You dont have javascript enabled! Please enable it!

স্বাধীনতা দিবস থেকে বিজয় দিবস অবধি যারা শত্রুপক্ষের সাথে ছিলো:

১. শাহেদুল আনাম খান: ঢাকা সেনানিবাসে একাত্তরে ১৪তম ডিভিশনের (এখন যাহা ৯ম Div) জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি)-এর এডিসি হিসেবে ‘ক্যাপ্টেন’ পদ মর্যাদায় কর্মরত ছিলো। স্বাধীনতার পর এই ব্যক্তি সেনা সদর, ঢাকায় ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল’ র‌্যাংকে পদোন্নতি লাভ করে। আজকাল টিভি চেনেলে ‘টক-শো’এর মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে তার জ্ঞানের আলোয় ঝাপসা করে দেন।

২. আবদুস সালাম: জেনারেল স্টাফ অফিসার (জিএসও)-৩ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘ক্যাপ্টেন’ র‌্যাংকে ঢাকা সেনানিবাসে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডে সেবাদাস হয়ে ভ্রাতৃঘাতী হতে দ্বিধাবোধ হয়নি এই অফিসার। অথচ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি নিয়ে ‘মেজর জেনারেল’ হতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি তার।

৩. মো: আশরাফুল হুদা: বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকালে ঢাকায় ছুটিতে অবস্থান করা সত্তে¡ও ‘ক্যাপ্টেন’ আশরাফুল হুদা গা ঢাকা দিয়ে থাকে। মাতৃভুমিকে মুক্ত করার লক্ষ্যে স্বাধীনতার সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিতে মন সাড়া দেয়নি। কিন্তু ঠিকই বিজয় অর্জিত হবার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হতে না পারলেও, পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিয়ে পুলিশ সদর দফতরে ধাপে ধাপে ডিআইজি হতে সময় বেশি লাগেনি তার। ইনিও ‘মাঝেমাঝেই টক-শো’তে হাজির হয়ে জাতিকে ছবক দেন।

৪. এ.এল.এ. জামান: কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে শত্রুপক্ষের সাথে সম্পৃক্ত থেকেছিলো ৫৩ ফিল্ড আর্টিলারী রেজিমেন্টে। সেই একাত্তরে এ. এল. এ. জামান ছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ‘ক্যাপ্টেন’। এমনই সেবাদাস ছিলো এই ব্যক্তি, আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত থেকে যেতে তার কোনো লজ্জা লাগেনি। পুরস্কার স্বরূপ, সেই সামরিক বাহিনীতে নিজেকে ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল’ পদ অবধি নিতে সক্ষম হয়েছিলো।

৫. এস. এ. এন. এম. ওকবা: একাত্তর সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯ সিগন্যাল রেজিমেন্টে ঢাকায় ‘ক্যাপ্টেন’ পদ মর্যাদায় কর্মরত থাকা পবিত্র কর্তব্য বলে বিবেচনা করেছিলো। বাংলাদেশ রাষ্ট্রে সেনাবাহিনীতে ঠাঁই না হলেও বিশেষ তদবিরের মাধ্যমে সদ্যগঠিত ‘বাংলাদেশ বিমান’ প্রতিষ্ঠানে তার নিয়োগ হয়ে যায়। আর বাংলাদেশ বিমানের ‘জেনারেল ম্যানেজার’ পদ দখল নিতে তার কোনো সমস্যা হয়নি।

৬. মো: আবদুল হাকিম: ‘ক্যাপ্টেন’ র‌্যাংকে মো: আবদুল হাকিম একাত্তরের স্বাধীনতা দিবস থেকে বিজয় দিবস অবধি ৩১ ফিল্ড আর্টিলারী রেজিমেন্টে নিয়োজিত ছিলো, মুক্তিযুদ্ধে বিপরীত স্রোতে থেকে পাক বাহিনীর পক্ষে কর্মরত থাকে। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে এই ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তার চাকুরী না হলে নিজেকে ব্যবসায়ে সম্পৃক্ত করে আবদুল হাকিম।

৭. মো: মুরাদ আলী খান: কুমিল্লা সেনানিবাসে কম্বাইন্ড মিলিটারী হাসপাতালে ‘ক্যাপ্টেন’ হিসেবে কোয়ার্টার মাস্টার পদে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে নিজেকে কর্মব্যস্ত রেখেছিলো। স্বাধীনতার পর সেনাবাহিনীতে স্থান না হলেও সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে মুরাদ আলী সত্যিই মুরোদ প্রদর্শনে সক্ষম হন চাকুরী বাগিয়ে। এক সময় ‘বন উন্নয়ন শিল্প সংস্থা’র ডাইরেক্টর হতেও তার কোন রূপ অসুবিধে হয়নি।

৮. এস. এম. মাহবুবুর রহমান: পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে একাত্তরের উত্তাল সময়ে ‘ক্যাপ্টেন’ র‌্যাংকে সাপ্লাই অফিসার হিসেবে ময়নামতি সেনানিবাসে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর ‘বাংলাদেশ বিমান’ গঠিত হলে সেই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী যোগাড় হয় তার অনায়াসে। শেষাবধি বাংলাদেশ বিমানের ‘জেনারেল ম্যানেজার’ পদ তার করায়ত্ব হয়।

৯. মোহাম্মদ ফিরোজ: পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ছিলো ‘ক্যাপ্টেন’। একাত্তরে তার কর্মস্থল ছিলো সিওডি, ঢাকা সেনানিবাসে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে এই ব্যক্তি আর সামরিক পেশা জীবনে ফিরে যেতে পারেনি। তবে সুকৌশলে সিভিল চাকুরী ম্যানেজ করতে কামিয়াব হতে প্রত্যক্ষ করা যায়। বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ‘যুব উন্নয়ন পরিদপ্তরে’ তার নিয়োগ হয়। এক সময় বর্ণিত পরিদপ্তরের ডাইরেক্টর বনে যায় ভেলকিবাজির মতোন।

১০. মো: মোখলেসুর রহমান: ময়নামতি সেনানিবাসে অবস্থানরত তৃতীয় কমান্ডো ইউনিটে ‘ক্যাপ্টেন’ র‌্যাংকে মোখলেসুর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে নিয়োজিত ছিলো মুক্তিযুদ্ধের সময়। তারই সহকর্মী এটিএম হায়দার (ক্যাপ্টেন, পরে কর্নেল ও বীর উত্তম) দুই নম্বর সেক্টরে গেরিলা ও সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা নির্মাণের কারিগর ছিলেন। কিন্তু মোখলেসুর রহমান সেবাদাস হয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে লড়েছে। ভাগ্য তার সুপ্রসন্ন ছিলো। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল’ পদোন্নতি লাভ করলেও কর্নেল হায়দারকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পঁচাত্তরে হত্যা করা হয়।

