You dont have javascript enabled! Please enable it! বাঙালির তীর্থভূমি : মুজিবনগর কমপ্লেক্স - সংগ্রামের নোটবুক
বাঙালির তীর্থভূমি : মুজিবনগর কমপ্লেক্স
মুজিবনগর : বাঙালির তীর্থভূমি বাঙালি চিরদিনই বিদ্রোহী জাতি, শান্তিপ্রিয় এবং স্বাধীনতাকামী জাতি। বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সম্পদে আকৃষ্ট হয়ে যুগে-যুগে বিদেশী বহিঃশক্তি এসে এ-দেশে আধিপত্য বিস্তার করেছে, শাসন-শােষণ-লুণ্ঠন করেছে। বাঙালি চিরকাল নির্বিবাদে মেনে নিয়েছে এই আধিপত্য, এমন নয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন সময়ে খণ্ড ক্ষুদ্র আন্দোলন সংগ্রাম ও বিদ্রোহের ঘটনাও অতীতে বহুবার ঘটেছে। হতে পারে সেগুলাে পারস্পরিক সমন্বয়হীন, তবু তারই ধারাবাহিকতায় ঘটেছে ইংরেজ শাসনের অবসান, কেঁপে উঠেছে পাকিস্তানি জঙ্গি শাসনের ভিত। পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকদের দমনপীড়নমূলক শাসননীতি ও অতি লােভী উলঙ্গ শশাষণনীতি দিনে-দিনে বাঙালির বিচ্ছিন্ন আন্দোলনে এনে দিয়েছে দৃঢ় সমন্বয়, ধীরে-ধীরে ঘটেছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ এবং শেষপর্যন্ত বাঙালি জাতিকে এক ও অভিন্ন লক্ষ্যাভিমুখী করে তুলেছে; বাঙালি চায় স্বাধীনতা। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাঙালি জাতির আত্মঅন্বেষা, তারপর ‘৬৬ সালের ৬ দফা, ‘৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তারা জানিয়ে দেয় গণরায়—স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকারের দাবি থেকে একপাও পিছিয়ে আসা যাবে না। পাকিস্তানি শাসকেরা মানতে পারে নি এ গণরায়, ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে তারা নেমেছে নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্রের পৈশাচিক খেলায়; সভ্যতাকে বুড়াে আঙ্গুল দেখিয়ে তারা বর্বর সেনাবাহিনী লেলিয়ে দিয়েছে নিরস্ত্র বাঙালি নিধনযজ্ঞে।
গণহত্যার শিকার লাখাে বাঙালি নরনারী। আগুনে পুড়েছে তাদের ঘড়রবাড়ি ভিটেমাটি, অবাধে লুণ্ঠন হয়েছে তাদের সহায় সম্পদ। এমনই বিপর্যস্ত অবস্থায় প্রাণভয়ে দেশত্যাগ করেছে এক কোটি বাঙালি  স্বাধীনতাকামী বাঙালি তবু মাখা নােয়ায় নি, করে নি আত্মসমর্পণ। বরং বিপুল শৌর্যে ও বিক্রমে তারা ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছে। পাকিস্তানিদের চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ তারা গ্রহণ করেছে প্রাণবাজি রেখে। দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রতিরােধযােদ্ধাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে এবং দেশপ্রেমিক ছাত্র-যুবক-জনতাকে সশস্ত্রযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়ে একক নিয়ন্ত্রণে সুপরিকল্পিতভাবে দেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাই জরুরি হয়ে ওঠে বাঙালি জাতির । এই জরুরি কর্তব্য সমাধার জন্য আরাে বেশি জরুরি হয়ে ওঠে জনপ্রতিনিধিত্বশীল একটি রাজনৈতিক সরকার গঠন, যে-সরকারের  নেতৃত্বে পরিচালিত হবে মুক্তিযুদ্ধ, দেশ হবে দখলদারমুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম, অর্জন করবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সহযােগিতা।
 
এই ঘুরে দাঁড়ানাের প্রয়ােজনেই দেশের ভয়ানক সংকটময় সময়ে প্রজ্ঞাবান ও দূরদর্শী জাতীয় নেতৃবৃন্দ ছুটে আসেন মুজিবনগরে। তারিখটা ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১ শনিবার।  না, এ-ভূখণ্ডের নাম মুজিবনগর ছিল না। ছিল বৈদ্যনাথতলা। মেহেরপুর জেলার দক্ষিণে ভারতীয় সীমান্তবর্তী এক ছায়াসুশীতল গ্রাম। এপ্রিলের ১০ তারিখে প্রবাসে বসে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতি সত্ত্বেও তার নেতৃত্বে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ ও বিধিমােতাবেক শপথগ্রহণ করার জন্য সরকারের মন্ত্রিপরিষদ, দেশী-বিদেশী শতাধিক সাংবাদিক, হাজার-হাজার জনতা ১৭ এপ্রিল এসে হাজির হন। বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে নতুন সরকারের  প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বৈদ্যনাথতলার নতুন নামকরণ করেন মুজিবনগর। সেদিন থেকে এই মুজিবনগরই ঘােষিত হয় বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী বলে।

তারপর এই মুজিবনগরের নামেই চলে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ, চলে সরকার, চলে বাংলাদেশ। হ্যা, একাত্তরে বাংলাদেশেরই  অন্যনাম হয়ে ওঠে মুজিবনগর বাংলাদেশের জন্মলগ্নে ধাত্রীপনার মহান দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে এই মুজিবনগরই গােটা বাঙালি জাতির কাছে হয়ে  ওঠে তীর্থভূমি। বাঙালি জাতির ঘুরে দাঁড়ানাের আয়ােজন এই মুজিবনগর থেকেই। আর  খণ্ড ক্ষুদ্র বিদ্রোহ নয়, আর নয় ৬-দফা, ১১-দফা, আর নয় স্বাধিকার স্বায়ত্তশাসন; সােজাসুজি স্বাধীনতা অভিমুখে যাত্রা শুরু। তারপর আর পিছে ফিরে তাকায় নি এ-জাতি। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে হাজারও মা| বােনের অশ্রুজলে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় বিজয়। আর অস্থায়ী রাজধানী নয়; বিজয়ী সরকার বীরের বেশে প্রবেশ করে ঢাকায়, বাংলাদেশের স্থায়ী রাজধানীতে  মুজিবনগর স্মৃতি মিউজিয়াম : একটি দুর্বল সূচনা স্বাধীনতার পর তদানীন্তন সরকারকে খুব সঙ্গত কারণেই সর্বাধিক মনােযােগ দিতে হয় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের দিকে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সহযােগিতা অর্জনের দিকে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দিকে। প্রচুর কাজের চাপ, প্রচণ্ড ব্যস্ততা। তাই বাংলাদেশের উৎসভূমি মুজিবনগরের দিকে ফিরে তাকানাের অবকাশ হয় নি।

 
দু-বছরের মধ্যে ১৭ এপ্রিল পেরিয়ে গেছে নীরবে নিভৃতে। কেবল সেই বৈদ্যনাথতলা সংগ্রাম কমিটি এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী সীমিত সাধ্যের মধ্যে আলােচনাসভার আয়ােজন করেন আম্রকাননের ঐতিহাসিক স্থানটিতে। আলােচনা হয়, স্মৃতিচারণ হয়, স্মৃতির মানুষগুলাে আর আসে না অস্থায়ী রাজধানী মুজিবনগরে। একরকম উপেক্ষিতই থাকে পরপর দু’বছর। | ১৯৭৪ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসের নায়কদের মধ্যে দুজন আবারও আসেন তাদের স্মৃতিধন্য মুজিবনগরে। আসেন তদানীন্তন শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী। জাঁকজমকপূর্ণ বড় কোনাে অনুষ্ঠান নয়, স্বল্পপরিসরে একটি জনসভার আয়ােজন করা হয় এদিনে। মঞ্চ নির্মিত হয় ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক মঞ্চের জয়গাটিতেই। জনসভা শেষে মুজিবনগর স্মৃতি মিউজিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মাননীয় শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ঐ একই দিনে বঙ্গবন্ধু তােরণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী। শুরু হল মুজিবনগরের প্রতি সরকারি স্বীকৃতির পালা। মানতেই হবে, সূচনাটি ছিল অত্যন্ত দুর্বল। কেবল ঐ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন পর্যন্তই  এরপর জাতির জীবনে ঘটে যায় সবচেয়ে মর্মান্তিক বেদানবিধুর ঘটনা। ঘটে যায় পঁচাত্তরের শােকাবহ ট্রাজেডি। ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয় নি ঘাতকেরা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেই সমূলে উৎপাটন করতে চেয়েছে।
মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে তাই তারা হত্যা করেছে জাতীয় চার নেতাকে। নির্বাসনে গেছে জাতীয় শ্লোগান ‘জয়বাংলা’, বাঙালি জাতীয়তাবাদ হটিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িক চেতনার স্তম্ভ ধর্মনিরপেক্ষতা এক পাশে হেলে পড়েছে, সমাজতন্ত্র অভিমুখীন অর্থনৈতিক অভিযাত্রা গেছে স্তব্ধ হয়ে, গণতন্ত্রও সামরিক কারখানার ছাঁচে ঢালাই করে পরিবেশন করা হয়েছে, আর স্বঘােষিত খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়েছে রাষ্ট্রদূতের মর্যাদাবহ চাকরি দিয়ে স্বাধীনতাবিরােধীদের শুধু যে রাজনৈতিক অধিকার দেওয়া হয়েছে তাই নয়, মন্ত্রী করে তাদের বাড়িতে-গাড়িতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানােরও সুযােগ করে দেওয়া হয়েছে। মােটকথা পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের চরিত্রই পাল্টে দেওয়া হয়েছে, সেই সঙ্গে রাষ্ট্রের গতিমুখও ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে বিপরীত দিকে। এই যখন ৩০ লাখ শহীদের রক্তে ধােয়া বাংলাদেশের বেহাল দশা, তখন কে রাখে মুজিবনগরের খবর? কে জানে পঁচাত্তর-পরবর্তী শাসকদের দৃষ্টিতে হয়তাে মুজিবনগর মানেই ‘সােনার পাকিস্তান প্রাণের পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্রের আঁতুড়ঘর। পাকিস্ত নি’ জাতীয়তাবাদের আদলে যারা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ প্রতিষ্ঠার মধ্যে রাজনৈতিক স্বস্তি খুঁজে পায় তারা কেন ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিভূমি। মুজিবনগরের নাম মুখে নেবে? বরং মুজিবনগরের অঙ্গীকার থেকে জাতিকে দূরে ঠেলে দেওয়াতেই তাদের যত সাফল্য।
 
মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ
 
রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যের বাইরে কেবল স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বছরবছরে মুজিবনগর দিবস ঠিকই পালন করা হয়েছে, পুনরায় একাত্তরের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে, জনসভা ভেঙে গেলে সব প্রতিশ্রুতিই বুঝি-বা হয়ে যায় কথার কথা। এরই মাঝে ১৯৮৭ সালের ১৭ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট এরশাদ মুজিবনগরে এসে উদ্বোধন করেন মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের । এই প্রথম আওয়ামী লীগের বাইরে ভিন্ন রাজনৈতিক দলের রাষ্ট্রপ্রধান মুজিবনগরের মাটিতে দাড়িয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন মুজিবনগর সরকারের প্রতি এবং এ-সরকার গঠনের নেপথ্যে যারা শ্রম দিয়েছেন তাদের প্রতিও। এতদৃঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা অস্থায়ী রাজধানী মুজিবনগরকে ঘিরেই সমগ্র এলাকায় হয়তাে কখনাে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে, এই নিভৃত পল্লীতেও জেগে উঠবে প্রাণের সাড়া। তাদের প্রত্যাশা পূরণের কিছুই হয় নি যদিও, তবু ১৯৮৭ সালে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ যেনবা প্রাণের গভীরে আশার সঞ্চার করে একই সঙ্গে করে তােলে স্মৃতিভারাক্রান্ত। | মুজিবনগরের ৩৮ একর জমির ওপর ১,৩০০টি বৃক্ষশােভিত আম্রকাননের নিরিবিলি ছায়াঢাকা পরিবেশে স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতির প্রাণের প্রতীক হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শিল্পী তানভীর কবীরের অমরকীর্তি মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। ২৩টি