You dont have javascript enabled! Please enable it! পশ্চিমা সাংবাদিকের লেখনীতে সে আমলের পুলিশ ও এনএসআই-এর মূল্যায়ন - সংগ্রামের নোটবুক
পশ্চিমা সাংবাদিকের লেখনীতে সে আমলের পুলিশ ও এনএসআই-এর মূল্যায়ন

“বাংলাদেশের প্রধান গােয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’-এর সে আমলে পুত্থানুপুঙ্খ বিবরণ ছাড়া মুজিব-বিরােধী অভ্যুত্থানের কোনাে বিশ্লেষণ সম্পূর্ণ হতে পারে না। এনএসআই এবং আগস্ট ঘটনাবলী—উভয়ের সাথে ভালােভাবে পরিচিত কিছু সূত্র দাবি করেছে যে, হয় এনএসআই অভ্যুত্থান আঁচ করার ব্যাপারে চূড়ান্ত অপদার্থতার পরিচয় দিয়েছে, নতুবা সংস্থাটির একটি উল্লেখযােগ্য অংশের যােগসাজশেই ঘটনাটা ঘটেছে। যদিও প্রথম বিবেচনাটি অবিশ্বাস্য নয়, দ্বিতীয় বিবেচনাটিই সত্যের বেশি কাছাকাছি। | মুজিবের মৃত্যুর অব্যবহিত পরের ঘটনাবলী ও নিয়ােগ বিবেচনা করে এবং সামরিক এবং বেসামরিক উচ্চ পর্যায়ের সূত্রসমূহের বক্তব্য শুনে মনে হয় যে, মুজিবকে ক্ষমতাচ্যুত করার অভ্যুত্থান পরিকল্পনায় এনএসআই-এর একটা অংশ অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িত ছিল। মুজিবের মৃত্যুর পর পরই মােশতাক এ বি এস সফদারকে (বর্তমানে সরকারি চাকুরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত) এনএসআই-এর মহাপরিচালক নিযুক্ত করেন। তার অন্য সহকর্মীদের মতাে সফদারের চাকুরি জীবনের প্রতিও আমাদের ভালােভাবে নজর দেওয়া দরকার, বিশেষত আগস্ট অভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে। মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের সূত্র এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কিছু তথ্য পরিবেশকের অভিযােগ মুজিব-বিরােধী চক্রান্তের সাথে সফদার ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন।  এছাড়া মার্কিন দূতাবাসের স্টেশন চিফ ফিলিপ চেরির সাথেও মূল যােগাযােগ রক্ষাকারী হিসাবে তিনি কাজ করেছেন বলে জানা যায়। সাক্ষাৎকারে চেরি প্রথমে সফদারের সাথে দেখা হওয়ার কথা অস্বীকার করেন।

পরে অবশ্য তিনি স্বীকার করেন যে, বাংলাদেশের গােয়েন্দা তৎপরতার শীর্ষস্থানীয় এই ব্যক্তিটির সাথে একটা স্পাের্টস ক্লাবে তার দেখা হয়। কিন্তু মার্কিন দূতাবাসকে সফদার অভ্যুত্থান সংক্রান্ত কোনাে খবর দিয়েছেন এমন কথা চেরি অস্বীকার করেন। ১৯২৫ সালে ময়মনসিংহে সফদারের জন্ম। ১৯৫০ সালে তিনি পাকিস্তানের পুলিশ ও গােয়েন্দা বিভাগে যােগদান করেন। ১৯৫৯-এর মধ্যে তিনি ইন্টেলিজেন্স ব্যুরাের সহকারীর পরিচালকের পদে উন্নীত হন। ১৯৬৫ পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। তারপর তিনি পূর্ব পাকিস্তানের (আজকের বাংলাদেশ) গােয়েন্দা তৎপরতার দায়িত্বভার পেলেন উপ-পরিচালকের পদমর্যাদাসহ।  ১৯৬৯ সালে ফেব্রুয়ারিতে ছ’মাস ধরে সারাদেশব্যাপী আন্দোলনের ফলে যখন এক দশক-এর পুরনাে আইয়ুব খার একনায়কতন্ত্রের পতন হয়, তখন পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুব শাহীর শীর্ষস্থানীয় গােয়েন্দা অফিসার হিসাবে সফদার বাঙালি ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মীদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠলেন। সারা দেশ জুড়ে তিনি তথ্য তালিকাভুক্তকরণ, জেরা, তদারকী এবং সার্বিক গােয়েন্দা তৎপরতার নির্দেশনায় নিয়ােজিত ছিলেন।  কিন্তু ১৯৭১-এর মার্চে যখন পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ বেধে গেল, তখন এ বি এস সফদার ঢাকার জনসভা আর জ্বলন্ত অট্টালিকা থেকে বহুদূরে। ইউএসএইড-এর ‘অফিস অফ পাবলিক সেফটি’ (সিআইএ সমর্থিত কথিত অঙ্গ সংস্থা) কার্যক্রমের অধীনে তিনি তখন আন্তর্জাতিক পুলিশ একাডেমিতে ১২তম সিনিয়র অফিসার্স কোর্সে যােগদান করেছেন। যে কার্যক্রমের অধীনে সফদারকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছিল, সেটা যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশাল কার্যক্রমের অংশ।  ১৯৬১ হতে ১৯৭১-এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১১৩ জন উঁচু ও মাঝারি পর্যায়ের।