১১. জামিলুর রহমান খান: মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হবার সময় জামিলুর রহমান ছুটিতে ঢাকা শহরেই অবস্থান করছিলো। একাত্তরে তার পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে পদ মর্যাদা ছিলো ‘ক্যাপ্টেন’। তার কঠিন হৃদয়ে এক মুহূর্তের জন্যে অনুভব হয়নি, তাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে হবে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হতে না পারলেও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রণালয়ে চাকুরী পেয়ে যায় জামিলুর রহমান। পরবর্তীতে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের ‘উপ-সচিব’ পদ অলংকৃত করতে দেখা যায় তাকে।

১২. এ.টি.এম. মনসুরুল আজিজ: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন ‘ক্যাপ্টেন’ ছিলো একাত্তরে। প্রতিরোধ-যুদ্ধের সময় তার অবস্থান ছিলো ঢাকা সেনানিবাসে ১৯ সিগন্যাল রেজিমেন্টে। মনসুরুল আজিজ এমনই প্রভুভক্ত ছিলা, পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড তাকে ঢাকায় স্থাপিত সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালতে বিচারের দায়িত্ব দেয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তার স্থান না হলেও পুলিশ বাহিনীতে হয়ে যায়। বাংলাদেশ পুলিশের সদর দপ্তরে স্বল্প সময়ের মাঝে মনসুরুল আজিজ ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) হয়ে যায়।

১৩. মোতাহার হোসেন: উনিশ শ’ একাত্তর সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মোতাহার হোসেন ঢাকা সেনানিবাসে ‘প্রশাসনিক অফিসার’ হিসেবে কর্মরত ছিলো। মুক্তিযুদ্ধের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কোনোরূপ বিঘ্ন ব্যতিরেকে যোগ দিতে সমর্থ হয়। পরবর্তী সময়ে ‘কর্নেল’ পদ অলংকরণেও তার কোনো সমস্যা হয়নি।

১৪. ওসমান আলী খান: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই ‘ক্যাপ্টেন’ ঢাকায় কর্মরত থাকলেও প্রতিরোধ ও চূড়ান্ত যুদ্ধের সময় ছুটি ভোগরত অবস্থায় ঢাকা শহরে অবস্থান করছিলো। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তাকে অন্তর্ভুক্ত না করে পুলিশ বাহিনীতে আত্মীকরণ করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরে ওসমান আলী খান ‘ডিআইজি’ পদে উন্নীত হতে প্রত্যক্ষ করা যায়।

১৫. আবদুল কুদ্দুস: একাত্তরের ২৬ মার্চ তার অবস্থান ছিলো সৈয়দপুর সেনানিবাসে। ২৩ ফিল্ড আর্টিলারী রেজিমেন্টে ‘ক্যাপ্টেন’ পদবী নিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছে বলে স্বাধীনতা লাভের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তার স্থান মেলেনি। তাকে পুলিশ বাহিনীতেও প্রেরণ করা হয়নি। তার সর্বশেষ কর্মস্থান ছিলো কাসেম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজে।

১৬. রফিকুল আলম: বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো শেষাবধি। মুক্তিযুদ্ধের কালে সহকর্মী ‘ক্যাপ্টেন’ ওকবা’র মতোন ‘ক্যাপ্টেন’ রফিকুল আলম ঢাকা সেনানিবাসে ১৯ সিগন্যাল রেজিমেন্টে শত্রুপক্ষের সাথে সম্পৃক্ত থেকে গৌরবের কাজ করেছে। আর সিংহ হৃদয়ের বাঙালিগণ তাকে অন্তত বেকার রাখেনি। পুলিশ সদর দপ্তরে ডিআইজির চেয়ারে বসার সৌভাগ্য তার হয়েছে।

১৭. এম. আই. তালুকদার: ময়নামতি সেনানিবাসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ডাক্তার হিসেবে ‘ক্যাপ্টেন’ র‌্যাংকে নিয়োজিত থাকতে হয়েছিলো শত্রুবেষ্টিত থেকে। অথচ সেই সেনানিবাসে ৪০ ফিল্ড এ্যাম্বুলেন্স ইউনিটের কমান্ডিং অফিসার লে: কর্নেল এন. এ. এম. জাহাঙ্গীর, সহ-অধিনায়ক ক্যাপ্টেন বদিউল আলম, লেফটেন্যান্ট এ. কে. এম. ফারুক, লেফটেন্যান্ট নুরুল ইসলাম তুর্কী, আর্মি মেডিকেল কোরের লেফটেন্যান্ট এ. বি. এম. এনামুল হক প্রমুখ চিকিৎসকদের বন্দি করে হত্যা করা হয়। কথিত আছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে স্বাধীনতার পর চিকিৎসক অফিসারদের তীব্র সংকট ছিলো, বিধায় তাকে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তার সর্বশেষ কর্মস্থলের অবস্থান ছিলো ঢাকা সেনানিবাসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ‘কর্নেল’ পদে।

১৮. ফজলুর রহমান ভুঁইয়া: একাত্তরের মার্চে কুমিল্লা সেনানিবাসে ৮৮ মর্টার রেজিমেন্টে এবং মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ঢাকার পিলখানায় একই রেজিমেন্টে পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের সাথে সম্পৃক্ত থেকেছে ‘ক্যাপ্টেন’ ফজলুর রহমান ভুঁইয়া। দেশ স্বাধীন হলে তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ কিংবা মন্ত্রণালয়ে কোথাও আত্মীয়করণ করা হয়নি। এই কীর্তিমান পুরুষের বর্তমান কিংবা সর্বশেষ কর্মস্থল সম্পর্কে আর কোনো তথ্যাবলী উদ্ধার করা যায়নি।

১৯. মো: খুরশিদ আহমেদ: ৩১ ফিল্ড আর্টিলারী রেজিমেন্টে ‘ক্যাপ্টেন’ র‌্যাংকে ঢাকা সেনানিবাসে। খুরশিদ আহমেদ একাত্তরে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সাথে চাকুরী করেছে। নবীন রাষ্ট্রে নবগঠিত সেনাবাহিনীতে তাকে ঠাঁই দেয়া হলেও ‘মেজর’ পদে তাকে কর্মরত থাকতে প্রত্যক্ষ করা গেছে। বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করে সময় পার করছেন মহামান্য খুরশিদ আহমেদ।

২০. মো: আবদুল্লাহ আল আজাদ: মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ই.পি.আর.) সদরদপ্তর পিলখানা, ঢাকায় সহকর্মী ‘ক্যাপ্টেন’ ড্যানিয়েল ইসলামের মতোন কর্মরত ছিলো ‘ক্যাপ্টেন’ পদ মর্যাদায়। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে ‘মুক্তিযোদ্ধা অফিসার’ হবার বিরল সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য তার হয়নি। তবে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে স্থান পাবার মতো ভাগ্য তার হয়েছিলো, ‘কর্নেল’ পদ মর্যাদায় কর্মরত থাকতে তাকে দেখা গেছে।

২১. অহিদুল হক: রংপুর সেনানিবাসে স্বাধীনতা দিবস হতে বিজয় দিবসের মধ্যবর্তী সময়ে ২৯ ট্যাংক রেজিমেন্টে ‘ক্যাপ্টেন’ পদবী নিয়ে, পাকসামরিক বাহিনীর পক্ষে কর্মরত থেকে অহিদুল হক মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধাচরণ করেছিলো। বাংলাদেশ সরকার তাকে সেনাবাহিনীতে ঠাঁই না দিলেও, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ দেন। যার ফলে এই ব্যক্তি এক পর্যায়ে এই বাহিনীর সদর দপ্তরে ‘ডিআইজি’ হতে পেরেছিলো।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, তিনি আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালে বিচারের কাঠগড়া অলংকৃত করেছেন।

২২. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ: একাত্তরে অপারেশন সার্চ লাইটের সময় মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ পাক সামরিক বাহিনীর ৫৭তম ব্রিগেডে ঢাকা সেনানিবাসে ‘জি-৩’ পদে ‘ক্যাপ্টেন’ র‌্যাংকে কর্মরত ছিলো। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তাকে অপতৎপরতার জন্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী কিংবা মন্ত্রণালয়ে চাকুরী দেয়া হয়নি। পরবর্তী সময়ে, এই মহৎ ব্যক্তিটির কোনো হদিস কিংবা তথ্যাবলী আর মেলেনি।

২৩. সৈয়দ আবদুল মান্নান: একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তান ‘মুজাহিদ বাহিনী’র এ্যাডজুটেন্ট হিসেবে ময়মনসিংহে কর্মরত ছিলো সৈয়দ আবদুল মান্নান। সেই সময় তার পদ মর্যাদা ছিলো ‘মেজর’। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, গ্রাম প্রতিরক্ষা কোথাও তার স্থান মেলেনি চাকুরী লাভের জন্যে। পরে অনন্যোপায় হয়ে জিয়া সরকারের সময় ব্যবসা আরম্ভ করে ঢাকা শহরে। ইয়ে ক্যাপিটাল??? ভুতে জোগাড় করেছে।

২৪. আবদুল খালেক: বাংলাদেশের মুক্তি ও স্বাধীনতা যুদ্ধেরকালে আবদুল খালেক পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে ‘মেজর’ পদ মর্যাদায় সামরিক গোয়েন্দা বিভাগে নিয়োজিত ছিলো। স্বাধীন রাষ্ট্রে তার অতীত কর্মকান্ডর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, পুলিশে প্রেরণ করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদর দপ্তরে তাকে ‘ডিআইজি’ হিসেবে পদোন্নতি লাভে প্রত্যক্ষ করা গেছে।

২৫. মো: মোসলেম আলী হাওলাদার: পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানের বাংলাদেশ) ছাত্র ও ক্যাডেটদের সমন্বয়ে ১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পত্তন হয় প্রতিরোধ-যুদ্ধের প্রাক্কালে। বর্ণিত রেজিমেন্টে মোসলেম আলী হাওলাদার ‘ক্যাপ্টেন’ র‌্যাংকে কর্মরত ছিলো। তার সর্বশেষ কর্মস্থল হলো আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘ডেপুটি ডাইরেক্টর’।

২৬. হামিদুর রহমান: মুক্তিযুদ্ধেরকালে ঢাকা সেনানিবাসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ‘স্টাফ সার্জন’ ছিলো। সেই সময় তার পদ মর্যাদা ছিলো ‘মেজর’। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে এই শৈল্য-চিকিৎসক ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে যোগ দেয়।

২৭. মো: আবুল কাশেম: ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের (ই.বি.) এই বাঙালি সেনাকর্মকর্তা একাত্তর সালে ঢাকা সেনানিবাসে এস.এম.ও. ছিলো। তখন তার পদ মর্যাদা ছিলো ‘মেজর’। তাকে স্বাধীন দেশে ‘সি.এস.ডি’র জেনারেল ম্যানেজার করা হয়। জানতে চাইবেন না, কখন।

২৮. মো: আবদুল হামিদ: মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে না পারা এই সামরিক কর্মকর্তা ঢাকা সেনানিবাসে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত থেকে একটি ইউনিটের অধিনায়কত্ব করে। তথ্য সূত্রে অবগত হওয়া যায়, তার সর্বশেষ পদবী ছিলো লে: কর্নেল, একাত্তরে ছিলো ‘মেজর’। বর্তমানে ঢাকার মিরপুরে অবসর জীবন যাপন করছে।

২৯. রুহুল কুদ্দুস: যশোহর সেনানিবাসে অবস্থিত ৬ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ছিলো তার নিযুক্তি। একাত্তরে বর্ণিত রেজিমেন্টে ‘মেজর’ পদ মর্যাদায় তাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, তৎপর থাকতে দেখা যায়। দেশ স্বাধীন হবার পর রুহুল কুদ্দুস বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে স্থান পায়নি। পরবর্তী সময়ের এই গুণধরের আর কোনো সংবাদ জানা যায়নি।

৩০. মো: মোয়াজ্জেম হোসেন: একাত্তর সালের মার্চে রংপুর সেনানিবাসে ‘ক্যাপ্টেন’ পদবীতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সাথে ২৩তম ব্রিগেড সদর দপ্তরে কর্মতৎপর ছিলো। স্বাধীনতার পর তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পরিবর্তে পুলিশ বাহিনীতে প্রেরণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে পদোন্নতি নিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন উল্লেখিত বাহিনীর ‘অতিরিক্ত ইন্সপেক্টর জেনারেল’ পদ অবধি পৌঁছে যায়।

৩১. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বছর মমতাজ উদ্দিন আহমেদ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন ‘মেজর’ পদ মর্যাদায় কর্মরত ছিলো। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তার জায়গা না হলেও, সরকারি পেশা জীবন আরম্ভ করতে তার কোনো বেগ পেতে হয়নি। সর্বশেষ কর্মস্থল ও পদবী সম্পর্কে জানা যায়, ‘যুগ্ম সচিব’ পদ মর্যাদায় বি.জে.সি’র চেয়ারম্যান অবধি অনায়াসে হয়ে গেছে এই মেধাবী ব্যক্তি।

৩২. মো: আবদুস সালাম: সৈয়দপুর সেনানিবাসে ২৩ ফিল্ড আর্টিলারী রেজিমেন্টে ‘ক্যাপ্টেন’ র‌্যাংকে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত একাত্তরে আবদুস সালাম কর্মব্যস্ত থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শত্রুপক্ষের সাথে থাকা এই বাঙালি সেনা অফিসারকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আর অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পরে পুলিশ বাহিনীতে প্রেরিত হয়ে আবদুস সালাম নিজেকে ‘ডিআইজি’ পদবী পর্যন্ত টেনে নিতে সক্ষম হয়।

৩৩. আবদুস সাত্তার: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন দেশপ্রেমিক ‘মেজর’ র‌্যাংকের বাঙালি সেনা অফিসার, মুক্তিযুদ্ধকালে সেবাদাস হয়ে পেশা জীবনে নিয়োজিত ছিলো আগাগোড়া। পরিতাপের বিষয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে জায়গা করে নিতে না পারলেও মন্ত্রণালয়ে প্রবেশে বাধা পায়নি মোটেও। তার সর্বশেষ কর্মস্থল চিহ্নিত হয়েছে, পাট মন্ত্রণালয়ের ‘যুগ্ম সচিব’ হিসেবে।

 

৩৪. গিয়াস উদ্দিন: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি ‘ক্যাপ্টেন’ ছুটি ভোগরত অবস্থায় ঢাকা শহরে অবস্থান করছিল একাত্তরে। স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাতে অংশ নেবার তাগিদ অনুভব করেনি মোটেও। স্বাধীন বাংলাদেশে তাকে সেনাবাহিনী পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পরে জিয়া সরকারের সময় পুলিশ বাহিনীতে প্রেরণ করা হয়েছিলো। পুলিশ সদর দপ্তরে তাকে ‘এসপি’ পদে কর্মরত থাকতে দেখা যায়। তার খোঁজ এটুকুই।

৩৫. মাহমুদ আল ফরিদ: ঢাকা সেনানিবাসে একাত্তরে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ‘লেফটেন্যান্ট’ র‌্যাংকে সি.ও.ডি. শাখায় নিয়োজিত ছিলো। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তাকে গ্রহণ না করা হলেও পুলিশ বাহিনীতে আত্মীকরণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে পদন্নোতি পেতে পেতে মাহমুদ আল ফরিদ পুলিশের ‘ডি.আই.জি.’ বনে যায়।

৩৬. কামাল উদ্দিন: পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে ‘স্কোয়ার্ডন লিডার’ পদ মর্যাদায় ঢাকা সামরিক বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া বিভাগে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত কর্মতৎপর ছিলো কোনোরূপ দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই। অফিসার সংকটকে কাজে লাগিয়ে বিমানবাহিনীতে স্বদর্পে যোগ দেয়। পরবর্তী সময়ে ‘উইং কমান্ডার’ র‌্যাংকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে কর্মরত থাকে। বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করছে।

৩৭. মনজুরুল হক: যশোহর সামরিক বিমান ঘাঁটিতে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর এই বাঙালি কর্মকর্তা রাডার বিভাগে ভারপ্রাপ্ত অফিসার হিসেবে একাত্তরে নিয়োজিত ছিলো। সেই সময় তার পদবী ছিলো ‘ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট’। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে অফিসারের তীব্র সংকট থাকায় সৌভাগ্যবশত তাকে বর্ণিত বাহিনীতে পেশাজীবন চালু রাখার সুযোগ দেয়া হয়। বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছে কানাডায় অভিবাসন নিয়ে, সমর্থিত সূত্রে অবগত হওয়া যায়।

৩৮. মোদাব্বের চৌধুরী: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে ‘লেফটেন্যান্ট’ র‌্যাংকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ঢাকা সেনানিবাসে সিওডি শাখায় সহকর্মী মাহমুদ আল ফরিদের ন্যায় নিজেকে কর্মব্যস্ত রাখে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তার স্থান হয়নি অতীত অপকর্মের জন্যে। তবে তার সৌভাগ্য, পুলিশ বাহিনীতে আত্মীকরণ করা হয়। সেই বাহিনীতে তাকে ‘এআইজি’ পদে উন্নীত হতে প্রত্যক্ষ করা যায়। পর্যায়ক্রমে নারকটিকস বিভাগের মহাপরিচালকের পদ পুরষ্কৃত করেন। জিজ্ঞাসা করবেননা কোন সরকার!!!

৩৯. ইরফান: একাত্তরে পাকিস্তান বাহিনীতে ‘ফ্লাইং অফিসার’ ছিলো। তথ্যের অপ্রতুলতার কারণে তার পুরো নাম উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সামরিক বিমান ঘাঁটি ঢাকায় ‘সি.এন্ড.আর.’ শাখায় পূর্ণদ্যমে ও স্বেচ্ছায় বিজয় দিবস অবধি পাক অনুগত সেবাদাস হয়ে। মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত স্রোতে থাকলেও ভাগ্যের আরো উন্নতি ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশে। বিমানবাহিনীতে ‘এয়ার কমোডর’ পদে তাকে কর্মরত থাকতে দেখা যায়, এমনকি মস্কোয় বাংলাদেশ দূতাবাসে ‘সামরিক এ্যাটাসে’ হিসেবেও নিয়োগ প্রাপ্ত হয় ভাগ্যলক্ষীর কারণে।

৪০. মোশারাফ হোসেন: পাকিস্তান সামরিক বাহিনী একাত্তরের মার্চে বাংলাদেশে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, ধর্ষণযজ্ঞ চালালে এবং বিমান বাহিনী অনেক বাঙালি অফিসার সুকৌশলে ঢাকাসহ অন্যান্য সামরিক বিমান ঘাঁটি হতে ত্রিপুরা সীমান্ত অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও, সৌভাগ্যবান এই বাঙালি ফ্লাইং অফিসার ঢাকা সামরিক বিমান ঘাঁটিতে থেকে যায়।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে তাকে পেশা জীবন বজায় রাখতে প্রত্যক্ষ করা যায় ‘ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট’ পদবীতে। এমনকি, ১৯৭২-৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির এডিসি হিসেবে চরম চৌকশ ও মেধাবীর পরিচয় দেন মোশাররফ হোসেন নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে। সমর্থিত সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে অভিবাসী কানাডায় বসবাস করছে।

৪১. ইমদাদ হোসেন: পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বাঙালি এই অফিসার একাত্তরের ১৫ ডিসেম্বর অবধি শত্রুপক্ষের সাথে ঢাকা সামরিক বিমান ঘাঁটিতে ‘ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট’ পদ মর্যাদায় কর্মতৎপর ছিলো। বিজয় দিবসের পূর্ব দিন মিত্র বাহিনীর জঙ্গি বোমারু বিমানের হামলায় কর্তব্যরত উর্দি পরা অবস্থায় মৃত্যু মুখে পতিত হয় পাক সারজমিনের এই পুঙ্গবটি!!!

৪২. নাসির উদ্দিন: ঢাকার সামরিক বিমান ঘাঁটিতে নাসির উদ্দিন পাকিস্তন বিমান বাহিনীর ‘ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট’ হিসেবে পেশা জীবন অব্যাহত রাখা শ্রেয় বিবেচনা হয়তো করেছিলো। বাংলাদেশের সেই সময়কাল চলমান অসহযোগ আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ভাষণ, তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণা, সহকর্মীদের অনেকের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে যোগ দান এবং বাংলার গণমানুষের পরম আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীন স্বদেশ নির্মাণের প্রত্যয়, কোনো কিছুই তার চেতনার গভীরে প্রবেশ করেনি।
তাই তো ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ অবধি পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত শত্রুপক্ষের কাজ চালিয়ে যেতে তার কোনো দ্বিধা-সংকোচ হয়নি। বিজয় দিবসে নাসির উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধাদের গুলির আঘাতে নিহত হয়, তথ্য সূত্রে জানা যায়।

৪৩. কে. এম. রহমান: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আর্মি মেডিকেল কোরের চিকিৎসক ‘লে: কর্নেল’ র‌্যাংকে কর্মরত থাকা কে. এম. রহমান একাত্তরে পেশাগত চাকুরির বৃত্তের বাইরে এসে ঢাকা অঞ্চলের জন্যে গঠিত বিশেষ সামরিক আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি হয়েছিলো। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে, তার কৃতকর্মের জন্যে সংশ্লিষ্ট বাহিনীতে নেয়া হয়নি এই ব্যক্তিটিকে। তবে ‘পাবলিক সার্ভিস কমিশন’-এর অন্যতম সদস্য মনোনীত হয়ে যায় কোন অচেনা জাদুমন্ত্রে!!!

৪৪. আবদুল আজিজ: ছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের ‘মেজর’। মুক্তিযুদ্ধের সময় সামরিক আইন প্রয়োগের মাধ্যমে চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্থাপিত ‘সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালত-১’এর সভাপতি হিসেবে প্রভুদের বিশ্বস্ত সেবাদাস হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত রাখে। স্বাধীনতার পর তাকে আর সেনাবাহিনীতে রাখা হয়নি। পরবর্তী সময়ে তার কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে কোনো তথ্য উদ্ধার হয়নি।

৪৫. মির্জা মোহাম্মদ ইস্পাহানী: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই ‘মেজর’ ময়মনসিংহ অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধকালে পুরো সময় ‘আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসক’ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলো। পরবর্তী সময়ে তার কর্মস্থান, পদবী ও ঠিকানা উদ্ধার হয়নি। খুব সম্ভব তিনি পাকিস্তান রয়ে যান।

৪৬. আবদুল কুদ্দুস : ‘ক্যাপ্টেন’ র‌্যাংকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বেলুচ রেজিমেন্টে চাকুরী করতো। প্রতিরোধ-যুদ্ধ আরম্ভ হলে পাকিস্তান সামরিক সরকার তাকে টাঙ্গাইল এলাকার জন্যে স্থাপিত ‘বিশেষ সামরিক আদালত’ এর সদস্য নিয়োগ করে। বাঙালি এই ক্যাপ্টেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ কিংবা অন্য কোনো বাহিনীতে স্থান পায়নি। তার বর্তমান কর্মস্থল, পদবী কিংবা ঠিকানা অজ্ঞাত রয়ে গেছে।

৪৭. মাহবুবুর রহমান: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নবীন এই বাঙালি সেনা অফিসার একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ‘লেফটেন্যান্ট’ ছিলো। শত্রুপক্ষ তাকে কুমিল্লা অঞ্চলের ‘সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালত’-৫নং এর সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তাকে নেয়া না হলেও নবগঠিত ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সে’ সরকার তার চাকুরীর ব্যবস্থা করে। পরবর্তীতে মাহবুবুর রহমান উক্ত প্রতিষ্ঠানের ‘জেনারেল ম্যানেজার’ পদ লাভ করে।

৪৮. সাকলাইন: পুরো নাম তথ্যের অপ্রতুলতার কারণে উদ্ধার সম্ভব হয়নি। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ‘ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট’ হিসেবে ঢাকার সামরিক বিমান ঘাঁটিতে ২৬শে মার্চ থেকে ১৫ই ডিসেম্বর অবধি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর পক্ষে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলো বিশ্বস্ত একজন অফিসার হিসেবে। ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকা নগর মুক্ত হবার পর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাকলাইনকে মুক্তি বাহিনীর সদস্যগণ হত্যা করে, সমর্থিত সূত্রে জানা যায়।

৪৯. জাহিদুল হক: মুক্তিযোদ্ধাগণ যখন প্রতিরোধ, গেরিলা, সন্মুখ যুদ্ধে নিবেদিত, তখন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ‘স্কোয়াড্রন লিডার’ জাহিদুল হক সামরিক বিমান ঘাঁটি ঢাকায় শত্রæ পক্ষের সাথে কর্মতৎপর ছিলো। তার পরম সৌভাগ্য, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে অফিসারের সংখ্যা সল্পতার কারণে অন্তর্ভুক্ত হতে পেরেছিলো। এমনকি, এক পর্যায়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ‘গ্রুপ ক্যাপ্টেন’ র‌্যাংকে উন্নীত হয়ে যায় এই ব্যক্তি। বর্তমানে জাহিদুল হক প্রবাসে অবসর জীবন যাপন করছে।

৫০. রাব্বানী: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়ব্যাপী ঢাকার সামরিক বিমান ঘাঁটিতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলো। তখন তার পদবী ছিলো ‘স্কোয়ার্ড্রন লিডার’। ১৫ই ডিসেম্বর ১৯৭১ কর্তব্যরত অবস্থায় স্কোয়ার্ড্রন লিডার রাব্বানী (পুরো নাম গবেষণাকালে জানা সম্ভব হয়নি তথ্যাবলীর অস্পষ্টতা ও অপ্রতুলতার কারণে) মিত্র বাহিনীর বোমারু জঙ্গি বিমানের উপর্যুপরি হামলায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে পাকিস্তান কে ধন্য করেন!!!

