You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ১১ই ফেব্রুয়ারী, সোমবার, ২৮শে মাঘ, ১৩৮০

দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান

সংবাদে প্রকাশ, দেশের সমস্ত ভুয়া, দুর্নীতিবাজ ও অসাধু ব্যবসায়ীদের সমস্ত রকমের লাইসেন্স, পারমিট ও এজেন্সি বাতিল করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ দিয়েছেন।
তার নির্দেশেই ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার পারমিট, লাইসেন্স ও এজেন্সিকে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে এবং আরো যাতে খুঁজে বের করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া যায় সে জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে বলে জানা গেছে।
অভিজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে, দেশে বর্তমানে বেশ কয়েক হাজার ভুয়া পারমিট, লাইসেন্স ও এজেন্সি আছে এবং এদের দৌরাত্ম্যেই নাকি বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে সাধারণ জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
এছাড়া, দুর্নীতিবাজ ও অসাধু ব্যক্তিদের হাতে এমন বেশ কয়েক হাজার স্বনামা বা বেনামা লাইসেন্স, পারমিট ও এজেন্সি আছে যা প্রধানতঃ দেশ স্বাধীন হবার পরই দুর্নীতিবাজদের করতলগত হয়েছে। এদেরই ব্যাপকভাবে খুঁজে বের করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দিয়েছেন। আরো জানা গেছে যে, সংশ্লিষ্ট মহকুমার এসডিও অথবা তার মনোনীত একজন প্রতিনিধি, স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির একজন প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের স্থানীয় একজন প্রতিনিধি যৌথভাবে তদন্তকাজ চালাবেন এবং তাদের প্রদত্ত রিপোর্টেই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ নাকি তো ইতিমধ্যেই শুরুও হয়ে গেছে।
যাহোক, দেশের বর্তমান নাভিশ্বাস পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ কিঞ্চিৎ দেরীতে এলেও নিঃসন্দেহেই প্রশংসা ও যথাযোগ্যতার দাবী রাখে, তবে, সবচেয়ে বড় কথা, সত্যিকারের আগ্রহ ও আন্তরিকতা নিয়ে দেশের এসব গণদুশমনদের নিশ্চিহ্ন করে দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ যাতে প্রকৃতার্থে ও প্রতি অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয় সেজন্য কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে।
এ ধরনের অনুসন্ধান কাজে ব্যক্তি স্বার্থ বা দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিকে প্রশ্রয় পেলে কোনক্রমেই আসল সমস্যার সমাধান হবে না। সেজন্য, তদন্তকারী বা অনুসন্ধানকারীর ব্যক্তিগত যোগ্যতা, সততা ও আন্তরিকতা সম্পর্কে প্রথমেই নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। তা’না হলে সমস্ত পরিকল্পনাই ব্যর্থ হতে বাধ্য।
যতদূর মনে পড়ে, প্রধানমন্ত্রী এর আগেও এসব অসাধু ও দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের ধরে তাদের ভুয়া লাইসেন্স, পারমিট বাতিলের জন্য একবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সে নির্দেশ বাস্তবে কতটুকু ফলপ্রসূ হয়েছিল বা পালিত হয়েছিল তা আমাদের জানা নেই। তবে, খুব একটা ফলদায়ক নি সেটা বর্তমান বাজারের দরুন হতাশাব্যঞ্জক অগ্নিরূপ দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যায়।
কারণ, সত্যিই যদি তাতে কোন ফল হয়ে থাকে, তবে এখনো কেন বাজারে এত ভুয়া লাইসেন্স পারমিটের দৌরাত্ম্য?
সুতরাং, এবারের নির্দেশ পালন করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ কতটুকু পালিত হয়েছিল সে সম্পর্কে যথেষ্ট সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। যদি আগে নির্দেশ উপযুক্তভাবে পালিত না হয়ে থাকে, তবে কেন বা কার বা কাদের কারচুপিতে তা’ উপযুক্ত বা যথেষ্ট ভাবে পালিত হয়নি তাও পরিষ্কার চিহ্নিত করে অপরাধীর উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে।
শুধু ভুয়া লাইসেন্স, পারমিট ও এজেন্সি বাতিল করে অপরাধীর শাস্তি দিলেই হবে না, কার সুপারিশে বা তদবিরে এবং কিভাবে এসব ভুয়া লাইসেন্স, পারমিট ইত্যাদি বাজারে প্রবেশের কর্তৃপক্ষীয় অনুমোদন পেল তাও চিহ্নিত করে অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে।
প্রসঙ্গতঃ বলা যায়, যাদের ন্যায়গত দাবিদার ভেবে লাইসেন্স, পারমিট বা এজেন্সি দেয়া হবে, তারা বাস্তবে কিভাবে তার সদ্ব্যবহার করছে, কিংবা আদৌ করছে কিনা, সেদিকেও কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে। তা’ না হলে এসব উদ্যোগের শেষ পর্যন্ত পরিণাম কি হবে সে সম্পর্কে মন্তব্য না রাখলেও চলে।
মোটকথা বঙ্গবন্ধুর এবারের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে এবং উল্লেখিত দুর্নীতিবাজদের সমূলে উৎখাত করে দেশের মানুষকে তাদের দৌরাত্ম্যের কবল থেকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও জনসাধারণকে যথেষ্ট সজাগ, কঠোর ও সহযোগিতামূলক হতে হবে।