পাকিস্তানি পুলিশ অফিসার বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দক্ষিণ ভিয়েতনামে। পুলিশ বাহিনী হতে একই সময়ে ৪১৪ জন অফিসারের তুলনায় পাকিস্তানের দলটি বেশি ভারি মনে হয়, বিশেষ করে ভিয়েতনামে বিরাট মার্কিন উপস্থিতির কথা। বিবেচনায় রাখলে।  এই পাকিস্তানি প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে ৪০ জন ছিলেন বাঙালি অফিসার। প্রশিক্ষণের জন্য আগত লােকেরা সবাই হােমরা-চোমরা অফিসার ছিলেন এবং তখন না হলেও ভবিষ্যতে নিজ নিজ শাখায় তাঁরাই কর্তৃত্ব লাভ করেন। স্বাধীনতা। যুদ্ধ শুরু হবার সময় পাকিস্তানি মতাদর্শ ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিশ্বাসে দীর্ঘদিন। অঙ্গীকারাবদ্ধ বহু বাঙালি ‘ওপিএস’ প্রশিক্ষণার্থী তাদের পূর্ব পদে রয়ে যান।…  ১৯৭১-এর ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে অর্থাৎ পাকিস্তানিদের নরমেধ যজ্ঞের ঠিক এক মাস আগে ওয়াশিংটনের ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ একাডেমিতে সফদার ও তার সহকর্মী এসে উপস্থিত হলেন। এদিকে যখন ওয়াশিংটনের পাকিস্তানি। দূতাবাসসহ সারা বিশ্বের দূতাবাসগুলােতে বাঙালি কূটনীতিকরা স্বাধীন। বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘােষণা করছিলেন, তখন সফদার ও রহিম এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র উচ্চবাচ্য করে পুলিশ একাডেমিতে তাদের পড়াশােনা চালিয়ে যেতে লাগলেন। গ্রীষ্মে গৃহযুদ্ধ যখন তীব্র রূপ নিলাে তখন সফদার ও রহিম উভয়েই স্বেচ্ছায় পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের অধীনে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। সফদার এলেন গােয়েন্দা তৎপরতা ও বিদ্রোহ দমনের দায়িত্বে আর রহিম কুখ্যাত রাজাকার বাহিনীর সাংগঠনিক নেতৃত্ব গ্রহণ করলেন। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে মুক্তিবাহিনীর কিছু শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব জঘন্যতম অপরাধ ও অত্যাচারের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার দাবি করলেন। এই দাবি মূলত পাকিস্তানি বাহিনীর বন্দি সিনিয়র অফিসারদের কেন্দ্র করেই করা হয়েছিল। সেই সাথে যেসব মুখ্য বাঙালি পুলিশ ও গােয়েন্দা কর্মকর্তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান বাহিনীর সাথে দালালী করেছিলেন, তাদের বিচারেরও দাবি উঠেছিল। পাকিস্তানের বন্দিদশা হতে মুজিবের মুক্তির পর একটা ঘােষণা করা হয় যে, ১৯৪৪-৪৫-এ ফ্রান্সে ভিশির দালালদের মতাে এদের যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার এক বছর পর, বিশেষ করে পাকিস্তানের যুদ্ধকালীন দোসর ধনী ইসলামী দেশগুলােসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক আবেদন আসে যাতে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অফিসারদের প্রতি নমনীয় মনােভাব গ্রহণ করা হয়। তখন বাংলাদেশের বিদেশী সাহায্য খুব প্রয়ােজন। তাই বহু মুক্তিযােদ্ধা