বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ২০শে মে, সোমবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩৮১
ভারতের প্রথম পারমাণবিক বিস্ফোরণ
ভারত পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। রাজস্থান মরুভূমির একশ’ মিটার গভীরে ভূগর্ভে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ভারতের আণবিক শক্তি কমিশন জানিয়েছেন আনবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের কার্যক্রম অনুযায়ী ভারত তার এই প্রথম আণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। ভারতের আণবিক বিস্ফোরণ বিভিন্ন দেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। সোভিয়েত বার্তা সংস্থা তাস বলেছে পারমাণবিক শক্তির কাজে ব্যবহারের জন্যই এই বিস্ফোরণ। জাপান পারমাণবিক বিস্ফোরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেও আশা প্রকাশ করেছে এটা উপমহাদেশের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সমঝোতা ও স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করবে না। চীন এখনো কোনো মন্তব্য করেনি কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের এই পারমাণবিক বিস্ফোরণের দুঃখ প্রকাশ করেছে।
ভারত পারমাণবিক শক্তি অর্জনকারী ষষ্ঠ দেশ। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং চীন এই শক্তি অর্জন করে। এদের তুলনায় ভারত দরিদ্রতম একটি দরিদ্র দেশের পক্ষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যায় এমন সাফল্য অর্জন সম্ভব ভারতই তার প্রথম প্রমাণ করলো। এজন্য সে দেশের বিজ্ঞানীরা অবশেষে কৃতিত্ব ও গৌরব দাবি করতে পারেন। ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র । প্রতিবেশী চীনও। দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পারমাণবিক শক্তি অর্জন স্বাভাবিকভাবেই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পারমাণবিক শক্তির যে সব সময় ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহৃত হতে পারে এমনটি ভাববার কোনো কারণ নেই। এটি নির্ভর করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের উপর। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী তার দেশের পারমাণবিক বিস্ফোরণ সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বলেছেন, পারমাণবিক শক্তি কে শান্তির কাজে ব্যবহারের গবেষণারই এ এক ফল শ্রুতি। তিনি বলেন, ভারত পারমাণবিক শক্তিকে শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ভিত্তিতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিগত বৎসরগুলোতে ভারতের ভূমিকা শান্তি বিরোধী অথবা ধ্বংসাত্মক খাতে প্রবাহিত হয় নি। সে দেশের নেতৃত্ব শান্তি আন্দোলনের যথেষ্ট বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাই মিসেস গান্ধীর পারমাণবিক শক্তিকে শান্তিপূর্ণ অগ্রগতিতে ব্যবহারের ঘোষণা ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে আশ্বস্ত করবে। পাশাপাশি আরেকটি দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। শান্তি বিরোধী কোনো শক্তি যাতে করে এতদঞ্চলের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে সেজন্য অব্যাহত রাখতে হবে শান্তি আন্দোলন, একে আরও জোরদার করতে হবে।
কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক