You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.01.09 | ৯ জানুয়ারি ১৯৭১ - সংগ্রামের নোটবুক

৯ জানুয়ারি ১৯৭১

  • পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি আবদুল ওয়ালী খান পেশোয়ারে এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর প্রাণনাশের পরিকল্পনার নিন্দা করেন এবং চক্রান্তকারীদের উদ্ঘাটন করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানান।
  • বঙ্গবন্ধুর প্রাণনাশের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানও স্বস্তি প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধুর নিকট প্রেরিত এক বাণীতে তিনি বলেন, আপনার জীবননাশের চেষ্টার সংবাদ পেয়ে আমি ব্যথিত হয়েছি, তবে সর্বশক্তিমান আল্লাহকে ধন্যবাদ যে, এই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে এবং আপনি রক্ষা পেয়েছেন।
  • পিডিপি প্রধান নুরুল আমিন বঙ্গবন্ধুর প্রাণনাশের চেষ্টার তীব্র নিন্দা করে বলেন, দেশের দীর্ঘ প্রতিক্ষীত শাসনতন্ত্র প্রণয়নের শুরুতে নানাস্থানে নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রদের ওপর হামলা খুব ভালো লক্ষণ না । তিনি একজন প্রাক্তন হাইকোর্ট বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
  • কুমিল্লার বাঞ্ছারামপুর থেকে প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য গোলাম মহিউদ্দিন (আফতাব) এক বিবৃতিতে ৭ কোটি বাঙালির কণ্ঠস্বর বঙ্গবন্ধুর প্রাণনাশের চেষ্টার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপনপূর্বক এ ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।
  • মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তাঁর টাঙ্গাইলের সন্তোষস্থিত বাসভবনের সামনে অনুষ্ঠিত “জাতীয় সম্মেলন”-এ ভাষণদানকালে ১৯৪০ সনের লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান। তিনি কৃষক শ্রমিকের চূড়ান্ত মুক্তির জন্য সমাজতন্ত্র কায়েমের ওপর জোর দেন। লাহোর প্রস্তাব সম্পর্কে বলেন, লাহোর প্রস্তাব না হলে বাংলার মুসলমানরা পাকিস্তানে শরীক হতো না, কলকাতাসহ ১৪টি জেলা হারাতো। তিনি বলেন, কায়েদে আজম বোকা ছিলেন না। তাই তিনি নিজেই লাহোর প্রস্তাবের খসড়া প্রণয়নের সময় ইংরেজী ‘স্টেটস’ (রাষ্ট্রসমূহ) কথাটি প্রস্তাবের মধ্যে রাখেন। অর্থাৎ লাহোর প্রস্তাবে পরিস্কারভাবে দুইটি রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও মুসলিম লীগ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। অথচ সেদিন দওলতানা, খালেকুজ্জামান, রাজা মাহমুদাবাদ প্রমুখ পাঞ্জাবি, সিন্ধি, বেলুচ, পাঠান নির্বিশেষে কোন নেতাই আপত্তি করেনি। মওলানা আবারও ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান’ দাবির কথা উল্লেখ করেন। তবে তিনি এও বলেন যে, পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে এখানে কোন রাজনীতি চলবে না- এতে খুব সংকট রয়েছে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ও পররাষ্ট্র দফতরে পূর্ব পাকিস্তানি নেই বললেই চলে। অগাধ সম্পদ থাকা সত্ত্বেও কুটির শিল্প ও ভারী শিল্প হয়নি। এ প্রসঙ্গে তিনি আত্মনির্ভরশীল হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, এদেশে কয়লা, তেল, পেট্রোল ইত্যাদি সম্পদ এতো রয়েছে যে, আত্মনির্ভরশীল না হয়ে যায় না। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, আমরা পশ্চিম পাকিস্তানের শোষিত জনতার বিরুদ্ধে নই।
  • কানাডার প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডো চারদিনের পাকিস্তান সফর শেষে আজ করাচী থেকে নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পাকিস্তান ত্যাগের প্রাক্কালে কানাডীয় প্রধানমন্ত্রীকে সিন্ধুর গভর্নর লে. জেনারেল রাহমান গুল করাচী বিমানবন্দরে আন্তরিক বিদায় জানান।
  • পূর্ব বাংলার শ্রমিক ফেডারেশণের কার্যকরী সভাপতি মাহফুজ ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক হায়দার আকবর খান রনো ২০ জানুয়ারি প্রদেশের সকল স্কুল-কলেজ, দোকানপাট, অফিস-আদালতে পূর্ণ হরতালের মাধ্যমে “আসাদ দিবস” পালনের জন্য আহবান জানান। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন যে, ১৯৬৯ সালের এই দিনে বুকের রক্ত দিয়ে আসাদুজ্জামান সেদিনের আন্দোলনে এক নতুন বিপ্লবী উপাদান সংযোজন করেন। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, সেদিন সেই আন্দোলন স্বৈরাচারী আইয়ুব শাহীর পতনের মধ্যে দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে। বিবৃতিতে তাঁরা আশা প্রকাশ করে বলেন যে, পূর্ব বাংলার জাগ্রত জনতা আসাদকে ভোলেনি।
  • Source: Bangladesh Liberation War Museum