৫১. কামাল উদ্দিন: তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের রাজধানী ঢাকার কুর্মিটোলা বিমান ঘাঁটিতে ‘ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট’ র‌্যাংকে কামাল উদ্দিন নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলো। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় বর্ণিত ঘাঁটিতে শত্রুপক্ষের দোসর হয়ে নিজেকে কর্মব্যস্ত রেখেছিলো। সৌভাগ্যের বরপুত্র এই বাঙালি অফিসার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে স্থান পেয়ে ‘গ্রুপ ক্যাপ্টেন’ অবধি উন্নীত হয়ে দেশ ও জাতিকে ধন্য করেন। বর্তমানে প্রবাসে অবসর জীবন উপভোগ করছে।

৫২. আইয়ুব আলী: যশোহর সেনানিবাসের সীমানা চৌহদ্দীর মাঝে বিমানবন্দর লাগোয়া বিমান ঘাঁটিতে একাত্তর সালে কর্মরত ছিলো আইয়ুব আলী। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর এই বাঙালি অফিসার ‘ফ্লাইং অফিসার’ পদে পাকিপ্রভুদের সাথে থেকে দেশ সেবাকে উত্তম বিবেচনা করে সময় পার করেছে। আইয়ুব আলীও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে ‘গ্রুপ ক্যাপ্টেন’ র‌্যাংকে পদোন্নতি পায়। প্রবাসে অভিবাসী হয়ে বর্তমান সময়ে অবসরকালীন জীবন কাটাচ্ছে এই বাঙালি ম্যাধাবী পুরীষ!!!

৫৩. মো: আবদুস সালাম: একাত্তরের মার্চে ছুটি ভোগরত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই বাঙালি ‘ক্যাপ্টেন’ মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা সেনানিবাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। পুরস্কার স্বরূপ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হতে না পারলেও নবগঠিত রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ পেয়ে পুনর্গঠনের সুযোগ পায়। এই বাহিনীতে পর্যায়ক্রমে তাকে ‘ডিআইজি’ পদ অলংকরণে প্রত্যক্ষ করা যায়।

৫৪ আবদুস সাত্তার: ময়নামতি, কুমিল্লা সেনানিবাসে নিয়োজিত ছিলো ‘মেজর’ পদ মর্যাদায়। একাত্তরে মার্চ মাসের শেষের দিকে বর্ণিত সেনানিবাসে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে অনেক বাঙালি সেনা অফিসারদের নিঃশেষ করা হলেও এবং অতি নিকটে স্থাপিত দুই নম্বর সেক্টরে কতিপয় বাঙালি অফিসার যোগ দিলেও আবদুস সাত্তার নির্বিকার থাকে। বর্ণিত সেনানিবাসে সরবরাহ শাখায় দ্বিধাহীন চিত্তে কর্মব্যস্ত সময় পার করে মুক্তিযুদ্ধের কালে। যুদ্ধোত্তরকালে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হতে না পারলেও ঠিকই মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি প্রতিষ্ঠানের ‘ডাইরেক্টর’ পদে নিয়োগ লাভে তার কোনো সমস্যা হয়নি।

৫৫. খুরশিদ আহমেদ: পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত এই বাঙালির একাত্তরে পদবী ছিলো ‘মেজর’। পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের উচ্চপদস্থ অবাঙালি (পাঞ্জাবি) সেনা কর্মকর্তাদের সাথে সখ্যের কারণে ঢাকা নগর এলাকার জন্যে গঠিত ‘সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালত-৯’ এর অন্যতম সদস্য মনোনীত হয়ে মনের সুখে অবরুদ্ধ স্বদেশবাসীর অনেকের বিরুদ্ধে প্রহসনমূলক বিচার কার্য সমাধা করেছে। তার এহেন অতীত ন্যাক্কারজনক কৃতকর্মের কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আর স্থান হয়নি। এর সম্পর্কে আরো ব্যাপক অনুসন্ধান প্রয়োজন!!!

৫৬. মুশফিকুর রহমান ভুঁইয়া: একাত্তরের স্বাধীনতা দিবস থেকে বিজয় দিবসের মধ্যবর্তী সময়ে পাকিস্তান সামরিক সরকার ও সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তাদের ভাষায় ‘সশস্ত্র বিদ্রোহী, ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী ও অনুচর কিংবা ধৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তথাকথিত প্রহসনমূলক বিচারের উদ্দেশ্যে ‘সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালত’ গঠন করে, তখন তাকে ঢাকায় স্থাপিত এমনই এক আদালতের সদস্য মনোনীত করা হয়। সেই সময় সেনাবাহিনীতে তার পদবী ছিলো ‘ক্যাপ্টেন’। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে পাকিস্তান দেশপ্রেমিক ম্যাধাবী অফিসারের স্থান আর হয়নি। এর সম্পর্কে আরো ব্যাপক অনুসন্ধান প্রয়োজন!!!

৫৭. আবদুল হামিদ: পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে অর্ডিন্যান্স ইউনিটে চাকুরীতে থাকা বাঙালি এই ‘মেজর’ সামরিক শাসক, আইন প্রশাসক ও পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের পদলেহনকে গৌরবের বিষয় বিবেচনা করে মুক্তিযুদ্ধে গমনে নিরুৎসাহিত ছিলো। তাই তার উচ্চপদস্থ অবাঙালি অফিসারগণ সন্তুষ্ট হৃদয়ে তাকে বাঙালিদের বিরুদ্ধে নীল নকশার বিচারের জন্যে বিচারক নির্বাচিত করেছিলো। তার তখনকার দায়িত্ব এবং পদবী ছিলো, ঢাকা নগর এলাকার জন্যে গঠিত সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালতের সদস্য আর র‌্যাংক ‘মেজর’। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে এহেন অফিসারকে আর গ্রহণ করা হয়নি।

৫৮. খলিলুর রহমান : ঢাকার কুর্মিটোলা বিমান ঘাঁটিতে খলিলুর রহমান পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ‘ফ্লাইং অফিসার’ র‌্যাংকে কর্মরত ছিলো। যেহেতু স্বদেশের স্বাধীনতার জন্যে শত্রুপক্ষর বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করার মানসিকতা তার ছিলো না, সেহেতু বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের পক্ষেই নিয়োজিত থাকা তার পক্ষে স্বাভাবিক বিষয় ছিলো। যুদ্ধেরপর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অফিসার সংখ্যা সল্পতার সমস্যা দূরীকরণে তাই তার সুযোগ মিলে যায়, অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে। ১৯৮৮ সালে ‘গ্রুপ ক্যাপ্টেন’ পদ মর্যাদায় বিমান বাহিনী হতে অবসরপ্রাপ্ত হয় খলিলুর রহমান। বর্তমানে প্রবাসে অভিবাসী জীবন যাপন করছে খলিলুর রহমান।

৫৯. হাবিবুর রহমান : পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ‘স্কোয়াড্রন লিডার’ হাবিবুর রহমান একাত্তর সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা সামরিক বিমান ঘাঁটিতে কর্মরত ছিলো। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তাকে এয়ারফোর্সে যোগ দানের সুযোগ দেয়া হয়। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে এক পর্যায়ে ‘উইং কমান্ডার’ পদে নিয়োজিত থাকতে দেখা যায়। বর্তমানে এই ব্যক্তি প্রবাসে অবসর জীবন যাপন করছে।

৬০. কামাল উদ্দিন : ঢাকার কুর্মিটোলা বিমান ঘাঁটিতে মুক্তিযুদ্ধের বছর কামাল উদ্দিন পাকিস্তান এয়ার ফোর্সে ‘ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট’ র‌্যাংকে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলো, প্রাপ্ত রেকর্ডসে অবগত হওয়া যায়। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে তীব্র অফিসার সংকটের কারণে তাকে পেশা জীবন অব্যাহত রাখার সুযোগ দেয়া হয়। বর্ণিত বাহিনীতে কামাল উদ্দিন ‘গ্রুপ ক্যাপ্টেন’ পদ মর্যাদায় উন্নীত হয় পর্যায়ক্রমে। এই সময়ে কামাল উদ্দিন অবসর জীবনে প্রবাসে অবস্থান করছে।

৬১. মো: শহুদুল হক : রংপুর সেনানিবাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৯ ট্যাংক রেজিমেন্টে মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব সময় থেকে ‘ক্যাপ্টেন’ পদ মর্যাদায় শহুদুল হক চাকুরীরত ছিলো। প্রতিরোধ-যুদ্ধ আরম্ভ হলে প্রভুদের সাথে থেকে স্বজাতির বিরুদ্ধে সঙ্গীন উদ্যত করতে তার মনে কোনো দ্বিধা হয়নি একাত্তরে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তার অতীত ক্রিয়াকর্মের জন্যে স্থান না হলেও, পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করতে কোনোরূপ বাধা হয়নি। ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়ে শহুদুল হক পুলিশের ‘ডিআইজি’ হিসেবে নিয়োজিত থাকে। ইনিও প্রায়সই টিভি চেনেলে এসে জাতিকে ন্যায়-অন্যায় নিয়ে আইনী জটিল মারপ্যাঁচের ছবক দেন!!!

৬২. আবদুল আজিজ : একাত্তরে মার্চ মাসের পূর্ব সময় থেকেই আবদুল আজিজ পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের অফিসার হিসেবে যশোহর সামরিক বিমান ঘাঁটিতে ‘ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট’ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলো। স্বাধীনতা-যুদ্ধে তার কোনো অবদান না থাকলেও এবং পাকিস্তানিদের পক্ষে কাজ করলেও শেষাবধি একই কারণে তাকে বাংলাদেশ এয়ার ফোর্সে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ‘উইং কমান্ডার’ র‌্যাংকে পেশা জীবন অব্যাহত রাখলেও, আবদুল আজিজ এই সময়ে অবসরপ্রাপ্ত।

৬৩. নাজির আহমেদ: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের একেবারে প্রারম্ভিক সময়ে নাজির আহমেদ দিনাজপুরে ই.পি.আর. (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস) ৫ নম্বর সেক্টর সদর দফতরে ‘ক্যাপ্টেন’ পদ মর্যাদায় ‘কোয়ার্টার মাস্টার’ হিসেবে কর্মরত ছিলো। মুক্তিযুদ্ধে তার যোগদানের অবারিত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সাথে থেকে পেশা জীবন অব্যাহত রাখার প্রত্যয়ে দিনাজপুর থেকে পলায়নকালে মুক্তিবাহিনীর সদস্যগণ পুরীষটিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়!!!

৬৪. নিজাম উদ্দিন: একাত্তরের মার্চে তার অবস্থান ছিলো সৈয়দপুর সেনানিবাসে। সেই সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ‘মেজর’ পদ মর্যাদায় নিজাম উদ্দিন কর্মরত ছিলো। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিরোধ-যুদ্ধকালীন সময়ে শত্রুপক্ষের পক্ষাবলম্বন করার কারণে তাকে মুক্তিফৌজের সদস্যবৃন্দ মৃত্যুদণ্ড দেয় বলেই নথিপত্রে, ইতিহাসে, স্মৃতি চারণায় সমর্থন পাওয়া যায়। তবে তার নিহত হবার কারণ সম্পর্কে ভিন্নতর ধারণা প্রচলিত রয়েছে। তবে এ কথা সত্যি, রাষ্ট্র তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি!!!

৬৫. মোহাম্মদ আলী ভুঁইয়া: পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে তার পদ মর্যাদা ছিলো ‘মেজর’। মুক্তিযুদ্ধের একেবারে ঊষালগ্নে রাজশাহীতে কর্মরত মোহাম্মদ আলী ভুঁইয়া পাকিস্তানীদের পক্ষে প্রতারণার মাধ্যমে বাঙালি বিদ্রোহী মুক্তিসেনাদের নিরস্ত্র করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকাবস্থায় সেই বর্ণিত শহর নিহত হয়।

৬৬. এম. এ. সাইদ: একাত্তরে রংপুর সেনানিবাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৩তম ব্রিগেড সদর দফতরে নিজের পেশাগত জীবন অব্যাহত রেখেছিলো ‘ক্যাপ্টেন’ সাইদ। মুক্তিযুদ্ধের সম্পূর্ণ সময় নিজেকে এমন একজন অফিসার হিসেবে শত্রুপক্ষের সাথে সম্পৃক্ত রেখে একাধিক অপতৎপরতায় অংশ নিয়েছিলো, যার কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তার আর স্থান হয়নি। পুলিশ কিংবা অন্য কোনো বাহিনীতেও তাকে যোগদানের সুযোগ দেয়া হয়নি। বর্তমানে এম. এ. সাইদ নিজেকে ব্যবসার সাথে নিয়োজিত রেখেছে। এর সম্পর্কে আরো ব্যাপক অনুসন্ধান প্রয়োজন!!!

★★

নিম্নলিখিত বাঙালি সেনা অফিসারগণ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি, অবরুদ্ধ বাংলাদেশ অবস্থান করা সত্ত্বেও তাদের পরবর্তী ডিটেল সম্পর্কিত কোন তথ্য জানা সম্ভব হয়নি, পাঠকদের সাহায্য প্রয়োজন:-

সদর দফতর ইপিআর, পিলখানা-ঢাকা :
৬৭. ক্যাপ্টেন দেলওয়ার হোসেন,
৬৮. ক্যাপ্টেন ড্যানিয়াল ইসলাম,
৬৯. ক্যাপ্টেন জহিরুল ইসলাম,
৭০. ক্যাপ্টেন আরিফ,

পিলখানা মেডিকেল
৭১. লে: কর্নেল ডা: আবদুর রহমান,
৭২. মেজর ডা: এফ. ফারুক,
৭৩. মেজর ডা: আবদুর রশিদ।

ইপিআর সেক্টর-১ পিলখানা-ঢাকা,
৭৪. মেজর সিরাজুল ইসলাম,
৭৫. ক্যাপ্টেন আবদুল্লাহ আল-আজাদ,
৭৬. ক্যাপ্টেন আবদুল লতিফ।

ইপআর সেক্টর-৩ যশোহর :
৭৭. ক্যাপ্টেন মীর হাসমত উল্লাহ,
৭৮. ক্যাপ্টেন আওলাদ হোসেন।

৭৯. দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গলের ক্যাপ্টেন ডা: আবদুল মালেক,

৮০. ক্যাডেট ব্যাটালিয়ন ১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের (মুক্তিযুদ্ধ পূর্বকালীন সময়ে গঠিত)
৮১. লে: কর্নেল মঈদ উদ্দিন,
৮২. ক্যাপ্টেন এ.বি.এম. রহমত উল্লাহ

প্রমুখসহ শতাধিক বাঙালি সেনা কর্মকর্তা এবং বিমান বাহিনীর অফিসার।

৮৩. ইশফাক ইলাহী: ঢাকার কুর্মিটোলা বিমান ঘাঁটিতে ‘ফ্লাইং অফিসার’ ইশফাক ইলাহী পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর পদলেহনকারী একজন বিশ্বস্ত অফিসার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলো। স্বাধীন বাংলাদেশে ইশফাক ইলাহী সৌভাগ্যবানদের মাঝে অন্যতম এই কারণে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে তীব্র অফিসার সংকটের জন্যে তার যোগদান অধিকতর সহজ হয়। পর্যায়ক্রমে পদোন্নতি তার জন্যে কোনো সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি। বর্তমানে অবসরে থাকলেও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ‘টকশো’য় সামরিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক হিসেবে তাকে দৃশ্যমান হতে প্রত্যক্ষ করা যায়।
তবে ভিন্নমত আছে। জানা যায় যে, তার বাবা আর দু’ভাইকে হত্যা করে পাকবাহিনী। তাই পুরো ব্যাপারটাকে কম্পেনসেট করতে, তাকে প্রাণ ভিক্ষা দিয়ে মহান সাজে এবং প্রটেকশনে ঢাকায় বদলী করে। ভাগ্যক্রমে তার অপর ছোট দু’ভাই সেদিন বেঁচে যায়!!!

★★★

শত্রুপক্ষের সাথে থাকা বাঙালি অফিসারদের নিয়ে শেষ কথা:
একাত্তর সালের বিজয় দিবস অবধি বর্ণিত সেনা ও বিমান বাহিনীতে কর্মরত বাঙালি অফিসার এবং ডাক্তারদের তালিকা গবেষণার মাধ্যমে আরো দীর্ঘ করা যেতো, প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় আপাতত: ৬৭জন বাঙালি অফিসারদের সনাক্ত ও চিহ্নিত করা হলো, পাঠকবৃন্দের ধৈর্যচ্যুতি ঘটার পূর্বে। ১৬জন অফিসার এবং ডাক্তারদের নাম জানলেও তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
অবাক বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করি, তারা হাতের মুঠোয় অবারিত ‘সুযোগ’ লাভ করা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়নি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অকুতোভয় বীর সেনানী হবার যোগ্যতা নিজ নিজ কালিমাদীপ্ত ভুমিকার কারণে বিনষ্ট করেছে।
তাদের অনেকের সিদ্ধান্তহীনতা, অনেকের স্বজাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতামূলক কর্ম-অপতৎপরতা, কতিপয়ের প্রতারণা, কারো কারো গুপ্তচরবৃত্তি, কেউ কেউ গোটা স্বাধীনতা-যুদ্ধের সময়-পরিধিতে আত্মগোপনসহ নানাবিধ কারণে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত স্রোতে প্রবাহিত হয়েছে। অথচ বর্ণিত এই প্রায় বিরাশী জন যদি স্বাধীনতার সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতো, তাহলে বাংলাদেশের কষ্টার্জিত স্বাধীনতার অবয়ব, চেহারা পাল্টে যেতো। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কিংবা আক্রমণ, অভিযান অধিকতর তীব্রতরো হতো। সেই সাথে অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মানসিকভাবে শত্রুপক্ষ দুর্বল থাকতো। এমনও হয়তোবা ‘প্রথম এবং দ্বিতীয় ওয়ারকোর্স অফিসার’দের যুদ্ধবিদ্যা পাঠ, অনুশীলন, প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হতো না!

.

(তথ্যসূত্রঃ শফিকুল আলম চৌধুরী, তার মূল তথ্য এবং তথ্যগত ছক এক রেখে ইষৎ পরিমার্জিত)

Additional info

২ নং ক্রমিকের নান্দাইল থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ সালামকে ২৫ মার্চ পরবর্তী কাছাকাছি সময়ে পশ্চিমে পাঠাইয়া দেয়া হয়েছিল।
৩ নং ক্রমিকের আশরাফুল হুদা বিএনপি এর আমলে আইজি ছিলেন এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি।
৩২ নং ক্রমিকের লে সালাম এর অন্তসত্তা স্ত্রী ২৫ মার্চ রাত্রে পাকিস্তনি সৈনিক দ্বারা ধর্ষিত হন এবং সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাই সালামের পক্ষে পলায়ন অতটা সহজ ছিল না। (major nasir যুদ্ধে যুদ্ধে স্বাধীনতা )

Compiled by –

Tashrique Mohammed Sikder
error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!