সামরিক বাহিনীর বেতন নির্ধারণে গাফিলতি
সশস্ত্র বাহিনীর বেতন স্কেল নির্ধারণের জন্য কমিটি গঠন সরকারে ভুল সিদ্ধান্তের আরও একটি উদাহরণ। সারা বিশ্বেই সশস্ত্র বাহিনীর বেতনকাঠামাে সিভিল সার্ভিসের বেতন কাঠামাে থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। এর প্রধান কারণ সৈনিকেরা বিনা মূল্যে খাদ্য ও বাসস্থান পায়, যাতে যেকোনাে মুহুর্তে হঠাৎ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে সম্মুখযুদ্ধরত সৈনিকের আহার সরবরাহ ঠিক থাকে ও ফেলে আসা পরিবারগুলাের জন্য দুশ্চিন্তা থেকে তারা সম্পূর্ণভাবে মুক্ত থাকতে পারে। এ ছাড়া তিন বাহিনীর পদকাঠামাে, যােগ্যতা ও পেশাকাঠামো ইত্যাদির মধ্যেও ভিন্নতা আছে, যে কারণে এদের বেতন নির্ধারণ অনেকটা জটিল এবং সিভিল কর্মচারীর বেতনকাঠামাে, গ্রেড ইত্যাদি থেকে একেবারেই আলাদা। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলাে, স্বাধীন বাংলাদেশের কর্মচারীদের জন্য যে জাতীয় বেতন কমিশন গঠন করা হয়, সেই একই কমিশনকে সশস্ত্র বাহিনীর বেতনকাঠামাে নির্ধারণেরও দায়িত্ব নেওয়া হয়। এ ছিল এক অদ্ভুত সিদ্ধান্ত। |
সেনাবাহিনী থেকে মেজর জেনারেল জিয়াকে এই বাের্ডের সদস্য করা হয়েছিল। জিয়া নিশ্চয়ই জানতেন যে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য পৃথক বেতন বাের্ড হওয়া প্রয়ােজন। কিন্তু তিনি এ নিয়ে কোনাে উচ্চবাচ্য করেননি। সৈনিকদের একদল মুক্তিযুদ্ধে যােগদানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল আর বাকি সৈনিকেরা পাকিস্তানে আটক অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, অথচ্ছ সাধারণ সৈনিকেরা অর্থনৈতিকভাবে চরম দুরবস্থার ভেতর দিয়ে দিন কাটাচ্ছিল। অথচ বেতন বাের্ডের কাজের অগ্রগতির কোনাে লক্ষণই দেখা যাচ্ছিল না। এ নিয়ে সেনাবাহির তরফ থেকে দিকে নাকি তাগিদও দেওয়া হয়েছিল। জিয়ার উত্তর থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে সরকার এ ব্যাপারে উদাসীন। পরবর্তী সময়ে আমরাও বুঝতে পারছিলাম যে কোনাে একটি মহল থেকে বঙ্গবন্ধুকে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ ভুল বােঝানাে হয়েছিল। যদিও সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়কদের প্রধান কর্তব্যই ছিল অধীন সৈনিকদের স্বার্থেই এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর কাছে ধরনা দেওয়া। বােধ হয় তা-ও করা হয়নি।
তখন ১৯৭৪ সাল। একদিন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল সফিউল্লাহ আমাকে টেলিফোন করলেন। তিনি যা বললেন তার মর্মার্থ হলাে, সেনাবাহিনীতে বেতন-ভাতাদি নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের তেল রপ্তানিকারক দেশগুলাে তেলের মূল্য হঠাৎ একবারে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আর এর প্রতিশােধ হিসেবে পশ্চিমের উন্নত দেশগুলাে তাদের কারখানাজাত দ্রব্যগুলাের রপ্তানিমূল্য কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে দুনিয়াব্যাপী জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ থেকে কয়েক গুণ। অথচ আমাদের সশস্ত্র বাহিনীসহ কোনাে কর্মচারীর বেতন বাড়ানাে হয়নি, বরং ওপরের স্কেল অনুর্ধ্ব দুই হাজার টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তাতে সামরিক বাহিনীতে চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। কিছুটা তিক্ত কণ্ঠে কিন্তু ঠাট্টার সুরেই আমি সফিউল্লাহকে বললাম, “তােমার সেনাবাহিনীর ব্যাপারে আমার কোনাে কৌতূহলও নেই, মাথাব্যথাও নেই। তবে এ কথাটি ভালােভাবেই জানি যে একদিন তােমার চেয়ারের নিচের সময়-বােমাটি” । সেদিন বুঝতে পারবে যে বড় বড় স্টাফ করে ঘুরে বেড়াবে, বড় বড় অফিসে চা খাবে অথচ ক্ষুধার্ত সৈনিকদের কথা চিন্তা করবে না, তাদের বেতন বৃদ্ধির কী হলো না হলাে খোঁজ নেবে না, তবু লােকে তােমাকে পূজা করবে, তা হবে না । আর আমাকে তাে তােমরা শত্রুপক্ষের লােকই ভাবো। তা হঠাৎ, আমাকে মনে পড়ল কেন?
