You dont have javascript enabled! Please enable it!

২৪ মে, ১৯৭১ ইন্দিরা গান্ধী

ভারতীয় পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এক বিবৃতিতে বলেন, আমি ১৫ ও ১৬ মে আসাম, ত্রিপুরা, ও পশ্চিমবঙ্গ সফরে গিয়েছি, বাংলাদেশের শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশার অংশীদার হতে, তাদের প্রতি সংসদের ও দেশবাসীর সহানুভূতি-সমর্থন জানাতে এবং তাদের সেবা করার জন্য যেসব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা দেখতে। আমাদের আপ্রাণ ইচ্ছা থাকা সত্বেও আমরা সব শরনার্থীকে আশ্রয় দিতে পারিনি। অনেকে এখনও খোলা জায়গায় রয়েছেন। কর্তৃপক্ষের উপর ভীষণ চাপ পড়ছে। প্রতিদিন ৬০ হাজার করে শরনার্থী সীমান্ত পার হয়ে ভারতে আসছেন। গত ৮ সপ্তাহে প্রায় ৩৫ লাখ লোক বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছেন। এরা বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী, সমজের বিভিন্ন স্তরের ও বয়সের লোক। এরা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সামরিক সন্ত্রাসের হাত থেকে বাঁচার জন্য সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে এসেছে। বহু শরনার্থী আহত। আমাদের জনগণ নিজেদের দুঃখ-কষ্টের ওপর স্থান দিয়েছেন মরনার্থীদের দুঃখ-কষ্ট। যে সাহস ও শৌর্যের সাথে বাংলাদেশের জনগণ তাদের দুঃখ-দুর্দশা বরণ করেছেন এবং ভবিষ্যতের জন্য তারা যে দৃঢ় মনোবল ও আশা রাখেন তা দেখে আমি মুগ্ধ। শ্রীমতি গান্ধী বলেন, বাংলাদেশের ঘটনাবলী সম্পর্কে ভারতের হাত রয়েছে এ কথা দুরভিসন্ধিমূলক, বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও তাদের স্বতঃস্ফূর্ত ত্যাগ স্বীকারের প্রতি অবমাননাকর। নিজেদের দুষ্কর্মের জন্য ভারতকে দায়ী করার একটি সুপরিকল্পিত নিয়েছেন পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী। বিশ্ববাসীকে প্রতারণা করার পাকিস্তানি এ প্রচেষ্টা বিশ্ব প্রেস ধরে ফেলেছেন। তিনি বলেন, আমরা কোনোদিন পাকিস্তানের ঘরোয়া ব্যাপারে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করিনি। আজও আমরা কোনো ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। কিন্তু পাকিস্তান যাকে ঘরোয়া বিষয় বলে দাবি করছে, ভারতের পক্ষেও সেটি একটি ঘরোয়া ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং ঘরোয়া ব্যাপারের নামে পাকিস্তান যেসব তৎপরতা চারাচ্ছে তা থেকে বিরত থাকতে বলার অধিকার আমাদের আছে। আমাদের লাখ লাখ নাগরিকের কল্যাণ ও শান্তি এতে বিঘ্নিত হচ্ছে। ভারতীয় ভূমিতে পঞ্চাশ ষাট লাখ পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিককে তাদের বাস্তুভিটা থেকে বিতাড়িত করার অধিকার কি পাকিস্তানের আছে? এসব হতভাগ্য ব্যক্তিদের আমরা আশ্রয় ও সাহায্য দিতে বাধ্য হয়েছি বলে তার সুযোগ নিয়ে আরো শরনার্থী পাঠাবার সুবিধা পাকিস্তানকে দেয়া যায় না।

প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, আমাদের দেশ, আমাদের জনগণ শান্তিতে বিশ্বাসী। তবে আমি আমাদের জনগণকে সতর্ক করে দিতে চাই, আমাদের হয়তো আরো অনেক বেশী বোঝা বহন করতে হতে পারে। আজ আমরা যেসব সমস্যার মখোমুখি সেসব কেবণ আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা নয়। সেসব জাতীয় সমস্যা। বস্তুত মূল সমস্যাটি হলো আন্তর্জাতিক। আমরা বিদেশে অবস্থিত আমাদের প্রতিনিধি ও ভারতে অবস্থিত বিদেশী সরকারগুলোর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিশ্ব-বিবেক জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। জাতিসংঘের কাছেও আমরা আবেদন জানিয়েছি। শ্রীমতি গান্ধী বলেন, পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের নির্বোধ কার্যকলাপের মাধ্যমে প্রতিবেশীদের প্রতি বন্ধুসুলভ মনোভাব এবং শান্তি ও মানবতার মৌল নীতিগুলো যথেচ্ছভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত, পূর্ব বঙ্গের সমস্যার কোনো সামরিক সমাধান হতে পারে না। যাদের ক্ষমতা রয়েছে, তারা রাজনৈতিক সমাধান করতে পারেন এবং তাদের করতেই হবে। এ ব্যাপারে বৃহৎ শক্তিবর্গের একটি বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। তারা যত শিগগির সঠিকভাবে তাদের শক্তি প্রয়োগ করেন তাহলেই কেবল আমাদের উপমহাদেশে আমরা স্থায়ী শান্তি দেখতে পাবো।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!