajpur in Comilla, in which 6 soldiers of Pakistan Army are killed and 3 are injured.

• Pakistan Army, with the aid of the anti-liberation war forces, committ atrocities in Pirojpur and Jhalakathi. In Pirojpur, they abduct Omar Faruk, president of Pirojpur Chatra League, and torture him to death inhumanly.
• In Jhalakathi, Pakistan forces wreak carnage in which many innocent civilians are tortured to death in the Panjiputhipara area.
• Ismat Kitani, special envoy of UN Secretary General U’Thant, meet President Yahya Khan in Rawalpindi.
• The number of Bengalis having taken refuge in India after crossing the Bangladesh borders escalate to 49 lakh 82 thousand 7 hundred and 92.
• In Chittagong, two companies of Pakistan soldiers attack on the Chandgazi camp of the Muktibahini. During the two-hour long conflict 75 Pakistan soldiers are killed and many are injured. The Pakistan forces escaped towards Chagalnaia having incurred severe losses from the counter attack by the Muktibahini.

June 5, 1971

• The Military Administrator in Dhaka amends Martial Law No. 20 and issued No. 23, according to which, ‘Even if it is not mentioned in the terms and conditions of employment for any person employed in any organization, still the Military Authority or the Provincial Government may send him to any part of the country or outside the country. This order is applicable for all since March 25’.
• Subedar Patwari’s team demolishes Jamjama railway bridge near the railway station in Madhu Road to disrupt advance of the Pakistan forces in the Laksham-Chandpur railway route.
• Freedom fighters demolish a bridge near Mahamaya bazaar to disrupt advance of Pakistan forces by road in the Chandpur- Comilla highways.
• Suhrawardi’s daughter Begum Akhter Solaiman gives an interview in the television opposing the Liberation War. She says, ‘Most of the members of Awami League did not know about the party’s separatist plans.’ She also says, ‘We know that the people voted Awami League in the election in order to build up a more powerful and developed Pakistan.’
• Explaining the 6-point demand, she says, ‘6-point demand is merely a claim for self-governance. It has made me believe that majority members of the National Assembly and Provincial Council believe in one and unified Pakistan.

June 7, 1971

• Pakistan forces ambush Muktibahini in Feni, camped at Vandura rail station on the bank of Seloneah River. They kept shooting mortar shells all day and even at night. In spite of this fierce attack, the freedom fighters held their grounds.
• Pakistan forces, on their way to attack Debhata Police Station camp in Satkhira, ambush 45 freedom fighters who took shelter in a house beside a playing field in Sripur. Freedom fighters Samsuddoha Kajol, Nazmul Abedin, Narayan Chandra Dhar, and Abul Kalam became martyrs in this conflict in their sleep. Pakistan forces retaliate against counter attack by the freedom fighters.
• To enhance the strength and aggression of the Military in Dhaka, Military Law No. 150 is issued. The Military sectors are reconstituted based on this law.

June 8, 1971

• Pakistan forces attack on Muktibahini at Vandura railway station on the bank of Seloneah River in Feni. The Muktibahini had to retreat from their position and moved to the main defence base at Belonia. On the other hand the Pakistan forces advanced to Anandapur and took a strong hold there. The freedom fighters incurred severe losses in the conflict.
• Special Military Court-1 in Dhaka being accusations against Awami League leaders Tajuddin Ahmed, Tofayel Ahmed, Syed Nazrul Islam, Abdul Mannan, and editor of the daily Peoples Abidur Rahman on accounts of treason and convicts them in the judgment in their absence. In the verdict they are delivered punishment of 14 years of imprisonment and forfeited 50 percent of their assets.
June 9, 1971

• In the US Senate, Democrat Senator Frank Church and republican Senator William Saxby propose a bilateral amendment to discontinue US financial and military support to Pakistan. The proposal states that: The refugees from East Bengal not only put on a burden on India, but also created a situation of unrest in the region. We think that, US should send International aid there to lessen the sufferings of the refugees and also take initiatives to enable them return to their lands.
• US Government grants an aid of 15 Million Dollars in excess for the refugees from Bangladesh in India.

June 10, 1971

• Freedom fighters led by Captain Mahfuz attack two Pakistan army cars carrying soldiers including one Lt Colonel and two Majors on their way to Ramgarh on the Hiyaku-Ramgarh highway. The Pakistan army men came down from the cars and fired back. After some time of fighting, Captain Mahfuz took his men to the base in safety. On the other hand, the Pakistan forces incurred significant loss as 5 soldiers died including one Lt. Colonel and two Majors, and they turned back to Hiyaku instead of advancing any further.
• Pakistan forces attack on the main base of Muktibahini in Belonia. The valiant fighters of Muktibahini resisted both the attacks with a lot of courage. More than 300 Pakistan Army men died in this battle, and they incurred heavy losses. The remaining Pakistan Army men retreated, being devastated and overthrown, to their base at Anandapur.
• The Muktibahini’s guerilla team ambush Peyara Bagan Camp of the Pakistan forces in Satkhira. Pakistan forces are devastated in this attack.
• As part of a plan, the Muktibahini led by Captain Huda attack Basantapur Base of the Pakistan forces in the Satkhira border area. They had to retreat as the Pakistan forces made counter attack with full might.
• In Pirojpur, Pakistan forces kill 10 students held from Mathbaria on the bank of Baleshwar River. Among them are Ganapati Halder, an undergraduate student in Chemistry Department in Dhaka University who stood first in SSC and HSC examination from Jessore Board, Anwarul Kadir, VP at Mathbaria College, Ziauzzaman, Mostofa, Sudhir, Malek, Amal, Biren, and Shamsul Haque.

June 11, 1971

• In Brahmanbaria, one platoon soldier of 4th Bengal ‘D’ Company ambush Pakistan forces at Charnol in the north of Kosba. 12 Pakistan Army men died in the ambush. The devastated Pakistan forces escaped towards Yaqubpur. In Yaqubpur, another group of freedom fighters ambush the fleeing Pakistan soldiers. 8 Pakistan soldiers are killed in this ambush and 13 are injured. A lot of weapons and ammunitions came in custody of the Muktibahini after these two ambushes.
• Guerilla team of the Muktibahini attack Pakistan forces at various places in Comilla. Pakistan forces incur significant loss from these attacks.
• In Laksham, freedom fighters ambush a Pakistan army car. 5 Pakistan soldiers are killed in the ambush.

June 12, 1971

• Justice Abu Sayed Chowdhury, vice chancellor of Dhaka University, says in a press conference at London that, ‘Those who are murdering our women and children, do you think we can ever forgive them or forget their heinous crimes? Of course not. After this genocide there is no way these two parts of the nation can co-exist anymore.’
• He also says, ‘People of East Bengal can now only accept one possible solution, and that is freeing Sheikh Mujibur Rahman and other elected representatives by the West Pakistan authorities and allowing them to form a governing policy to establish an independent and sovereign Bangladesh.’ ‘Bangladesh will thrive as an independent nation undoubtedly and will become a democratic country, not one based on single religious beliefs like Pakistan. I believe, religion will be observed as a personal point of view and the government will be unbiased about religion’, he added.
• A fight takes place between the Kaderia Bahini and the Pakistan forces in Balla area of Kalihati in Tangail. 4 Pakistan soldiers are killed in the conflict. Pakistan forces incurred heavy losses and retreated.
• A severe conflict takes place between the Muktibahini and the Pakistan forces in a place called Enayetpur in Sylhet. Pakistan forces incurred heavy losses in the conflict.
• The number of refugees from Bangladesh who crossed border to India rise to 57 lakh 67 thousands 172.

June 13, 1971

• Muktibahini attack the base of the Pakistan forces near Sherpur in Moulavibazar. 50 Pakistan soldiers are killed in the operation by the freedom fighters. The freedom fighters got hold of a lot of weapons and ammunitions.
• In Syedpur, Pakistan soldiers pick up Hindu and Marwari families in a train telling them that they would be sent to India from their refugee camp. When the train reached the north end of the railway factory in Syedpur, the soldiers stopped the train, shut down the door and windows, and shot the men down 2/3 at a time. 338 people are killed in this atrocity. Only 65 people managed to escape.

June 14, 1971

• A group of Pakistan soldiers are ambushed by the freedom fighters when they were advancing towards Chouddogram from Comilla via Naya Bazar. There are 30 casualties among the Pakistan soldiers in this operation and their advance is disrupted and they had to retreat.
• In Gopalganj, Pakistan forces attack Muktibahini’s Chalbal base from three directions- Madaripur, Gopalganj, and Tekerhat. The Pakistan soldiers entered the Ramshil village near the camp of the freedom fighters and advanced towards Basail village under Gournadi Police Station. On their way, Pakistan soldiers engaged into a fierce battle with the Hemayet Bahini near Bandabari canal. After a long battle the Pakistan soldiers are forced to retreat. Freedom fighter Mokbul became a martyr in this battle and Hemayet became injured. On the other hand, more than 50 Pakistan soldiers are killed in this battle and 18 are held by the freedom fighters. After this battle the freedom fighters shifted their base to Kodaldhowa village.
• Dhaka municipality authority renames 210 roads in the city to Islamic names.  Lalmohon Podder Road is renamed Abdur Karim Gaznabi Road, Haricharan Road became Mohammad Bin Kashem Road. Similarly Shakhari Bazar became Gulbadan, Kishan Banerjee became Alibordi, Nabeen Chand became Bakhtiar Khilji, and Kalicharan Road became Gazi Salauddin Road.

June 15, 1971

• In Sunamganj, 2000 Pakistan soldiers and militias attack Dharampasha base of the Muktibahini from three sides, one advanced through the Singdha- Dharampasha road under Barohatta Police Station, another came along the Kangsha River, and the third came along the Mohonganj- Dharampasha Road. 20 Pakistan soldiers including a Major are killed in this battle. On the other side, Abdul Hai, a valiant freedom fighter, became a martyr. The Pakistan forces took hold of Dharampasha Sadar after this battle and committed atrocities on the innocent people, committed murders and raped women. They also burnt down Dharampasha bazaar.
• Freedom fighters ambush a train carrying Pakistan soldiers near Sahajibazar in Sylhet. 150 soldiers are killed in this ambush and the train is completely destroyed.

16 June, 1971

• In Chittagong, Pakistan Army attack on Chandgazi base of the Muktibahini. Muktibahini made counter attack led by Captain Motiur Rahman, which forced the Pakistan soldiers to retreat. 50 Pakistan soldiers are killed in this conflict.
• A small band of freedom fighters from Kosba ambush a patrol team of Pakistan soldiers at a place called Bogabari. 10 Pakistan soldiers are killed in this ambush and 5 are injured.
June 17, 1971

• In Tangail, freedom fighters led by Kader Siddiqui confront Pakistan soldiers at Kamutiya Northkhola Ferry crossing in the west of Basail Police Station. 5 Pakistan soldiers are killed in this conflict.
• A battalion of Pakistan Army attack on Chandgazi base of the Muktibahini in Chittagong with tanks, artillery and mortars. Captain Oli, Captain Shamsul huda, and Captain Motiur Rahman defended this fierce attack with each of their teams successfully. Despite some losses from this battle, the Muktibahini forced Pakistan Army to retreat in the end, and 45 Pakistan soldiers got killed in the battle.
June 18, 1971

• Freedom fighters led by Lt Humayun ambush the Pakistan Army base at Saysabad (canon base) on the Comilla- Brahmanbaria Road.  After several hours of conflict, Pakistan Army strengthened their counter attack with the aid of three fighter jets. Freedom fighters approached towards meghna River through a hidden route in the village after the assault. 50/60 Pakistan soldiers are killed in this operation.
• Pakistan soldiers attack the Muktibahini base at Koikhola in Comilla with the help of their artillery division. Koikhola went to their possession in this battle. At night, 4th Bengal ‘A’ Company led by Major Salek Chowdhury attack on the Pakistan forces at Koikhola. Besides that, Habildar Salaam’s platoon from Shibpur and Subeder Abdur Haque Bhuiyan’s Platoon from the south infiltrated the enemy base. After two hours of fierce battle Pakistan forces are forced to leave Koikhola completely and the Muktibahini took hold of Koikhola base again. 31 Pakistan soldiers including a JCO are killed in this battle. Freedom fighters took possession of ample weapons and war materials.
June 19, 1971

• Two battalions of Pakistan soldiers from Laksham and Feni attack Muktibahini base at Chouddogram. After whole day of battle the freedom fighters left Chouddogram base. Pakistan Army had a casualty of 200 in this battle. On the other hand, 2 freedom fighters became martyrs and 4 are injured in it.
• In Chittagong, Pakistan Army attack on Chandgazi base of the Muktibahini. Two infantry battalions came from behind, one company came through Muhuri River on speed boats, and another group from Rear Headquarters of Pakistan Army came with artilleries, mortars, and other automated weapons, and together attack the base from three directions. Muktibahini incurred considerable damage in this battle, while 150 Pakistan soldiers are killed and many are injured. The freedom fighters left their base a Chandgazi and it is held by Pakistan forces.
• The number of Bangladeshi refugees in India rise to 59 lakh 23 thousand 439.
June 20, 1971

• In a news published in the newspaper ‘Sunday Times’, it says: “A storm of consternation is going on in East Pakistan. Local citizens are divided into three categories. White, which means innocent, and grey, which means they will lose their jobs and will be arrested.  And those who will end up in the black list are definitely going to be killed. …….. 36 Bengali District Magistrates or Subdivision Magistrates have already been murdered. Some have managed to escape. Pakistan Army killed the District Magistrates and Police Supers on reaching Comilla, Rangpur, Kushtia, Noakhali, Faridpur, and Sirajganj.”
June 21, 1971

• Freedom fighters ambush two Pakistan Army cars on Bijoypur Bridge in Comilla. Fierce gunfight took place between the two groups. 8 Pakistan soldiers are killed in the fight and the two cars are completely destroyed.
• A band of soldiers from Noakhali Guerilla Headquarters ambush two Pakistan Army trucks at a place called Bogadiya on Feni- Noakhali Road. 12 Pakistan soldiers are killed and the two trucks are completely destroyed in the ambush.
June 22, 1971

• In Comilla, freedom fighters infiltrate Rajapur base of Pakistan army through a hidden passage and attack. One freedom fighter is injured in this operation, while on the other hand Pakistan forces had a casualty of 15.
• In Bogra, freedom fighters attack on Panchbibi base of the Pakistan forces. Pakistan forces incurred heavy losses from this assault.

June 23, 1971

• In Comilla, three platoons from 4th Bengal ‘D’ Company take positions in Yaqubpur, Kuapaina, and Khoinol to ambush Pakistan forces from all sides. Freedom fighters made an intense attack on a Pakistan Army patrol team as they came close to their position. 8 Pakistan soldiers are killed and 3 injured in this assault.

June 24, 1971

• Two platoon soldiers led by Lt Mahbub infiltrate Pakistan army base at Bibibazar, in the east of Comilla and ambush enemy forces. 21 Pakistan soldiers are killed and 7 are injured in this assault.
• Two Companies of Pakistan Army from Shalda River base and T Ali’s house in Kosba and meet near Kayempur. The assault Mondobhag base of the Muktibahini with mortars, machine guns and canons. After two hours of battle the Pakistan forces are forced to retreat and they left their Kayempur position and returned to main base at Shalda River.  24 Pakistan soldiers are killed in this battle.
June 25, 1971

• Freedom fighters led by Afsaruddin engage in battle against the Pakistan forces for 42 hours at Bhaoaliya Bajurghat in Bhaluka, Mymensingh. 125 Pakistan soldiers are killed in the battle. The freedom fighters entitled Afsaruddin to the rank of ‘Major’ following the battle.
• Indian Minister of Foreign Affairs Sarder Sharan Singh urges for international army forces to be sent to Bangladesh in a speech at Lokshobha.

June 26, 1971

• Freedom fighters led by Subeder BR Chowdhury attack Pakistan forces on Sylhet- Tamabil Road to free Sripur area from the enemy possession. Pakistan Army retreated soon after the assault. This brought the area from Jaflong to Sripur under Muktibahini’s possession.
• The number of Bangladeshi refugees in India rise to 63 lakh 25 thousands 9 hundred 98.

June 27, 1971

• A band of freedom fighters led by Captain Ainuddin ambush a patrol team of Pakistan Army at Kholapara in Comilla. 8 Pakistan soldiers are killed in the ambush.
• Freedom fighters led by Subeder Abdul Wahab attack a Pakistan Army team of 18 members near Kosba railway station on their way from Kosba to Imambari. 17 Pakistan soldiers are killed in this assault while one managed to escape.

June 28, 1971

• A guerrilla team of freedom fighters ambush Pakistan forces positioned at Taherhat under Rajour police station. 10 Pakistan soldiers died in the ambush and they retreated from Taherhat.
• Three freedom fighters from the 6th Company of Kaderiya Bahini made grenade attack on Bhaoaliya Bajurghat base of Pakistan Army in Bhaluka, Mymensingh. 7 Pakistan soldiers are killed and 11/12 are injured in the assault.

June 29, 1971

• Moulana Abdul Hamid Khan Bhasani, president of National Awami Party, says in a statement that there can be no compromise in the question regarding the independence of Bangladesh. The people of Bangladesh will not make any compromise in the name of political settlement. We are fighting for our liberation, and we will seize it through this liberation war. We must have the victory.

June 30, 1971

• A platoon of freedom fighters led by Habildar Matin attack a team of Pakistan Army on their way from Laxmipur to Kalir Bazar. A number of Pakistan soldiers are injured in the assault. Later on, Pakistan soldiers burnt down Kalir Bazar and escaped.
• A band of freedom fighters led by Commander Mahbub rack Talma Bridge in Panchagarh and attack on Pakistan agent Shamsu Member’s house. Three Pakistan agents are killed in this attack.
• Sarder Sharan Singh, Indian Minister of Foreign Affairs and special envoy of Prime Minister Indira Gandhi, has a discussion regarding Bangladesh crisis with President Tito in Belgrade.

July 1, 1971

• Twelve Pakistan army personnel are killed and five others injured when a platoon of freedom fighters led by Captain Shamsul Huda attack Debipur in Chittagong. Freedom fighter Fazlur Rahman sacrifices his life during the fight with the Pakistani army.
• A platoon of freedom fighters led by Habildar Gias ambush a jeep and two trucks of Pakistani patrolling troops at Phultali, a southern area Comilla. 21 Pakistan army men including 3 officers killed in the attack.
• Several hundred Bangladeshi refugees stage demonstration in front of US embassy in Kolkata in India to protest selling arms to Pakistan by US government.
• United Nations High Commissioner for Refugees (UNHCR) in Geneva declares that UN, different other countries and organisations have donated $160 million aid to India till July 1.
• US Congressman Kornelias Galagar, at a meeting of United States House of Representatives, calls upon the government to circulate a notice to stop supplying arms to Pakistan.
• Indian Prime Minister Indira Gandi in an interview with a London-based daily, Times tells that the new plan of Yahya Khan on handing over the power will volatile the situation of East Pakistan.
• Declaring military government in Dhaka, A Sirajul Islam, the elected MP from Chittagong, vows to work for Pakistan after breaking relation with Awami League.
• Pakistan government calls upon the UN secretary general U’Thant, UNCHER High Commissioner Prince Sadruddin Aga Khan and other friend countries to create pressure on India for not helping the Liberation War of Bangladesh.
• Prince Sadruddin Aga Khan bins Pakistan allegation saying that there was no evidence of Indian interest on baring the people who are interested in homecoming.
• East Pakistan Jamaat General Secretary AK Khalek, in a statement, calls upon the country people to resist ‘miscreants’ (Freedom Fighters) and urged to form defence in every village.
• Khulna district Peace Committee convener AKM Yusuf in a statement express gratefulness to president Yahya Khan and governor Tikka Khan for their initiatives to protect Pakistan.
• India recognises Bangladesh as a sovereign state and condemns the atrocity by Pakistani army.

July 2, 1971

• Freedom fighters led by Md Humayun Kabir attack Pakistani troops at Latumora of Comilla killing 12 and four others injured.
• Led by Zahangir, a team of freedom fighters attack Pakistani police and rangers at Matlab Police Station, killing five and injuring seven Pakistanis. A freedom fighter also sustained injuries during the attack.
• Freedom fighters attack a patrolling team Pakistani army at Sunamganj and kill all of them.
• Senators Charles Athian and Bedford Morse places proposal both in the both the Senate and the House of Representatives on not to issue license of supplying arms and canceling the granted license.
• Muktijouj leader Khaled Moshraf meets the British journalists and says this fight will continue till a single Bangladeshi is alive. “We stop after killing all of the Pakistan army in Bangladesh,” he vows. Replying to question about his family, he says, “I have witnessed what happened to my family like others. I have no right to think about myself. Bangladesh is my family.”
• The figure of Bangladeshi refugees staying in India stands at 65,41,446.
• Pakistan resigns from Commonwealth as it led to campaign in favour Bangladesh.
• All sorts of traveling of Pakistan government in abroad excluding trade related visit suspended.
• Syria and Gumbia extend their support in favour of undivided Pakistan.
• Before leaving Dhaka after week-long visit, Tehrik-e-Isshteklal party chief Air Marshal (rtd) Asgar Khan says the future of Pakistan is at stake for the next three months. The government has to meet the people’s demand. Who will form the government is not the main problem, the problem is — whether the government will be formed and whether the democracy will sustained or not.
• Jamaat leader Abdul Khaleq says the so called freedom fighter miscreants want to destroy the country.

July 3, 1971

• Freedom fighters kill four Pakistani army personnel including a captain ambushing a microbus on Ramgar-Karerhat road at Chikanchhara of Chittagong.

• A fierce fight erupts when Freedom fighters attack Pakistan army at Kamalpupr of Rajshahi.
• Indian foreing minister Sardar Sharan Sing tells the parliament that the Indian government was not giving recognition to Bangladesh. The government thought had not come yet. The government is considering the matter.
• Terming Justice Abu Sayeed as a ‘forger’, Pakistan ruler says the man was involved in propaganda with the help of Indo-British finance.
• The anti-liberation brokers assemble at Noakhali led by district Peace Committee chairman Advocate Saydul Haque, Prof Fazle Azi among others and decided to help Pakistan to combat freedom fighters.

July 4, 1971

• Captain Jafar Imam along with a platoon fighters ambush two companies of Pakistan army while temporarily take position at Shalda Bazar on the way to Belunia from Feni. 30 Pakistani army men killed and 20 injured in the attack.
• Freedom fighters attack a group of Pakistan army heading towards Doteshwar camp of freedom fighters. Pakistan army retreats in face of resistance. At least 30 Pakistani army men sustain injury while a freedom fighter embraces martyrdom.
• A team of Freedom fighters led by Major Nazmul Haque attack Pakistani a camp in Kanchan Bridge area of Dinajpur. The freedom fighters return to their camp without any casualty.
• Freedom fighters occupy the Pakistani camp at Amarkhana frontier, eight mile north off Panchagar of Dinajpur.
• A fierce fighting takes place between freedom fighters and Pakistan army at Gaddimari of Rangpur.
• Freedom fighters attack Lahir camp, 14 mile north-west off Thakurgaon with cannons and mortar.
• Pakistan protests in parliament against Britain for campaigning in favour of Bangladesh, newspaper and BBC radio. In the protest latter, it terms the June 23 statement of British Foreign Minister Alekdoglas Hume as interference in Pakistan.
• The military authority in Dhaka declares that Advocate Abdul Gaffar, National Council member from Satkhira surrenders to Pakistani army after returning from India. National Council member Obaildulla Majumdar stayed in Dhaka with his family.
• Iran State minister for home Z Hasan Zahedi vows to stay beside Pakistan to protect its unity.

July 5, 1971

• Freedom fighters led by Lance Nayek Abdul Mannan and Afsar Uddin Ahmed attack Baulia Pakistan camp. 60 Pakistani soldiers are killed and huge arms and ammo are seized.
• A face to face fight between freedom fighters and Pakistan army at Sunamganj. Two Pakistan army and two Ansar members are detained.
• Fakhruddin Ali Ahmed, the special ambassador of prime minister and also the agriculture minister, visits Egypt via United Arab Emirate and holds a meeting with Anwar Sadat about the India’s position on refugee.
• Jusfikar Ali Bhuttu at a press briefing at Karachi of Pakistan says the country needs popular leadership and true political initiative to combat the crisis.
• East Pakistan Governor and military administrator Lt General Tikka Khan visits Rajshahi, Chuadanga and Natore and addresses the local peace committee members.
• A two-member delegation from Garman arrives in Dhaka from Karachi and they met General Tikka Khan in the evening.
July 6, 1971

• Freedom fighters led by Habildar Gias ambush two launches on a branch of river Gomti at Joypur village near Masimpur Bazar in Daudkanid upazila. A fierce gunfight take place there and Pakistan soldiers return to Daudkandi after 20-25 of their men are killed during the gunfight.
• Freedom fighters of A and C company of Sector 2 led by Major Salek and Captain Gaffar resist Pakistan army in Comilla while approaching towards the enclave of Shalda river. Pakistani soldiers fire targeting the position of freedom fighters and villagers. At least 11 freedom fighters and 32 civil people sustain injuries.
• Four Pakistani soldiers are killed when a group freedom fighters attack Ramchandrapur launch terminal near Haziganj. As two more Pakistan company rush in to help their fellows, a fierce gunfight take place leading to the killing of 31 more Pakistan army men and injury of 54 others.
• Freedom fighters attack Dirai Police Station of Sylhet where the officer-in-charge and a Pakistan agent die.
• Julfikaar Ali Bhuttu leaves Karachi for Afghanistan and Iran as a special ambassador of Pakistan president Yiahya Khan.
• East Pakistan commander Lt Gen AMK Niazi visits the Sylhet frontier and instructs the army to keep strong.
• A five member committee led by Sylhet Peace Committee leader Makbul Ali Chowdhury and Shahabuddin meet Democratic Party chief Nurul amin.
• Maulana Atahar Ali, former member secretary of Kishoreganj unit, calls upon the teachers, students of Shayekh Jamia Imdadia madras to join Muzahid fighters.
• Former deputy speaker of Pakistan National Council ATM Abdul Matin terms Yahya as true democratic leader and says he is grateful to him for his role in restoring the law and order situation and protecting united Pakistan.

July 7, 1971

• The first brigade Z Force formed with first, third and eight East Bengal. The brigade was named after the first latter of Major Ziaur Rhaman. Major Ziaur Rahman made as brigade commander of Z Force and Captain Ali Ahmed given the charge as brigade Major.
• A group of freedom fighters attack Baraigram school camp of Pakistani military in Sylhet. Three Pakistan soldiers killed in gunfight with freedom fighters.
• A violent fighting take place between freedom and Pakistan army at Telipara tea garden area of Sylhet. 39 Pakistani soldiers are killed.
• Henry Kissinger, the national security affairs assistant of US president, meets Indian Prime Minister Indira Gandi and Foreign Minister Sharan Sing separately over Bangladesh issue.
• Senator Frank Church criticises the Nixon-led administration in Senate meeting and calls upon the government to bring back the arm loaded ship that was sent to Pakistan.
• PDP president Nawabjada Nasrullah Khan in a press conference demands immediate trial of Awami League President Sheikh Mujibur Rahman.
• Supporting the steps of Pakistan government, National Jubo Council President Mahbubur Rahman calls upon the government to suspend diplomatic ties with Britain as if necessary. He also called the patriot citizens to take steps against separatist freedom fighters.
• Begum Akter Solaiman in an interview with BBC Bangla lauds Yahya Khan that he is really cordial to handover the power.
• ‘Gramrakkhi Dal’ formed in Birlia village in Savar under the leadership of Md Akhlas Mia.

July 8, 1971

• Freedom fighters from Dauki camp in Sylhet ambush Pakistani camp in Jaintapur and killed a number of Pakistan soldiers. Freedom fighter Major Muttilib sustains injuries there.
• Freedom fighters attack Shahbajpur railway station camp in Sylhet leaves seven Pakistani soldiers injured.
• 2/3 Pakistan soldiers are killed when guerillas attack with grenades in an evening feast of Pakistan officers at Shanghai Chinese restaurant.
• Major Gaffar set up headquarters of his force in Konabon again after returning from Belunia.
• Muktibahini capture Thakurgaon Mahakuma Dinajpur after two day-long fierce fighting with Pakistani soldiers.
• Akashbani airs that Muktibahini freed three upazilas of Mymensingh and Tangail from Pakistan soldiers. Muktibahini’s activities increase in Sylhet, Comilla, Feni, Koshtia and Mymensingh. Yahya’s soldiers are being defeated everywhere. A huge number of Pakistani army men are being killed.
• Freedom fighters ambush at Pakistan soldiers Nabinagar camp. Seven Pakistan soldiers and five of their brokers killed. A freedom fighter injured in the attack.
• Henry Kissinger, the national security affairs assistant of US president, goes to Rawalpindi from Naya Delhi and holds an inclusive meeting the Pakistan president Yahya Khan in the evening.
• Pakistan Peace and Welfare Council president Moulvi Farid Ahmed, after returning Dhaka from Eygipt and Saudi Arabia as a special ambassador of Pakistan government, gave a statement saying that he has decided to retire from politics until the then crisis ended.
• US foreign department declares that the military equipment of $1.5 crore would be sent to Pakistan despite restriction of US government.
• Atahar Ali, former MNA and working committee president of Pakistan Jamiyat-e Olamay Isram and Nejame Islam, call upon the people to work for reinstate unity of Pakistan with more effort.
July 9, 1971

• A platoon of Pakistan army come under mine attack of five-member demolition party of Major Salek while going Nayanpur via Shalna river. 10 army are killed and many others injured in the mine explosion. Then the soldiers reclaimed their Shalna river camp.
• A Muktijoddha team led by Major Salek attacks the Shalna river camp in the evening killing 19 Pakistan soldiers and injuring 11 others.
• Company-2 Pakistani soldiers attack the Muktibahini camp in Kateshwar of Comilla. Later, more Pakistan soldiers join the attack. But they retreat after three to four hours of fighting.  At least 24 to 25 Pakistani soldiers are killed there.
• 30 Pakistani soldiers are killed and six others injured when freedom fighters from B Company of Fourth Bengal attack a truck and two jeeps of Pakistan army at Bangalpur of Chouddogram.
• Henry Kissinger, the national security affairs assistant of US president, meets the deputy law military administrator and chief of staff of Pakistan army General Abdul Hamid Khan and travels for Peking secretly at midnight.
• Congratulating the speech of Yahya Khan, Nejame Islam joint secretary Maulana Abdul Matin and president of its parliamentary board Sayed Manurul Ahsan, in a joint statement, say they will not compromise with the miscreants. Pakistan has been established for steadiness.
• Nejame Islam Joint Secretary Maulana Abdul Matin and the party’s parliamentary board President Abdul Hamid Khan hope that necessary initiatives will be taken to unite Pakistan. They also extended their support to the Pakistan government.
• 650 Rajakars obtain training at different union of Phulpur Tanator in Dhaka. 160 of them are given certificates and awards.

July 10, 1971

• A team of freedom fighters led by Subedar Abdul Wahab ambush a speedboat of Pakistan army. Tow Lt Con, two Subedars, three constables and a foreign businessman are killed. Captain Bokhai, known as Jallad in Comilla, also killed. The freedom fighters also seize a map, a wireless set and some arms. Following the attack, Pakistan government declares a bounty of Tk 50,000 for recovering the bodies of Lok Subedar and Wahab.
• Pakistani army attack on the position of Muktibahini at Sagartala near Shalda river. At least 30 to 40 Pakistani soldiers inured when the freedom fighters retaliate with mortars and machineguns, forcing the Pakistan army to retreat their camp.
• A group of guerilla of Muktibahini hurls grenades at a patrolling team of Pakistan army at Dhanmondi-2 and kills five policemen including an officer.
• Freedom fighters led by Makai Chowdhury ambush Pakistan military in Madhail area of Naogaon, killing six Pakistan army men. Freedom fighters seize some arms.
• A Canadian parliamentary delegation meets Indian Prime Minister Indira Gandhi and discuss on Bangladesh and refugees affairs.
• East Pakistan commander AMK Niazi visits Pakistan camps in Chittagong and Chittagong Hill Tracks. Army officers and local brokers assure Niazi that all the entry point of land and water ways is shut away for the miscreants. The miscreants were driven out from CHT.

July 11, 1971

• The first conference (July 11-17) of Sector Commanders begin at the office Bhaban at 8-No Theatre Road in Kolkata. Prime Minister Tajuddin Ahmed presides over the first session. Different problems of freedom fighters and the future plan of the war are discussed there.
• A fierce shooting take place when a team of freedom fighters ambush a Pakistan military team heading towards Miabazar. Pakistani army forced to retreat after four hour-long fighting that left 10-15 soldiers injured.
• Freedom fighters led by Lt Shamsul Arefin attack Kapilmunir Rajakars camp in Paikgachha.
• Pakistan army ambush Muktibahini’s Shalda river camp at 8:00am, leaving Fourth Bengal Habildar Tajul Mia and Constable Abdur Razzak critically injured. Besides two civilian are killed and eight others injured.
• Muktibahini hurl grenades at a patrolling team of Pakistan soldiers killing all of them — two army and two policemen — in front of Chandpur power station at 6:30am.
• East Pakistan Red Cross chairman Justice AKM Nurul Islam returns to Dhaka from Geneva visit.
• Henry Kissinger secretly retuns to Pakistan concluding his China visit and holds an inclusive meeting with Yahya Khan. He later heads for Tehran on the way of Paris.
• West Pakistan PDP president Nawabjada Nasrullah Khan, in a statement at Lahore, terms Peoples Party Chairman Zulfikar Ali Bhutto’s interview with an Iran newspaper sad. Bhutto tells the daily that the government should hold dialogue with Awami League and its leader Sheikh Mujibur Rahman on a settlement-based formula. Nasrullah Khan adds that it will be on the anti-Pakistani interests if any one tries to hold talk with the illegal Awami League.

July 12, 1971

• A company of Captain Gaffar and First Field Regiment recover huge arms after attacking a Pakistani camp at Bandabhag Bazar in Comilla. At least 60 to 70 Pakistan soldiers sustain injuries during the attack.
• Pakistan soldiers retreat as they attack Muktibahini camp in Shalda river in face of strong resistance by the freedom fighters of A Company of Fourth Bengal led by Major Salek. Many Pakistan army men are injured during the attack around 8:00pm.
• Pakistan soldiers attack Dimolishan camp of freedom fighters in Bausia Bridge area of Narayanganj, leaving three guerillas injured.
• Two Pakistan troops are killed when a team of freedom fighters led by Mayna Mia attack a Pakistani camp at Shabadpur Railway Staton of Sylhet.
• Peoples Party Chief Zulfikar Ali Bhutto returns from Tehran suddenly cancelling his Kabul visit.
• Convention Muslim League President Fazlul Quader Chowdhury, in a press briefing at Lahore, says the situation of East Bengal is quite stable but the India brokers are active there.
• Jamaat-e-Islami Ameer Mia Tofayel addressing a rally says the devastating attack launched before March 25 in the name of restoring the rights of Bangalis as a conspiracy to destroy Pakistan.

