You dont have javascript enabled! Please enable it! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং রাজনৈতিক হত্যাকান্ড -জেল হত্যাকাণ্ড - সংগ্রামের নোটবুক
জেল হত্যাকাণ্ড
মুজিব হত্যার মধ্যদিয়ে খন্দকার মােস্তাকের উত্থান আর জেল হত্যাকাণ্ড তার পতন ঘটায় । মুজিব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবার সময়ে তার অবস্থান আর জেল হত্যাকাণ্ডের সময়ে অবস্থান ভিন্ন থাকলেও দুটো হত্যাকাণ্ডেরই অনেকটা দায়দায়িত্ব তার ওপরে বর্তায়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান, তাজউদ্দীন। আহমদ এবং মনসুর আলী এই চারজনই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ প্রাক্কালে মুজিবনগর সরকারে। অবশ্য খন্দকার মােস্তাকও ছিলেন তাদের সঙ্গে। আর, ‘৭৫-এর ১৫ই আগস্টে মুজিবকে যেদিন সপরিবারে হত্যা করা হয়, সেদিনই মােস্তাক হয়ে বসেন দেশের রাষ্ট্রপতি, অবশ্য ঘাতক বাহিনীর নির্বাচনে। সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, রক্ষীবাহিনী, পুলিশ বাহিনী চাপের মুখে মােস্তাককে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়। মুজিব সরকারের কতিপয় মন্ত্রীও মােস্তাকের আনুগত্য স্বীকার করেন। কিন্তু জাতীয় চারনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী আনুগত্য স্বীকার করেননি। তাই তাদেরকে বন্দী করে জেলখানায় রাখা হয়। ৩রা নভেম্বর প্রায় একই সঙ্গে দুটো দুর্ঘটনা ঘটে যায় বাংলাদেশে। তার একটি জেল হত্যাকাণ্ড এবং অন্যটি ব্রিগেডিয়ার খালেদ মােশাররফের ব্যর্থ সেনা অ্যুথান। এখানে জেল হত্যাকাণ্ডের কথা বলা হচ্ছে। ২রা নভেম্বর দিবাগত রাত প্রায় দুটোর সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের সামনে এসে থামলাে সেনা বাহিনীর একটি জীপ । জীপ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ৪ জন লােক বেরিয়ে এলাে। তারা দ্বাররক্ষীকে গেট খুলে দিতে বললাে। দ্বাররক্ষী সম্মত হলাে না। তারপর দ্বাররক্ষী জেলারকে ডেকে আনলাে। জেলার এলে তাকে বলা হলাে যে, তারা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান, তাজউদ্দীন আহমদ এবং মনসুর আলীকে নিতে এসেছে। তাদের সাথে অই চারজনকে যেতে দিতে হবে। জেলার সাহেব বললেন : কোনাে বৈধ নির্দেশ-পত্র না পেলে আমি তাদেরকে যেতে দিতে পারবাে না।’ আগন্তুকের একজন বললাে : ‘কোনাে কিছুর দরকার নেই। আমার কথামতােই কাজ করতে হবে। জেলার বললেন : ‘আমি তা পারবাে না।’ আগন্তুক বললাে : ‘এর পরিণাম ভালাে হবে না।’ জেলার বললেন : যা-ই হােক, আমি পারবাে না। তখন আগন্তুক বললাে : ‘যদি প্রেসিডেন্ট সাহেব দিতে বলেন, তাহলে দেবেন তাে? জেলার বললেন : অবশ্যই। দেশের।
 
