You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ২২শে মে, বুধবার, ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩৮১

শিল্পকলা একাডেমি

ঢাকা পেইন্টার্সের দশজন তরুণ শিল্পী এক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। এগার দিন ব্যাপী প্রদর্শনী চলবে। গত পরশুদিন আমাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভাষণ দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন ‘শিল্পকলা ও সাহিত্য জীবনের ধর্ম প্রকাশ পায়, প্রকাশ পায় জীবনের বেদনা। জীবনের সাথে সার্থক সংযোগেই সৃষ্টিশীল শিল্পকলার লক্ষ্য।’ শিক্ষা মন্ত্রী ‘শিল্পকলা একাডেমী’ নির্মাণ করা প্রসঙ্গে বলেন-সরকার ঢাকায় একটি শিল্পকলা একাডেমী নির্মাণের জন্য গত জাতীয় সংসদের অধিবেশনে একটি বিল গ্রহণ করেছেন। আগামী এক মাসের মধ্যেই ‘শিল্পকলা একাডেমী’র অফিস কক্ষ রমনা শিশু উদ্যানের ন্যাশনাল কাউন্সিল সংলগ্ন ভবনে চালু করা হবে। যে দশ জন চিত্রশিল্পীর উল্লেখিত এই চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন তারা নিতান্তই তরুণ প্রাণ। এদের চিত্রনির্মাণের যোগ্যতাও উৎসাহব্যঞ্জক। এরা এদের যথেষ্ট পরিমাণ উৎকৃষ্ট শিল্প মনের পরিচয় প্রদান করতে সক্ষম হয়েছেন। সুধী সমাজ এদের শিল্পকর্মকে আশাব্যঞ্জক বলে অভিহিত করেছেন আমাদের বিশ্বাস। শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী তাঁর ভাষণে এদের কৃতকর্মের প্রশংসা করেছেন এবং উৎসাহ দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী শিল্পকলা একাডেমী স্থাপনের কথা উল্লেখ করে আগামী এক মাসের মধ্যেই তার অফিস কক্ষের কাজ শুরু হবার ব্যাপারে যে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন তা অত্যন্ত খুশির খবর। শিল্পামোদীদের কাছে এ সংবাদ নিঃসন্দেহে একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করেছে। দেশের শিল্প ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও মানোন্নয়নের জন্য একটি শিল্প একাডেমীর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সংস্কৃতিসেবী যারা তাদের মননকর্ম পরিচর্যা করার জন্য এত কাল আমাদের দেশে কোন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সরকারি দায়িত্বে স্থাপিত হয়নি। ফলে সংস্কৃতির যথার্থ পরিচর্যা কতকগুলো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মাঝেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। ব্যাপকভাবে রাষ্ট্রীয় প্রযত্নে যদি দেশের শিল্প ও সংস্কৃতিকে লালন ও গঠন করা না যায় তাহলে সংস্কৃতি, শিল্প, সাহিত্য প্রভৃতির যথার্থ রূপ পরিগ্রহ করতে পারে না। বিভিন্ন চিন্তা ও উদ্যোগের দ্বারা ব্যাপক বা বিরাট রাষ্ট্রীয় কোনো কর্মসম্পাদন হতে পারে না। সে কারণে প্রয়োজন একটি প্রতিষ্ঠান যে। প্রতিষ্ঠানকে অত্যন্ত পরিচর্যার দ্বারা গড়ে তুলতে হবে। শিল্পকলা একাডেমী স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা এ কারণে অপরিহার্য। গত জাতীয় সংসদের অধিবেশনের সম্পর্কে যে বিল গৃহীত হয়েছে তাকে বাস্তবায়ন করা আজ অপরিহার্য। আমাদের কর্তৃপক্ষের মনে রাখা দরকার জাতীয় প্রগতির সঙ্গে সঙ্গে যদি জাতীয় সংস্কৃতি ও শিল্পের লালন ও পরিচর্যা করা না হয় তাহলে গোটা চরিত্রই হয়ে যাবে সৌন্দর্য বিহীন। সংস্কৃতির মধ্যে দিয়েই গোটা জাতির গৌরব প্রকাশ পায়। অতএব এর পরিচর্যা ও লালনের জন্য অবিলম্বে একাডেমী স্থাপন আবশ্যক। শিক্ষা মন্ত্রী অনতিবিলম্বে শিল্পকলা একাডেমীর অফিস কাজ শুরু হওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন তাতে আমরা খুশি হয়েছি এবং আমরা আশা করছি শিল্প-সংস্কৃতিসেবীরাও অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আমরা দেশের রাজধানী ঢাকা শহরের বুকে যথার্থ ও সত্যিকারের শিল্পগুণ মন্ডিত একটি একাডেমির প্রত্যাশী। এবং তার যতো দ্রুত হয় ততই খুশির।

নিউজপ্রিন্ট মিল সম্প্রসারণ হবে

নিউজপ্রিন্ট এখন শুধু আর দশটি ব্যবহারী জিনিসের মত নেই, কদর তার দিনের পর দিন বাড়ছে। দেশের বাইরে চাহিদা বাড়ছে, বাংলাদেশের এই পণ্যটি উপর দু’দশ দেশের নজর পড়েছে। আগেও কিছু কাগজ বাইরে যেতো কিন্তু এখনকার মতো “বায়ারদের” দোরে ধর্না দিতে দেখা যায়নি। তাই প্রশ্ন উঠেছে উৎপাদন বাড়াবার। ঘরে প্রয়োজন মিটিয়ে আরো কত বেশি কাগজ বাইরে পাঠানো যায় তার প্রচেষ্টা। সরকার ইতিমধ্যেই খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল এর উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। বলা হয়েছে প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনা কালের মিলের উৎপাদন বছরে ৬৩ হাজার টনে উন্নীত হবে। গতবছরের উৎপাদন ছিল ২২ হাজার ৪ শত ৪ টন।
নিউজপ্রিন্টের উৎপাদন নিয়ে বিগত সময় গুলোতে বেশ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। যান্ত্রিক গোলযোগ, প্রয়োজনীয় ন্যাপথার উচ্চমূল্য এবং অভাব কাগজ উৎপাদনে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। এবছর যেখানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬,৫৮৫ টন সেখানে গত নয় মাসে উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১৯,০৩৫ টন। দেশেও এর ব্যবহার বেড়েছে আগের চাইতে বেশি। এমতাবস্থায় ক্রমবর্ধমান বিদেশি চাহিদা পূরণ এবং মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য শুধু মিল সম্প্রসারণই নয়-এর উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল এর সুষ্ঠু সরবরাহ এবং পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের প্রয়োজন। জাতীয় উন্নয়ন এবং নির্মাণ কাজ ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্য আমদানির জন্যও দরকার রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা। নিউজপ্রিন্ট যদি সে মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তবে তা আশার কথা। প্রয়োজনে আমাদের আভ্যন্তরীণ ব্যবহার কমিয়ে আনা যেতে পারে। নিয়ন্ত্রিত করা যেতে পারে নিউজপ্রিন্টের সরবরাহ। অপচয় এবং অপব্যবহার বন্ধ করা হলে রপ্তানির পরিমাণও বাড়বে।
নিউজপ্রিন্টের সম্প্রসারণ এবং আধুনিকীকরণের যে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে তার সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করার জন্য একটি কানাডীয় বিশেষজ্ঞ দল খুব শীঘ্রই বাংলাদেশে আসবেন বলে কাগজ ও হার্ডবোর্ড কর্পোরেশনের জনৈক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর যাতে করে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য আমরা সরকারকে আহ্বান জানাব।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!