You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.09.20 | বাংলার বাণী সম্পাদকীয় | জাতিসংঘে দু'জার্মানীর সদস্যপদ লাভ | সরকারি গুদামের চাল পাচার | শেখ মণি - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ২০শে সেপ্টেম্বর, শুক্রবার, ৪ঠা আশ্বিন, ১৩৮০

জাতিসংঘে দু’জার্মানীর সদস্যপদ লাভ

সিকি শতাব্দীরও বেশি সময় ঠান্ডা লড়াই চলার পর ইউরোপের একটি মুখ্য সমস্যার সমাধান হলো। পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানিকে গত ১৮ই সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে বরণ করে নেয়া হয়েছে। মেনে নেয়া হয়েছে দুই জার্মানীর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব এবং সার্বভৌমত্বকে। পাশ্চাত্য শক্তির অন্ধত্ব এবং অবিরাম বৈরিতা বিলম্বে হলেও দূর হয়েছে।
সম্প্রতি ইউরোপ তথা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় যে নতুন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা আশাপ্রদ। সোভিয়েত ইউনিয়নের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি এবং উইলি ব্রান্টের ‘অষ্টনলিটিক’ ইউরোপের রাজনীতিতে যে পরিবর্তন আনয়ন করেছে তারই প্রত্যক্ষ ফসল আজকের এ দুই জার্মানির সদস্যপদ লাভ। এর প্রভাব আরো বিস্তৃত হবে, প্রসারিত হবে।
জাতিসংঘে পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানির সদস্যপদ লাভ থেকে একটা কথা প্রমাণিত হলো যে, অনাদিকাল পর্যন্ত একটা দেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্বতন্ত্র অস্তিত্ব অস্বীকার করা চলে না। ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে এর পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। চীন বিপ্লব পরবর্তী প্রায় বাইশ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার তাঁবেদার রাষ্ট্রসমূহের বিরোধিতার মুখে জাতিসংঘে সদস্যপদ লাভ থেকে বঞ্চিত থাকে। আর ইতিহাসের কি নির্মম পরিহাস স্বাধীনতা লাভের পর দু’বছরেও বাংলাদেশ সেই চীনেরই বিরোধিতার মুখে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ থেকে বঞ্চিত।
বৈরিতা এবং অন্ধত্বের নীতি অনুসরণের দ্বারা পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত যেমন কল্যাণকর কিছু হয়নি, আগামীতেও হবে না। আর এই অন্ধত্ব এবং বৈরিতা দিয়ে বাস্তবতাকে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টাও হাস্যকর। আমরা বৈরিতার নীতিতে বিশ্বাসী নই। শত্রুতা এবং উত্তেজনা বজায় রাখার প্রচলিত সকল অপচেষ্টারই আমরা নিন্দা করি। আমাদের বিশ্বাস আজও যারা সেই শান্তি বিরোধী নিতে আঁকড়ে বসে রয়েছেন তারা একদিন তাদের ভুল বুঝতে পারবেন।
জাতিসংঘে পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানির সদস্যপদ লাভকে আমরা অভিনন্দন জানাই। ইউরোপে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এ পদক্ষেপ কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। জাতিসংঘের সদস্যপদ দানে যারা বৈরিতা এবং অর্থনীতি এতদিন অনুসরণ করে আসছিলেন, এরপর তারাও বাস্তবতা বোধের পরিচয় দেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

সরকারি গুদামের চাল পাচার

গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে বোধহয় একেই বলে! রাজধানীর মানুষ রেশন দোকানে নিয়মিতভাবে চাল পাচ্ছে না। সপ্তাহের প্রতিদিন রেশন কার্ড ধারীদের উদ্বিগ্ন থাকতে হয় কখন চাল আসবে। রেশনের দোকানে চাল এলেই তো হল না, তা সংগ্রহ করাও কঠিন ব্যাপার। রীতিমতো ধস্তাধস্তি ছাড়া চাল পাবার কোন উপায় নেই! ঠিক এমনি অবস্থার মধ্যে যদি সরকারি গুদাম থেকে চাল পাচারের সংবাদ পাওয়া যায় তাহলে রীতিমতো উদ্বিগ্ন হতে হয় বৈকি! ভাবতে হয় এই যদি চলে তাহলে শেষ পর্যন্ত অবস্থা দাঁড়াবে কি?
গতকাল স্থানীয় একটি পত্রিকায় চাল পাচার সম্পর্কিত সংবাদে বলা হয়েছে যে, সরকারি গুদামে চাল পাচার এবার গুদাম ছেড়ে সড়ক পথে চলেছে। পুরনো স্টাইল বাদ দিয়ে নতুন নতুন পদ্ধতির। আর এভাবেই চালাচ্ছে সঙ্ঘবদ্ধ দুস্কৃতিকারীরা হাজার হাজার মণ সরকারি দ্রব্য সামগ্রী পাচার। সংবাদে আরো বলা হয়েছে, ঢাকা-ডেমরা রোডে অবস্থিত কাজলার রাস্তার পাশে তিন বস্তা চাল ফেলে দিয়ে একটি ট্রাক দ্রুত চলে যায়। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরে অনুরূপ অপর একটি ট্রাক ঘটনাস্থলে আগমন করে। ট্রাকের উপরে বেশ কিছু লোক দেখে পুলিশ ট্রাকটিকে থামাতে বাধ্য করে। পুলিশ তাতে তল্লাশি চালালে দেখতে পায় তাতেও কয়েকটি বস্তা কাটা অবস্থায় রয়েছে।
স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে এ ঘটনাটি একদিনের নয়। বেশ কিছুদিন ধরেই চাল পাচার চলছে। কিছুদিন আগে সরকারি গুদাম, স্টিমার, লঞ্চঘাট ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে চাল পাচারের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে করাকরি ব্যবস্থা আরোপ করেন। পুলিশ রীতিমতো এ বিষয়ে সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার যে কে সেই অবস্থা হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। যদি তাই না হবে তাহলে প্রকাশ্য রাস্তায় ট্রাক থেকে চালের বস্তা ফেলা হয় কিভাবে। যেখান থেকে চাল সরবরাহের ছাড়পত্র দেয়া হয় এবং যেখানে চাল পৌঁছে দেওয়া হয় সেখানে এ বিষয়ে কোনো হিসাব নিকাশ বা তথ্য তল্লাশি কি চালানো হয় না? যদি তা না হয় তাহলে বুঝতে হবে এ চাল পাচারের পেছনে রীতিমত একটি সংঘবদ্ধ দল রয়েছে যারা প্রতিদিন মানুষের মুখে অন্ন কেড়ে নিতে এতটুকুও দ্বিধা সংকোচ করে না।
চাল পাচারের হালচাল বিচার বিশ্লেষণ করে আমরা বলবো যে, যারা সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসবেন কি? সাময়িক নয়, একটা পাকাপোক্ত ব্যবস্থাই সকলের কাম্য। অন্ততঃ এতে চাল সংকটের কিছুটা সুরাহা হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন