You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: ৩রা এপ্রিল, বুধবার, ২০ শে চৈত্র, ১৩৮০

আবার বিদেশি ট্রলার

সেই কবে থেকে শুরু তার জানা না গেলেও উপকূলবর্তী সমুদ্রে আমাদের জলসীমার মধ্যে বিদেশি ট্রলারের আনাগোনার খবর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছাপা হওয়ার পর সরকার নানা সময়ে এই সকল বিদেশি ট্রলারগুলো ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলে আসছেন। কিছুদিন আগে এমনই একটা বিদেশী ট্রলার ধরা পড়েছিল। প্রথমদিকে এই বিদেশী ট্রলারগুলো ব্যাপারে অভিযোগ ছিল যে তারা আমাদের জলসীমায় মৎস্য শিকার করত, দেশীয় জেলেদের জাল ছিঁড়ে দিত, তাদের ভীতি প্রদর্শন করত এবং নিজেদের ইচ্ছামত মাছ শিকার করে চলে যেত। ইদানীংকালে তাদের অপকর্ম আরো বেড়েছে, মাছ ধরার চাইতে তারা এখন চোরাচালানিতে অধিকতর আগ্রহী হয়ে উঠেছে। পত্রিকান্তরের খবরে অভিযোগ করা হয়েছে এই বিদেশী ট্রলার গুলো দিনে আমাদের জলসীমায় প্রবেশ করে রাতের প্রতীক্ষায় থাকে এবং রাতের অন্ধকার নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তারা তৎপর হয়ে ওঠে চোরাচালানিতে।
দেশীয় এজেন্টরা তাদের জন্য সংগৃহীত জিনিসপত্র বিদেশি ট্রলারগুলোতে পৌঁছিয়ে দেয়। ক’দিন আগে চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূলে যে এক কোটি টাকার চোরাচালানকৃত পণ্য শুল্ক বিভাগ আটক করে সেই পণ্য সামগ্রী ও এমনই একটা জলযান থেকে খালাস করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিকভাবে সঙ্ঘবদ্ধ ওই চোরাচালানীরা বহুদিন যাবত তাদের এই অশুভ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
আমরা মনে করি ওই তৎপরতা আমাদের সামাজিক শত্রুদের স্বার্থ উদ্ধারের হাতিয়ার হিসেবে যেমন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটা বিপর্যয় সৃষ্টি করে চলেছে তেমনি আমাদের জলসীমার অভ্যন্তরে বিদেশি ট্রলারের এই আনাগোনা দেশের সার্বভৌমত্বকে হেয় প্রতিপন্ন করেছে। কে বলতে পারে যেসব দেশে আজ চোরাই দ্রব্যসামগ্রী দেশের উপকূলে এসে ভিড়ছে একদিন সেই সকল জলযানেই বোঝাই হয়ে আসবে না আমাদের স্বাধীনতার প্রতি শত্রু মনোভাবাপন্ন দেশ অথবা সংস্থার অস্ত্র-গোলাবারুদ?
চট্টগ্রামে যে পণ্য আটক করা হয়েছে এবং তার সঙ্গে যে লোকটির জড়িত থাকার অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে সে লোকটি তো দূরের কথা এমনকি সম্পূর্ণটাই কেসটাই কে ‘ডিল’ করবে এ ব্যাপারেই নাকি আজ পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি, বিদেশী এই চোরাচালানীদের ততদিন পর্যন্ত দমন করা সম্ভব হবে না যতদিন না এদেশে তাদের এজেন্টও ‘প্রোটেকটরদের’ চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা না হবে। এটা জলের মত পরিস্কার এই ব্যাপক চোরাচালানির যারা দেশীয় মদদদাতারা সমাজে অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি। আইনকে ফাঁকি দেয়া তো কোন সার, আইনকে বিপথে পরিচালনার মত ক্ষমতাও তারা নিশ্চয়ই রাখেন। যদি তাই না হতো তবে গত দু’বৎসরে এমনি নানা অপকর্মের হোতারা নির্বিবাদে সমাজে প্রতিষ্ঠার সঙ্গে অবস্থান করতে পারত না।
বিদেশি ট্রলারের আনাগোনা বাড়ছে এবং সেইসঙ্গে সরকারি মহলের ‘বরদাস্ত করা হবে না’ ‘ব্যবস্থা নেয়া হবে’ ইত্যাদি হুমকি-ধমকি সমস্যা সমাধানের কোনো সঠিক পথ নির্দেশ করবে না। সমস্যার মূলে গিয়ে এর শুধু সমাধানের পথ খুঁজে বের করলে চলবে না-তা সঠিকভাবে প্রয়োগ এর পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। যে ক্ষমতার প্রয়োগ করে এক শ্রেণীর ক্ষমতাদপী দেশের অর্থনীতি ও সার্বভৌমত্বকে ‘ফোকরা’ করার কাজে উঠে-পড়ে লেগেছেন তাদেরই সঙ্গে ক্ষমতার অংশীদার থেকে কোন প্রশাসনযন্ত্রই বিদেশি ট্রলারের আনাগোনা বন্ধ করতে পারবেন না। সরকার সঠিক অবস্থাটা সময় থাকতেই উপলব্ধি করতে এগিয়ে আসবেন বলে আমরা আশা প্রকাশ করি।

ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক সমস্যা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলোতে আবাসিক সমস্যাও নতুন নয়। অতি পুরাতন সমস্যা। এ বছরে যারা আবাসিক হলে সিট এর জন্য দরখাস্ত করেছেন তাদের মধ্যে নাকি শতকরা ৮০ জনই সিট পাননি। সহযোগী দৈনিকে এই সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে গত পরশু। সংবাদে আরো প্রকাশ যে, যারা কাগজে-কলমে সিট পেয়েছে তাদের অধিকাংশ নাকি দখল পায়নি। কারণ বিদায়ী ছাত্ররা নানা কারণে এখনো রয়ে গেছে। বিভিন্ন আবাসিক হলে যে পরিমাণ সিট খালি হয়েছে এবং যে সকল ছাত্রছাত্রীকে আবাসিক করা হচ্ছে বা হবে তাদের তুলনায় আবেদনকারীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। ফলে এবারও অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই সিট পাচ্ছেনা। উদাহরণস্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তম ছাত্রাবাস মহসিন হলের আবাসিক করা হয়েছে ৯৬০ জনকে। অথচ এর জন্য দরখাস্ত পড়েছিল আট শত। উল্লেখযোগ্য যে, গত বছর আবাসিক করা হয়েছিল অথচ সিট দেয়া যায়নি অথবা সিট বন্টন করা হলেও দখল নেয়া সম্ভব হয়নি এমন কিছু ছাত্রছাত্রীকে একই সঙ্গে সিট দিতে হবে। আরেকটি বড় ছাত্রাবাস সূর্যসেন হলে এ পর্যন্ত আবাসিক করা হয়েছে প্রায় ৪০০ জনকে অথচ প্রয়োজনের তুলনায় সিট খালি হয়েছে অনেক কম। সলিমুল্লাহ হল, জগন্নাথ হল কিংবা শহীদুল্লাহ হল বা ফজলুল হক হলেও একই অবস্থা তেমনি অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ছাত্রীবাস রকেয়া হল ও শামসুন্নাহার হলেরও।
মোদ্দা কথা হলো, ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক সমস্যাটা প্রকট। এ সমস্যার একটা সুষ্ঠু সমাধান প্রয়োজন।
ছাত্র বা ছাত্রী বাসগুলোতে সিটের সংখ্যা কম এটা ঠিক। কিন্তু একথাও ঠিক যে, সিটগুলো বিলি-বন্টন এর ব্যাপারে তেমন কোনো কড়াকড়ি অনেক ক্ষেত্রে আরোপ করা সম্ভব হয় না। বিশেষ মহল বা ছাত্রনেতা নামধারীদের চাপে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য হচ্ছেন বন্টনের ব্যাপারে এদিক ওদিক করতে। ফলে যার সিট পাওয়ার কথা নয় সে সিট পাচ্ছে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মফঃস্বল থেকে আগত ছাত্রছাত্রীরা। অথচ এদের অনেকেরই মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই ঢাকা শহরে।
এছাড়া আরও একটি সমস্যা রয়েছে। সে সমস্যাটি হল সময় পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও সিট ছেড়ে না দেওয়া। বিদায়ী ছাত্রদের মধ্যে মামার জোর বা দাদার জোরেও অনেকে হলের সিটগুলো আটকে রাখেন। শুধু তাই নয় ছাত্রনেতা বা ছাত্র সংগঠনের দোহাই দিয়ে তারা এই কাজটি করে থাকেন। ফলে সমস্যার জটিলতা বাড়ে বৈ কমেনা।
আবাসিক সমস্যার সমাধান করতে হলে সর্বাগ্রে লিখিত বিষয় গুলির প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। নিয়ম-শৃঙ্খলা যাতে বজায় থাকে সে জন্য কঠোর হতে হবে। এ যদি হয় তাহলে অন্ততঃ সমস্যার আংশিক সমাধান হতে পারে। এছাড়া কতৃপক্ষকে গ্রহণ করতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। সে পরিকল্পনা হবে হল সম্প্রসারণের। এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, প্রয়োজনের তুলনায় আবাসিক হলগুলোতে সিটের সংখ্যা অল্প। কাজেই সিট নিয়ে টানাটানি হবেই। এ থেকে পরিত্রান পাবার উপায় হলো সম্প্রসারণ। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ‘টিনশেড’ নির্মাণের ফলে জহুরুল হক হলের আবাসিক সমস্যার সমাধান হয়েছে কিছুটা। তেমনি অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে যদি অস্থায়ীভাবে ‘টিনশেড’ নির্মাণ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তাহলে সমস্যা হালকা হতে পারে। মোদ্দা কথা হল কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে জরুরী তাগিদ নিয়ে। অন্যথায় সমস্যা থাকবেই। আর তাতে করে ছাত্র ছাত্রীর ভবিষ্যৎ হবে অন্ধকার।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!