You dont have javascript enabled! Please enable it!

৩০ জানুয়ারি, ১৯৭১

  • পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়াম্যান জেড. এ. ভুট্টো সন্ধ্যা ছয়টায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আহুত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন, তিনি এবং তাঁর পার্টি জাতীয় ঐক্যের আওতার মধ্যে একটি কার্যক্রম ও গ্রহণযোগ্য শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য একটি স্থায়ী ফর্মূলা বের করতে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাবেন। তিনি বলেন, তাঁদের এখানে আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে মতৈক্যের ক্ষেত্রসমূহ খুঁজে বের করা এবং সাধারণ বিষয়গুলির অনুসন্ধান করা এবং ভ্রাতৃত্ব, সমঝোতা ও সহযোগিতার মনোভাব পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করা। বঙ্গবন্ধুর সাথে অনুষ্ঠিত তাঁর বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আলোচনার ক্ষেত্রে আমরা এমন এক জায়গায় এসে ঠেকেছি যা অত্যন্ত কঠিন। আলাপ আলোচনার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভুট্টো সংবাদপত্রসমূহকে নিরপেক্ষতা অবলম্বনের অনুরোধ জানান।
  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভুট্টো এম. এল নাবিক লঞ্চে চড়ে পাঁচ ঘণ্টা নৌ-ভ্রমণ করেন। দুই নেতার উক্ত নৌ-বিহারে শরীক ছিলেন এমন একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায় যে, বঙ্গবন্ধু ও ভুট্টোর ৭০ জনের বিরাট দলসহ নৌযানটি কিছুদূর যাওয়ার পর দুই নেতা একটি আলাদা ছোট্ট লঞ্চে আরোহণ করেন। তাঁরা সেখানে দুইঘণ্টাকাল আলোচনা করেন। তাঁদের মধ্যে এই দীর্ঘ আলোচনা সম্পর্কে দলের অন্যরা যদিও অজ্ঞ তথাপি তাঁদের মতে উভয় নেতা গত তিনদিনের বৈঠকের জের টেনে আলোচনা করেন। নৌ-বিহারে আওয়ামী লীগ দলের সৈয়দ নজরুল ইসলাম, খন্দকার মোস্তাক, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, মিজানুর রহমান, আবদুল মোমিন, নূরজাহান মোর্শেদ, বদরুন্নেসা আহমদ, সাজেদা চৌধুরী, গাজী গোলাম মোস্তফা, মোস্তফা সারওয়ার ও আওয়ামী লীগ দলীয় এম. এন. এ এবং এমপিএ-গণ ছিলেন বলে এপিপি’র খবরে প্রকাশ। পিপলস পার্টির মধ্যে ছিলেন জে. এ. রহিম, পীরজাদা আবদুল হাফিজ, হানিফ রামে, শেখ রশিদ, রফিক রাজা এবং মেজর জেনারেল থ্যাকার ও অন্যান্য নেতা। পিপলস পার্টি সূত্রে প্রকাশ ড. মোবাশ্বের হাসান এই দলে ছিলেন না, কারণ তিনি গতকাল লাহোরের পথে ঢাকা ত্যাগ করেন।
  • জননেতা মণি সিং রাজশাহী জেল থেকে এক তারবার্তায় হাবিবুর রহমানের মুক্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করে তাঁকে অভিনন্দন জানান।এখানে উল্লেখ্য যে, দেশে দ্বিতীয় দফা সামরিক আইন জারীর পর জননেতা মণি সিং ও হাবিবুর রহমানকে নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়।
  • দুইজন তরুণ কাশ্মীর ভারতীয় এয়ার লাইন্সের একটি ফকার ফ্রেন্ডশীপ বিমান অপহরণ করে জোরপূর্বক পাইলটকে বিমানটি লাহোরে অবতরণ করতে বাধ্য করে। অপহরণকারীরা নিজেদের অধিকৃত কাশ্মীরের মুক্তিযোদ্ধাদের সংস্থা জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট এর সদস্য বলে দাবি করে। বিমানে ২৮ জন যাত্রী এবং ৪ জন বৈমানিক ছিলেন। বিমানটি শ্রীনগর থেকে জম্মু যাচ্ছিলো। অপহরণকারীদ্বয় যাত্রীদের মধ্যেই ছিলো। অপহৃত বিমানের বৈমানিকগণ হলেন ক্যাপ্টেন জি. এস. ওবেরিও, ক্যাপ্টেন এম. কে. কাচরু, ফ্লাইটটির পারসার এস. ডি. কৌশিক এবং বিমানবালা কিরণ কোহলী। ট্রানজিট ক্যাম্পে সহকারী পাইলট সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে বলেন, জম্মু থেকে মাইল দশেক দূরে যাওয়ার পর অপহরণকারীদের একজন পিস্তল ও হাতবোমা নিয়ে পাইলটকে বিমানটি পাকিস্তানের দিকে ঘুরানোর নির্দেশ দেয়। যাত্রী ও বিমানের নিরাপত্তার খাতিরে পাইলট অপহরণকারীদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
  •  

    Source: Bangladesh Liberation War Museum

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!