ত্রিকোণ দেয়ালের সমন্বয়ে উদীয়মান সূর্যের প্রতিকৃতিকে পটভূমি করে নির্মিত এই ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধটি। ১৯৪৭-এর পর থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত এই ২৩টি বছর পাকিস্তানি শাসকদের নিপীড়ন, শশাষণ আর নির্যাতনের প্রতীক এই ২৩টি স্তম্ভ; পাশাপাশি বীর বাঙালির ক্রমবর্ধমান প্রতিরােধেরও প্রতীক এই ২৩টি দেয়াল। ১৬০ ফুট ব্যাসের গােলাকার স্তম্ভের অর্ধাংশের উপর নির্মিত বেদিকে কেন্দ্র করে ভূতল থেকে ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতায় দেয়ালগুলাে দণ্ডায়মান। সমকোণী ত্রিভুজ আকৃতির দেয়ালগুলাের প্রথমটির উচ্চতা ৯ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ২০ ফুট। পরবর্তী প্রতিটি দেয়াল ক্রমাগত উচ্চতায় ৯ ইঞ্চি এবং দৈর্ঘ্য ১ ফুট করে বৃদ্ধি পেয়ে ২৩তম দেয়ালের উচ্চতা হয়েছে ২৫ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট। গােলাকার বেদি ভূতল থেকে ভিন্ন-ভিন্ন উচ্চতায় ৩টি চত্বরে বিভক্ত।
 
প্রথমটির উচ্চতা ভূমি থেকে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি, দ্বিতীয়টি ৩ ফুট এবং তৃতীয়টি ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি। ২ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার বেদিটিতে অসংখ্য গােলাকার বৃত্ত দ্বারা স্বাধীনতাযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের প্রতীকী প্রতিফলন ঘটানাে হয়েছে। ৩ ফুট উচ্চতার অপর বেদিটির অসংখ্য নুড়িপাথর মুক্তিযুদ্ধকালীন সাড়ে সাত কোটি ঐক্যবদ্ধ জনতার প্রতীক। যেখানে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের মঞ্চ ছিল, স্মৃতিসৌধের বেদিতে ঠিক সেই স্থানকে লাল সিরামিক ইট দিয়ে আয়তাকার ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। স্মৃতিসৌধের বেদিতে আরােহণের জন্য রয়েছে একটি র্যাম্প ও বের হওয়ার জন্য ৯টি সিঁড়ি; যা ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক। মূল স্মৃতিসৌধ ছাড়াও এই স্মৃতিসৌধটিকে কেন্দ্র করে গড়ে তােলা হয়েছে বিশ্রামাগার, ডাকবাংলাে, মুজিবনগর স্বাধীনতা ক্লাব ও পাঠাগার, গাড়ি পার্কিং জোন, মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের প্রবেশপথ, উদ্যান, বনভােজনের রান্নার স্থান এবং শেখ হাসিনা মঞ্চ। এই স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পর থেকে শীত মৌসুমে তাে বটেই, সারা বছরই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা মুজিবনগরে এসে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মারকটির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
 
মুজিবনগর কমপ্লেক্স
দীর্ঘ এক দশক পর ১৯৯৭ সালের ১৭ এপ্রিল আবার মুজিনগর দিবস উদযাপিত হয় রাষ্ট্রীয়ভাবে। এবার মুজিবনগরে আগমন ঘটে রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদের। সে-সময় মেহেরপুর জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানীর স্মৃতির প্রতি সম্মান জানানাের জন্য মুজিবনগরে একটি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স স্থাপন এবং মুজিবনগর 
নামে একটি নতুন উপজেলা গঠনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তারই ফলশ্রুতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী তদানীন্তন সরকার মুজিবনগরের উন্নয়নের জন্য নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৮ সালে মুজিবনগর দিবসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন। ঘটে মুজিবনগরে এবং এ-দিন তিনি অত্যন্ত আনন্দ-উফুল্ল পরিবেশে মুজিবনগর কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আর এই দিন থেকেই মুজিবনগরের ইতিহাসে শুরু হয় উন্নয়নের নতুন অধ্যায়। মুজিবনগরকে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তােলা এবং মহান। মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার হিসেবে যথাযােগ্য মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ১৯৯৮ সালেই সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। গত ১০/১০/৯৮ তারিখে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ‘মেহেরপুরে মুজিবনগর কমপ্লেক্স স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প এবং স্থাপত্য বিভাগ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত কমপ্লেক্সের মহাপরিকল্পনা অনুমােদিত হয়। পূর্ববর্তী প্রায় ৩৮ একর জমিতে বিদ্যমান আমবাগান, স্মৃতিসৌধ ও অন্যান্য স্থাপনাসহ আরাে ৪০.৭৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক অধিগ্রহণকৃত জমি গত ৩১/০৩/২০০০ তারিখে মুজিবনগর কমপ্লেক্স মহাপরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের কাছে হস্তান্তর করেন।
 
অতঃপর মহাপরিকল্পনাভুক্ত নানান প্রকল্পের কাজ শুরু হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কর্তৃক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে। এই প্রকল্পগুলাের মধ্যে আছে : ১. মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র ২. মুক্তিযােদ্ধাদের ইতিহাস সম্বলিত ভাস্কর্য ও মুর্যালের বাগান ৩. ৬-দফাভিত্তিক গােলাপ বাগান নির্মাণ ৪. টেলিফোন/টেলিগ্রাম ও ডাকঘর ৫. ছােট আকারের শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণ অতিথিশালা নির্মাণ। ৭. প্রাইমারি স্কুল (বিদ্যমান) ৮. শিশুপল্লী নির্মাণ ৯. বঙ্গবন্ধু তােরণ নির্মাণ ১০. অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, হেলিপ্যাড, কার পার্কিং, সবুজ চত্বর ও পাবলিক টয়লেট নির্মাণ ১১. মসজিদ নির্মাণ ১২. আনসার ও ভিডিপির দপ্তর ১৩. খেলার মাঠ ১৪. পর্যটন সুবিধা সম্প্রসারণ। উল্লিখিত প্রকল্পগুলাের বিপরীতে অর্থ বরাদ্দ হয়ে কার্যাদেশ পর্যন্ত পৌছুতেই ২০০১ সালের প্রথমার্ধ পেরিয়ে যায়। তারপর কার্যাদেশও বেরিয়ে যায় ২০০১ সালেই। কিন্তু ওই বছরেই সরকার বদলের ফলে সব কাজেই নেমে আসে মন্থর গতি। ঘটে দীর্ঘসূত্রিতার। তবু ধীরগতিতে হলেও বর্তমানে প্রায় সবগুলাে প্রকল্পের কাজই শেষের পথে। এরই মাঝে আবারও ঘটেছে ক্ষমতার পালাবদল। মুক্তিযুদ্ধে টেলিফোন ভবন। নেতৃত্বদানকারী দলের নেতৃত্বে 
গড়ে ওঠা মহাজোট সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালের মুজিবনগর দিবসের অনুষ্ঠান অত্যন্ত গুরুত্ব লাভ করে। বর্তমান ক্যাবিনেটের বেশ কজন মন্ত্রী। মুজিবনগর মঞ্চ থেকে মুজিবনরের উন্নয়নের নানামুখী ঘােষণা দেন এবং মুজিবনগর কমপ্লেক্সের অবশিষ্ট কাজ দ্রুত শেষ করার আদেশ দেন।এখনাে শেষ হয় নি যে প্রকল্পগুলাে তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল বঙ্গবন্ধু তােরণ একটি। সেই ১৯৭৪ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় বঙ্গবন্ধু তােরণের। তারপর দীর্ঘকাল পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকে সেই প্রকল্প। আবার ১৯৯৮ সালে গৃহীত মহাপরিকল্পনার অঙ্গীভূত হয়ে বঙ্গবন্ধু তােরণের কাজ শুরু হয়। সাতটি স্তম্ভ দিয়ে তৈরি এ-তােরণ। এ-তােরণের দুই প্রান্তে প্রমাণ সাইজের যুদ্ধরত অবস্থায় দুই মুক্তিযোেদ্ধার প্রকৃত আদল সমৃদ্ধ ভাস্কর্য নির্মাণের কাজটি এখনাে সম্পন্ন হয় নি বলে বঙ্গবন্ধু তােরণ এখনাে পূর্ণাঙ্গ সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে নি। মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র মুজিবনগর কমপ্লেক্সের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রকল্পটি হচ্ছে বাংলা একাডেমীর তত্ত্বাবধানে নির্মাণাধীন মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র এবং সেই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত ভাস্কর্য ও মুর্যালের বাগান। সত্যিই বর্ণাঢ্য এক পরিকল্পনা। দু’পাশে ৬-দফাভিত্তিক গােলাপ বাগানের সৌন্দর্য। তার মাঝ দিয়ে হাঁটতে-হাঁটতে দর্শনার্থী চলে আসবেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত ভাস্কর্য ও মুর্যালের বাগানে। প্রথমেই নজরে পড়বে একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অগ্নিসংযােগ, নারী নির্যাতন ও হত্যালীলা সম্পর্কিত পৃথক তিনটি মুরাল। এরপরই দাঁড়িয়ে আছেন বঙ্গবন্ধু, সামনে সেই কলরেডি মাইক্রোফোন, ৭ মার্চের মতােই আঙ্গুল উঁচিয়ে ভাষণ দিচ্ছেন। তারপরের ভাস্কর্যে পাওয়া যাবে মুজিবনগর সরকারের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম.এ.জি. ওসমানীকে। ৯ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার নেপথ্য স্তম্ভ তাে এঁরাই। এরপরই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে কৌতূহলী দর্শনার্থী দেখতে পাবেন একটি অসাধারণ মুর্যালক্যাপ্টেন মাহবুব উদ্দিনের নেতৃত্বে ছােট্ট একটি আনসার দল গার্ড অব অনার প্রদান করছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে। আর একটু এগােলেই চোখে পড়বে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের বৈঠকের দৃশ্য, সে-বৈঠকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধান সেনাপতি কর্নেল ওসমানী। সেক্টর কমান্ডারদের এ-বৈঠক এবং তাদের সমন্বিত যুদ্ধতৎপরতা জোরদার হয়ে উঠলে দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর 
 
পক্ষে আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কোনাে পথ খােলা থাকে না। হ্যা, এই মুর্যাল বাগানের সর্বশেষ ভাস্কর্যটিতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক দৃশ্যটি ফুটে উঠেছে। এখানে, এই বাগানে এসে দাঁড়ালে যেকোনাে দর্শকই ফিরে যাবেন একাত্তরে, মুক্তিযুদ্ধের শৌর্যময় দিনগুলােতে। কিন্তু এ-প্রকল্পটির এখনাে বেশকিছু কাজ বাকি রয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকেন্দ্র : বাংলাদেশের মানচিত্র মানচিত্রই বটে, তবে কাগজে বা ব্ল্যাকবাের্ডে আঁকা নয়; মুজিবনগরের পুণ্যভূমিতে ৩০.৩৮ একর জমির উপরে গড়ে তােলা হয়েছে মুক্তযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের মানচিত্র। উত্তরে পাহাড় ততটা দৃশ্যমান না-হলেও দক্ষিণে সাগরের বেলাভূমি ঠিকই দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। আছে প্রধান প্রধান নদী, নদীর উপরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, শুভপুর ব্রিজ। আছে সীমান্ত জেলাসমূহের ওপর দিয়ে শরণার্থীদের দেশত্যাগের দুর্দশাময় চিত্র। দেশের ভিতরেই আছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মম অত্যাচার, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযােগের দৃশ্য। আছে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযােগ্য কয়েকটি যুদ্ধের চিত্র। এসব মিলিয়ে একাত্তরের বাংলাদেশ। দর্শনার্থীরা গ্যালারিতে উঠে একনজরে একাত্তরের বাংলাদেশকে এভাবেই প্রত্যক্ষ করতে পারবেন। তবে হাতে একটি বাইনােকুলার থাকলে ভালাে হয়, ছােট এবং দূরের জিনিস স্পষ্ট এবং কাছের মনে হবে, মানচিত্রের খুঁটিনাটি চোখে পড়বে। কিন্তু গ্যালারিতে ওঠার সময় ইতিহাস-সচেতন দর্শকের পা আটকে যেতে পারে, কিছুক্ষণের জন্য চোখ আটকে যেতে পারে দেয়ালের কারুকাজ দেখে। সামনেই বিধ্বস্ত শহীদ মিনার, জগন্নথ হলের গণহত্যার দৃশ্য—অতিক্রম করে যাওয়া যায়?  