July 13, 1971

• Freedom fighters led by Captain Gaffar ambush the Mandabhag and Nakterbazar camps killing 12 Pakistani soldiers and destroying their bankers around 6:00pm.
• Two teams of freedom fighters led by 2-No sector captain Zafar Imam attack Dattasardighi and Amtal camps at 10:00pm, killing some Pakistani army and injuring 15 others.
• 21 Pakistani soldiers are killed when a Muktibahini team ambushes a patrolling speedboat in Gomti river near Daudkandi. The freedom fighters also recovered huge arms.
• Freedom fighters along with Indian soldiers attack Darshana camp of Pakistani army, killing 12/15 Pakistan soldiers.
• Freedom fighters led by Lance Nayek Mannan ambush a patrolling team of Pakistan army and recover huge arms including 43 rifles.
• Freedom fighters destroy Swarisadi Bridge of Feni-Gunbati railway track suspending the communication among the Pakistan soldiers.
• Major Mainul takes charge of commanding officers of Captain Hafiz Ahmed-led battalion.
• People’s Party chairmen Zulfikar Ali Bhutto, at a press briefing in Karachi, says the separatist movement comes into the view when Sheikh Mujibur Rahman was talking to divide the Jatiya Parishad. For this Awami League has been declared illegal and Sheikh Mujib arrested, he says.
• A new peace committee formed with Convention Muslim League leader Fakruddin Ahmed and AIB Reja as convener and secretary respectively of Mymensingh Natun Bazar unit.
• British foreign minister Sir Alek Hume tells parliament that Pakistan and India embassy failed to measure the number of deaths in Pakistani attack.
July 14, 1971

• Aiming to resist Pakistan army attack at Belabo, freedom fighters led by Subedar Bashar set an ambush at a nearby place. On information given by some traitors, Pakistan army attack the freedom fighters by boats instead of launch and besiege them from the rear. Sipahi Mamataj Uddin, Sipahi Abdul Haque and Sipahi Abdus Salam sacrificed their lives. Finally, the freedom fighters had to retreat.
• Bir Muktijoddha Mohammad Ali embraces martyrdom when he along with a guerilla team attacked a camp of Pakistan army in Barokhakta area of Kurigram.
• Indian defense minister Gajajibon Ram tells the Loksava that it is clear that Bangladesh must be freed any day because of the bravery of Muktifouj.
• Indian Foreign Minister Sharan Shing tells that the colonial mask of Pakistan has been revealed through their barbarism on Bangladesh people. Those who are supplying arms to Pakistan are encouraging the repression on Bangali people.

July 15, 1971

• All the sector commanders hold a meeting with acing president Sayed Nazrul Islam and Prime Minister Tajuddin Ahmed at the office bhaban at 8-No Theatre Road in Kolkata where the commander took oath expressing loyal to the Bangladesh government.
• Addressing the members of Jatiya and Regional Parishad, Bangladesh Prime Minister Tajuddin Ahmed says military Freedom is only the solution of problem in Bangladesh. The only way to overcome the present situation is to free the country from enemy.
• A decision has been taken to form the unit of river and air unit Muktibahini in Awami League National and regional members meeting and vowed to continue fight until freedom.
• Freedom fighters kill 13 Pakistan army in an attack on Shahabadpur area of Sylhet.
• Muktibahini launch a crackdown surrounding 60 Pakistan soldiers, including a captain, and kill 51 of them at Ballar fighting field.
• Addressing a rally at Kushtia, Jamaat-e-Islam acting ameer Mia Tofayel says Yahya Khan has established his ascendancy forever through ‘one man one vote’ policy.
• Pakistan former foreign minister Hamidul Haque Chowdhury and PDP leader Mohammad Ali meet UN secretary general U’Thant.
• A spokesperson of US foreign minister in a statement says the US has decided to stop financial and technical help to Pakistan until it publishes a list of its development policy.
• Former foreign minister Hamidul Haque Chowdhury and PDP leader Mohammad Ali meet World Bank President Robert S. McNamara and requested to reconsider its report on East Pakistan.
• Pakistan president Yahya Khan made Dr AM Malik as his special assistant.

July 16, 1971

• Addressing the National and Regional Parishad members, Bangladesh Acting-President Sayed Nazrul Islam says “the sun of our freedom set down at Palashi Amrakanan (Mango Garden) in 1757 and we declared our Liberation War in favour of seven and a half crore people and Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman from another Amrakanan in 1971.” He also says, “Our great sons took arms in their hands only for victory. The countries across the world must give their recognition to Bangladesh as the world public opinion is in our favour. India not only gave the shelter our peoples, the country also willingly come forward to help us considering our rights. I express gratefulness to India on behalf of my county.”
• Freedom fighters ambush the four boats of Pakistani army at Balla fighting ground to rescue their confined colleagues at Charan area. Most of Pakistan soldiers are killed when the freedom fighters destroy their boats.
• Munshiganj Mahakoma Peace Committee member killed in an attack by Guerilla team.
• East Pakistan Jamaat-e-Islam ameer Ghulam Azam addressing in Rajshahi says the central Peace committee has been formed to protect solidarity of Pakistan. The patriot people of the country will have to organize to uproot the anti-state people. The ‘miscreant’ (freedom fighters) have no their own power. They want to be freed on the help of Hindustan. The Hindustan solders occupied the country then how it would be possible to be freed from the loyalty, he questioned.
• Barrister Aktar Ahmed, vice president of Muslim League and the central executive member of Peace Committee, addressing an anti-liberation rally in Barisal issues directives to eliminate the freedom fighters.
• The anti-liberation force led by Almas Ali formed Rokkhibahini at Dwanbhog.
• Rajakars and armed collaborators attack a team of freedom fighters at Gogra Beel area in Rajshahi. They kill two freedom fighters and detain Shamsul Haque and handed him over Pakistani force.

July 17, 1971

• Pakistani forces prepare to set up a bunker at Manwara railway bridge area near Shalda river railway station. They retaliate when a team of Muktijoddha from A Company of Fourth Bengal attacks. Many of Pakistan soldiers sustain injuries.
• Eight Pakistani soldiers are killed when a guerilla team attacks at Ashikati village on Comilla-Chandpur route.
• Regular and Ganobahini forces jointly attack Narasinghapur camp of Pakistani army. 13 Pakistani soldiers are killed and many others injured in the attack.
• A platoon freedom fighters led by Lt Humayun Kabir ambush Pakistani soldiers on the way to Chandrapur from Latumora. Four soldiers killed on the sport while others manage to escape.
• Freedom fighters set anti-tank mines at Putia village on Comilla-Daudkani highway. A Pakistani soldier, two Rajakars and the driver of a truck die in a mine explosion. 12 more pro-Pakistani people including a major, five soldiers and 6 Rajakars are killed in another mine explosion there. Hearing the news Pakistani soldiers rush to the spot with 30 vehicles. Six to seven more soldiers are also killed and many others injured when anti-personal mine exploded at that time.
• Freedom fighters led by Habildar Zakir Hossain attack the Pakistani rangers and Rajakars when they are heading towards the position of freedom fighters at Narimpur of Ramganj. The Pakistan soldiers fled the scene leaving two bodies of Rajakars.
• 22 Pakistan soldiers are killed when freedom fighters attack Pakistani camp in Shahpar area of Rajshahi.
• 17 Pakistani soldiers are killed and 27 injured during a violent gunfight with Muktibahini at Dailpara village in Gafargaon.
• US House of Representatives grants recommendation to stop financial and military supplies to Pakistan.

July 18, 1971

• Freedom fighters of Company A under Fourth Bengal attack the Pakistani soldiers when they set for Manora Bridge area from Shalda River camp. Four soldiers are killed and 10 others injured in the attack. Later, the soldiers take position at a nearby place of the bridge.
• 17 Pakistani soldiers are killed when a team of raiding party (freedom fighters) led by Captain Ayeenuddin attack their position near Kishimpur bridge in Kosba. Some others made a run towards Khairatulla area.
• Freedom fighters led by Subedar Abdul Wahab attack O-P post of Pakistani soldiers that killed two officers, one JCO and two constables. Another constable fell down from O-P post after sustaining injuries.
• Pakistani soldiers carry out atrocious killing at Giuor Police Station. They burned Madar Siddeshwar Ray Prasad Chowdhury alive.
July 19, 1971

• A guerilla team of Freedom fighters hurl grenades targeting a vehicle of Pakistan soldiers at Baburhat area of Comilla, killing five soldiers and leaving seven others injured.
• Two freedom fighters sacrifice their lives when they along with two other teams – one led by Subader Waliullah Matin and another by Shahbuddin – attack Mandaribazar camp of Pakistani military and Rajakar.
• Pakistan military represses after confining about two hundred refugees who heading towards India in Karuiyabazar area. Hearing the news, freedom fighters led by captain Mahfuz attack the Pakistan heinous. 30 Pakistani soldiers are killed during the several hours of long fighting. Some refugees also killed the incident.
• Muktibahini attack the Bazar camp of Pakistani soldiers in Bhaluka Thana and destroy camp, killing 22 soldiers and injuring 11 others.
• The refugee number in India stands at 70, 21,490.
July 20, 1971

• Indian Foreign Minister Sharan Sing calls upon the Pakistan government not to take any step against Bangabandhu Sehikh Mujibur Rahman, saying that “Sheikh Mujibur Rahman is the leader of elected representatives by seven and a half crore people. He is the legendary leader of Bangladesh and its president. There is not right of any county to try the president and chief of the government of another country.”
• 13 Pakistan soldiers are killed and 10 others injured when the freedom fighters attack the Yakubpur, Chandrapur and Obagabari camps at 9:00am.
• A team of Muktibahini ambushes a patrolling vehicle of Pakistan soldiers in Rajshahi town killing four soldiers.
• Seven non-Bengali policemen are killed when a team of Muktijoddha led by Major Giasuddin Chowdhury raided Lalpur Police Station.
July 21, 1971

• Freedom fighters of Company-A of Fourth Bengal attack the Sharda River camp of Pakistani soldiers. Eight Pakistan soldiers are killed and seven injured during one and a half hour long war.
• An ambush team of freedom fighters attack a convoy of Pakistan army while heading towards Ashiqkati from Chandpur that left 10 Pakistan soldiers dead and 25 injured.
• Muktibahini ambush a Pakistan camp, three mile off Ashiqkati, and kill three soldiers and wound five others. 12 more Pakistan soldiers are killed and 10 injured when they tried to retaliate.
July 22, 1971

• Bangladesh Prime Minister Tajuddin Ahmed in a meeting with National and Regional Parishad members, says, “The initiatives taken by the Bangladesh government is mainly aiming to rescue the country. The day is not so far that our loving motherland will be freed from enemy.”
• Five Rajakars are killed as the freedom fighters led by Nayeb Subedar Mabachharul attack Mirganj Rajakar camp. The telecommunication between Mirganj and Charghat is suspended following the attack.
• Freedom fighters attack a patrol team of Pakistani military near Mabashail Police Station in Patharghata. Four Pakistan soldiers killed and another wounded. Freedom fighters seize huge arms and ammunition.
• Jamaat-e-Islami acting ameer Mia Mohammad Tofayel in a press briefing in Karachi says, “The member of Awami League who took part in trouble would have to cancel their posts and it would be filled up by the party men who got second highest vote in the elections held last year.
• Pakistani military ruler imposes section 157, 158 and 159 in Dhaka which gave authority to Rajakars to arrest anybody.
July 23, 1971

• A commando team comprising 15 freedom fighters in line with the direction of Lt Mahbubur ambush Pakistani camp in Mia Bazar. At least 20 Pakistani soldiers are killed and 10 others injured in the hour-long gunfight.
• An ambush team of Muktibahini attacks a large team of Pakistani soldiers at Kasba and killed 20 Pakistan soldiers and a Pakistani broker. Eight Pakistani soldiers also sustained injuries 2/3 during the hour-long attack.
• Anwar Hossain, a constable of Muktibahini sacrifices his life when the freedom fighters attack Pakistani camp at Barakhata in Kurigram.
• US senator Stuart Simington alleges that the government is willingly continuing supplying arms to Pakistan.

July 24, 1971

• Freedom fighters make strong resistance to Pakistani soldiers when the militia in Katembar camp crossing Gongas in Comilla. Fifteen Pakistan soldiers are killed during the gunfight.
• 30 Pakistani soldiers and seven collaborators are killed when freedom fighters attack a rally of Pakistan military and Rajakars at Naogaon school ground.
• Pakistani soldiers attack Satla Bagdar Payera Bagan camp of freedom fighters and destroy the camp. The freedom fighters later established their camp at Jamidarbari in Gournadi thana.
• Military ruler in Dhaka declares that the property of Awami Leader Tajuddin Ahmed, Abdul Mannan and Abidur Rahman, the editor of daily The Peoples, will be sold in auction on July 25.

July 25, 1971

• Freedom fighters led by Major Absar Uddin Ahmed make sudden attack on Mallikbari Pakistan militia camp. At least 16 Pakistan soldiers are killed and some others sustained injuries in the attack.
• A team of freedom fighters in line with the direction of Lt Mahbubur attack a Rajakar camp at Chhatura in Comilla. At least 16 Pakistani soldiers are killed and four others injured in the attack.
• An ambush team led by Lt Garus detains six collaborators of Pakistani government and seizes huge arms.
• A guerilla team of Muktibahini explodes bombs at a train boarding Pakistani soldiers. At least 30 to 35 policemen are killed as three compartments of the train derailed in the attack.
• Chief election commissioner Justice Abdus Sattar returns to Dhaka from Islamabad.
• In Comilla, Lt Gen Tikka Khan says, “We want peace but India instigating agitation in the border areas.”
• The members of Peace Committee, under leadership of Mobarak Hossain, gather at Islampur where they decided to form Rajakar force with 25 members from each Peace Committee.

July 26, 1971

• Muktibahini kill four Pakistan soldiers and injure many others in an attack near Monora Bridge in Comilla.
• Captain Ayenuddin and his associate fighters ambush Pakistan military on a road between Naogaon and Aksina and kill seven soldiers and wound four others. A freedom fighter sustains critical injuries. While returning to their camp, the freedom fighters ambush another Pakistani team heading towards Kosba from Syedabad and killed 21 Pakistan soldiers, one of their brokers and injured 9 others Pakistan soldiers.
• Muktibahini detain seven Pakistani collaborators at Narsingh of Comilla and seize 2 rifles, four grenade, a wireless set and 120 rounds of bullets.
• Muktibahini kill 19 Rajakars and wound seven of them during two-hour-long gunfight at Tanar Kalidaspara of Ghatail.
• Subedar Waliullah manages to escape when Pakistan raiders confine him at Noakhali.
• UN Secretary General U’Thant holds separate meeting with India and Pakistan ambassadors over tension at the borders of the countries.
• Maulana Abdul Hamid Khan Bhasani calls upon the left-leaning parties to join the Liberation War actively. “Left, right or whatever we are – our only aim should be freedom of our motherland.”

July 27, 1971

• A fierce face-to-face gunfight between freedom fighters led by Lance Nayek Majbah Uddin and Pakistani patrol team at Tantar and Mayaghasi under Nalitabari Thana in Jamalpur. 16 Pakistani soldiers are killed in the fighting. Lance Nayek Majbah Uddin sustains critical injuries.
• Freedom fighters kill four Pakistan raiders attacking their Hiaku camp.
• Muktibahini attack the Chotalekha camp of Pakistani military in Sylhet. A violent gunfight takes place when Pakistan soldiers retaliated with firearms. Four Pakistan soldiers are killed in the attack. Meanwhile, freedom fighter Abul Hossan was hurt critically. Two hours after the fighting, the Pakistan soldiers started retreating from the fighting ground.
• Freedom fighter Abdus Subhan Bakul sacrifices his life when Pakistan raiders ambush Muktibahini’s Manunadi camp. In retaliation, freedom fighters kill 20 Pakistani soldiers during four-hour-long gunfight.
• Another freedom fighter dies during a violent gunfight with Pakistani troops. Freedom fighters kill seven Pakistan raiders and injured many others.
• United States Senator William Proxmire and William Saxby, addressing the senate, say, “Obviously Bangladesh tragedy should be ended. Genocide would never be supported wherever it is held on the earth. No civilised people can support the massacre on thousands of women and children for religious belief. Pakistan not only rejected the verdict of East Pakistan people, they forced millions of aboriginal people to leave their motherland. Such genocide is not uncertain future before the people. They still now repressing the civilians, most of the people are panicked there. We think the situation may be worsened anytime there. Thousands of young guerillas already join the force to free their motherland. They started to enter the country completing their training. If Pakistan does not take the initiative to settle the issue with real rivals, the future of not only Pakistan, even of the whole region may be uncertain.”
• The first team of Mujahid takes oath at Kushtia united school. Kushtia district peace committee chairman Sayed Ahmad and Ahmad Ali administrated the oath both in Bangla and Urdu.

July 28, 1971

• Freedom fighters kill three Pakistani soldiers and injure others seven when the Pakistan raiders visit Bijana bridge in Comilla.
• A Muktijoddha team led by Subedar Gias ambushes a patrol launch of Pakistan in Saghutia launchghat in Homra Thana. The Pakistan soldiers are forced to flee the scene.
• Freedom fighters led by Captain Huda set a mine and hoisted a flag of Bangladesh and then went into hiding at a nearby paddy field. Seeing the flag, as Pakistan soldiers came to put down the flag and died in the explosion.
• Pakistan raiders attack Prothanpara, Dangapara and Nuniapara camps of Subedar Hafiz-led freedom fighters under Sector No-6. The raiders finally move back in retaliation of freedom fighters.
• US arm supply to Pakistan should be stopped unit the political settlement in both part of Pakistan and congenial atmosphere ensured for the return of refugees staying in India, says US senator J W Phulbright.
• British Foreign Minister Sir Alec Douglas-Home says only Pakistan can solve what the people of east part of Pakistan is looking for.
• Military administration declares through Dinajpur Public Administration department that the people who left their houses and did not come back by yesterday have lost their properties.
• The military administrator imposes curfew in Dinajpur at every night between 10:00pm and 4:00am and threatens to shoot down if anyone is seen in the deadline.

July 29, 1971

• A team of Muktijoddha led by Chand Mia, commander of Afsar Battalion under Sector no-11, ambush Pakistani camp in Paruldia Bazar and kill three associates of the Pakistan raiders.
• Freedom fighters attack the Mukundapur-Harispur camp of Pakistani soldiers in Comilla under the leadership of Lt Helal Murshed causing huge damage to the raiders.
• Three Muktijoddha teams led by EPR Abul Hay, Jagatjjoti Das and Mujahid Mia attack Pakistan soldiers’ Sachana and Jamalganj camps. Freedom fighter Siraj dies during the fighting in Sachana.
• Indian foreign minister Sharan Sing says in New Delhi that they have no wish to table the problems of Bangladesh in UN security parishad.
• East Pakistan military ruler and Governor Tikka Khan calls for forming Mujahid Bahini to fight the Muktibahini.
• East Pakistan provincial Jamaat ameer Ghulam Azam thanks Tikka Khan for omitting some topics from text books which will help make the citizens pure Pakistanis.
• “Dhakurgaon, Panchagar, Boda, Tetulia and Debiganj of Dinajpur district now under the capture the Muktibahini. Bangladesh’s flag are flying at different government and private establishments,” reports daily Juganttar.

July 30, 1971

• Freedom fighters kill six Pakistan soldiers and detain a driver after ambushing at jeep of C Company of 29 Beluch Regiment at Nankara area, four mile away off Chouddogram. The fighters also seize huge firearms and explosives of Pakistan soldiers.
• Military Court no-1 in Dhaka summons actress Kabari Chowdhury, singer Abdul Jabbar, student leader and freedom fighter Mahasin Mantu, Kamrul Anam Khan Khasru and Abdul Gani on August 16. Otherwise, trial will be held in absentia, the court decides.
• The court also summons 13 youths who took part in the freedom fight. The youths are – Mohammad Idris (Chandpur), Abdul Wahab (daudkandi), Abdur Rhaman (Begumganj), Bhulu (Senbagh), Mujibur rahman (Debidwar), Kalugaji, Shafi, Kafi, Sadi, Mannan, Barek, Khaleq and Sharafat (rest of all are residents of Raipura, Dhaka). If they do not appear before the court, the trial would be held in their absence, the court decided.
• Anti-liberation forces hold a rally at Sylhet register ground presided over by Dr Abdul Majid.
July  31, 1971

• Freedom fighters of D Company of Fourth Bengal Regiment attack Gosai Sthan Ghat camp in Kosba causing huge damaged to the Pakistan soldiers.
• Muktijoddha team ambush Pakistani soldiers heading towards Nankara from Gajannath Ginghi via Trank road. 26 Pakistan soldiers are wounded.
• Freedom fighters of B and D Company led by Hafiz Uddin Ahmed and Captain Salahuddin Mamataj under the battalion of Jajor Moynul Hossain Chowdhury of Z-Force attack Pakistan camp in Kamalpur of Mymensingh district and kill 59 Pakistani soldiers and injure 60 others. Meanwhile, 31 freedom fighters including D company commander Captain Salauddin Mamataj sacrifice their lives and 56 freedom fighters sustain injuries in counter attack of Pakistan raiders. This fighting is known as Kamalpur war.
• Two companies of freedom fighters attack Bahadurabad Ghat camp of Pakistani raiders and damage huge firearms and injure 100 Pakistan troops.
• In a message to UN secretary general U’Thant, foreign department of Bangladesh government states that it impossible to solve refugee crisis bypassing the elected representatives of republic Bangladesh.
• The number of refugees, who took shelter in India being repressed by Pakistani raiders, stands at 71, 33,004.
• Rawalpindi military spokesman declares that the government will soon publish a paper on sedition of illegal-declared Awami League chief Sheikh Mujibur Rahman.
• Military administration beefs up security in Dhaka and its outskirts fearing guerilla attacks.
• Pakistani collaborators led by Misirullah, Enamullah and Jamal Uddin form three subcommittee with nine members in each aiming to increase the Peace Committee and encourage other associates to fight freedom fighters.

August 1, 1971

• Muktabahini ambush 7/8 boats of Pakistani troops on Shalda River. Around 60 to 70 Pakistan soldiers sustain injuries and around four to five boats sink in the river, triggering a fierce gunfight. In retaliation, Pakistan occupation force kill four freedom fighters and injure another.
• Z-Force of Sector -11 attack the Pakistani camp at Bahadurabad Ghat in Jamalpur with rocket launchers and grenades. The freedom fighters capture the camp after destroying the armory and office.
• Military court asks Aminul Haque Badsha, press secretary of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, to appear by 10:00am on August 6. Otherwise, the court decides to star trial in his absence.
• Pakistan president Yahya Khan in a TV interview says if clashes continue in India-Pakistan border, it might turn into war.
• Muslim League secretary ANM Yusuf urges all the leaders and activists to join Razakar aiming to uproot Muktibahini.

August, 2, 1971

• Freedom fighters led by Lt Harun kill 50 Pakistan troops attacking their Kalamchhari camp. The native fighters also destroy 10 bankers and detain two raiders and recover huge arms and ammunitions.
• Freedom fighter Ansar Ali embraces martyrdom and some others sustain injuries when they attack the Burungamari camp of Pakistani army. A violent gunfight takes place there.
• Freedom fighters kill 25 Pakistan raiders ambushing Harishwardar haat in Comilla. A violent clash takes place there when the Pakistani army retaliates with gunfire.
• Pakistan President Yahya Khan tells Kaihan Internatioal, a Tehran-based daily, that he will not handover power to any person or party before forming a civil government with the representatives from across the country.
• Tony Klinton tells News Week that “There is only one person who can protect Pakistan in the universe. He is Mujib. Yahya Khan said Mujib must be hanged. But Pakistan will die with the hanging of Mujib.”

August 3, 1971

• Freedom fighters led by Captain Rashid attack Taherpur camp of Pakistani occupation army causing huge damage to the Pakistan raiders in Sector 7.
• Muktibahini under the Sector 8 recover huge arms and ammunition attacking Manikganj camp of Pakistani troops. The Pakistan military is compelled to flee the camp.
• UN and Pakistan sign a memorandum of understanding to deploy an international civil representative team comprising of 156 people.

August 4, 1971

• Freedom fighters led by Habildar Shafiq ambush a Pakistani cavalry while advancing towards Taherpur under Sector no7. 18 Pakistan raiders killed.
• Muktibahini attack Pakistan occupation army’s stronghold in Jamalpur and take possession of huge arms.
• Military ruler imposes section 162 and forms new military sector-6 under the section.
• Two freedom fighters are kill by Pakistan raiders at Paltigram in Kumarkhali of Kushtia.
• Pakistan President Yahya Khan declares that Awami League chief Sheikh Mujibur Rahman will be brought under trial.

August 5, 1971

• A fierce clash erupts between freedom fighters and Pakistan soldiers at Phulbari in Dinajpur. Freedom fighters kill 35 Pakistan soldiers and wound 17 others.
• Nine freedom fighters – Hasan, Alaul, Islam Khokon, Abul Kashem, Rawsan Alam, Rariq, Rabiul, Abjaluddin and Keyamaddin—sacrifice their lives in fights with Pakistan troops in Kushtia when the freedom fighters attack Nantudaha company of Pakistan raiders.
• Pakistan government publishes whitepaper on the Bangladesh crisis. It is said that the military force is directed to recover properties damaged during 25-day non-cooperation movement of Awami League. It also said East Bengal Regiment, East Pakistan Rifle and Awami League rebels have been killing Pakistanis. With the military help of India, Awami League planned to revolt on March 26. But Pakistani soldiers foiled the separatists’ plan through their steps hours before the revolt.
August 6, 1971

• Freedom fighters from Sector -2 attack Pakistani Rangers’ camp at Raipur and Rajakaras’ LM High School camp. 9 Pakistan soldiers injured. Besides, a freedom fighter also sustains injuries in this mission.
• A violent gunfight takes place when freedom fighters led by student leader Hasem Mahmud and Subedar Major Ziaul Haque attack Bandarkata BOP camp of Pakistan raiders. 30 Pakistan troops are kill and 35 injured. Meanwhile, five freedom fighters embrace martyrdom and nine are wounded.
• Senator Edward Kennedy, chairman of refugee affairs sub-committee of US Senate, tells that the refugee problem is created due to arms supply to Pakistan.
• More than 450 members of Indian Lokhsova, signing in a memorandum to UN secretary general U’Thant, urges for help to stop the trial of Sheikh Mujibur Rahman in Pakistan jail and demands his unconditional release.

August 7, 1971

• A guerilla team led by Ahasan Habib under Sector-7 ambush a Pakistan military lorry at Sabgram in Bogra that kills three Pakistan soldiers and inures another.
• Guerilla fighters Jewel, Badiuzzaman, Alam Pulu, Swapan and Samad attack a military post at Farmgate and kill five Pakistani police and six Rajakars.
• Bangladesh government says the soldiers who have separated from the military and other separatists have directly joined the war at East Pakistan border areas with the help of India.
August 8, 1971

• Sayed Nazrul Islam, acting president of Bangladesh government, threatens that Pakistan President Yahya Khan will have to take the responsibility if the trial of President Sheikh Mujibur Rahman did not stop. He calls upon the world leaders to create pressure on Pakistan to stop the trial.
• Expressing concern over the trial, Indian foreign minister Sharan Singh also urges the world leaders to take steps to ensure security of Sheikh Mujibur Rahman.
• Razakars, the collaborators of Pakistan government, kill 25 freedom fighters and wound many others in a cruel attack in Khulna.
• Another freedom fighter sacrifices his life being repressed by the Razakars and peace committee members in Gopalganj area of Sylhet.

August 9, 1971

• Freedom fighters kill 14 Pakistan soldiers ambushing them at Paniarup area under Sector-2.
• Five Pakistani soldiers are kill and six others injured in a mine blast set by a guerilla team in Sabgram of Bogra.
• Pakistan military attack a Muktibahini camp at Kalibari in Shibganj of Chapainowabganj causing huge damage to freedom fighters.
• Muktibahini attack Pakistan camp in Kawkhali in Pirojpur and capture huge arms.
• Pakistan military administration in Rawalpindi declares that the trial of Sheikh Mujibur Rahman will start from August 11.
August 10, 1971

• Six freedom fighters — EPR Habildar Kutub, Nayek Mannan and Mujahid and Habildar Mohammad Fayez – embrace martyrdom and five others injured when Pakistan soldiers retaliate with firearms after the freedom fighters led by captain Rab attack Shahbajpur railway station camp of Pakistan soldiers.
• Muktibahini of Douki Sub-sector of Sector-4 kill two Razakars and detain two more attacking Chatulbazar Razakar camp.
• Captain Saroik set a camp at Shaildai area near CandB Road, western side of Shalda river in Comilla.

August 11, 1971

• Freedom fighters led by Major Salek attack a Razakar camp on Brahmanbaria-Comilla highway near Rasul village and kill 20 Razakars and detain 30.
• Muktibahini led by Sub-sector Subedar Major Mazid of Sector-7 recapture Kalabari camp attacking Pakistan soldiers after one and a half hour-long fight.
• Major MA Mahjur is deployed as commander of Sector-8 replacing Major Abu Osman Chowdhury.
• Brave guerilla team explodes bombs at Hotel Intercontinental that leaves 20 Pakistan soldiers injured.
• Razakars detain a freedom fighter with a boat of arms and explosives.

August 12, 1971

• Addressing at Mujibnagar, Bangladesh Home Minister AHM Kamaruzzaman says, “Freedom Fight is now not limited between Muktifouj and Pakistani raiders. This fight has turned into civil war. The country people have promised to free the country driving out the Pakistan raiders.”
• Pakistan soldiers flee from their Putkhali BOP camp when freedom fighters of Sector-8 attack the camp. Freedom fighters later set up a protection cell there.
• Freedom fighters retreat at Baradal camp in Ashasuni thana when Pakistan navy attack their camp in Sundarbans.
• In line with the direction of Kader Siddique, freedom fighters led by Habib attack seven arms-laden ships of Pakistan military on the river Yamuna and kill 14-15 Pakistan soldiers while others manage to flee. The freedom fighters take possession of the arms and ammunition.
• Indian Prime Minister Indira Gandhi calls upon the UN secretary general and 24 others countries to put pressure on Pakistan over Sheikh Mujibur Rahman’s trial.

August 13, 1971

• Muktibahini guerillas ambush a jeep of Pakistani Air Force near Demra of Dhaka and kill four Pakistan soldiers. The freedom fighters recover valuable documents, Identity cards and some revolvers.
• A guerilla team of Muktibahini attacks a Pakistani camp at Jhinardi near Ghorashal. A Pakistan soldier is kill and 15 others surrender. The freedom fighters later recover huge supplies.
• Freedom fighter Sipahi Kabir Ahmed sacrifices his life when the fighters attack Bhurungimari bazar camp causing huge damage to Pakistan soldiers.
• In interview with Bangladesh radio, Prime Minister Tajuddin Ahmed threatens that the situation in South-east Asia will be overwhelming if anything happened to Sheikh Mujibur Rahman. Pakistan government has no right to try Bangabandhu. He also called upon powerful leaders of the world to interfere the matter.
• UN secretary general U’Thant, in his comment, highlighted the matter of Sheikh Mujib’s trial as contradictory to UN humanitarian act. “Any legal decision regarding Sheikh Mujibur Rahman will create outcry outside the border. Because the matter of his trial has crossed the humanitarian concern.”
• Senator Edward Kennedy visits the refugee camps in West Bangle and then meets Indian President VV Giri.

August 14, 1971

• A guerilla team attack a team of Pakistani raiders rampaging at a village near Jhinari railway station. Pakistan soldiers flee the area after around three hour-long fight leaving two bodies and some injured soldiers.
• Muktibahini ambush a jeep of Pakistan militia at Basurhat in Companiganj police station, leaving 30 Pakistan raiders wounded. Freedom fighter Sipahi Nurunnabi sustains critical injuries.
• Five Pakistan soldiers are kill in a dynamite explosion set by Muktibahini.
• A group of freedom fighters led by Mehedipur subsector Subedar Major Mazid of Sector-7 attack the Pakistani troops at Kansat, leaving few troopers killed.
• A fierce gunfight takes place with Pakistani troops at Miajan ghat when freedom fighters led by Ilias head towards Chittagong via Mirsorai. Five Pakistani troops killed.
• 10 Pakistani soldiers are kill and many other injured when Muktibahini attack Majhigachha camp of Pakistan militia.
• Freedom fighters set mines under three Pakistani ships – MV Harmuj laden with 9910 metric ton war supplies, MB Al Abbas with 10410 metric ton war supplies and Orient Barz with 276 ton firearms and explosives – stationed at Bangla port jetty. All the ships are destroyed.
• Marking independent day of Pakistan in Dhaka, Jamat-e-Islami provincial ameer Ghulam Azam said, “Those, who are observing independent day this year, love Pakistan more than their lives. … We are struggling to restore unity of Pakistan. It will be tough to sustain as Muslim if the country will not sustain.”

August 15, 1971

• A platoon of freedom fighters attack two boats with supplies for Pakistan troops heading for Nayanpur form Brahmanpara, killing 11 Pakistan army men and destroying the supplies.
• A joint team of Freedom fighters attack Homan Police station and kill 10 soldiers. The fighters detain 14 troopers after two-hour-long gunfight.
• A 150-member squad led by Major Abu Taher attack Kamalpur camp and kill 15/16 soldiers of Pakistan. Meanwhile, 15 freedom fighters sustain injuries.
• Senator Edward Kennedy, chairman of refugee affairs subcommittee, meets Indian Prime Minister Indira Gandhi and Foreign Minister Sharan Sing in New Delhi over Bangladesh refugee affairs.
• Pakistan former foreign minister Hamidul Haque says in London, “Those who dream for independent Bangladesh are mistaken like Mir Jafar.”
• Protesting the statement of UN secretary general U’Thant, Pakistan government said, “Sheikh Mujib is the enemy of the country and nation. His trial is totally internal matter of Pakistan. UN has crossed the limit interfering the trial of Sheikh Mujib.”
August 16, 1971

• Muktibanini fighters led by Captain Mahbub attack Kongstala camp of Pakistan troops. The Pakistan raiders flee after 30 of their colleague sustain injuries.
• 143 Pakistani soldiers are kill and many others injured when freedom fighters led by Habildar Akmal Ali of Sector-3 ambush some motor launch loading Pakistani soldiers in Kotiadi.
• Muktibahini fighters led by Sayed Fazlul Ahsan Dipu attack the Pakistan army at Dhalapara Ghat in Ramchandrapur villege under Sariakandi Thana in Bogra and kill 30 Pakistan militias.
• Freedom fighters led by Nijamuddin Laskar attack Pakistan troops near Joykalas Bridge on Sylhet-Sunamganj road, triggering a fierce fight with Pakistani raiders. Nine Pakistan soldiers are kill and 10 hurt in the 12-hourlong fight. Four freedom fighters including the commander also sustained injuries.
• 25 Pakistani soldiers are kill when freedom fighters led by Subedar Nazrul and Subedar Munib attack Pakistan raiders (2 platoons) on their way to Nagaish area from Feni.
• Indian Prime Minister Indira Gandhi says, “The critical situation in Bangladesh is the greatest challenge to India after its Independence. The economy of India at stake under the pressure of huge number of refugees”
August 17, 1971

• A large convoy of Pakistani soldiers is marching towards Brhamanpara on the bank of Shalda river. Three boats boarding troops are also accompanied the soldiers through the river. Freedom fighters ambush the Pakistani convoy and kill 18.
• A freedom fighter team launches attack on Sharda police camp in Rajshahi but all the freedom fighters except one are kill in retaliation from Pakistani soldiers.
• Captain Zia of Sundarbans camp of Muktibahini calls a conference. In the conference, he forms separate teams to attack four police stations in Barisal. Subedar Aziz and Latif to lead 20 member squad to attack Bhandaria police station while Commander Habib-led 20-member squad for Kaukhali police station, Subedar Rustam-led 20-member squad for Rajapur police station and Captain Zia-led 50-member squad for Mathbaria station.
• Eight East Bengal regiment fighters kill four Pakistani troops attacking their position near Chilmari of Kurigram. Others Pakistan militia flee the scene.
• A freedom fighter dies in a fierce battle with Pakistan raiders at a place between Bhatkura and Payla in Tangail. Pakistan militia detain freedom fighter Biman Bihar Das.
• Pakistani raiders launch a mass killing and rampage in Sylhet. Pakistani soldiers from Baniachang thana kill 87 villagers attacking Makalkandi village and shoot more several hundred people. They loot the whole the village. The raiders also kill five people in the nearby Harun village.

August 18, 1971

• A guerilla team of Muktibahini kill 29 Pakistan solders and 5 Razakars ambushing their two boats at a place, 8 miles off Muragnagar while heading towards Homra in Comilla.
• Freedom fighters kill four Pakistan soldiers attacking three gunboats while crossing Shrankhola range on Bhola River. The Pakistan troops retreat after a long fight from dawn to till 4:00pm.
• 3 Pakistani troops are killed when a team of Muktibahini ambush a jeep near Jhalopara of Kadamtali in Sylhet.
• Six freedom fighters sacrifice their lives when Pakistan raiders attack their camp in Kulftepur of Naogaon. 12 more freedom fighters sustain injuries.

August 19, 1971

• Muktibahini launch a sudden attack on three boats of Pakistani soldiers on Shalda river on their way to Brahmanpara from Shalda river camp. 20 Pakistan soldiers are killed in the incident.
• Muktabahini kill eight Pakistani troops and destroy a bunker attacking the store of Shalda river camp.
• Freedom fighters kill four Pakistan raiders attacking their Chilmari camp in Kurigram in the evening.
• Muktibahini kill four Pakistan soldiers, five policemen and detain 14 others attacking Saturia Police Station in Dhaka.
• Freedom fighters ambush a launch of Pakistan army in Paikgacha of Khulna and kill them all.

August 20, 1971

• An ambush team of Muktibahini attacks a Pakistani patrol team at place, one mile north of Comilla, and kills 11 Pakistan raiders and injured 3 others. The fighters also seize arms.
• Bir Shreshtha Flayer Flight Lt Motiur Rahman, instructor of Masrur Air Camp in Karachi, sacrifices his life when his T-33 plane of Pakistan air force crashes on his way to Bangladesh to join Liberation War. He born in November 29, 1942 at Ramnagar village in Raipur thana.
• Freedom fighters led by Masud Hossain Alamgir Nobel attack a launch of Pakistan soldiers in Jumana near Aolakandi village in Sariakandi and kill all the troops damaging the launch.
• Freedom fighters free Chilmari of Kurigram after five day-night bloody battle. Enthusiast people in groups come to visit to witness more than a hundred bodies of Pakistan raiders.

August 21, 1971

• Muktibahini kill six Pakistani soldiers ambushing a vehicle at Gazipur railway bridge in the north of Comilla.
• A guerilla team of Muktibahini attacks the Pakistan troops near Narsingdi. The Pakistan raiders flee the scene after an hour-ling battle.
• East Pakistan military government cancels Ansar section 1948 and circulates ‘Razakar section 1971’.

August 22, 1971

• An ambush squad of freedom fighters kills 20 Pakistani troops destroying a truck on Sonagaji road by setting an anti-tank mine. 40 Pakistan soldiers wounded.
• Subedar Mobassarul Hossain and his associates attack Pakistani camp in Charghat thana and kill all of the Pakistan soldiers.
• Pakistan Peoples Party Chairman Julfikar Ali Bhutto says, “People want that power be handed over to his party. His party is not only majority party in Pakistan but also in National Council.”

August 23, 1971

• Major Jafar Imam and his troops kill 24 Pakistan soldiers attacking their camp in Chiyara village. Others manage to flee the scene.
• An ambush team of Muktibahini attacks a Pakistani boat at Senerbazar and kills seven. Others manage to flee.
• Jamaat-e-Islami East Pakistan ameer Ghulam Azam says in Lahore that the Jamaat activists are the main victim of Indian associates (Muktibahini). They are losing their lives for rivaling separatists (Awami League). Only Jamaat-e-Islami is battling the miscreants in every parts of the province.

August 24, 1971

• Two teams led by Nayeb Subedar Abdul Matin Patuari ambush Pakistan soldiers in Baguyan and Maniknagar and kill nine Pakistan raiders while heading towards Mujibnagar from Natoda. A freedom fighter sustains injuries during two and a half hour-long fight.
• Seven Razakars surrender when freedom fighters attack them at C&B road in Comilla.
• Muktibahini attack Rajakars’ Ashashuni camp and kill many of them destroying the camp.
• Freedom fighters led by Subedar Abdul Wahab ambush two buses, three jeeps and two others vehicles at a place between Madhabpur and Mirpur, two mile south of Kalamura bridge, that kill many Pakistan soldiers.

August 25, 1971

• Freedom fighters led by Captain Didarul Alam kill 30 Pakistan militia men and wound 10 others after attacking Jambari area of Comilla.
• Freedom fighters ambush a vehicle of Pakistan army and detain four soldiers.
• A patrol party of Muktibahini ambush Pakistan soldiers on the way to Dhandal village from Brahmanpara at Sector no-2. 10 Pakistan soldiers killed.
• Quoting officials of Nixon-led government, in a report by Cliveman of Washington Post states that, US government’s policy is only to protect unity of Pakistan.
August 26, 1971
• Captain Idris- and Subedar Major Mazid-led two teams attack Cancert camp of Pakistan soldiers and force the troops to leave the camp.
• Aiyub Ali-led Muktijoddha team kill eight Pakistan soldiers and wound many launching an attack at Mallikbari Pakistan camp in Bhaluka.
• Muktibahini launch a fierce attack at six boats of Pakistan soldiers at Brahmanpara in Comilla and 18 troops. Freedom Fighter Abul Matin sacrifices his life in the battle.
• A face-to-face battle takes place between Kaderia bahini and Pakistan troops in Tangail. Pakistan raiders kill a freedom fighter and detain another.

August 27, 1971

• Pakistani soldiers attack freedom fighters at Shashidal village under Sector no-2. In retaliation, freedom fighters kill 15 Pakistan troops.
• Muktibahini kill seven Pakistani raiders patrol team near Parshuram Police Station. Others manage to flee the battle ground.
• A guerilla team kill 24 Pakistan raiders ambushing 4/5 vehicles at Green Road in Dhaka. Others manage to flee several hours after the battle.
• Mizanur Rahman Chowdhury, a spokesperson of Bangladesh government in Mujibnagar calls upon the UN secretary general U’Thant not to deploy observers in Inida-Bangladesh border.

August 28, 1971

• Muktibahini kill 30 Pakistan soldiers including a captain ambushing five boats while heading from Brahmanpara on Shalda river.
• A patrol team of A company of Fourth Regiment of Sector-2 kill nine Pakistan troops and wound four others attacking at Madhabpur village.
• Freedom fighters from Tajpur of Sylhet kill four Razakars and a Pakistan soldier at Shahbajpur Railway station.
• Muktibahini launch a crackdown at Maijbar village in Comilla and kill 36 Pakistani soldiers.
• A 150-member joint team of Razakars and Pakistan raiders from Companyganj of Comilla begin rampage at Maheshpur village. Hearing the news, freedom fighters ambush around the village and kill four Pakistan soldiers. Others manage to flee.
• Muktibahini free Dirai and Shalla area of Gajannathpur of Sylhet and begin civil administration. Saleh Chowdhury is appointed a regional commander in the area.
• Justice Abu Syed is nominated as a member of UN Human Rights Commission

August 29, 1971

• Freedom fighters, led by Captain Ayenuddin of D Company under Fourth Bengal Regiment, ambush on a waterway behind Pakistan camp near T Ali’s house in the western area of Kosba. When the Pakistan troops came under the target of freedom fighters, the latter attacked them, triggering a fierce gunfight with Pakistan raiders. At least 30 Pakistan raiders are killed while a freedom fighter martyred.
• Captain Mahfuz and his associate freedom fighters attack on the position of Pakistan soldiers at Amlika near Upendralal Chakma BOP. A company of Guard-4 of Indian army led by Lt Col Himmat Sihngh supports the freedom fighters with mortars and MG. At least 25 Pakistan soldiers are killed while a freedom fighter martyred and two others wounded. Remaining Pakistan soldiers manage to flee and head to Shuvapur. Freedom fighters free the area on this day.
• A six member guerilla team destroys Sayedabad bridge in Dhaka suspending the road communication of Pakistan solders on the route.
• Freedom fighters attack the Mallikbari camp of Pakistan militia and kill four of them and wound three others.
• Pakistani soldiers take preparation to hold a meeting of peace committee at their camp in Butchi village of Laksam Police Station. On information, freedom fighters attack the camp suspending the meeting. Five Pakistan soldiers, nine policemen, and 20 Razakars wounded in the attack.
August 30, 1971

• A team of 50 freedom fighters led by Subedar Abdul Wahab and Subedar Shamsul Haque attack on the position of Pakistan raiders and kill 16 Pakistani soldiers including a captain, 29 Razakar members. Freedom fighters capture seven boats loading goods and huge arms from the spot.
• Pakistan raiders attack Muktibahini camp near Sonapur and Gopalpur. A bloody clash take place after the freedom fighters retaliated with firearms. 40 Pakistani raiders are killed while a freedom fighter sacrificed his life in the battle.
• Freedom fighters attack Pakistan militia when they came under the range of ambush at Chaddhagram of Laksam and kill 20 soldiers and wound many others.
• Pakistan soldiers attack Araihajar Police Station and capture all the arms. The guard of the police camp died in the attack.
August 31, 1971

• Muktibahini Guerilla team launches an attack at Shibpur Police Station and set fire on a revenue office there. They also seize eight rifles, five shooter guns and 40 rounds of bullets from the police station.
• A guerilla team ambushes a team of Pakistani occupation forces near Putiyar. At one stage, the occupation forces are driven out from Narsindi in the face of massive resistance. Around 33 Pakistan soldiers including Punjab Regiment Captain Selim are killed during the four-hour-long fight.
• The Pakistani forces along with some local collaborators from Sunamganj reach Chirmisi bazar by 8 to 9 boats from Jaganathpur around 9 to 10:00am. The peace-loving people of Chhirmisi village are gathered at Chhirmisi High School ground in line with the directives of Razakars and Al-Badars. The barbaric occupation forces take the educated villagers and youths to another room and tie their hands behind their arms. Later, Razakar and Al-Badar men get them up on the boats in 15 to 16 groups and kill them by indiscriminate firing. They also fire some of the groups by making a queue with them beside nearby ponds. The occupation forces kill around 126 people of the village. Apart from this, they start destructive activities. They pour kerosene to around 250 shops of the Chirmisi Bazar and set those on fire. Razakar and Al-Badar men loot and torch on the houses of the innocent people of the village.
• US Senator Edward Kennedy, in a statement in New York, says that the US should cut its diplomatic ties with Pakistan if the country does not reach a peaceful political solution instead of launching military aggression.
• President Yahya appoints Dr MM Malik and Lt Gen Amir Abdulla Niazi as governor and military rule administrator respectively. But the military forces will discharge their duties following the previous path despite appointing nongovernment governor.

১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
•  মুক্তিবাহিনীর প্লাটুন কমান্ডার আইয়ুব আলী ও সেকশন কমান্ডার আমজাদ হোসেন ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানায় পাকবাহিনীর মল্লিকবাড়ি ঘাঁটি আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ১২ জন রাজাকার নিহত ও কয়েকজন আহত হয়।
• ৮নং সেক্টরের বনগাঁও সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের রঘুনাথপুর ঘাঁটির ওপর গোলা আক্রমণ চালায়। এতে পাকসেনারা নিশ্চুপ থাকে। এ আক্রমণে পাকসেনাদের ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
• ৮নং সেক্টরের শিকারপুর সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনী ২ ইঞ্চি মর্টার ও এস.এল.আর-এর সাহায্যে পাকসেনাদের মহেশকান্দি ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়। এতে পাকসেনারা ৩ ইঞ্চি মর্টার ও এমএমজি’র সাহায্যে পাল্টা আক্রমণ চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে পাকবাহিনীর ৫ জন হতাহত হয়। মুক্তিবাহিনী কোন ক্ষতি ছাড়াই নিরাপদে নিজ ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
• মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল ঢাকা-দাউদকান্দি সড়কে বারুনিয়া ও ভবেরচর সেতু দুটি বিস্ফোরক লাগিয়ে বিধ্বস্ত করে। এতে পাকহানাদারদের ঢাকা-কুমিল্লা যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।
• ভারতের নয়াদিল্লীতে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ মিশনের উদ্বোধন করা হয়।
• প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া প্যারিস থেকে প্রকাশিত ‘লা ফিগারো’ পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেন, ‘ভারত যদি এতে বাড়াবাড়ি করে তবে সর্বাত্মক যুদ্ধ করতে হবে। ’তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু সীমান্ত ছাড়া সব জায়গাই এখন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে’। এক প্রশ্নের জবারে তিনি জানান, আওয়ামী লীগ বাতিল করে দেশদ্রোহীদের বিতাড়িত করেছি।’
• প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ৭৭নং সামরিক আদেশ পুনর্গঠন করে ৮৯ নং বিধি জারি করে। এই এদেশে বলা হয়, কোনো লোক এমন কোনো গুজব বা সামরিক আইনের সমালোচনা করতে পারবে না, যাতে পাকিস্তানের অখণ্ডতা কিংবা সংহতি বিনষ্ট হয়।
• ঢাকার সামরিক কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), আবদুর রাজ্জাক (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), সারোয়ার মুর্শেদ (ইংরেজী), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাযহারুল ইসলাম (বাংলা), বাংলা একাডেমীর আবু জাফর শামসুদ্দিন ও ১৩ জন সি.এস.পি অফিসারকে সামরিক আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দেয়।
২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল নারায়ণগঞ্জ-দাউদকান্দি সড়কে গজারিয়াতে পাকসেনাদের অবস্থান-চৌকি আক্রমণ করে। এক ঘণ্টাব্যাপী এ যুদ্ধে ৩ জন ইপকাফ সৈন্য নিহত ও একজন বন্দী হয়। গেরিলারা চৌকি থেকে ৫টি রাইফেল ও ১৫০ রাউন্ড গুলি দখল করে।
• ২নং সেক্টরে পাকবাহিনী নৌকাযোগে চারদিকে আগুন জ্বালাতে জ্বালাতে চালনায় মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের দিকে অগ্রসর হয়। পাকসেনারা মুক্তিবাহিনীর অ্যামবুশ দলের আওতায় এলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। এতে তিনটি নৌকা পানিতে ডুবে যায় এবং বহু সৈন্য নিহত হয়। শেষে পাকসেনারা আর্টিলারির সাহায্যে পাল্টা আক্রমণ চালালে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাহার আলী শহীদ ও আব্দুস সাত্তার আহত হন।
• সিলেটে মুক্তিবাহিনীর ৪৫ জন যোদ্ধার একটি দল কোনাগ্রাম ও বিয়ানীবাজার এলাকায় এক অভিযান চালায়। এ অভিযানে ৩ জন রাজাকার ও একজন দালাল নিহত হয়।
• ৬নং সেক্টরে কোম্পানি কমান্ডার হারেস উদ্দিন সরকারে নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর শঠিবাড়ি বন্দর ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা পাকহানাদার অবস্থানের ৬০০ গজের মধ্যে এগিয়ে এলে এস.এল.আরÑএর সাহায্যে আক্রমণ শুরু করলে পাকসেনারা শেল ও রকেটের সাহায্যে পাল্টা আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণ সমস্ত দিন অব্যাহত থাকে।
• বগুড়া জেলার গাবতলি থানার জাতহলিদা গ্রামে পাকহানাদাররা অতর্কিত হামলা চালায়। সৈয়দ আহসান হাবিব দিপুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দল পাল্টা গুলিবর্ষণ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে একজন পাকসৈন্য নিহত হয়। পাকসৈন্যরা ৫ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে।
৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• ৮নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের ভোমরা বিওপি অবস্থানের ওপর প্রচণ্ড গুলিবর্ষণ করে। এই আক্রমনে ৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা কোন ক্ষতি স্বীকার না করেই নিজ ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
• ৭নং সেক্টরে ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন চৌধুরীর মুক্তিযোদ্ধাদল বাজুবাকায় শত্র“ অবস্থানের ওপর অভিযান চালায়। এতে ৩৪ জন রাজাকার নিহত ও ১২৪ জন আহত হয়।
• সিলেটে পাকহানাদার বাহিনী কুমারসাইল মুক্তিযোদ্ধা ঘাঁটির ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সঘর্ষ হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধাদের চাপের ওপর পাকসেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
• নারায়ণগঞ্জ-দাউদকান্দি সড়কে গজারিয়াতে ১১ জন রাজাকার ১০টি রাইফেল ও ২০০ রাউণ্ড গুলিসহ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
• মুক্তিবাহিনীর সেকশন কমান্ডার আমজার হোসেনের নেতৃত্বে ১৬ জন যোদ্ধার একটি দল ভালুকা থানার ভরাডুবা গ্রামে একদল রাজাকারের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে ৫ জন রাজাকার নিহত হয়।
• ডা. এ. এম. মালিক গভর্নর ভবনের দরবার কক্ষে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে পূর্ব পাকিস্তানের নতুন গভর্নর হিসেবে শপথ নেন। শপথ বাক্য পাঠ করান প্রদেশের প্রধান বিচারপতি বি.এ. সিদ্দিকী। এই অনুষ্ঠানে লে. জে. এ. কে নিয়াজীসহ উচ্চপদস্থ পাকিস্তানি সামরিক ও বেসামরিক অফিসারগণ উপস্থিত হন।
• পাকিস্তান জাতীয় লীগের সভাপতি আতাউর রহমান খান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার তেকে মুক্তিলাভ করেন। গত ১৪ জুন ধামরাইস্থ গ্রামের বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
• পিডিপি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদগুলোর নির্বাচন বাতিল এবং নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত একটি অন্তবর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠনের আহ্বান জানান।
৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• ২নং সেক্টরে পাকহানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর চালনা ও শীতলা অবস্থানের ওপর দু’দিক থেকে আক্রমণ চালায়। মুক্তিবাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়। সমস্তদিন যুদ্ধের পর মক্তিযোদ্ধাদের চাপের মুখে পাকসেনা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয় এবং পিছু হটতে বাধ্য হয়। পরাজয়ের গ্লানিতে পশ্চাদপসরণকারী পাকসেনা তীব্র আক্রোশে ব্রাহ্মণপাড়া, ছোট চাঁদলা এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেয় এবং নিরীহ জনসাধারণকে হত্যা করে।
• সিলেটে আমলসিদ মুক্তিঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর দুই প্লাটুন যোদ্ধার ওপর পাকহানাদাররা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের সাহায্যে তীব্র আক্রমণ চালায়। এতে পাকবর্বরদের শেলিংয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক ও আকমল আলী শহীদ হন এবং একজন বীর যোদ্ধা আহত হন।
• মুক্তিবাহিনীর গেরিলা সৈয়দ আহসান হাবিব দিপুর নেতৃত্বে ৬ জন পাকপুলিশকে নদী পথে বগুড়া থেকে সরিয়াকান্দি খাদ্য নিয়ে যাওয়ার পথে ফুলবাড়ি ঘাটে আক্রমণ করে। এই আক্রমণে দুইজন পুলিশ নিহত হয়। বাকী চারজন পুলিশ পালাতে গিয়ে জনসাধারণের হাতে ধরা পড়ে ও নিহত হয়। গেরিলারা কিছু অস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী দখল করে।
• ৬নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী সুবেদার মেজর আরব আলীর নেতৃত্বে পাকসেনাদের নাগেশ্বরী অবস্থানের ওপর ঝাটিকা আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ৫জন পাকসেনা নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা কোন ক্ষতি ছাড়াই নিজ ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
• ৮নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের ইছাখালী বিওপি আক্রমণ করে। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ৩ জন সৈন্য নিহত হয়।
• পাকিস্তান সরকার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের পেনশন বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশ সরকার আবার তা চালু করেন। কবির কলকাতার বাসভবনে অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলাদেশের হাই কমিশনার এম. হোসেন আরী কবিকে ২১০০ রুপির একটি চেক প্রদান করেন।
• রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে ঘোষণা করা হয় : প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান সকলের প্রতি সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করেছেন। পূর্ব পাকিস্তানে সাম্প্রতিক গোলযোগের সময় গত ১ মার্চ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যারা অপরাধ করেছেন অথবা যাদের প্রতি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েচে তাদের সবাইকে ক্ষমা করা হয়েছে। আগামীকাল থেকে কার্যকর এই সাধারণ ক্ষতা সশস্ত্র বাহিনী, ইপিআর, পুলিশম, মুজাহিদ ও আনসারসহ সকলের প্রতি প্রযোজ্য হবে।
৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• কুষ্টিয়ায় মুক্তিবাহিনী সদর থানার বংশীতলা আখ ক্রয় কেন্দ্রের পাশে পকসেনা বোঝাই ৬/৭টি ট্রাককে আক্রমণ করে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল সঘর্ষ হয়। এ যুদ্ধে ৬০ জন পাকসেনা নিহত হয়। এই যুদ্ধ ‘বংশীতলার যুদ্ধ’ নামে খ্যাত।
• মুক্তিবাহিনী চট্টগ্রামের কাছে রাজাকার ক্যাম্পের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে ৬ জন রাজাকার নিহত ও অনেকে গুরুতরভাবে আহত হয়।
• সিলেটে তাজপুর মুক্তাঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের ওপর পাকসেনারা দুইবার আক্রমণ চালায়। দুইবারই পাকসেনারা মুক্তিবাহিনীর পাল্টা আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে পিছু হটতে বাধ্য হয়। এই সংঘর্ষে একজন পাকহানাদার ও ৬ জন রাজাকার নিহত হয়।
• এম. এ জিন্নাহর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদল চট্টগ্রাম মহানগরীর দিকে অগ্রসর হলে মীরশ্বরাই এলাকায় কয়েক দফায় রাজাকার বাহিনী ও পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এতে অনেক রাজাকার ও পাকসেনা নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর এ দলের বিশেষত্ব হচ্ছে শুধু দলনেতা ছাড়া আর সবার বয়স দশ থেকে পনের বছরের মধ্যে।
• বাকেরগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গোপন আস্তানায় রাজাকার, আলবদর ও পাকিস্তানি হানাদারদের সম্মিলিত একটি দল অতর্কিতে হামলা চালায়। এতে ৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন আস্তানার সন্ধান দেয় ঘাতকদের সহযোগী স্থানীয় দালাল জোনাব আলী।
• দিনাজপুরের গোদামারি-বড়কথা এলাকায় মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধে ৮ জন পাক হানাদার নিহত হয়।
• ৬নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী দিমপাড়া এলাকায় পাকবর্বরদের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে ৪ জন পাকসৈন্য নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদে নিজ ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
• ৮নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী গোয়ালহাটি এলাকায় পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে এক দুঃসাহসিক অভিযান চালায়। এতে পাকহানাদার বাহিনীর ৫ জন সৈন্য নিহত ও ৬ জন আহত হয়।
• পাকিস্তানের সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় : যেসব এম.এন.এ; এম.পি.এ; সরকারি কর্মকর্তা ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে সাধারণ ক্ষমা প্রযোজ্য হবে না।
৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• ২নং সেক্টরে পাকসেনাদের একটি শক্তিশালী দল লঞ্চে মাদারীপুরের দিকে তৎপরতা আরো বাড়ানোর জন্য অগ্রসর হয়। এই খবর পেয়ে মুক্তিবাহিনীর ২০ জনের একটি গেরিলা দল পালং থানার রাজগঞ্জের কাছে নদীর পাড়ে অ্যামবুশ পাতে। সকাল ১০ টায় লঞ্চটি অ্যামবুশের আওতায় এলে গেরিলারা পাকসেনাদের ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। শেষে উপায়ন্তর না দেখে পাকসেনারা লঞ্চে করে পালিয়ে যায়। এই সংঘর্ষে ১২ জন পাকসেনা নিহত ও অনেক আহত হয়।
• সিলেটে পাকহানাদার বাহিনী ভোগা ও করমপুর গ্রামে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যুহ্যের ওপর তীব্র হামলা চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ শুরু করলে উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে পাকবাহিনীর ৩ জন সৈন্য ও ৪ জন রাজাকার নিহত হয়।
• ৭নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকহানাদার বাহিনীর প্রেমতলী অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে ২ জন পাকসৈন্য ও ২ জন রাজাকার নিহত হয় এবং ৭ জন আহত হয়।
• চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ শেষে কয়েকজন পাকসেনা অফিসার হেঁটে যাওয়ার সময় পোলো গ্রাউন্ডের প্রবেশ মুখে এম.এ. জিন্নাহর মুক্তিযোদ্ধা দল তাদের ওপর গ্রেনেড আক্রমণ চালায়। এতে ৩ জন পাকসেনা অফিসার নিহত হয়।
• ফেনীতে মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর দুই প্লাটুন সৈন্যকে সিলোনিয়া নদী অতিক্রমের সময় আক্রমণ করে। এতে পাকবাহিনীর ১৫ জন সৈন্য নিহত হয়। বাকী সৈন্যরা মর্টারের শেলবর্ষণ করার মাধ্যমে নিজেদের বাঁচিয়ে পালিয়ে যায়।
• ৬নং সেক্টরে লে. কর্নেল দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ৩০ জনের একটি মুক্তিযোদ্ধা দল মোগলহাট রেল লাইনের ওপর অ্যান্টি ট্যাংক মাইন, গ্যালাটিন ও পি.ই.কে বসিয়ে অবস্থান নেয়। পাকসেনা বোঝাই একটি ট্রেন অগ্রসর হলে মাইনের আঘাতে ইঞ্জিনসহ সামনের কযেকটি বগী বিধ্বস্ত হয়। পাকসেনারা সঙ্গে সঙ্গে মক্তিযোদ্ধাদের তিনদিক থেকে ঘিরে ফেললে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে। এই সংঘর্ষে পাকবাহিনীর ৫ জন সৈন্য নিহত ও অনেক আহত হয়। অপরদিকে ২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও লে. কর্নেল দেলোয়ার হোসেনসহ ৪ জন যোদ্ধা আহত হয়।
• ঢাকায় সামরিক আদালত ৪৮ জন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যকে সামরিক আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দেয়।
• সিলেটে শান্তি কমিটির আহবায়ক শহীদ আলীর সভাপতিত্বে এক সভায় ব্রিগেডিয়ার ইখতেখার আহম্মদ রানা প্রশংসনীয় কাজের জন্য রাজাকার সদস্য আদম মিয়া, ওসমান গনি ও আবদুর রহমানকে টিক্কা কানের দেয়া পদক ও প্রশংসাপত্র প্রদান করে। সভায় নিহত দালাল তালাতের নামে হরিপুরের নামকরণ করা হয় ‘তালাতনগর’।
৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• ৮নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর ঝাউডাঙ্গা অবস্থানের ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালায়। এতে পাক হানাদারবাহিনীর ২ জন পাঞ্জাবি পুলিশ নিহত ও ৪ জন আহত হয়। এই অভিযানে মুক্তিযোদ্ধা দল ৬টি রাইফেল ও কিছু গোলাবারুদ দখল করে।
• ৬নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী জগদলহাটে পাকসেনাদের অবস্থানের ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। এ সংঘর্ষে পাকসেনারা পর্যুদস্ত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধারা জগদলহাট দখল করে। কিছুক্ষণ পর পাকহানাদার বাহিনী গোলন্দাজ ও জিপে বসানো মেশিনগানের সাহায্যে মুক্তিবাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। পাকসেনাদের এই আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণ করে।
• ৮নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী মধুখালী-দোসাতিনা সড়কে পাক সেনাবাহিনী ও রেঞ্জারদের সম্মিলিত একটি দলকে অ্যামবুশ করে। এই অ্যামবুশে পাকবাহিনীর ২৬ জন সৈন্য নিহত ও ৬ জন আহত হয়।
• ৮নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর অ্যামবুশ দল গোয়ালগ্রামে পাকবাহিনীর এক কোম্পানি সৈন্যের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এতে ১৯ জন পাকসৈন্য নিহত ও অনেক আহত হয়। অপরদিকে মুক্তিবাহিনীর ৩ জন যোদ্ধা গুরুতর আহত ও ৫ জন নিখোঁজ হয়।
• কোম্পানি কমান্ডার হারেসউদ্দিনের নেতৃত্বে ৩০০ জন যোদ্ধার একটি দল দীর্ঘ তিনদিন ব্যাপী যুদ্ধের পর রায়গঞ্জ তানার শঠিবাড়ি বন্দর হানাদার মুক্ত করে।
• ঢাকায় পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মুসলিম লীগ নেতা খান এ. সবুর বলেন, পাক-ভারত যুদ্ধ বাধলে তা বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেবে। ভারত পাকিস্তানের দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনীকে মোকাবেলা করতে পারবে না বলেই পূর্ব পকিস্তানে মুক্তিবাহিনীর নামে পঞ্চম বাহিনী গড়ে তুলেছে। মুক্তিবাহিনী কাদের বিরুদ্ধে লড়াই? দেশতো মুক্ত।
৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
•  কুমিল্লায় মুক্তিবাহিনীর সেনেরহাট অবস্থানের ওপর পাকহানাদার বাহিনী কামান, মর্টার ও রকেট লাঞ্চারের সাহায্যে প্রবল হামলা চালায়। মুক্তিবাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালালে হামলা চালায়। মুক্তিবাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধ হয়। সমস্ত দিন যুদ্ধের পর সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধাদের চাপে অনেক পাকসৈন্য হতাহত হয়। অপরদিকে মুক্তিবাহিনীর কয়েকজন বীরযোদ্ধা শহীদ ও আহত হন।
• যশোর সদর থানায় মুক্তিবাহিনীর তিন দল যোদ্ধা পাকবাহিনীর বারিনগর ঘাঁটি আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ৩১ জন রাজাকার নিহত ও ৩৫ জন রাজাকার আহত হয়। কোন ক্ষতি ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধা দল নিরাপদে নিজ ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
• সিলেটে পাকহানাদারবাহিনী মুক্তিবাহিনীর বগাগ্রাম অস্থানের ওপর ৩ ইঞ্চি মর্টারের সাহায্যে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে মুক্তিবাহিনীর ৬ জন বীরযোদ্ধা আহত হয়।
• সুনামগঞ্জে পাকহানাদার বাহিনী স্থানীয় রাজাকার বাহিনীসহ রাণীগঞ্জ বাজার এলাকায় প্রবেশ করে এবং রাণীগঞ্জে শ্রীরামসির মতো পাইকারি হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে ৩০ জন নিরীহ মানুষ শহীদ হন। শুধু তাই নয় পাক বর্বররা রাণীগঞ্জ বাজারের প্রায় দেড়শ দোকান আগুন জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করে।
• বাংলাদেশ ফোর্স হেডকোয়ার্টার-এর গণসংযোগ বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘যুদ্ধ বুলেটিন’- এ বলা হয় : বিভিন্ন সেক্টরের যুদ্ধসমূহে মুক্তিবাহিনী আজ ১১৯ জন শত্র“সৈন্যকে নিহত করেছে।
• জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের জন্য পাক প্রতিনিধি দলের নাম ঘোষণা করা হয়। দলের সদস্যরা হচ্ছেন : পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আলী (দলনেতা), শাহ আজিজুর রহমান, জুলমত আলী কান, বিচারপতি জাকির উদ্দিন, ব্যারিস্টার কামাল ফরুকী, ডা. বেগম এনায়েতউল্লাহ, মিসেস রাজিয়া ফয়েজ, ড. ফাতেমা সাদিক, এড: এ.টি. সাদী, এড: কে. বাবর প্রমুখ।
• মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত ইংরেজী সাপ্তাহিক ‘বাংলাদেশ’- এর ‘পাগলা কুকুর হইতে সাবধান’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয় : জেনারেল ইয়াহিয়অ খান তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। পাকিস্তানি সৈন্যরা বিচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধ করলে ও তারা তাদের পরিকল্পামত এগুতে পারেনি।

৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• কুমিল্লায় পাকহানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর মন্দভাগ অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিবাহিনী বীর বিক্রমে পাকসেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করে। পাকবাহিনীর দুই কোম্পানি সৈন্য পরাজয়ের আক্রোশে ফেরার পথে মুক্তিবাহিনীর মইনপুর অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। প্রায় দু’ঘণ্টার এ যুদ্ধে ৪০ জন পাকসৈন্য হতাহত হয়। অপরদিকে ৯জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। পকিস্তানি গোলন্দাজ বাহিনীর প্রবল গোলাবর্ষণে মুক্তিযোদ্ধা দল তাদের অবস্থা পরিত্যাগ করে ৬০০ গজ পিছিয়ে বায়েকের নিকট জেলা বোর্ডের রাস্তায় নতুন অবস্থান স্থাপন করে।
• সিলেটে মুক্তিবাহিনী শাহবাজপুর – বিয়ানীবাজার সড়কে পাকহানাদার বাহিনীর টহলদার দলকে অ্যামবুশকরে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
• ৮নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর ৪০ জন যোদ্ধার একটি দল সাইলকুপা থানার আলফাপুর গ্রামে পাকবাহিনীর এক কোম্পানি সৈন্যকে আক্রমণ করে। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ৫৩ জন সৈন্য ও ২০ জন রাজাকার নিহত হয়। অপরদিকে একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা আহত হন। মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের কাছ থেকে ১৬ টি রাইফেল ও ৭টি গোলার বাক্স দখল করে।
• পাকহানাদার বাহিনী দালাল রাজাকারদের নিয়ে কয়েকটি নৌকায় করে সুনামগঞ্জ সদর থানার ভাঁদের টেক মুক্তিবাহিনী অবস্থানের দিকে অগ্রসর হয়। এ খবর পেয়ে মুক্তিবাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয় এবং তাদের আওতায় আসার সাথে সাথে পাকবর্বরদের ওপর গোলাবর্ষণ শুরু করে। প্রায় দেড় ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাকসেনারা সম্মুখে এগুতে না পেরে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর অনেক সৈন্য হতাহত হয়। অপরদিকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
• ৩নং সেক্টরে তেলিয়াপাড়ায় মুক্তিবাহিনী পাকসৈন্যদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধে ৯ জন পাকসেনা নিহত হয়।
• ঔপনিবেশিক দেশ ও জনগণকে স্বাধীনতা দানের ঘোষণা কার্যকরিকরণ সংক্রান্ত জাতিসংঘ বিশেষ কমিটির সভায় বিশ্বশান্তি পরিষদের ভারতীয় প্রতিনিধি কৃষ্ণ মেনন বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনে ঐ কমিটির হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, বাংলাদেশে ঔপনিবেশিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
• বাংলাদেশ ফোর্স হেডকোয়ার্টার – এর গণসংযোগ বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘যুদ্ধ বিষয়ক বুলেটিন’ এ বলা হয় : মুক্তিবাহিনী শাসিআলী, গাজীপুর পানছড়া, জামবাড়ি ও কুটিশ্বরে শত্র“বাহিনীর ৪৫ জনকে নিহত এবং ১৫ জনকে আহত করে।
• পূর্ব পাকিস্তান জামায়াত ইসলামীর আমীর গোলাম ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ প্রশ্ন ও বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিশালী লবিকে মোকাবেলা করার জন্য পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলে হামিদুল হক চৌধুরী, মৌলবী ফরিদ আহমদ ও বিচারপতি হামুদুর রহমান, ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, এ. কিউ.এম শফিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার আখতার উদ্দিন, আব্দুস সবুর ও ফজলুর কাদের চৌধুরীকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।
১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল চৌদ্দগ্রামে পাকহানাদার বাহিনীর হেডকোয়ার্টারের ওপর মর্টারের সাহায্যে আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ৩০/৪০ জন পাকসৈন্য হতাহতহয়। পাকসেনারা কামানের সাহায্যে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের দিকে গুলি চালালে কিছু বেসামরিক লোক নিহত হয়।
• ২নং সেক্টরের বেলুনিয়ায় পাকহানাদার বাহিনী মহুরী নদী পার হয়ে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের ওপর প্রচণ্ড কামান আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা সমস্ত দিন যুদ্ধের পর পাকসেনাদের এই আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হয়।
• ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী নয়াপাড়ার পাকসেনা ঘাঁটি আক্রমণ করে। এতে পাকসেনারা পর্যুদস্ত হয়ে অবস্থান ছেড়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা অনেক অস্ত্রশস্ত্র দখল করে।
• ময়মনসিংহে পাকহানাদার বাহিনী খাদ্য সম্ভার বোঝাই করে পাঁচটি বড় বড় নৌকায় ভালূকার দিকে অগ্রসর হলে কোম্পানি কমান্ডার চাঁন মিয়ার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দল ঝালপাজা গ্রামে তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে ৪ জন পাকসেনা নিহত ও অনেক আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা নৌকাসহ ৫৭০ মণ আটা ও ২০ মণ চিনি হস্তগত করে। এই আটা ও চিনি পরে রাজৈর ইউনিয়নের গরীব-দুঃখীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
• চাঁদপুরের হাজিগঞ্জে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল পাকবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। গেরিলা যোদ্ধারা পাকসেনাদের দু’দিক থেকে আক্রমণ চালিয়ে পর্যুদস্ত করে। এতে ৩০ জন পাকসৈন্য নিহত হয় এবং বাকী সৈন্য অবস্থান ছেড়ে পালিয়ে যায়। গেরিলা যোদ্ধারা প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করে।
• ঢাকায় সামরিক আদালত রাষ্ট্রদ্রোহিতা, অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, অননুমোদিত অস্ত্র বিতরণ, রাষ্ট্রবিরোধীদের ট্রেনিং প্রদান প্রভৃতি অভিযোগে আওয়ামী লীগের ১৪৫ জন এম.পি.এÑকে সামরিক আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দেয়।
• লে. জেনারেল নিয়াী গাজীপুর অস্ত্র তৈরির কারখানা পরিদর্শন করে অস্ত্রের প্রথম চালান তৈরি করার জন্য কারখানার শ্রমিক কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এতো শ্রমের তৈরি অস্ত্র দেশের শত্র“দের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হবে।
• প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ২১নং সামরিক আদেশের পুনর্গঠন করে ২৪নং সামিরক আদেশ জারি করেন।
১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• আড়াইহাজার থানার কামানদি চরে পাকসেনারা ঘাঁটি স্থাপন করে এবং নিকটস্থ গ্রাম থেকে মেয়েদের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে অত্যাচার চালায়। এই সংবাদ পেয়ে মুক্তিবাহিনীর ২৯ জনের একটি গেরিলা দল পাকসেনা ঘাঁটি আক্রমণ করে। ৩-৪ ঘণ্টা যুদ্ধের পর পকসেনারা ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যায় এই আক্রমণে ৫ জন পাকসেনা ও ৬ জন রাজাকার নিহত হয়। গেরিলারা ক্যাম্প থেকে মেয়েদের উদ্ধার করে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেয়।
• কুমিল্লায় মুক্তিবাহিনী লক্ষ্মীপুরস্থ পকসেনা ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ২টি বাঙ্কার ধ্বংস হয় এবং ১১ জন পাকসৈন্য নিহত ও ৭ জন আহত হয়।
• ২নং সেক্টরে চতুর্থ বেঙ্গলের ‘ডি’ কোম্পানি দুই প্লাটুন যোদ্ধা বগাবাড়ির কাছে পাকসেনাদের অ্যামবুশ করে। এই সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণের মুখে পাকসেনারা টিকতে না পেরে পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়। এতে ১৫ জন পাকসেনা নিহত ও ২ জন আহত হয়।
• ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পরশুরামের কাছে পাকবাহনিলি ঘাঁটির ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ৭ জন পাকসেনা নিহত ও ১৫ জন আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদে নিজ ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
• মুক্তিবাহিনী আখাউড়ার কাছে পাকসেনা বোঝাই একটি ট্রেনকে অ্যামবুশ করে। এই অ্যামবুশে ট্রেনের আরোহী পাক সামরিক অফিসার, ইঞ্জিন ড্রাইভার ও বহু সংখ্যক রাজাকার নিহত হয়।
• ঢাকার একজন সামিরক মুখপাত্র স্বীকার করেন মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা এখন পথে পথে মাইন পুঁতে রাখছে। রাজাকার ও অন্যান্য আধা-সামরিক বাহিনরি ওপর চোরাগোপ্তা আক্রমণ চালাচ্ছে।
• যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্স পাকিস্তানে উন্নয়ন সাহায্য অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা অনুমোদনের জন্য মার্কিন কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তান সরকারের প্রতি এমন পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছি যাতে শরণার্থীরা স্বদেশে ফিরে আসতে পারেন এবং কার্যকরভাবে সার্বিক কর্মসূচী শুরু করা যেতে পারে।
• বাংলার বাণী পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয় : সাতারার উত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে হানাদর সেনাদের একটি জিপ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় এবং জিপের ৪ জন আরোহী শত্র“সেনা নিহত হয়।
১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

o ৮নং সেক্টরের ভোমরা নামক স্থানে মুক্তিবাহিনী পাকহানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ২ জন পাকসেনা নিহত হয়।
o মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা জেলার গুথুমা নদীতে টহলরত পাকসেনাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ৪ জন সৈন্য হতাহত হয়।
o ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর মান্দাবাগ এরাকায় পাকহানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায় এই আক্রমণে ১৫ জন পাকসেনা নিহত হয়।
o ১নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী সমরকান্দ এলাকায় পাকবাহিনীর একটি টহলদার দলকে অ্যামবুশ করে। এই অ্যামবুশে ৫ জন পাকসৈন্য হতাহত হয় এবং বাকী সৈন্য যুদ্ধ না করেই পিছু হটে।
o ফেনীর ছাগলনাইয়ায় মুক্তিবাহিনীর পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে ২ জন পাকসেনা নিহত ও অপর ২ জন আহত হয়।
o মুক্তিযোদ্ধারা সাটানি, নারায়ণঘাট, আবাদের হাট ও কাকভাঙ্গায় পাকবাহিনরি সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। দীর্ঘ গোলাবিনিময়ের পর ১০ জন পাকসৈন্য নিহত হয়। অপরদিকে ২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
o পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির সহ-সভাপতি মাহমুদ আলী পাকিস্তান সরকারের বিশেষ দূত হিসেবে ইউরোপ ও আমেরিকা সফর শেষে ঢাকা আসেন। তিনি বলেন, ইউরোপের বেতার, টিভি, সংবাদপত্রগুলো একই সুরে প্রচার করে চরেছে পূর্ব পাকিস্তানে একটা অঘটন ঘটে গেছে। পাকিস্তানের সাম্প্রতিক নির্বাচনে যে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে তাদের ক্ষমতা না দিয়ে সেনাবাহিনী সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের জনগণের দাবি নস্যাৎ করতে চায়। কারণ নির্বাচনের ফলাফল পশ্চিম পাকিস্তানিদের মনঃপুত হয়নি।তিনি বলেন, ইউরোপের বুদ্ধিজীবীরা আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন, যা ঘটবার ঘটেছে। এখন যারা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে তাদের নেতার সাথে আপোস করে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।তিনি আরো বলেন, পশ্চিমা দেশসমূহে এই ধারণ জন্মেছে যে, পাকিস্তানে নির্বাচনে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে তাদের সাথে আপোষ না করলে বর্তমানে সমস্যার সমাধান হবে না আমরা তাদের বলেছি নীতিগতভাবে আমরা এর বিরোধী নই। তবে নির্বাচনে যে দল জয়ী হয়েছে সেই দলের নেতা পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছেন। এমন নেতৃত্বের সাথে আপোস হতে পারে না। আজ তাঁর সঙ্গে যতি কোনো মীমাংসায় আসতে হয় তবে তা অখণ্ড পাকিস্তানের ভিত্তিতে হতে হবে।
১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• মুক্তিবাহিনী লে. মোরশেদের নেতৃত্বে আখাউড়াÑহরশপুর রেলওয়ে লাইনে মুকুন্দপুরের কাছে ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী মাইন পুঁতে তার সাথে বৈদ্যুতিক তার যোগ করে ৩০০ গজ দুরে রিমোট কন্ট্রোল স্থাপন করে অবস্থান নেয়। পাকবাহিনীর এক কোম্পানি সৈন্য বোঝাই একটি ট্রেন অ্যামবুশ অবস্থানের দিকে অগ্রসর হয়ে মাইনের উপরে এলে মুক্তিযোদ্ধারা সুইচ টিপে মাইন বিস্ফোরণ করে। এতে ইঞ্জিনসহ ট্রেনটি বিধ্বস্ত হয় এবং দুইজন অফিসারসহ ২৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। মুক্তিযুদ্ধে বৈদ্যুতিক প্রক্রিয়ায় ট্রেন ধ্বংস এটাই প্রথম।
• সিলেটে মুক্তিবাহিনীর ৫০ জন যোদ্ধার একটি দল পকসেনাদের শাহবাজপুর অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। ১০ মিনিট পর পাকসেনারা পাল্টা আক্রমণ চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে ১৫ জন পাকসৈন্য ও রাজাকার নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী অক্ষত অবস্থায় নিরাপদে নিজ ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
• ৭নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী রামচন্দ্রপুর পাকবাহিনীর প্রধান ঘাঁটি আক্রমণ করে। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ২০ জন সৈন্য ও ১২ জন রাজাকার নিহত এবং ১৩ জন সৈন্য আহত হয়। অপরপক্ষে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও দুইজন যোদ্ধা আহত হন।
• মুক্তিবাহিনী খুলনার হরিনগরে পাকবাহিনীর একটি গানবোট ও সৈন্য বোঝাই কিছু লঞ্চকে অ্যামবুশ করে। এই অ্যামবুশে পাকবাহিনীর গোনবোট আরোহী নিহত এবং রাডার এন্টিনা ধ্বংস হয়। পরে প্রচণ্ড গোলাবিনিময়ে পাকসেনাদের ৪টি লঞ্চ পানিতে ডুবে যায়।
• ৮নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী বানারীপাড়ায় পাকবাহিনীর কয়েকটি লঞ্চকে আক্রমণ করে। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ৩টি লঞ্চ পানিতে ডুবে যায় এবং ৪০ জন পাকসৈন্য নিহত হয়।
• কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি সম্মেলনে নিউজিল্যান্ডের প্রতিনিধি এইচ.সি. টেম্পেল্টন বলেন : ‘আাদের দেশের পক্ষ থেকে কমনওয়েলথ এবং যুক্তরাজ্যকে পূর্ব পকিস্তানের নাগরিকদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য অনুরোধ করছি। আমরা বিশ্বাস করি তাদের সরকার স্বীয় জনগণের অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সঠিক নীতি অবলম্বন করবে।’
• করাচীতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও পিপলস পর্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আরী ভুট্টোর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ঘটনাবলী নিয়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী কয়েসপুরের পাকসেনা অবস্থানের ওপর রকেট লাঞ্চারের সাহায্যে আক্রমণ চালায়। এতে পাকসেনাদের দুটি বাঙ্কার ধ্বংস হয় এবং ৮ জন পাকসৈন্য নিহত ও ৩ জন আহত হয়।
• মুক্তিবাহিনী কোম্পানীগঞ্জ থানার বসুরহাটের কাছে পাক মিলিশিয়াদের অ্যামবুশ করে। এই অ্যামবুশে পাক মিলিশিয়াদের একটি টয়টো জিপ ধ্বংস হয় এবং ৩০ জন সৈন্য হতাহত হয়। সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধা নুরুন্নবী আহত হন।
• মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের ফেনী অবস্থানের ওপর মর্টার আক্রমণ চালয়। এতে পাকসেনারা কামানের সাহায্যে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের দিকে পাল্টা আক্রমণ করে। দু’ঘণ্টা স্থায়ী এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর ১০ জন সৈন্য নিহত এবং ১৬ আহত হয়।
• পাকবাহিনীর প্রায় দুই ব্যাটালিয়ন সৈন্য একই সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর বিয়ানীবাজার, বড়লেখা জকীগঞ্জ থানা অবস্থানে ব্যাপকভাবে আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানদের সম্ভাব্য আক্রমণের জন্য প্রস্তুত না থাকায় তাঁরা বেশ কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং পিছু হটতে বাধ্য হয়। এই সঘর্ষে মুক্তিবাহিনীর ৭ জন যোদ্ধা শহীদ ও কয়েকজন আহত হয়।
• খুলনার আলফাপুর এলাকায় মুক্তিবাহিনী এক দুঃসাহসিক অভিযানে পাকসেনাদের ২৭ জন সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের কাছ থেকে ১৬টি রাইফেল ও ৭টি চাইনিজ গোলার বাক্স উদ্ধার করে।
• মুক্তিবাহিনী কুমিল্লার কসবা এলাকায় পাকসেনাদের অতর্কিতে আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ২জন পাকসৈন্য নিহত হয়।
• মুক্তিবাহিনী রাজশাহীর পাগলাদিয়ানহাটে পাকসেনা অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ৮ জন সৈন্য নিহত হয়।
• মুক্তিবাহিনীর ৩০০ সদস্যের একটি দল রাজশাহীর খানজাহানপুরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে শত্র“বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের কাছ থেকে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করে।
• ১নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনীর সেনা অফিসারদের সাথে বারতীয় সেনা কমান্ডার লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যোদ্ধাদের কর্মতৎপরতার বিষয়টি সবিস্তারে আলোচিত হয়।
• পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডা. আব্দুল মোতালেব মালিক বেতার ভাষণে বলেন : ‘জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত প্রতনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের উদ্যোগ শুরু করার উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট আমাকে এই প্রদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিযুক্ত করেছেন। আমি আপনাদের সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করছি এই জন্য যাতে প্রদেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়। আজকের যুবক শ্রেণিতো জানে না যে, নতুন এক জাতির বাসভূমি আমাদের এই পকিস্তানকে বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য আমাদের কত পরিশ্রম করতে হয়েছে। পরিশেষে আমি আরো বলতে চাই যে, আমার সরকার একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার। যে মুহূর্তে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে এবং নির্ধারিত কার্যক্রম অনুসারে উপনির্বাচন সমাপ্ত করা হবে, সেই মুহূর্তে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জনগণের সার্বভৌমত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হবে।
• প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া পাক-ভারত বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য তেহরানের উদ্দেশে যাত্রা করেন। বিমানবন্দরে তাকে অভিনন্দন জানান ইরানের শাহ রেজা পাহ্লভি।
১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• ১নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর ১০ জন যোদ্ধার একটি দল পরশুরামের আমজাদহাট এলাকায় পাকসেনাদের অ্যামবুশ করে। পাকসেনারা পাল্টা আক্রমণ চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে দু’ঘণ্টারও বেশি সময় যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধা নায়েক নাদিরুজ্জামান দুঃসাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করে তাঁর সতীর্থদের অ্যামবুশ অবস্থান ত্যাগ করতে সাহায্য করেন। এই সংঘর্ষে পাকবাহিনীর ৮ জন সৈন্য হতাহত হয়। অপরপক্ষের মুক্তিবাহিনীর একজন বীর যোদ্ধা আহত হন।
• মুক্তিবাহিনীর লক্ষ্মীপুরের পাকসেনাদের দুটি বাঙ্কার অতর্কিত আক্রমণ করে ধ্বংস করে দেয়। মুক্তিবাহিনী এই অভিযানে ৩ জন পাকসেনা নিহত ও ৮ জন আহত হয়।
• মুক্তিবাহিনী লক্ষ্মীপুর থানায় পাক পুলিশ ও রাজাকারদের চন্দ্রগঞ্জ প্রতাপ হাই স্কুল ঘাঁটি আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ৪০ জন পাকসেনা হতাহত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের চাপের মুখে পাকবাহিনী তাদের অবস্থান পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
• ২নং সেক্টরের সাতানি, নারায়ণহাট, আবেদারহাট ও কাকডাঙ্গায় মুক্তিবাহিনীর তিন কোম্পানি যোদ্ধা পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ১০ জন পাকসৈন্য নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। অপরদিকে পাকসেনাদের শেলের আঘাতে দুইজন বেসামরিক লোক আহত হয়।
• ৮নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী কুরাগাছি ইউনিয়ন কাউন্সিল অফিসে অবস্থানরত পাকবাহিনীর ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ৬ জন রাজাকার নিহত ও ২ জন আহত হয়।
• মুক্তিবাহিনী শালদা নদীর পাকসেনা ঘাঁটির ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ২০/২৫ জন পাকসেনা হতাহত হয় এবং পাকঘাঁটির ব্যাপক ক্ষতি হয়।
• তেহরানে পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও ইরানের শাহ রেজা পাহলভির মধ্যে পাক-ভারত পরিস্থিতি নিয়ে দু’দিনব্যাপী আলোচনা শেষে যুক্ত ইস্তেহার প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, ইরানের শাহ পাকিস্তানের সঙ্গে তার একাত্মতা প্রকাশ করছে।
• রয়টার পরিবেশিত খবরে বলা হয় : জাতিসংঘের পাকিস্তানের দূত আগাশাহী জাতিসংঘের বিশেষ কমিটির বৈঠকে বিশ্বশান্তি পরিষদের ভারতীয় প্রতিনিধি কৃষ্ণ মেননের দাবিকে ধৃষ্টতা হিসেবে মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, ‘মেনন শুধুমাত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে মুক্তি সংগ্রাম বলে চালানোর অপচেষ্টাই করছে না, জাতিসংঘ সনদের মূলনীতির বিরোধী কাজ করছে।’
• নূরুল আমীনের বাসায় পিডিপি’র কার্যকরী কমিটির ১৮ জন সদস্যের উপস্থিতিতে নূরুল আমীনের সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় মাহমুদ আলীকে পিডিপি পূর্ব পাকিস্তান শাখার সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়।
১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী কাযেমপুর পাকসেনা ঘাঁটি আক্রমণ করে। এই সংঘর্ষে পাকবাহিনরি ২০১ জন সৈন্য নিহত ও ৮৩ জন আহত হয় এবং ৭০টি পাকসেনা বাঙ্কার ধ্বংস হয়। অপরপক্ষে ১০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ৬ জন যোদ্ধা আহত হয়। মুক্তিবাহিনী কযেমপুর ঘাঁটি ও পাকসেনাদের প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র দখল করে।
• ৭নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী মর্টারের সাহায্যে শারদায় পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ৩০ জন সৈন্য ও রাজাকার নিহত এবং ৫০ জন আহত হয়।
• রাজশাহীতে মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর কানপুর অবস্থানের ওপর এক দুঃসাহসিক অভিযান চালায়। এই অভিযানে ২ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং পাকসেনা স্থাপিত ক্যাম্প ও ৭টি বাঙ্কার ধ্বংস হয়।
• কুমিল্লার চামুবসতিতে পাকবাহিনী আক্রমণ চালালে মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধারা তা প্রতিহত করে। এতে ৩ জন পাকসৈন্য নিহত ও ৫ জন আহত হয়।
• খুলনার ভোমরায় মুক্তিবাহিনী পাকসেনা অবস্থানের ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। এই সংঘর্ষে পাকবাহিনীর ৪ জন সৈন্য নিহত হয়।
• রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তান সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, বিলুপ্ত আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সামরিক ট্রাইব্যুনালে গোপন বিচারের কাজ শেষ হয়েছে।
• পিডিপি প্রধান নূরুল আমিন পিটিআই প্রতিনিধিকে জানান, তিনি প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে পশ্চিম পাকিস্তান যাচ্ছেন। তিনি এ আলোচনায় দুষ্কৃতকারীদের অত্যাচারে এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্যে আরও অর্থ বরাদ্দের দাবি করবেন বলে জানান।
• লে. জেনারেল নিয়াজী চট্টগ্রাম এলাকা সফর করেন। পরে তিনি রাঙ্গামাটি যান। সেখানে তাকে চাকমা প্রধান ও নির্বাচিত এম.এন.এ রাজা ত্রিদিব রায় অভ্যর্থ্যনা জানান।
• জামালপুর জেলায় ইসরামপুর থানা আলবদর ইনচার্জ এবং জেলা শান্তি কমিটির প্রচার সম্পাদক মুহম্মদ আব্দুলবারী দৈনিক সংগ্রামে এক চিঠিতে লেখেন, জামালপুরে পাকিস্তানপন্থী ও ইসলামপন্থী ছাত্ররা আলবদর বাহিনী গঠন করে দুষ্কৃতকারীদের জামালপুর, শেরপুর, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও নালিতাবাড়ি এলাকা থেকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।
• ‘জয়বাংলা পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয় : কুষ্টিয়ার বাবলা চড়া ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান তার অধীনস্থ ২২ জন রাজাকারকে সঙ্গে নিয়ে তাদের কাছে রক্ষিত বিপুল পরিমাণ রাইফেল, মেশিনগান, শটগান, স্টেনগানসহ মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।
• ‘কালান্তর’ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয় : গত ১৫ দিনে খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমার সাড়ে ৬৩ বর্গমাইল অঞ্চল থেকে মুক্তিবাহিনী খান সেনাদের হটিয়ে দিয়ে মুক্ত এলাকা স্থাপন করেছে।
১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডা. এ.এ. মালিক ১০ সদস্যের প্রাদেশিক মন্ত্রীসভার নাম ঘোষণা করেন। মন্ত্রীরা হলেন, রংপুরের আবুল কাশেম, বগুড়ার আব্বাস আলী খান, বরিশালের আখতার উদ্দিন খান, ঢাকার এ.এস.এম সোলায়মান, খুলনার মওলানা এ.কে.এম ইউসুফ, পাবনার মওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, কুষ্টিয়ার নওয়াজেশ আহমদ, নোয়াখালীর ওবায়দুল্লাহ মজুমদার, চট্টগ্রামের অধ্যাপক শামসুল হক ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আউংশু প্র“ চৌধুরী। আউংশু প্র“ চৌধুরী ব্যতিত বাকী ৯ জন মন্ত্রী শপথ গ্রহণ করেন।
• শিবালয় থানায় পাকহানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর গেরিলা ঘাঁটিতে ব্যাপক হামলা চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে কযেকঘণ্টা যুদ্ধ হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের চাপের মুখে পাকসেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এই সংঘর্ষে ১০ জন পাকসেনা ও ১১ জন রাজাকার নিহত হয়।
• ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের একটি শক্তিশালী দলকে মেহারী গ্রামে অ্যামবুশ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের আকস্মিক আক্রমণে পাকসেনারা দিকবিদিক হারিয়ে ফেলে এবং ছাত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। এই অ্যামবুশে ২১ জন পাকসেনা নিহত ও ৪৩ জন আহত হয়।
• ২নং সেক্টরে একদল মুক্তিযোদ্ধা সায়দাবাদের কাছে পাকসেনাদের একটি ঘাঁটিতে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে ২টি জিপ ও ১টি ৩টন গাড়ি ধ্বংস করে।
• ৮নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকহানাদারদের মসলিয়া ঘাঁটি আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ৭জন পাকসেনা নিহত হয়।
• ৮নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের পরাগপুর অবস্থানের ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ৬জন পাকসেনা নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা কোন ক্ষতি ছাড়াই নিরাপদে ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
• মুক্তিবাহিনী মৌলভীবাজারের লুবাচরা এলাকায় পাকসেনাদের বিরুদ্ধে এক দুঃসাহসিক অভিযান চালায়। এতে ২০ জন পাকসেনা নিহত ও ৩০ জন আহত হয়। অপরদিকে মুক্তিবাহিনীর ৩ জন বীর যোদ্ধা আহত হয়।
• ৮নং সেক্টরের গোজাডাঙ্গা সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর রাজাপুর বিওপি’র একদল সেনাকে গঙ্গাদেশ এলাকায় অ্যামবুশ করে। এই অ্যামবুশে ২ জন পাকসেনা নিহত ও ৩ জন আহত হয়।
• ‘খ’ অঞ্চলের সামিরক আইন প্রশাসক লে. জেনারেল নিয়াজী ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা সফর করনে। পরে তিনি কিশোরগঞ্জে তারাইলের রাজাকার আলবদরদের সঙ্গে মিলিত হন।
• পিডিপি প্রধান নুরুল আমিন ঢাকায় বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের অসামরিক সরকার গঠন করা হলেও আমরা এখনো বিপদমুক্ত হইনি। দুশমনের দল এখনো আমাদের চারপাশে চলাফেরা করছে।
• বাংলাদেশ ফোর্স হেডকোয়ার্টার মুজিবনগর গণসংযোগ বিভাগের ‘যুদ্ধ বিষয়ক বুলেটিন এ বলা হয় : মহেন্দ্রনগরে মুক্তিবাহিনী ও পাকসৈন্যদের মধ্যে যুদ্ধে ১ জন পাকসৈন্য নিহত হয়।  রংপুরের বনতারা এলাকায় মুক্তিবাহিনী পাকসৈন্যদের ওপর গুলি চালায়। এতে ৫ জন পাকসৈন্য নিহত হয়। এর অব্যবহিত পরই পাকসেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এক তীব্র যুদ্ধে ৮ পকসেনা নিহত হয়।
• গোলাম আযম মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল এডুকেশন সেন্টারে ট্রেনিংরত রাজাকারদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘একমাত্র মুসলিম জাতীয়তায় পূর্ণবিশ্বাসী ব্যক্তিরাই পাকিস্তানের হেফাজতের জন্যে জীবন দান করতে পারে এবং সত্যিকার মুসলমানরাই যে পাকিস্তানের প্রকৃত সম্পদ, এই সার্টিফিকেট পাকিস্তানের দুশনরাই তাদের কার্যকলাপের দ্বারা এবার প্রদান করেছে।
• জয়বাংলার পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয় :
মুক্তিযুদ্ধকে সফল সমাপ্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে উপদেশ দানের জন্য বাংলাদেশের চারটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটিতে যারা রয়েছেন, তাদের রাজনৈতিক মত ও পথে পার্থক্য থাকলেও সকলেই পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক। কমিটিতে ভাসানী ন্যাপের প্রতিনিধিত্ব করছেন মওলানা ভাসানী, বাংলাদেশ কম্যুনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিত্ব করছেন শ্রীমণি সিং, বাংলাদেশ জাতীয় কংগ্রেসের শ্রীমনোরঞ্জন ধর এবং মোজাফফর ন্যাপের অধ্যাপক মুজাফফর আহমদ। এছাড়া এই কমিটিতে আওয়ামী লীগের দু’জন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই কমিটিতে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী কমিটির বৈঠক আহ্বান ও পরিচালান করবেন।
• জয়বাংলা পত্রিকায় ‘জল্লাদরা ত্রাণ সামগ্রী যুদ্ধের কাজে লাগাচ্ছে’  শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় : পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক শাসক গোষ্ঠী ইউনিসেফ এবং জাতিসংঘের অপরাপর ত্রান প্রতিষ্ঠান সমূহের যাবতীয় গাড়ি ও যানবাহন যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার লন্ডনস্থ মিশনের মাধ্যমে জাতিসংঘকে একথা জানিয়ে দিয়েছে। জাতিসংঘের সাহায্য সংস্থার ইউনিসেফ  এর একটি জিপে টিক্কা খানকে দেখা গেছে। ১৯৭০ সালের ভয়াবহ বন্যা ও ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ লৈাকদের সাহায্যের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র বিপন্ন মানবতার সেবায় যেসব ত্রান-সামগ্রী পাঠিয়েছিল, সেগুলোও সামরিক শাসকেরা যুদ্ধের কাজ ব্যবহার করছে। দ্রুত রিলিফ প্রেরণের জন্য যাতায়াতের সুবিধার্থে নরওয়ে এবং স্কান্ডিনেভিয়ায় অন্যান্য রাষ্ট্র সে সব রবারের নৌকা, দ্রুতগামী লঞ্চ পাঠিয়েছিল, সেগুলোও ওই একই কার্যে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
•  বাংলাদেশ প্রশ্নে আলোনার জন্য বিশ্বের ২৪টি দেশ থেকে ১৫০ জন প্রতিনিধি দিল্লী আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে বাংলাদেশ সমস্যার সন্তোষজনক সমাধানের লক্ষ্যে বেশ কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সকল দেশ বাংলাদেশের জনগণের মুক্তিসংগ্রাম সমর্থন করেন। বাংলাদেশ সরকারের কর্মকাণ্ড ও ভারতে শারণার্থেিদর আশ্রয়দানকে তাঁরা অভিনন্দন জানান। সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে সহযোগিতা প্রদানেরও আশ্বাস দেয়া হয়।
• রাতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঘোষণা করেন, ভবিষ্যৎ শাসতন্ত্র জাতীয় পরিষদে পেশ করা হবে এবং জাতীয় পরিষদ তা সংশোধন করতে পারবে।
• সিলেটে মুক্তিবাহিনী সুতারকান্দি পাকঘাঁটি আক্রমণ করে। পাকসেনারা পাল্টা গুলি শুরু করলে উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে পাকবাহিনীর ২ জন সৈন্য নিহত হয়।
• ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর টহলদার দল চারগাছা বাজারের কাছে পাকবাহিনীর একটি টহলদার দলকে অ্যামবুশ করে। এই অ্যামবুশে ২০ জন পাকসেনা হতাহত হয়। এ সংবাদ পেয়ে পাকসেনাদের একটি শক্তিশালী দল তিন নৌকা বোঝাই করে টহলদার দলের সাহায্যার্থে অগ্রসর হয়। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের পৌঁছার আগেই শিরাইলের কাছে অ্যামবুশ করে দুটি নৌকা ডুবিয়ে দেয়। এতে নৌকা দুটির সকল পাকসেনা নিহত হয়। এই সংঘর্ষে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
• ৭নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী ইপিআর কমান্ডার সালেক বেঙ্গল রেজিমেন্টের মান্নান, ঢাকা পুলিশের হাবিলদার রজব আলী এবং ছাত্র রঞ্জিত কুমার মহন্ত, প্রদীপ কুমার কর প্রমুখের নেতৃত্বে হিলির কাছে পাকসেনাদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এই সংঘর্ষে বহ পাকসৈন্য হতাহত হয়।
• রাজশাহীর ফারসিপাড়ায় মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর ৫ জন সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী কোন ক্ষতি ছাড়াই নিরাপদে নিজ ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
• মুক্তিবাহিনী যশোরের টুঙ্গী এলাকায় পাকবাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পাকসেনাদের একটি বাঙ্কার ধ্বংস হয়। এবং দুইজন পাকসেনা নিহত হয়।
• সিলেটের জৈন্তাপুরে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালালে ২জন পাকসেনা নিহত হয়।
• পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমীর গোলাম আযম নতুন প্রাদেশিক মন্ত্রীসভাকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, এই সংকটকালে মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করে মন্ত্রীসবার সদস্যরা শুধু যে বিপদের ঝুঁকি নিয়েছেন তাই নয়, তারা পাকিস্তানের শত্র“দের (মুক্তবাহিনী) নির্মুল করার কাছে নিয়োজিত পাকিস্তানের বীর সেনাবাহিনীর প্রতি হতাশ ও আকাক্সিক্ষত মানুষের মধ্যে আস্থার ভাব ফিরিয়ে আনারও গুরু দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন।
• পিডিপি প্রধান নুরুল আমিন ও পিপিপি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচীতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে পৃথক পৃথক আলোচনা বৈঠকে মিলিত হন।
১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল মালোচিন বাজারে অবস্থানরত পাকপুলিশের একটি দলকে আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ১৯ জন পাক পুলিশ নিহত ও ৩ জন আহত হয়।
• লক্ষ্মীপুরে মুক্তিবাহিনী পাকসেনা অবস্থানের ওপর রকেট লাঞ্চারের সাহায্যে তীব্র আক্রমণ চালায়। এতে পাকসেনাদের দুটি বাঙ্কার ধ্বংস হয় এবং দুজন পাকসেনা নিহত ও একজন আহত হয়।
• কুমিল্লায় লে. ইমামুজ্জামানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দল পাকবাহিনী বাডিসা ও গোবিন্দমানিক্যর দীঘি অবস্থানের ওপর একযোগে আক্রমণ চালায়। গোবিন্দমানিক্যর দীঘি অবস্থানে দুটি বাঙ্কার ধ্বংস ও ৬ জন পাকসেনা নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর বাডিসা ঘাঁটি আক্রমণ সম্পূর্ণ সফল হয়। বাডিসায় ২০ জন পাকসৈন্য নিহত ও ১২ জন আহত হয়। দু’ঘণ্টা যুদ্ধের পর মুক্তিবাহিনী নিরাপদে নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
• ৮নং সেক্টরের গোজাডাঙ্গা সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের মোহাম্মদপুর অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর একজন মেজরসহ ৬ জন সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা কোন ক্ষতি ছাড়াই নিরাপদে নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
• মুক্তিবাহিনী দিনাজপুরের অমরখানা এলাকায় অবস্থানরত পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ৮নং পাকসৈন্য নিহত হয় ও কয়েকজন আহত হয়।
• বিবিসি প্রচারিত সংবাদ :
জাতিসংঘ মহাসচিব উ’থান্ট ভারত উপমহাদেশের অবস্থা নিয়ে সতর্ক বার্ণ উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক মীমাংসা ব্যতিত পূর্ব পাকিস্তানের মৌলিক সমস্যা সমাধান হবে না। তিনি বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্যে আহ্বান জানান।
• জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে যোগদানের জন্য পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের নিউইয়র্কে যাত্রার প্রাক্কালে দলনেতা পিডিপি’র মাহমুদ আলী করাচীতে বলেন, সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালিয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কেননা প্রদেশে সেনাবাহিনীর তৎপরতা এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি করেনি যার জন্য ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহৃত হতে পারে।
• পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেন, ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের ৭৮টি শূন্য আসনে এবং প্রাদেশিক পরিষদের ১০৫টি শূন্য আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী লুধিয়ানায় এক সমাবেশে বলেন, যেসব বিদেশী সরকার বাংরাদেশ সমস্যাকে পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে অভিহিত করছেন, তারা পক্ষান্তরে পাকিস্তান সরকারের অগণতান্ত্রিক কার্যক্রম ও গণহত্যার নীতিকে সমর্থন করছেন। তিনি বলেন, ভারত সরকার চান তার দেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশের শরণার্থীরা মুক্ত স্বদেশে ফিরতে আগ্রহী।
• ১নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী সুবেদার রহমান আলীর নেতৃত্বে পাকবাহিনীর চম্পকনগর বিওপি আক্রমণ করে। কিছুক্ষণের এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর ৩ জন সৈন্য হতাহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা কোনরূপ ক্ষতি ছাড়াই নিজেদের অবস্থানে ফিরে আসে।
• মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল চট্টগ্রামÑকুমিল্লা সড়কে জগন্নাথদীঘির কাছে বাজানকারা সেতুটি উড়িয়ে দিয়ে সেতুর উত্তরে ১০ জন গেরিলা ও একটি নিয়মিত বাহিনী পাকসেনাদের অপেক্ষায় অ্যামবুশ পাতে। বাজানকারা সেতু ধ্বংসের সংবাদ পেয়ে ফেনী থেকে পাকবাহিনীর একটি শক্তিশালী দল সেতুর দিকে অগ্রসর হয়। পাকসেনারা অ্যামবুশের আওতায় এলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। এতে পাকবাহিনীর একজন অফিসারসহ ২৫ জন সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পাকসেনারা ছাত্রভঙ্গ হয়ে ফেনীর দিকে পালিয়ে যায়।
• ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী সুবেদার আলী আকবর পাটোয়ারীর নেতৃত্বে পাকসেনা ও রাজাকারদের রামগঞ্জ অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ১৪ জন পাকসেনা নিহত ও ১৭ জন আহত হয়।
• ‘দাবানল’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয় : মালিকনগর এলাকায় প্রায় দুই কোম্পানি পাকসৈন্যের সাথে মুক্তিবাহিনীর গোলা বিনিময়ে ২ জন পাকসৈন্য নিহত হয়।
• ‘মুক্তিযুদ্ধ’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয় : রংপুর জেলার ডিমলা থানার অন্তর্গত সুটিবাড়ি হাটের পশ্চিম জোড়জিগা গ্রামে মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে ৯ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং কয়েকজন কোন প্রকারের অস্ত্রশস্ত্র ফেলে প্রাণ বাঁচায়। ওই থানার বালাপাড়া গ্রামে মুক্তিবাহিনীর পেতে রাখা মাইনে ৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। পরে বর্বর পাকসৈন্যরা বালাপাড়া গ্রাম সম্পূর্ণভাবে জ্বালিয়ে দেয়।
• পূর্ব পাকিস্তানের শ্রম, সমাজকল্যাণ ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী এ. এস. এম সোলায়মান ঢাকায় বলেন, পাকিস্তানের বীর সেনাবাহিনী শত্র“কে (মুক্তিযোদ্ধা) নির্মূল করে দিয়েছে। শত্র“রা প্রিয় মাতৃভূমি পাকিস্তান ভাঙতে চেয়েছিল। কোন শক্তিই পাকিস্তান ভাঙতে পারবে না।
• সৈয়দ আজিজুল হকের বাসায় পিডিপি’র বিশিষ্ট নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপনির্বঅচন পিছিয়ে দেবার ব্যাপারে নূরুল আমিনের দেয়া বিবৃতিকে অনুমোদন করা হয়। একই দাবী জানান কাইয়ুম মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক খান এ. সবুর।
২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর ২/৩ শ গেরিলার একটি দল পালং থানায় অবস্থানরত পাকবাহিনীর ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। চার ঘণ্টা সম্মুখ যুদ্ধের পর পাকবাহিনীর সদস্যরা ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এই যুদ্ধে ৫০ জন পাকসেনা, রাজাকার ও পাকপুলিশ নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদল সম্পূর্ণ এলাকা দখল করে।
• কুমিল্লায় পাকবাহিনীর ৩৩Ñ বেলুচের ‘বি’ এবং ‘ডি’ কোম্পানি মেজর দুররানির নেতৃত্বে চাঁদলা থেকে নৌকায় করে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান আক্রমণের উদ্দেশে মন্দভাগের দিকে অগ্রসর হয়। এ খবর পেয়ে ক্যাপ্টেন গাফফারের দল ও সুবেদার ওহাবের নেতৃত্বে এক প্লাটুন যোদ্ধা শালদা নদীর উপর অবস্থান নেয়। পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের কাছাকাছি এলে তাদের ওপর মক্তিযোদ্ধারা প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। প্রায় ছয়ঘণ্টাব্যাপী এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেনসহ ২৬ জন পাকসৈন্য নিহত ও অনেক আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের কাছ থেকে প্রচর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করে।
• পাকহানাদার বাহিনী হরিরামপুর থানার বল্লা গ্রামে লুটপাট করতে এলে মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধারা তাদের প্রতিহত করে। এতে দুই জন পাকসেনা নিহত হয়। হানাদার বর্বররা কাপুরুষের মত নিরস্ত্র গ্রামবাসীর উপর এর প্রতিশোধ নেয়। পাকহানাদারদের পৈশাচিক নির্যাতনে ১৬ জন নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হয়।
• মুক্তিবাহিনী বরগুনা জেলার পাথারঘাটা অঞ্চলে পাকহানাদারদের অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ৫ জন পাকসেনা নিহত হও ৩ জন আহত হয়।
• নির্বাচন কমিশন ইতিপূর্বের ঘোষিত সময়সূচি বাতিল করে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের শূন্য আসনে উপ-নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করেন। পুনর্বিন্যাস্ত সময়সূচি অনুসারে ভোট গ্রহণ ১২ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ২৩ ডিসেম্বর শেষ হবে।
২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
November 7, 2016
aamra

