You dont have javascript enabled! Please enable it!
রজতজয়ন্তীর অনুভূতি ও একটি প্রতিবাদ
অবসর মুহূর্তে যখন আমি অতীতের পানে তাকাই, তখন হতবাক হয়ে যাই। এক জীবনে আমার তিন তিনটি ভিন্নধর্মী পরিচয়। অথচ একাত্তর পরবর্তী ছাড়া বাকি দুটোর কোনটাই আমার ইচ্ছাকৃত নয়। সবই হয়েছে ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহে। সেই কবে ১৯২৯ সালের ৯ আগস্ট রােজ শুক্রবার বাদ জুমা আমার জন্ম হয়েছিল; তখন জন্মসূত্রে আমার পরিচয় হলাে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান’ (নেটিভ) হিসাবে। সরকারী নথি এবং পাসপাের্টেও সেই মােতাবেক পরিচয় লেখা থাকতাে। যখন বুঝতে শিখলাম এবং স্কুলের ছাত্র তখন পদে পদে হোঁচট খেলাম। হেড মৌলভী সাহেবের প্রশ্ন হচ্ছে, তুই। মুসলমানের ছেলে হয়ে সংস্কৃত পড়িস কেন? জানিস না, সংস্কৃত হচ্ছে বিধর্মীরি ভাষা? আর হেড পণ্ডিত মশায়ের বক্তব্য হচ্ছে, তুই তাে মুসলমান; তুই আবার সংস্কৃত পড়তে এলি কেন? জানিস না, তােকে পড়াবার পর আমাকে আবার ভর সন্ধ্যাবেলায় চান করতে হয়?  কোথাও তর্ক করতাম না। নানা অছিলায় এড়িয়ে যেতাম। সত্যিকারভাবে বলতে গেলে ইংরেজ ভারতের বাঙালী সমাজে আমরা ছিলাম “অচ্ছুৎ। সর্বত্র তখন উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দারুণ দাপট। আমার মনে নানা প্রশ্ন আমরা বাঙালী মুসলমানরা বাংলা ভাষায় কথা বলি এবং বাংলা ভাষা, সাহিত্য, কৃষি ও লােকাচার নিয়ে গর্ব অনুভব করি। অথচ এক শ্রেণীর হিন্দু ধর্মীয় মৌলবাদীর দল কিছুতেই আমাদের বাঙালী” হিসাবে স্বীকৃতি পর্যন্ত প্রদান করবে না। এ কেমন কথা? মনে বড় কষ্ট পেতাম। তখনও পর্যন্ত “ধর্ম” এবং “জাতির” তফাৎ সঠিকভাবে বুঝতে পারিনি। যেখানে মানব সমাজে ধর্মের স্থান অনেক উপরে এবং ধর্ম হচ্ছে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক ব্যাপার; সেখানে ‘জাতি হচ্ছে শুধুমাত্র ইহলৌকিক বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ একথাগুলাে আমাকে কেউ গুছিয়ে পর্যন্ত বলেনি ।
আবার এ কথাটাও কেউ সােচ্চার কণ্ঠে উচ্চারণ করেনি যে, শুধুমাত্র ধর্মকে ভিত্তি করে একটা জাতি গঠন হতে পারে না। তাই বাঙালী হিন্দু’ কিংবা ‘বাঙালী মুসলমান’ কিছুতেই ‘জাতি’ হতে পারে না। এসব কোন অবস্থাতেই জাতির সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয়। এসবই হচ্ছে ধর্ম এবং জাতি’র ভ্রমাত্মক ব্যাখ্যা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সমাপ্তির সময় আমি দিনাজপুরে সবেমাত্র কলেজের ছাত্র। এ সময় মওলানা আব্দুল্লাহেল বাকীর নেতৃত্বে একদল মুসলিম মৌলবাদী নেতা আমাদের বােঝালেন যে, ধর্মই হচ্ছে জাতীয়তাবাদের মূল ভিত্তি। সুতরাং মুসলমানরা একটা পৃথক ‘জাতি’। তাই ইংরেজরা এদেশ থেকে চলে যাবার সময় উপমহাদেশকে খন্ডিত করে। মুসলমানদের জন্য পৃথক ‘পাকিস্তান’ নামক রাষ্ট্র দিতে হবে। এঁদের উচ্চারিত স্লোগান। হচ্ছে :
‘হাত মে বিড়ি, মু মে পান;
লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান
 
