You dont have javascript enabled! Please enable it!

৪ জানুয়ারি, ১৯৭১

  • পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের ২৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে রমনা গ্রীনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণদানকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এবারের নির্বাচনে এক বাস্তব কর্মসূচির প্রতি রায় দিয়েছে। তিনি বলেন, ৭ কোটি বাঙালি ব্যতীত অন্য কারো ৬ দফা কর্মসূচি পরিবর্তনের অধিকার নেই। নির্বাচনে এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে, বাঙালিরা চিরদিনই বাঙালি হিসেবে বেঁচে থাকবে। অতীতেও বাঙালিরা যে কোন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে, এখনও তারা বাঙালি হিসেবেই পরিস্থিতির মোকাবেলা করছে।
    বঙ্গবন্ধু বলেন, অতীতে বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার জন্য প্রচেষ্টা চালানো হয়। এমনকি আরবী হরফে বাংলা লেখার প্রচলনের চেষ্টাও করা হয়। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রতিহত করেছি। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কবি নজরুল ইসলামকে বাদ দিয়ে আমরা বাংলা সাহিত্যকে ভাবতে পারি না। তিনি বৃটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালিদের ত্যাগের দৃষ্টান্তস্বরূপ চট্টগ্রাম ও বারাকপুর অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের কথা উল্লেখ করেন। সেসব দেশপ্রেমিকদের সংগ্রামের স্মরণে আওয়ামী লীগ কর্তৃক জালালাবাদে (চট্টগ্রাম) একটি জাতীয় স্মৃতি মিনার নির্মাণ করার কথা তিনি ঘোষণা করেন।ভোরে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পতাকা উত্তোলন এবং সকাল আটটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রলীগ কর্মীগণ পুষ্প অর্পণ করেন।
    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণকে তাদের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আরো আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকার আহবান জানান। বঙ্গবন্ধু দেশের ভাবী শাসনতন্ত্র প্রণয়ন সম্পর্কে বলেন, তাঁর দল একাই শাসনতন্ত্র প্রণয়নে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানের নির্বাচিত সদস্যদের এ ব্যাপারে সাদর আমন্ত্রণ জানাবে। অবশ্য তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, যে কোনো অবস্থাতেই তিনি নীতির প্রশ্নে আপোষ করবেন না। বঙ্গবন্ধু আরো বলেন যে, একই স্বার্থবাদী মহল কর্তৃক পশ্চিম পাকিস্তানের দরিদ্র জনসাধারণ সমভাবে শোষিত হয়েছে, সে শোষিত জনগণের স্বার্থেও তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
  • পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস এডমিরাল এস. এম আহসান আজ রাওয়ালপিন্ডি যাত্রা করেন। তিনি ৭ জানুয়ারির দিকে এখানে প্রত্যাবর্তন করবেন।
  • আজ সমাপ্ত প্রাদেশিক ন্যাপের কার্যকরী কমিটি তিনদিনব্যাপী বর্ধিত সভায় পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপ পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব, রাজবন্দিদের মুক্তি এবং খাদ্যসহ নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদির মূল্যহ্রাসের দাবিতে আগামী ২৪ জানুয়ারি প্রদেশব্যাপী দাবি দিবস পালনের আহবান জানিয়েছে। এছাড়া সভার আলোচনা মূলত ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্রের রূপরেখা, সকল জাতিসত্তার সমানাধিকার ও জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমানাধিকারের নিশ্চয়তা সম্বলিত শাসনতন্ত্র প্রণয়ন এবং গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইনগত কাঠামোর সৃষ্ট বিঘœ অপসারণের পদ্ধতি সম্পর্কেই অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ত্ব করেন প্রাদেশিক ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ।
  • Source: Bangladesh Liberation War Museum
error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!