এমনি আরাে অনেক কিছু মিলিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর পূর্ণতা পাবে এই প্রকল্প। বাংলাদেশের মানচিত্রের ভিতরে এবং বাইরে আলােকিত করার যে পরিকল্পনা আছে, তা এখনাে মােটেই বাস্তবায়িত হয় নি। মুজিবনগর কমপ্লেক্স মহাপরিকল্পনার বেশকিছু কাজই এখনাে অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। আশা করা যায়, অচিরেই সবকিছু সম্পূর্ণ হবে, পূর্ণ হবে মুজিবনগরবাসীর স্বপ্ন। দেশীবিদেশী পর্যটকেরা মুজিবনগর কমপ্লেক্সে এসে একনজরে দেখতে পাবেন। একাত্তরের যুদ্ধরত বাংলাদেশকে, দেখতে পাবেন উদীয়মান সূর্যের আদলে নির্মিত মুজিবনগর স্মৃতিসৌধটি। স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের চিরসবুজ ভূমি এই মুজিবনগরে স্মৃতিসৌধের পাদদেশে দাড়িয়ে দর্শনার্থীরা যদি ৩০ লাখ শহীদের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার জন্য আবারাে শপথ গ্রহণ করেন, তা হলেই সার্থক হবে মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সের এতাে সব বর্ণাঢ্য আয়ােজন।
মুজিবনগরের উন্নয়ন
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী রাজধানী মুজিবনগর। অন্তত সেই স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতেই সরকার এতঞ্চলের আর্থ-সামাজিক এবং অন্যান্য অবকাঠামােগত উন্নয়নে মনােযােগী হবেন, এটাই ছিল এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। সে প্রত্যাশা এতদিনে অনেকাংশেই পূর্ণ হয়েছে। যথাযথই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে এ-অঞ্চলে।
উপজেলা মুজিবনগর
মুজিবনগর এখন আর কেবল বৈদ্যনাথতলার আমবাগানেই সীমিত নয়, এখন একটি উপজেলার নাম। সাজানাে গােছানাে ৪ ইউনিয়নের ছোেট্ট উপজেলা। আয়তনে ছােট হলেও ঐতিহাসিক নামের কারণে ব্যঞ্জনায় অনেক বড় এবং বিশাল এই নবীন উপজেলা। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উপজেলা পর্যায়ের কার্যালয়সহ নতুন উপজেলা পরিষদ গড়ে তােলা হয়েছে অত্যন্ত মনােরম পরিবেশে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের 
কাজ একেবারে শেষের পথে। থানা স্থাপিত হয়েছে অনেক আগেই রতনপুরে, এখন উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকায় থানা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। মুজিবনগর কমপ্লেক্সের অদূরে ২ একর জমি অধিগ্রহণ করে বাসস্ট্যান্ড এবং ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করে পিকনিক কর্নার নির্মাণ করা হয়েছে। মুজিবনগর থেকে মেহেরপুর পর্যন্ত পাকারাস্তা সম্প্রসারণের কাজও শেষ হয়েছে। মােটকথা, মুজিবনগরকে ঘিরে এলাকার রাস্তাঘাটসহ এ-অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সরকার যে ব্যাপক কর্মকাণ্ডের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, এতদ্ঞ্চলের জনগণ ইতােমধ্যে তার সুফল ভােগ করতে শুরু করেছে। রাজধানীর সুযােগ-সুবিধার মােল আনা না-ই হােক, এ-অঞ্চলের মানুষ এখন অস্থায়ী রাজধানীর গৌরবময় স্মৃতি বুকে নিয়ে স্বস্তিতে জীবনযাপন করতে পারবে, বিশ্ববাসীকে ডেকে দেখাতে পারবে—এই আমাদের মুজিবনগর, এখান থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা অভিমুখে যাত্রা শুরু গােটা বাংলাদেশের; ডেটলাইন : ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১।
 

সূত্রঃ  বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর – রফিকুর রশীদ