You dont have javascript enabled! Please enable it! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন - সংগ্রামের নোটবুক
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস—দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সময়কাল, কেননা এ যুদ্ধের সাথে জড়িয়ে পড়েছিল পৃথিবীর বড় তিনটি পরাশক্তি এবং পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারত। এ যুদ্ধের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট হয়ে গিয়েছিল পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি মানুষ, দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সমরশক্তি। একই রাষ্ট্রের পৃথক দুটি ভূখণ্ডের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতজনিত কারণে এ ঘটনার সূত্রপাত, পরে সেটি পার্শ্ববর্তী দেশ হয়ে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে। গণহত্যাধর্ষণ-লুণ্ঠন, যা মানবতাবিরােধী জঘন্য অপরাধ—এর ভয়াবহ প্রয়ােগ এবং পরবর্তীকালে ব্যাপক সমরাস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা—ইত্যাদি মিলিয়ে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘটনাপ্রবাহ তকালীন বিশ্বসম্প্রদায়কে গভীরভাবে  আলােড়িত করেছিল এবং ওই ঘটনায় বিশ্বের সকল মানবতাবাদী মানুষ, আদর্শ লালনকারী সকল প্রচার মাধ্যম আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল; ১৬ জুন ‘৭১ ডেইলি মিরর পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল নিমােক্ত সংবাদ120 labour MP’s demand Bangladesh Recognition. The motion calls for a meeting of the UN Security Council to consider the situation, both a threat to international peace and a contravention of the Genocide Convention. And until order is restored under UN Supervision the Provisional Government of Bangladesh should be recognised as the vehicle for the expression of self-determination by the people of East Pakistan.
৯ জুন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বক্তব্য প্রদানকালে ব্রুস ডগলাস ম্যান দৃঢ়কণ্ঠে। বলেন, পাকিস্তানের অখণ্ডতা আর নেই—I am saying that Pakistan as an unit and as an entity is dead. The only solution which will provide any possibility of relief for the people of East Bengal is for the West Pakistan Army to be forced to withdraw by economic pressures and sanctions.
অক্টোবর মাসে পৃথিবীর অন্যতম সেরা বুদ্ধিজীবীরা মিলিত হয়েছিলেন। কানাডার টরন্টোতে, বাংলাদেশের গণহত্যা বিষয়ে আলােচনা করার জন্য। সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল :
১. পাকিস্তানকে দেয় সমস্ত সমরাস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে হবে;
২. পাকিস্তানকে দেয় সমস্ত অর্থনৈতিক সহযােগিতা বন্ধ করতে হবে;
৩, জরুরি অবস্থা বিধায় সম্ভাব্য সকল সাহায্য সংগ্রহ করে জাতিসংঘের
তত্ত্বাবধানে পূর্ব বাংলার অভ্যন্তরে দুর্ভিক্ষ প্রপীড়িত জনসাধারণের মধ্যে বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে;
৪. শরণার্থীদের ভরণ-পােষণের জন্য ভারতকে প্রয়ােজনীয় রিলিফ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে; 
৫. শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন রক্ষার জন্য হস্তক্ষেপ করতে হবে।

এ ঘােষণায় স্বাক্ষর দান করেছিলেন জাতিসংঘের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল হিউ কিনলেসাইড, ব্রিটেনের প্রাক্তন মন্ত্রী মিসেস জুরিথ হার্ট, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য মিসেস বার্নাড ব্রেইন, চীনে নিযুক্ত কানাডার প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত চেস্টার রােনিং, আন্তর্জাতিক ধর্মীয় শান্তি সংস্থার সেক্রেটারি হােমার জ্যাক, বাংলাদেশের পক্ষে এম আর সিদ্দিকী ও এ এম এ মুহিত, ভারতের পক্ষে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক নূরুল হাসান ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার বােম্বের আবাসিক সম্পাদক অজিত ভট্টাচার্য।

১২ নভেম্বর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ’ অধ্যাপক, যাদের মধ্যে ছিলেন নােবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত মনীষী পল স্যামুয়েলসন, সালভাডর লুরিয়া, সাইমন কুজনেটস প্রমুখ—এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের প্রতি আহ্বান জানান, …গত মার্চ মাসে পাকিস্তান সৈন্যবাহিনী পূর্ব বাংলার জনসাধারণের ওপর ব্যাপকভাবে হামলা চালিয়েছে। তিন লাখের মতাে বাঙালি হত্যা করা হয়েছে। প্রায় নব্বই লাখ বাঙালি শরণার্থী এরই মধ্যে সীমান্তের ওপারে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে এবং প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার শরণার্থী সীমান্ত অতিক্রম করছে। পশ্চিম পাকিস্তানি হামলার জের হিসেবে ভারত সরকারকে এ ধরনের একটা সমস্যার মােকাবিলা করতে হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এখন পশ্চিম পাকিস্তানই শান্তির প্রতি হুমকি হওয়া ছাড়াও যুদ্ধ বাধাতে চাচ্ছে। এতে শুধু ভারত ও পাকিস্তান জড়িত হবে, তা-ই নয়, চীন, সােভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও জড়িত হয়ে পড়বে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে পাকিস্তানের সামরিক মিত্র এবং যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্বের প্রতি সমর্থনের নীতি গ্রহণ করেছে।