বাংলার বাণী
ঢাকা: ২২শে জুন, শুক্রবার, ৭ই আষাঢ়, ১৩৮০
রেলওয়ে উন্নতি হবে?
রেলওয়ে প্রতিষ্ঠানের অবস্থা আজ সর্বজনবিদিত। যাত্রীদের দুরবস্থা মাল পরিবহনের নিরাপত্তার অভাব সময়ের ব্যাপারে মাত্রাতিরিক্ত গাফিলতির সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের মানুষের কাছে রেলওয়ে যে ছবিটা খুব একটা সুখকর নয়। বাধ্য না হলে কেউ আজ আর রেলে ভ্রমণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করবেন না। এই যে রেলওয়ে প্রতিষ্ঠানকে আমাদের যোগাযোগমন্ত্রী একটা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার আশা প্রকাশ করেছেন।
ভালো কথা, স্বাধীনতার পর যদি রেলের মত একটা প্রতিষ্ঠানকেও মন্ত্রী মহোদয় “পিটিয়ে মানুষ করতে পারেন” তবে তাকে সাধুবাদ জানাবে না এমন মানুষ কেই বা আছে! কিন্তু কথা হলো ব্যাপারটা কি এতই সহজ! বছরের-পর-বছর যে প্রতিষ্ঠান লাগাম ছেড়ে রাখা হয়েছে দুর্নীতি অবস্থা যে প্রতিষ্ঠান মধ্যে ঢুকে গেছে সে প্রতিষ্ঠানকে কি করে একটা নিয়ম নীতির মধ্যে বাধা যাবে। বছর রেলওয়ে থেকে রাজস্ব এসেছিল ২৩কোটি টাকা। এ বছরের বাজেট এর সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি টাকা।এক বছরে এই যে ১০ কোটি টাকার ফারাক তা বাস্তবায়নের জন্য যে কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার প্রয়োজন হবে সে দিকটাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখেছেন?
আমরা হতাশাবাদী নই। কিন্তু মাদি ঘোড়ার উপরে যখন জিন ছড়িয়ে দ্রুত দৌড়ানোর একটা প্রয়াস লক্ষ্য করি তখন ক্ষণিকের জন্য হলেও বিব্রত বোধ করি। রেলওয়েকে একটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হোক এটা সবার কামনা। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যাত্রী সাধারণের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হোক এবং মালামাল পরিবহনের নিশ্চয়তা বিধান করা হোক এটাও তারা আশা করেন।
মন্ত্রীমহোদয়ের এই শুভ উদ্যোগ বাস্তবায়নে যা সবচাইতে আগে করা উচিত বলে আমরা মনে করি তা হল রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মধ্য থেকে আমলাতান্ত্রিক এবং দুর্নীতি পরায়ন লোকদেরকে দেওয়া। যে দুর্নীতির সংক্রমিত হয়ে স্তরের পর স্তর ডিঙিয়ে রেলওয়ে একবারের নিম্নতম পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে তাকে রোধ করতে হলে উপর থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।একটা কঠোর এবং দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে গেলে এবং জনসাধারণের মধ্যে রেলওয়ে সম্পর্কে একটা আস্থার ভাব সৃষ্টি করতে পারলে শুধু মন্ত্রী মহোদয়ের উদ্যোগে হবে নতুবা নয়।
এসব ছাড়াও রয়েছে আমাদের রেল ওয়াগন এর ঘাটতি, বিধ্বস্ত রেলপথ। স্বাধীনতা-উত্তরকালে রেলপথ চালু করতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। হানাদার বাহিনী আমাদের বেশ ক’টি রেল সেতু ভেঙে দিয়ে গিয়েছিল। এই সেতু পুনঃনির্মাণে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনের রেলকর্মীরা যে দক্ষতা এবং আন্তরিকতা দেখিয়েছেন তার প্রশংসা না করলে অন্যায় করা হবে। আমরা বিশ্বাস করি রেলওয়েতে এমন বহু কর্মী রয়েছেন যারা প্রকৃতপক্ষে দেশের উন্নতিতে আগ্রহী। এই সকল নিষ্ঠাবান কর্মীদের সহযোগিতা মন্ত্রীমহোদয়ের ইচ্ছে পূরণে সাহায্য করবে। রেল ওয়াগন এবং ইঞ্জিনের ঘাটতি পূরণে বন্ধু রাষ্ট্রসমূহের সাহায্যে উল্লেখযোগ্য এবং আমরা মন্ত্রীমহোদয়ের আশাবাদকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। এর সাফল্য আমাদের আনন্দিত করবে।