‘আপনার চেয়ারের অবস্থা কী? সেখানে ফাটবে না বােমা?’
বললাম, ‘না, আমার এখানে এত অসন্তোষ নেই। আমি যেভাবেই হােক, চেয়েচিন্তে, ভিক্ষা করে, এমনকি প্রয়ােজনে ছলচাতুরী বা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েও আমার সৈনিক ও অফিসারদের ভাতা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছি। এদিক দিয়ে এঁরা খুব অখুশি নন। একজন অফিসার সেনাবাহিনী থেকে বিডিআরে পদার্পণ করেই মাসে পাঁচ থেকে ছয় শ টাকা অতিরিক্ত ভাতা পান । সৈনিকেরাও আনুপাতিক হারে ভাতা ইত্যাদি পান। এর জন্য আমি পাকিস্তান আমলের ও কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে ব্রিটিশ আমলেরও বিস্মৃত নিয়মকানুন ঘেঁটে অনেকগুলাে ভাতা পুনরুজ্জীবিত করেছি। সত্যি বলতে কি, কিছু “অসত্যের আশ্রয়ও নিয়েছি। সফিউল্লাহ, আমি সেনাবাহিনীর বাইরের লােক, বাইরেই থাকতে চাই । ধন্যবাদ, সফিউল্লাহ।’
‘না না, টেলিফোন ছাড়বেন না। এদিকে ভয়ানক বিপদ। খোলাখুলি দরবারে এখনি সৈনিকেরা প্রশ্ন করতে আরম্ভ করেছে, তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির কী হলাে? তাদের ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে মনে হয়।’
“তবে ব্যাপার এত দূর গড়িয়েছে? তা তােমরা যে বেতন কমিশন গঠন করেছ, তার কী হলাে? তার মাধ্যমে সরকারকে চাপ দাও না? ওই কমিশনে কারা কারা আছেন?’ |
‘স্যার, সমস্যা তাে সেখানেই। জাতীয় বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান তো মন্ত্রী শ্রীমনোরঞ্জন ধর। সশস্ত্র বাহিনী থেকে সদস্য হিসেবে আছে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। জিয়াকে বলেছি। ও তাে বলে যে তাগাদা দিচ্ছে। কিন্তু আমার মনে হয় সে যথেষ্ট চাপ প্রয়ােগ করছে না।’
সফিউল্লাহ, বলাে কী? সে বেতন কমিশন তাে জাতীয় বেতন কমিশন।
আমাদের সামরিক বাহিনীর জন্য বেতন কমিশন নেই?’
না তো।’
বলো কী! যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত একটি বাহিনীর ব্যাপারে ওই বেতন কমিশন কী বুঝবে। যেখানে সৈনিকদের আহার, বাসস্থান ও উর্দি ইত্যাদি সরকার সরবরাহ করে। তাদের বেতন-ভাতা অন্যান্য বিভাগের বেতন-ভাতা থেকে হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন । হতেই হবে। সমগ্র দুনিয়াতেই তাই। তাদের বেতনকাঠামাে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের শ্রেণিবিন্যাস ভিন্ন, পদবিন্যাস ভিন্ন, চাকরির মেয়াদও ভিন্ন । অবসর নেওয়ার সময়ও ভিন্ন। তাদের অভ্যন্তরীণ নিয়মকানুনও ভিন্ন। যেমন, ডাক্তারদের বেতন, ভাতা ও অবসরকাল পদাতিক বাহিনীর সঙ্গে এক হতে পারে না। শারীরিক সামর্থ্য পদাতিকের অন্যতম গুণ । কাজেই বেশি বয়স হলে পদাতিক বাহিনীতে আর পদোন্নতি হয় না। অবসর নিতেই হয়। কাজেই এদের বেতনকাঠামাে দেশের অন্য যেকোনাে কর্মচারীর মতাে এক রকম হবে না। একই কারণে সামরিক বাহিনীর বেতন কমিশন ও ভিন্ন হতে হবে। তবে কমিশনের সুপারিশ বিবেচনা করে চূড়ান্তভাবে বেতন নির্ধারণ করবে সরকার। আর এ কথাও বুঝি যে সামরিক বাহিনীশাসিত পাকিস্তানের আদলে আমাদের গণতান্ত্রিক দেশে সৈনিকদের বেতন নির্ধারিত হতে পারে না, কিন্তু তার পরও বেতন কমিশন ভিন্ন হতেই হবে।’
সফিউল্লাহ মন দিয়ে কথাগুলাে শুনলেন। মনে হলাে উপলব্ধিও করলেন। শেষে প্রশ্ন করলেন, “তাহলে কী করা যায়? এই কমিশনও তাে বহুদিন ধরে বসে আছে। করার মতাে কিছুই করছে না। “জেনারেল জিয়া ওখানে কী করছে?
সফিউল্লাহ একটু ইতস্তত করে বললেন, ‘তার সম্বন্ধে কী আর বলব? সে কি কাজ এগােতে চাচ্ছে, না পিছাতে চাচ্ছে, এ দুই বছরের তাই বুঝলাম না। আমার মনে হয়, সে মনে করে, যদি আপনার কথামতাে টাইম বোম ফাটেই, তবে তাতে ক্ষতি হবে ব্যক্তিগতভাবে আমার ও এই সরকারের । সে নিজে তাতে লাভবান বৈ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। অদ্ভুত না?’
কথাটি মনে লাগল, ফলে আর কথা বাড়ালাম না। সফিউল্লাহকে বললাম, ‘আর দুই বাহিনীর প্রধানদের ডাকো। জিয়াকেও ডাকো। আমি তােমার অফিসে আসছি। এ ব্যাপারে যা হয় আমরা সম্মিলিতভাবেই করব। সরকারের কাছে ধরনা দিতে হয় একসঙ্গেই দেব।’
সফিউল্লাহর অফিসেই মিলিত হলাম আমরা। এয়ার মার্শাল এ কে খন্দকার, বিয়ার অ্যাডমিল এম এইচ খান, সফিউল্লাহ, জি ও আমি।
সবাই আমরা এ ব্যাপারে একমত হলাম যে পরিস্থিতি এমন যে সৈনিকদের, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি একান্তভাবেই প্রয়ােজন এবং দুনিয়ার সব দেশের মতোই আমাদের দেশেও সশস্ত্র বাহিনীর বেতন-ভাতা কমিশন অবিলম্বে তা করতে হবে। আমরা একটি সুপারিশমালা প্রণয়ন করে পাঠাব। সরকার তা বিবেচনা ও অনুমােদন করবে। তবে কীভাবে আমরা অগ্রসর হব, তা নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ আমাদের মধ্যে বিতর্ক হলাে।
আমি বললাম, ‘আমরা যাব বঙ্গবন্ধুর কাছে। তাঁকে সবিস্তারে বুঝিয়ে বলব ব্যাপারটা। আমার মনে কোনাে সন্দেহই নেই যে তিনি বিষয়টা বুঝবেন। আমার অভিজ্ঞতাও তা-ই বলে।’
এই পর্যায়ে আমাদের একজন বললেন, যদি তিনি আমাদের প্রস্তাব নাকচ করে দেন?’
উত্তরে আমি বললাম, “ধরাে, যদি নাকচই করে দেন এবং আমরাও যার যার কাজে ফিরে যাই, তবে যে অবস্থাটি হবে তা কি আমাদের কাছে গ্রহণযােগ্য হবে? বিশেষ করে তােমাদের তিনজনের কথাই জিজ্ঞেস করছি, তােমরা কি ওই অবস্থায় অনির্দিষ্ট সময় ধরে অপেক্ষা করে থাকতে পারবে? খােদা না করুন, যদি সাধারণ সৈনিকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ে, তবে কি তা তােমাদের ও সরকারের জন্য মঙ্গলজনক হবে? আমার কথা তোমরা ভেবো না।
আমার অফিসার ও সৈনিকেরা খুশি আছে। নানা ফাঁকফোকর দিয়ে তাদের বেতন না হােক, ভাতা অনেক বেড়েছে, তারা নতুন নতুন জিপ পেয়েছে, ভারত থেকে পুলিশের জন্য আমদানি করা কাপড়চোপড় নিয়ে যেভাবেই হােক, তাদের উর্দির (পােশাক) অভাব পূরণ করে দেওয়া হয়েইে। আর তােমাদের সৈনিকদের তাে দেখেছি লুঙ্গি পরে খালি পায়ে প্যারেড মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কত দিন চলবে এ অবস্থা? আমার আর জিয়ার তো চিন্তা নেই । তােমরা চিন্তা করে দেখে প্রস্তাব নাকচ হয়ে গেলে কী করবে।’ মনে হলাে এতক্ষণে তারা সমস্যাটির মর্মার্থ উপলব্ধি করলেন এবং প্রশ্ন করলেন, তাহলে কী করতে হবে?
বললাম, ‘আমি তাে আগেও বলেছি যে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হলাে এই যে ভালাে করে বুঝিয়ে বলতে পারলে বঙ্গবন্ধু তার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেন। এ ব্যাপারেও তা-ই করবেন। তবে যদি আমরা তাঁকে বােঝাতে একান্তই ব্যথ হই, তবে তাকে এটা বলতে হবে, যদি অবস্থা এরপই চলতে থাকে, তবে আমাদের পক্ষে আর চাকরিতে থাকা বাঞ্ছনীয় নয়।’
প্রায় সবাই সমস্বরে বলে উঠলেন, অর্থাৎ পদত্যাগ?
p-50
হেসে বললাম, হ্যাঁ, তা-ই। অবশ্য আমিও হেমলের সঙ্গে থাকব’ প্রায় সবাই তাঁরা বঙ্গবন্ধুর অনুগত ছিলেন। ফলে পদত্যাগ তো বঙ্গবন্ধুর প্রতি একটা বড় ধরনের বেয়াদবি হবে–সবাই যেন মনে মনে এমন একটা কিছু ভাবছিলেন। এমনিতে পদত্যাগ কথাটা তাে শুনতেও খারাপ লাগে, একটা চরম বিরােধপূর্ণ অবস্থার কথা মনে করিয়ে দেয়। তাই তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, যা খুবই স্বাভাবিক ছিল।
আমি আবার হেসেই বললাম, “দেখাে, বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ভবিষ্যতে তা অমঙ্গল বয়ে নিয়ে আসতে পারে-এটা তাে সবাই মানাে? আর এই পরিস্থিতি উপলব্ধি করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও মন আমাদের চেয়ে বেশি এ দেশে আর কারও নেই। যদি এ অবস্থায় আমরা কিছু না করতে পারি, অর্থাৎ কার্যকর কিছু না করি, তবে রাষ্ট্রের বা বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমাদের লয়্যালটি অর্থাৎ বিশ্বস্ততার কী মূল্য আছে? সে ক্ষেত্রে কর্তব্যে অবহেলায় আমাদের কি চরম শান্তি পাওয়া উচিত নয়? |
অবশেষে সবাই রাজি হলেন। আগে থেকেই সময় নির্ধারিত ছিল। তিন বাহিনীর প্রধান, জিয়া ও আমি-আমরা পাঁচজনই গেলাম। জিয়া প্রথম থেকেই একটু আপত্তি করছিলেন সমস্ত ব্যাপারটাতেই। কারণটা আমরা সবাই বুঝতে পারছিলাম। তিনি ছিলেন গঠিত জাতীয় বেতন কমিশনে সশস্ত্র বাহিনীর তরফ থেকে একমাত্র সদস্য। অতএব, তারই বলা উচিত ছিল যে পৃথিবীতে কোথাও সিভিল ও মিলিটারির বেতন একই ধরনের হয় না। উভয়েরই বেতনাদি মােটামুটি সমানই হবে, তবে অর্থের অঙ্কে ও ভাতাদির ব্যাপারে তফাত থাকবে। দ্বিতীয়ত, সামরিক বাহিনীর কিছু অংশ মুক্তিযুদ্ধ করে ফিরেছে, আর বাকি অংশ পাকিস্তান থেকে ফিরেছে, অর্থাৎ যুদ্ধকালে কে দেশের মত করে ছিল না। দুই জায়গাতেই তাঁরা তাদের প্রাপ্য বেতনের মাত্র একটি অংশ পেয়েছে। পরিবারকে কিছু দিতে পারেনি বিধায় তাদের পরিবারগুলাে বেশ দুস্থ অবস্থায় ছিল এবং তখনাে তা-ই রয়েছে। বিপরীতে বেশির ভাগ সিভিল কর্মচারী দেশেই ছিল। জেনারেল জিয়ার উচিত ছিল এই পরিস্থিতিতেও সরকারের কাছে ব্যাখ্যা করে সামরিক বাহিনীর জন্য কিছুটা অর্থ সহায়তা ও তাদের জন্য অর্বর্তীকালীন ভাতা গােছের একটা কিছু আদায়ের প্রচেষ্টা নেওয়া, যা তিনি করেননি। তিনি জানতেন, আমরা যখন সামরিক বাহিনীর প্রাপ্য দাবি তুলে ধরব, তখন তার গাফিলতি ধরা পড়বে এবং হতে পারে, তার কোনাে লুক্কায়িত উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ও হয়তাে সন্দেহ জাগতে পারে। অতএব, শুরু থেকেই তিনি কিছুটা অনীহা প্রকাশ করে আসছিলেন।
বঙ্গবন্ধু প্রথমে আমাদের প্রস্তাব না শুনেই পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু একটু পরই তার সুতীক্ষ দৃষ্টি দিয়েই বুঝতে পারলেন যে আমরা ভেবেচিন্তে ও মনস্থির করেই এসেছি। তিনি চায়ের হুকুম দিলে নড়েচড়ে বসে বললেন, “বেশ, ব্যাপারটা আমাকে বুঝিয়ে বলাে।
বুঝিয়ে বলার ভার সবাই আমাকে দিলেন। আমি বললাম, প্রথম কথা এই যে এরা ফ্রি রেশন পায়। সিভিলিয়ান, এমনকি পুলিশও ফ্রি রেশন পায় না। কারণ, সামরিক বাহিনীকে সব সময় যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। এ পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, “আচ্ছা, এদেরও ফ্রি রেশনের পরিবর্তে অতটুক বেতন বাড়িয়ে দিলে হয় না?’ বুঝলাম, তিনি ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা করছেন। | বললাম, না স্যার, তা হয় না। একটি উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটি পরিষ্কার হবে। ১৯৫৮ সালে আখাউড়া অঞ্চলের লক্ষ্মীপুর সীমান্তে আমাদের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত-যুদ্ধ হয়। এতে একজন মেজর ও সুবেদার শহীদ হন। ভারতীয় আক্রমণ প্রতিহত করার দায়িত্ব ছিল ইপিআরের। সামরিক বাহিনী ইপিআরের সঙ্গেই ছিল। যদিও তাদের তা থাকার কথা নয়। কারণ দুই পক্ষ, অর্থাৎ, পাকিস্তান-ভারতের সামরিক বাহিনী খােলাখুলিভাবে যুদ্ধে জড়িত হলে তাে সরাসরি যুদ্ধই লেগে যাবে। তাই সম্মুখভাগে ইপিআর আর তার পেছনে ছিল সামরিক বাহিনী। আমাদের প্রতি-আক্রমণ সফল হয়েছিল, ভারত আমাদের যে অংশটুকুতে অনুপ্রবেশ করেছিল, সেখান থেকে তাদের হটিয়ে দিয়ে প্রতিরক্ষাব্যুহ রচনা করা হলাে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন রক্ষার্থে যথারীতি পুলিশকে রাখা হলাে সবার সামনে। তার পেছনে ইপিআর এবং সবার পেছনে ছিল সামরিক বাহিনী। কিন্তু বিপদ হলাে, তাদের খাওয়ার সময়। সামরিক বাহিনী ও ইপিআরের খাবার তাে পেছনে পাক হয় এবং তা তাদের সৈনিকদের পাঠানাে হয়—প্রায় অবস্থায় তা গরমই থাকে। আর পুলিশ সদস্যরা থাকল অভুক্ত। পাশের গ্রামের লােকেরা তাে যুদ্ধের পর গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। কিছুক্ষণ পরই নালিশ এল, পুলিশ বেচারারা গ্রামের বেগুনখেত থেকে বেগুন তুলে পুড়িয়ে খাচ্ছে। | শুনে বঙ্গবন্ধু যেন দম ফেললেন, বললেন, ‘বুঝেছি। কখন কোন মুহূর্তে কীভাবে সেনাবাহিনী যুদ্ধাবস্থায় পড়ে যাবে, বলা তাে যায় না। আচ্ছা তারপর?”
