মুক্তিবাহিনীর সপ্তাহব্যাপী আক্রমণে বাঙলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে ২১৮ জন পাকসৈন্য খতম
মুজিবনগর, ২৩ অক্টোবর গত এক সপ্তাহের মধ্যে বাঙলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীর দুর্বার আক্রমণে ২১৮ জন পাকসৈন্য ও রাজাকার নিহত হয়েছে।
ইউ,এন,আই, মুক্তিবাহিনীর সূত্রে প্রাপ্ত সংবাদে ভিত্তিতে জানাচ্ছে, গত পাঁচদিনের কুষ্টিয়া জেলায় ডিনামাইন ও মাইন বিস্ফোরণের মাধ্যমে দুটি বিশেষ সামরিক ট্রেন এবং একটি যান উড়িয়ে দিয়ে মুক্তিবাহিনী কমপক্ষে ৮৩ জন পাকসৈন্য খতম এবং অন্যান্য বহু সৈন্য জখম করেছেন।
২১ অক্টোবর জনৈক কাপ্টেন সহ ৬ জন পাক সৈন্য মেহেরপুরের কাছে কামদেবপুর এবং কালচঁদপুর মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে। মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা কুষ্টিয়া জেলার গিবনগর ও গানজানি এলাকায় বৈদ্যুতিক তার সংযােগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করেছেন। ২১ অক্টোবর কুষ্টিয়ার টেলিফোন এক্সচেঞ্জ একটি বােমা বিস্ফোরণের দরুন কুষ্টিয়া ও ঢাকার মধ্যে টেলিফোন ব্যবস্থা ১৮ ঘন্টাব্যাপী ব্যাহত হয়। টেলিফোন এক্সচেঞ্জটি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মুজিবনগরের বাঙলাদেশ বাহিনীর প্রধান কার্যালয় থেকে আমাদের স্টাফ রিপাের্টার কর্তৃক প্রাপ্ত সংবাদ অনুসারে, কুষ্টিয়া যশাের-খুলনা রণাঙ্গনে ১৯ অক্টোবর তারিখে দুলাহাটিতে একটি পাক টহলদার বাহিনীকে অতর্কিতে আক্রমণ করে মুক্তিযােদ্ধারা ৪ জন শত্রুসৈন্য খতম এবং ৩ জনকে জখম করেন। ঐ একই দিনে প্রায় এক প্লাটুন শত্রুসৈন্যকে অনুরূপভাবে আক্রমণ করে মুক্তিবাহিনী ৩ জনকে খতম এবং ৫ জনকে আহত করে। তার আগে ১৮ অক্টোবর যশাের জেলার ঝিকরগাছা পােস্ট অফিসের অধীনে সিমলা এলাকায় ২ জন পাকসৈন্য নিহত করে মুক্তিবাহিনী তাদের কাছ থেকে দুটি রাইফেল ছিনিয়ে নেয়।
ময়মনসিংহ-শ্রীহট্ট-মৌলভীবাজার রণাঙ্গনে ২০ অক্টোবর তেরিখালিতে হানাদারদের উপর মর্টার আক্রমণ হেনে মুক্তিযােদ্ধারা ৩০ জন শত্রু সৈন্য খতম করেন এবং সকল বাঙ্কার ধ্বংস করেন। ঐ একই দিনে দিগরাইল অঞ্চলে সারি নদী পার হওয়ার সময় পাকসৈন্যরা মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের সম্মুখীন হয় এবং ৫ জন পাক সৈন্য সহ একটি নৌকা এর ফলে ডুবে যায়। ২১ অক্টোবর গেরিলারা মুন্নি-বেয়মারির মধ্যে টেলিফোন লাইন উপড়ে ফেলেন। এর আগে ১৮ অক্টোবর দক্ষিণ ছাতক অঞ্চলে পাক বাহিনীকে অতর্কিতে আক্রমণ করে গেরিলারা তিনটি লঞ্চ এবং তিনটি দ্রুতগামী বােট ডুবিয়ে দেন। এই আক্রমণে পাক-বাহিনীর প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রণাঙ্গনে ১৯ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী মিরপুর অঞ্চলে একটি পাক টহলদার বাহিনীকে অতর্কিতে আক্রমণ করে ২ জন শত্রু সৈন্য খতম করেন। এর আগে ১৮ অক্টোবর মাতুয়া অঞ্চলে শত্রু শিবিরে হানা দিয়ে গেরিলারা দুজন শত্রু সৈন্যকে নিহত করেন। এই আক্রমণে তিনজন পাক সৈন্য জখম হয়। ১৬ অক্টোবর সােনারপু অঞ্চলে প্রায় এক প্লান্টুন পাক হানাদার সৈন্যকে আক্রমণ করে ২ জন শত্রু সৈন্য খতম করা হয়। নােয়াখালি জেলার ছাগলনাইয়াতেও অনুরূপ আক্রমণে ৭ জন পাকসৈন্য খতম এবং ৭ জন আহত হয়। ১৫ অক্টোবর নােয়াখালী জেলার পশুরামে টহলদার শত্রু সেনাদের অতর্কিতে আক্রমণের ৫ জন হানাদার খতম এবং ৩ জনকে জখম করা হয়।
রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী রণাঙ্গনে দিনাজপুর জেলার অমরখানা অঞ্চলে পাকবাহিনীর সঙ্গে মর্টার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে মুক্তিযোেদ্ধারা ৪ জন শত্রু সৈন্য খতম করেন। এর আগে ১৮ অক্টোবর ঐ একই এলাকায় হানাদারদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ হেনে মুক্তিবাহিনী ২ জনকে খতম এবং ৫ জনকে আহত করে। একই দিনে দিনাজপুর জেলার চৌঘাটে হানাদারদের মর্টার আক্রমণ হেনে ৩ জন শত্রু সৈন্যকে মুক্তিযযাদ্ধারা খতম করেন। ১৬ তারিখ রাত্রে রংপুর জেলার চিলামারিতে একটা রাজাকার অনুশীলন শিবির আক্রমণ করে ৬৩ জন রাজাকারকে খতম করা হয় এবং প্রচুর সংখ্যক অস্ত্রশস্ত্র দখল করা হয়।
সূত্র: কালান্তর, ২৪.১০.১৯৭১