ও নির্যাতিত মানুষের প্রতিবাদ সত্ত্বেও মুজিব এই আবদার রেখেছিলেন অত্যাচারের অন্যতম নমুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণকবর। তবুও পাকিস্তানি সেনাদের মাফ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপর বাঙালি দালালদের। বিচার করা কঠিন হয়ে দাঁড়ালাে। গােয়েন্দা বিভাগ ও পুলিশের মধ্যে যারা দালালী করেছিলেন, তাদের মধ্যে খুব কম লােকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। বেশির ভাগকেই নিম্নতর পদে বহাল করা হয়েছিল; অন্যরা হয় গা ঢাকা দিলেন, নতুবা ছাত্র বা মুক্তিযােদ্ধাদের আড়ালে কাজ করবার পথ খুঁজে নিলেন। ১৯৭৩ আসতে আসতে অবশ্য স্বাধীনতার মৌতাত কেটে যেতে আরম্ভ করেছে। ১৯৭১-এ মুজিবের সবচেয়ে উগ্র ও সশস্ত্র সমর্থকদের অনেকেই চরমপন্থী রাজনীতির দিকে ঝুঁকতে আরম্ভ করলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের দুবছরের মধ্যেই মুজিবের শাসন-বীরত্বের গৌরবগাথা থেকে দুর্নীতি, গণ-অসন্তোষ ও অবশেষে দেশব্যাপী দুর্ভিক্ষের কলঙ্কময় অধ্যায়ে পর্যবসিত হলাে। গ্রামের দিক থেকে প্রকাশ্য সরকার বিরােধী তৎপরতার খবর আসতে লাগলাে। ১৯৭৩-৭৪-এ প্রায় ৩,০০০ আওয়ামী লীগ কর্মী রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। মুজিবের পরামর্শদাতারা ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করলেন। ১৯৭৩-এর গণ অসন্তোষ ১৯৭৪-এ যৌথ প্রতিবাদে পরিণত হতে দেখে মুজিব উপলব্ধি করলেন, তার অভিজ্ঞ পুলিশ দরকার।
গা ঢাকা দেওয়া দালালরা ঠিক এই সুযােগটাই খুঁজছিলেন। এ সময়ে ওয়াশিংটনের ‘আইপিএ’ ও ‘ইনপােলসি’ কার্যক্রমের স্নাতক বিভিন্ন অফিসার, যারা ১৯৭১-এ সক্রিয়ভাবে দালালী করেছেন; তারা আশ্রয় থেকে বেরিয়ে ঠিকই কর্তৃত্বের আসল জায়গাগুলাে দখল করে নিলেন। অনেকটা যুদ্ধোত্তর পশ্চিম জার্মানির মতাে। সেখানে বিশ্বস্ত কম্যুনিস্ট বিরােধী নিরাপত্তা পুলিশ ও আমলা দরকার পড়ায় পশ্চিমা মিত্রশক্তি প্রাক্তন ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসিত করেছিল।  মুজিবের আত্মপ্রবঞ্চনা কোথায় গিয়ে ঠেকেছিল তা বােঝা যায় যখন দেখি তিনি একথা বিশ্বাস করতে পারলেন যে, এসব মুখচেনা লােকদের তিনি ১৯৭৪-এ আপন উদ্দেশে ব্যবহার করতে পারবেন। যখন তার কয়েকজন সহযােগী এদের আবারাে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাবার বিরুদ্ধে আপত্তি করেছিলেন; তখন মুজিব বলেছিলেন, “ওদের কাছাকাছি রেখে ওদের কাজ-কর্মের উপর আমি নজর রাখতে পারবাে।” প্রকৃত অবস্থা ছিল বিপরীত; তারাই মুজিবের উপর ভালাে করে নজর রাখতেন।
এবার সংকট মুহূর্ত উপস্থিত হলে একটি অভ্যুত্থানে সহযােগিতা করার জন্য তারা নিজেদের মােক্ষম অবস্থান নিশ্চিত করলেন। ১৯৭৫-এর আগস্ট অভুথান এমনই আভ্যন্তরীণ চক্রান্তের ফল ছিল। ১৯৭৩-এর শেষের দিকে মুজিব সরকারের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলাে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা। তখন সফদারকে রাষ্ট্রপতির প্রহরা দলে নিয়ােগ করা হলাে। … সফদার ছাড়াও ১৯৭১-এ ওয়াশিংটনের আইপিএ-তে তার সহপাঠি আবদুর রহিমকেও মুজিব সরকার পুনর্বাসিত করে। রাজাকার বাহিনীর এককালীন পরিচালক আবদুর রহিম রাষ্ট্রপতির সচিব নিযুক্ত হন। তাকে পূর্ণ সচিবের আমলাতান্ত্রিক পদমর্যাদা দেওয়া হয়। অথচ পাকিস্তান শাসন আমলেও কোনাে পুলিশ বা গােয়েন্দা কর্মকর্তা পূর্ববঙ্গে এতাে উঁচু পদ দখল করেন নি। দুবছর পর মুজিব যখন নিহত হন, একমাত্র আবদুর রহিম ছাড়া রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের পুরাে কর্মীদল হয় দেশ ত্যাগ করেন, নতুবা বরখাস্ত হন, নতুবা গ্রেফতার বরণ করেন। আবদুর রহিম অভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে সচিবালয়েই রয়ে যান ও মােশতাকের একজন ঘনিষ্ঠ সহযােগী হয়ে উঠেন। ১৯৭৫ সালের অক্টোবরে যখন নতুন নির্বাচন হবে, না সামরিক শাসনই চলতে থাকবে’—এই বিষয়ে আলােচনার জন্য মােশতাক আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যদের সাথে মিলিত হন, তখন এই রহিমই মােশতাকের পাশে থেকে তার নির্দেশমতাে সব কথা টুকে নেন। তারপর নভেম্বরে মােশতাক নিজেই যখন একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন এবং অবশেষে তা সেনাবাহিনীর স্টাফ প্রধান এবং চক্রান্তের এককালীন পরােক্ষ দোসর জেনারেল জিয়ার নেতৃত্বে একটি ডানপন্থী সামরিক জান্তা ক্ষমতায় আসে, আবদুর রহিমের অবস্থার সামান্যই রদবদল হয়। তখন তিনি আমলাতন্ত্রের সমস্ত সিভিল সার্ভিস নিয়ােগ ও বদলীর নিয়ন্তা সংস্থাপন বিভাগের সচিব হিসাবে পদোন্নতি লাভ করেন।
মুজিবের অপসারণের পর আরাে কিছু ‘আইপিএ’ স্নাতক দালালকে গুরুত্বপূর্ণ। পদে নিয়ােগ করা হয়। ১৯৬৯ সালের ‘আইপিএ’ স্নাতক এ. এম.এম. আমিনুর রহমানকে নবগঠিত আধা-সামরিক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নিয়ােগ করা হয়। ঢাকায় রহমান তার ডানপন্থী বিশ্বাসের জন্য সুপরিচিত। এককালীন আলবদর কমান্ড কাউন্সিল সদস্য মাওলানা মান্নানের মতাে ইসলামী চরমপন্থীদের সাথে তার সুসম্পর্কের কথাও অনেকে জানেন। ধর্মোন্মাদ আলবদর সাংগঠনিক ১৯৭১-এর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আধা-সামরিক দোসর হিসাবে কাজ করেছে এবং যুদ্ধে জঘন্য সব হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড। | মুজিবের মৃত্যুর পর বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংগঠনের লক্ষণীয় উন্নতি করেছেন এমন ক’জনের একজন হচ্ছেন ‘এনএসআই’-এ সফদারের উপ পরিচালক হিসাবে কর্মরত এম.এন. হুদা। তিনি পাকিস্তানের স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্য হিসাবে ১৯৬৩-তে ওয়াশিংটনের এফবিআই-এর জাতীয় একাডেমি এবং সিআইএ-র মদদপুষ্ট ইনপােলসি প্রশিক্ষণ স্কুলে যােগদান করেন। ১৯৭৬-এর জুনে এনএসআই-এর সদর দফতরে সাক্ষাৎকার দেবার সময় হুদা বলেন, অনেক প্রশ্নের উত্তরই অজানা রাখতে হবে।
মুজিব হত্যা চক্রান্তের সংবাদ উদ্ধারে এনএসআই কি দায়িত্বে অযােগ্যতার কারণে ব্যর্থ হয়, নাকি এনএসআই নিজেই চক্রান্তে জড়িত ছিল—এই প্রশ্নের উত্তরে হুদা হেসে উঠেন এবং বলেন, প্রশ্নটা দারুণ চতুর। কিন্তু কোনাে উত্তর তিনি দেননি। ‘আইপিএ’ (১৯৬৮) ও ‘ইনপােলসি’ (১৯৬৯) উভয়ের স্নাতক এ কে এম মুসলেহউদ্দিন ৭১-এ দালাল ছিলেন বলে অভিযােগ আছে। মুজিবের মৃত্যুর পর তিনি এনএসআই-এর উঁচু পদে উঠে আসেন। ঢাকার মুসলিম লীগের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও সাধারণভাবে ডানপন্থী রাজনৈতিক যােগাযােগের জন্য তিনি পরিচিত। ১৯৭১-এ দালাল ছিলেন বলে সন্দেহ করা হয় এবং স্বাধীনতার পর পুলিশ ক্যাডারে সেজন্য অপদস্থ করা হয়—এমন একজন আইপিআই স্নাতক হলেন সৈয়দ আমির খসরু। তাকে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ে নিয়ােগ করা হয় ।…  আগস্ট (১৯৭৫) অভ্যুত্থানের পর আইপিআই ও ইনপােসি স্নাতকদের অনেকে বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে উঠে আসেন। এদের সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য কৃতিত্ব হচ্ছে জাসদের উদ্যোগে ১৯৭৫-এর নভেম্বরের বিদ্রোহের সার্থক দমন। নবগঠিত আধা-সামরিক বাহিনী দিয়ে এ কাজটি করা হয়।