শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে স্বাধীন
বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রচারিত অনুষ্ঠান |
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের
দলিলপত্র |
২০ নভেম্বর, ১৯৭১ |
(বদরুল হাসান রচিত জীবন্তিকা)
রক্তরাঙা ঈদুল ফিতর
১। মাহে রমজান- ত্যাগ ও তিতিক্ষার এক অপূর্ব প্রতীক। সংযত চরিত্রের মানুষের জন্য এ মাস এক বিরাট নেয়ামত। কিন্তু আজ বাংলার মাটিতে যে দাবানল জ্বলে উঠেছে তাও এবারের রমজান এবং ঈদুল ফিতর পেয়েছে নতুন অর্থ এবং তারাই আলোকে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে বাংলার মানুষ। ক্ষতবিক্ষত বাংলা। ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত। নতুন শপথে ভাস্বর এবারের ঈদুল ফিতর। আনন্দ নয়, সংগ্রামী প্রত্যয় দৃঢ় তাই বাংলার মানুষ।
আজ নয় নয়, নয় কোন আভরণ
রক্তে রক্তে বাজে দুন্দুভি শফত নেয়ার দিন
আজকে প্রাণের মহফিলে বাজে
রুদ্র রৌদ্র বীণ ।।
সাড়ে সাত কোটি মানুষের বুকে
হানে যারা খঞ্জর
নয় ক্ষমা নয় হানো হানো তারে
উদ্যত মুঠি করো না শিথিল
মুক্তি সেনানী বীর ।।
আজকে তিমির পল্ললে শোন
জীবনের মহাগান
জয় সংগ্রাম সাড়ে সাত কোটি
জয় জয় মহীয়ান ।।
রক্ত রঙিন বাংলার বুকে
অতন্দ্র প্রহরায়
জাগে নিৰ্ভীক লাখো সৈনিক
নাই ভয়, ভয় নাই
বঞ্চিত আজি জাগ্রত ওই
এসেছে মুক্তিদিন ।।
(২) দুর্জয় সাহস, দৃঢ় মনোবল নিয়ে প্রতিরোধ করছে শত্রুর হামলা। প্রতিদিন এই বাংলার মানুষ নতুন এক সম্ভবনায় হয়ে উঠেছে উজ্জীবিত। অপূর্ব এই মহাজাগরণ। বাংলার মাটি, বাংলার মানুষ আজ ধন্য। পূর্ণতার এক
জীবনের সন্ধানে আজ দেখছে নতুন স্বপন নতুন সূর্যদিন ডাকছে ওদের হাতছানি দিয়ে। এক দিগন্তে থেকে অন্য আরেক দিগন্তে আজ তাই চলছে প্রাণের উল্লাসে।
এগিয়ে চলো
দিগন্ত থেকে দিগন্তে আজ
এগিয়ে চলো ।।
এগিয়ে চলো ।।
এগিয়ে চলো ।।
হিংস্র শ্বাপদ ওই হানাদার
নিঃশ্বেষে নাম মুখে ফেল্লো তার
বাঙালীর তরে বাংলার মাটি
নিশংক আজ বলো ।।
মায়ের বোনের ভাইয়ের রক্তে
ভিজে গেছে এই মাটি
প্রাণের চেয়েও প্রিয়তম তাই
এ মাটি অনেক খাটি ।।
এ মাটির বুকে কোন অনাচার
সইবো না কেউ সইবো না আর
হাতে হাতিয়ার নির্ভয় প্রান
জ্বেলে দাও সব আলো।
(৩) আজ নয় হিসেব নিকেশের দিন, আজ নয় আনন্দ উৎসবের দিন- আজ শুধু সংগ্রাম, ঘরে-বাইরে দুঃসহ দারুণ সংগ্রাম। কাপুরুষ হানাদারদের নিঃশেষে খতম করে তবেই আমরা হবো নিশ্চিন্ত। আজ এই দিনে আমরা তাই শপথ নিই- দেহের সর্বশেষ রক্তবিন্দু দিয়ে আমরা অর্জন করবো আমাদের স্বাধীনতা, যে স্বাধীনতা আমাদের জীবনের চেয়ে মহান।
বাংলার নামে আজ শপথ নিলাম
মুজিবের নামে আজ শপথ নিলাম
বাংলাকে করবোই মুক্ত
শত্রুর বিষদাঁত ভাঙবোই
আজ আর নয় কোন শর্ত।।
কৃষক শ্রমিক চায় মুক্তি মুক্তি
ছাত্র মজুর চায় মুক্তি মুক্তি
সাড়ে সাত কোটি এই জনতার ইচ্ছা
মুক্তির জন্য হয় হোক মৃত্যু ।।
বাংলার বুকে যারা জ্বেলে দিল দাবানল
তারে আজ ক্ষমা নয়, ক্ষমা নয়
লেলিহান অগ্নির দুঃসহ প্রান্তে
দুশমন পুড়ে আজ হোক ছাই ।।
শহর নগর চায় মুক্তি মুক্তি
বাংলার গ্রাম চায় মুক্তি মুক্তি
ত্রাসের কাঁপন লাগে শত্রুর বক্ষে
বাংলার বুকে ওরা একেবারে রিক্ত ।।
(মুস্তাফিজুর রহমান রচিত সঙ্গীতালেখ্য)