…এ ধরনের একটা নীতি গ্রহণের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন একটা সরকারের সমর্থক হয়ে পড়েছে, যে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে জাতীয় ভিত্তিক একটা নির্বাচনের রায়কে অস্বীকার করছে, আর পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের অধিকারকে প্রত্যাখ্যান করছে। উপরন্তু এরা নিরস্ত্র জনসাধারণকে নির্বিচারে হত্যা করছে। আমাদের জাতীয় স্বার্থের খাতিরে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের নীতির যথার্থতা প্রমাণ করা যায় না।… ন্যায়বিচার, মানবতা এবং জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে তার নীতির পরিবর্তনের যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের। কাছে নিমােক্ত প্রস্তাবগুলাে উপস্থাপন করছি : ১. পূর্ব বাংলার নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সঙ্গে একটা রাজনৈতিক মীমাংসায় না আসা পর্যন্ত পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য অথবা অর্থনৈতিক সহযােগিতা যুক্তরাষ্ট্র প্রদান করবে না এবং পাইপলাইনের সাহায্য বন্ধ করবে। পাকিস্তানকে দেয় এ ধরনের সমস্ত সাহায্য ভারতে অবস্থানকারী পূর্ব । বাংলার শরণার্থীদের দেয়া হবে। যতদিন পর্যন্ত এসব শরণার্থী দেশে।
প্রত্যাবর্তন করতে না পারবে, ততদিন পর্যন্ত এই সাহায্য প্রদান অব্যাহত থাকবে এবং শরণার্থীদের বাবদ ভারতকে প্রদত্ত সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। ৩. জাতিসংঘের উদ্যোগে পূর্ব বাংলার জনসাধারণের জন্য অর্থনৈতিক সাহায্য বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হােক। ৪. পাকিস্তানকে এ মর্মে অবহিত করা হােক যে, পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হলে। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের মতাে যুক্তরাষ্ট্র এবার ভারতের প্রতি সাহায্য প্রদান। স্থগিত রাখবে না। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, বিশেষত ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ইরান ও তুরস্ককে এ মর্মে আভাস দেয়া হােক যে, পূর্ব বাংলার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একটা রাজনৈতিক সমাধানে আসার জন্য পাকিস্তানকে উৎসাহিত করলে যুক্তরাষ্ট্র তা অভিনন্দিত করবে।
আমাদের রাজনৈতিক স্বার্থে এবং মানবিক কারণের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার ছাড়াও বাঙালিদের দাবির প্রতি আমাদের আন্তরিকতা প্রদর্শন এবং শরণার্থীদের ভরণ-পােষণের জন্য ভারতকে আরাে অধিকতর সাহায্য প্রদান যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আশু কর্তব্য। এই মুহূর্তে চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায়—শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার পরিস্থিতি যেখানে বিরাজমান, সেখানে আমাদের নীতির পুনঃপরীক্ষার মাধ্যমে সংশােধিত হওয়া নিতান্ত অপরিহার্য।” (আমি বিজয় দেখেছি, পৃ. ১৯৩-৯৪)।
ভারতের ৪৪ জন বুদ্ধিজীবী পৃথিবীর সকল শান্তিকামী জনগণের প্রতি আবেদন জানান, In the name of humanity, we appeal to them to join us in mobilising world opinion to compel the military rulers of West Pakistan to end the insensate carnage and respect the democratic rights of the people. (77 coafu frica স্বাধীনতা, পৃ. ৯৭)।  ২১ জুন, প্যারিসের কনসাের্টিয়াম বৈঠকে দাতা দেশগুলাে, যথাক্রমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জাপান, কানাডা প্রভৃতি দেশের প্রতিনিধিগণ had warned General Yahya Khan that fresh aid commitments may not be forth comming unless steps were taken to resrore normalcy to Bangladesh.-An end to the military terror and restoration of civilian rule in the strife-torn country were among the conditions reportedly mentioned to Pakistani Authorities. | জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট এক বিবৃতিতে বলেন, The international community has been seriously concerned at the plight of the sizable and continuing influx of refugees, including a large proportion of women and children,-On behalf of the entire UN family I therefore earnestly appeal to Governments to help meet the urgent needs for humanitarian assistance in the present tragic situation. অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম ম্যাকমহন প্রতিনিধি পরিষদ সভায়। বলেন, there should be no more loss of life and that leaders of Awami League should be given full authority to represent the people in the parliament of Pakistan. | খােদ পশ্চিম পাকিস্তানের অনেক মানবতাবাদী বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক ও ছাত্র সংগঠন বৈরী পরিবেশের মধ্যে থেকেও বাংলাদেশের মুক্তি-আন্দোলনকে সমর্থন দান করেছেন।