 Today ’71

 Comments Off on ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• ৭নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী কাটাখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অবস্থানরত পাকবাহিনীর ওপর ৩ ইঞ্চি মর্টারের সাহায্যে ব্যাপক আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ২ জন সৈন্য নিহত ও ১০ জন আহত হয়।
• ২নং সেক্টরে সুবেদার গোলাম আম্বিয়ার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দল শ্রীপুর এলাকায় পাকহানাদরদের অ্যামবুশ করে। এই অ্যামবুশে পাকহানাদার বাহিনীর ২ জন সৈন্য নিহত ও কয়েকজন আহত হয়।
• পাকবাহিনীর দুই কোম্পানী সৈন্য কুষ্টিয়ার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্য নের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলে মুক্তিবাহিনী তাদের ঘিরে ফেলে। মুখোমুখি সংঘর্ষে পাকহানাদর বাহিনীর ৩ জন সৈন্য নিহত ও ৫ জন গুরুতরভাবে আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুধ দখল করে।
• মুক্তিবাহিনীর ৬০ জন গেরিলার একটি দল ভারতের মেঘালয়ের ক্যাম্প থেকে গেরিলা ট্রেনিং শেষে চারটি নৌকায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পথে শালদা নদীতে পাকসেনাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। এই সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনীর দুটি নৌকা পানিতে ডুবে যায়। এতে ৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।
• ৮নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর কোটা নামক এলাকায় অবস্থানরত পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ৪ জন সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা কোন ক্ষতি ছাড়াই নিরাপদে নিজেদের অবস্থানে ফিরে আসে।
• পিপিপি প্রধান জুলফিকার আলী ভু্েটা করাচীতে ঘোষণা করেন, তাঁর দল পূর্ব পাকিস্তানের উপনির্বাচনে অংশ নেবে। তিনি জানুয়ারিরে আগেই দেশে পূর্ণ সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।তিনি বলেন, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করে একই সাথে কেন্দ্রে ও প্রদেশসমূহে ক্ষমতা জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
• গভর্নর ডা. এ.এম মালিকের সভাপতিত্বে সেক্রেটারিয়েটের কেবিনেট কক্ষে মন্ত্রীপরিষদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নবনিযুক্ত মন্ত্রীরা তাদের পাকিস্তান প্রীতির নিদর্শন হিসেবে বেতনভাতা কমিয়ে নেয়।
• গভর্নর ডা. এ. এম. মালিক সংবাদপত্র ও বার্তা প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে প্রচারণার কৌশল নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর এক প্লাটুন যোদ্ধা ও ১৬ জন গেরিলা লে. ইমামুজ্জামানের নেতৃত্বে মর্টার ও রকেট লাঞ্চারের সাহায্যে পাকহানাদার বাহিনীর গোবিন্দমাণিক্য দিঘী ঘাঁটির ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পাকসেনা ঘাঁটির কযেকটি বাঙ্কার ধ্বংস হয় এবং ১৫ জন পাকসেনা নিহত ও ১০ জন আহত হয়। এক ঘণ্টা যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের অবস্থানে নিরাপদে ফিরে আসে।
• মুক্তিবাহিনীর এক প্লাটুন যোদ্ধা দেওতলীতে অ্যামবুশ পাতে। পাকবাহিনীর একটি দল কুমারসাইল মসজিদের কাছে এলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে পাকবাহিনীর ৮ জন সৈন্য নিহত ও ১০ জন আহত হয়।
• মুক্তিবাহিনী মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থানায় পাকবাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে মুক্তিযোদ্ধারা ৭৫ জন পুলিশ ও রাজাকারকে বন্দী করে এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করে।
• ৬নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পঞ্চবিবির কাছে পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে এক দুঃসাহসিক অভিযান চালায়। এতে ৬ জন পাকসৈন্য ও ২ জন রাজাকার নিহত হয়।
• জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ‘বাংলাদেশ প্রশ্ন’ উত্থাপনের জন্য ভারত সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
• সপ্তাহব্যাপী পশ্চিম পাকিস্তান সফরশেষে ফিরে আসার আগে নূরুল আমিন সাংবাদিকদের জানান, ‘পাকিস্তানের সংহতি ও অখণ্ডতা সম্পর্কে নতুন আস্থা নিয়ে দেশে ফিরে যাচ্ছি।’
• শিক্ষামন্ত্রী আব্বাস আলী খানের সঙ্গে এম.আর. এ রেজভীর নেতৃত্বে মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও পুরনো ঢাকায় বিহরী নেতারা সাক্ষাৎ করেন।
• মতিউর রহমান নিজামী ইসলামী ছাত্রসংঘ আয়োজিত অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেন, মাদ্রাসা ছাত্ররা দেশ রক্ষায় একযোগে এগিয়ে এসেছে। কারণ তারা ইসলামকে ভালবাসে। পাকিস্তানকে ভালবাসে। অথচ এই মাদ্রাসা ছাত্ররাই সবচাইতে অবহেলিত। পক্ষান্তরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা সত্ত্বেও পাকিস্তানকে ধ্বংস করার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
• ৭নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী কাটাখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অবস্থানরত পাকবাহিনীর ওপর ৩ ইঞ্চি মর্টারের সাহায্যে ব্যাপক আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ২ জন সৈন্য নিহত ও ১০ জন আহত হয়।
• ২নং সেক্টরে সুবেদার গোলাম আম্বিয়ার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দল শ্রীপুর এলাকায় পাকহানাদরদের অ্যামবুশ করে। এই অ্যামবুশে পাকহানাদার বাহিনীর ২ জন সৈন্য নিহত ও কয়েকজন আহত হয়।
• পাকবাহিনীর দুই কোম্পানী সৈন্য কুষ্টিয়ার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্য নের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলে মুক্তিবাহিনী তাদের ঘিরে ফেলে। মুখোমুখি সংঘর্ষে পাকহানাদর বাহিনীর ৩ জন সৈন্য নিহত ও ৫ জন গুরুতরভাবে আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুধ দখল করে।
• মুক্তিবাহিনীর ৬০ জন গেরিলার একটি দল ভারতের মেঘালয়ের ক্যাম্প থেকে গেরিলা ট্রেনিং শেষে চারটি নৌকায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পথে শালদা নদীতে পাকসেনাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। এই সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনীর দুটি নৌকা পানিতে ডুবে যায়। এতে ৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।
• ৮নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর কোটা নামক এলাকায় অবস্থানরত পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ৪ জন সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা কোন ক্ষতি ছাড়াই নিরাপদে নিজেদের অবস্থানে ফিরে আসে।
• পিপিপি প্রধান জুলফিকার আলী ভু্েটা করাচীতে ঘোষণা করেন, তাঁর দল পূর্ব পাকিস্তানের উপনির্বাচনে অংশ নেবে। তিনি জানুয়ারিরে আগেই দেশে পূর্ণ সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
তিনি বলেন, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করে একই সাথে কেন্দ্রে ও প্রদেশসমূহে ক্ষমতা জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
• গভর্নর ডা. এ.এম মালিকের সভাপতিত্বে সেক্রেটারিয়েটের কেবিনেট কক্ষে মন্ত্রীপরিষদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নবনিযুক্ত মন্ত্রীরা তাদের পাকিস্তান প্রীতির নিদর্শন হিসেবে বেতনভাতা কমিয়ে নেয়।
• গভর্নর ডা. এ. এম. মালিক সংবাদপত্র ও বার্তা প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে প্রচারণার কৌশল নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• পাকবাহিনীর একটি শক্তিশালী দল ১৭টি নৌকায় মুক্তিবাহিনীর রেইডিং দলকে আক্রমণ করার জন্য নবীনগরের দিকে অগ্রসর হয়। পাকসেনাদের নৌকাগুলো বিদ্যাকোর্ট গ্রামের নিকট পৌঁছালে মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে অতর্কিত আক্রমণ করে। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর ৫টি নৌকা ডুবে যায় এবং ২৫ জন পাকসেনা নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়।
• সিলেটে মুক্তিযোদ্ধারা সিন্দরখানÑকলেঙ্গা রাস্তার উপর ছোট ছোট পাহাড়ের উপর অ্যামবুশ লাগিয়ে পাকসেনাদের অপেক্ষায় ওঁৎ পাতে। পাকবাহিনীর একটি বড় দল ২৫/২৫ জন রাজাকারকে সামনে দিয়ে কালেঙ্গার দিকে অগ্রসর হয়। রাজাকার দল অ্যামবুশের আওতায় এলে মুক্তিযোদ্ধারা নিরব থাকে। কিছুক্ষণ পর পাকসেনারা এলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। এই যুদ্ধে পাকসেনাদের একজন অফিসারসহ ৬১ জন সৈন্য নিহত ও অনেক আহত হয়। অপরদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়েক আবদুল মান্নান শহীদ হন।
• ৩নং সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাপ্টেন ভুঁইয়ার নেতৃত্বে ধর্মঘর নামক স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালায়। এই যুদ্ধে লে. হেলাল মুর্শেদের কোম্পানি বামদিকের ফ্ল্যাঙ্ক প্রোটেকশনে এবং ক্যাপ্টেন নাসিমের কোম্পানি ডান দিকে ফ্ল্যাঙ্ক প্রোটেকশনে অবস্থান নিয়ে ক্যাপ্টেন ভুঁইয়ার মুক্তিযোদ্ধা দলকে সাহায্য করেন। এতে পাকবাহিনীর একজন জুনিয়র কমিশণ্ড অফিসারসহ ১০ জন সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর পক্ষে কোন হতাহত হয়নি।
• ৪নং সেক্টরে ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল খড়মপুরে পাকবাহিনীর ৪০ জনের একটি দলকে আক্রমণ করে। পাকসেনারাপ ৩ ইঞ্চি মর্টার, এমজি ও এলএমজি’র সাহায্যে পাল্টা আক্রমণ চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে পাকবাহিনীর ৫ জন সৈন্য নিহত ও ১০ জন আহত হয়।
• ৮নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর এক প্লাটুন সৈন্যকে অ্যামবুশ করে। এই অ্যামবুশে ৪ জন পাকসেনা নিহত ও ২ জন আহত হয়। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধারা একই স্থানে এক প্লাটুন পাকসৈন্যকে আবার অ্যামবুশ করে। এতে ৪ জন পাকসেনা নিহত হয়।
• পিডিপি’র সভাপতি নুরুল আমিন ঢাকায় বলেন, বে-আইনী আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানেক মুক্তি দেয়া হলে পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের যৌক্তিকতাকেই নস্যাৎ করা হবে।
• বিবিসি প্রচারিত সংবাদ : পূর্ব পাকিস্তানের একজন সরকারী মুখপাত্র বলেন, গঙ্গা ব-দ্বীপের চালনায় একটি মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়। জাহাজটি পূর্ব পাকিস্তানে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে এসেছিল। সম্প্রতি একটি বৃটিশ জাজাও চালনা বন্দরে বোমা বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অবস্থা যথেষ্ট গুরুত্বের দাবীদার।
• তেজগাঁও শান্তি কমিটি নবনিযুক্ত মন্ত্রীদের সম্বর্ধনা দেয়। জামায়াতে ইসলামীর ডেপুটি আমীর মাওলানা আবদুর রহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় আব্বাস আলী খান, মওলানা এ. কে. এম. ইউসুফ, আখতার উদ্দিন আহমদ, মওলানা ইসহাক, আউং শু প্র“ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত হন। সভায় মন্ত্রীদের উদ্দেশে মানপত্র পাঠ করেন তেজগাঁও শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান।
• গোলাম আযম পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর বৈঠক আহ্বান করেন। এই বৈঠকে ২ অক্টোবর জামায়াতের নাখালপাড়ার প্রাদেশিক কার্যালয়ে হবে এবং বৈঠকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, উপনির্বাচন এবং পার্টি-কর্মীদের করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
• জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানকারী সদস্য এ.টি. সাদী বলেন, ‘বিচ্ছিন্নতার কারণে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ছিলো অনিবার্য। দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে যেটুকু না করলে নয়, সেনাবাহিনী তাই করছে। বাংলাদেশ আন্দোলন হচ্ছে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’
২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• ১নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর ১৫ সদস্যের একটি গেরিলা দল গুতুমা নামক স্থানে পাকসেনাদের অ্যামবুশ করে। এই অ্যামবুশে ৩ জন পাকসেনা হতাহত হয়।
• ১নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী রকেট লাঞ্চারের সাহায্যে পাকসেনাদের চম্পকনগর বিওপি অবস্থানের ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর বহু বাঙ্কার বিধ্বস্ত হয় এবং ৫ জন সৈন্য হতাহত হয়।
• ২নং সেক্টরে পাকবাহিনীর একটি লঞ্চে নওয়াবগঞ্জের দিকে অগ্রসর হলে গালিমপুরের কাছে একদল গেরিলা লঞ্চটির ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে। এই যুদ্ধ ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত চলে। শেষ পর্যন্ত পাকসেনারা মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যোদ্ধাদের কাছে পর্যুদস্ত হয়। এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেন জাফর আলী খান, সুবেদার আবদুল্লাসহ ৪৬ জন সৈন্য নিহত হয় এবং লঞ্চটি ডুবে যায়। অপরপক্ষে মুক্তিবাহিনীর বীর গেরিলা যোদ্ধা আবদুর রহিম এবং মুহম্মদ আলী শহীদ হন।
• নাটরের টেবলাই নামক গ্রামে অবস্থানরত এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধার ওপর পাকসেনাদের তিনটি দর মিলিভাবে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের সাহায্যে একযোগে আক্রমণ চালায়। কিছুক্ষণ যুদ্ধের পর মক্তিযোদ্ধারা কৌশল পরিবর্তন করে মেলা সাব-সেক্টরের সদর দপ্তর বাঁশতলা পর্যন্ত পিছিয়ে যায়। বাঁশতলা থেকে শক্তি সঞ্চয় করে মুক্তিযোদ্ধারা আবার পাল্টা আক্রমণ চালালে পাকসেনারা রণে ভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যায়। ৪ ঘণ্টাব্যাপী এ যুদ্ধে ৪ জন পাকনো নিহত ও অনেক আহত হয়। অপরদিকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
• ফরিদপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার নূর মোহাম্মদের যুদ্ধ রিপোর্ট : ফরিদপুরের ভাটিয়াপাড়ায় মুক্তিবাহিনী দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে ১৭ জন পাকসৈন্যকে হত্যা এবং ৯ জনকে আহত করে। মুক্তিবাহিনী ভাটিয়াপাড়া ওয়ার্লেস স্টেশন ধ্বংস করে দেয়। অপরদিকে ভেদরগঞ্জে মুক্তবাহিনীর আরেকটি আক্রমণে ৮৫ জন পাকপুলিশ ও রাজাকার নিহত হয়।
• ঢাকায় মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যোদ্ধা এনায়েত ও আবুল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের রাস্তায় প্রাদেশিক সরকারের মৌলিক গণতন্ত্র ও স্থানীয় স্বায়ত্ত্বশাসন মন্ত্রী মওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের গাড়িতে গ্রেনেড আক্রমণ চালায়। এতে মওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও গাড়ির ড্রাইভার গুরুতর আহত হন।
• করাচীতে একজন সরকারি মুখপাত্র ঘোষণা করেন : পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা সম্পর্কে ভারতীয় অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীর সামনে প্রকৃত অবস্থান তুলে ধরার জন্য পাকিস্তানের যেসব প্রতিনিধি বিদেশ সফর করছেন তাদের মধ্যে দৈনিক ‘ইত্তেফাক’Ñএর সাংবাদিক খন্দকার আবদুল হামিদ রয়েছেন।
• ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারেল হরবার্ট ড্যানিয়েল স্পিভাক জামায়াত নেতা আব্বাস আলী খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
• পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব সুলতান মোহাম্মদ জাতিসংঘ মহাসচিব উ’থান্টের কাছে এক পত্রে পাকিস্তানের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ করেন। পত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করতে হয় যে, জাতিসংঘের কতিপয় সদস্য রাষ্ট্র জাতিসংঘ বিধির প্রতি সমর্থনের বুলি আওড়িয়ে প্রকৃতপক্ষে জাতিসংঘের মূলনীতিকে ধ্বংস করার কাছে লিপ্ত থেকে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিপন্ন করে তুলেছে।
২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• ২নং সেক্টরে ২৫০ সদস্যবিশিষ্ট পাকসেনা ও রাজাকারদের একটি দল রামগঞ্জ বাজারের দিকে অগ্রসর হয়। এই খবর পেয়ে মুক্তিবাহিনীর ৫০ জন যোদ্ধার একটি দল রামগঞ্জ বাজারের পূর্বদিকে পাকসেনাদের জন্য অ্যামবুশ পাতে। পাকসেনা ও রাজাকারের দল অগ্রসর হবার পথে অ্যামবুশের আওতায় এলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে ২০ জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত এবং ২৭ জন আহত হয়।
• ৪নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর ৬০ জন যোদ্ধার একটি দল কুমারসাইলে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে এক অভিযান চালায়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে আড়াই ঘণ্টা গোলা বিনিময় হয়। এই সংঘর্ষে পাকবাহিনীর ৯জন সেন্য নিহত ও কয়েকজন আহত হয়।
• ৫নং সেক্টরের তামাবিল সাব-সেক্টর ব্রেভো কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে মো. রফিকুল আলম কোম্পানির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
• ৮নং সেক্টরের বানপুর সাব-সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর এক প্লাটুন যোদ্ধা পাকবাহিনীর ওপর দত্তনগর ঘাঁটি আক্রমণ করে। এই সংঘর্ষে পাকবাহিনীর ২জন সৈন্য নিহত ও ২ জন আহত হয়।
• ঢাকার গোপীবাগে শহর মুসলিম লীগ সভাপতি মোহাম্মদ হোসেনের বাসভবনে মুক্তবাহিনীর গেরিলা যোদ্ধারা আক্রমণ চালায়। এতে পাহারাদারদের সাথে গেরিলাদের প্রচণ্ড গুলি বিনিময় হয়। তবে কোন হতাহত হয়নি।
• মুক্তিবাহিনী গোপালগঞ্জ মহকুমার রায়চন্দ্রপুর মধুমতী নদীতে পাকিস্তানিদের খাদ্য ও অস্ত্র বোঝাই ৪টি নৌকার ওপর দুঃসাহসিক অভিযান চালায়। এই অভিযানে পাকবাহিনীর দুটি নৌকা ডুবে যায় এবং ১৫ জন রাজাকার ও ২ জন পাঞ্জাবী পুলিশ নিহত হয়।
• রাজশাহী সীমান্তে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দলকে অতর্কিতে আক্রমণ করে। এই আক্রমণে পাকসেনা দলের সকল সদস্য নিহত হয়।
• গভর্নর ডা. এ.এম. মালিক মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রচারণা চালানোর উদ্দেশ্যে রেডিও পাকিস্তানে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গভর্নর ছাত্রদের কোন ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে অংশ না নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান।
• জামায়াতে ইসলামীর একটি দল লন্ডন সফর করে। লন্ডনে এক সভায় সফরকারী জামায়াতে নেতা মওলানা খলিল বলেন, পৃথিবীর কোন শক্তি নেই পাকিস্তানকে বিভক্ত করে।
অপর নেতা মওলানা হামিদী স্বাধীনতা সংগ্রামকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, তথাকথিত বাংলাদেশের কোন অস্তিত্ব নেই।
২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল পাকসেনাদের একটি দলকে মাগুলা বাজার থেকে রসদ নিয়ে দেহার থানার কাম্পো যাবার পথে আক্রমণ করে। এই আক্রমণে ১৪ জন পকসেনা নিহত ও ৮ জন আহত হয়। গেরিলা যোদ্ধারা পাকসেনাদের সমস্ত রসদ দখল করে।
• ৪নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের একটি দলকে রসদ নিয়ে বড়াইল ক্যাম্পের দিকে দযাবার পথে অ্যামবুশ করে। এই অ্যামবুশে ২জন পাকসেনা নিহত হয়।
• মুক্তিবাহিনী মর্টারের সাহায্যে নওয়াবগঞ্জ থানায় পাকসেনাদের রামচন্দ্রপুর ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়। এতে পাকবাহিনীর ৭ জন সেনা নিহত হয়।
• ৬নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী কমান্ডার মোত্তালিব ও কমান্ডার এস.এম. ফারুকের নেতৃত্বে হিলিতে পাকসেনাদের সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধে লিপ্ত হয়। আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এই যুদ্ধে ৪ জন পাকসেনা নিহত হয়। অপরদিকে মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধা কমান্ডার মোত্তালিব মর্টারের গুলিতে আহত হন।
• মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহের গফরগাঁও এলাকায় পাকসেনাদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। এই সংঘর্ষে পাকবাহিনীর ২ জন সৈন্য নিহত হয়।
• ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য তিন দিনের সরকারি সপরে মস্কো রওনা হন।
• পাকবাহিনী ৪টি লঞ্চে করে নবাবগঞ্জের দিকে অগ্রসর হলে ৫০ জন গেরিলার নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী মুক্তিযোদ্ধা দল গলিমপুরের কাছে লঞ্চগুলোকে আক্রমণ করে। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেনসহ ৩৫ জন সৈন্য নিহত এবং অনেক আহত হয়। বাকী পাকসেনারা ছাত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করে।
• জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বক্তৃতাকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং বাংলাদেশের পরিস্থিতি উল্লেখ করে ভারতে অবস্থানকারী শারণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি ও আওয়ামী লীগের সাথে একটি মীমাংসারয় আসার জন্য পাকিস্তানিদের প্রতি আহ্বান জানান।
• মওলানা এম. এম. মান্নানের নেতৃত্বে মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির একটি প্রতিনিধি দল ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লে. জেনারেল নিয়াজীর সাথে দেখা করেন। সাক্ষাতে মওলানা মান্নান বলেন, পাকিস্তানি নিরাপত্তার জন্য মাদ্রাসার শিক্ষকরা লে. জেনারেল নিয়াজীকে পূর্ন সহযোগিতা করবেন।
তিনি লে. জেনারেল নিয়াজীকে একখানা কোরআন শরিফ উপহার দিয়ে তাঁকে আশ্বাস দেন ওলেমা ও মাদ্রাসা শিক্ষকরা রাষ্ট্রবিরোধীদের উৎখাতের ব্যাপারে সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে প্রস্তুত।
২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

• ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের একিট শক্তিশালী দল কায়েমপুর পাকসেনা ঘাঁটি আক্রমন করে। চার ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের চাপের মুখে টিকতে না পেরে কায়েমপুর ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে ১৫ জন পাকসেনা নিহত ও ৩০ জন আহত হয়। মুক্তিবাহিনীর পক্ষে কযেকজন বীর যোদ্ধা শহীদ ও আহত হন। মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের কাছ থেকে মেণিগান, মর্টার ও অন্যানৗ অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রচুর গোলাবারুদ দখল করে।
• রংপুরের ছাতনাই গ্রামে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধাকে পাক নরপিশাচরা নির্মমভাবে হত্যা করে। উক্ত বৃদ্ধার পুত্র মকবুল হোসেন মুক্তিবাহিনীর সহায্যকারী হিসেবে কাজ করছিলেন এই অভিযোগে হত্যা করে।
• কুমিল্লার কসবার কাছে মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের কাইউমপুর ঘাঁটির ওপর মর্টারের সাহায্যে ব্যাপক আক্রমণ চালায়। এই সংঘর্ষে পাকবাহিনীর ৩৫ জন সৈন্য নিহত ও ১৫ জন আহত হয়। অপরদিকে মুক্তিবাহিনীর একজন বীর যোদ্ধা আহত হন।
• প্রধান সামরিক প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসের ৮ জন অফিসারকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করায় চাকরি থেকে বরখাসত্ করেন। এঁরা হলেন, ইরাকস্থ রাষ্ট্রদূত এ.এফ.এম আবুল ফাত্তাহ, কলকাতাস্থ ডেপুটি হাইকমিশনার হোসেন আলী, জাতিসংঘস্থ সহকারী স্থায়ী প্রতিনিধি এস.এ. করিম, ওয়াশিংটনস্থ কাউন্সিলার এস.এ.এম.এস. কিবরিয়া, থার্ড সেক্রেটারি মহিউদ্দিন আহমদ ও আনোয়ারুল করিম।
• গভর্নর ডা. এ.এম. মালিক এক বক্তৃতায় ‘পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতি ধ্বংসের প্রয়াসে লিপ্ত শত্র“দের তৎপরতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
• সামরিক প্রশাসকের দফতর থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জনগণকে সতর্ক করে দেয়া হয় যে, কোনক্রমেই শেখ মুজিবের বিচার সম্পর্কে কোন মন্তব্য করা যাবে না।
• বগুড়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মওলানা নজির উল্লাহর নেতৃত্বে মাদ্রাসা শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষামন্ত্রী আব্বাস আলী খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মাদ্রাসা শিক্ষকরা মন্ত্রেিক জানান, এলাকায় তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে।
২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

• ময়মনসিংহে মুক্তিবাহিনী কোম্পানি কমান্ডার আবুল কাশেম ও প্লাটুন কমান্ডার মনিরুদ্দিনের নেতৃত্বে পাকবাহিনীর ভালুকা ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ৪ জন পাকসেনা ও ৩ জন রাজাকার নিহত হয়।
• ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর ৪র্থ বেঙ্গলের ‘বি’ কোম্পানি পাকসেনাদের নয়ানপুর অবস্থানের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে গোলন্দাজ বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করে।
• পাকিস্তান সরকার জাতিসংঘে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি এম.আর. সিদ্দিকীর জাতিসংঘের অঙ্গনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার জন্যে মহাসচিব উ’থান্টের কাছে আবেদন জানায়।
• বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর কাছে বৃটিশ লেবার পার্টির সচিব টিম রিড আউট এক চিঠিতে অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় দলের সম্মেলনে যোগদানের জন্য তাকে অনুরোধ জানান।
• রাওয়ালপিন্ডিতে সরকারিবাবে ঘোষণা করা হয়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অভিযোগে অভিযুক্ত অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিশেষ আদালতে দায়েরকৃত মামলায় এ পর্যন্ত ২০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।
• উপ-নির্বাচনকে সামনে রেখে কেএসসি’র ওয়ার্কি কমিটি এক জুরুরি বৈঠকে জয়নুল আবেদীন, এম. এ. হাই, এম.এ.রব, নিজামুদ্দিন মোল্লা ও শাহমহিউদ্দীনকে নিয়ে একটি সাব-কমিটি গঠন করে।
• সেক্রেটারিয়েট কেবিনেট কক্ষে ডা. মালিকের সভাপতিত্বে মন্ত্রীপরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে মন্ত্রীরা যুদ্ধকালীন কৃচ্ছতা ও দেশপ্রেম দেখাতে তাদের বেতন ৫ থেকে ১০ ভাগ কমানোর সিদ্ধান্ত নেন।
• শান্তি কমিটি দিলকুশা ইউনিয়ন শাখা কার্জন হলে মন্ত্রীদের সম্বর্ধনা দেয়। গোলাম আযমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় শাসুল হক বলেন, ভারতের দুরভিসন্ধি ফাঁস হয়ে যাবে ভেবেই তারা জাতিসংঘ, রেডক্রস, সাংবাদিক এবং মানবতাবাদীদের দেশে ঢুকতে দিচ্ছে না।
৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
• ক্যাপ্টেন মাহবুবের নেতেৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দল কুমিল্লার দক্ষিণে পাকসেনাদের কংসরতলা ঘাঁটির ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। তিন ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাকসেনারা এতই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে যে, কংসতলা অবস্থান পরিত্যাগ করে তারা কুমিল্লায় চলে যেতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর সুবেদার শাহজামানসহ ১৬ জন সৈন্য নিহত ও ৮ জন আহত হয়।
• ফেনীতে মুক্তিবাহিনী ক্যাপ্টেন পাশার নেতৃত্বে পাকসেনাদের নয়নপুর ঘাঁটির ওপর প্রথম আর্টিলারির গোলা নিক্ষেপ করে। ক্যাপ্টেন আশরাপের নেতৃত্বেও আরেক দল মক্তিযোদ্ধা নয়নপুরে পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিবাহিনীর এই আক্রমণের মুখে পাকবাহিনী নয়নপুর ছেড়ে শালদা নদী রেলওয়ে স্টেশনের মূল ঘাঁটিতে আশ্রয় নেয়।
• নওগাঁয় মুক্তিবাহিনী মকলেসুর রহমান রাজার নেতৃত্বে বাগমারা থানার নিকরা ও বাইগাছায় রাজাকারদের ২টি শক্তিশালী ক্যাম্প আক্রমণ করে। এতে রাজাকারদের ক্যাম্প দুটি ধ্বংস হয় এবং অনেক রাজাকার নিহত হয়।
• মুক্তিবাহিনীর একদল যোদ্ধা সিলেটের জাফলং-এ পাকসেনাদের বিরুদ্ধে এক দুঃসাহসিক অভিযান চালায়। এই সংঘর্ষে পাকবাহিনীর ৮জন সৈন্য নিহত হয়।
• পাকিস্তান পররাষ্ট্র দফতর ভারতের অস্থায়ী হাইকমিশনারকে ডেকে সরকারিভাবে পাকিস্তানি দূতাবাসের ৪ জন কর্মচারিকে ফেরত দেয়ার দাবি জানায়। মূলত এসব কর্মচারী মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন জানিয়ে পাকিস্তানি দূতাবাস ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারে যোগ দিয়েছিল।
• ঢাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাহরিকে ইশতেকলাল প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) আজগর খান বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বঅচিত এম.এন.এ ও এম.পি.এ’দের অবস্থা যাই হোক আর যেখানেই তারা থাকুন সাধারণ ক্ষমাকে সম্প্রসারিত করে তাদের সবাইকে ক্ষমা এবং স্বপদে পুনর্বহাল করা উচিত। তিনি বলেন, যারা নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন, তাদের ক্ষমতায় আসা উচিত।
• নেদারল্যান্ডের দৈনিক “উব ঞঁফ” পত্রিকায় প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিস্থিতির উপর এক নিবন্ধে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। এ পর্যন্ত ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী শরণার্থীদের সংক্যা ৮০ লক্ষ থেকে ১ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। পৃথিবীকে বলছে পাক প্রেসিডেন্ট পূর্ব পাকিস্তানে কি অমানবিক অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
October 1, 1971

• Freedom fighters of sector 8, subsector Gojadanga, launch a sudden attack on Pakistani soldiers in Bharukhali. Four Pakistani troopers killed. The freedom fighters came back to safety without casualty.
• Muktibahini launch a courageous drive against Pakistani soldiers in Puttichhara of Sylhet. Three Pakistani soldiers and another injured in the clash.
• Three groups of Pakistani military stationed in Mymensingh’s Bhaluka, Kashiganj and Trishal advance in Bainda and Baraid areas simultaneously. A team of freedom fighters of the Kachimuddin, Maneruddin and Hafizur Rahman group, led by company commander Quashem, intercept the Pakistan military after receiving this information. The gunfight took place for about 17 hours. 71 Pakistan troopers and Razakars are killed and many others are injured during this time.
• A guerilla team of 41 Muktibahini members head for Dhaka after completing training from Kosba. They are attack by patrolling Pakistan military near Shah bridge south of Kosba. Five Muktibahini members embrace martyrdom on the spot and three are injured. The fighters lost 15 rifles and five stenguns.
• Concerned by the rising guerilla activities in eastern Pakistan, British Foreign Minister Sir Alec Doughlas-Home says that undoubtedly the Pakistan-India situation has gained importance and added that he thought the situation would end soon.
• Razakar forces attack freedom fighters in Bogra’s Sukanpur Railway Station. Later, Pakistani military join the Razakars. 20 freedom fighters embrace martyrdom and 20 others are captured. The attackers also attack those who shelter the fighters. Several innocent civilian lives are lost.
• Jamaat leader AT Sadi talk with Pakistani students in Columbia University and urges them to be concerned about the separatists (freedom fighters) of East Pakistan.
• Cooperative society, fisheries and minority minister Awung Shu Pru told APP in an interview that India’s publicity regarding torture on minorities is completely false. The armed forces are ensuring their security.

October 2, 1971

• Muktibahini attack Pakistani military in 17 areas of Comilla, Jessore and Sylhet frontiers. Pakistan military members sustained some hundreds of casualties in sudden mortar and canon attacks. The freedom fighters seized a huge amount of arms and ammunition from Pakistan military. Muktibahini attack enemy in Comilla’s Kalipur, Parshuram, Khajuria Shahpur, Kauamtala, Nayanpur, Bajjala, Harimangal, Chagalpur, Rajpur, Shadla river, Madhugram, Sylhet’s Radhanagar, Jayantipur, Rajghat and Jessore’s Hijaltali village in Sylhet.
• Muktibahini ambush Pakistan military with buried mines on the Fulpur-Haluaghat road. One tank is completely destroyed.
• Muktibahini’s ambush team attack Pakistan military in Dinajpur’s Thakurgaon area with hidden mines. A food-laden truck of Pakistan military is destroyed.
• Muktibahini members carry out a courageous drive against Pakistan military in Comilla’s Homna. 11 police and five Razakars killed in the clash. 15 Razakars later surrendered.
• Governor Dr AM Malik speaks in a Khulna assembly of civil, military officers and local collaborators. He says though the miscreants are his relatives, they would not be spared because they are the enemy.
• Visiting US representative council foreign affairs committee member Peter and Freling Hison are shown the Comilla reception centre by Pakistan military. They say the damages caused in the area are caused by the freedom fighters.
• Food and agriculture minister Nawajesh Ali Khan visits Chuadanga. He called upon all to come forward and help the Pakistan collaborators.
• Razakars intercepted a Muktibahini operation to disconnect the Pakistan military’s communication system in Sylhet’s Sagrnal. Three freedom fighters embrace martyrdom.

October 3, 1971

• Soviet President Nicolai Padgarni visits New Delhi, India in a brief unscheduled visit. He sit for talks with India President VV Giri and Prime Minister Indira Gandhi. Before departing Delhi, he says Soviet Union offered all possible assistance to a political solution for Bangladesh in line with the understanding between prevailing India-Russia relationship.
• A strong military unit of Pakistan advance in Anantapur and Dhanikunda areas of sector 2. They shell the location of freedom fighters heavily with heavy canons and mortars. At the same time, the ground unit also moved in. Within 40-50 yards range, freedom fighters retaliated with fire. 25-30 Pakistan military troopers embrace martyrdom. Some freedom fighters also embrace martyrdom. The freedom fighters fell back to their base camp in face of the attacks. The Pakistan military continued its attack to the base camp and faced mortar shelling. Pakistan military could not sustain the hits and scattered. About 40-50 Pakistan military members killed and five freedom fighters embrace martyrdom.
• Muktibahini launch attacks on Pakistani military in Tangail’s Dhanbari. Majority of Pakistani soldiers killed in the attack.
• Muktibahini ambush Pakistani military with hidden mines in Jamalpur’s Kamalpur-Bakshiganj road. One car of the military is destroyed, seven troopers killed and six injured.
• Muktibahini ambush Pakistan military in Banpur sub-sector of sector 8. Five troopers killed and four are injured in the attack.
• A guerilla team of freedom fighters launch sudden attacks on Pakistan military deputed at TV sector in Raipur Thana triggering a six-hour long fight. About 50 Pakistan troopers and 60-70 Razakars killed on the spot. 34 non-Bengali EPR surrendered. Seven freedom fighters embrace martyrdom.
• Pakistan government issued a press-note regarding by-polls. The polls schedule for the remaining 88 vacant seats is announced. The polls would be held from December 18 to January 7.
• US government urged its congress to provide $15 crore aid to Pakistan government for rehabilitation of the displaced.

October 4, 1971

• Bangladesh government Deputy President Syed Nazrul Islam and chief Lieutenant Col MAG Osmani visits several freedom fighters’ camp and praises them for their recent feats against Pakistan military.
• Muktibahini ambush a platoon of Pakistan military near Kakdanga in Hakimpur sub-sector of sector 8. Six Pakistan troopers are killed and five injured after intense fighting. The freedom fighters came back to their camp unharmed.
• A Muktibahini guerilla team attack a stage of third Punjab regiment near Kosba of Comilla. One launch, belonging to Pakistanis, drowned and several of its troopers are killed.
• Muktibahini guerillas launch a sudden attack on a Razakar team near navy headquarters in Dhaka’s Banani. Four Razakars are killed.
• Muktibahini launch tree-way attack on Pakistan military on Gopalganj’s Bhatiapara. 30 Pakistani troopers and 20 Razakars are killed. Pakistan re-launch attack from the air with choppers. But, they are compelled to fall back.
• 2 Razakars surrendered to Muktibahini in Jessore’s Benapole.

October 5, 1971

• Guerilla freedom fighters of Muktibahini attack Pakistan military in Commilla’s north. 15 troopers are killed and 20 others injured. 1 freedom fighter embrace martyrdom.
• A 20-men team of freedom fighters attack Pakistan military in Sylhet. 4 Pakistan soldiers killed.
• Muktibahini guerilla team attack a Pakistan military jeep in Dhaka stadium area. Three Pakistani soldiers including a junior officer are killed.
• Freedom fighters fought Pakistan military in sector 2 killing five killed .
• Muktibahini destroyed Pakistan military’s telecommunication system in Sylhet’s Sunamganj.
• Jamaat-e-Islami began its third day of Majlish-e-Sura led by Ghulam Azam. A 5-men body, led by Ghulam Azam, is formed to oversee national and provincial by-polls. Others are Nuruzzaman, Abdul Khaleque, Golam Sarwar and Shafiqullah.
October 6, 1971

• Intense fighting between freedom fighters and Pakistan military in Rajshahi’s frontier Ghoshpur village. Several Pakistan troopers are killed and the freedom fighters took away huge arms, ammunitions and explosives.
• Muktibahini guerillas attack Pakistani troopers in Dhaka Medical College Hospital. 3 guard Razakars are killed and two others injured.
• Muktibahini ambush Pakistani military in Boira sub-sector of sector 8 killing two killed and injuring two others.
• Muktibahini guerillas bomb laden-trucks of the Pakistanis on the Dhaka-Chittagong highway with grenades and kill three troopers.
• US Foren Minister Rogers, in the UN General Assembly, says the incident of Pakistan is a matter of its internal affairs. He proposes that the refugees who fled to India be handed over to Pakistan.
• Chinese consul General Sieau Chiwjei says his government and people would always support Pakistan against foreign attacks in its internal affairs.
• A report of Sangrami Bangla says 22 officers and over 4,000 killed, Razakars and Badar groups of Pakistan are dead.
October 7, 1971

• India Defense Minister Jagjiban Ram says in New Delhi that India understood victory as a political solution to the Bangladesh issue.
• Kaderia Bahini attack Pakistan military in Bhuapur Police Station. 70-80 Razakars are caught while two freedom fighters embrace martyrdom.
• Muktibahini launch a successful drive against Pakistan military in Rajshahi’s Magurapara killing three killed and four policemen.
• Intense fighting between freedom fighters and Pakistan military in Dinajpur and Lalmonirhat.

October 8, 1971

• A group of Urdu-speaking people attack Bangladesh government’s special envoy Justice Abu Sayeed while he is raising support for Bangladesh in London. He sustained minor injuries.
• Muktibahini attack Pakistan military’s base camp adjacent to Shalda river in sector 2. They manage to free the river from the occupation of Pakistan military.
• A 12-13 year-old, of Maj Hakim’s company, enters Gopalpur Police Station and attack with grenade. 8 Pakistani soldiers are killed.
• Five Pakistan military men are killed when Muktibahini fighters attack them in Chauka, a northwest village in Rajshahi.
• Muktibahini fighters attack two platoons of Pakistan military in Mathuranagar under sector 8. Four hours of gunfight resulted in death of 15 Pakistan military men and three freedom fighters embrace martyrdom, four are injured.
• 30 Pakistani soldiers and Razakars are killed when freedom fighters attack Pakistani military in Betai sub-sector under sector 8.
• Pakistan and US government sign a deal for providing Tk 5 crore aid for East Pakistan.
• Education Minister Abbas Ali Khan, at a rally in Bogra’s Altafunnesa Maidan, says that India is not allowing refugees to return though the situation in the country has cooled down.

October 9, 1971

• The first batch of military officers passes from a 14-month training course near the Bhutan border. 61 young freedom fighters received the training and Cadet Officer Sayeed Ahmed received the chief lieutenant’s staff. Acting President Syed Nazrul Islam, Prime Minister Tajuddin Ahmed and chief lieutenant MAG Osmani are among others who are present in the ceremony.
• Indian Prime Minister Indira Gandhi, during an opening speech in All India Congress council held in Shimla, announced that Indian government is beside the rightful movement of Bangladesh’s people and will be beside them always. Her government will take the rightful step in any question regarding Bangladesh. India wanted to send back the refugees who had taken shelter inside its nation.
• Muktibahini attack a Pakistan military camp in Khulna. One Pakistani military officer and 10 soldiers are killed while many others are injured. The freedom fighters took possession of the available arms and ammunition.
• A team of Muktibahini fighters ambush a platoon of Pakistani military in Banpur sub-sector of sector 8. 11 Pakistani troopers are killed and a freedom fighter embrace martyrdom.
• Rangpur’s Halidabari area Razakar commander Habibur Rahman surrendered to freedom fighters with huge arms and ammunition.
• A huge number of Razakars surrender to the freedom fighters and pledged to join the pro-liberation forces.
• Pakistan chief military ordinance governor General Yahya announces to lift the ordinance 76 and instead made effect of ordinance 94. Under this ordinance, a ban is placed on propaganda harming Pakistan’s solidarity and unity and instead the ban on political activity is lifted.
• Pakistan representative in the United Nations, Shah Azizur Rahman, says the amount of refugees who had taken shelter in India is marginally above 20 lakh, and not 90 lakh.

October 10, 1971

• Indian Foreign Minister Sardar Sharan Singh says in New Delhi that the international opinion is in favour of Bangladesh. Foreign aid for refugees would not provide salvation for the political crisis of Bangladesh. Bangladesh government’s political solution would mean an acceptable solution to the government.
• Muktibahini led a drive against Pakistan military in Sylhet’s Kulaura. Five Pakistani troopers are killed. Later, 2 Razakars surrendered with arms.
• Muktibahini attack a platoon of Pakistani military in Baira sub-sector of sector 8. Four killed and two Razakars captured.
• Freedom fighters launch fierce attacks on a Pakistan military camp in sector 8 under Gojadanga sub-sector. 30 Pakistani military men are killed and 20 injured. One freedom fighter embraces martyrdom.
• Kaderia Bahini demolished two bridges in Tangail’s Charabari and Porabari.
• Muktibahini launch a courageous drive on a Pakistan military’s gunboat on the Yamuna river. The gunboat is completely destroyed.
• A delegation of the Pakistan People’s Party, led by Mia Mahmud Ali, arrived in Dhaka and told reporters that he is here to boost the ties between people of East and West Pakistan. Bhutto sent his message through this delegation. Bhutto says a new dimension is awaiting for the nation. Conspirators India is killing Pakistanis with Pakistanis. He says India is making use of a quarter and added that they should be stopped under united efforts.
• Anti-liberation forces organise a rally in Sylhet’s Chatak Bazar. Sylhet district Peace Committee convener and Muslim League leader Shahid Ali says the nation is facing a difficult test. He says every patriot would have to stand united to save the nation. The peace committee and Razakars would have to shoulder the responsibility of establishing peace in all areas.

October 11, 1971

• Muktibahini fighters attack Pakistan military in Comilla’s Kandipur Rajganj. 10 soldiers are killed.
• 41 Pakistani military men are killed after Muktibahini leveled Noakhali’s Majumdarhat, Anantapur and Parshuram areas with mortar shelling.
• Several Pakistani military men are killed and injured after freedom fighters bomb a military establishment with grenades in sector 1.
• Muktibahini fighters attack Chulkathi High School camp of Pakistan military. 10 soldiers are killed.
• People’s Party Information  Secretary Mawlana Kawsar Niazi told Dhaka reporters that the fascist and religious party of Jamaat-e-Islami are being weaponised with arms. He says Jamaat will turn Pakistan to Indonesia. The people are losing confidence in Jamaat, he says.
• Finance Minister Abul Quashem visits West Pakistan. He told reporters there that the situation is quickly settling down to normal. Patriot people and Razakar forces are building resistance against the miscreants (freedom fighters).
• A rally, organised by local peace committee, is held in Satkhira. Speakers at the programme, chaired by Advocate Abul Khayer, told the gathering that there is no force in the world that could divide Pakistan.

October 12, 1971

• Muktibahini fighters attack the Kalirbazar headquarters of Pakistan military in sector 2. 12 Pakistan military men are killed and four are injured. Two bunkers are leveled. The freedom fighters return without any casualty.
• Muktibahini fighters launch intense attacks against Pakistan military in Garagarai and Sultanpur of sector 7. Fifty military men are killed and 30 injured. One freedom fighter embraces martyrdom.
• Freedom fighters attack a convoy of Pakistan military in Baira sub-sector under sector 8. Two Pakistani soldiers are killed and several wounded.
• Indian Prime Minister Indira Gandhi, speaking at a rally in Shimla, says the refugees that arrived from Bangladesh caused a great threat to Asian subcontinent, Pakistan created a dangerous situation in the Bangladesh-India border. India is ready to combat this, she says.
• Pakistan President Yahya Khan tells people in a radio message that his military is as resolute as a mountain to defend the country. He announced December 27 to begin the National Council sessions and implementation of a governance policy.
• Visiting People’s Party delegation in Dhaka meet with local politicians at Hotel Intercontinental in Dhaka where the local politicians willed to join the PPP. Those who opined to join PPP are former provincial chief Abdus Salam Khan, Qayyum League’s Qazi Qader, Jami’ate Olamaye Islam’s provincial chief Pir Mohsin Uddin and others.
• Pakistan’s permanent representative in the United Nations complains that India had interfered in the internal affairs of Pakistan.
• Jamaat-e-Islami General Secretary Abdul Khalek, on his way to Dhaka after visiting West Pakistan, tells reporters that Razakar force is nonpartisan and are working under the command of the Pakistan military. He says the Razakars are throwing away their lives for the cause of Pakistan. He recommends sending an all-party representative abroad to counter Indian propaganda.
October 13, 1971

• Two separate clashes take place between freedom fighters and Pakistan military in Sunamganj north. Almost a thousand freedom fighters entered inside Pakistan territory in two groups and attack military camps. Freedom fighter Captain Abbas embrace martyrdom in the attack.
• Former provincial governor Abdul Monem Khan is shot at his Banani residende in the evening. Two freedom fighters drove to his house, entered his drawing room and shot him. They fled the spot after spreading panic with stengun brushfire. Monem Khan succumbs in Dhaka Medical College Hospital later that night.
• Two and half hours of intense fighting take place when freedom fighters attack Pakistan military and Razakar camp in Meduari village of Mymensingh. Eight Pakistan military men killed while others managed to flee.
• Mymensingh unit freedom fighters attack Pakistan military deputed in Gouripur Police Station. The freedom fighters take possession of some arms and ammunition from the spot.
• A team of Muktibahini fighters ambush Pakistan military on the Bhurungamari road in Rangpur. Three Pakistan military men are killed and four others injured.
• Lt Gen Niazi studies himself on the ground the activities of Pakistan military, Razakara and other collaborators on the frontiers of Comilla and other southern areas. He tells a gathering at Comilla that the nation could not enslave its future generation to the chains of slavery.

October 14, 1971

• A team of freedom fighters, led by Commander Nawzesh Uddin, engage Pakistan military in a fierce battle in Bhurungamari and Jaymonir Hat of Mymensingh. The freedom fighters capture a captain of the Pakistani artillery and eight kill of 25th battalion and take possession of huge arms and ammunition.
• Freedom fighters attack a platoon of Pakistan military in Bongaon sub-sector under sector 8. Three Pakistani military men are killed.
• A company of freedom fighters attack the Parshuram camp of Pakistani military in Feni with fire and mortar. 10 Pakistan military men are killed and 16 others are injured in the two-hour long gunfight.
• Indian Prime Minister, at a rally in Belgaon, says India would not wage war against Pakistan, however, her nation is prepared for any situation. She says the refugees would surely return to Bangladesh with security and honour. Any political solution to resolve the Bangladesh crisis would have to be acceptable to the Awami League, she says.
• Pakistan Jamaat-e-Islami acting chief Mia Tofail assures President Yahya that Jamaat activists would stand beside the Pakistan military in the face of any disaster or attack.
• A village under attack. A group of up to 250 Pakistan military, with help of peace committee, rounded up the entire village of Najirpur in Pabna and slaughter them or stab them with bayonets. 57 innocent civilians killed. The military men torch about 500 houses in the village.

October 15, 1971

• A platoon of Muktibahini fighters ambush a Pakistan military group in Comilla south. 12 Pakistan military men are killed and three are injured.
• Freedom fighters, led by Captain Mustafizur Rahman, attack Pakistan military in Dhopakhali under sector 8. Seven military men are killed and several others injured. Freedom fighters Abdul Gafur, Nayek Shahid Ali and Captain Mustafizur Rahman are wounded.
• A team of 100 freedom fighters, led by Captain Zia, attack Razakars in Morlganj in sector 11. Razakar forces sustain serious damage.
• Freedom fighters, led by Captain Huda, ambush Pakistan military near Jhikargacha under sector 9. Thirty Pakistan soldiers are killed and their arms and ammunition taken by the freedom fighters.
• Air fighters of the Muktibahini bomb Pakistan military establishment in Mogalghat beyond the borders of Rangpur. They return unharmed.
• President Yahya and Iran’s Shah Reza Pahalvi sits in a meeting in Tehran.
• Governor Dr AM Malik says at a Sylhet rally that a quarter is engaged in destroying Pakistan confused by Indian sermons. He termed the freedom fighters enemy of the country. Some students joined the miscreants and polluted the educational institutions, he says. Communication system, production and the economy are gutted. Destroyers can never settle for welfare. They are looting from in hiding because they did not dare to face the military. These so-called freedom fighters are slaves of India.
• Lt Gen Niazi praises Razakars and the collaborators of the northeast frontiers of the country for their all out assistance to Pakistan military.
October 16, 1971

• Pakistan President Yahya and Soviet President Nikolai Podgorny hold a two-hour long meeting in Tehran. President Yahya demands that Soviet take necessary steps for the unity and solidarity of Pakistan.
• Navy commanders, led by Alam, launch a courageous drive in Chalna port and destroy four ships including Lighting and Al-Murtaza.
• 17 Pakistan military soldiers are killed hit by mortar shells fired from Muktibahini fighters in Dinajpur’s Boalganj.
• Anti-liberation forces torch Justice Abu Sayeed’s Dhaka residence on Mymensingh road.
• East Pakistan Jamaat-e-Islami chief Ghulam Azam tells a Dhaka rally that the people needed to wake up from dreams that India would free East Pakistan.
• President Yahya and his Yugoslavia counterpart Marshal Tito sit for talks in Tehran.
• UN Assistant General Secretary Palmark Henry tells a press conference that though the guerilla forces could not stand against the Pakistan military, they are obstructing the relief work.
• Mahmud Ali, who came back on an emergency call from Nurul Amin, tells APP that Pakistan is cordial in bringing back its nationals and took steps in this regard, but India is toying with the matter.
October 17, 1971

• Indian Prime Minister Indira Gandhi and Yugoslavia President Joshef Tito sit in a meeting in New Delhi and discussed Bangladesh issue.
• An ambush team of freedom fighters attack patrolling Pakistan military in Comilla’s Ramzanpur. 10 Pakistani soldiers and 18 Razakars are killed in about half-an-hour of gunfight. One freedom fighter is wounded.
• Muktibahini fighters attack Razakar settlements in 23 points of Sylhet, Comilla, Jessore, Mymensingh and Rangpur. Some hundreds of Razakars are captured and a huge cache of arms and ammunition seized.
• Muktibahini fighters ambush Pakistan military men in Dashatina on Baira sub-sector under sector 8. Three Pakistani military men are killed and two Razakars injured. Freedom fighters returned unharmed.
• A team of freedom fighters attack Pakistan military in Purbadevpur under sector 1. One freedom fighter is critically injured.
• Governor Dr AM Malik praises Razakars for their contribution in a rally held in Mymensingh Circuit House.
• East Pakistan Finance Minister Abul Quashem, in a programme in Chittagong Muslim Institute, says that a total of 55,000 trained and armed Razakars are operating in the country.
October 18, 1971

• A strong team of Muktibahini fighters shell Badisa Ghat and Rajashar Dighi settlements of Pakistani soldiers in sector 2 with mortar and RRs. 26 Pakistan military men are killed and some bunkers leveled.
• Freedom fighers, led by Abdul Wahab, attack a company of Pakistan military in Comilla’s Mandabhag Bazar area. One Pakistani major and 100 other militia men are killed and some injured. Huge cache of arms and ammunition seized.
• Indian Prime Minister Indira Gandhi, at a programme in New Delhi, bins Pakistan’s allegation regarding armed forces in the borders. She says it is the armed freedom fighters of Bangladesh who are engaged in fight with Pakistan military at the borders. She says Muktibahini had 150,000 fighters inclusive of almost 50,000 members of police, BDR and military. They are all Bangalis and joined the fight after March 25. They are fighting for their motherland.
• People’s Party chief ZA Bhutto announces that his party is ready to form alliance with any other party.
• One freedom fighter embrace martyrdom and six others gravely wounded after Pakistan military men attack them in Gourinagar under sector 5. The two companies of fighters were travelling on 25 boats led by Lt Taheruddin.
• East Pakistan Assistance and Rehabilitation Minister Prof Shamsul Huq tells a rally in Chittagong that revolt never came out successful in the past. “The conspirators are being misled by Indian propaganda. Even then, the president has offered them pardon and safe return. In no manner 13 crore people could suffer for a few miscreants.”

October 19, 1971

• A 50-man team of fighters, led by Habibur Rahman, attack Pakistan military settlement in Sunamganj Mahakumar Nikli Police Station. One freedom fighter embrace martyrdom. 25 rifles and huge ammunition seized.
• Four Pakistan military men are killed in a courageous drive of the Muktibahini fighters in Kamalpur under sector 2.
• Captain Hafizuddin-led Zid force’s company B attack and destroy Champaran Tea Factory in Sylhet.
• A time-bomb explosion kill seven people, injure 12 and guts nine vehicles in Dhaka’s Motijheel near the EPIDC building.
• Indian Prime Minister Indira Gandhi, speaking at a programme in New Delhi, says a dangerous situation is prevailing in the India-Pakistan border. India is trying everything possible to avert war.
• President Yahya says in Rawalpindi that he does not want war with India. However, if India continues to infiltrate Pakistan with Bangali guerillas and attack, then he will avenge it. India’s interference in internal affairs will not be tolerated, he says.
• Lt Gen Niazi visits the Razakar training centre in Pabna and says that death is inevitable for humans, but the Razakars would undoubtedly be treated under the grace of the almighty if they embrace martyrdom fighting the enemies.
• A government announcement says Pakistan air force chief Air Marshal A Rahim complains and protests Indian air attacks to his Indian counterpart and threatens retaliation.
• Jamaat-e-Islami chief Mawlana Moududi, in a statement, urges the rich to help those in need in the face of massacre of the miscreants (freedom fighters).
October 20, 1971

• A joint memorandum is issued after talks between Yugoslavia President Marshal Tito and Indian Prime Minister Indira Gandhi. The memorandum called for political solution with elected representatives for the Pakistan crisis.
• A strong Pakistan military unit attack Muktibahini settlement near Kamalpur of Comilla. One Pakistan military officer and 30 soldiers are killed.
• Daylong gunfight between freedom fighters and Pakistan military in Hilli border under sector 6.
• Muktibahini fighters attack Pakistan military settlement in Miarbazar under sector 2. Twenty-one Pakistan soldiers are killed and several others injured in the two-hour long fight.
• One Pakistan military captain, 8 soldiers are killed and several others injured after intense shelling between Muktibahini guerillas and Pakistan military in Bogra’s Tiurpara.
• UN Secretary General U’thant discusses Bangladesh issue with Indian envoy Samar Sen and Pakistan representative Agashahi at his office.
• Food and Agriculture Minister Nawzesh Ahmed, in a visit in Kushtia, urged the people to draw inspiration from Pakistan’s ideology and resist the enemy.
October 21, 1971

• Muktibahini fighters ambush Pakistan military convoy with booby-traps in Miabazar area under sector 2. Sixteen Pakistani soldiers are killed in the explosion and 5 others are injured.
• A company of guerilla fighters, led by Akmal Ali, barricaded the Manohardi settlement of Pakistan military under sector 3. Twenty-five Pakistan soldiers are killed and 11 others captured in the fight that took place over some hours.
• Pakistan President Yahya Khan and PPP chief ZA Bhutto sit in a meeting.
• PPP Vice President Mia Mahmud Ali tells reporters in Dhaka that the freedom fighters are becoming a threat for those who are encouraged to participate in the by-polls. PPP would boycott the polls if this situation continues. He demanded for the contestants’ security.
• UN Secretary General U’thant proposes India and Pakistan to make UN a mediator to ease the tension between the two countries.
October 22, 1971

• Ninth Bengal regiment fighters attack Pakistan military settlement in Kosba of Comilla. Twenty-six Pakistan soldiers are killed and 18 others injured in the 3-hour long fight. Grenades, guns, mines and other ammunitions are seized.
• Muktibahini fighters ambush a Pakistan military boat in Dhaka’s Tejgaon. Five soldiers are killed and six others are injured. The boat is destroyed.
• A team of freedom fighters led by Immuzaman in sector 2 attack Pakistan military in Harisardar bazar killing 35 military men.
• A unit of Pakistan military and Razakars attack Muktibahini settlement in Naikali under sectory 8. Three Pakistan soldiers are killed and 15 Razakars injured.
• Pakistan People’s Party Chairman ZA Bhutto says the people want the power be handed over to PPP. He says his party is now the largest in Pakistan and the national council after Awami League was banned.
• East Pakistan Agriculture Minister Nawajesh Ahmed tells a Magura rally that the prevailing situation is to be blamed for lack of understanding of the ideology of Pakistan.
• East Pakistan Health Minister Obaidullah Majumder tells a rally at Rangunia that a quarter of the Awami League leaders committed treachery with the people. They are hurting the ideology of Pakistan with ‘Bangladesh’ slogan.

October 23, 1971

• Muktibahini fighters ambush a platoon of Pakistan military in Betai sub-sector under sector 8. Two Pakistani soldiers are killed and three others injured. Muktibahini fighters returned to safety without harm.
• A team of freedom fighters attack Muhammadpur settlement of Pakistan military in Gojadanga sub-sector under sector 8 with mortar shells. Pakistan military sustained 10 casualties.
• A team of freedom fighters attack Razakars in Kalihati Tanar Charan. 39 Razakars and three militias are killed.
• A team of freedom fighters shell Kalirbazar settlement of Pakistan militia in Chouddagram under sector 2. Pakistan sustain 12 casualties.
• Indian Prime Minister Indira Gandhi, before departing to sit in discussion with some other countries, speaks to the people through the radio. She urges the people to exercise restraint, unity and discipline in face of the prevailing crisis.
• People’s Party Chairman ZA Bhutto says in Karachi that he will withdraw his party’s candidacy in the East-Pakistan by-polls if the threats on his party continue.
• East Pakistan Labour, Social Welfare and Family Planning Minister ASM Solaiman tells PTI that workers had joined industries and are boosting production.
October 24, 1971

• Five Pakistan militia men are killed when they engage Muktibahini fighters during looting and arson in Birunia village in Bhaluka.

• A team of freedom fighters attack Pakistan military led by Subedar Golam Ambia in Kamalpur, under sector 2, killing three militia members.
• Pakistan military shell Muktibahini settlements in Sadipur under Bongaon sub-sector in sector 8. Two Pakistan militia members are killed and 50 others injured. One freedom fighter embraces martyrdom.
• A team of freedom fighters attack Berni camp of Pakistani soldiers in Baira sub-sector under sector 8. One Razakar surrenders.
• Bangladesh force headquarters’ war bulletin says Muktibahini fighters blew up a Pakistan truck, killing six militia men, with mines on the Daudkandi road in Comilla.
• Indian Foreign Minister Sardar Sharan Singh, speaking on the UN day, hopes an end to the problems of Bangali refugees and bid their safe return to Bangladesh with honour.
• Indian Prime Minister Indira Gandhi reached Brussels to begin her week-long visit to Belgium, Austria, Britain, UK, France and West Germany.
• Pakistan representative in the UN Shah Azizur Rahman says the Bangladesh dream is now fading.
• People’s Party Chairman ZA Bhutto reaches Cairo to begin his middle-east visit as a special envoy of Pakistan President Yahya.

October 25, 1971

• Muktibahini fighters attack Pakistan settlements in the Kamalpur frontier of Mymensingh and seize huge arms and ammunition.
• Pakistan military attack from the air on Muktibahini settlements in Mandabhag, Mangalpur and Sreepur under sector 8. After almost three-hours of fighting, Pakistan sustain 58 casualties. Two freedom fighters embrace martyrdom and nine others are wounded.
• A team of fighters attack Pakistan military base in Shahbajpur in Sylhet killing three Razakars and injuring eight others.
• A platoon of Muktibahini fighters attack Pakistan militia on Sarigowain road under sector 5, killing five Razakars. Others flee.
• A Muktibahini team attack Razakars in Fulbaria Police Station. 30 Razakars are killed and 25 others are wounded.
• Pakistani envoy in Nepal embassy Mostafizur Rahman announces his support for Bangladesh.
• Kustia and Dinajpur district administrators Md Shamsul Haque and Farashuddin are ousted from civil service after they announce their support for Bangladesh.
• A Times report says the war would intensify. 80,000 Pakistani army men are spreading to Indian borders and 60,000 Muktibahini guerillas are prepared for confrontation.

October 26, 1971

• Indian delegation in Egypt to meet President Anwar Sadat bearing message from Prime Minister Indira Gandhi.
• Intense fighting between Muktibahini and Pakistan militia in Kosba of Comilla, Kayempur, Salda river, Nayanpur and Chouddagram areas. Fighting continue in Sylhet, Mymensingh, Rangpur, Bogra and Jessore frontiers.
• Awami League’s working committee session, held in Mujibnagar, clearly states that freedom of the East is the only solution for Bangladesh issue. Other countries are urged to support the cause of Bangladesh.

October 27, 1971

• Muktibahini attack Razakar and Pakistan militia settlement in Rajshashi’s Bagdani. The camp is completely destroyed and five Razakars killed.
• Muktibahini fighters of sector 8 attack Pakistan militia in Ratanpur killing two and capturing one Razakar.
• Guerilla forces blast bombs south of Dhaka’s governor building and near Motijheel Central Government Girls School’s headmistress’ house.
• Muktibahini shell Pakistan militia in Chittagong, Comilla, Rangpur and Jessore frontiers. Pakistan complains to India alleging that it is the deed of Indian military. India rejects the claim.
• Mohammad Kavtiar is killed when guerillas attack the residence of by-polls participant Mohammad Bakhtiar’s Chittagong residence.
• People’s Party Chairman ZA Bhutto heads for Geneva after meeting Egyptian President Anwar Sadat in Cairo. Bhutto is acting as a special envoy of Pakistan.
• A Lebanese media report cites Begum Akhtar Solaiman to state that 7.5 crore people in East Pakistan is against the liberation forces. They are all helping Pakistan military. Sheikh Mujib lost popularity because he did not keep his word.
• Islami Chhatra Sangha Cox’s Bazar town unit is formed with Mahiuddin as its president and Aliullah general secretary.

October 28, 1971

• Muktibahini’s tenth Bengal regiment of sector 2 along with artillery unit attack Pakistani militia settlements in Nilakshi base. The camp is occupied by freedom fighters.
• Muktibahini ambush group hit a Pakistani bunker with LMGs killing one soldier in sector 1.
• Muktibahini fighters attack a strong Pakistan military base in Dhalai of Sylhet. Sipahi Hamidur Rahman embraces martyrdom. Several Pakistani militia members are injured.
• B company of Z force use artillery to attack Pakistan militia settlement in Patrakhola tea factory. Pakistan military is defeated and the camp is occupied.
• 3 Pakistan soldiers are killed attacked by Muktibahini ambush team in Baira sub-sector of sector 8 in Fatehpur.
• 50 elected uncontested in the by-polls of national council in East Pakistan. Among those elected uncontested are Jamaat chief Ghulam Azam, provincial council Muslim League chief Khaza Khairuddin, Qayyum Muslim League General Secretary Khan A Sabur, Jamaat provincial assistant chief Abbas Ali Khan and AKM Yousuf.
• A military spokesperson in Dhaka says Razakars are facing off Indian spies everywhere in the province. The countrymen are proud of their achievements including protection of railways and roadways.
• A member of UN General Assembly AT Sadi tells Pakistani students in Houston that the government formulated election for democracy. But, India is plotting to cancel the by-polls by firing on the borders and infiltrating their spies into the country.
October 29, 1971

• Pakistan military shell Muktibahini settlements in Nilkkhi base in Comilla. After nearly five hours of gunfight, 40 Pakistan military members are killed and two freedom fighters dead.
• Pakistan military continue shelling with canons and rockets through Sonaimuri and Chatkhil in sector 2. They are intercepted by a Muktibahini team triggering intense fight of nearly three hours. Five innocent civilian lives are lost. Pakistan military sustain some casualties.
• Bangladesh newspaper report that Muktibahini’s eight guerillas attack Nawabganj Police Station and kill 52 Pakistan military men and capture 28 armed Razakars. One freedom fighter embraces martyrdom.
• Pakistan president Yahya Khan says in Rawalpindi, that over 20 lakh East Pakistanis took shelter in India. An international agency will oversee the repatriation of true Pakistanis.
• Indian Prime Minister Indira Gandhi reaches London to discuss Pakistan-India issues and other important international affairs with British leaders.
• Lt Gen Niazi visits the northeastern frontier and instructed the security forces to resist any form of attack.
• An advertisement is published in The Guardian on behalf of Pakistan Solidarity, a London-based organisation, where Indira Gandhi is accused to have been destroying Pakistan. It says, India is holding the refugees in the process.
• Two hundred Razakars take oath in Rajshahi. Iftehadul Olama chief and district peace committee Secretary Azizur Rahman conducted the oath taking and urged to eradicate enemies with jihadi attitude.

October 30, 1971

• A branch of Muktibahini led by Taheruddin of sector 5 attack a base camp of Pakistani military in Gourinagar. After intense fighting, 11 Pakistani soldiers are killed and two freedom fighters martyred.
• A Freedom fighters’ group led by captain Giasuddin Chowdhury Under sector seven ambush a Pakistani convoy at Kumarpur Bridge. A large number Pakistan soldiers sustained casualties and two of their cars are destroyed.
• A branch of Muktibahini led by Afsar made attack on Pakistani soldiers in Fulbaria Thana of Kaliakoir. Seven Pakistani soldiers are killed.
• Special Ambassador of the president of Pakistan and PPP chairman Zulfiqure Ali Bhutto visits Paris.
• Finance minister of East Pakistan Abul Qashem meets President Yahya Khan.
November 1, 1971

• Two Pak army soldiers are killed and five injured in an ambush carried out by Mukti Bahini at 2 No. sector.
• Mukti Bahini ambush a group of Pak army soldiers at Noapara of Jessore district. Six army members are killed and four hurt in the ambush and freedom fighters return safely to their place.
• Freedom fighters from Sylhet air forces with Indian allied force attack on Pakistani BOP and a factory in Sylhet. In the attack, two members of 30 Frontier Force Regiment of Pakistani army are killed and many of them injured.
• Two Pakistani army members are killed and three others injured when Mukti Bahini fighters ambushed in Kahur area at 2 no. sector.
• A Pak soldier is killed in a mine explosion carried out by the Mukti Bahini on Birishiri-Bijoypur road in Mymensingh.
• Indian Prime Minister Indira Gandhi and her British counterpart Adward Hith discuss about Bangladesh’s Liberation war in a two-hour long meeting in London.
• Pakistani president Gen Yahya Khan in an interview with Daily Mail, says that a war between India and Pakistan will be held soon and China will not tolerate if India and Pakistan attack each other.
• MH Sufi, agricultural adviser to the Pakistan President Yahya, tells a press conference that there is no food crisis in East Pakistan.
• Pakistan representative Mahmud Ali meet with the United Nations General Secretary U Thant during the UN General Assembly.
• Election Commission says that election will be held only in twenty three constituencies because 55 contestants are elected in Pakistan National Assembly election. And three contestants are elected unopposed in the by-polls, the EC says.
• In London, Indian Prime Minister Indira Gandhi at Indians rally says that she requested to Britain to create pressure on Pakistan for resolving the issues of Bangladeshi refugees in India and Bangladesh’s independence politically. India did not desire war, she says. The issue must be resolved through discussions with the leaders of Bangladesh (East Pakistan) and Pakistan, the prime minister says.
• Pakistan President Yahya Khan in an interview with the New York Times says that he could consider release of illegal Awami League party head Sheikh Mujibur Rahman if the nation wants.Yahya said that he did not want to worsen the situation. But there would be war if India continued to provide assistance with arms to the miscreants (freedom fighters), he tells the New York Times.
• Nurul Amin leaves Dhaka to meet with Pakistan President Yahya Khan. He will press the demands to the president about inclusion of eight-point manifesto of PDP in the draft charter, he tells the reporters at the airport.

November 2, 1971

• Mukti Bahini equipped with mortars attack a camp of Pakistani army personnel at Kayempur in Comilla. Two army men are killed and four others sustain injuries during the attack.
• Ten Pakistani army men are killed when Mukti Bahini (freedom fighters) attacked on their Bhoyadanga camp in Sri Bordi of Mymensingh.
• Mukti Bahini get locked in a clash with Pakistani army soldiers and Razakars at Alinagar in Sylhet that leaves three Pak soldiers dead and five injured.
• Mukti Bahini ambush a platoon of Pak army men at Panchhara at 2 no. Sector. Three Pakistani soldiers are killed and four injured in the ambush.
• Three groups of Mukti Bahini dig a bunker of 1200 yards at three camps of Pak army situated at Parshuram and Phulgazi of 2 no. sector. When a patrol team of the Pak army comes near about 100 yards off the freedom fighters who are in the bunker, they (Mukti Bahini) swoop in on them.  A total of 10 Pak army members including a  lieutenant are killed in the attack.
• Thirty two Bangalee high officials including three former central secretaries withdraw their positions as government officials.

November 3,1971

• SM Masud, Press Attaché of Pakistani embassy in Tokyo and its third Secretary Mohammad Abdur Rahman cut their relations with the country and express solidarity with the Bangladesh government. Wakilur Rahman, charge the affairs of Pakistan in Switzerland, also does so and announces his solidarity with the Bangladesh government.
• China threatens India to resolve all problems including Bangladesh war issue with Pakistan through discussions. And China also warns India not to assist Bangladeshi freedom fighters by providing arms.
• Biplobi Bangladesh newspaper publishes a report saying that the brave freedom fighters of Kishoreganj town of Mymensingh are able to free the area from the Pak army members. Mukti Bahini also takes control of Pakundia, Hossenpur, Katiadi, Astogram, Karimganj, Itna and Nikli thanas of Mymensingh. At least 20 Pak soldiers are killed and many injured during the face to face battle between Pak army and freedom fighters.
• According to an order of Captain Huda, lieutenant Alik Gupta leads a platoon of EPR and ambushes at BOP near Hijli of Maslia. The Pak army men go back in the face of the firing by the group. The Pak army soldiers in a few minutes return and attack again on Lt Gupta at the Riar Support. Young officer Lt Alik fight bravely with the Pak soldiers. Commander Najmul Huda with two platoons of Mukti Bahini rush to the spot when he hears about their (Mukti Bahini) fight and attack to the Pakistanis. At the end of the gun battle, many flee the spot taking huge arms and explosives. Later 12 bodies are found there.
• In Chittagong, an oil-tanker capsizes at the port after the Mukti Bahini commandos carry out a mine explosion on the ship. Eight crews of the ship are killed in the explosion.
November 4, 1971

• Muktibahini ends up in an assault with West Pakistan policemen from Barhatta Police Station and Tantar area in Mymensingh. Muktibahini capture the police station and hold 105 Razakars. They also seize 80 rifles and 1 L.M.G from the police station, and some mortars and 12 bombs from Tantar area.
• In Chittagong, a team of Muktibahini manage to sink a big oil-carrying ship named ‘Mahtab Jabed’ by explosion. 7 sailors including a fireman are killed in this assault.

November 5, 1971

• Muktibahini charge fierce attacks on Pakistan soldiers based at Achim Porabari under Fulbaria Police Station with the help of the artillery team. 14 Pakistan soldiers are killed and 6 are injured in this conflict that lasts for around 6 hours. Pakistan forces are forced to retreat and left Achim Porabari against the assault by the freedom fighters.
• Muktibahini ambush on Pakistan soldiers at Horinkhola in Chittagong. 7 Pakistan soldiers are killed and 8 are injured in this assault.
• Guerilla commandos of Muktibahini throw around 50 bombs at various important places in Tangail city. Some Pakistan soldiers are wounded in this assault. Several grenades explode at a Razakar base behind the main post office in Tangail which kills 3 Razakars and injures 4 of them severely.
November 6, 1971
• Muktibahini get engaged in a conflict with Pakistan soldiers at Milanda- Mahmmadpur area within Jamalpur sub-division in Mymensingh district. 12 Pakistan soldiers including a junior commanding officer are killed in this conflict. On the other hand, one valiant freedom fighter becomes a martyr.
• Muktibahini ambush Razakars in Karani area of Rangpur district. 8 Razakar members are held and 5 rifles are seized by the freedom fighters. Besides that, 10 Pakistan soldiers are killed in a successful operation by Muktibahini at Paharpur area.
November 7, 1971

• Muktibahini get engaged in a conflict with around 500 Pakistan soldiers at a place called Dhorapara under Ghatail Police Station from half past four in the morning. A fierce battle takes place for 6 hours between the two forces. 6 Pakistan soldiers including a Major and 3 Razakars are killed in this battle along with many being injured.
• Muktibahini ambush on a strong team of Pakistan soldiers at Mondobhag in Comilla district. 15 Pakistan soldiers are held casualties in this assault. On the other hand, 3 freedom fighters are injured.

November 8, 1971

• Pakistan forces attack on Shahbajpur base of Muktibahini in Pabna. Freedom fighters counter attack in which 3 Pakistan soldiers are killed and 3 are injured.
• In Sector 8, Pakistan forces attack on Muktibahini base in Kaykhali. Severe conflict erupts when freedom fighters counter attack. 2 Pakistan soldiers are killed and many are injured in this conflict.
• In Sector No. 1, Muktibahini ambush on a patrol team of Pakistan Army on Ramgarh- Korerhat Road. 4 Pakistan soldiers are killed and 2 are injured as freedom fighters assault them with L.M.G, carbine, and hand grenades.

November 9, 1971

• 2 companies of soldiers from Muktibahini’s 10th Bengal ambush on Pakistan Army base at Parshuram and Beluniya at half past eleven at night. Many Pakistan soldiers are killed and ample weapons and ammunitions are seized by the freedom fighters in this assault. After four hours of fight, Pakistan soldiers retreat and escape, leaving their base at Parshuram and Beluniya behind.
• In Sector 2, Muktibahini get engaged in a severe conflict with around 600 Pakistan soldiers at a place called Kopitola. Many Pakistan soldiers are severely injured in this battle that lasts for around 6 hours.
• Muktibahini attack Kamargaon Pakistan Army base in Sylhet. 10 Pakistan soldiers are killed in this assault. Freedom fighters return to their base safely after the operation.
• In Mymensingh, Muktibahini ambush on a patrol team of Pakistan Army at Shyamganj- Shambhuganj area. 7 Pakistan soldiers are killed and 5 are injured in this ambush.

November 10, 1971

• In Sector 8, Muktibahini get engaged in a conflict with Pakistan forces at a place called Alipur. 5 Pakistan soldiers are killed and several are injured in this fight. On the other hand, one valiant freedom fighter became martyr.
• In Sector 8, Muktibahini charge a fierce attack on Razakars at a place called Terail. 16 Razakars are held by the freedom fighters in the assault. Freedom fighters also seize 16 rifles, 11 bayonets, and some ammunition.
• Muktibahini  lead a fierce attack on Pakistan Army base at Borolekha in Sylhet. 15 Pakistan soldiers are killed in this assault and freedom fighters seize ample weapons and ammunitions.
• In Sector 7, Muktibahini made an ambush on a train carrying Pakistan troops near Kurigram. 8 compartments of the train carrying troops are destroyed in land mine explosion during the ambush, in which 8 Pakistan soldiers including an officer are killed. In a separate incident, Muktibahini ambush on a Pakistan Army car carrying troops on its way from Kurigram to Chilmari. 3 Pakistan soldiers including the driver and 3 Razakars are killed in the ambush.

November 11, 1971

• Pakistan army attack a group of the allied force, assembled with NAP, communist party members and Chhatra Union members, at Betiara area near Comilla frontier. After a fiery fight, Pakistan troops retreat. Nine freedom fighters including Nizamuddin Azad and Sirajum Munir embraced martyrdom in the battle.
• Muktibahini attack Kamalpur Pakistan base in Comilla with mortar shells. Five Pakistan troops killed and 12 wounded. In a separate drive, Muktibahini kill two Pakistan military men in an ambush at Chaora area.
• Six are killed and 55 injured in a car bomb blast near Baitul Mukarram market in Dhaka in the afternoon. The military arrest a guerrilla from the spot.
• Muktibahini ambush Pakistan army on Nasti-Gugri highway at Sector No. 8. 10 military men and a Razakar are killed in a mine attack.
• Muktibahini guns down a Pakistani fighter jet with a Light Machine Gun as three jets try to attack their bases at Belunia and Parshuram area around 3:50pm.
• Indian PM Indira Gandhi at a press conference in Bohn says that India wants to see a political resolution in East Bengal according to the people’s choice.
• CMLA General Yahya Khan orders special tribunal against the freedom fighters and their associates.
• Military administration in Dhaka orders to dig trenches in all civilian areas of the province.
• A team of Pakistani representative goes to China to acquire additional support. They request China to help Pakistan with fighter jets and modern warfare arsenal, reports BBC’s special correspondent David Clarke. Chinese weapons are on the way to Pakistan as the meeting continue, he added.

November 12, 1971

• Muktibahini attack Alamdanga Pakistan army base in Kushtia. Pakistan troops fire back in retaliation. 17 Pakistan soldiers killed and two freedom fighters are martyred. In another skirmish in Alamdanga, a Pakistani ranger, 19 Razakars and a Pakistani cop are killed by the Muktibahini fighters.
• Seven Pakistan soldiers are killed in a Muktibahini ambush at Aarial area in Sylhet.
• At Sector No. 2, Muktibahini kill eight Pakistan military men in an ambush. In another incident, four Pakistan troops are killed and five injured in Chailashia region.
• At Sector No. 4, Muktibahini attack Pakistan army at Juri-Goalbari region and kill five Pakistan soldiers and a Razakar.
• Seven Pakistan troops are killed at sector No. 1 when a platoon of freedom fighters ambushes them.
• At sector No.7, two companies of Muktibahini assisted by Indian BSF attack Rajarampur Pakistan army base. 10 army men along with an officer. 60 Razakars are killed in the attack. Also, 12 Razakars arrested. Seven freedom fighters are martyred.
• If Pakistan is attacked, the Muslim world will stand beside them, Jamaat-e-Islami Secretary General Chowdhury Rahmat Elahi tells journalists after touring Europe and the Middle East with a high officials’ representative team to preach Pakistani propaganda.
• French President Georges Pompidou and West Germany Chancellor Willy Brandt sends emergency letters to Pakistan President General Yahya Khan.
• Returning from China, Zulfikar Ali Bhutto says that Pakistan is not alone anymore. China will extend its complete support to them.

November 13, 1971

• Freedom fighter Subedar Major Lutfur Rahman along with his platoon attack Laxmipur Razakar camp. The sudden attack cause many Razakar casualties. Civilians helped the fighters to achieve success in the operation.
• A team of guerrilla led by Dulu from Mahimaganj destroys a special train carrying Pakistani troops with dynamites. Around 150 Pakistan military men are killed in this attack.
• Muktibahini eradicate Pakistan military men from Bhurungimari with the help of the allied force. Brigadier Yoshi of Indian army, Sector Commander KM Bashar and sub-Sector Commander Major Nawajesh carried out the operation. Pakistan army incur numerous casualties. Three taken captive.
• 30 Pakistan troops are killed in Hamzapur sub-sector as BOP attack Ghanepur region.
• Lt Colonel Taher calls company commanders of the Muktibahini to plan an attack on Kamalpur Pakistan army base. He advises them to ambush the base around with 85 freedom fighters. He led the battle.

November 14, 1971

• Quader Siddique calls an emergency meeting of the company commanders of south-western regions at Fatepur to collect report of the war field. He orders them to take position after every few miles on Dhaka-Tangail highway and to convey reports to him.
• Major General Rao Farman Ali in a Khulna workers’ rally urges the gathering to speed up the industrial development of the country forgetting everything else. “Our army is ready to defend any attack, nothing can destroy the unity and integrity of Pakistan,” he referred to India.
• Muktibahini kill four Pakistan army men including a captain in Satkhira by destroying a military SUV.
• Muktibahini ambush three military vehicles in Rangpur and destroy two of those. On the same day, they capture huge amount of ammunition after a battle in Lalmonirhat.

November 15, 1971

• Pakistan admits that since March 25, four CSP and an EPS official were killed in different parts of the province: Kushtia DC Nasim Waqar Ahmed on March 31, Chuadanga SDO Mohammad Iqbal on April 15, Naogaon SDO Mohammad Nisarul Hamid on April 16, Sirajganj SDO AK Shamsuddin on May 20 and Jessore sub-Judge Mozaffar Hossain (EPS) on September 3.
• Three Peace Committee members are killed as Muktibahini guerrilla attack a meeting at Basabo in Dhaka.
• Pakistan is ready to talk with India to reach to a solution about East Pakistan, says Ibrahim Khan, administrator of independent Kashmir (Azad Kashmir) and special envoy to Yahya Khan in Tunis.
• Muktibahini successfully destroy Satkhira power plant.
• Two officials of West Germany consulate in Dhaka are killed in a land mine explosion at Sonargaon in Narayanganj. Another strong bomb explosion at the dockyard on the bank of Shitalakkhya River.
• Five Pakistan troops are killed at Chagalnaiya in Noakhali during a Muktibahini attack.
November 16, 1971

• Indian PM Indira Gandhi during an executive committee meeting of the Congress in New Delhi says that the situation of Bangladesh will be solved within a month or two.
• Bodies of Dr Azharul Haq and Dr Kabir are found under a bridge beside Notre Dame College in Motijheel. Razakars and Pakistan army abducted them from their residence and later killed them.
• Muktibahini commander in Ajmiriganj, Jagatjyoti Das with his 45-member strong group, take shelter. Their cover is blown and the Pakistan army attacks them. After a battle over two and half hours, Jagatjyoti and his comrade Upendra are martyred. Muktibahini retreats. Pakistani military men take control of Ajmiriganj.
• Muktibahini kill six Pakistan troops after attacking Muktagachha Police Station in Mymensingh. On the same day, another six Pakistan troops are killed at Gondagari in Rajshahi.

November 17, 1971

• Administration imposes a curfew in Dhaka city from 8:30pm to 5:30am. Four freedom fighters are killed in different parts of the city during conflicts with the army. A few hundred youth, alleged freedom fighters, are arrested by the military on the night.
• Muktibahini and Pakistan army confront at many fronts in Comilla, Khulna and Barisal.
• PPP chairman Zulfikar Ali Bhutto says in Karachi that people of Pakistan will not accept any puppet government. If it is formed, a revolution will be inevitable.
• Mia Mamtaj Doulatana warns those who “ruined the national unity” that seven pro-Pakistani political parties are united to fight these “traitors” till the last breath.
• General Niazi goes to visit Lalmonirhat. He meets army officials, Razakars, Mujahids and civil force members. He discusses strategies with them. They promise their top leader to continue fighting against the “traitors”.
• Pakistani leader Mahmud Ali congratulates Chinese representatives during the UN General Assembly, saying that China’s affiliation to the UN will help the organisation to achieve its “goals”.
November 18, 1971

• Indian government urges the European Common Market to extend help for the Bangladeshi refugees in India. They also urge for 311,000 tonnes of rice, 175,000 tonnes of wheat, 50,000 tonnes of sugar, 187,000 tonnes of lentil, 40,000 tonnes of salt, 8,300 tonnes of powdered milk and 434,000 pieces of blankets from ECM.
• CMPLA General Yahya Khan orders ousting of KK Panni, Pakistani ambassador to the Philippine, Councilor Humayun Rashid Chowdhury in India, Second Secretary AM Mustafizur Rahman in Kathmandu for their loyalty to Bangladesh.
• The US will support steps taken by India and Pakistan on mitigation of heat in the region, but will not take any step in this regard.
• Muktibahini attack a group of Pakistan troops, supported by a faction of Razakars, near Agra Pukur area in Rajshahi. 10 troops and a few Razakars are killed in the battle. A freedom fighter is martyred.

November 19, 1971
• Patgram sub-Sector Commander Capt Matiur Rahman with his troops attack strong Pakistan base in Borokhata. Pakistan troops retreat and build defence at Hatibandha.
• Provisional President Syed Nazrul Islam and Prime Minister Tajuddin Ahmad send Eid greetings to the citizens. “That day is not very far, when we will celebrate Eid on a free Bangladesh,” they say.
• Abdul Hakim, an armed Razakar from Bhaluka Razakar base, surrenders to Muktibahini.
• Muktibahini kill two Pakistan troops at a skirmish at Rajnagar in Comilla and hold captive five armed Razakars.
• Three Pakistan military men are killed as Muktibahini attack a military SUV in Mymensingh. Muktibahini captured the SUV and three rifles.
November 20, 1971

• India hopes intervention of the UN’s secretary general on the Bangladesh tragedy. She says that it is not only about the matter of Indo-Pakistan war, it is the fate of seven and half crore Bangladeshis on stake. “India has no intention to start an armed conflict with Pakistan,” she says.
• Sector Commander Major Shawkat calls a meeting before attacking Tengratila at Baashtala Sector HQ. Captain Mohsin, Captain Akbar, Capt Helal, Lt Mahbubar Rahman and a few FF leaders are also present at the meeting.
• A conflict breaks out at Kaliganj between Muktibahini and Pakistan armed forces in Wapda Colony. 3rd Rajput battalion of the allied force produced artillery support in the battle from Hingolganj. 40 Pakistan troops are held captive.
• Pakistan defense from Naukuchi to Ahmadnagar is weakened due to severe attacks of the Muktibahini. They retreat from their positions.
• Sahebganj sub-Sector Commander Major Nawajesh Uddin with his troops attack Pakistan force. Rayganj came under Muktibahini control. Lt Ashfaq-us Samad is martyred in the battle. He is given ‘Bir Uttam’ medal of honour posthumously. 20 Pakistan troops are killed.
• Muktibahini destroy newly-made railway bridge at Gochihata in Kishoreganj. A fierce battle breaks out in the region. Kishoreganj town becomes desolated.

November 21, 1971

• If situation in Bangladesh is not controlled within two weeks, India will take stern steps and declare emergency, Indian PM Indira Gandhi says in a letter to the western leaders. She also promises acknowledgement to Bangladesh in such situation and support to Muktibahini explicitly, a report of Times magazine says.
• British Prime Minister Edward Heath sends a letter to Pakistan President Yahya Khan urging the quickest solution for prevailing crisis.
• Muktibahini take captive 13 Razakars assaulting one of their bases at Natun Bazar in Comilla. 13 rifles and huge amount of ammunitions seized.
• Five Pakistan troops including a Major are killed in a mine explosion on Srighat-Goyainghat highway in Sylhet.
• Seven Pakistan troops are killed during a Muktibahini-military confrontation at Laxmipur in Noakhali. Muktibahini used mortars in that battle. 1,100 rounds of ammunition and a Chinese rifle are recovered.
• Muktibahini accompanied by the allied force attack Pakistan army at Chaugachha in Jessore. Both sides used tanks and heavy artillery in this battle. Pakistan force eventually retreated. Six Pakistan tanks are destroyed. Pakistan army used 14 Chinese tanks and 500 troops.

November 22, 1971

• Pakistan army retreat to Garibpur and Jagannathpur from Chaugachha. Both the sides used air attack on this day’s battle. Pakistan lost three Sabre fighter jets, 13 tanks and several troops.
• Indian PM Indira Gandhi in New Delhi says that India will welcome if Pakistan consider the relationship between the two neighbours warmly. President Yahya should have freed Sheikh Mujib to show sincerity, she adds.
• The allied force attack Chandrapur Pakistan army base, three miles away from Kasba. Indian army loses 45 troops in hands of Pakistan raiders. Lt Khandaker Abdul Aziz of Muktibahini is martyred.
• Muktibahini kill seven and wound 10 Pakistan troops at Durgapur camp in Noakhali.
• Muktibahini kill three Pakistan troopers including a captain on a military SUV on the way to Satkhaira from Jessore.

November 23, 1971

• As the Pakistan army became vulnerable in the frontiers day by day, President Yahya Khan declares emergency. Pakistan is invaded, he says.
• Pakistan troops attack and regain Chandrapur from Muktibahini. Major Ainuddin of Muktibahini sends a team to bring in the bodies of dead freedom fighters. Pakistan troops opened fire on the team and killed several more freedom fighters. India lost six soldiers as well.
• Muktibahini attack Pakistan base at Mondobhag region and kill many Pakistan troops that compelled them to flee. Later, the Pakistan military attack a Muktibahini camp near Monora railway bridge with help of 106th RR Artillery battalion and destroy a bunker. Muktibahini fought with the last drop of their blood and pushed the intruders towards Burichang and Comilla. A freedom fighter is martyred and four others are injured.
• Muktibahini kill six Pakistan troops and Razakars with mortars at Srirampur in Khulna.
• Central Jamaat leader Maolana Abdur Rahim, Ghulam Azam, AKM Yusuf and Abdul Khaleque leave Dhaka for Pakistan to discuss the latest political conditions.
• Prime Minister of Peoples Republic of Bangladesh Tajuddin Ahmad addresses the nation in the radio. In his speech he says: “Around two and half months ago, I reviewed the Liberation War for you. We found many successes from different angles in the mean time. The independence, fought with bloods and tears, is not very far. Let’s take this war to the final stage,” he says.

November 24, 1971

• Chaugachha is freed after 45-hour long war for four days. Many officers including Captain Huda and MA Manzur led the Muktibahini during this long bloody battle.
• A Muktibahini plane attacks Chittagong port, Anandabazar says quoting a BBC report. Naval commandos sank a gun boat, two oil tankers and four food carrying ships.
• Indian PM Indira Gandhi says in the parliament that India will not declare emergency. She denies Pakistan’s allegation mentioning it as ‘false’.
• Pakistan will welcome any international intervention to pacify the condition. They urge the US and the USSR to look into the matter.
• All holidays of Pakistan army officers and soldiers cancelled. They are ordered to report as soon as possible. Without any prior notice, a curfew is imposed in Dhaka.
November 25, 1971
• Muktibahini take control of Fulgazi, Anandapur and Chandgachi Bazar area. Feni is still under military control. Muktibahini also is controlling Parshuram Thana area.
• Muktibahini sources say that Satkhira mohkuma is freed and they are advancing towards Khulna, a report of Anandabazar says. Meanwhile, a fierce battle takes place at Meherpur town. Pakistan army retreat from the mango orchards in Dinajpur town, are running towards Syedpur.
• Jhikorgacha in Jessore is liberated. The military men leave behind plenty of arms and ammunition. To be noted, this region went out of Muktibahini control on April 8.
• Muktibahini capture almost 450 square kilometres of Rangpur and Dinajpur districts. Meanwhile 13 Razakars surrender with weapons at Rangamati during a skirmish.
• The situation has turned into a threat to the existence of East Pakistan, start war against India, says Ghulam Azam, ameer of East Pakistan Jamaat-e-Islami in Lahore.
November 26, 1971

• Furious battle at Darshana railway station in Kushtia. Meanwhile, Pachagarh in Dinajpur and Basantapur in Khulna are liberated.
• Muktibahini capture the Paanch Matha intersection at Jhenidah, disconnecting the cantonment from rest of the country. They put barricades on Kushtia-Chuadanga highway.
• Freedom fighters destroy Ishwardi telephone exchange, attack the police station and capture it. Train service is halted as the tracks are damaged.
• Muktibahini capture Hatibandha Police Station. Roumari, Patgram, Nageshwari, Bhurungamari and in many regions are seen hoisting Bangladeshi flag.
• Khairul Jahan embraces martyrdom at Perbhanga region in Kishoreganj after killing eight Pakistan raiders. He died while trying to save his compatriots. He is a group commander at Sector No. 3 under Major Shafiullah.
• CMLA and Pakistan President Yahya Khan in a military order bans all committees, sub-committees of National Awami Party (NAP) and orders arrest of its leaders.
November 27, 1971

• 80 Pakistan troops killed as allied force and Muktibahini fightesr attack Hili from three sides. The northern part of Bengal will be disconnected from the Rangpur Cantonment as a result of the attack. Pakistan lose few tanks as well.
• Muktibahini attack Pakistan positions in Islampur and Chatuidubi, three miles away from Nawabganj in Rajshahi, with heavy mortars. The military men use heavy machine guns, 81mm mortar and 25lbs cannon shells. 125 Pakistan troops and 250 Razakars are killed in these battles. Nayek Kasem Mohor Ali of Muktibahini fought with valour.
• Muktibahini attack Rajshahi telephone exchange and disconnect Sharda Police Training Centre.
• Muktibahini attack Razakar base in Munshiganj and take captive four Razakars with weapons and ammunition.
• Offence is the only way to defend, says Ghulam Azam in a Rawalpindi press conference.
November 28, 1971

• Soviet President Nikolai Podgorny sends a letter to President Yahya advising him to release Sheikh Mujib unconditionally.
• US President Richard Nixon sends letters to the premiers of India, Pakistan and the USSR, urging them to take necessary steps to avoid Indo-Pakistan war.
• Indian PM Indira Gandhi says in Rajasthan that India will not bow to any international pressure in the question of human rights restoration in East Bengal.
• Guerrillas blow the railway bridge between Arikhola and Pubail with strong explosives to halt train service between Dhaka-Narshingdi.
• Captain Moslem with his troops cordons Taherpur Pakistan army base for 12 days. Pakistan troops lost their mental strength during such imprisonment. A company of Muktibahini attack the base. Three Pakistan troops are killed in action and the rest fled away.
• The allied force attack the cornered Pakistan force in Joypurhat and liberated the district. Pakistan army lost four tanks and 450 troops. Muktibahini took possession of Gaurinagar in the evening. 12 military men are killed.
• Muktibahini gathered strength at Noakhali and attack Feni. A fierce battle is ongoing in Feni.
• Muktibahini from Dinajpur advanced towards Panchagarh to Putulia in the south.
• A coalition party meeting in Karachi chaired by Nurul Amin urged to drive ‘Jihad’ against India.
• The allied force liberated Nageshwari and Beparihat. Sipahi MF Ali Akbar and Sipahi MF Abul Hossain are martyred in the battlefield. A vast region on the northern side of Dharla River is liberated.

November 29, 1971

• Muktibahini advance towards Tengratila, a huge Pakistan base, led by Capt Mohsin and Capt Akbar of 3rd Bengal regiment.
• Daukee sub-Sector troops and 3rd Bengal regiment led by Major Shafayat Jamil jointly attack Radhanagar. Fierce battle takes place for few hours.
• After a severe bloody conflict, Pakistan troops eventually leave Kamalpur outpost near Jessore frontier.
• Chief of Pakistan Eastern Command General Niazi in Dhaka tells foreign reporters that the Indo-Pakistan war is underway. Muktibahini and Indian army are miserably failing in the war field.
• Muktibahini take captive six Pakistan police and Razakars from Kalir Bazar in Gaibandha. They seize nine rifles and 400 rounds of ammunition. A Muktibahini member martyred.
• Muktibahini attack Mogolpur Razakar base in Kurigram. They take hold of five rifles and 200 rounds of ammunition.
• The commander in chief of Muktibahini Colonel MAG Osmani from Mujibnagar says: “My boys are absolutely ready now. Within a few months they have become equivalent to fight any professional army of the world. No more delay, it is time to strike.”
• Muktibahini defend a Pakistan attack on Borokhali freedom fighters’ camp in Jessore. Freedom fighters destroy a bridge and immobilise Pakistan army. 12 Pakistan troops are killed. Two freedom fighters are martyred.

November 30, 1971

• After hours of fight from November 29, the joint force of Daukee sub-Sector troops and 3rd Bengal regiment led by Major Shafayat Jamil eventually liberate Radhanagar. Three freedom fighters embrace martyrdom. Pakistan army is devastated in this battle. Muktibahini take a Pathan Subedar captive. Simultaneously Goyainghat is freed by the allied force and Muktibahini.
• Sector Commander Shawkat himself takes charge of attacking Tengratila. Muktibahini strike at 7:00am. Pakistan troops flee after repeated attacks.
• Fierce battle continue at Sector No. 3 in Akhaura. Lt Colonel Shafiullah, commander of S-Force, deploy two companies of his 2nds and 11th East Bengal regiments and sector troops. Major Nasim is leading the 11th East Bengal’s company and planned to stop Pakistan troops advancing from Sylhet. He took Mukundpur, Harashpur and few other parts under his control.
• Indians [Muktibahini] attack from 18 frontiers on the eastern borders, a Pakistan spokesperson says in Rawalpindi. Huge pressure is mounted at Dinajpur and Panchagarh. Pakistan troops are compelled to leave Panchagarh.
• Military administration orders 22 Bengali police officers to stand before the martial court.
• Jamaat-e-Islami ameer Ghulam Azam in a press conference says that Razakars and Jamaat activists are giving away their lives to save Pakistan. “This is our duty to assist Pakistan army to fight against the separatists and anti-state activists,” he says.

December 1, 1971

• Muktibahini attacks Pakistanarmy at Shamsernagar in Sylhet at the break of dawn. The rigorous assault forcesPakistan militia to retreat. Muktibahini declares Tengratila and Duarabazar areas independent. Their continuous operations forcethe army to retreat from other few parts of Sylhet – Gara, Alirgaon and Pirijpur.
• A government spokesperson in Rawalpindi says that judicial proceedings of Sheikh Mujibur Rahman, chief of “extinct” Awami League, are not finished yet. The aggressive pressures mounted by the Pakistan Army at four war zones in East Pakistanare continued, he added.
• Indira Gandhi, Prime Minister of India, at a speech in the higher council of the parliament, urges Yahya Khan, president of Pakistan, to withdraw soldiers from Bangladesh to restore peace in the subcontinent. Meanwhile, she also warns the people of Bangladesh and India to remain ready to accept any challenges in the future.
• A report from Jagroto Bangla, a newspaper, says five Pakistan army men died from snake biteduring a battle while they try to take shelter at a bunker in Kaliakoir of Gazipur.
• Freedom fighters kill two Muslim League supporters during an operation in Dhaka and wound two others.
• People’s Party office in Dhaka damaged in a bomb attack. The office was opened by Zulfikar Ali Bhutto months earlier, an AFP report says.
• As guerrilla activities increase, West Pakistani armed forces start killing and burning villages according to the junta order, a report of New York Times says. At least 87 guerrilla suspects, including women and children, killed at Jinjira in Dhaka.
• Pakistanmilitary attacks Rangamati Baptist Mission and kill Charles R Houser, a priest, and many Bengali monks.

December 2, 1971

• Muktibahini attack a Pakistan army camp at Ghorashal in Narshingdi and kill 27 militia men. They seizea good amount of arms and ammunition.
• MuktibahinioccupyAzampur Railway Station in Akhaura upazila of Brahmanbaria. The Pakistanarmy, however, gathers strength and recaptures the station. Later, the liberation force organise themselves again and drives away the Pakistanis with a three-way attack strategy.
• Muktibahini guerrillas capture Fatikchhari, Raujan and Dakshin Anwara in Chittagong and fight to death to liberate Patiya.
• Muktibahini kill five Pakistanmilitia men at Bijoypur area of Birisiri in Netrakona during an ambush and arrest 21 armed Razakars.
• Hundreds of thousands of Bangladeshis can return home to live in peace if the Pakistanarmy leaves Bangladesh, says Indian Prime Minister Indira Gandhi during a meeting of the Congress in New Delhi.
• Pakistan military commander Mosleh Uddin, along with a group of Razakars,goes to a village named Kathali of Bhaluka upazila in Mymensingh to loot, vandalise and set fire to the houses. Meanwhile,Muktibahini, led by section commanders Gias Uddin and Abdul Wahed, attack and kill three militia men and seven Razakars.
• Leaders of People’s Party and Jamaat-e-Islami in Bangladesh urge President Yahya Khan to attack India on the West Pakistan frontier to preserve the integrity of two parts of Pakistan.

December 3, 1971

• The war spread out as Pakistanattack the western frontier of India from air and land. Joint force of Bangladesh and India then start operations in the border areas. Indian army enters Bangladesh from seven points and attackPakistan army bases with full strength.
• Indian PM Indira Gandhi cuts short her Kolkata visit and returns to New Delhi. In a radio speech for the nation, she says that Pakistan operated all-pervading attack on India. The nation has to deal with it at any cost. She asks Indian citizens to be ready for the ultimate sacrifice.
• All flights of Pakistan International Airlines (PIA) between East and West cancelled. The junta imposes curfew and blackout in Dhaka.
• US Senator William Saxby tells journalists at Rawalpindi that he could not meet the banned Awami League leader Sheikh Mujib after several attempts.
• Saran Singh, foreign minister of India, tells parliament in New Delhi that India was trying to convince the US and a few other countries for stopping Pakistani oppression in Bangladesh, but without avail. The arbitrary entrance of Bangladeshi refugees in India and shelling byPakistani army in the border areas are threatening India’s security.
• The rebel 4th and 10th East Bengal Regiments advance from Feni and reach Rejumia Bridge. Captain Mahfuz of Sector 1 along with his force joins them. The joint force starts advanceon Chittagong by the Muhuri river and the Feni-Chittagong highway.

December 4, 1971

• The joint force of East Bengal Regiment and sector 1 Captain Mahfuz advanceon Chittagong from Western sector and continue their move towards the eastern sector. They avoid the Pakistani camps on straight lines; rather they pass the camps to confuse the Pakistan military.
• Indian fighter jets keep bombing different military establishments in Dhaka and Chittagong. Dhaka experiences enormous amount of dog fights between Pakistanand Indian fighter jets. Dhaka was the actual base of Pakistan Air Force. Most of their fighter jets were stationed in Dhaka. The PAF had two squadrons of jets, 28 fighter planes – 14 Chinese Mig-19 and 14 US-made Sabre F-86. Before the Indo-Pakistan war broke out, President Yahya ordered the Migs to return to Pakistan, but the Sabres remained in Tejgaon airport. Almost half of the squadron of those Sabres was damaged in the Indian airborne attack.
• President Yahya Khan addresses the nation via radio. He declares war against India saying that Pakistanhas tolerated for long enough. The time has arrived to strike back the enemy. The Pakistan army will not only drive the Indian force out of “Pakistan soil” but also hurt them in their own boundary. Yahya orders his army to enter India.
• A government spokesperson says that both part of Pakistanare experiencing heavy conflicts. Indian pressure in East Pakistanis dealt with equal aggression. China promises firm support to Pakistan.