স্বল্প দিনের ব্যবধানে দিনাজপুর গােরাশহীদ ময়দানে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লগের জেনারেল সেক্রেটারি জনাব আবুল হাশিমের এক জ্বালাময়ী বক্তৃতায় আমরা উদ্বুদ্ধ হলাম। তিনি এমর্মে বললেন যে, হিন্দু জমিদার ও হিন্দু মহাজনদের লাগামহীন শােষণের হাত থেকে নিপীড়িত বাঙালী মুসলিম কৃষক সমাজকে বাঁচাবার জন্য ‘পাকিস্তান’ কায়েম করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কলেজের ছাত্র হিসাবে আমরাও ঝাপিয়ে পড়লাম ‘পাকিস্তান আন্দোলনে’। ১৯৪৬ সালে অনুষ্ঠিত হলাে সাধারণ  নির্বাচন বঙ্গীয় এলাকায় মুসলিম লীগের জয়জয়কার। প্রাদেশিক পরিষদে ১১৯টি মুসলিম আসনের মধ্যে ১১৬টিতে বিজয়ী এ সময় হিন্দু ও মুসলিম মৌলবাদীদের কর্মকাণ্ডে সমাজের প্রতিটি স্তরে সাম্প্রদায়িকতার স্লোগান একেবারে তুঙ্গে। ফলে সমগ্র উপমহাদেশে শুরু হলাে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগ। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট। আমি তখন সবেমাত্র স্নাতক ক্লাসের ছাত্র। এ সময় উপমহাদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়ে পাকিস্তান নামক এক ধর্মীয় রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলে আমরাও সেই নতুন রাষ্ট্রের নাগরিক হলাম। এবার আমার নতুন পরিচয় হলাে “পাকিস্তানী” হিসাবে। কিন্তু আমরা বাঙালীরা যাকে ‘সােবহ সাদেক’ ভেবেছিলাম, আসলে তা ছিল আমাদের জন্য সােবে কাজের’। অর্থাৎ আমরা যাকে ভােরের আলাে’ ভেবেছিলাম, তা ছিল রাতের অন্ধকার’। অচিরেই বুঝতে পারলাম যে, পাকিস্তানে আমরা বাঙালীরা মােট জনসংখ্যার শতকরা ৫৬ ভাগ হওয়া সত্ত্বেও অবাঙালী মুসলিম শাসকগােষ্ঠী ছলে, বলে, কৌশলে আমাদের দাবিয়ে রাখতে চায়  বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য, বাংলা কৃষ্টি আর  বাংলা লােকাচারের দারুণ দুর্দিন। চারদিকে শুধু তাহজির ও তমদুনের ডঙ্কা নিনাদ সরকারী চাকরি থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য সর্বত্র বাঙালীরা হলাে অবহেলিত আর  বঞ্চিত। আমরা মর্মে মর্মে অনুভব করলাম, ‘পাকিস্তান’ নামক রাষ্ট্রে বাঙালী জনগােষ্ঠী। হচ্ছে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। প্রতি পদে পদে দারুণভাবে নিগৃহীত হলাম এভাবেই দীর্ঘ ২৪ বছর।
 
আমার যৌবনের শ্রেষ্ঠ বছরগুলাে নিঃশেষ হয়ে গেল। এরপরেও একটা “কিন্তু” থেকে গেল। ১৯৪৭-৪৮ সাল থেকেই বাঙালীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে শুরু হলাে ধাপে ধাপে রাজনৈতিক আন্দোলন। শেরে বাংলা ফজলুল হক, হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী আর মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী থেকে শুরু করে বহু নেতার আগমন হলাে রাজনৈতিক মঞ্চে। কিন্তু নানা ঘটনা প্রবাহে এঁরা সবাই “অসম্পূর্ণ থেকে গেলেন। কেবলমাত্র একজন আপােসহীন ও অকুতােভয় রাজনীতিবিদ ইতিহাসের সােপান বেয়ে উঠে এলেন। জেল-জুলুম আর রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযােগে দুই দুইবার ফাঁসির আসামী হয়েও তিনি অভীষ্ট লক্ষ্যে অবিচল রইলেন এবং  শেষ অবধি তাঁরই সফল কর্মকাণ্ডে একাত্তরের রক্তাক্ত স্বাধীনতাযুদ্ধে অভ্যুদয় হলাে।  স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের। ইনিই হচ্ছেন বাংলাদেশের বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  ৪২ বছর বয়সে আমি সত্যিকার অর্থে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক হলাম। কিন্তু মাত্র ৪৪ মাসের ব্যবধানে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভাের রাতে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হলে আবার “অন্ধকার যুগে প্রবেশ করলাম। দেশের নাম বাংলাদেশ থাকলেও কার্যত বছরের পর বছর ধরে প্রশাসন আর সরকার পরিচালিত হলাে একেবারে পাকিস্তানী ধাঁচে’ এর পাশাপাশি নয়াদিল্লীর দক্ষিণপন্থী মহলে তখন ‘চাপা উল্লাস। এই বছরগুলােতে ভারতকে দেয়া হলাে অঢেল বাণিজ্যিক সুযােগ-সুবিধা বাংলাদেশের বাজার ভারতীয় পণ্যে সয়লাব হয়ে গেল। এদিকে বারংবার সংশােধন করায় বাংলাদেশের সংবিধানের চেহারাটাই কদর্য’ হয়ে দাঁড়াল ক্ষমতাসীন দলগুলাের পৃষ্ঠপােষকতায় শান্তি ও শৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতির হলাে চরম অবনতি সর্বত্র শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করলাম স্বৈরাচারী শাসনের তীব্র জ্বালা। এমনিভাবে ঠিক একুশটি বছর- “খন্দকার থেকে খালেদা” অর্থাৎ খন্দকার-সায়েম-জিয়া-সাত্তার-এরশাদ-খালেদার শাসনামলের “অন্ধকার যুগ”। অবশেষে ১৯৯৬ সালের প্রথমার্ধে দেশব্যাপী রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী খালেদা সরকারকে পতনের প্রেক্ষিতে গঠিত হলাে এক তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর এই সরকারের অধীনে ১২ জুনে অনুষ্ঠিত হলাে এক নিরপেক্ষ নির্বাচন। এবং সবশেষে জনগণের রায়ে ক্ষমতাসীন হলাে শেখ হাসিনার জাতীয় ঐকমত্যের সরকার।
 
সেদিনের তারিখটা ছিল ২৩ জুন। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে পিছনের দিকে তাকালাম। আমার জীবনের আরও একুশটা বছর চলে গেছে। আমার বয়স এখন ঠিক ৬৭ বছর। এই ৬৭ বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের মাত্র ৪৪ মাস ছেড়ে দিলে পুরাে সময়টাই আমার দুর্বিষহ জীবন কখনও ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান নেটিভ; কখনও পাকিস্তানের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক; আবার কখনও বা ‘খন্দকার থেকে খালেদা’র চোখে অপাঙক্তেয় মানুষ  তবুও আমি নৈরাশ্যবাদী নই। ১৯৭১ সালে যেমন ‘আমি বিজয় দেখেছি’, ঠিক তেমনিভাবে ১৯৯৬ সালে এসে আমি স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ’ দেখেছি। সবচেয়ে বড় কথা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আবার যখন ক্ষমতাসীন তখন আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের রজতজয়ন্তী দেখেছি। আমার জীবনের সার্থকতা এখানেই। হে স্বাধীনতা যুদ্ধের রজতজয়ন্তী লহ সালাম। পাদটিকা ও প্রতিবাদ ও বিষয়টি গুরুতর এবং বিষয়টি ভাববার প্রশ্নটি হচ্ছে কোন রকম সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়াই টাঙ্গাইলে সশস্ত্র পুলিশ ও বিডিআর বাহিনী গভীর রাতে জনাব কাদের সিদ্দিকী এমপি’র পৈতৃক বাড়ির গেট ভেঙ্গে বাড়ি সার্চ করেছিল কিনা? যদি তাই-ই হয়, তাহলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সমর্থক হিসাবে আমরা সাধারণ নাগরিকরা মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ কেননা একজন বীর মুক্তিযোেদ্ধা ও বীরােত্তম’ খেতাবপ্রাপ্ত ছাড়াও জাতীয় সংসদের একজন মাননীয় সদস্যের প্রতি জেলা প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এহেন আচরণ একবার প্রতিষ্ঠিত হলে, এর শেষ কোথায় কেউ বলতে পারে না। আমরা সন্ত্রাস দমন আইনের দাপট দেখছি। এখন এটা আবার কোন্ ধরনের ঘটনা?
সাধারণ নাগরিক হিসাবে আমরা আতঙ্কিত এবং দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবশ্য জনাব সিদ্দিকীর বাড়িতে বেআইনী অস্ত্র আছে, এই অজুহাতে বিনা ওয়ারেন্টে বাড়ি সার্চের ব্যাপারটাও ধােপে টিকে না। একজন বীরােত্তমের প্রতি একি ন্যক্কারজনক ব্যবহার? এ তাে বীরােত্তম উপাধির প্রতি অবমাননা। কারণ দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা ধরে বাড়ি সার্চের পরেও কোন বেআইনী অস্ত্র পাওয়া যায়নি। এটাই হচ্ছে বাস্তব সত্য। আপাতদৃষ্টিতে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ব নিয়ে খন্দকার মােশতাক মন্ত্রিসভার সাবেক মন্ত্রী আব্দুল মান্নান এমপি ও সাধারণ নির্বাচনে পরাজিত আওয়ামী লীগ নেতা ও শাহজাহান সিরাজ সমর্থিত শামসুর রহমান বনাম কাদের সিদ্দিকী এমপি’র কোন্দল বলা হলেও জেলা প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘আক্রোশ’ অন্যত্র মনে যেখানে সম্প্রতি যশােরে কারাবিদ্রোহ দমন করতে রাজনৈতিক দলগুলাের সালিশী। ব্যর্থ হওয়ার পর সশস্ত্র বিদ্রোহী ও পুলিশ বিডিআরের সংঘর্ষে পুলিশসহ ৯ জন নিহত হয়েছে; সেখানে টাঙ্গাইল কারা বিদ্রোহের সময় কাদের সিদ্দিকী এমপি কারাগারে প্রবেশ করে শুধুমাত্র আলােচনার মাধ্যমে বিরােধ নিষ্পত্তি করায় জেলা প্রশাসন তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজেদের “হেয়” মনে করেছে।
 
ফলে ‘আক্রোশের বহিপ্রকাশ হিসাবেই জেলা আওয়ামী লীগের কোন্দল ও বােমাবাজিকে সুনিপুণভাবে ‘অছিলা’ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং বিনা সার্চ ওয়ারেন্টে কাদের সিদ্দিকী এমপি’র বাড়ি সার্চ ইত্যাকার ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। অবশ্য জেলা পর্যায়ে আরও কিছু কারণ বিদ্যমান। এসবের মধ্যে ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিল পেমেন্টের সময় সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মচারীরা আশানুরূপ ‘মার্জিন’ রাখতে পারছেন না এবং পরিবহন মালিকরাও নিয়মিত পেমেন্ট দিচ্ছেন না ইত্যাদি অন্যতম  উপরন্তু টাঙ্গাইল জেলায় তৃণমূল পর্যন্ত কাদের সিদ্দিকীর প্রভাব অব্যাহত থাকায় আওয়ামী লীগের দক্ষিণপন্থী গােষ্ঠী ছাড়া বামপন্থী মহলেরও দারুণ মাথাব্যথা’। কেননা সমগ্র