২৯ জুন, পশ্চিম পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাদের সমর্থনের কথা ঘােষণা করে। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি খান আবদুল ওয়ালী খান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে (আগস্ট ‘৭১) বলেন, ইসলামাবাদের পশুশক্তি বাংলাদেশের মানুষকে আর পদানত করে রাখতে পারবে না। পাকিস্তান টুকরা টুকরা হয়ে যাবেই এবং কোনাে শক্তি নেই তাকে প্রতিরােধ করার। (সাপ্তাহিক মুক্তিযুদ্ধ, ৮ আগস্ট ‘৭১)। ৪ নভেম্বর, পশ্চিম পাকিস্তানের ৪২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি শেখ মুজিবের মুক্তির দাবি করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। বিবৃতি দানকারীদের মধ্যে ছিলেন বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান মার্শাল আসগর খান (৩০ সেপ্টেম্বর, হােটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, কিছু স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও শান্তি কমিটির সদস্য আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের নামে ব্যক্তিগত শত্রুতা ও রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের মতলবে গ্রামাঞ্চলের লােকদের হয়রানি করছে।), বিখ্যাত কবি ফয়েজ আহমদ, পাকিস্তান ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি মির্জা মােহাম্মদ ইব্রাহিম, পাকিস্তান সােশ্যালিস্ট পার্টির নেতা চৌধুরী আসলাম এবং পাকিস্তান টাইমস-এর সম্পাদক মাজহার আলী খান প্রমুখ।
১৮ সেপ্টেম্বর, ভারতের বিশিষ্ট জননেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী শ্রীপিন্ডি কৈরালা বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর হাতে হাত মিলিয়ে জঙ্গি শাহীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আন্তর্জাতিক ব্রিগেড গড়ে তােলার আহ্বান জানান। বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক আঁদ্রে মারলাে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণের ইচ্ছে ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ব্যর্থ হলে। বিশ্বের সমস্ত মানুষের মুক্তি আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যাবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সারা বিশ্বে ব্যাপক প্রচার পায় ‘দি কনসার্ট ফর বাংলাদেশ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। ১ আগস্ট, উনূল বাঙালি শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য নিউইয়র্কের মেডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে এক অবিস্মরণীয় সঙ্গীতসন্ধ্যার আয়ােজন করা হয়। জর্জ হ্যারিসন, বব ডিলান, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, রিঙ্গে স্টার, বিলি প্রেস্টল, লিওন রাসেল, এরিখ ক্লাপ্টনসসহ ৭৫ জন বিশ্বনন্দিত শিল্পী এই সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। জন বেজের লেখা গান Bangladesh, Bangladesh, Bangladesh When the Sun sinks in the west die a million people of Bangladesh-এই অপূর্ব ধ্বনির সাথে হ্যারিসনের কণ্ঠে Ebollo My friend came to me We get to release Bangladesh Now please let your hand Please the people of Bangladesh তখন আকাশে বাতাসে, পৃথিবীর সর্বত্র পৌছে যায় বাংলাদেশের জন্মের কথা, বাংলাদেশের মানুষের কথা। ওই সঙ্গীতানুষ্ঠান থেকে সংগৃহীত হয়েছিল ২৪,৩৪,১৮৫ ডলার এবং উত্তোলিত অর্থের পুরােটাই দান করা হয়েছিল শরণার্থী-ত্রাণ তহবিলে।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে, আমেরিকার বিখ্যাত কবি অ্যালেন গিনসবার্গ ভারতের সীমান্তবর্তী কয়েকটি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছিলেন। শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশা, প্রাত্যহিক জীবনযাপনের গ্লানি—মাত্র একদিনের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি নিয়ে তিনি ফিরে যান নিউইয়র্কে এবং সেখানে বসে নভেম্বর, ১৪-১৬ তারিখের মধ্যে লিখে নিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ওপর অমর কবিতা, সেপ্টেম্বর অন যশাের রােড’ : ‘Millions of babies watching the skies Bellies swollen, with big round eyes’
বিমানবহর নৌবাহিনী অর্থবল? তারা কি আজ খাদ্য ওষুধ আনতে চায়? ফেলছে বােমা ভিয়েতনামে নিঃসহায়? [অংশবিশেষ, ভাষান্তর- খান মােহাম্মদ ফারাবী মুক্তিযুদ্ধের সময় গিনসবার্গের এই বিখ্যাত কবিতাটি পােস্টারের মতাে বিরাটাকৃতির কাগজে ছেপে বিক্রি করা হতাে এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থ শরণার্থীকল্যাণ তহবিলে দান করা হতাে। বস্তুত আমাদের মুক্তি আন্দোলনে কেউ অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, কেউ সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, কেউ মুক্তিযােদ্ধাদের আশ্রয় বা খাদ্য জুগিয়ে দেশপ্রেমের স্বাক্ষর রেখেছেন, কেউ আমাদের আন্দোলনের সপক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গঠন করে, প্রকারান্তরে আক্রমণকারী পশুশক্তির ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছেন—তারা দেশি বা বিদেশি যে-ই হােন, তাঁরা সবাই মুক্তিযােদ্ধা, আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তারা সবাই চিরঞ্জীব। 

সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সত্য অসত্য অর্ধসত্য-বিনয় মিত্র