১১ জানুয়ারি ১৯৭১
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এসে পৌঁছেন। দীর্ঘ সফরে ক্লান্ত বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের সাথে কথা প্রসঙ্গে বলেন, চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের নব নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য এম. এ আজিজের মৃত্যুর জন্য তাঁকে অবিলম্বে চট্টগ্রাম যেতে হয়েছিলো। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ, খন্দকার মোস্তাক আহমদ এবং ড. কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু আগামীকাল কোন একসময় প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাৎ করবেন।
- প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তাঁর সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও ভুট্টোর ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। প্রেসিডেন্ট তেজগাঁও বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেন, “তাঁদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে দিন। আমি কেউ না। আমি কোন আলাদা শক্তিও না। আমি রাষ্ট্রের প্রধান এবং আমার স্বার্থ হলো তাঁদের সাথে মিলিত হওয়া এবং আলোচনা করা।” এক প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট বলেন যে, তিনি এখনও জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠানের তারিখ সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি বলেন, “যখন আমি তারিখ ঠিক করে ফেলবো তখন আপনাদের জানাবো।” তিনি কখন বঙ্গবন্ধুর সাথে মিলিত হবেন জানতে চাইলে বলেন, “তিনি ব্যস্ত মানুষ, আমিও ব্যস্ত মানুষ। যখন তাঁর সময় হবে এবং যখন আমারও সময় হবে তখনই আমরা মিলিত হবো।” তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে কী বিষয়ে আলোচনা করবেন জানতে চাইলে বলেন, “এ ব্যাপারে আপনাদের কাছে বলার আমার কিছুই নাই।”
- তেজগাঁও বিমানবন্দরে রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের মুক্তিদানের ব্যাপারে ইয়াহিয়া খান বলেন, আমি পূর্বেও বলেছি যে, কোন রাজবন্দী নেই। তখন জনৈক সাংবাদিক সুুনির্দিষ্টভাবে জননেতা মণি সিং-এর নাম উল্লেখ করেন। জবাবে প্রেসিডেন্ট বলেন, “মণি সিং কে?” সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক জানান, “মণি সিং নিরাপত্তা আইনে আটক রয়েছেন। তিনি ভিন্ন রাজনৈতিক মত পোষণ করেন।” জবাবে প্রেসিডেন্ট বলেন, “কী সেই ভিন্ন মত?” এর জবাবে অপর একজন সাংবাদিক বলেন, “মণি সিং বামপন্থী মতাদর্শের অনুসারী।” তখন প্রেসিডেন্ট ‘বামপন্থী’ কথাটির পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ‘তাহলে রাইট কে?’ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যে যে মত পোষণ করুণ আমার কোন মত নেই। আমাকে ১২ কোটি লোককে দেখতে হয়। একজন মণি সিং- এর প্রতি আমি নজর দিতে পারি না।’
- প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তিনদিনব্যাপী পূর্ব পাকিস্তান সফরে ঢাকা আগমন করেন। বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে এই বৎসরের শেষ নাগাদ ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা পোষণ করেন কি না জানতে চাইলে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘কেন এতো দীর্ঘ সময়? যদিও আইনগত কাঠামো আদেশে ১শত ২০ দিন সময় ধার্য করে দেওয়া হয়েছে, তবুও এটি ১০ দিনেও হতে পারে বলে আমি আশা করি।’
- পাকিস্তান ন্যাপ-এর সভাপতি খান আবদুল ওয়ালী খান জাতীয় একটি গ্রহণযোগ্য শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ব্যাপারে সকল শক্তি নিয়োজিত করার জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান। তিনি পেশোয়ারে এক জনসভায় ভাষণদানকালে প্রাদেশিক রাজনীতিতে আব্দুল কাইয়ুম খানের ষড়যন্ত্র ও কোন্দল প্রচেষ্টায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, গত সাধারণ নির্বাচনে জনগণ তথাকথিত জাতীয় আদর্শের রক্ষকদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। অতএব এখন এ জাতীয় ষড়যন্ত্রের অবকাশ নেই। তিনি উপস্থিত জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, এখন প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা গঠন করা, ভাঙ্গার সময় না। ন্যাপ প্রধান আরও বলেন, দেশের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে সম্পদের সুষম বণ্টন করা যাতে বঞ্চিত জনগণ জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনীয় সুযোগ লাভ করতে পারে।
- Source: Bangladesh Liberation War Museum