You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.07 | ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ডাক দেন - সংগ্রামের নোটবুক
সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে
৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ডাক দেয়ার পাশাপাশি, এদিন আরাে একটা অসাধারণ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হলাে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবনের সামনে, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (মতিয়া গ্রুপ) উদ্যোগে। ওইদিন পূর্ব বাংলার ছাত্র-যুবকরা ডামি রাইফেল কাঁধে নিয়ে সামরিক কায়দায় প্রশিক্ষণে অংশ নেয় এবং তাদের সাথে ছাত্রীরাও মার্চপাস্টে অংশগ্রহণ করে। একই দিন ন্যাপ (ওয়ালী)-এর পূর্বাঞ্চলীয় শাখাপ্রধান অধ্যাপক মােজাফফর আহমদ প্রত্যন্ত গ্রামবাংলায় গণমুক্তি বাহিনী গঠন করে মুক্তির সংগ্রাম শুরু করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। এ পর্যায়ে দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়কোচিত একটা পদক্ষেপ নেন বঙ্গবন্ধু, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. নূরুল উল্লাহকে ডেকে তাকে বেতারের ট্রান্সমিটার তৈরি করার দায়িত্ব দেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির তড়িৎকৌশল বিভাগের প্রধান ড. জহুরুল হকের তত্ত্বাবধানে ৯ দিন কাজ করার পর প্রত্যাশিত ট্রান্সমিটারটি তৈরি করা হয়। (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৪২২-৪২৩)। অবশ্য এ বিষয়ে ভিন্নমত পােষণ করে তৎকালীন ছাত্রনেতা আবদুল কুদুস মাখন বলেছেন, ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু নাকি আখাউড়া শাখার দুই আওয়ামী লীগ নেতা লাল মিয়া ও গােলাম রফিককে একটি বেতারকেন্দ্র স্থাপন বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ভারতে পাঠিয়েছিলেন। আর তাদের অভিজ্ঞতাই নাকি প্রথম বেতার কেন্দ্র স্থাপনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল।
৯ মার্চ পল্টনের জনসভায় মওলানা ভাসানী তার অবস্থান সুস্পষ্ট করে বলেন, পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হইবে, পাকিস্তান অখণ্ড থাকিবে না, অখণ্ড রাখিব না। ইয়াহিয়ার বাপেরও ক্ষমতা নাই ইহা ঠেকায়।’ তিনি আরাে বলেন, আমি শেখ মুজিবকে আমার তিন পুত্রের চেয়েও ভালােবাসি। আমার রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে ৩১ জন সেক্রেটারির সাথে কাজ করেছি। তাদের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানই শ্রেষ্ঠ। সেক্রেটারি।’ এ জনসভায় কিছু কর্মী ‘স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা, মওলানা ভাসানী-ভাসানী’ বলে শ্লোগান দিতে থাকে। ফলে একই সময়ে, একই উদ্দেশ্যে আন্দোলনরত দুটি দলের ‘দুইজন জাতির পিতার ঘােষণায় যথেষ্ট বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এদিন নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়, এতে জাতীয় সরকার গঠনের জন্য বঙ্গবন্ধুকে অনুরােধ করা হয় এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ’-এর পরিবর্তে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নাম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একই দিন পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির দুই অংশ (মণি সিংহ এবং আবদুল হক-মােহাম্মদ তােয়াহা নেতৃত্বাধীন) পৃথক পৃথকভাবে দুটি লিফলেট প্রচার করে; লিফলেটের বক্তব্যে মত ও পথের ভিন্নতা থাকলেও উভয় পক্ষের দাবি ছিল একটাই—‘সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে মুক্তি এনে দিতে হবে।’
