You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ৭ই ডিসেম্বর, শনিবার, ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৩৮১

খাদ্য সংগ্রহ অভিযানে প্রতিবন্ধকতা

আগামী ১০ই ডিসেম্বর থেকে বাধ্যতা মূলক ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানকে আরো জোরদার করা হবে। এ ফসল সংগ্রহ অভিযান চলবে দু’মাস। মাত্র চার দিন আগে স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি সূত্র থেকে প্রাপ্ত সংবাদ প্রকাশিত হতে না হতেই প্রতিদিনের দৈনিক পত্রিকার পাতাগুলোতে অন্য ধরনের সংবাদ ও প্রকাশিত হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান যাতে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয় সেজন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সমাজবিরোধী এবং অসাধু ব্যক্তিরাও রীতিমতো তৎপর হয়ে উঠেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে খবর এসেছে সেখানকার আমনুরা, পাঁচালী, গোলাবাড়ি, সোনার চান্দি, গোমস্তাপুর, রোহনপুর, রাধানগর এলাকায় দুর্বৃত্তরা রাতের অন্ধকারে থেকে পাকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার বিভিন্ন এলাকায়ও একই ঘটনা ঘটছে।
কাহিনীর এখানেই শেষ নয়। সমাজবিরোধীরা ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানকে বানচাল করে দেবার জন্য গরীব কৃষকদের সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রয় বাধ্য করে দুহাতে মুনাফা লুটছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাটে বাজারে নিজেদেরকে সরকারি ধান সংগ্রহকারী এজেন্ট পরিচয় দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ৭৪ টাকা মণ দরে ধান কিনে নিয়ে যাচ্ছে। খবরে প্রকাশ, নবাবগঞ্জ মহাকুমার গোমস্তাপুর, নাচোল, ভোলাহাট এবং রাজশাহী সদর মহকুমার গোদাগাড়ী, তানোর ও মোহনপুর থানার বিভিন্ন হাট-বাজারে এইসব টাউটদের আনাগোনা ক্রমে বেড়েই চলেছে। এসব ভুয়া এজেন্টরা জাল রশিদও দিচ্ছে কৃষকদের। কুলে করা যেতে পারে এসব এলাকায় এখনও নাকি সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়নি।
ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হলে তার পরিণতি কী হবে তা আজ আর বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণের অপেক্ষা রাখে না। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খাদ্য সংগ্রহ অভিযানের পক্ষে জনমত গড়ে তুলবার জন্য দলীয় সংসদ সদস্য ও কর্মীদের প্রতি অনেক আগেই নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল সফরে যাচ্ছেন। তারা সরেজমিনে তদন্ত করে দেখবেন খাদ্য সংগ্রহ অভিযান কতটা এগিয়েছে এবং এ বিষয়ে জনমতও তারা গড়ে তুলবেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যেসব অশুভ সংবাদ আসছে তারই পরিপ্রেক্ষিতে সংগ্রহ অভিযান কতটা সফল হবে! এ প্রশ্নের জবাব খুজে পাওয়ার মধ্যেই কিন্তু সমস্যার সমাধান নিহিত।
কথায় বলা সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়। কাজেই সময় থাকতেই দেশের বৃহত্তর স্বার্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। আর এগিয়ে আসতে হবে দেশের সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোকে। ভুলে গেলে চলবেনা ঘরে-বাইরে খাদ্যঘাটতির সংকটময় মুহূর্তে খাদ্য সংগ্রহ অভিযানকে সাফল্যমন্ডিত করে তোলার দায়িত্ব সকলের।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অপরিসীম খামখেয়ালি!

সাধারণতঃ শিক্ষাঙ্গনে মেধাবী শিক্ষার্থীদেরই রাষ্ট্রীয় বৃত্তি দেওয়া হয়ে থাকে। এবং এইসব রীতির একটা মেয়াদও থাকে। উচ্চ শিক্ষা তথা বিশ্ববিদ্যালয় বা কারিগরি শিক্ষা ক্ষেত্রে ঐ একই নিয়ম প্রযোজ্য। সে ক্ষেত্রে যে সকল শিক্ষার্থীর ২বা ৩ অথবা ৫ বছর মেয়াদ বৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে আসছে হঠাৎ করে তাদের সেই বৃত্তি বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীর জন্য কত মারাত্মক ফলশ্রুতি বহন করে আনতে পারে-তা ভুক্তভোগীর কাছে ব্যাখ্যার প্রয়োজন নিশ্চয়ই রাখে না। এমন কি যে ছাত্রটি ধনী, যার অর্থের প্রয়োজন নেই – সে ক্ষেত্রেও তার মেধা ভিত্তিক বৃত্তির টাকা একটা অপরিসীম মূল্য তার কাছে থাকেই। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে বৃত্তি বন্ধ করে দেওয়ার আকস্মিক সংবাদটি তার জন্যে ও মর্মান্তিক খবর বৈ কি! তারচেয়েও বড় কথা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের যথেচ্ছ কাজ-কারবারের খেসারত মেধাবী দরিদ্র ছাত্ররা কেন দেবে? ‘বাংলার বাণী’র প্রতিবেদনে প্রকাশ ডি,পি,আই ও স্বাস্থ্য দপ্তরের এমনই খামখেয়ালিপনার ফলে চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট ও বরিশাল মেডিকেল কলেজ ছাত্র জীবনের চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। যাকে অন্যদিকে প্রশাসনিক দুর্বলতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের শৈথিল্য রূপেও চিহ্নিত করা যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে আরো যেসব তথ্য জানা গেছে তা চাঞ্চল্যকরো বটে। চট্টগ্রাম কলেজের ১৯৬৯-৭৪ ও ১৯৭০-৭৫ ব্যাচের ছাত্রদের ১৯৭০-৭৫ মেয়াদী ডিপিআই প্রদত্ত বৃত্তি ১৯৭৩ সালের জুন থেকে হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু সে ব্যাপারে ট্রেজারিতে কোনো নির্দেশনা না দেয়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষ নিয়মিত সে টাকা উঠিয়ে যথারীতি ছাত্রদের দিয়ে এসেছে। তারপর ১৯৭৪ এর এপ্রিলে ডিপিআই দপ্তর অকস্মাত্ নড়ে ওঠে এবং ’৭৩ এর জুন থেকে ‘’৭৪ এর মার্চ পর্যন্ত দেয় বৃত্তির টাকা ফেরত দেয়ার জন্য চট্টগ্রাম কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতি উক্ত দপ্তর এক নির্দেশ নামা প্রেরণ করে। ডি পি আই এর দপ্তর থেকে চুয়াত্তরের এপ্রিলে যখন গত দশ মাসেও বৃত্তির টাকা ছাত্রদের কাছ থেকে ফেরত চাওয়া হচ্ছে ঠিক তার দুই মাস পরেই এর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে মেডিকেল কলেজগুলোতে জানানো হয়েছে যারা নতুন স্কিম অনুযায়ী কোন টাকা পায়নি, তারা ডিপিআই প্রদত্ত বৃত্তির টাকা নিয়মিত তুলতে পারবে। এই দুই বিপরীতমুখী নির্দেশের রহস্যই বা কি স্বভাবতঃই সে প্রশ্নের কীট ও আমাদের মস্তিষ্কে দংশন করে!
প্রথম কথা হল-বৃত্তির টাকা হঠাৎ বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ এল কেন? যদি তার আকস্মিক কোন হেতু ঘটে থাকে তাহলে তারও ব্যাখ্যা দেয়া প্রয়োজন ছিল নিশ্চয়ই। দ্বিতীয়তঃ যে কোনো নির্দেশ নামা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সীমারেখায় না পৌঁছে মাসের-পর-মাস কাগজের ফাইলে বন্দি থাকে কি করে? তারপর সেই লজ্জাজনক গাফিলতির জন্য বিন্দুমাত্র লজ্জিত না হয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর নিরীহ বৃত্তিধারী শিক্ষার্থীদের কাছে বৃত্তির টাকা ফেরত চানই বা কি করে? তারই প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে আবার উল্টো নির্দেশ। সব যেনো পাগলের কারখানা! তাহলে অর্পিত দায়িত্ব ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় যারা খামখেয়াল ও অকর্মণ্যতার পরিচয় দিচ্ছেন-তাদের সেই অযোগ্যতার খেসারত কি তবে মেধাবী শিক্ষার্থীদেরই দিতে হবে? আমরা এও জানি যে, প্রতিটি দপ্তর বিশেষ উদ্দেশ্য ও কর্ম সম্পাদনের দায়িত্বে নিযুক্ত আছে। সেখানে উদ্দেশ্যমূলক বা দুরভিসন্ধিমূলক কার্যকলাপের দ্বারা দপ্তরভিত্তিক প্রশাসনিক আওতায় নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে স্বার্থ হাসিলের অবকাশ সৃষ্টি করার কোন অধিকার তাদের নেই। অতএব এলোপাথাড়ি নির্দেশ নয় -প্রতিটি কর্মের জবাব ও চাই!

লবণের বিকল্প কি আনন্দ সংবাদ?

সারাদেশ ব্যাপী লবণের তীব্র হাহাকার বিরাজ করছে। দেশের কোন কোন অঞ্চলে লবণের টিকিটিও নাগাল পাওয়া যাচ্ছেনা। আবার যেসব অঞ্চলে লবণের সাক্ষাৎ মিলছে, সেখানে প্রতিসের লবণের দাম শুনে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে যাবার উপক্রম। লবণের দামে দেশের এক অঞ্চলের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের কোনরকম যোগাযোগ নেই। এই ঠিক-ঠিকানা বিহীন লবণের দাম কোনদিন স্থিতিশীল হবে কিনা কে জানে। তবে লবণ উৎপাদনের ঘাটতি মেটানোর জন্য বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করা শুরু হয়েছে। এমনকি, লবণ সংকটে জর্জরিত জনসাধারণকে উদ্ধারের জন্য সরকার জরুরি ভিত্তিতে হেলিকপ্টারে অর্ধশতাধিক মণ লবণ ভোলায় নিক্ষিপ্ত করেছেন। এতে সাময়িকভাবে ভোলাবাসীদের সঙ্কট নিরসন হবে কিন্তু এ ব্যবস্থা সরকার দেশের কয়টি অঞ্চলে প্রয়োগ করতে সক্ষম হবেন সেটা একটা প্রশ্ন বটে। ২০ থেকে ৪০ টাকা যদি প্রতিসের লবণের দাম হয়, তাহলে তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার আওতাবহির্ভূত ব্যাপারেই পরিণত হবে। প্রকৃত প্রস্তাবে হয়েছেও তাই। লবণ ছাড়া যেহেতু আমাদের চলে না, সেহেতু লবণের বিকল্প ব্যবস্থা নিয়েও ভাবনা চিন্তার উদয় হয়েছে। সিলেট জেলার কানাইঘাট থানার কাইউমপুর গ্রামের জনৈক বৃদ্ধা রান্নাবান্নার কাজে লবণের পরিবর্তে আনারস গাছের গোড়ায় সাদা অংশ ব্যবহার করেছেন। ওই অঞ্চলের স্কুলের একজন বিজ্ঞান শিক্ষক ব্যাপারটি পরীক্ষা করে নাকি অভিমত দিয়েছেন যে, আনারস গাছের গোড়ায় সাদা অংশ লবণের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। লবণের বিকল্প আবিষ্কারের এ ঘটনাটি খুবই চমকপ্রদ সন্দেহ নেই। এতে যেমন আশার আলো আছে, তেমনি আছে নিরাশার কালোছায়া। আশান্বিত হওয়ার কারণ এই জন্য যে, লবণ সংকট যখন তুঙ্গে, তখন লবণের বিকল্প কিছু আবিষ্কার হওয়ার লক্ষণ শুভ। লবণের পরিবর্তে যদি আনারস গাছের গোড়ায় সাদা অংশে ব্যবহার করে সন্তোষজনক ফল পাওয়া যায়, তাহলে অনেকেই হয়তো সে জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠবেন। কিন্তু হতাশার কারণ হলো তাতে যদি আনারসের দাম বেড়ে যায়, তাহলেও আমাদের বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না। সবাই আনারস গাছের গোড়া কিভাবে সংগ্রহ করবেন সেটাও একটা সমস্যা। এই অবস্থায় লবণের বিকল্প আবিষ্কারের খবর আমাদের আশান্বিত করার চাইতে নৈরাশ্যের দিকেই ধাবিত করবে। এবং লবণ সংকটের যদি কোনরকম সুরাহা না সাধিত হয়, তাহলে জনসাধারণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে কিনা সন্দেহ। লবণের বিকল্প আবিষ্কারের ঘটনা থেকে একথা আমাদের কাছে জলের মত পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, দেশব্যাপী লবণের সমস্যা কত তীব্র আকার ধারণ করেছে। সমস্যা যখন তীব্র হয়ে ওঠে তখনই মানুষ সমাধানের জন্য বিকল্প পথ খোঁজে। লবন এর বিকল্প আবিষ্কার এর মধ্যেও সেই চিহ্ন দৃশ্যমান। অতএব, লবণ উৎপাদন বাড়ানোর কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করার জন্য লবণ চাষীদের সর্বত্র রকম সাহায্য সহযোগিতা করে সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে। দুই কোটি মণ লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা যাতে অর্জিত হয় এখন সে দিকে দিতে হবে গভীর দৃষ্টি।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!