প্রেসিডেন্টকে অমান্য করি কী করে?’ তখন প্রেসিডেন্ট মােস্তাককে ফোন করা হলাে। মােস্তাকের উত্তর পাওয়া গেল ফোনে : “আমি খন্দকার মােস্তাক বলছি। আমি ওদেরকে পাঠিয়েছি। ওরা যা বলে তাই করুন। জেলারের আর কিছু বলার থাকে না। দ্বাররক্ষী দ্বার খুলে দিল। ঘাতকেরা জেলের ভিতরে প্রবেশ করলাে । অতঃপর তারা জাতীয় চারনেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে চলে গেল জেলখানা থেকে। ৫ই নভেম্বর সকালে নিহত চার জাতীয় নেতার লাশ তাদের পরিবারপরিজনকে ফেরৎ দেওয়া হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী এবং তাজউদ্দীনকে বনানী গােরস্থানে দাফন করা হয়েছিল। কামরুজ্জামানের লাশ তার নিজ জিলা রাজশাহীতে পাঠানাে হয়। সেখানে তাকে পারিবারিক গােরস্থানে দাফন করা হয়েছে। জেলহত্যাকাণ্ডের ঘাতকদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে ধারণা করা যেতে পারে যে, ১৫ই আগস্টের ঘাতকের দ্বারাই এ-হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আর, বঙ্গভবনে তখন ঘাতক মেজর ফারুক-রশীদ প্রমুখদের প্রবল প্রতাপ। সবকিছুই তখন ঘটে তাদের অঙ্গুলী হেলনে। এ-হত্যাকাণ্ডও তাদেরই পরিকল্পনা। অবশ্য মােস্তাক এবং জিয়াও তার বাইরে নন। এ-হত্যাকাণ্ড ঘটানাের কারণ চক্রান্তকারীরা বুঝতে সক্ষম ছিল যে, এই ন্যায়নীতিজ্ঞ চারনেতা বেঁচে থাকলে ভবিষ্যতে তাদের বিপদ ঘটতে পারে। তাই নিরাপত্তার কারণে এই চারনেতাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নতুবা আর কী কারণ থাকতে পারে?
সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের বিপ্লবী সরকারের প্রধান ব্যক্তি ছিলেন তিনি ১৯২৫ সালে ময়মনসিংহের কিশােরগঞ্জ থানার যশােদল গ্রামে এক সম্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। ময়মনসিংহে তকালীন আই. এ. পর্যন্ত পড়াশুনা করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ইতিহাসে অনার্স নিয়ে  ১৯৪৫ সালে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে এম, এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি আইনের ডিগ্রিও লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কালেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৪৮ সালে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সদস্য হয়ে তিনি ভাষা আন্দোলনে জড়িত হন তিনি পাকিস্তান সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস-এর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক বছর চাকুরি করেছেন। অতঃপর তিনি চাকুরি ছেড়ে ময়মনসিংহের আনন্দমােহন কলেজে অধ্যাপনায় যােগদান করেন।
 
১৯৫১ সালে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ময়মনসিংহে আইন ব্যবসায় শুরু করেন । এ-সময়ে তিনি সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫৭ সালে ময়মনসিংহ জিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। অই বছরই তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতিও নির্বাচিত হলেন । ১৯৬১ সাল থেকে জেনারেল আইউবের বিরুদ্ধে যে-গণআন্দোলন গড়ে ওঠে। বাংলাদেশে, তাতে তিনি অন্যতম নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ছয়দফা প্রণয়ন করেন। ছয়দফার জনপ্রিয়তা দেখে আইউব খান-মােনায়েম খান শংকিত হয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর যুলুম শুরু হয়ে গেল। শেখ মুজিব, তাজউদ্দীন, মনসুর আলীসহ বহু আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করা হলাে। অতঃপর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাইরে থেকে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন সেই সময়ে  ১৯৬৯-এর গণআন্দোলনের তিনি সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন। এই আন্দোলনের ফলেই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করা হয় এবং পতন ঘটে আইউব শাহীর । ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে বিপ্লবী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং ১৯৭৩ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে তিনি সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
 
তাজউদ্দীন আহমদ
 
বিপ্লবী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময়ে অতি দক্ষতার সাথে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। শেখ মুজিবের অন্যতম সহকর্মী ছিলেন তিনি। ১৯২৫ সালে ঢাকার কাপাসিয়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। এম. ই. স্কলারশীপ পরীক্ষায় তিনি বৃত্তি পান। মেট্রিক পরীক্ষায় দ্বাদশ এবং আই. এ-তে চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। অর্থনীতিতে অনার্সসহ এম. এ.  জেলে থাকা অবস্থায় তিনি আইন পরীক্ষায় পাশ করেন। ছাত্র থাকাকালেই তাজউদ্দিন আহমদ রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৪৩ সালে তিনি মুসলিম লীগের (প্রাদেশিক) কর্মী হন। ১৯৪৪ সালে তিনি এ দলের থেকে বিচ্ছিন্ন হন। ১৯৪৮ সালে তিনি ছাত্রলীগে যােগদান করেন। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগে যােগ দেন। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হন। তখনও তিনি ছাত্র ছিলেন। ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগের সমাজসেবা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের  দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সরকারে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
 
