গায়ে ক্ষত নেই, মেয়েটি মরল কীভাবে?
১৯৭১ সালের ৩০শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর রােকেয়া হল থেকে পাক সেনাদের এক মেজর পৌরসভায় টেলিফোনে সংবাদ দেন রােকেয়া হলের চারিদিকে মানুষের লাশের পচা গন্ধে সেখানে বসা যাচ্ছে না। অবিলম্বে ডােম পাঠিয়ে লাশ তুলে ফেলা হােক। সাহেব আলী ছয়জন ডােম নিয়ে রােকেয়া হলের প্রতিটি ক্ষম তন্ন তন্ন করে খুঁজে কোন লাশ না পেয়ে চারতলার ছাদে গিয়ে আঠার বছরের জনৈক রূপসীর উলঙ্গ লাশ দেখতে পান।
সাহেব আলী তার সাথে দায়িত্ব প্রাপ্ত জনৈক পাক সেনাকে জিজ্ঞাসা করলাে এ ছাত্রীর দেহে গুলির কোন আঘাত নাই, দেহের কোন স্থানে কোন ক্ষত চিহ্ন নাই, অথচ মরে চিৎ হয়ে পড়ে আছে কেন? পাক সেনাটি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে বললাে, “আমরা সকল পাক সেনা মিলে ওকে ধর্ষণ করতে করতে …।”
পচা ফুলা সেই রূপসীর উলঙ্গ দেহ পড়ে থাকতে দেখলেন সাহেব আলী। ডাগর চোখ ফুলে বের হয়ে আছে। মাথার চুল ছিড়ে ফেলা হয়েছে। লজ্জাস্থান তার পেট থেকে ফুলে অনেক উপরে উঠে আছে। যােনিপথ রক্তাক্ত। সাহেব আলী ছাত্রীর দুগালে পশুদের। কামড়ের চিহ্ন দেখতে পেলেন, স্তনে মানুষের দাঁতের দংশনের চিহ্ন দেখলেন। সাহেব আলী লাশটি একটি চাদর দিয়ে ঢেকে নীচে নিয়ে আসেন। রােকেয়া হলের সার্ভেন্ট কোয়ার্টারের ভিতর প্রবেশ করে সাহেব আলী মালীদের স্ত্রী পরিজনদের পাঁচটি লাশও তুলে আনেন। পরে সাহেব আলী ট্রাক নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিববাড়ীর তেতলা থেকে জনৈক হিন্দু অধ্যাপক তার স্ত্রী ও দুই ছেলের লাশ ট্রাকে তােলেন।
স্থানীয় জনতার মুখে জানতে পারলেন অধ্যাপকের দুই মেয়ে বুলেট বিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে আছে। সাহেব আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের লাশ সবই উলঙ্গ ও ক্ষত বিক্ষত দেখতে পেয়েছেন। ঢাকা পৌরসভার ডােম চুন্নকে ১৯৭১ সনের ২৮শে মার্চ সকালে পৌরসভার ইন্সপেক্টর ইদ্রিস আলী লাশ উঠাবার জন্য নিয়ে যান। সেখান থেকে লাশ উঠাতে গিয়ে ডােম চুন্ন বহু যুবক যুবতী ও নারী পুরুষের লাশ দেখতে পায়।
Reference:
নরহত্যা-ও-নারী-নির্যাতনের-কড়চা-১৯৭১-মেজর-রফিকুল-ইসলাম-পিএসসি
ছবি – গৌরি রানী কারিগর। ১৭ আগস্ট কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুরে পাকিস্তানী আর্মি এসে হত্যাকাণ্ড চালায় এবং ৪ জন মেয়েকে ধরে নিয়ে যায়। তাদেরকে ১২ দিন আটকে রাখে এবং শারীরিক নির্যাতন চালায়। এদেরই একজন গৌরি রানী কারিগর – যে কোনোদিন ফিরে আসেনি।