বাঙালিদের জন্য আনার মাতম
ষাটের দশকে কলেরা গবেষণার জন্য মহাখালীর মোড়ে স্থাপিত হয় কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরি। সংক্ষেপে ইংরেজিতে সি আর এল। এখন সংস্থাটি পরিচিত আই সি ডি ডি আর বি নামে। কলেরা রিসার্চে তখন গবেষকদের অধিকাংশই ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের যেমন, গ্রীনো, ডেভিড নালিন, জিম টেইলর প্রভৃতি। এরা অনেকে বাংলা শিখেছিলেন, বাঙালিদের প্রতি টান ছিল তাদের এবং তারাই ১৯৭১ সালে আমেরিকাতে বাংলাদেশের পক্ষে রাস্তায় নেমেছিলেন।জিম টেইলরের স্ত্রী আনা টেইলর, দুই বাংলায় তার যাতায়াত ছিল। বাঙালি বন্ধু ছিল অনেক। বৌদ্ধ ধর্মের অনুরাগী ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের পক্ষে আনা যা করলেন তা অনেকেই জানি না। তার কারণেই আমেরিকানরা বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। ঢাকায় কী ঘটছে অন্যেরা তা জানতেন। তাঁর স্বামী ঢাকা থেকে ফিরে সে বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। গণহত্যা চলছে। তার খবরাখবর প্রতিদিন ছাপা শুরু হয়েছে। দু’একজন করে বাঙালি বিভিন্ন জায়গায় উদ্যোগ নিচ্ছেন কিছু। কলেরা রিসার্চের যারা ছিলেন তারা উদ্যোগ নিচ্ছেন কিছু একটা করার। তখন আনা কারো জন্য অপেক্ষা করলেন না। ৯মে পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে একাই বসে গেলেন অনশন ধর্মঘটে। সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান দূতাবাস আপত্তি। জানালে, কর্তৃপক্ষ আনাকে সরিয়ে দেয়। ১৪ মে আনা এবার লাফায়েৎ পার্কে অনশন শুরু করলেন। মহসীন সিদ্দিকী লিখেছেন, আনার দরকারি জিনিষপত্র, প্ল্যাকার্ড প্রভৃতি তিনি নিয়ে আসতেন। আনার সঙ্গে যোগ দিলেন সি আর এলের প্রাক্তন গবেষক টাউনসেন্ড সোয়াইজি ও তার পরিবার, বাঙালি এনায়েতুর রহিম ও তার পরিবার। আস্তে আস্তে মানুষ জড়ো হতে লাগল। পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলো। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন তরুণ তরুণীরা এরকম প্রতিবাদ করেছিল। তারপর ঐ ধরনের প্রতিবাদ এই প্রথম।| আনার আদি বাস পোল্যান্ডে। ইহুদী হওয়ার কারণে তার পরিবারকে নাৎসীরা বের্গেন বেলসেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তাঁর পিতাকে মেরে ফেলা হয়। আনা ও তার মা বেঁচে ছিলেন। ব্রিটিশরা তাদের উদ্ধার করে। পরে চলে তাঁরা আসেন যুক্তরাষ্ট্রে। প্যাসিফিস্ট ছিলেন তিনি।
বাঙালিদের গণহত্যা বোধহয় তাঁকে বের্গেন বেলসেনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। আনা একটি লিফলেট বিলি করেছিলেন। এতো কাব্যিক এতো চমৎকার হৃদয় নিংড়ানো লেখা খুব কমই দেখেছি (বিদেশী ভাষায়)। | এর প্রথম লাইন ছিল “আমি মৃতদের জন্য নয়। জীবিতদের জন্য মাতম করতে এসেছি।” কবিতার এই লিফলেটটি অনবদ্য। দুষ্প্রাপ্য বিধায় পুরোটা উদ্ধৃত করছি।
”I have come here to mourn for the living not for the dead. First, I mourn for myself. When I thought of this vigil outside the Pakistan Embassy I wanted to honor the dead. I wanted to fast and sleep on the pavement in sympathy with the hungry and homeless of East Pakistan and in rage and hatred at their murderers and persecutors in the West Pakistan Army and their sponsors in the State Department But as the days passed, the dividing lines blurred. I found myself unequal to the task of responding adequately. It was not that I lacked occasional tears, hours of depression. It was rather that this disaster acted like a flare at night. It showed me my inadequacy. My imagination balked at accommodating the full horror, even though I had practice at it as a child in Belsen. My donkey self could only be flogged into fits of sporadic action, when I trotted by the horror rather than meeting it head on in some way I mourn for others like me who are in the State Department in the Senate, in Congress, in the White House, in this Embassy, in Islamabad, in the Cantonment of Dacca and Chittagong their tragedy is that their inadequacy is coupled with power. I mourn for all of us here in America. The news media exposed us to such a daily blitzkrieg of stories about death and deprivation, that we are numbed. Yet it is our taxes which are financing and arming the Pakistan Army in their orgy of killing, which continues to this day. I mourn for the 1,500,000 hungry and homeless refugees who fled to India, I mourn for the 4000,000 cyclone victims who go unfed, I mourn for those who now live in fear, my friends in Bangladesh. I ask you to mourn with me. আন্দোলন শুরুর আগের দিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের কাছে গণহত্যা বন্ধ, রাজনৈতিক নিস্পত্তি ও শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য আনা আর ড, নালিন চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
আনা নাড়িয়ে দিয়েছিল মার্কিণ তরুণদের। এরপর আনা মুক্তিযুদ্ধের সাহায্যের জন্য আরো কয়েকজনের সঙ্গে মিলে গঠন করলেন বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার। বিনা বেতনের কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করলেন সেখানে। এর ঠিকানা ছিল ৪১৪, সিওয়ার্ড স্কোয়ার, এস,ই, ক্যাপিটল হল, ওয়াশিংটন ডি.সি। স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত এই সেন্টারে সার্বক্ষণিক কাজ করেছেন আনা। আনা ব্রাউন টেইলরের সঙ্গে শুরু থেকেই যোগাযোগ ছিল বাংলাদেশী ছাত্র মহসীন সিদ্দিকীর। এক সঙ্গে তারা কাজ করেছেন। তিনি লিখেছেন, আনা সম্পর্কে”Anna invested an enormous amount of her personal resource money, time, talent and physical and emotional labor” to the cause, and gave courage and solace to many of us who lived through the period in guilt, agony and uncertainty.”
সূত্র : Mohsaifi R Siddique. The Struggle for Liberation of Bangladesh: A Partial Tale of Events in the Washington Area and of Some People Here and There’ AMA Muhith, American Response of Bangladesh Liberation War. David R Nalin, Twenty five years after the Emergence of Bangladesh An Americam Reminiscence,’ AMA Muhith, American Response of Bangladesh Liberation War