You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.01.03 | ৩ জানুয়ারি ১৯৭১ - সংগ্রামের নোটবুক

৩ জানুয়ারি, ১৯৭১

  •  ঢাকার রমনা রেসকোর্স ময়দানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ সমাবেশে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নবনিবার্চিত আওয়ামী লীগ দলীয় ৪১৯ জন সদস্য শপথ গ্রহণ করেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সমাবেশে তাঁর নীতি নির্ধারণী বক্তব্য দান করেন। সমাবেশে নব নির্বাচিত পরিষদ সদস্যগণ দেশে শোষণ, অবিচার ও বৈষম্যমুক্ত এক নয়া সমাজ গড়ার জন্য ১১ দফা ও ৬ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের শপথ গ্রহণ করেন। শপথ গহণ শেষে ঘূর্ণিঝড় ও সামুুদ্রিক জলোচ্ছাসে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত এবং ৭ কোটি বাঙালির ঐক্য কামনা করে এক বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে উপস্থিত হাজার হাজার জনতার সামনে নির্বাচিত গণপ্রতিধিরা শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন।
    আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান রমান রেসকোর্স ময়দানের বিশাল জনসভায় বক্তৃতাকালে সাবধান করে বলেন, ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। জনতাকে উদ্দেশ্য করে বঙ্গবন্ধু বলেন, চরম ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকবেন। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ঘোষণা করেন যে, ৬-দফার শাসনতন্ত্র প্রণীত হবেই, কেউ এটা ঠেকাতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রদত্ত নীতি নির্ধারণী বক্তৃতায় শাসনতন্ত্র প্রণয়নের প্রশ্নে ঘোষণা করেন যে, সংখ্যায় বেশি আছি বলে একথা বলবো না যে, কারো সহযোগিতা চাই না। আমরা সহযোগিতা চাই, তবে নীতির প্রশ্নে কোন আপোষ নেই। তিনি বলেন, ৬ দফা ও ১১ দফা আওয়ামী লীগ বা মুজিবের সম্পত্তি না, জনতার সম্পত্তি। একে রদবদল করার অধিকার সদস্যদের নেই।
    বক্তৃতাকালে বঙ্গবন্ধু সাজাপ্রাপ্ত ও বিনাবিচারে আটক সকল রাজনৈতিক নেতা কর্মী ছাত্র ও শ্রমিকদের মুক্তি ও সাজা মওকুফের দাবি জানান।তিনি উত্তরবঙ্গবাসীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, যমুনার উপর নিশ্চয় সেতু হবে, টাকার অভাব হবে না। শীতলক্ষ্যা ও মেঘনার উপরও সেতু নির্মাণের প্রচেষ্টা চালানো হবে। তবে আস্তে আস্তে।আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে কাশ্মীর ও ফারাক্কা বিরোধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার প্রচেষ্টা চালাবেন বলে তিনি ঘোষণা করেন।
  • মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী তানশ্রী সার্দস তিন দিনব্যাপী পূর্ব পাকিস্তান সফর শেষে সন্ধ্যায় স্বাদেশের পথে ঢাকা থেকে ব্যাঙ্কক যাত্রা করেন। ঢাকা বিানবন্দরে মালয়েশীয় মন্ত্রীকে পাকিস্তানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. মালিক এবং ঢাকাস্থ ইন্দোনেশীয় ভাইস কন্সাল বিদায় সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করেন। পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানকালে মালয়েশীয় মন্ত্রী পটুয়াখালী জেলার ঘূর্ণিদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন।
  • প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এক সামরিক আইন জারির মাধ্যমে পাকিস্তান সরকারের প্রাইসেস ও সাপ্লাইজ বিভাগের কন্ট্রোলার জেনারেলের উপর বিক্রেতা, আমদানীকারক ও প্রস্তুতকারকদের দ্বারা বিক্রয়যোগ্য মোটরগাড়ির সর্ব্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব অর্পণ করে। সামরিক আইনের এই ৭১ নং বিধানের নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত দামে মোটরগাড়ি কেনাবেচা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিধি অনুসারে কন্ট্রোলার জেনারেলকে বিধি জারির ৭ দিনের মধ্যে মোটরগাড়ির হিসাব গ্রহণের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এই বিধি অমান্য করলে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড কিংবা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে এবং বিধি অমান্যকারীর মোটরগাড়ি বাজেয়াপ্ত হবে।
  • Source: Bangladesh Liberation War Museum