You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.18 | শরণার্থীদের রেশন দিতেই হবে | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

প্রসঙ্গক্রমে
শরণার্থীদের রেশন দিতেই হবে

ত্রাণ অধিকতা শ্রীবি বি মণ্ডল বৃহস্পতিবার মহাকরণে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ক্যাম্পের বাইরে যে সব শরণার্থী রয়েছেন, তাদের কোনও রেশন দেবার নিয়ম নেই।
সরকারী হিসাব অনুসারেই পশ্চিমবঙ্গে কমপক্ষে ১৭ লক্ষ শরণার্থী ক্যাম্পের বাইরে রয়েছেন- শখ করে নয়, সরকারের তরফ থেকে তাঁদের মাথার উপরে আচ্ছাদন ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা যায় নি বলে। অনেকের অপরাধ, এপার বাঙলায় তাদের আত্মীয়-বন্ধু থাকার দরুন আশ্রয়ের জন্য সরকারকে ব্ৰিত না করে সেই আত্মীয় বন্ধুদের বাড়িতে মাথা গুজেছেন।
সরকার যেহেতু তাদের স্থান দিতে অক্ষম, সেইহেতু তাদের প্রাণে বাঁচাবার মত খাদ্য জোগাবার দায়িত্বও সরকার অস্বীকার করবেন- এটা শুধু অযৌক্তিক নয়, চরম হৃদয়হীন মনােভাবের পরিচায়ক। ওপার বাঙলা থেকে লক্ষ লক্ষ নরনারী শিশু এক বস্ত্রে, নিঃসহায় কপর্দকশূন্য অবস্থায় এই বাঙলায় চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন ইয়াহিয়ার পােষা জানােয়ারগুলির দৌরাত্মে। তাদের এমন অবস্থা নয় যে তারা বাজার থেকে চাল কিনে খাবেন। অনেকে যারা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন, সেইসব আত্মীয়বন্ধুরাও শরণার্থী-আত্মীয়দের আশ্রয় দিয়েছেন আশ্রয় শিবিরগুলিতে চাপ কমাতে সরকারকে সাহায্য করার জন্যই। কিন্তু এরাও অধিকাংশই বাধা আয়ের মানুষ, কোনক্রমে নিজেদের সংসার চালাতেই হিমসিম খেয়ে যান। অতিথির বােঝা দিনের পর দিন বহন করা এদের পক্ষেও অসাধ্য।
শিবির বহির্ভূত এইসব শরণার্থীকে রেশন দিতে অস্বীকর করার অর্থ জেনে শুনে লক্ষ লক্ষ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া। কিন্তু মানুষ যেহেতু আজ আর বিনা প্রতিরােধে মৃত্যুকে মেনে নেয় না, সেইহেতু সরকারের এই ঔদাসীন্য গুরুতর পরিণতির সৃষ্টি করতে পারে। সেই গুরুতর পরিণতি কিংবা মৃত্যর মিছিল শুরু হবার আগেই ক্যাম্প বহির্ভূত শরণার্থীদের রেশন জোগাবার ব্যবস্থা করার জন্য কমিউনিস্ট নেতা শ্রীভূপেশ গুপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যে দাবি জানিয়েছেন, সে দাবি অবিলম্বে মেনে নেওয়াই সমীচীন হবে।
দিতে হবে। অর্থাৎ, যাত্রী সাধারণের উপরে আরাে বােঝা চাপাবার উদ্দেশ্যে এই ধর্মঘট। এই ধর্মঘট জনসাধারণের বিরুদ্ধে। শতকরা ত্রিশ ভাগ অর্থাৎ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভাড়া বাড়াবার দাবিটাই অবাস্তব এবং জন-বিরােধী। এবং এই অতি-মুনাফা লুটবার জনবিরােধী দাবির উপরে সরকারের সঙ্গে আলােচনা পর্যন্ত করতে অস্বীকার করেছেন বাস মালিকরা। এক কথায় ১৬ হাজার বাসের কয়েক লক্ষ যাত্রীর জীবন যাত্রা বিপর্যস্ত করে, তাদেরই অসুবিধাকে মূলধন করে যাত্রীদের পকেট কেটে মুনাফা বৃদ্ধির দাবিতে বাস মালিকরা এই বেআইনী ধর্মঘট করেছেন। মালিকদের এই কাজ থেকে আর একবার প্রমাণিত হল যে, পরিবহনের মতাে অত্যাবশ্যক কৃত্যকগুলি মুনাফাখখার বেসরকারী মালিকানার হাতে ছেড়ে দেওয়ার অর্থ লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাত্যাহিক জীবনও জীবিকার পথ নিয়ে তাদের ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া। জনসাধারণের সুবিধার্থে যেসব কৃত্যক রয়েছে, সেগুলি সরকারী পরিচালনায় থাকলে প্রয়ােজনীয় ভরতুকী দিয়ে চালানাে যায়, মুনাফার প্রশ্ন সেখানে ওঠে না। বেসরকারী মালিকানায় মুনাফার হারটাই যেহেতু মুখ্য, সেহেতু জনসাধারণের সুযােগ-সুবিধা তাদের আর্থিক রিলিফ দেবার প্রশ্নের ব্যক্তি মালিকানায় স্থান নেই। রাজ্য সরকার প্রাইভেট বাস মালিকদের এই ধর্মঘট বেআইনী ঘােষণা করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করতে পারেন না । বাস মালিকদের ধর্মঘটের ফলে বাস শ্রমিক কর্মচারীরা বেকার হয়ে থাকছেন। এই ধর্মঘট চলাকালীন বেতন ও মজুরি তাদের অবশ্য প্রাপ্য। বাস শ্রমিক কর্মচারীদের এই মজুরি রক্ষার দায়িত্ব যেমন সরকারকে নিতে হবে তেমনি অবিলম্বে মালিকরা এই বেআইনী ধর্মঘট তুলে না নিলে সমস্ত পথ পরিবহনকে রাষ্ট্রীয় পরিচালনায় আনবর জন্যও সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।

সূত্র: কালান্তর, ১৮.৭.১৯৭১