You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.21 | বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর -প্রসঙ্গ গার্ড অব অনার কিছু তথ্যবিভ্রাট - সংগ্রামের নোটবুক
প্রসঙ্গ গার্ড অব অনার : কিছু তথ্যবিভ্রাট
১৭ এপ্রিল, নতুন সরকারের শপথগ্রহণ ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, পরিকল্পিত অথচ অতর্কিত আক্রমণের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে অপ্রত্যাশিত এক যুদ্ধের মুখখামুখি দাঁড় করিয়ে দেয় এবং নিঃশেষে ছিড়ে দেয় রাষ্ট্রীয় বন্ধনের কৃত্রিম সুতাে; অনিবার্য হয়ে। ওঠে বাংলাদেশের অভ্যুদয়। যুদ্ধই তখন অনতিক্রম্য বাস্তবতা। এ-যুদ্ধের এক পক্ষে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী, অন্যপক্ষে এ-দেশের মুক্তিকামী আপামর জনসাধারণ তাদের কাছে মুক্তিই মুখ্য। এ-দেশের মানুষ পাকিস্তানের শাসন-শােষণ, অন্যায়-বঞ্চনা, নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে সর্বপ্রকার মুক্তির স্বপ্ন দেখে এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। বাঙালির কাছে এ-যুদ্ধ তাই হয়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধ। গণমানুষের সার্বিক অংশগ্রহণের কারণে এ-যুদ্ধ শুরু থেকেই লাভ করে গণযুদ্ধের চারিত্র্য। যে-কোনাে যুদ্ধের জন্যই যােদ্ধা চাই, অস্ত্র গােলাবারুদ চাই, চাই যুদ্ধনীতি ও যুদ্ধকৌশল কিন্তু যে-যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় একটি জাতীয় স্বাধীনতার প্রশ্ন এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম নতুন রাষ্ট্রের জন্মের প্রসঙ্গ, সেই যুদ্ধ পরিচালনার জন্য একেবারেই অত্যাবশ্যক সর্বজন গ্রহণযােগ্য একটি সরকার গঠন। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে এই জরুরি কাজটি সম্পন্ন হয় ১০ এপ্রিল, ভারতে বসে, তার তার নাম হয় প্রবাসী সরকার এই সরকারের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৭ এপ্রিল, মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা, আমবাগানে, বাংলাদেশের মুক্ত মাটিতে। সেদিন থেকে বৈদ্যনাথতলা হয়ে যায় মুজিবনগর, বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী; আর প্রবাসী সরকার হয়ে যায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, রাজধানীর নামের সঙ্গে যুক্ত করে বলা হয় মুজিবনগর সরকার।  শুধু আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশই নয়, এ দিন মুজিবনগর থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সনদ প্রকাশের মাধ্যমে নবগঠিত সরকারকে আইনগত দিক থেকে বিশ্বস্বীকৃত পদ্ধতিতে পরিপূর্ণ বৈধতা প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল ও আস্থাশীল এই নবগঠিত সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে 
সেদিন অনাড়ম্বর হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। সরকারপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতির কারণে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম রীতি মােতাবেক বাংলাদেশের মুক্ত মাটিতে দাড়িয়ে রাষ্ট্রনায়কোচিত আত্মপ্রত্যয় ও দৃঢ়তার সঙ্গে সে-দিন গার্ড পরিদর্শন করেন, জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং গার্ডদলের সালামও গ্রহণ করেন। ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১, মুজিবনগরের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও আনুষ্ঠানিকতার বাকি থাকে না কিছুই এতদিন পর ইতিহাসের পাতা ওল্টাতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে একটি প্রসঙ্গে এসে—সে-দিন এই ঐতিহাসিক গার্ডদলের সদস্য কারা। ছিলেন, কতজন ছিলেন? একটি রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক জন্মমুহূর্তে সেই রাষ্ট্রের প্রধানকে যারা গােটা জাতির পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে কিন্তু সামরিক কায়দায় কুচকাওয়াজসহ সালাম জানিয়েছেন, বাঙালি জাতির চরম ক্রান্তিলগ্নে আনুষ্ঠানিক এবং রাজসিক এই দায়িত্ব যারা পালন করেছেন, তাদের নাম-পরিচয় নিয়ে  কোনাে বিভ্রান্তিই কারাে কাম্য হতে পারে না। তাই আমরা সেদিনের এই সােনালি ইতিহাস নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত নেপথ্য নায়কদের এতদসংক্রান্ত বক্তব্যগুলাে পাশাপাশি তুলে ধরাটা খুব জরুরি বলে বিবেচনা করছি। গার্ড অব অনার : বিভিন্ন ভাষ্য মেহেরপুরের তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী দক্ষিণপশ্চিম রণাঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন একেবারে গােড়া থেকেই এতদঞ্চলের যুদ্ধপ্রস্তুতি থেকে শুরু করে ১৭ এপ্রিল নতুন সরকারের শপথগ্রহণ পর্যন্ত সবকিছুতেই ছিল তার নেতৃত্বমূলক অংশগ্রহণ এ-দিন মুজিবনগরের এই ঐতিহাসিক ঘটনার শুরু থেকে শেষঅবধি তার ছিল দায়িত্বপূর্ণ অবস্থান গার্ড অব অনার প্রদান সম্পর্কে তার মন্তব্য: বেলা প্রায় ১১টা নাগাদ বহু প্রতীক্ষিত অনুষ্ঠানের সূচনা হল। আমি জিপে করে জনাব তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জেনারেল এম এ জি ওসমানী ও অন্যান্য কয়েকজনকে মঞ্চের ৫০ গজের মধ্যে তােরণের কাছে নিয়ে এলাম। মাহবুব (ঝিনাইদহের এসডিপিও মাহবুব উদ্দিন) গার্ড অব অনারের নেতৃত্ব দিল। সৈয়দ নজরুল ইসলাম অভিবাদন গ্রহণ করলেন। পিছনে দাঁড়িয়ে জেনারেল ওসমানী।
 
তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরীর এই ভাষ্য থেকে জানা যাচ্ছে সে-দিন গার্ড অব অনার প্রদান করেন মাহবুবউদ্দিন। কিন্তু তার এই গার্ডদলের অন্যান্য সদস্যের নাম-পরিচয় সম্পর্কে কিছুই এখানে উল্লেখ নেই এবার আমরা দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনের অধিনায়ক মেজর আবু ওসমান চৌধুরীর সাক্ষাৎকারভাষ্যের দিকে দৃষ্টি দিতে পারি এ-প্রসঙ্গে তিনি জানাচ্ছেন : এস্তগতিতে মাহবুব (ঝিনাইদহের এসডিপিও মাহবুবউদ্দিন) উপস্থিত কিছুসংখ্যক যুদ্ধক্লান্ত ইপিআর ও আনসার-মুজাহিদের মিলিত সৈন্যদের একত্রিত করে সদ্য আগত প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে সালাম প্রদান করে। তার কিছুক্ষণ পরেই আমি ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন, ক্যাপ্টেন হাফিজ, আমার স্ত্রী-কন্যা এবং সামান্য সৈন্য সমভিব্যহারে সেখানে (মুজিবনগরে) উপস্থিত হই। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ঘােষণা ও সনদপত্র পাঠের পর এই নবগঠিত সরকারকে আমি সামরিক অভিবাদন দিই। এই ভাষ্য পাঠের পর যদি মাহবুবউদ্দিনের সালাম প্রদান এবং আবু ওসমান চৌধুরীর সামরিক অভিবাদন করা বলতে একই বিষয় বােঝানাে হয় তা হলে প্রশ্ন জাগে—এই দু’জনের নেতৃত্বে সে-দিনের অনুষ্ঠানে কি দু’বার ‘গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়? মাহবুবউদ্দিনের গার্ডদলের সদস্য সংখ্যা কত ছিল সেটা জানা যাচ্ছে না বটে, তবে সদস্যদের এক প্রকার পরিচয় উদ্ঘাটিত হচ্ছে।
তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক যুদ্ধক্লান্ত ইপিআর ও আনসারমুজাহিদ’ ছিল। কতজন ইপিআর, কতজন আনসার, আ কতজনইবা মুজাহিদ ছিল সে-দিনের ঐতিহাসিক গার্ডদলে, সে ধারণা মােটেই স্পষ্ট হচ্ছে না এই ভাষ্য থেকে এ-কথাও জানা যাচ্ছে না—‘নবগঠিত সরকারকে সামরিক অভিবাদন জানানাের সময় মেজর আবু ওসমান চৌধুরীর গার্ডদলেই বা সদস্য ছিলেন কারা? পাবনা জেলার ১৯৭১ সালের বাঙালি জেলা প্রশাসক জনাব মােহাম্মদ নূরুল কাদের স্থানীয় মুক্তিকামী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই এপ্রিলের ৮ তারিখ পর্যন্ত পাবনাকে হানাদারমুক্ত রাখতে সক্ষম হন। অতঃপর চুয়াডাঙ্গা এসে দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হন, জড়িয়ে পড়েন মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সঙ্গেও। সে-দিনের এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মােহাম্মদ নূরুল কাদের জানাচ্ছেন শপথ শেষে উপস্থিত একদল ছেলেমেয়ে আমার সােনার বাংলা গাইতে শুরু করলে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মঞ্চের ডানদিকে স্থাপিত স্তম্ভে পতাকা উত্তোলন করেন।
 
উত্তোলন-শেষে তিনি পুনর্বার মঞ্চে এসে সারিভুক্ত হন। ক্যাপ্টেন মাহবুবউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে জনাবিশেষ ইউনিফর্মধারী পুলিশ ও আনসার নিয়ে গঠিত একটি ছােট বাহিনী রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানান। এই ভাষ্যটি থেকে সেদিনের গার্ড দলের সদস্য সংখ্যা সম্পর্কে যেমন একটি ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, তেমনি তাদের পরিচয়ও জানা যাচ্ছে। তারা পুলিশ ও আনসার। এখানেই প্রশ্ন জাগে-ইপিআর সদস্য তাহলে ছিল না? বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ইতিহাস-গবেষক, বিশিষ্ট মুক্তিযােদ্ধা ড. সুকুমার বিশ্বাস মুক্তিযুদ্ধে রাইফেলস ও অন্যান্য বাহিনী’ শীর্ষক গ্রন্থে এ সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পরিবেশন করেছেন। তিনি লিখেছেন : মন্ত্রীবর্গ উপস্থিত হলে ক্যাপ্টেন মাহবুব মুক্তিযােদ্ধাদের ছােট্ট একটি দল নিয়ে অভিবাদন দেন। পরবর্তী পর্যয়ে মন্ত্রিপরিষদ শপথ গ্রহণ করলে মেজর এম এ ওসমান চৌধুরী ইপিআর বাহিনী নিয়ে নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার দেন। এই অনুষ্ঠানে এ আর আযম চৌধুরী, ক্যাপ্টেন হুদা, ক্যাপ্টেন মুস্তাফিজুর রহমান, লে. হাফিজ উস্থিত ছিলেন। এরপর ড. সুকুমার বিশ্বাস ২১ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত তথ্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে উল্লেখ করেন : এ প্রসঙ্গে ‘দৈনিক পূর্বদেশ’ বলেছে : শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনী হিসেবে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করেন এবং জেনারেল ওসমানীর অধিনায়কত্বে তারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এখানে আবার বেশ গােলমেলে ব্যাপার ঘটে গেল। প্রথম উদ্ধৃতিতে জানা যাচ্ছে—ক্যাপ্টেন মাহবুব ‘মুক্তিযোেদ্ধাদের ছােট্ট একটি দল নিয়ে অভিবাদন দেন। কাকে দেন? ‘মুক্তিযােদ্ধাদের ছােট্ট দলে’ কারা ছিল, সংখ্যা কতজন? এসব প্রশ্নের উত্তর নেই ঐ অংশে, কিন্তু প্রশ্নগুলাে তাে উঠতেই পারে। আবার “দৈনিক পূর্বদেশ’-এ প্রকাশিত নিবন্ধের বরাত দিয়ে দ্বিতীয় উদ্ধৃতি অংশে যে তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে, তা একেবারেই অভিনব। প্রথমত, গার্ডদলের সবাইকে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, গার্ড অব অনারের অধিনায়কত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে জেনারেল ওসমানীর কাঁধে। এ দু’টি অভিনব তথ্যের সঙ্গে কেউ একমত হবেন বলে আমার মনে হয় না।
 
নায়েব সুবেদার আব্দুল মতিন পাটোয়ারী ইপিআর বাহিনীর সদস্য, এতদৃঞ্চলের রণাঙ্গনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত মুক্তিযােদ্ধা, সে-দিন শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানও খুব কাছে থেকে তিনি প্রত্যক্ষ করেন। ঐ অনুষ্ঠানের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন :  ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলাতে বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করেন। আমাদের ইপিআর বাহিনীর একটি কোম্পানি গার্ড অব অনার দেয়। ইপিআর-এর একজন সুবেদার মেজর তবারক উল্লাহ বেশ জোর দিয়েই দাবি করেন : সম্পূর্ণ ইপিআর বাহিনীই গার্ড অব অনার দেয়। তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী অপর একটি সাক্ষাৎকারের বরাত দিয়ে ড. সুকুমার বিশ্বাস ‘মুক্তিযুদ্ধে রাইফেলস ও অন্যান্য বাহিনী’ গ্রন্থে জানান । আমরা নেতৃবৃন্দকে গার্ড অব অনার দেওয়ার মতাে মাত্র কয়েক প্লাটুন ইপিআর এবং মুজাহিদ মােতায়েন করি। মাহবুব সাহেব তাদের নিয়ে গার্ড অব অনার দেওয়ার মহড়া শুরু করেন। এ বিবরণে কয়েক প্লাটুন ইপিআর’ এবং ‘মুজাহিদ’-এর খবর পাওয়া যাচ্ছে তবু বিতর্ক এবং সংশয়ের অবসান হচ্ছে না। এরপর আমরা যাব। ক্যাপ্টেন মাহবুবউদ্দিনের কাছে। তিনিই সে-দিনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের এই ‘গার্ড অব অনার’ অধ্যায়ের নায়ক এ উজ্বল অধ্যায় রচনা করেছেন তিনি, এ-প্রসঙ্গে তার বিবরণই অধিক প্রণিধানযােগ্য। এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান নিয়ে একটু দীর্ঘ কিন্তু মনােজ্ঞ এক বিবরণ দিয়েছেন তৎকালীন এসডিপিও মাহবুবউদ্দিন আহমদ। আমরা এবার চোখবুলাই সেই ঐতিহাসিক বিবরণে তৌফিক সবাইকে অভ্যর্থনা জানাতে ব্যস্ত এক ফাকে আমাকে ডেকে বলল, ওসমান ভাইকে (আবু ওসমান চৌধুরী) বলেছিলাম সদলবলে আসতে। এখনাে এলেন না, সময় বেশি নেই। মেজর আবু ওসমান চৌধুরী তার কন্টিজেন্ট নিয়ে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে গার্ড অব অনার দেওয়ার কথা। তিনি না এলে তাে এরা বসে থাকবেন না; সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। গার্ড অব অনার না দিতে পারলে এ অনুষ্ঠান অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তারপর কিছুক্ষণ ভেবে বলল, তুই তাে পুলিশে এসব ট্রেনিং নিয়েছিলি। তুই-ই না হয় গার্ড অব অনার দেওয়ার ব্যবস্থা কর।
 
আমি বললাম, আমার সঙ্গে যে সৈনিকরা আছে, তাদের দিয়ে গার্ড অব অনার দেব। তুই কিছু ভাবিস না। আমি পাঁচ মিনিটেই তৈরি হয়ে আসছি। আমি আমার সঙ্গী সৈনিক আর উপস্থিত ক’জন আনসারকে ডেকে একত্রিত করে ফল-ইন করালাম, কয়েকবার, অ্যাটেনশন, স্ট্যান্ড অ্যাট ইজ করালাম। বার কয়েক মােলডার আর্মস, প্রেজেন্ট আর্মস করালাম। সবাইকে যুৎসইভাবে তৈরি করে ফল-ইন অবস্থায় দাঁড় করিয়ে সালাম দেওয়ার জন্য তৈরি হলাম। বাঁশের মাথায় উড়ন্ত পতাকা নামিয়ে মাটি থেকে দু’-তিন ফুট উপরে বাঁশের গায়ে বেঁধে রাখলাম। সারদা পুলিশ একাডেমিতে হাতিয়ার চালনার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। পাসিং আউটের সময়ে গার্ড অব অনার দেওয়ার সুযােগ এল আমার নেতৃত্বে। নিজের অজান্তে কত বড় একটা কাজের সাক্ষী হয়ে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলাম, তা বুঝতেও পারলাম না। উৎসাহ-উদ্দীপনা আর তারুণ্যের আতিশয্যে টালমাটাল প্রাণশক্তি অস্তিত্বের পরতে-পরতে তখন চিৎকার করে বলছে—স্বাধীনতা! স্বাধীনতা!! স্বাধীনতা!!! এরই মধ্যে সৌম-শান্ত ধীর পদক্ষেপে অস্থায়ী সরকারের নেতৃবৃন্দ অকিঞ্চিৎকর এক চৌকি পাতা মঞ্চে উঠলেন। সবাই দাঁড়ালেন স্থির হয়ে আমাদের সামনে মঞ্চের উপরে। তারা মঞ্চে উঠতেই আমার পিছনে আড়াআড়ি সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানাে দুই সারি আনসার, পুলিশ, ইপিআর সদস্য নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি হওয়া জওয়ানদের কমান্ড করলাম, অ্যাটেনশন। পরবর্তী নির্দেশ—সােল্ডার আর্মস। তারপর কণ্ঠস্বর উচ্চকিত করে কষ্ঠের সকল পেশি বিদীর্ণ করে কমান্ড দিলাম, প্রেজেন্ট আর্মস। সবাই রাইফেলগুলাে বুকের ছয় ইঞ্চি সামনে আকাশের দিকে নল তুলে সামরিক কায়দায় অভিবাদন করে ঋজু ও অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। আমার ডান হাত উঠে এল স্যালুটের ভঙ্গিতে মাথার ডানপাশে। জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে উঠলেন একদল তরুণ। ধীরে ধীরে আমার হৃদয়ে প্রােথিত স্বাধীন দেশের পতাকা উড্ডীয়মান হল। সৈয়দ নজরুল ইসলাম উধ্বমুখে পতাকার দিকে স্থির চোখে পতাকা উত্তোলন করছেন। চোখের আলােয় পরাধীনতার তমসা হরণের বিম্বিত জ্যোতি। গান গাইছেন শিল্পীরা। তাদের সঙ্গে গাইছেন অযুত জনতা—আমার সােনার বাংলা, আমি তােমায় ভালবাসি ।
 
আর অবয়বের প্রতিটি অণু-পরমাণুতে তখন শিহরণ, দেহের ধমনীতে প্রবহমান প্রতিটি লােহিত কণিকার রন্ধ্রে শিহরিত কণ্টকস্পর্শ, আমার চোখ সামনে স্থির; হৃদয়ে নিঃশব্দ এক শ্লোগান-‘জয়বাংলা।’ পতাকা উড্ডয়ন শেষ হল। আমার কষ্ঠ সর্বশক্তি দিয়ে হেঁকে উঠল-সােলডার আর্মস। ঝটঝট শব্দ তুলে রাইফেলগুলাে একত্রে নেমে এল সৈনিকদের কাঁধে। আমার হাত নেমে এল। আমি এগিয়ে গেলাম দু’পা। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে আবার স্যালুট দিয়ে চিৎকার করে বললাম, গার্ড রেডি ফর ইন্সপেকশন স্যার। রাষ্ট্রপতি মঞ্চ থেকে নেমে এলেন, তিনি আমার বামপাশে। ধীরে-ধীরে পরিদর্শন করলেন। কাঁধে রাইফেল জওয়ানেরা পাথরের মতাে দাড়িয়ে। পিছনে কর্নেল ওসমানী। শেষে পায়ে-পায়ে এগিয়ে গেলেন মঞ্চের দিকে। মঞ্চে উঠে দাঁড়ালেন আমার সামনে। আমি আবার সালাম দিয়ে জানালাম, গার্ড রেডি ফর মার্চপাস্ট স্যার। উনি মার্চপাস্টের সম্মতি দিলেন। আমি সৈনিকদের সামনে এসে দাঁড়ালাম। হুকুম দিলাম—রাইট টার্ন, কুইক মার্চ। গার্ডদল মার্চ করে মঞ্চের ডানদিকে চলে এল। হুকুম দিলাম—ডিসমিস। সবাই সুবিধামত স্থান ত্যাগ করে জনতার সাথে মিশে গেল।” গার্ড অব অনার প্রদানের ব্যাপারটাই হচ্ছে প্রতীকী সম্মাননা জ্ঞাপনের একপ্রকার আন্তর্জাতিক রীতি। সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানকেই এ-সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয় এবং তার মাধ্যমে গােটা মন্ত্রিপরিষদ বা সরকার ঐ সম্মানে অভিষিক্ত হন।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ ঘটে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারের। এ সরকার গঠিত হয় বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। তিনিই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। নবগঠিত সরকারের শপথগ্রহণের ঐতিহাসিক এই দিনে রাষ্ট্রপতিকেই গার্ড অব অনার প্রদানের আয়ােজন করা হয়। যেহেতু রাষ্ট্রপতি সে-দিনের এই অনুষ্ঠানে শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে পারেন নি এবং তার অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন, সেহেতু গার্ড পরিদর্শন, সালাম গ্রহণ এবং সর্বোপরি গার্ড অব অনার গ্রহণ করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। এ-নিয়ে কোনাে সংশয় থাকার কথা নয়। গার্ড অব অনার প্রদানের বিষয়ে ক্যাপ্টেন। মাহবুবউদ্দিন আহমদের আনুপুথিক বিবরণটিই অধিক গ্রহণযােগ্য। তবে । দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনের অধিনায়ক মেজর আবু ওসমান চৌধুরী প্রদত্ত অন্য এক স্মৃতিচারণের প্রাসঙ্গিক বক্তব্যটুকুও বিশেষভাবে প্রণিধানযােগ্য। সেখানে। তিনি জানান । ১৭ এপ্রিল নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মন্ত্রিপরিষদের সদস্যগণ এসে। পৌছলেও আমি পৌছতে পারি নি। ঝিনাইদহের এসডিপিও ক্যাপ্টেন। মাহবুবউদ্দিন উপস্থিত কয়েকজনকে ক্ষিপ্রগতিতে একত্রিত করে। মন্ত্রিপরিষদকে সালাম প্রদান করেন। পরে আমি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান করি। ইপিআর-এর ৩৪ জন।
 
সদস্য এই গার্ড অব অনার প্রদান করেন। মেজর ওসমানের এই ভাষ্য বিশ্লেষণে জানা যাচ্ছে—১. মাহবুবউদ্দিন। মন্ত্রিপরিষদকে সালাম প্রদান করেন এবং ২. মেজর ওসমান অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে পরে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। প্রশ্ন জাগে—সালাম প্রদান। এবং গার্ড অব অনার প্রদান, ঘটনা দু’টি কি দু’বারে ঘটেছে? আরও একটি প্রশ্ন-মাহবুবউদ্দিন কি তবে রাষ্ট্রপতিকে না দিয়ে মন্ত্রিপরিষদকেই সালাম প্রদান করেন? ক্যাপ্টেন মাহবুবউদ্দিনের দীর্ঘ স্মৃতিচারণ কিংবা অন্য কারাে বক্তব্যে কিন্তু তেমন কথা কখনােই আসে নি। তাহলে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল। সে-দিন গার্ড অব অনার প্রদানের নামে? হ্যা, আবু ওসমান চৌধুরীর এই ভাষ্য। থেকে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে ঐতিহাসিক এই দায়িত্ব পালনকারী ইপিআরএর সংখ্যাটি জানা যাচ্ছে, তারা ছিলেন ৩৪ জন। | ১৭ এপ্রিলের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির স্মৃতিচারণে প্রদত্ত বক্তব্যের সমন্বয় ঘটিয়ে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি, সে-দিন এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই গার্ড অব অনার প্রদানের পরিকল্পনা করা হয়। এ-দায়িত্ব পালনের কথা মেজর আবু ওসমান চৌধুরীরই। নানাবিধ কারণে অনুষ্ঠানস্থলে পৌছতে তার একটু বিলম্ব হয়। ফলে এ-দায়িত্ব কাঁধে নিতে হয় ক্যাপ্টেন মাহবুবউদ্দিনকে। অতি দ্রুত তিনি যে-গার্ডবাহিনী প্রস্তুত করেন, তাতে ৩৪ জন ইপিআর সদস্য অংশগ্রহণ করেন ঠিকই, তবে এই সঙ্গে যুক্ত হন আরাে ১২ জন স্থানীয় আনসার বাহিনীর সদস্য।
ক্যাপ্টেন মাহবুব এই ৪৬ জনের দলকে একেবারে অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বমুহূর্তে মহড়া দিয়ে সালাম দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করে নেন। মঞ্চের সামনে ফল-ইন অবস্থায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে গার্ডদল অনড় হয়ে দাড়িয়ে অপেক্ষা করে। সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারের নেতৃবৃন্দ সৌম-শান্ত ধীর পদক্ষেপে মঞ্চে এসে সারিবদ্ধ হয়ে দাড়াতেই শুরু হয়ে যায় ক্যাপ্টেন মাহবুবের গার্ড অব অনার প্রদানের কার্যক্রম। তিনি গার্ডদলকে একে-একে কমান্ড করেন—অ্যাটেনশন। সােল্ডার আর্মস। প্রেজেন্ট আর্মস। সবাই সামরিক কায়দায় হাত তুলে অভিবাদন জানাচ্ছেন। এরই মাঝে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মঞ্চ থেকে নেমে এসে পতাকা উত্তোলন শেষে আবার মঞ্চে এসে দাড়ান। এবার ক্যাপ্টেন মাহবুব দু’পা এগিয়ে এসে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে স্যালুট দিয়ে গার্ড পরিদর্শনের আহ্বান জানান। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবার মঞ্চ থেকে নেমে এসে ধীর এবং দৃঢ় পদক্ষেপে গার্ড পরিদর্শন শেষে মঞ্চে উঠে একটু এগিয়ে দাঁড়ান। তখন ক্যাপ্টেন মাহবুব আবারও সালাম জানিয়ে মার্চপাস্টের অনুমতি প্রার্থনা। করেন। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সে অনুমতি দিলে গার্ডদল কুইক মার্চ করে মঞ্চের সামনে থেকে ডান দিকে গিয়ে ‘ডিসমিস হওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ করেন। তাদের গার্ড অব অনার প্রদানের আনুষ্ঠানিকতা।