ইতােমধ্যে পূর্ব বাংলা যেন জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরিতে পরিণত হয়ে গেছে। শহর থেকে উপশহর, বাজার থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম—সর্বত্র একই আলােচনা, দেশ কি সত্যি সত্যিই স্বাধীন হতে পারবে? ইয়াহিয়া-ভুট্টো-টিক্কা মিলে সবুজ শ্যামল ভূখণ্ডটাকে শ্মশান বানিয়ে ফেলবে না? ওদের আছে প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী, ভারী ভারী অস্ত্র, আছে যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ—আমাদের কাছে কী আছে, বাঁশের লাঠি আর দেশপ্রেম ছাড়া? তবে হ্যা, আমাদের একজন অকুতােভয়, দেশপ্রেমিক নেতা আছেন বটে—যিনি হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার চেয়েও বড় জাদুকর, হাতের ইশারায় বাংলার আবালবৃদ্ধবনিতাকে একই সুতােয় গাঁথতে পারেন, প্রাণ উৎসর্গের নিঃসঙ্কোচ প্রেরণা জোগাতে পারেন—কিন্তু কেবল প্রাণ উৎসর্গ করলেই তাে স্বাধীনতা আসবে না, এর জন্য শত্রুকে তাড়াতে হবে, কেউটেদেরকে নির্বংশ করতে হবে, সেই শক্তি কোথেকে পাবেন তিনি? কিন্তু শক্তি যদি তার না-ই থাকবে, তাহলে ইয়াহিয়াভুট্টোকে চ্যালেঞ্জ জানালেন কী করে? গণমানুষের নেতা হয়ে, তিনি নিশ্চয়ই তার সমর্থকদের পিশাচের সামনে ঠেলে দেবেন না। তাছাড়া আমরা, মানে তার সমর্থকরা—নিরস্ত্র হতে পারি, কিন্তু মনের শক্তি কি নেই? সেই শক্তি আর দেশপ্রেম নিয়ে তাঁর পাশে তাে দাঁড়াতে পারি; তিনি তাে বলেই দিয়েছেন, ‘যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক।’ আমাদের উচিত নয় প্রস্তুত হয়ে থাকা? তিনি যদি ইয়াহিয়া, টিক্কাতে ভীত না হন, প্রাণ উৎসর্গ করতে ভয়  পান, তাহলে আমরা ভয় পাব কেন? মাসুদুল হকের বর্ণনায়, ৭ মার্চের ভাষণ ‘প্রতিটি মুক্তিযােদ্ধার কাছে হয়ে যায় স্বাধীনতার ডাক।
৬ দফা ঘােষণার মধ্য দিয়ে যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটান, তা প্রতিটি মুক্তিযােদ্ধাকে করে তােলে একেকটি মুজিব। তাদের হাতের রাইফেলের নাম হয়ে যায় মুজিব। বর্বর পশুশক্তির বুলেটবিদ্ধ প্রতিটি বাঙালির নাম হয়ে যায় মুজিব। এখানে মুজিব অনন্য, অসাধারণ, তার পাশে দাঁড় করানাে যায় না কাউকে। তিনি যেন এক আকাশছোঁয়া মানুষ হয়ে গেছেন।’ (পৃ. ১৮০)। | ১০ মার্চ, নিউ মার্কেট সংলগ্ন এক পথসভায় অধ্যাপক মােজাফফর আহমদ পাকসেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সবাইকে উদাত্ত আহ্বান জানান। গণহত্যার প্রতিবাদে শিল্পী মুর্তজা বশীর সরকারি চিত্র প্রদর্শনী বর্জনের সিদ্ধান্ত ঘােষণা করেন। নিউইয়র্ক প্রবাসী বাঙালিরা জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সংস্থারটির মহাসচিব উথান্টের কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। নারায়ণগঞ্জের সিনেমা হলগুলােতে বিনা টিকেটে দেশাত্মবােধক চলচ্চিত্র দেখানাে হতে থাকে।
হাইকোর্টসহ সকল সরকারি-আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান-বর্জন অব্যাহত থাকে। শহীদদের স্মরণে সকল অফিসে কালাে পতাকা উত্তোলন করা হয়। ইতােমধ্যে পাক সরকার সামরিক অধ্যাদেশ (১১৫ ধারা) জারি করে সকল কর্মকর্তাকর্মচারীকে নিজ নিজ কর্মস্থলে যােগ দেয়ার নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু তাতে তেমন সাড়া মেলেনি। ১৪ মার্চ ‘আর সময় নাই’ শিরােনামে ঢাকার সকল সংবাদপত্র মিলে একটি অভিন্ন প্রতিবাদী সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। এ দিনই ভুট্টো পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দুই দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান। তার এই আহ্বানের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের একাংশের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, পাকিস্তানের সংহতি বিনষ্ট করার জন্য মুজিব নন, ভুট্টোই একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। তার এ বক্তব্য খােদ পশ্চিম পাকিস্তানেই সমালােচনার ঝড় তােলে। সেখানকার অধিকাংশ রাজনীতিক ভুট্টোর বক্তব্যের বিরােধিতা করে তাকে ক্ষমতালােভী, ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে অভিহিত করতে থাকেন। | ১৫ মার্চ দুপুর আড়াইটায় ইয়াহিয়া খান উর্দিপরা বিভিন্ন পদবির লােকজন নিয়ে ঢাকায় এলেন। শেখ মুজিবের সাথে একের পর এক বৈঠক করে চললেন। বাস্তবিকপক্ষে আলােচনার নামে ইয়াহিয়া তখন কালক্ষেপণ করে যাচ্ছিলেন। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য, অস্ত্র, গােলাবারুদ আনার জন্যে সময় নিচ্ছিলেন এবং বাঙালিকে শায়েস্তা করার জন্য জেনারেল পরিবেষ্টিত হয়ে ছক কষছিলেন। ইয়াহিয়ার দুরভিসন্ধি কিছুটা হলেও আঁচ করতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু, তাই তিনি ১৯ মার্চ কর্নেল এম এ জি ওসমানীকে ডেকে সশস্ত্র সংগ্রামের খুঁটিনাটি দিক নিয়ে আলােচনায় বসেছিলেন। এ সময় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অনেক অফিসার গােপনে এসে দেখা করতেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে। ২১ মার্চ ১২ জন উপদেষ্টাকে সাথে নিয়ে ভুট্টোও ঢাকায় এলেন।
তিনি গােপন বৈঠকে বসেন ইয়াহিয়ার সাথে। এরপর প্রহসনধর্মী আলােচনা আরাে চলল, কিন্তু মুজিব তার ন্যায্য দাবি আদায়ে অনড় থাকায় এবং ভুট্টো ক্ষমতার লােভে যুক্তি বিসর্জন দেয়ায়—আলােচনাতে কোনাে অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছিল না। ( ২৩ মার্চ পাকিস্তানের জাতীয় দিবস, ইয়াহিয়া-ভুট্টো ঢাকায় অবস্থান করার পরও—বঙ্গবন্ধু নিজ উদ্যোগে ওই দিনটিকে ছুটি ঘােষণা করেন। কাকডাকা ভাের থেকে আমার সােনার বাংলা আমি তােমায় ভালবাসি প্রস্তাবিত জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে দিবসটির সূচনা হয়। ভাের পাঁচটায় বঙ্গবন্ধু তার ভবনে নিজ হাতে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করেন। সকাল ৯টায় পল্টন ময়দানে জয় বাংলা বাহিনী। কুচকাওয়াজ ও মহড়া শুরু করে। ঢাকার বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে তারা যায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে। সেখানে বঙ্গবন্ধু জয় বাংলা বাহিনীর অভিবাদন গ্রহণ করেন এবং বলেন, “গত বাইশ দিনের অসহযােগ আন্দোলনে ক্ষমতাসীন চক্রের মাজা ভেঙে দিয়েছি। বাংলাদেশে যাতে একটিও শশাষণকারী থাকতে না পারে সেজন্য ব্যাপক আন্দোলন অব্যাহত রাখা হবে।’ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ দিনটিকে পালন করে প্রতিরােধ দিবস’ হিসেবে। ভাসানী ন্যাপ পালন করে স্বাধীন পূর্ব বাংলা দিবস’ হিসেবে, (ওইদিন পল্টনের জনসভায় ভাসানী আসেননি; তিনি নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তবে এটা যে তাঁর রাজনৈতিক অসুস্থতা, এ বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন সবাই) বাংলা জাতীয় লীগ (অলি আহাদ) পালন করে স্বাধীন বাংলাদেশ’ দিবস হিসেবে। এদিন ঢাকার সর্বত্র, এমনকি বিদেশি দূতাবাসে, হােটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালেও (যেখানে ভুট্টো তার সঙ্গীদের নিয়ে উঠেছিলেন) বাংলাদেশের নতুন পতাকা পতপত করে উড়ছিল।
ঢাকার একটি ইংরেজি দৈনিক পরের দিন আবেগসঞ্জাত শিরােনাম করেছিল A new Flag is born. affuef farcisa: A new flag is born today- a flag with a golden map of Bangladesh implanted on a red circle placed in the middle of deep green rectangle base. This is the latest flag added to the total list of the flags representing various states and nations of the contemporary world. This is the flag for ‘independent Bangladesh’. This is the flag that symbolizes the emancipation of 75 million Bangalees. (The People, Dacca). ( ২৩ মার্চ সৈয়দপুরে, অবাঙালি অনুচরদের নিয়ে পাকসেনারা নিরীহ বাঙালি জনগােষ্ঠীর ওপর হামলা চালায়। নিহত হন ৫০ জন বাঙালি। রংপুরে প্রত্যন্ত গ্রামে ঢুকে পাকবাহিনী তাণ্ডব শুরু করে দেয়। ২৪ মার্চ চট্টগ্রামবাসীর কাছে খবর পৌছল যে, বন্দরে এম. ভি. সােয়াত নামে অস্ত্রবােঝাই একটি জাহাজ ভিড়েছে এবং সেখান থেকে অস্ত্র খালাস করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খবরটা শােনামাত্র হাজার হাজার জনতা বন্দর এলাকা ঘিরে ফেলে এবং অস্ত্রের চালান যাতে শহরে ঢুকতে না পারে, সেজন্য রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে রাখে, বেশ কয়েকটা ব্রিজ নষ্ট করে ফেলে। জনতার প্রতিরােধ ভাঙার জন্য সৈন্যরা নির্বিচারে গুলি ছােড়ে, তাতে বেশ ক’জন প্রতিরােধকারী শাহাদতবরণ করেন। এদিন বঙ্গবন্ধুর বাসার সামনে জনতার ঢল নামে, নেতা সবাইকে আশ্বস্ত করেন, অন্য কেউ শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানি করতে পারে, কিন্তু আমি তা করব না। সন্ধ্যের একটু আগে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে তিনটি হেলিকপ্টার আকাশে উড়ল। একটির যাত্রী মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী, তিনি যাবেন যশাের ক্যান্টনমেন্টে; দ্বিতীয়টিতে আছেন মেজর জেনারেল খাদিম হােসেন রাজা, তিনি কুমিল্লা হয়ে চট্টগ্রামে যাবেন।
তৃতীয় হেলিকপ্টারে আছেন তিন জন সিনিয়র অফিসার, তারা প্রথম যাবেন সিলেটে, সেখান থেকে রাজশাহী ও রংপুর ক্যান্টনমেন্টে। হেলিকপ্টারের যাত্রীদের উদ্দেশ্য একটাই—‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর প্রয়ােগকৌশল সম্পর্কে বিভিন্ন সেনানিবাসের অধিনায়কদের নির্দেশনা দিয়ে আসা (বাঙালি হত্যা ও পাকিস্তানের ভাঙ্গন, পৃ. ১৬৭)।

[বি. দ্র. : মার্চের উত্তাল দিনগুলাে—ব্যক্তি ইয়াহিয়া খান এবং তার সরকার কর্তৃক প্রকাশিত শ্বেতপত্রে (প্রকাশকাল : জুলাই, ‘৭১) উল্লিখিত হয়েছে। যেভাবে :

০৩ মার্চ : আওয়ামী লীগের নির্দেশমতাে ঢাকার রেডিও এবং টেলিভিশন নতুন এক বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত প্রচার করতে শুরু করে।
০৭ মার্চ : যশােরে ডেপুটি কমিশনারের অফিসে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার জায়গায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
১৪ মার্চ : শেখ মুজিব আগের সব নির্দেশ বাতিল করে দেন এবং ১৫ মার্চ থেকে নতুন নির্দেশ সংবলিত কার্যক্রম ঘােষণা করেন। এর একটি নির্দেশে জেলা প্রশাসন ও মহকুমা হাকিমদের আওয়ামী লীগ সংগ্রাম পরিষদের সাথে ঘনিষ্ঠ যােগাযােগ ও সহযােগিতার কথা বলা হয়েছে।
২৩ মার্চ : ঢাকা এবং পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য শহরে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি ভবনের চূড়ায় পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার পরিবর্তে ‘বাংলাদেশের পতাকা উড়তে দেখা যায়।… শেখ মুজিবুর রহমান তার বাসভবনে এক সশস্ত্র মার্চপাস্টে সালাম গ্রহণ করেন। এখানেও আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
 ২৫ মার্চ : শেখ মুজিবুর রহমান সাবেক কর্নেল ওসমানীকে বিপ্লবী বাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করেন।… ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস এবং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিভিন্ন বহিঃস্ফাড়ির মধ্যে ওয়্যারলেস ট্রান্সমিটারের সাহায্যে যােগাযােগ প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এক ইউনিট থেকে দ্রুত অন্য ইউনিটে নির্দেশ পাঠানাে হয়।
২৬ মার্চ : বেতার ভাষণে ইয়াহিয়া বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান তার অসহযােগ আন্দোলন শুরু করে দেশদ্রোহিতামূলক কাজ শুরু করেছেন।… এই লােকটি (শেখ মুজিব) এবং তার দল পাকিস্তানের শত্রু, আর তারা পূর্ব পাকিস্তানকে দেশ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করতে দেশের ঐক্য ও সংহতিকে আক্রমণ করেছেন—এ অপরাধের শাস্তি তাকে পেতেই হবে।’

সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সত্য অসত্য অর্ধসত্য-বিনয় মিত্র