You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: ২৩শে জুন, শনিবার ৮ই আষাঢ়, ১৩৮০

তদন্ত সাপেক্ষে এদের বিচার হতেই হবে

জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর কালে গত পরশুদিন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী আইনজীবিদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব আব্দুল মালেক উকিল ঘোষণা করেছেন। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যে সকল আইনজীবী ইয়াহিয়া টিক্কা খানের হত্যাযজ্ঞের সাহায্য করেছিল তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আব্দুল মালেক উকিল এক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলেন তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের ৩৮ জন এবং ঢাকা জেলা বারের ৫১ জন আইনজীবী মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ও পাকিস্তানী হত্যাযজ্ঞের সাপেক্ষে বিবৃতি প্রদান করেছিলেন। এদের নামের তালিকা সংগৃহীত হচ্ছে। মন্ত্রী কিছুসংখ্যক দালাল আইনজীবীর নাম পরিষদে পাঠ করে শোনান। বাকি নামগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে। মন্ত্রী জানান অনতিবিলম্বে যোগসাজশকারী আইনজীবীদের নাম সংগৃহীত হলে তাদের অতীত কার্যকলাপের তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যোগসাজশ করে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি পরিশোধ উঠেছে তা আজ আর একবার ভেবে দেখবার সময় এসেছে। দেশে এমন বহু লোক আজও বর্তমান রয়েছে যারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করেছিল। এবং মুক্তিযুদ্ধকে নস্যাৎ করার প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। এরা স্বাধীনতার পর বহাল তবিয়তে রয়েছে এবং প্রকারান্তরে আজও দেশের বিভিন্ন কর্মসূচির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এছাড়া এমন বহু দালাল ব্যক্তি রয়েছে যারা দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। বিভিন্ন বিভাগের চাকরিজীবীরা যুদ্ধকালীন সময় যেমন ইয়াহিয়া সরকারের সমর্থন জুগিয়েছিল তেমনি আইনজীবীরা তাদের নৈতিক সমর্থন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। এমনকি অনেকে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছিল সরকার অত্যন্ত ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে সকল প্রকার অপরাধীদের প্রতি বেশ খানিকটা উদারতা দেখিয়েছেন। চরম বিরোধিতা যারা করেছিল তাদের ছাড়া প্রায় সবাইকে মুক্ত মানুষ হিসেবে দেশ গড়ার কাজে আহ্বান জানিয়েছিল। শুধু তাই নয় অনেক বড় বড় দালাল ব্যক্তিও সেই কৃপা দৃষ্টি সুযোগ নিয়ে নিজেকে বহাল তবিয়তে রেখেছে। আমরা সকল দালাল আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা আগেই উল্লেখ করেছি। ইতোপূর্বে রাষ্ট্রপতি আদেশ ৫০ সংশোধন দাবি করেছিল ঢাকা আইনজীবী সমিতি। অর্থাৎ এনেছিল আটক ব্যক্তিদের প্রতি উদারতা প্রদর্শনের সুপারিশ। সে প্রসঙ্গে আমরা আমাদের মতামত জানিয়েছে।
উল্লেখিত বিষয়ের উপর আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করেছে, হত্যা, নারী ধর্ষণের সহায়তা করেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। এদেরকে ক্ষমা করার অর্থ হবে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি অসম্মান করা। এদের বিচার হতেই হবে। আমরা দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষাকে এ ব্যাপারে আমাদের অভিমত বলে বিশ্বাস করি।

পাঠ্য বইয়ের কালোবাজারি

চাল, ডাল, তেল, নুন, কেরোসিন, সিগারেট সবকিছুর তো কালোবাজারি হল। কালোবাজার আর ফটকা বাজার ছাড়া তো আজকের দিনে কোন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পাওয়া যায় না। কালোবাজার আর ফটকা বাজারের দৌরত্মে ২৫ পয়সার জিনিস এখনকার বাজারে সব সময়ই দের টাকা, দু টাকায় কিনতে হয়। এটা এদেশের মানুষের জন্য গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। আর এ অবস্থার প্রতিধ্বনী করি বিশেষ যুব নেতা জনাব আব্দুল কুদ্দুস মাখনও সেদিন পরিষদের বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন যে বাজারে এখন সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কালোবাজারি ও মজুতদাররা। অথচ এদের হাত থেকে জনগণকে বাঁচানোর জন্য সরকারি তৎপরতাও যেন কেমন হয়ে দেখা দিচ্ছে। কাজেই সর্বত্রই যেন কালোবাজারিদের জয়জয়কার।
সবকিছু শেষে কালোবাজারিরা এবার বইয়ের কালোবাজার তথা শিক্ষা নিয়ে কালোবাজারি শুরু করে দিয়েছে। জনসন রোডের এক সহযোগী তাদের গতকালকের সংখ্যায় এ ব্যাপারে এক চাঞ্চল্যকর সংবাদ ছেপেছে। এতে বলা হয়েছে যে সকল টেক্সটবুক বোর্ড প্রকাশিত সবুজসাথী প্রথম ভাগ নিয়ে এক শ্রেণীর পুস্তক ব্যবসায়ীদের দু পয়সা কামাই করে যাচ্ছে। শিক্ষাবর্ষ শুরু হবার পর থেকে তাদের এ ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। এ বইটির গায়ে মূল্য লেখা রয়েছে পচিশ পয়সা আর বিক্রি হচ্ছে দু টাকায়। সবচাইতে মজার ব্যাপার হচ্ছে বোর্ড অনুমোদিত দোকান বা বোর্ডিং নিযুক্ত ডিলারদের কারো কাছে এ বই পাওয়া যায় না। কেবল চকবাজারের মনোহারী দোকান এর আয়াত বা ফুটপাতের বইয়ের দোকানে পাওয়া যায়।
ফুটপাতের বইয়ের দোকানদাররা চকের আর থেকে ২৫ পয়সা প্রতি কপি বই ৮৭ পয়সা দামে শ’হিসেবে কিনে আনে। আর বিক্রি করে এক দেড় টাকায়। অথচ ২৫ পয়সার এই বই কালোবাজারে বিক্রি হবার কারণ হিসেবে সরবরাহে অপ্রতুলতাটা বড় নয়-বড় হয়ে দেখা দিয়েছে বইয়ের দাম টা। বোর্ডের ডিলাররা বলেছেন এত কম দামের বই এনে নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করে তাদের পোষায় না। আর পৌঁছায় না বলেই সম্ভবত তারা বইগুলো এনে আরতে বিক্রি করেন। আরতদাররা চুটিয়ে ব্যবসা করেন। মধ্যখান থেকে ডিলাররা হয়তো টু’পাইস পেয়ে যান- টুপাইস পেয়ে যান ফুটপাতের বই দোকানদাররা। আর এদিকে বইয়ের অভাবে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হবার উপক্রম।
আজকের দিনে আমাদের সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে দুর্নীতির যেকোনো সেতু ব্রিজ ঢুকে পড়েছে বইয়ের এই কালোবাজারি তা থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। যেমন করেই হোক পয়সা আয় করার যে হীন ও ধ্বংসাত্মক প্রবণতা আজকের দিনে আমাদের সমাজ জীবনকে গ্রাস করছে এটা তারই একটি জ্বলন্ত প্রমাণ।
বোর্ড কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। যারা বোর্ডের নিযুক্ত ডিলার হয়ে পাঠ্যবইয়ের এহেন কালোবাজারিতে নিয়োজিত হয়েছেন তাদের এ ব্যাপারে যথার্থ সতর্ক করে দিয়ে ভবিষ্যতে এ হেন কাজের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!