You dont have javascript enabled! Please enable it!
রাষ্ট্রভাষা বনাম বাংলা ভাষা বাঙালি
অতিশয় শান্তিপ্রিয় জাতি, তবে আত্মমর্যাদার প্রশ্নে সে সদা সচেতন ও আপসহীন। বাঙালি সহজে দ্বন্দ্বে জড়ায় না, তবে তার উপরে কোনাে বিষয় জোর করে চাপিয়ে দিলে রুখে সে দাঁড়াবেই। বাঙালি জাতিসত্তার এই কোমল কঠিন বৈশিষ্ট্যটি, ‘ভাঙবে, তবু মচকাবে না’—ইংরেজরা টের পেয়েছে হাড়ে হাড়ে। বাঙালির এই রুখে দাঁড়াবার অদম্য প্রত্যয়কে পাকিস্তানি শাসকচক্র হয় অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে, নতুবা নিজেদের কৌশল ও শক্তিমত্তা সম্পর্কে বেশি আশাবাদী হওয়ার কারণে, অথবা নিছক হঠকারিতাবশত পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পরপরই বাঙালির ভাষা ও ঐতিহ্যে আঘাত হানার মতাে ক্ষমাহীন ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার এক মাস আগেই আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জিয়াউদ্দিন প্রস্তাব করেছিলেন, উর্দুকেই নতুন দেশটির রাষ্ট্রভাষা করা উচিত। অন্যদিকে, প্রায় একই সময়ে জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ অভিমত রেখেছিলেন, ‘যদি বিদেশী ভাষা বলিয়া ইংরেজি ভাষা পরিত্যক্ত হয়, তবে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণ না করার পক্ষে কোন যুক্তি নাই। যদি বাংলা ভাষার অতিরিক্ত কোন রাষ্ট্রভাষা গ্রহণ করিতে হয়, তবে উর্দু ভাষার দাবি বিবেচনা করা কর্তব্য। নবগঠিত রাষ্ট্রের কর্ণধারগণ শহীদুল্লাহর যৌক্তিক প্রস্তাবে কান না দিয়ে গ্রহণ করলেন জিয়াউদ্দিনের অভিমত। তারা চিন্তা করেছিলেন, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ—খাদ্য, পােশাক, রুচি, সংস্কৃতি, ভাষা—সব দিক থেকেই আলাদা দ্যোতনার ধারক ও বাহক। কেবল | ধর্মের দোহাই দিয়ে তাদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখা সম্ভব হবে না। যদি উভয় অংশে উর্দুভাষা প্রসারের কাজটি সুষ্ঠুভাবে করা যায়, তাহলে ভাষিক ঐক্যের মাধ্যমে দুই ভূখণ্ডের বন্ধনকে দৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড় করানাে যাবে।
যেই ভাবা, সেই কাজ। শাসকচক্র ফরমান জারি করলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রের সরকারি কাজকর্মে কেবল দুটি ভাষা ব্যবহার করা যাবে—উর্দু এবং ইংরেজি। বস্তুত সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি, রাষ্ট্রের এই কুটিল সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়নি। বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করবার দাবি জানিয়ে অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে ১৯৪৭ সালের ১ (কোথাও উল্লিখিত হয়েছে ২ তারিখ) সেপ্টেম্বর গঠিত হলাে ‘তমদুন মজলিস’ নামের একটি সংগঠন। ডিসেম্বরের গােড়ায় করাচিতে অনুষ্ঠেয় এক শিক্ষা সম্মেলনে রাষ্ট্রীয় কর্তাব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। ৬ ডিসেম্বর, পত্রিকা মারফত এই সংবাদ অবহিত হওয়ার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে দলে দলে বেরিয়ে পড়ে, বাংলা ভাষার পক্ষে সভা-সমাবেশ করে এবং এ আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গঠন করা হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ।’ ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮; পাকিস্তানের রাজধানী করাচিতে গণপরিষদের অধিবেশন চলছিল। অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে—সকল সদস্যকে জানিয়ে দেয়া হলাে, এখানে উর্দু অথবা ইংরেজি ভাষায় বক্তব্য রাখতে হবে। পূর্ব পাকিস্তান কংগ্রেস দলের নির্বাচিত সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উক্ত সিদ্ধান্তের বিরােধিতা করে বলেন, যেহেতু পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা, তাই পার্লামেন্টের অধিবেশনে বাংলায় বক্তব্য রাখার সুযােগ থাকা উচিত। একই দলের সাধারণ সম্পাদক রাজকুমার চক্রবর্তী দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, “উর্দু পাকিস্তানের কোনাে প্রদেশেরই কথ্য ভাষা নয়। তা হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানের উপর তলার কিছুসংখ্যক মানুষের ভাষা।… বাংলাকে আমরা দুই অংশের সাধারণ ভাষা করার জন্যে চাপ দিচ্ছি না। আমরা শুধু চাই পরিষদের সরকারী ভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি।’ (আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮)।
প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান, পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীন, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং রাজকুমার চক্রবর্তী কর্তৃক উপস্থাপিত প্রস্তাবের তীব্র বিরােধিতা করেন এবং বাঙালির ন্যায্য দাবিকে অগ্রাহ্য করে যান। ১৯ মার্চ, পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ, যার মাতৃভাষা ছিল উর্দু (তবে ভাষাটি তিনি রপ্ত করতে পারেননি) এলেন ঢাকায়। ২১ মার্চ রেসকোর্স মাঠের বিশাল জনসভায় এবং ২৪ মার্চ কার্জন হলের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে জানিয়ে দেন অভিন্ন সিদ্ধান্ত, ‘আপনাদেরকে পরিষ্কারভাবে বলে দেয়া দরকার যে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, অন্য কোনাে ভাষা নয়। এ ব্যাপারে যদি কেউ আপনাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে, তাহলে বুঝতে হবে যে, সে হচ্ছে রাষ্ট্রের শত্রু। …মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই ভাষার প্রশ্ন তােলা হয়েছে।’ দুই জায়গাতেই ছাত্র জনতা জিন্নাহর বক্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়; জিন্নাহ ছাত্রজনতার দাবিকে পাশ কাটিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে ফিরে যান করাচিতে। ইতােমধ্যে রাষ্ট্রীয় ইন্ধনে উর্দুর প্রসার ও বাংলাবিনাশের ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ডাকটিকিটে, মানি-অর্ডার ফরমে, মুদ্রার গায়ে, সরকারি সকল কাগজপত্রে বাংলা বাদ দিয়ে উর্দু আর ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর পরিবর্তে “উজিরে আলা’, ‘প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে ‘উজিরে আজম’, ‘ব্যবসার পরিবর্তে তেজারতি’ শব্দ ব্যবহারের ধুম লেগে যায়। পাক শাসকচক্রের আশীর্বাদধন্য কতিপয় বঙ্গসন্তান—যেমন কবি গােলাম মােস্তফা, তালিম হােসেন, মােফাখখারুল ইসলাম, সৈয়দ আলী আহসান প্রমুখ বাংলা ভাষার মধ্যে হিন্দুয়ানির ছোঁয়া আবিষ্কার করে উর্দু প্রচারের অপতৎপরতায় আত্মনিয়ােগ করেন।
‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ নামক পুস্তিকায় গােলাম মােস্তফা অভিমত পােষণ করেন, যে ভাষা পাকিস্তানের অস্তিত্ব, স্বার্থ ও আদর্শের অনুকূল হইবে, সেই ভাষাই হইবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।… বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠত্ব লইয়া হিন্দুর ন্যায় মুসলমানেরাও যদি গর্ব করে, তবে সে গর্ব আমাদের আত্মবিস্মৃতি ও দাসমনােভাবেরই পরিচয় বহন করে। আর ঠিক এই কারণেই উর্দুর দাবী বলিষ্ঠ হইয়া উঠে।’ কাজী নজরুল ইসলাম রচিত কবিতার ‘সজীব করিব মহাশ্মশান’ বদলে দিয়ে সজীব করিব গােরস্তান এবং তার বিভিন্ন কবিতায় ব্যবহৃত ‘ভগবান’ শব্দটিকে পাল্টে দিয়ে ‘রহমান’ ব্যবহারপূর্বক নজরুল সাহিত্যকে মুসলমানি রূপ দেবার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন অভাজন কবি গােলাম মােস্তফা। তখন বাংলা ভাষার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ আরবি, ফারসি শব্দ ঢুকিয়ে নবতর ‘পাকিস্তানি বাংলা সৃষ্টি করবার জন্য উদ্ভট পদক্ষেপও নেয়া হয়। এ রকম ভাষার একটা নমুনা, গােজাশতা এশায়াতে আমরা অতীতে বাংলা ভাষার নানা মােড় পরিবর্তনের কথা মােখতাসারভাবে উল্লেখ করেছিলাম। বাংলা ভাষা মুসলমান বাদশা এবং আমীর-ওমরাহদের নেক নজরেই। পরওয়ারেশ পেয়েছিল এবং শাহী দরবারের শান-শওকত হাসিল করেছিল। (মাহে-নও, ১.৭.১৯৪৯)। পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান, জাতিতে যদিও বাঙালি—হঠাৎ প্রস্তাব করে বসেন, ধর্মীয় ভাষা আরবির হরফে বাংলা হরফ চালু করলে বাঙালিকে আর বাড়তি চেষ্টা করে আরবি শিখতে হবে না। অর্থাৎ বাংলা ভাষা লেখা হবে আরবী হরফে। অর্থাৎ রাষ্ট্রভাষা মর্যাদা তাে দূরের কথা, বাংলাকে আর বাংলাই রাখা হবে না।’ (একুশে ফেব্রুয়ারি সংকলন, হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত, পুথিপত্র প্রকাশনী, ঢাকা ১৯৬৫, পৃ. ২১২)। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের স্কুল শিক্ষক আবদুর রহমান।
বেখুদকে দিয়ে ‘হুরুফুল কোরান এর নামে আরবি বর্ণমালা দিয়ে বাংলা বর্ণমালা বিনষ্টের অপচেষ্টা করা হয়। ভাষা-বিতর্কের ডামাডােলের মধ্যে বাংলা এবং বাঙালি যে অভিন্ন। সত্তা’—এ রকম অভিমত পােষণ করে কলম ধরেন কয়েকজন বিশিষ্ট লেখক। এদের মধ্যে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মন্তব্য বিশেষভাবে প্রণিধানযােগ্য, ‘আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙ্গালি। এটি কোন আদর্শের কথা নয়, এটি বাস্তব কথা। মা প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙ্গালিত্বের এমন ছাপ মেরে দিয়েছেন যে, মালা-তিলক-টিকিতে কিংবা টুপি-লুঙ্গি-দাড়িতে ঢাকবার জো’টি নেই।’ (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র, ১ম খণ্ড, পৃ. ১১৬)। হামেদ আলী, আরও চড়া কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষগণ আরব, পারস্য, আফগানিস্তান বা তাতারের অধিবাসীই হউন আর এতদ্দেশবাসী হিন্দুই হউন, আমরা এক্ষণে বাঙ্গালি, আমাদের মাতৃভাষা বাংলা।… তাহারা (বাংলা ভাষার শত্রুরা) বাংলার বাঁশবন ও আম্রকাননের মধ্যস্থিত পর্ণকুটিরে নিদ্রা যাইয়াও এখনও বােগদাদ, বােখারা, কাবুল, কান্দাহারের স্বপ্ন দেখিয়া থাকেন। কেহ কেহ আবার বাঙ্গালার পরিবর্তে উর্দুকে মাতৃভাষা করিবার মােহে বিভাের। দুর্বল ব্যক্তিরা যেমন অলৌকিক স্বপ্ন দর্শন করে, অধঃপতিত জাতিও তেমনি অস্বাভাবিক খেয়াল আঁটিয়া থাকে।’ (বাসনা, ২:১, ১৩১৪)। বঙ্গীয়মুসলমান-সাহিত্য পত্রিকার ১:২, ১৩২৫ সংখ্যায় সৈয়দ এমদাদ আলী স্পষ্টভাবে ঘােষণা করেন, “কেহ কেহ উর্দুর স্বপ্নে বিভাের হইলেও বাঙ্গালী মুসলমানের মাতৃভাষা যে বাঙ্গালা এ বিষয়ে কোন মতদ্বৈত থাকা উচিত নহে।… আমার স্বজাতীয় ভাইয়েরা কেবল এই কথাই মনে রাখিবেন যে বর্তমান বাঙ্গালা ভাষা সংস্কৃতমূলকই হউক, কি আর যাহাই হউক, উহা আমাদেরই মাতৃভাষা।’ কিন্তু না, চোর যেমন ধর্মের কাহিনী শুনতে নারাজতেমনি পাকিস্তানি শাসকচক্রও যুক্তি আর নীতির পথে হাঁটতে অনিচ্ছুক। ভাষাপ্রশ্নে তাদের চূড়ান্ত স্বৈরতান্ত্রিকতা প্রকাশ পায় ২১ ফেব্রুয়ারি, যখন ঢাকার রাজপথ রফিক, সালাম, বরকত প্রমুখের রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়।
বিস্ময়কর ব্যাপার হলাে, ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে মুসলিম লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ, আলী আহমদ খান, খয়রাত হােসেন যখন আইন পরিষদের অধিবেশন বর্জন করে রাস্তায় নেমে এলেন, মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি দল থেকে পদত্যাগ করেন দৈনিক আজাদের সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন, তখন পশ্চিম পাকিস্তানের হায়দরাবাদে অবস্থানকারী বাঙালি জাতির অন্যতম নেতা হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী ‘ঢাকায় ছাত্র মিছিলে গুলিবর্ষণের নিন্দা করে বিবৃতি দিলেও, পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা উর্দুই হওয়া উচিত বলে বিবৃতিতে মতপ্রকাশ করেছিলেন’ (বশীর আল-হেলাল, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, বাংলা একাডেমি, ১৯৮৫, পৃ. ৪৫৬)। অবশ্য কয়েকদিন পর সােহরাওয়ার্দী বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করবার দাবি জানিয়ে নতুন একটি বিবৃতি দেন, যা ২৯ জুন ‘৫২ তারিখে সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এদিকে ঘটনাক্রমে প্রচার হয়ে যায়, বঙ্গীয় বিখ্যাত সন্তান শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ভাষা আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বাংলার বাঘ বলে কথিত জনাব হক তখন ওই উড়াে খবরের বিরােধিতা করে বিবৃতি দিয়ে বলেন, এ রকম অপপ্রচার বর্তমান সরকারের সঙ্গে তার। পদাধিকার সংক্রান্ত সম্পর্ক ও প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমীনের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কে ভাঙন ধরাবার অপচেষ্টা মাত্র (বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস : ড. মােহাম্মদ হাননান, পৃ.৭৮)।  ২১ ফেব্রুয়ারি, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবার শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণ এবং এই ঘটনায় বেশ ক’জন ছাত্র-যুবকের মৃত্যু—ভাষা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যােগ করে দিল। ২২ ফেব্রুয়ারি শহীদদের গায়েবি জানাজায় লক্ষ লক্ষ লােকের সমাবেশ ঘটল। সরকারি অফিসের লােকজন কাজ ফেলে রেখে সামিল হলাে মিছিলে। এ অবস্থায় আন্দোলনের তীব্রতা অনুধাবন করতে পেরে বিপর্যস্ত মুসলিম লীগ সরকার, | ২২ ফেব্রুয়ারি ‘৫২ তারিখে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সুপারিশ করে এবং এ মর্মে জাতীয় পরিষদে প্রস্তাব পাস করে নেয়।

সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সত্য অসত্য অর্ধসত্য-বিনয় মিত্র

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!