আমি বললাম, আমাদের অফিসারদের মধ্যে পদে পদে বেতন-বৈষম্য। সিভিলিয়ানদের মধ্যে এত বেশি নয়। আর জ্যামিতিক নিয়মেও তা হয় না। একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। সেনাবাহিনীতে মেজর পর্যন্ত
টাইম স্কেলে পদোন্নতি হয়। পরীক্ষায় পাস করলে প্রত্যেক অফিসার ১৩ বছর চাকরি পূর্তিতে মেজর পদ পাবেন। কিন্তু তার ওপরে যেতে হলে যেতে হবে যােগ্যতার মাপকাঠিতে সিলেকশন বাের্ডের মাধ্যমে, সিনিয়রিটির ভিত্তিতে নয়। এই পদ্ধতিতে প্রায় অর্ধেক অফিসার মেজর হয়ে অবসর নেন। আবার লেফটেন্যান্ট কর্নেল থেকে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ব্রিগেডিয়ার পদ পান। এদিকে সুদক্ষ সামরিক বাহিনী গড়তে গেলে (তারা সুদক্ষ না হলে দেশের স্বাধীনতাই বিপন্ন হবে) যােগ্য লােককে একই পদে আটকে রাখা চলবে না। সামরিক বাহিনীতে তাই এই নিয়মটি প্রয়ােগ করা হয়, ‘হয় কিক-আপ, নতুবা কিক আউট’। এই নিয়ম অনুযায়ী মুষ্টিমেয় অফিসার ৫৭ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরি করতে পারেন। মেজরকে অবসর নিতে হয় ৪৮ বছর বয়সে। এদিকে ৪৭ বছর বয়স্ক একজন মেজর ও ৫৩ বছর বয়স্ক একজন মেজর জেনারেলের পারিবারিক খরচ প্রায় একই। দুজনের ছেলেমেয়েরা একই স্কুলে পড়ে ও তারা একই সমাজের লােক, একই অফিসার্স মেসের সদস্য। অতএব, একজন মেজর ও একজন মেজর জেনারেলের বেতন ও পেনশনে খুব বেশি তফাত থাকা উচিত নয়। একই কারণে সেনা অফিসার ও সিভিল অফিসারদের স্কেলের মধ্যবর্তী তফাতও একরকম হতে পারে না। সিভিল অফিসার, অর্থাৎ একজন আইসিএস কিংবা সিএসপি যত অযােগ্যই হােন, কেউ ডেপুটি সেক্রেটারি হয়ে অবসর নেন না। নিদেন পক্ষে কমিশনার হবেনই।’
বঙ্গবন্ধু এই সময় উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন, ইশারায় আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ঠিক বলেছ, খলিল ইংরেজের আমলে আইসিএস অফিসাররা যত বড় গাধা ও নিষ্কর্মাই হােক না কেন, কমিশনার পর্যন্ত হতােই, অর্থাৎ প্রাদেশিক সরকারের সচিব। হা হা হা, ঠিক বলেছ।’
এরপর আমাদের যুক্তি-তর্কের বেশি প্রয়ােজন হলাে না। বঙ্গবন্ধু প্রশ্ন করলেন, ‘আচ্ছা, বলাে দেখি, ইতিপূর্বে আমাকে এভাবে তােমরা বুঝিয়ে বলােনি কেন? আমি তাে ব্যাপারটা জানতামই না, অথচ এত বড় একটা স্পর্শকাতর ব্যাপার! এখন বলাে, কী করতে হবে?’