প্রকৃতপক্ষে এটাই ছিল সে-দিনের নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপ্রধানের উদ্দেশে প্রদত্ত গার্ড অব অনার। এ-টুকুই ছিল আলঙ্কারিক আনুষ্ঠানিকতা। এরপর শুরু হয় ঐতিহাসিক এই অনুষ্ঠানের মূল আয়ােজন বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের মাঠ, মন্ত্রিসভা ও প্রধান সেনাপতির পরিচয় পর্ব, শপথগ্রহণ পর্ব, স্বাধীনতার সনদ বা ইশতেহার ঘােষণা, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ভাষণ পর্ব, সাংবাদিক সম্মেলন পর্ব, এভাবেই শেষ হয় সমগ্র অনুষ্ঠান। কিন্তু সাংবাদিক সম্মেলনের পূর্বে অর্থাৎ অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনের অধিনায়ক আবু ওসমান চৌধুরী পূর্বের সেই গার্ডদল নিয়েই অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে পুনরায় গার্ড অব অনার প্রদান করেন। সে-দিন ইতিহাস-নির্দিষ্ট এই মহান দায়িত্বটি যারা পালন করেন, তাদের মধ্যে ইপিআর বাহিনীর ৩৪ জন সদস্যের নামের একটি তালিকা পাওয়া যাচ্ছে ড, সুকুমার বিশ্বাস রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধে রাইফেলস ও অন্যান্য বাহিনী’ গ্রন্থে। তালিকাটি নিমরূপ : 
১. নায়েব সুবেদার তােফাজ্জল হােসেন, ২. হাবিলদার জবেদ আলী পাটোয়ারী, ৩, হাবিলদার খােয়াজ আলী, ৪. হাবিলদার শামসুল হক, ৫. হাবিলদার আবুল কাশেম, ৬. হাবিলদার আব্দুল মতিন পাটোয়ারী, ৭. হাবিলদার আবু আহমদ, ৮, হাবিলদার সুলতান আহমদ, ৯. হাবিলদার মাজেজুল ইসলাম, ১০. নায়েক তৈয়ব আলী, ১১. নায়েক ওজিউল্লাহ, ১২. নায়েক তফাজ্জল হােসেন, ১৩. নায়েক আব্দুল মতিন (১), ১৪. নায়েক আব্দুল মতিন (২), ১৫. ল্যান্স নায়েক মােতাহারউদ্দিন, ১৬. ল্যান্স নায়েক আবুল খায়ের, ১৭. ল্যান্স নায়েক ওবায়দুল্লাহ, ১৮. সিপাহী মােহাম্মদ আলী, ১৯, সিপাহী ফালু মিয়া, ২০. সিপাহী রােজাউল হক, ২১. সিপাহী কাজী মঈন উদ্দিন (১), ২২. সিপাহী ইর্তেজা আলম, ২৩. সিপাহী মঈন উদ্দিন (২), ২৪. সিপাহী ওবায়দুল্লাহ, ২৫. সিপাহী শামসুর রহমান, ২৬. সিপাহী জিন্নত আলী, ২৭. সিপাহী নজরুল ইসলাম, ২৮. সিপাহী হাফিজ আহমদ, ২৯. সিপাহী বশীর আহমদ, ৩০. সিপাহী আব্দুল মতিন, ৩১. সিপাহী আমীর হােসেন, ৩২. সিপাহী খায়বার রহমান, ৩৩. সিপাহী মােসলেমউদ্দিন ও ৩৪. সিপাহী সাইফুল ইসলাম। | ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর আম্রকুঞ্জে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথগ্রহণ উপলক্ষে আয়ােজিত অনুষ্ঠানে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদানকারী দলে ৩৪ জন ইপিআর সদস্যের সঙ্গে ছিলেন ১২ জন আনসার সদস্যও। এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনকারী আনসার সদস্যদের তালিকা নিম্নরূপ :  ১. মীর ইয়াদ আলী (হাসনাবাদ কলােনী, বারাদি), ২. মহিউদ্দীন (ভবেরপাড়া), ৩. আজিমউদ্দিন (ভবেরপাড়া), ৪. সাহেব আলী (সানাপুর), ৫. অস্থির মল্লিক (ভবেরপাড়া), ৬, লিয়াকত আলী (ভবেরপাড়া), ৭. ফকির মােহম্মদ (ভবেরপাড়া), ৮. হামিদুল হক (সােনাপুর), ৯, মফিজউদ্দিন (ভবেরপাড়া), ১০. সিরাজুল ইসলাম, ১১. নজরুল ইসলাম (ভবেরপাড়া) ও ১২. কেসমত আলী (ভবেরপাড়া)। 

এই ১২ জন আনসারের মধ্যে জীবিত ৫ জন কিন্তু দাবি করছেন, সেদিন আর কোনাে ইপিআর বা পুলিশ নয়, শুধু তারাই ১২ জন আনসার 

 

সূত্রঃ  বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর – রফিকুর রশীদ