সংকটের মুখোমুখি ব্রিটেন

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডোওয়ার্ড হীথ কয়লা শ্রমিকদের ধর্মঘট থেকে বিরত থাকার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু বৃটেনের কয়লা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রী হীথের আবেদন-নিবেদনের কর্ণপাত করেনি। হীথ সরকার কয়লা শ্রমিকদের মাইনে বাড়ানোর দাবি মেনে না নেওয়া তো শেষ অবধি বৃটেনের কুড়ি লক্ষ আশি হাজার শ্রমিক ধর্মঘটের চূড়ান্ত পথই বেছে নিয়েছে। এরই মধ্যে আগামী ২৮শে ফেব্রুয়ারি বৃটেনের সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়েছে। এদিকে কয়লা শ্রমিক ধর্মঘটের ফলে বৃটেনে ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়াই স্বাভাবিক। বৃটেনের বিদ্যুৎ উৎপাদন ৭০ শতাংশ কয়লার ওপর নির্ভরশীল। কাজেই কয়লা শ্রমিকদের ধর্মঘট ব্রিটেনকে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় নিপতিত করবে। কয়লা শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার প্রতি জোরালো সমর্থনেরও অভাব নেই। অথচ প্রধানমন্ত্রী হীথ নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দেয়ার জন্য শ্রমিকদের প্রতি একটি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন ‘কে ব্রিটেন চালায়? জননির্বাচিত সরকার, না ধর্মঘট প্রবণ শ্রমিক ইউনিয়ন।’ এই নির্বাচনী স্লোগান শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার প্রশ্নে অনড় থাকারই নামান্তর। বিদ্যুৎ সংকট ইতিমধ্যেই ব্রিটেনকে খাবি খাইয়ে ছাড়ছে। আরবের তেলাস্ত্রের আঘাতটাও সামলে নিতে ব্রিটেনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। উপরন্তু কয়লা শ্রমিকদের ধর্মঘট বৃটেনের অর্থনীতিকে পঙ্গু না করে ছাড়বে না। মোদ্দাকথায়, ব্রিটেন এখন সংকটের আবর্তে খাবি খাচ্ছে। ধর্মঘট গোটা বৃটেনের অর্থনীতিকে কাহিল করে দেবে। এমতাবস্থায়, আগামী সাধারণ নির্বাচনে ব্রিটেনকে এক অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। প্রধানমন্ত্রী হীথ কয়লা শ্রমিকদের দাবি সম্পর্কে যদি কঠোর মনোভাব গ্রহণ না করতেন, কিংবা যদি শ্রমিকদের প্রতি নমনীয় মনোভঙ্গির পরিচয় দিতেন, তাহলে এমন ভয়াবহ সমস্যার মোকাবেলা করতে হতো না। তাছাড়া, শক্তিশালী শ্রমিক সংগঠনের প্রতি চ্যালেঞ্জ দিয়ে তো সমস্যার সমাধান করা যায় না। সমস্যার ভার লাঘব করার জন্য আপোষ-মীমাংসাই ছিল অন্যতম সুরাহা। নির্বাচনের পর যদি শ্রমিক বিরোধ মেটানোর সম্ভব হয়, তবুও অর্থনৈতিক ক্ষতিকে সম্পূর্ণভাবে পুষিয়ে নেয়া যাবে না। গত তিন বছর ধরেই ব্রিটেনে অর্থনৈতিক দেউলে-দশা ক্রমাগত ঘনীভূত হচ্ছে। এই অর্থনৈতিক সংকটের চিত্রকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী হীথ কয়লা শ্রমিকদের আন্দোলনকে ব্যবহার করতে প্রয়াসী হয়েছেন। কিন্তু এতে কি নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দেয়া যাবে? নির্বাচকরা কি প্রধানমন্ত্রী হীথের এই ছলা-কলাটা আদৌ কাজ করতে ব্যর্থ হবেন?
ব্রিটেনে বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির রয়েছে অব্যাহত। শ্রমিক বিরোধিতা তীব্র হয়ে উঠেছে। এই অবস্থা আগামী ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত চলতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় হীথ সাহেবের সামনে এক সংকটময় দিনই অপেক্ষা করছে। সংকটের চিত্রটা এতই প্রকট যে, হীথ সাহেবকে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ঘোষণা করতে হয়েছে সাধারণ নির্বাচন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ব্রিটেনে আর এমন ঘোরতর দুর্দিন দেখা যায় নি। অতএব, এবারের নির্বাচনের রায় কি হয়, তা এখনই বলা মুশকিল। তবে শ্রমিক অসন্তোষ বিরাজিত রেখে কোনো সমস্যারই সমাধান সহজতর হবে না। প্রধানমন্ত্রী হীথ শ্রমিকদের সম্পর্কে তার অটল মনোভঙ্গির পরিবর্তন না ঘটালে, বৃটেনের জনগণ সুদিনের মুখ দেখতে পাবে, এই ভরসা বড়ক্ষীণ।

