You dont have javascript enabled! Please enable it! রাতে ধর্ষিতা মেয়েদের বুক ফাটা চিৎকারে ঘুমাতে পারতো না কেউ। - সংগ্রামের নোটবুক

 

লাইনের দূরে গিয়ে দাঁড়ালেই অত্যাচারিত মেয়েদের আর্তনাদ ও আহাজারি শুনতে পেত। রাতে ধর্ষিতা মেয়েদের বুক ফাটা চিৎকারে ঘুমাতে পারতো না বাঙ্গালী পুলিশরা। সারারাত বাঙ্গালী পুলিশরা পরিবার পরিজন নিয়ে জেগে থাকতেন। হেডকোয়ার্টার বিল্ডিং থেকে ভেসে আসা ধর্ষিতা মেয়েদের আর্তনাদ শুনে, মেয়েদের দুঃখ দুর্দশা দেখে ক্ষোভে বেদনায় কালী পুলিশরা দিশেহারা হয়ে পড়েছিল কিন্তু তাদের। ঐ সকল অসহায় বাঙ্গালী মহিলাদের উদ্ধার করার জন্য কিছুই করার ছিলনা। হেডকোয়ার্টারের তেতলা ও চার তলার বাঙ্গালী মেয়েদের উলঙ্গ অবস্থায় ঝুলিয়ে রেখে ধর্ষণ করা হত, সেখানে সব সময় পাঞ্জাবী সৈন্যরা প্রহরায় মােতায়েন থাকতো। সেখানে বাঙ্গালী পুলিশদের প্রবেশ করার অধিকার ছিল না। মিঃ রোস্তম খাঁ নামে এক পাঞ্জাবী এ সময় রাজারবাগ পুলিশ লাইনের রিজার্ভ ইন্সপেক্টর ছিলেন। এই লােক রাজারবাগ পুলিশ লাইনের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করার পর, বাঙ্গালী পুলিশদের উপর অত্যাচার ও দমন নীতি আরম্ভ হয়ে যায়। পুলিশ লাইনে কখন বাঙ্গালী পুলিশ এর উপর মৃত্যুর করাল গ্রাস নেমে আসে এই ভয়ে বাঙ্গালী পুলিশরা সব সময় সন্ত্রস্ত থাকতাে। সালেহুজ্জামান ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ সন্ধ্যায় এক প্লাটুন ফোর্স সহ মীরপুর এক নম্বর সেকশনে টহল দিচ্ছিলেন। তখন পাঞ্জাবী সৈনারা বাড়ী থেকে বাঙ্গালী শিশু, যুবতী ও বৃদ্ধাদের টেনে এনে রাস্তায় ফেলে দিয়ে জবাই করে, বাঙ্গালী রমনীদের ধরে এনে রাস্তায় উলঙ্গ করে ফেলে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে ততক্ষনাৎ ধারালাে ছুরি দিয়ে স্তন ও পাছার মাংস কেটে নৃসংশভাবে হত্যা করে।

কাউকে কুচি কুচি করে কেটে ফেলার পরও যােনিতে লােহার রড ঢুকিয়ে কারাে গায়ে আগুন লাগিয়ে অট্টহাসিতে পাঞ্জাবী সৈন্যরা ফেটে পড়ে। ঢাকা পৌরসভার সুইপার ইন্সপেক্টর সাহেব আলী ২৯শে মার্চ ১৯৭১ সালে মির্ডফোর্ট হাসপাতালের লাশ ঘর থেকে দুই ট্রাক লাশ তুলতে দেখেছেন। অধিকাংশই ছিলাে সরকারী কর্মচারী, পুলিশ, আনসার ও পাওয়ারম্যানদের খাকি পােশাক পড়া। বিকৃত লাশ। লাশ তুলতে তুলতে পরদেশী নমিক ডােমের হাতে সাহেব আলী ষােড়শী এক রূপসীর উলঙ্গ ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখতে পান। দেখেন যুবতীর পবিত্র দেহে অসংখ্য ক্ষত চিহ্ন, তার বুক থেকে সজোরে স্তন তুলে নেয়া হয়েছে, লজ্জাস্থান ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আছে, পেছনের মাংশ তুলে নেয়া হয়েছে। সাহেব আলী দেখলেন হরিনের মত মায়াভরা মধুময় বড় বড় চোখ ঘুমিয়ে আছে, সারাদেহ সৃষ্টিকর্তা যেন দুধের সর দিয়ে আবৃত করে দিয়েছে, মাথার কালাে চুল তার কোমর পর্যন্ত লম্বা হয়ে পড়েছিল।

সাহেব আলী যুবতীর দুই গালে আঘাতের চিহ্ন দেখলেন। পরক্ষনেই সাহেব আলী দেখলেন এক কিশােরীর উলঙ্গ লাশ। অপরূপ রূপসীর ফলের মত টকটকে চেহারা, সারাদেহে বুলেটের আঘাত।

Reference:

নরহত্যা-ও-নারী-নির্যাতনের-কড়চা-১৯৭১-মেজর-রফিকুল-ইসলাম-পিএসসি

:::::::::::::::::::
ছবিটি প্রতীকী অর্থে যুক্ত হয়েছে। মেয়েটির নাম গৌরী রাণী কারিগর। একাত্তরের ১৭ আগস্ট কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর এলাকা থেকে তাঁকে আরও ৩ টি মেয়ের সাথে পাকিস্তানী সেনারা ধরে নিয়ে যায়। সে আর কোনোদিন ফিরে আসেনি।