টাঙ্গাইল জেলার কোথাও মার্কসিস্টরা শিকড় গাড়তে পারেনি বা পারছে না। এজন্যই পুলিশ ও বিডিআর কর্তৃক বিনা সার্চ ওয়ারেন্টে একজন সংসদ সদস্যের বাড়ি সার্চ করার ঘটনায় প্রগতিশীল সংবাদপত্রগুলােতে পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অভিনন্দন  জানানাে হয়েছে। সর্বত্র দলীয় ও গােষ্ঠী স্বার্থ। তবে সুখের কথা এই যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টাঙ্গাইলের ঘটনায় এখনও নিরপেক্ষ রয়েছেন।  এ ধরনের এক প্রেক্ষাপটে আর একটা বিষয় আমাদের বিচলিত করেছে। এটি মাননীয় রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ সম্পর্কিত। তিনি গেল ৩১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের বইরাতলীর সফর ইতঃস্তত অবস্থায় বাতিল করেছেন। এই বইরাতলীতে স্বাধীনতাযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর শহীদ মুক্তিযােদ্ধাদের স্মরণে স্মৃতিসৌধের উদ্বোধন করার কথা ছিল ইতােপূর্বেও আমরা লক্ষ্য করেছি যে, মাননীয় রাষ্ট্রপতি একাত্তরের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার এবং পরবর্তীকালের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করলেও একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের চার জাতীয় নেতার কবর জিয়ারত করেননি এবং ব্যুরােক্রেসির পরামর্শে ১৬ ডিসেম্বরে বঙ্গভবনের বিজয় দিবসের | সংবর্ধনায় স্বাধীনতা-বিরােধী বিতর্কিত ব্যক্তিদের পর্যন্ত আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
সবশেষে হুঁশিয়ারির কথা। কেননা অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে, মতিন চৌধুরীর উত্তপ্ত  নিঃশ্বাস এখনও পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একথাটা বলতেই হচ্ছে যে, “চুন খেয়ে আমাদের মুখ পুড়েছে, তাই এখন দই দেখলেও ভয় লাগে”। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার প্রাক্কালে ১৯৭৫ সাল নাগাদ যেমন করে মুজিবনগরের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদসহ বিপুল সংখ্যক মুক্তিযােদ্ধাকে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল; ঠিক তেমনিভাবে ১৯৯৬ সালে এসে ঐকমত্যের সরকারের কথা বলে বিতর্কিত ব্যক্তিদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ঠেলে দিয়ে, কাদের সিদ্দিকীসহ মুক্তিযােদ্ধাদের এক বিরাট অংশকে তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার এক সুদূর প্রসারী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলা যায়। মনে রাখা দরকার যে, কাদের সিদ্দিকী যখন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় দুর্বিষহ নির্বাসিত জীবন যাপন করছিলেন, তখন মান্নান-মােমেন দিব্যি মােশতাক মন্ত্রিসভার মন্ত্রী হয়েছিলেন। সুতরাং আবারও বলতে হচ্ছে যে, বিষয়টি গুরুতর এবং বিষয়টি ভাববার। 

সূত্রঃ   একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা – এম আর আখতার মুকুল

 
error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!