বললাম, ‘স্যার, অবিলম্বে সশস্ত্র বাহিনীর বেতন কমিশন আলাদা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সৈনিকদের আর্থিক অবস্থা করুণ। ওদের বুক আর পিঠ এক হয়ে গেছে। যা দেওয়ার অনতিবিলম্বে তাদের দিয়ে দিতে হবে।’
বঙ্গবন্ধু সঙ্গে সঙ্গেই টেলিফোন করলেন বেতন কমিশনের প্রধান মন্ত্রী মনােরঞ্জন ধরকে ও পরে প্রতিরক্ষা সেক্রেটারি মুজিবুল হককে। দুজনকেই প্রয়ােজনীয় নির্দেশ দিলেন। আর আমাদের বললেন প্রতিরক্ষা সেক্রেটারির অফিস হয়ে যেতে। প্রতিরক্ষা বাহিনীর তরফ থেকেও এ ব্যাপারে কী কী করণীয় আছে তাঁকে তা ভালাে করে বুঝিয়ে বলে যেতে।
এরপর আমার মনে হয়েছিল যে সমস্যাটির সমাধান বুঝি হয়ে গেল কিংবা শিগগির হয়ে যাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের ব্যাপার, কোনাে সমাধান তখনাে হয়নি এবং পরবর্তী সময়েও নয়। সৈনিকেরা তাদের প্রাপ্য পায়নি, কোনাে বর্ধিত আর্থিক সুবিধাও নয়। অর্থাৎ যথা পূর্বং তথা পরং। অথচ তিন দিক থেকেই সমস্যাটি সমাধানের অগ্রগতির প্রতি লক্ষ রাখা উচিত ছিল। প্রথমত, সমস্যাটা নিয়ে প্রধানত যাদের মাথাব্যথা, অর্থাৎ তিন বাহিনীর প্রধানের দ্বিতীয়ত, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের এবং তৃতীয়ত, বঙ্গবন্ধু অর্থাৎ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নিজের। আগেই বলেছি, ইতিপূর্বে সেনাবাহিনীকে সিভিল প্রশাসনের সহায়তায় নিয়ােগ না করতে বঙ্গবন্ধুকে অনেক অনুনয়-বিনয় করেছিলাম। কিন্তু বঙ্গবন্ধু আমার সে অনুরোধ রাখেননি কিংবা রাখতে পারেননি।
এই পরিস্থিতিতেই সিদ্ধান্ত নিলাম যে অযাচিতভাবে দেশের প্রতিরক্ষার ব্যাপারে আর কোনাে মতামত প্রকাশ করতে বঙ্গবন্ধুর কাছে যাব না। এদিকে বিডিআরে আমার আর কাজ সম্পন্ন করার পথেও অনেকটা এগিয়ে গেছি। আর মাস ছয় বা নয় মাস এই প্রচেষ্টা চললে বাহিনীটি একদিকে যেমন সুশাল, উচ্চ মনােবলসম্পন্ন একটি বাহিনীতে পরিণত হবে, তেমনি তারা তাদের ওপর দেশের আইন অনুযায়ী অর্পিত দুটো দায়িত্বই সূক্ষভাবে পালন করতে পারবে। দায়িত্ব দুটো হলাে সীমান্ত রক্ষা ও চোরাচালান দমন। ইতিমধ্যেই বাহিনীটি অনেকটা সুশৃঙ্খল ও দুর্নীতিমুক্ত হয়ে উঠেছে। আর কিছুদিন পর এই গুণগুলাে তাদের সহজাত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়াবে এবং বাহিনীতে স্থায়ী পরিপক্কতা আসৰে । সিদ্ধান্ত নিলাম, স্বাধীন মাতৃভূমির জন্য এই একটা কর্তব্য পালনে সফল হলেও আমি কিছুটা আত্মসম্বষ্টি লাভ করব। তারপর সরকারে আমার করণীয় কিছু থাকবে না। তখন বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অবসরজীবন যাপন করব।
আমি তাে নিজে থেকে বঙ্গবন্ধুকে কোনাে মতামত কিংবা পরামর্শ দিতে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। বঙ্গবন্ধু এবং তার মন্ত্রণালয় ও বাহিনীপ্রধানদের সঙ্গে কোনাে আলােচনা বা বৈঠক করে তাদের সমস্যাগুলাে জানা ও উপলব্ধির প্রয়ােজন মনে করতেন না। হয়তাে এটাও অদক্ষ ও অভিজ্ঞ আমলাদের গাফিলতির কারণেই হতাে। তবে মনে পড়ে, এর পর মাত্র একবার প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত ব্যাপারে আমার ডাক পড়েছিল। আমাদের ছিল পার্বর্ত্য চট্রগ্রামে সেনাবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির বিষয়ে। যার কিছুটা উল্লেখ আমি আগেই করেছি। পাহাড়ি বাসিন্দারা চায় সেখানে ব্রিটিশ আমলের মতাে প্রশাসনব্যবস্থা । অর্থাই পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়িরা যথেচ্ছ ঘুরে বেড়াবে, বসতি স্থাপন করবে, জুম করবে। তাদের ভয়, ভূমি-লােভী সমতলবাসী বাঙালিরা তাদের জমি দখল করে ক্রমে পার্বত্য এলাকায়ই সংখ্যাগরিষ্ট হয়ে তাদের সংস্কৃতি ধ্বংস করে ফেলবে। অতএব, তারা চায় না বিরাট সংখ্যায় বাঙালি জনগােষ্ঠী সেখানে বসতি স্থাপন করুক।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারের অনেকেরই, বিশেষ করে সেনাসদরের ভয় ছিল পাহাড়িদের এত বড় একটা এলাকা ছেড়ে দেওয়া জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি ভবিষ্যতে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। অতএব, তাদের সামরিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেখানে সেনাবাহিনী রাখতে হবে। সে কাজের জন্য চাটগাঁয় অবস্থিত বর্তমান সৈন্যসংখ্যা যথেষ্ট নয়। অতএব বর্তমান ব্রিগেডকে বর্ধিত করে ডিভিশনে উন্নীত করতে হবে।
এ সম্বন্ধে আমার মত কী, বঙ্গবন্ধু জানতে চাইলেন। সেনাবাহিনীর মধ্যে এ সম্পর্কিত জল্পনাকল্পনার কথা আমি জানতাম । জিয়ার প্রতিপক্ষ গ্রপ প্রস্তাবটির বিরুপ সমালোচনা করত। তারা বলত যে প্রস্তাবটি ছিল প্রধানত জিয়া গ্রুপের। ব্রিগেডিয়ার মীর শওকত তখন চাটগাঁর অধিনায়ক ছিলেন । তার ব্রিগেভটির শক্তিবৃদ্ধি হলে পরোক্ষভাবে জিয়ার হাতই শক্ত হবে। হতে পারে শওকত পদােন্নতি পেয়ে মেজর জেনারেলও হতে পারেন। তবে সত্যি এ-ও হতে পারে যে জিয়া মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি একটি হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তবে কোনাে পক্ষই এ সত্যটি অনুধাবন করত না যে সমস্যাটি রাজনৈতিক। এর কোনাে সামরিক সমাধান খুঁজতে গেলেই সমগ্র দেশের জন্য তা সমূহ বিপদ ডেকে আনবে। |
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তখন অত্যন্ত খারাপ। এই অবস্থায় দেশের পক্ষে বাহিনীর বিদ্যমান সৈনিকদেরই বেতন-ভাতা, পােশাক-পরিচ্ছদ ও অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করা কঠিন। তার ওপর আরও সৈনিক? যা আরও ভয়াবহ তা হলাে, যদি সেই সৈনিকেরা কোনাে আঞ্চলিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তবে তা হবে বেশ ব্যয়বহুল। সে অবস্থায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করে গোলাবারুদ, সাজসরঞ্জাম ও যানবাহন ক্রয়, রাস্তাঘাট নির্মাণ ইত্যাদি আবশ্যকীয় হয়ে পড়বে। এতে দেশ দেউলিয়া হয়ে যাবে।
আমি যথাসাধ্য সংক্ষেপে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বঙ্গবন্ধুকে বললাম,
p-55
খোদা না করুক, আমরা যদি চাটগাঁর মতাে অতি দুর্গম এলাকায় সামরিক সমস্যায় জড়িয়ে পড়ি, তার জন্য যে সৈনিক ও সাজসরঞ্জাম প্রয়োজন, সে তুলনায় একটি পদাতিক ডিভিশন নস্যি মাত্র। একটি কেন, চার-চরটি পদাতিক ডিভিশনও তার জন্য যথেষ্ট হবে না। তার ওপর পাহাড়ির প্রতিবেশী দেশগুলােতে শরণার্থী হয়ে সে রাষ্ট্রগুলােকেও এই সংগ্রামে জড়িয়ে ফেলবে। তার ফলে নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত এই দেশটির স্বাধীনতা বিপন্ন হতে পারে। অতএব, আপনি যেভাবেই পারেন, সমস্যাটির রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করুন। সামরিক সমাধানের যেকোনাে প্রচেষ্টাই হবে মারাত্মক।
Reference:
কাছে থেকে দেখা ১৯৭৩-১৯৭৫ মেজর জেনারেল এম খলিলুর রহমান