ব্যাটারি শিল্পে সঙ্কট

জিংক সিটের অভাবে ৪৫টি ব্যাটারি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এই সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে গতকালের ‘বাংলার বাণী’তে। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে যে, বর্তমানে দেশে প্রায় ৫০টি ব্যাটারি সেল প্রস্তুতের ক্ষুদ্র কারখানা রয়েছে তন্মধ্যে এখন মাত্র ৫টি চালু রয়েছে। কিন্তু তাদের উৎপাদনের পরিমাণও নগণ্য। রাষ্ট্রায়ত্ত জিংকসিট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রহিম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজে উৎপাদন বন্ধের দরুনও এ সংকটের উদ্ভব হয়েছে। সংবাদ অনুসারে সব ব্যাপারটা দুয়ে দুয়ে চারের মতোই হয়ে দাঁড়িয়েছে। রহিম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ বন্ধ। সুতরাং জিংকসিট নেই। জিংক সিট না থাকায় ব্যাটারি কারখানাও বন্ধ। আমরা জানি না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দুয়ে দুয়ে চারের হিসাব নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবেন না হিসাবের পরের হিসাব মেলাতে এগিয়ে আসবেন।
আমরা বরাবরই দেখেছি যে, নাকে দম না এলে কারো হুশ হয়না। তাই যদি না হবে তাহলে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রহিম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজে যাতে উৎপাদন বন্ধ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন ছিল। ব্যাটারি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। ব্যাটারি ছাড়া আজকের জীবন অচল। ট্রানজিস্টার বন্ধ। বিদ্যুৎ চলে গেলে টর্চ জ্বালবারও কোনো উপায় নেই। এমনি হাজারো প্রয়োজন রয়েছে। তাছাড়া জিংকসিটের অভাবে কারখানাগুলো বন্ধ হলে ব্যাটারি আমদানির জন্য আবার বিদেশের দুয়ারে ধর্ণা দিতে হবে। এগুলো বুঝেও যেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বুঝতে চান না। চান না বলেই সমস্যা বাড়ে বৈ কমে না। আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটু চোখ কান খোলা রাখবেন। মানুষের দুর্ভোগ না বাড়িয়ে দুর্ভোগের মাত্রা কমানোটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!