জাতির পিতা কে?� মুজিব না ইব্রাহীম?
:::::::::::::::::::
উত্তর নির্ভর করে আপনি কী বোঝাতে চাইছেন তার উপর। কোন “জাতি”? যদি “জাতি” বলতে কোন ধর্মীয় গোষ্ঠীকে বোঝানো হয় তবে উত্তর একরকম হবে আর যদি কোন মানবগোষ্ঠীকে বোঝানো হয় (ধর্মনির্ভর নয়) তবে উত্তর হবে আরেক রকম। তার আগে জানা দরকার, প্রশ্নটা কারা তোলে? বা বিতর্কটা কারা তৈরি করেছে? ফিরতে হবে পেছনে। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার-আলবদর-জামাতে ইসলাম-ছাত্রসংঘ সহ পাকিস্তানী সরকার ও তার সহায়ক শক্তিরা ধর্মের দোহাই দিয়ে পাকিস্তানকে এক রাখতে চেয়েছিলো। এবং সেই ধর্মটি ছিলো ইসলাম। ইসলাম ধর্মের দোহাই দিয়ে এমন কোন অনৈসলামিক কাজ নেই যা তারা করে নাই। ধর্মকে অপব্যবহারের কারণেই হয়ত শেষ পর্যন্ত তারা পরাজিত হয়। পরাজিত হলেও সেই চক্রটি এখনো আগের মত বা আগের চেয়ে বেশী শক্তিশালী রূপ ধারণ করেছে। তারাই তাদের প্রোপাগান্ডা সেল দিয়ে ধর্মের আবরণ দিয়ে মুছে ফেলতে চায় বাঙ্গালী জাতির পিতাকে।
এবার পয়েন্টে আসি। যদি ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে মুসলমান জাতির পিতা কে জিজ্ঞেস করা হয় তবে যারা মুসলমান ধর্মের অনুসারী তারা হযরত ইব্রাহীমের নাম বলবেন। কিন্তু যদি বলা হয় বাঙ্গালী জাতির পিতা কে? তবে সেটি ইব্রাহীম হবেনা। কারণ ‘বাঙ্গালী’ কোন ধর্মের নাম নয়। বা ‘ধর্মীয় জাতি’ নয়।
প্রশ্ন করতে পারেন মুজিবকে কেন জাতির পিতা বলা হয়? কারণ বাংলাদেশ তাঁকে জাতীয়ভাবে সেই সম্মান দিয়েছে। এটি ব্যক্তিগত ব্যপার নয়। বরং অস্বীকার করা দেশদ্রোহিতার শামিল।
প্রশ্ন করতে পারেন, অন্য মুসলিম রাষ্ট্রে এমন আছে কিনা?
অবশ্যই আছে।
�বিশ্বের প্রায় অনেক রাষ্ট্রেরই জাতির পিতা আছে।
কতিপয় মুসলিম রাষ্ট্র ও তার জাতির পিতাদের নাম-
�পাকিস্তান – জিন্নাহ্
�আফগানিস্তান – দুররানি
�সৌদি আরব – ইবনে সৌদ
�ইন্দোনেশিয়া – সুকর্ণ
�ইরান – সাইরাস দ্য গ্রেট
�মালয়েশিয়া – টুংকু আব্দুর রহমান
�তুর্কি – মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক… ইত্যাদি।
�প্রায় সব রাষ্ট্রই নিজ নিজ জাতির জনককে সন্মান করে। এতে এসব দেশের মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার কোন প্রশ্নই নাই। ইসলামকে যে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী একাত্তরে অপমান করেছে মূলত তারাই ধর্মের নাম দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করে চলেছে।
সৌদি আরবরা ধর্মে মুসলিম। জাতিতে এরাবিয়ান।
আমাদের দেশের নানান ধর্মের লোক আছে। সংখ্যাগুরু মুসলিম। তবে জাতিতে আমরা বাঙ্গালী।
আমাদের দেশের মুসলমানদের পাসোপোর্টে ধর্মের ঘরে লেখা থাকে ‘ইসলাম’ আর জাতীয়তার ঘরে লেখা থাকে ‘বাংলাদেশী’। যদি কেউ ইব্রাহিমকে জাতির পিতা মানেন তবে পাসোপোর্টে জাতীয়তা বাংলাদেশী লিখলে জিনিসটা মেলেনা। সেক্ষেত্রে জাতীয়তা পরিত্যাগ করতে হবে যা দেশদ্রোহিতার সামিল।
ইব্রাহিমকে মুজিবের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবলে ধরে নিতে হবে আপনার ধর্ম আর জাতীয়তা জ্ঞ্যান নাই অথবা আপনিই ইব্রাহিমকে মাটিতে নামিয়ে আনলেন অথবা আপনি সেইসব পরাজিত শক্তির দালাল যারা কোনোদিন আর ইতিহাস বিকৃতি করে বাংলার ক্ষমতার মসনদে আসতে পারবেনা। আওয়ামীলীগ নিজেও কোনোদিন দাবী করে নাই যে মুসলিম জাতির পিতা শেখ মুজিব।
অন্যকে ছোট করা ইসলামের সৌন্দর্য নয়। তরুণ ধার্মিকেরা সহজ বিষয়টা বুঝলে দেশের জন্য বা নিজের ঈমানের জন্যই উত্তম।