December 5, 1971

• The skies of Bangladesh freedon the third day of relentless war. Almost all of the Pakistan aircrafts destroyed or distressed. Indian fighter jets bombPakistani bases all day long, stops the activities of the airports.
• According to the Indian Air Force, almost 50 tonnes of bombs dropped within 12 hours on Pakistan airbases at Tejgaon and Kurmitola. A Pakistan army convoy of 90 vehicles destroyed in the airborne attack. Few Pakistan steamers and launches, boarded with Pakistan soldiers, destroyed too.
• Pakistan Navy’s pride, ‘Gazi’, a submarine that US lent to them, destroyed in Bay of Bengal in an attack carried out by the joint naval force.
• The joint naval force advises the vessels of neutral states to leave Chittagong port. The joint command refuses them any security. The Pakistan force turns out weak to defend the port.
• The allied force begins march towards Dhaka. They deploy heavy resistance on the highways that connects Dhaka with other districts. Comilla, Chittagong, Sylhet, Natore, Rangpur and Jessoreroad routes cut off from Dhaka.
• 57th Mountain Division of Indian army joins the Muktibahini at Akhaura war field. They create resistance on the south and western part of the area.Facing the heavy resistance, Pakistanarmyeventually surrenders. Akhaura freed. Subadar Ashraf Ali Khan, Sipahi Amir Hossain, Lieutenant Badiuzzaman, Sipahi Ruhul Amin, Sipahi Sahab Uddin and Sipahi Mustafizur Rahman martyred for Bangladesh in this battle. A few Pakistani military men escaped to Brahmanbaria after this battle; however, 160 killed by the allied force.
December 6, 1971

• India acknowledges Bangladesh as a free and sovereign state. Indian PM Indira Gandhi declares it in the parliament. Following this declaration, Pakistan unties all diplomatic relations with India.Pakistan Election Commission suspends the by-polls in ‘East Pakistan’ due to the Indo-Pakistan war. The election was meant to be held on December 7.
• Muktibahinitake firm positions at Laksham, Akhaura, Chouddagram and Hili. Pakistan army compelled to retreat. Within the evening, Akhaura and Shamsernagar in Sylhet officially came under the allied force’s control.
• The runway of the Dhaka airport completely destroyed by the allied air force’s bombing.
• The 9th division of Pakistan army starts to flee from the break of dawn. A part of the division had to cross Madhumati River as allied force base was on Jessore-Dhaka highway. Another faction escaped via Kushtia. They try to destroy all the bridges as they escape.
• Soviet Union (USSR)for the second time places veto against US’s ceasefire proposal of Indo-Pakistan war in the United Nations Security Council’smeeting. A Soviet spokesperson says that the USSR has deep concern about the war in the subcontinent and it is related to USSR’s security interest.11 members of the Security Council vote the US. Poland supports the USSR while France and Britain refrain from supporting either side.
• Military Advisor to the Governor of East Pakistan Rao Farman Ali says that Pakistanis ready to fight defensive war against India. “I believe, our force can hold East Pakistan in the present situation,” he says.
• Lieutenant Niazi orders his force to move out from Jhenidah and to protect Dhaka. He also orders them to assemble near the bank of Meghna. That was however impossible as allied force took control of Dhaka-Jessore highway. A faction of the allied force continues their advance towards Khulna and another team headed towards Kushtia.

December 7, 1971

• Bhutan acknowledges Bangladesh as an independent and sovereign state.
• In the break of dawn, Indian paratroopers drop near Sylhet airport. They attack the main Pakistan base in Sylhet. Within the afternoon, the Pakistan general in-charge of Sylhet is compelled to surrender with his troops.
• The 9th division of Indian army reach Jessore Cantonment from the northern side. They enter without any resistance. They are astonished seeing the desolated army establishment. Pakistan army abscond from the cantonment, leaving huge arms, ammunitions and control room maps behind.
• Soviet leader Leonid Brezhnev urges a peaceful solution of Indo-Pakistan war without intervention of any outsiders.
• A fierce skirmish continue at Bhaluka in Mymensingh as Major Afsar’s troops attack the police station, a camp of Pakistan army, from three sides.
• Allied force take control of Chandina and Jafarganj. Turbulent wars continue at Comilla and Laksham.
• A violent Indo-Pakistan bloodshed continue centering Kartowa Bridge on Bogra-Rangpur highway.
• US decides to dismiss financial aid to India
December 8, 1971

• Pakistan army regiments became detached from one another. They have no way to flee back to Dhaka. The allied force officials take three steps and ask the Pakistan army to surrender. General Jagjit Singh is told to march towards Dhaka with his troops. Meanwhile, a brigade is told to march forward towards Mymensingh from Haluaghat.
• Field Marshal Sam Manekshaw,chief of Indian army, asks the occupying Pakistan force to surrender and assures them that Geneva Convention will be followed to treat the surrendered Pakistan troops. This message is broadcasted in Akashbani radio repeatedly.
• Troops of General Sagat Singh enter from the eastern frontier and march forward towards the west. A faction advanced towards Ashuganj while another reached Ashuganj Bridge.
• A proposal of immediate ceasefire and withdrawal of Indian and Pakistani troops from Bangladesh is granted in UN general assembly. Indian representative in the assembly Sri Samar Sen says that Pakistan had to accept Bangladesh as an independent and sovereign state. To restore peace in the subcontinent, Awami League chief Sheikh Mujibur Rahman has to be freed.
• 57th Mountain division of Indian army reaches Brahmanbaria. Pakistani troops left the district before they reached. Meanwhile, S-Force reach Sarail without any resistance.
• In the evening, rebel 11th East Bengal Regiment enter Azampur and Durgapur beside Ashuganj.2nd East Bengal Regiment and a battalion of soldiers advance in between Sarail and Shahbajpur. 10th Bihar Regiment of Indian army’s 311th Mountain Brigade gather south of Durgapur.

December 9, 1971

• In a Kolkata press conference, General Aurora of Indian army says they are ready for larger warfare as Indian infantry, logistics and PT-67 amphibious tanks were ready to enter Bangladesh.
• The allied force is advancing towards Dhaka from all four sides. On the east, a faction is advancing towards Ashuganj, Daudkandi and Chandpur. On the west, a faction reached the bank of Madhumati River. Another group freed Kushtia and is heading towards Goalanda. The final section reached near Mymensingh from Haluaghat.
• Pakistani representative for the UN General Assembly Mahmud Ali returns to Pakistan and meets President Yahya Khan. In a press conference, he criticised Soviet Union’s stance. He says that the USSR should have stopped supporting India to keep the world at peace. Praising the stances of US and China, he says, “Pakistan thanks you for your historical and brave support.”
• An Indian brigade attack Jamalpur in the afternoon. A few companies of Muktibahiniand another group of Indian army join the brigade from the left and right parts of the districts after crossing the Brahmaputra River reaching the southern bank. Later, Indian air force drop a few thousand tonnes of bombs on Pakistani bases for an hour. Almost 600 Pakistanmilitary men arrested by the allied force while they retreat.
• Field Marshal Manekshaw advisesPakistani soldiers to surrender weapons. He says that the Indian troops have entered Bangladesh. “Surrender if you want to live, or else, you will be kill brutally,” he says.
• Newly appointed Pakistani Prime Minister Nurul Amin addressed the nation from Radio Pakistan. He asks the nation to stand united against the Indian ‘attack and intrigues’. Criticising the allied force’s activities, he says that thousands of civilians were killed in their attacks.
December 10, 1971

• Fearing defeat, Lt GenAmir Abdullah Khan Niazitries to plot an escape but BBC leaks his plan. To conceal his weakness, he goes to Hotel Intercontinental and says proudly, “Where are the international journalists? I want them to know that I will never leave my army behind.”
• Fighter jets of the allied force bomb the radio station in Dhaka. They also continue rocket attack on Kurmitola airbase to dominate the area.
• Chittagong and Chalna port become immobile due to the air attacks. A few ships, embarked with Pakistan troops, caught red handed. One of those ships was trying to escape with hoisting a neutral state’s flag. It was heading for Singapore.
• Pakistan’s permanent representative in the UN Aga Shahi tells the Secretary General U’Thant to ask India for withdrawing their soldiers. China’s Temporary Foreign Minister Chipo Feisays that India’s activities proved their expansionist and imperialist form.
• Allied force gain success in the northern parts of Bangladesh. They detach Dinajpur, Rangpur and Syedpur from each other. Rangpur and Dinajpur completely freed.Pakistan army leaves Jamalpur garrison and advance towards Dhaka. They face the allied force near Dhaka when a bloody skirmish break out.Pakistansustained around 1,500 casualties. The rest of the troops surrender.
• Al-Badr assassins abductSirajuddin Hossain, executive editor of the daily Ittefaq, and Syed Nazmul Haque, chief reporter of PPI from their houses.
• Indian PM Indira Gandhi says in New Delhi that India neither did accept not denied the UN’s urge. They are keeping the proposal under consideration. The situation would have been better when Bangladesh would have its own government and the 10 million Bangladeshi refugees in India would get back home.

December 11, 1971

• Lt General Niazi inspectsanti-aircraft guns at Dhaka airport. He tells his troops to resist allied the force at any cost. He shows optimism that the Pakistan army would glorify its valour. Later he talks to international journalists.
• The US pressures both India and Pakistan to accept the ceasefire offer of the UN General Assembly. White House spokesperson Ronald Zieglersays that US president Richard Nixon was consulting the situation with his security advisor Henry Kissinger.
• The allied force face fierce resistance at the Hili frontier. They launch a comb operation at Govindaganj Pakistani base on Bogra-Rangpur highway. Pakistan troops surrender in the early morning.
• Jamalpur garrison surrender to the allied force. In Haluaghat, a brigade of Pakistan troops starts to flee after fierce bloodshed. They destroy numerous bridges while retreating towards Tangail. Another Pakistani brigade leaves Mymensingh and takes shelter in their base. The allied force take control of Jamalpur by the night without any resistance.
• The allied air attack remains stopped temporarily following UN’s request of evacuating foreign nationals from Dhaka. Pakistan Major General Rao Farman Ali urges emergency ceasefire to evacuate Pakistanis from Dhaka.
• A spokesperson of Pakistan army says the situation of the eastern region is not good, however, Pakistan army will never surrender, and this matter is out of the context. A curfew imposed in Dhaka from 3:00pm.

December 12, 1971

• General Niazi from his safe Cantonment residence says proudly that the Pakistan army would fight for every single inches of life as long as a single troop lived.
• Major General Rao Farman Ali calls the leaders of Al-Badr and Al-Shams at the headquarters. He chairs a meeting and plans the blueprint of intellectual killing. He makes a few lists of intellectuals and provides it to the collaborators.
• Fleeing Pakistani troops from Jamalpur and Mymensingh join their compatriots in Tangail and make a strong resistance. India drops paratroopers at Mirzapur, Kaliyakoir and surrounding areas in Tangail. Kaderia Bahini led by Abdul Kader Siddiqui assists them. Another ferocious battle started there.
• Pakistani PM Ruhul Amin tells India to leave East Pakistan. He says that people of East Pakistanare determined to fight till the end. Nothing would break Pakistan, he added.
• Radio Peking in China broadcasts that it was the USSR who wants to attack China by unleashing India on Pakistan. It is the reason for the Soviet Union to support the so-called Bangladesh, it added.
• Al-Badr assassins abduct journalist Nizam Uddin, general manager of API, from his residence. Later on, he was killed.

December 13, 1971

• The advance party of the allied force reaches near Dhaka, only 5-6 miles away, crossing the Balu and Shitalakkhya rivers. Pakistan troops take firm defense on the eastern bank of Balu River. Khilgaon and Basabo are rigid field defense areas for the Pakistani military .
• The allied force change their tactics to prompt Dhaka’s fall.
• Meanwhile, Eastern and Northern advance parties of the allied force reach within 15 miles of Dhaka. Two brigades of 57th division advance from the east. Another brigade led by General Gandharv Nagra and the paratroopers in Tangail moves forward from the northern side. And the 4th division crosses Madhumati River and reach the bank of Padma River.
• General Nagra reaches Tangail around 9:00pm. He meets two Brigadiers — Kler and San Singh – at Wapda rest house to discuss next course of action. He praises the Muktibahini, “If they did not help us coming all the way till here without facing any battles, then we would be tired on the road due to the fighting and skirmishes.”
• The allied force in the northern region start advance towards Bogra from Govindaganj. A Pakistan regiment with cannons and tanks waiting in Bogra creates a heavy defensive resistance.
• In the night, the allied force cordons Bogra town. In midnight, three battalions attack from northern, southern and north-eastern part of the town.
December 14, 1971

• The Al-Badr force start killing Bengali intellectuals, who were abducted for the past few days, at Mirpur and Mohammadpur killing ground.Pakistani General Rao Farman Ali conducts this loathsome decadence from behind the scenes.
• The allied force cross Madhumati River in Faridpur. To reach Dhaka promptly, two brigades separated to avoid conflicts with Pakistan troops on the way. Local Bengalis help them to reach Dhaka. Hundreds of local boats help the Indian troops to cross the river.
• A brigade of the allied force attackPakistan base in Manikganj and defeat them. Manikganj freed. The brigade continue towards Savar.
• The Pakistan army hold a strong defence on the bank of Turag River, the northern entrance point of Dhaka, and confront the allied force.
• Meanwhile, an allied force brigade advance towards Dhaka from north-western corner towards Chandra-Savar-Mirpur. The allied force attackPakistani fortification on the south-eastern part of Dhaka in Demra on the bank of Shitalakkhya River.  Another faction crossthe river and free Rupganj.
• The allied force troops are airlifted for crossing Gomti River. They take position near Baidyar Bazar.
• MuktibahinidestroyPakistani base at Kumira in Chittagong and advance towards Chittagong port.
• A brigade of Pakistani military caught red handed by Muktibahiniwhile escaping to Burma (Myanmar) via Cox’s Bazar.
• General Manekshaw’s speech addressing Rao Farman Ali broadcasted. He says, “My troops have cordoned Dhaka city. Dhaka cantonment is within my artillery range. Therefore, surrender! Or else you will be embracing death.” He ensured protection for those who will surrender.
• Hundreds of Pakistani military men surrender in different parts of Bangladesh. At Moynamati in Comilla, 1,134 Pakistan troops surrender.
• The puppet governor Dr Malik sends wire message to President Yahya Khan, asking for permission to surrender. Malik and General Niazi jointly send another message to the Pakistan president, urging him to accept the ceasefire proposal. Yahya rejected both of the requests saying that definitely China and the US would intervene into this matter. “Keep fighting,” he says.
• Among the three freedom fighter siblingsfighting in Comilla – Badiuzzaman, Karimuzzaman and Shahjahan – Badiuzzamanmake their 98 Ramkrishna Mission Road residence an outpost of the freedom fighters. The two younger siblings came to Dhaka on December 10 to meet their elder brother. Al-Badr assassins abducted them on December 13 from their home and their bodies are found later in the Rayerbazar killing ground.

December 15, 1971

• Considering General Niazi’s ceasefire proposal, the allied force declare to stopair attacks on Dhaka from 5:00am. Besides, the allied force also tell the Pakistan army that no truce would take place before the military surrenders. “If the Pakistan armydoes not surrender within 9:00am on December 16, then the air attack will resume,” they say.
• In the afternoon, the allied force enter Savar without resistance.Pakistan troops retreatand ambush them at the entrance of Dhaka on Mirpur Bridge.
• The allied force advanc towards Dhaka from Savar in the night. Kaderia Bahini join them on the way. They confrontthe Pakistan troops at the Mirpur Bridge.The allied force conduct a commando style attack in the first phase.Pakistan troops keep firing from the other side of the bridge.Another group of the allied force attack them from the west bank. A ferocious fight take place all day long.
• In the battlefield of Chittagong, Muktibahini free few more regions south to Kumira. In the evening, the freedom fighters attack Vatiari, the first protective defence region of Chittagong city. The skirmish spread out till Fauzdarhat.
• The allied force advance towards Rangpur. They cordon the town. They schedule to attack the Rangpur cantonment the next day. But that was not necessary as the Pakistan troops already surrendered.
• The allied force attack on KamarkhaliPakistan army base in Faridpur region. The military start to retreat towards Faridpur town. The allied force chase and corner them. The military, led by a Pakistani major general, eventually surrender.
• Dr Alim Chowdhury is an eye specialist. He takes life risks to help the freedom fighters. Al-Badr assassins brutally gouge his eyes and kill him. Maolana Mannan, who used to live at Alim’s residence, helped the collaborators to catch Alim.
• Indian fighter jets seen in the sky of Dhaka. Governor Malik with his cabinet and military advisors are busy in a meeting in the Governor House. The jets dropbombs on it. Malik runs into a trench to take shelter.
• General Manekshaw advises the Pakistan commanders for the final round, saying, “This is the last time; any more attempt of resistance will be meaningless. Dhaka garrison is absolutely under our artillery range.”
• Pakistani troops start surrendering their weapons in the battlefields.Pakistani division and brigade HQ in Bogra fall within the afternoon. 1,700 Pakistani personnel surrender. The allied force recover huge amount of arms and ammunition.
• Captain Mohiuddin Jahangir escapes from Pakistan and joins the Liberation War at sector 7. He takes a bullet in his head while crossing the Mahananda River in Chapainawabganj during an operation. He was posthumously awarded the title ‘Birsrestha’ after independence by the Bangladesh government.
December 16, 1971

• According to the order of General AAK Niazi, Pakistan troops start surrendering weapons from 5:00am.
• At around 8:00am, General Niazi requests Indian army chief to extend surrendering period for another six hours.
• An hour later, two officers of India and Bangladesh, in a vehicle, hoisting a white flag, go to Niazi’s HQ with a letter from divisional commander of the allied force, General Nagra. The message reads: “Dear Abdullah, I’m here. You will now surrender to me. This is an order.”
• At around 1:00pm, General Jacob, chief of staff of General Aurora, commander general of the allied force, reaches Dhaka.
• Later in the afternoon, a meeting is held at the General’s HQ for preparing the documents of surrender. Niazi, Rao Farman Ali and Jamshed represent the Pakistani side while Jacob, Nagra and Kader Siddiqui are present on Bangladesh’s side. It has been decided that General Aurora would sign the document on behalf of the victorious side while General Niazi would sign for the defeated side.
• Within an hour, General Jagjit Singh Aurora, General Officer Commanding-in-Chief of the Eastern Command of the Indian Army, accompanied by the chiefs of staff of Indian navy and air force reach Dhaka from Kolkata. Niazi receives and congratulates him.
• Around 4:45pm, General Niazi reaches the Race Course. For the final time, soldiers from both sides offer him guard of honour.
• At around 5:00pm, General Aurora and General Niazi sit on a table in the Race Course. Aurora sits on the right side and Niazi on the left of the table. The instrument of surrender is ready. Aurora hands it to Niazi. At 5:01pm, Niazi signs the paper and officially acknowledges Bangladesh as a free, independent and sovereign state.
• After the nine-month-long nightmare, people of Bangladesh become the citizens of an independent country, thus earning the power to control of their own fate.

December 17, 1971

• Temporary President Syed Nazrul Islam says, “This is the time to work as post-war reconstructive government.” He also says that Bangladesh government had started preparing the new constitution and an election might be held by mid 1972.
• A dozen of experienced administrators, led by Ruhul Kuddus, one of the prime accused of Agartala conspiracy proceedings, commence a civil administration in Dhaka.
• Within 2:30pm, the western front of Indo-Pakistan war is over. President Yahya Khan accepts India’s unilateral truce proposal.A statistics says that India destroyed 94 Pakistani fighter jets, 214 tanks and 22 navy vessels during the two week two hour long war.
• Former governor Dr Malik takes shelter in the Hotel Intercontinental, a neutral area. Bangladeshi guerrillas demand him to be handed over to their hands. But India refuses.
• Chinese PM Zhou Enlai criticises Soviet Union for supporting Indian ‘aggression’ during a diplomatic party in Peking. Soviet envoy leave the party protesting the Chinese premier’s opinion.
• Hundreds of molten bodies and skeletons found in the Mirpur killing ground. Among those martyrs lied many finest scholars and intellectuals of Bangladesh.

December 18, 1971

• Two high officials of Bangladesh government reach Dhaka – Ruhul Quddus, newly appointed secretary general, and Abdul Khaleque, inspector general of police. Cheer and gunfire are heard now and then. The freedom fighters are celebrating their victory.
• French intellectual Andre Malraux sends an open letter to US President Nixon lambasting his stance against India and Bangladesh. He says he was ready to fight for Bangladesh three months before the independence along with 150 veterans from the World War II.
• Four Soviet-made tanks have been deployed in front of Hotel Intercontinental, a neutral zone, to resist any attempts of the freedom fighters to snatch former governor Dr Malik.

December 19, 1971

• Radio Pakistan broadcasts the resignation announcement of Pakistan President Yahya Khan. He will resign handing over the power.Pakistan People’s Party leader Zulfikar Ali Bhutto is on his way home from New York. He might be the next head of government.
• Former Pakistan Air Force chief Air Marshall Asgar Khan in a Rawalpindi press conference calls Yahya foolish and demanded his appropriate punishment and associated generals.
• Returning from Bangladesh, British MP John Stonehouse describes the atrocity of Pakistan army. He says that he saw bodies lying on the streets. Six Pakistan army officers along with a Major General made a list of almost 2,000 Bengali intellectuals for killing.
• Bangladesh might put former governor Malik on tribunal as a war criminal. He is taken to the cantonment under heavy security –Clare Hollingsworth, a reporter of The Daily Telegraphtells her office via the reconnected international telephone service.

December 20, 1971

• Surrendered PakistanGeneral Niazi and General Rao Farman Ali taken to Kolkatafrom Dhaka by a special chartered flight.
• The number of arrested Pakistani troops is 65,670 till the night of December 19, a spokesperson of Indian army’s eastern command announced. Another 8,000 troops detained in Chittagong garrison. And 20,000 otherPakistani bureaucrats, police also detained.
• A few diplomats acknowledge their allegiance to Bangladesh today – Ehsanul Kabir, economic minister of Pakistan embassy in London; Muslehuddin Ahmad, commercial councillor in Paris, and Khairul Anam, second secretary in Brussels.
• Zulfikar Ali Bhutto takes over the presidency of Pakistan. In a radio speech he proudly declaresa fight to reclaim ‘East Pakistan’.
• Many army high officials including former president Yahya Khan, his chief of staff General Abdul Hamid Khan and security secretary Gulam Umar Khan are sent to retirement.
December 21, 1971

• Newly appointed Pakistan president Bhutto tells foreign journalists during a dinner party in Rawalpindi that Sheikh Mujib is still imprisoned, soon he would be released and kept under house arrest.
• Pakistani ambassador in Poland Abul Bashirul Alam shows loyalty to Bangladesh government. He hoists Bangladeshi flag in front of several dozens of Polish journalists.
• Newly independent Bangladesh experiences almost 2 crore refugees inside the boundary. The total number of refugees including those in India, is around three crore, reports of British NGOs says.
• Commander of Chief of Muktibahini, Colonel MAG Osmani reaches Dhaka.
• Bangladesh Government in Kolkata discussing with Indian representative DP Dhar about the returning of Bangladeshi refugees. A draft budget is made of 100 million pounds.

December 21, 1971

• Newly appointed Pakistan president Bhutto tells foreign journalists during a dinner party in Rawalpindi that Sheikh Mujib is still imprisoned, soon he would be released and kept under house arrest.
• Pakistani ambassador in Poland Abul Bashirul Alam shows loyalty to Bangladesh government. He hoists Bangladeshi flag in front of several dozens of Polish journalists.
• Newly independent Bangladesh experiences almost 2 crore refugees inside the boundary. The total number of refugees including those in India, is around three crore, reports of British NGOs says.
• Commander of Chief of Muktibahini, Colonel MAG Osmani reaches Dhaka.
• Bangladesh Government in Kolkata discussing with Indian representative DP Dhar about the returning of Bangladeshi refugees. A draft budget is made of 100 million pounds.

December 22, 1971

• A flight of Indian Air Force carrying seven members of the provisional government of Bangladesh including Syed Nazrul Islam landsin Dhaka airport. They receive huge reception. Prime Minister Tajuddin Ahmad in the airport urges the people to imply the ideals of democracy, secularism and socialism to reconstruct the war-torn country.
• Indian army start to investigate the genocide by the Pakistani army in Bangladesh. Among the accused they found a general, a brigadier, three colonels, two majors and a captain. And another list is made including 12 other names.
• Sheikh Mujib freed from jail but kept under house arrest, a government announcement in Rawalpindi says.
• Pakistan president Bhutto says that he would go to visit China shortly.

December 23, 1971

• Prime Minister Tajuddin Ahmad says that those who have intentional and evident participation in the genocide will be prosecuted. They will not get any mercy, he adds. Those who however were compelled to do such acts under pressure they will be spared.
• Returning of Bangladeshi refugees will commence shortly, says CS Kahlon, rehabilitation secretary of India. They will be given rations for two weeks, he added. He also says that, 1,30,000 Bangladeshis has returned already on foot.
• Sheikh Mujib taken to Rawalpindi for discussion, Pakistan officials says.
• “India will not keep its troops in Bangladesh for a single day, if not needed,” Indian Foreign Minister Saran Singh tells British counterpart Sir Alec Douglas Hugm in London.
• Pakistan president Bhutto fires six top Navy officers.
December 24, 1971

• Bangladesh Chhatra Sangram Parishad in a press conference, at Shahid Sergeant Zahurul Haque Hall in Dhaka University, declare they will keep fighting till the Father of the nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman is freed from the Pakistan army. Leaders of the group says they will surrender weapons only to Bangabandhu, who showed them the ideal. They promise that Mujib Bahini will help the government to maintain law and order. Bangladesh Chhatra League president Nur-e Alam Siddiqui, other leaders — Shahjahan Siraj, ASM Abdur Rab, and Abdul Kuddus Makhan are present in the press conference.
• 54 intellectuals in a joint statement demand appropriate investigation of the genocide in Bangladesh. They say those who were related to this brutal event could not be treated under Geneva Convention. Sufia Kamal, Syed Ali Ahsan, Joynul Abedin, Kamrul Hasan, Samar Das, ABM Musa, Kamal Lohani, Faiz Ahmad were among the signees. They demand of forming an international tribunal to bring the culprits – Al-Badr, Al-Shams, Muslim League, Jamaat-e-Islami, PDP — under justice.
• A report of BBC says that Pakistan president Bhutto has formed a commission led by Justice Hamudur Rahman to probe military failure in Bangladesh and Indo-Pakistan border truce
• More than 100 masterminds of genocide driven by Pakistani military held, a report says. A list of names is published from the police directorate. The arrestees are: Dr Syed Sazzad Hossain, vice-chancellor of Dhaka University, SM Nawab, DIG of police, Fazlul Haq, MNA, Lt Col Golam Ahmad Chowdhury, deputy chief engineer, Maj Afsar Uddin former parliament secretary, Zahurul Haq, deputy director of Razakar, Dr AA Baset, Dhaka Medical College, ABM Nurul Islam, MNA, SB Zaman, MPA, ABM Abdul Khalek Mazumder, Al-Badr leader, Moktar Gunda, commander of Mirpur Mujahid Party, Ashraf Ali, Al-Badr member, Fazlul Quader Chowdhury of Chittagong, Hakim Intajur Rahman Akhunjada, member of central peace committee, Inspector Abdul Halim Sikdar, CIA of Kotwali, SI Kaykobad, former OC of Lalbagh police station, SI Khorshed Kha, former OC of Lalbagh PS, Maolana Bazlur Rahman and Faridabad Madrasa in Dhaka.

December 25, 1971

• Prime Minister Tajuddin Ahmad urges the states of the world to acknowledge Bangladesh as an independent and sovereign state. “Bangladesh wants to keep a peaceful diplomatic relation with every state,” he says in a press conference at Bangabhaban. He assuresof making a constitution for Bangladesh and promises that it would reflect the aspiration of Bangladeshis. He says that the prime duty would be reconstructing the economy of the war-torn country and to rehabilitate the Bangladeshi refugees in India. About the disarmament of Muktibahini, the premier saysthat these people (freedom fighters) would know when to hold weapons against the military and when to concentrate on constructive activities. They will be assigned to the national militia and other nation building activities. He also added that the advisory committee made with members from different political parties would remain as it is. That will not hamper the relation between the committee and the cabinet. The entire news has been covered by APB.
• Special Indian envoy DP Dhar visits PM Tajuddin at Bangabhaban, APB reports.
• A special flight of International Red Cross reaches Dhaka with emergency medicine and relief.This was the first relief-laden flight of the Red Cross that landed on independent Bangladesh.
• Police directorate release another list of arrested collaborators: Maolana Mosleh Uddin, vice president of PDB, Dr Mustafizur Rahman of Dhaka University, Fakhruddin, former minister and president of Mymensingh Muslim League, Khorshed Ahmad Khan, secretary of Mymensingh Muslim League, Dr A Hamid, treasurer of Mymensingh Muslim League, Maolana Altaf Hossain, president of Mymensingh PDP, Maolana Fayzur Rahman, president of Mymensingh Nezam-e Islam and Israil, DSP.

December 26, 1971

• Sheikh Mujib taken to Rawalpindi as Bhutto id trying to construct a confederation between Bangladesh and Pakistan, reports Hindustan Standard from its London bureau. Bhutto also invites US and Chinese representatives for the meeting. 22 other countries are ready to recognise Bangladesh as an independent and sovereign state.
• Shamsuddin Mollah, secretary of Faridpur Awami League, in a statement, demands justice against the Razakars and their atrocities. He demands of a special tribunal for it. It was the primary target of the Pakistanmilitary and their collaborators to cripple Bangladesh by killing its intellectuals, he says. Eminent journalists Sirajuddin Hossain, Shahidullah Kaiser, Nizamuddin Ahmad, Syed Nazmul Haq, SA Mannan, Golam Mostafa, Prof Munir Chowdhury of Dhaka University, Prof Mofazzal Haydar Chowdhury and many others were the victims of this fiendish crime of the Pakistani military  and their collaborators.

December 27, 1971

• RK Karanjia, an investigative journalist and the founder of Indian weekly tabloid Blitz, writes an article on the Liberation War in Bangladesh. In his article he says that Pakistan army should not be treated as war prisoners but as war criminals. According to the Geneva Convention, they could not get the honour. They were cold-blooded killers who bombed an orphanage with an aircraft and two attack helicopters in Dhaka to blame India in front of China and the US. Many children were kill in that incident, which was approved by many journalists.Pakistan army kill 36 wounded Indian troops in Kamalapur. They hoisted white flag to mark Indian army’s position, Karanjia says.
• General Manekshaw meets President Syed Nazrul Islam, Prime Minister Tajuddin Ahmad and commander-in-chief Col MAG Osmani individually.
• PakistanPresident Bhutto meets Bangabandhu in Rawalpindi, but the follow-up of the meeting was unknown, a BBC report says.
• Provisional President Syed Nazrul Islam says in a meeting at Awami League’s HQ in Purana Paltan that diplomatic conversation is underway to free Bangabandhu. Pakistan could not keep the president of a free country for long, he says.
• More alleged collaborators arrested: Dr Hasan Zaman, former director of Pakistan Academy, Nasiruddin Ahmad Chowdhury, former minister, Maolana Atahar Ali from Kishoreganj town, Maolana Sayedur Rahman, Mymensingh town, Bahauddin Ahmad, former additional SP of Sylhet, Md SB Doza, CO, Dhaka Kotwali, Nurul Amin, superintendant of Tejgaon Telephone Workshop, Shahabuddin, foreman, Dhaka Electric Supply, Maolana Bazlur Rahman from Doyapur, Comilla, SM Mujtaba Khurshid, former OC of Lalbagh PS, SI Yusuf Ali Chowdhury, former OC, Kaliganj PS, SI Md Isahaq, former OC, Mohammadpur PS, Habildar Nawab Khan, EPCAF, Shami, Mujahid Commander in Mirpur, Md Akil, Mujahid in Mirpur, Md Ali, Mujahid in Mirpur, Abdul Aziz Manna, Mujahid in Mirpur, Shur Mohammad, Mujahid in Mirpur, Shahabuddin, agent of Pakistan army, Abdul Zahir, Razakar, Noakhali, Anka Ohee, Razakar, CHT, Abul Bashar Md Shahjahan, Al-Badr member, Feni, Syed Md Mohen Kader from Mohammadpur, Anisur Rahman, commander of Al-Badr, Bilal Hossain, commander of Al-Badr, SA Siddiqui, commander of Al-Badr, ABM Khalek Majumder, Al-Badr, Omar Hayat from Mirpur, Sirajuddin, member of Peace Committee, Ashraf Ali, member of Al-Badr, Faridabad, SM Munibul Haq, convener of Peace Committee, Syed Ershad Hossain, Tejgaon , Dhaka, Syed Md Mohsin, member of Al-Badr, Mohammadpur and Mohammad Hanif from Mirpur.

December 28, 1971

• Awami League decide to commemorate January 9 as ‘Sheikh Mujib Day’ demanding the immediate release of Bangabandhu, a report from ENA says.
• Sheikh Mujib refrained from radio or newspapers during the nine-month long Liberation War, a source from Rawalpindi reports. After he was taken to house arrest, he learned about the war after April 1971.
• Eminent author and producer Zahir Raihan,in a press conference,alleges the Al-Badr members were the executors of hundreds of Bengali intellectuals. He found similarity between the genocide in Bangladesh with Indonesia, Jordan and Congo genocides which were conducted under the supervision of US intelligence. He allegesagainst few Pakistan generals including Niazi for the genocide. He says, “The Al-Badr assassins must have to be brought to daylight before they mingle in the general crowd. This country has lost her best intellectuals in their hands. These animals need to be punished.”A few journalists proposed to build a monument in the killing grounds in Dhaka.
• 12 countries will shortly recognise Bangladesh, a report of Akashbani says. Another 20 countries are in the queue. Abu Sayed Chowdhury, representative of Bangladesh, successfully receives the response and assistance from Yugoslavia, Russia, Great Britain, Romania, Poland, Czechoslovakia, Hungary, Bulgaria and a few others.
• More collaborators arrested, a news from APB says: Maolana Nuruzzaman, former chairman of PP, Abdul Wadud, advocate from Siddique Bazar, Firoz Sirazi, a spy from Dhaka, Nayek Subadar Azab Khan, a spy, Intiza Hossain from Mirpur, Sami Ahmad Siddiqui from Sutrapur, Hamid Ali Dewan from Moghbazar, Md Anisur Rahman, member of Al-Badr in Pabna, Md Ezaz Hossain from Mirpur, Mostaq Ahmad from Mirpur and Ezaz Ahmad from Mohammadpur.
• A search party is in action to find out the missing intellectuals, a source from Sutrapur Police Station says.

December 29, 1971

• A seven-member committee formed at Dhaka Press Club during a meeting of intellectuals to investigate Al-Badr’s genocide of intellectuals. Zahir Raihan will chair the committee.
• More collaborators of the Pakistanmilitary  arrested: Syed Zillur Rahman, former regional direction of Dhaka radio station, Mainuddin, DIG of Police, Md GA Khan from Tejgaon, Dhaka, SM Yusuf, leader of Jamaat, Fayekuzzaman, brother of Gopalganj Muslim League leader Wahiduzzaman, Golam Rabbani, secretary of Jamalpur Mahkuma Muslim League, Nuruzzaman Khan from Shantinagar, Shakil Ahmad from Mirpur, Anis Khan, member of Civil Armed Force, Anwarul Haque from Mirpur, Maolana Shafiullah from Matlab, Comilla, Shahidullah from Faridganj, Comilla, Abdul Qayum from Mirpur, Sharif Khan from Olympia Textile Mill, Md Yusuf from Mirpur, Md Siddik from Mirpur, AKM Sirajul Islam, member of Manikganj Peace Committee and Khodadad from Dhaka.
• Prime Minister Tajuddin Ahmed in a meeting shows his gratitude towards India and Soviet Union for their support. The youth who fought for the independence would be assigned as national militia, he adds.
• Within a short span of time almost 45,000 Pakistan troops will be sent to India, a PTI report says.
December 30, 1971

• Members of the probe committee of intellectual killing meet President Syed Nazrul Islam. The members demand to form a stronger probe committee including personnel from Muktibahini, Allied Force, government officials and civilians. They also request the president to entomb the bodies lying at Rayerbazar.
• Mother Teresameets president Syed Nazrul Islam. She discusses making a residence for the Biranganas. She receives warm felicitations from the president for her extended helping hands to the refugees.

December 31, 1971

• Border Security Force (BSF) of India will return home from Bangladesh within next two days, a spokesperson in Kolkata says.Almost 100 BSF jawans were killed and 500 wounded during the 14-day long Indo-Pakistan war.General Sam Manekshaw says that the primary duty of India is to take the 93,000 Pakistan troops out of Bangladesh. He orders his army to keep watch on the border.
• Bangladesh government decides to form the extended probe committee to determine the impairment done by the Pakistan army and their collaborators, APB report says.
• Indian PM Indira Gandhi in a New Delhi press conference says that India wants to offer friendship to Pakistan. “We want to live in peace,” she says. Bangladesh government will decide of making tribunal for war crimes, Gandhi added.

Source:
Bangladesh Liberation War Museum