এ সংগ্রামের বিজয় অনিবার্য
আফ্রো-এশিও সংহতি পরিষদের বাংলাদেশ শাখা গত পরশুদিন দক্ষিণ আফ্রিকা সংহতি দিবস উদ্যাপন উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ কামাল হোসেন উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। প্রধান অতিথির ডঃ কামাল হোসেন তাঁর ভাষণে দক্ষিণ আফ্রিকার মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। এ ব্যাপারে সরকারের নীতি ঘোষণা করতে গিয়ে তিনি বলেন- “আমরা আমাদের সংবিধানের বিশ্বের সকল সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ ও বর্ণবৈষম্যবাদ এর বিরুদ্ধে যারা সংগ্রাম করেছে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের কথা লিপিবদ্ধ করেছি।” আফ্রো-এশিও সংহতি পরিষদের বাংলাদেশ শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এ সভায় ডঃ কামাল হোসেনের সঙ্গে ঘোষণা করেন যে আমরা সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ ও বর্ণবৈষম্যবাদ এর বিরুদ্ধে সংগ্রামের দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছে কেননা আমরা জানি উপনিবেশিক শাসনের কি দুর্বিষহ জ্বালা। এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু নির্যাতন যে কত বেশি মবিদাতা বাংলাদেশের মানুষ জানে। সে কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের উপর ঔপনিবেশিক শাসন গোষ্ঠীর নির্ধারণ শোষণের বিরুদ্ধে আমরাও প্রতিবাদমুখর। আমরা বিশ্বমানবতার জন্য এর অবসান কামনা করি। আফ্রো-এশিও সংহতি পরিষদ দীর্ঘদিনের নিপীড়নের মধ্য দিয়ে যে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সে কথা উল্লেখ করেন। আমরা জানি দক্ষিণ আফ্রিকার রিকার নিপীড়িত মানুষ একটি জগদ্দল উপনিবেশিক শক্তির পাশবিক অত্যাচারের দীর্ঘদিন অত্যাচারিত হচ্ছে। এখানে কালো মানুষকে বর্ণবৈষম্যের মারাত্মক অস্ত্র দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হচ্ছে। সম্রাজ্যবাদের একটি নির্মম অর্থ যেহেতু বর্ণবৈষম্যবাদ সেহেতু সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দক্ষিণ আফ্রিকার এই নিদারুণ অস্ত্র ব্যবহার করেছে। যদিও কিছুসংখ্যক সাদা চামড়ার মানুষ দক্ষিণ আফ্রিকার এই মরণপণ সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সংগ্রামে শরিক হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড কামাল হোসেন আরো বলেছেন বর্ণবৈষম্যবাদ এর উপর প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় নীতি নিঃসন্দেহে ঘৃণ্য ও ন্যক্কারজনক। আমরা এই ঘৃণ্য ও ন্যাক্কারজনক শাসনের অবসান চাই। দক্ষিণ আফ্রিকার উপর থেকে সাদা চামড়ার ঘৃণ্য শোষণের শেষ হোক এটাই বিশ্বের প্রগতিশীল মানুষের কাম্য দুনিয়ায়। সকল শান্তিকামী প্রগতিশীল জাতির দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রামরত মানুষের পাশে এসে দাঁড়াবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক