You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা : ১লা নভেম্বর, শুক্রবার, ১৯৭৪, ১৪ই কার্ত্তিক, ১৩৮১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্ত ইশতেহার

একদিনের সফর শেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরী কিসিঞ্জার গতকাল পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। তাঁর সফর বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের বিশ্বাস। সফর শেষে প্রকাশিত যুক্ত ইশতেহারে বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয়ও ঐ একই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
সাম্প্রতিক চুক্তি অনুযায়ী খাদ্যশস্য ও সার কেনা বাবদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ছ’কোটি ডলার ঋণ প্রদান করেছে তা সহ গত তিন বছরে বাংলাদেশকে তারা যে সাহায্য দান করেছে সে ব্যাপারে স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের সন্তোষ প্রকাশ করার কথা। এছাড়া রয়েছে আমাদের সাহায্য দানের জন্য গঠিত কনসোর্টিয়ামের সাম্প্রতিক বৈঠক এবং তার ফলাফল। এটি অবশ্যই একটি গঠনমূলক অগ্রগতি। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় উন্নত রাষ্ট্রসমূহের সাহায্য এবং সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তাকে কোনো অবস্থায়ই খাটো করে দেখা যায়না।
কনসোর্টিয়ামের মাধ্যম ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উন্নয়নে যথাসম্ভব সাহায্য দানের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা সেই বাস্তবতা এবং উন্নত রাষ্ট্রসমূহের দায়িত্ব সচেতনতারই পরিচয় বহন করে।
ডঃ কিসিঞ্জারের বাংলাদেশ সফরের পর প্রকাশিত যুক্ত ইশতেহারে উপমহাদেশে পারস্পরিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যে বক্তব্য রাখা হয়েছে তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে আমরা মনে করি। আমরা বরাবর বলে আসছি একমাত্র আলোচনার মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিরাজমান মতপার্থক্য এবং ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটানো যেতে পারে। আজকের যুগে কেউ কারো দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারেনা। আর যুদ্ধ সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় বলে যারা মনে করেন তারাও বাস্তবতাকে এড়িয়ে চলছেন বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং তা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে এমন কোনো উদ্যোগ নেই যা গ্রহণ করেনি। যুদ্ধাপরাধী থেকে শুরু করে যুদ্ধবন্দী সবাইকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের উপর যে পাশবিক অত্যাচার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী চালিয়েছে এবং দীর্ঘ তেইশ বছর তারা যে অমানবিক শোষণ আমাদের উপর অব্যাহত রেখেছিল সেই ক্ষতে প্রলেপ লাগিয়ে আমরা চেয়েছি দু’দেশের জনগণের মধ্যে সত্যিকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা। কারণ আমরা জানি, সেখানকার জনগণও আমাদের মতো নিস্পেষিত হয়েছে এবং বাংলাদেশে শোষণ এবং অত্যাচার থেকে সেখানকার সাধারণ মানুষ কোনো প্রকার উপকৃত হয়নি। আমরা এও জানি পারস্পরিক বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতার মাধ্যমে দু’দেশের জনগণের উন্নতি এবং সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব। অনৈক্য এবং বিভেদ শুধু কোটারী স্বার্থকেই নিশ্চিত করতে পারে।
পাকিস্তান কিন্তু আমাদের সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি। বরং এই অঞ্চলে উত্তেজনা এবং বিভেদ অব্যাহত রাখতেই তারা সচেষ্ট থেকেছে। ডঃ কিসিঞ্জারের পাকিস্তানের সফর এদিক থেকে ফলপ্রসূ অগ্রগতির সূচনা করতে পারে।

সত্যের মার নেই

স্টেডিয়াম ও টেলিভিশন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের সামনে মোহাম্মদ আলী ক্লে অবশেষে প্রমাণ করলেন অন্যায়ভাবে অধিকার বঞ্চিত মানুষের জয়মালাকে পদদলিত করবার শক্তি পৃথিবীতে কারো নেই। সত্যের পথে কোনো কিছুই অন্তরায় হতে পারে না—পৃথিবীর এ চিরন্তন শাশ্বত নিয়মের পথ ধরে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন মোহাম্মদ আলী হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করলেন। সাম্যের নামাবলী গায়ে চড়িয়ে বিশ্ব সমাজে অসাম্য আর অশান্তির বিষবাষ্প যারা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন—কৃষ্ণকায় মোহাম্মদ আলী তাদের সে চক্রান্তের শিকার হয়েছিলেন আজ থেকে সাত বছর আগে। ভিয়েতনামের মানবতাবিরোধী যুদ্ধে আমেরিকার পক্ষে মোহাম্মদ আলীকে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হলে আলী সে অন্যায় যুদ্ধে যোগদানে অস্বীকৃতি জানান। ফলে তার হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নের গৌরব কেড়ে নেয়া হয় আদালতের মাধ্যমে এবং কারাদন্ড প্রদান করা হয়। বিশ্ববাসীর এ সবই জানা কথা এবং এটাও জানা যে, আলীর কৃষ্ণ বর্ণই তার নিজের জন্য এই দুর্গতি ডেকে এনেছিল।
গত পরশু কিনসাসাতে ফোরম্যানকে হারিয়ে দিয়ে আলী আবেগ জড়িত কন্ঠে কোটি কোটি টেলিভিশন দর্শকের সামনে বলেন, ‘ওরা অন্যায়ভাবে আমার গৌরব কেড়ে নিয়েছিল এবং এর জন্য আমাকে কত না দুঃখ ভোগ করতে হয়েছে। নির্জন কারান্তরালেও আমাকে কাল কাটাতে হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি প্রমাণ করতে পেরেছি যে, আমিই শ্রেষ্ঠ।’ অধিকার বঞ্চিত মানুষের আপন নিষ্ঠায় হৃত গৌরব ফিরে পাওয়ায় নজীর বোধ হয় বিশ্বে মোহাম্মদ আলী ক্লেই সগৌরবে স্থাপন করলেন। জয়তঃ মোহাম্মদ আলী।

যুবরাজ চার্লসের বিরক্তি

বৃটেনের যুবরাজ চার্লস কিঞ্চিত বিরক্তি হয়েছেন। বিরক্তির কারণ, তাঁর রোমান্স নিয়ে পত্র-পত্রিকায় প্রচারণা চালানো হয়েছে। যুবরাজ চার্লস সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণে গিয়েছিলেন। ক্যানবেরায় মিস ফিজির সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন। পত্র-পত্রিকায় সেই সব অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি প্রকাশিত হয়েছে এবং সেই সঙ্গে চার্লস-ফিজি প্রেম কাহিনীর সরস বিবরণ দেয়া হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে এসে যুবরাজ চার্লস লন্ডনে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছেন যে, ‘সমস্ত পরিস্থিতিই তিনি স্বীকার করে নিতেন, কারণ সংবাদপত্রের ওপর তাঁর শ্রদ্ধাশীল মনোভাব রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক রোমান্স সম্পর্কিত প্রচারণার ফলে ‘ব্যাপারটি একটু জটিল’ হয়ে পড়বে।’
যুবরাজ চার্লসের বর্তমান বয়স পঁচিশ। তিনি রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের জ্যেষ্ঠ পুত্র। সমগ্র ইউরোপব্যাপী তিনি কুমার হিসেবে সুপরিচিত। তাঁকে নিয়ে তাই পত্র-পত্রিকার জল্পনা কল্পনার সীমা-পরিসীমা নেই। বৃটিশ পত্র-পত্রিকাগুলো ইতিমধ্যে যুবরাজের বিয়ে নিয়ে কলমের কালি অনেক খরচ করেছে। কোনো মেয়ে বন্ধুর সঙ্গে যুবরাজের মেলামেশা এবং অন্তরঙ্গতার গন্ধ পাওয়া মাত্রই ইনিয়ে বিনিয়ে নানা রকমারী কাহিনী সমানে প্রকাশিত হয়ে চলেছে। যুবরাজ চার্লস তাঁর সাম্প্রতিক রোমান্সের প্রচারণায় তাই একটু বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি তাই বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে আমি যদি কাউকে বিয়ে করতে চাই কিংবা ঐ রকমের একটা কিছু করে বসি, তাহলে কারো কিছু বলার আছে, না বলা সঙ্গত?’ যুবরাজ চার্লসের এই মন্তব্য থেকে সুস্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, তাকে নিয়ে বা তার নাম জড়িয়ে কোনো মেয়ে বন্ধুর সঙ্গে প্রেম কাহিনীর প্রচারণাকে তিনি সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না। অতএব, বিরক্তিবোধ করা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু যেহেতু সুপরিচিত, সেইহেতু তাঁকে কেন্দ্র করে, বিশেষ করে তাঁর প্রেমময় জীবনের অধ্যায় জানার এবং প্রকাশ করার আগ্রহ থাকাও এমন কিছু অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!