১৬ মে ১৯৭১ আওয়ামী লীগ স্বায়ত্তশাসনের দাবীকে স্বাধীনতার পর্যায়ে ঠেলে নিয়ে গেছে – ৫৫ জন বুদ্ধিজীবী
নোটঃ বিবৃতিটি তৎকালীন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর করা। স্বাক্ষর আদায় তারা নিজে করেছে। রাজাকার শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন তার বইয়ে লিখেছেন একজন আইএসআই কর্মকর্তা ঘুরে ঘুরে এই স্বাক্ষর আদায় করেছিলেন।
ঢাকায় ৫৫ জন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক,কলেজ শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক ও শিল্পী এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, গত মার্চে দেশের প্রতিষ্ঠিত বৈধ সরকারকে অমান্য করার কাজ পুরোদমে চলছিলো। নির্বাচনে জনগণের কাছ থেকে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন আদায়ের ম্যান্ডেট পেয়ে চরমপন্থীরা স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণার দাবিতে সম্প্রসারিত ও রূপায়িত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলো। যারাই জনতার অর্পিত আস্থার প্রতি বিশ্বাস ঘাতকতায় অনিচ্ছা প্রকাশ করেছে তাদের ওপর দুর্দিন নেমে এসেছিল। এ সময় ব্যাপকভাবে শিক্ষা অঙ্গনকে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির কাজে অপব্যবহার করা হতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে বাংলাদেশ মুক্তি ফৌজের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও সমরাস্ত্রের গোপন ঘাঁটিতে পরিণত করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানের শাসন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আমাদের অভাব-অভিযোগ রয়েছে। আমাদের এই অসন্তোষ আমরা প্রকাশ করেছি একই রাষ্ট্র কাঠামোর আওতায় পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ব্যাপক স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ভোট দিয়ে। কিন্তু আওয়ামী লগের চরমপন্থীরা এই সহজ সরল আইনসঙ্গত দাবিকে একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণার দাবিতে রূপান্তরিত করায় আমরা মর্মাহত হয়েছি। আমরা কখনও এটি চাইনি, ফলে যা ঘটেছে তাতে আমরা হতাশ হয়েছি। পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু প্রদেশ হিসেবে সারা পাকিস্তানকে শাসন করার অধিকার আমাদের আছে। আর তা আমাদের আয়ত্বের মধ্যেই এসে গিয়েছিল।
কিন্তু ঠিক তখনই চরমপন্থীরা জাতীয় অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুললো। নেমে এলা জাতীয় দুর্যোগ। কিন্তু আমাদের ভবিষৎ সম্পর্কে আশাবাদী হবার সঙ্গত কারণ রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত বর্তমান সরকার অবস্থা অনুকূল হবার সাথে সাথে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু করার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন। এ অবস্থায় আমরা আমাদের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে কোনো রকম হস্তক্ষেপের বিরোধিতা ও নিন্দা করছি। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন: ড. সাজ্জাদ হোসেন, প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ, মীর ফখরুজ্জামান, ড. কাজী দীন মোহাম্মদ, নূরুল মোমেন, জুলফিকার আলী, আহসান হাবিব, খান আতাউর রহমান, আশকার ইবনে শাইখ, ড. মোহর আলী, ড. আশরাফ সিদ্দিকী, মুনির চৌধুরী, এ. এইচ. চৌধুরী, আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম, শাহনাজ বেগম, ফরিদা ইয়াসমিন, আবদুল আলিম, খন্দকার ফারুক আহমদ, এম.এ. হামিদ, নীনা হামিদ, লায়লা আর্জুমান্দ বানু, শামসুল হুদা চৌধুরী, বেদারুদ্দিন আহমদ, সাবিনা ইয়াসমিন, ফেরদোসী রহমান, মোস্তফা জামান আব্বাসী, সরদার জয়েনউদ্দীন, সৈয়দ মুরতাজা আলী, কবি তালিম হোসেন, শাহেদ আলী, কবি আবদুস সাত্তার, ফররুখ সিয়ার, কবি ফররুখ আহমদ, সম্পাদক আবদুস সালাম, সম্পাদক বদরুদ্দিন, সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন, ফতেহ লোহানী, হেমায়েত হোসেন, বি রহমান, মবজুলুল হোসেন, আকবর উদ্দিন, এ.এফ.এম আবদুল হক, অধ্যক্ষ এ.কিউ.এম আদমউদ্দিন, আলী মনসুর, কাজী আফসারউদ্দিন আহমদ, সানাউল্লাহ নূরী, সামশুল হক, সরদার ফজলুল করিম, বদিউজ্জামান, শফিক কবির, ফওজিয়া খান ও লতিফা চৌধুরী।