এম. মনসুর আলী
 
এম. মনসুর আলীর জন্ম ১৯১৯ সালে পাবনা জিলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার কুড়িপাড়া গ্রামে। ১৯৩৭ সালে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা এবং ১৯৪১ সালে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি. এ. পাশ করেন। ১৯৪৪ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম, এ এবং আইনের ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৫ সালে পাবনায় আইন ব্যবসায় শুরু করেন। ১৯৫১ সালে পাবনায় আওয়ামী লীগের সংগঠক। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে যােগ দেন। এবং গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের ব্যানারে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ মন্ত্রী সভায় যােগদান করেন। ১৯৬৪ সালে আইউব বিরােধী আন্দোলনে যােগদানের কারণে গ্রেফতার হন। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবের ছয়দফা আন্দোলনে অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। মুজিবনগর সরকারে (১৯৭১ সাল) অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতা লাভের পর শেখ মুজিবের মন্ত্রিসভায় যােগাযােগ মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৩ সালে স্বরাষ্ট্র ও যােগাযােগমন্ত্রী হন। বাকশাল গঠনের পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এবং বাকশালের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ঘাতক বাহিনী মনােনীত রাষ্ট্রপতি মােস্তাক আহমদ মনসুর আলীকে প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণের জন্য অনুরােধ করেন। তিনি অসম্মত হওয়ায় তাকে জেলে পাঠানাে হয়।
 
এ. এইচ, এম, কামরুজ্জামান
 

এ. এইচ, এম, কামরুজ্জামান ১৯২৩ সালে রাজশাহী শহরের কাদিরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ছিল হেনা। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বি. এ. (অনার্স) পাশ করেন। রাজশাহী আইন কলেজ থেকে তিনি আইন পাশ করে ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। ১৯৪২ সালে তিনি রাজশাহী জিলা মুসলিম ছাত্রলীগের সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগে যােগদান করেন। তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে দু’বার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি জয় লাভ। করেন। ১৯৭১-এ মুজিবনগর সরকারে তিনি স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী হন। স্বাধীনতা লাভের পর মুজিব সরকারে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী হন। ১৯৭৩ সালে বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। পরে মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। বাকশাল গঠনের পর তিনি শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। | এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান বাংলা, ইংরেজি এবং উর্দুভাষায় সুদক্ষ ছিলেন। মাঝে মাঝে তিনি কবিতাও লিখতেন। এখানে তার লেখা কবিতার অংশবিশেষ উদ্ধৃত করছি : এদেশের মানুষের করুণ আর্তনাদ আর আহাজারির মধ্যে দাঁড়িয়ে যারা গড়েছে সম্পদের পাহাড় আভিজাত্য ঘেরা ইমারত, হে বন্ধু, তাদের প্রতি আঘাত হানিবার এইতাে প্রকৃষ্ট সময় ।

পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট থেকে ৭ই নভেম্বর
১৫ই আগস্ট : শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন (ধানমন্ডি) কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্য কর্তৃক আক্রান্ত হয়। একই সঙ্গে ধানমন্ডিতে অবস্থিত আব্দুর রব সেরনিয়াবাত এবং শেখ ফজলুল হক মণির বাসাও আক্রান্ত হয়। নিহত হন মুজিব পরিবারের সকলেই। শেখ ফজলুল হক মণি (শেখ মুজিবের ভাগ্নে) সস্ত্রীক নিহত হন। আঃ রব সেরনিয়াবাতসহ এ-পরিবারের নিহতের সংখ্যা- ৭। এ-ছাড়া পুলিশ-প্রহরী, কাজের লােক, অতিথিও নিহত হয়। খন্দকার মােস্তাকের রাষ্ট্রপতি পদে ঘাতক বাহিনী কর্তৃক মনােনয়ন। কতিপয় মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ। সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, রক্ষীবাহিনী, বিডিআর প্রধান যথাক্রমে শফিউল্লাহ, এ. কে. খন্দকার, এম. এইচ, খান, লে. কর্নেল আবুল হাসান এবং খলিলুর রহমান মােস্তাকের আনুগত্য স্বীকার করেন। ১৬ই আগস্ট : শেখ মুজিবের লাশ তার জন্মভূমি টুঙ্গিপাড়া গ্রামে নিয়ে তাঁর পারিবারিক গােরস্তানে দাফন করা হয় । সৌদি আরব ও সুদান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ২১শে আগস্ট : খন্দকার মােস্তাকের মাথার টুপি ‘জাতীয় টুপী’ হিসেবে মন্ত্রীপরিষদ অনুমােদন করে।
২৩শে আগস্ট : সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম. মনসুর আলী, এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান, আব্দুস সামাদ আজাদ, কোরবান আলীসহ। বিশজনকে সামরিক আইন বলে বন্দী করে কারাগারে পাঠানাে হয়। ২৪শে আগস্ট : জেনারেল ওসমানীকে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা নিয়ােগ করা হয়। শফিউল্লাহকে অপসারণ করে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান পদে উন্নীত করা হয়। ২৮শে আগস্ট : ৬১ জিলা ঘােষণা করার মােটিফিকেশন বাতিল করা হয়। ৩০শে আগস্ট : রাজনৈতিক দল গঠন নিষিদ্ধ ঘােষিত হয়। ৩১শে আগস্ট : চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ১লা সেপ্টেম্বর : বাকশাল বিলুপ্ত করা হয়। ২রা সেপ্টেম্বর : স্পীকার মালেক উকিলের নেতৃত্বে ৬৩তম আন্তঃ পার্লামেন্টারী সম্মেলনে যােগদানের জন্য প্রতিনিধিদের লন্ডন যাত্রা। ৬ই সেপ্টেম্বর : জিল্লুর রহমান, তােফায়েল আহমদ এবং আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেফতার করা হয়। ১৯শে সেপ্টেম্বর : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডকটর মাযহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। ২৪শে সেপ্টেম্বর : খন্দকার মােস্তাক আহমদ স্বনির্ভর বাংলাদেশ উদ্বোধন করেন।’ ২৬শে সেপ্টেম্বর : ১৫ই আগস্টের খুনীদের বিচার করা যাবে না— এই মর্মে মােস্তাক এক অর্ডিন্যান্স জারি করেন, যাকে বলা হয় ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স ।

এই অধ্যাদেশের ফলে ১৫ই আগস্টের ঘাতকেরা অব্যাহতি পেয়ে যায় । ৩রা অক্টোবর : ১৯৭৬ সালের ১৬ই আগস্ট থেকে রাজনৈতিক বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করা হবে এই মর্মে সরকারি ঘােষণা প্রচারিত হয়। নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচনের তারিখ আগামী ১৯৭৭ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি এই মর্মে ঘােষণা প্রচার করা হয়। ৪ই অক্টোবর : বাংলাদেশ-পাকিস্তান কূটনৈতিক মিশন স্থাপনের যুক্ত ঘােষণা। ঢাকা-পিকিং রাষ্ট্রদূত বিনিময় সম্পর্ক যুক্ত ঘােষণা।  ৫ই অক্টোবর : রক্ষীবাহিনীকে সেনাবাহিনীতে একত্রিকরণের জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অধ্যাদেশ জারি । ৭ই অক্টোবর : আমির হােসেন আমু গ্রেফতার । ১৬ই অক্টোবর : সংসদ সদস্যদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির বৈঠক। ১৭ অক্টোবর : এয়ার ভাইস মার্শাল তােয়াব-এর বিমান বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ। ২১শে অক্টোবর : ১৯টি জেলায় সামরিক আদালত স্থাপন। ৩রা নভেম্বর : সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, কামরুজ্জামান, এম. মনসুর আলী— এই চারনেতা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে নিহত হন। এই তারিখেই মােস্তাকের ক্ষমতার শেষ দিন খালেদ মােশাররফের অভ্যুত্থান সংঘটন করার কারণে। ৬ই নভেম্বর : বিচারপতি আবু সা’দত মােঃ সায়েমের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ। ৭ই নভেম্বর : খালেদ মােশাররফ নিহত হন। [প্রকাশ থাকে যে, ৪ এবং ৫ই নভেম্বর— এই দু’দিন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পদ একেবারেই শূন্য ছিল। অর্থাৎ এ দুদিন কেউ রাষ্ট্রপতি পদে ছিলেন না। ৩রা নভেম্বর মােস্তাকের অপসারণের কারণে পদটি শূন্য হয়ে যায় । এই পরিস্থিতির মধ্যেই ফারুক-রশীদসহ ১৭ জন ঘাতককে দেশত্যাগের সুযােগ দেওয়া হয়। এরাই ছিল ১৫ই আগস্ট-এর হত্যাকাণ্ড এবং ৩রা নভেম্বরের জেলহত্যাকাণ্ডের নায়ক ও ঘাতক। 

সূত্রঃ  বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং রাজনৈতিক হত্যাকান্ড – মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান