You dont have javascript enabled! Please enable it!

জামাল

 

কুঁড়ি বছরের চেয়ে কম বয়সের ছেলেটি আমাকে এমন ভাবে মুগ্ধ করেছিল যে তাকে আমি নিজের ছেলের মতো স্নেহ করতাম। চাইতাম তার সাথে যেন আমার বিচ্ছেদ না হয়। সে ছিল জামাল শেখ মুজিবের কনিষ্ঠ পুত্র। সে পরিবারের সাথে আটক হয়ে যে বাসায় ছিল সে বাসায় ফার্নিচার না থাকায় তাকে মেঝেতে ঘুমাতে হত। পাক বাহিনী তার বাড়ীর চার দিকে কাঁটা তারের বেড়া দিয়েছিল যাতে কেউ দেয়াল টপকে পালাতে না পারে। বন্দী জীবন জামালের সহ্য হচ্ছিল না তাই জামাল পালাতে চেয়েছিল। সে একজন পাঠান সৈন্য এর সাথে ভাব জমায় এবং তার সহায়তায় দেয়াল টপকে পালায়। তার পলায়ন খুব বিপজ্জনক ছিল এবং ধরা পড়লে পরিবার সহ সবার উপর বিপদ আসার সম্ভাবনা ছিল। সে কিছু ছাত্রের সহযোগিতায় ভারত পালাল। তাকে দেরীতে পাওয়া যায়। আমি আমার সহকর্মীদের বলেছিলাম এ বাঘের বাচ্চার বিশেষ যত্ন নিতে হবে। সে তার জন্য বিশেষ সুবিধা নিতে অস্বীকার করল। সে অন্যান্যদের মতই কঠোর পরিশ্রম করে যুদ্ধ কলাকৌশল শিখে নিল। আমার চোখে তার স্থান অনেক উপরে উঠে গেল। সে অত্যন্ত পাকা হাতে অস্র ধরত। প্রশিক্ষনের সময় সে পার্বত্য আবহাওয়াকে অত্যন্ত আপন করে নিয়েছিল। প্রশিক্ষনের পর সে সীমান্তে চলে গেল সেখানে কঠিন এবং ঝামেলার দায়িত্ব নিল। সে দিন রাত কাজ করত। তার মনে সর্বদা ভয় বিরাজ করত তার পিতার নিরাপত্তা নিয়ে। তাকে দেখে মাঝে মাঝে আমার চোখে পানি এসে যেত। জামাল ছিল জন্মগত নেতা যেমনটি ছিল তার পিতা। আমি তাকে প্রায় লক্ষ্য করতাম তার বাবার কিছু ভাষণ সে টেপ রেকর্ডারে সতীর্থদের শুনাত। যখন সে একাকী থাকতো প্রায় কান্নাকাটি করত। শুধু তার পিতার জন্য নয় তার মাতা এবং ছোট ভাই রাসেলের জন্যও। সে আমার গোটা পরিবারের খুব প্রিয় হয়ে উঠেছিলো।
মেজর জেনারেল সুজন সিং উবান, ফ্যান্টমস অব চিটাগং

 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!