…  ১৯৭৫ হতে ১৯৭৭-এর মধ্যে বাংলাদেশে রিও ব্রাভােস’ মডেল কাজে লাগাবার বিশেষ সুযােগ আসে। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে প্রশিক্ষণের ফল দাঁড়ালাে মুজিবের কিঞ্চিৎ সসাভিয়েত ঘেঁষা নড়বড়ে বেসামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আগস্ট (১৯৭৫) অভ্যুত্থানে এসব প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের মদদ। তারপর এই গােয়েন্দা চক্র সেনাবাহিনীতে জেনারেল জিয়ার পশ্চিমা ঘেঁষা সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে যেসব নতুন বিদ্রোহ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেগুলাের সহিংস দমন আরম্ভ করলাে। ১৯৭৭-এ অর্থাৎ আগস্ট অভ্যুত্থানের দু’বছর পর দেশটি আধুনিক দক্ষিণ এশীয় ইতিহাসে এক সম্পূর্ণ নতুন ও ভয়ানক পর্যায়ে প্রবেশ করলাে-এর সূচনা হলাে এই শতাব্দীতে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম পাইকারী মৃত্যুদণ্ড। [এর আগের পাইকারী মৃত্যুদণ্ড ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় ইংরেজদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তােপের মুখে বিদ্রোহীদের বেঁধে কামান দাগা হতাে]।  মুজিবের পতনের পর সফদারের দর্শনীয় পদোন্নতি ছাড়াও আরাে গুরুত্বপূর্ণ রদবদল ঘটেছে। মােশতাক তার দোসর হত্যাকারী মেজরদের মতাে অত কাচা লােক নন।
তিনি এবং তার চক্র আটঘাট বেঁধেই কাজে নেমেছিলেন। তাঁরা তক্ষুণি একটি অভিজ্ঞ আমলা বাহিনী নিয়ােগ করলেন। প্রথম নিয়ােগটি ছিল কেন্দ্রীয় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসাবে শফিউল আজম-এর নিয়ােগ। গােটা আমলাতন্ত্রে পদটি সবচেয়ে উচু ও প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও তার সচিবের উপর এই সচিবের প্রত্যক্ষ কর্তৃত্ব। ১৯৭১-এ হত্যাযজ্ঞের সময় শফিউল আজম পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকারের মুখ্য সচিব ছিলেন। পাকিস্তানের প্রতি এর গভীর সমর্থন থাকায় সমস্ত স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি এই পদে থেকে যান। শুধু শেষের দিকে পশ্চিম পাকিস্তানের দিকে রওনা দেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের কাছে আজম হলেন একজন খাঁটি দালাল। ১৯৭৩-এ বৃহত্তর ঐক্যের খাতিরে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে নমনীয়তা দেখানাে হবে এ মর্মে মুজিব যখন ঘােষণা দেন, তখন শফিউল আজম দেশে ফেরেন।…  স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব গ্রহণ করার জন্য মােশতাকের তক্ষুণি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় কর্মরত সালাউদ্দিন আহম্মদকে রােম থেকে ডেকে পাঠালেন। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও কঠোরতার জন্য তার নাম আছে। ১৯৬৮-৬৯ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ছিলেন। আইয়ুব খানের এক দশক পুরনাে সামরিক একনায়কতন্ত্ৰ উৎখাত করার জন্য যখন ছাত্র-শ্রমিক আন্দোলন চলছিল, তিনি তখন তার বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছিলেন। এখন, মুজিবের মৃত্যুর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সালাউদ্দিনের নতুন সর্বময় কর্তৃত্ব পাওয়ার পর এক বছরের মধ্যে পুলিশ ও আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাজেট ৬০% বৃদ্ধি পেয়েছে।… পুলিশের বিশেষ ব্যাটালিয়ান ইউনিট সৃষ্টি ছাড়াও পুলিশ বাহিনীতে সদস্য সংখ্যা ৪০,০০০ হতে ৭০,০০০-এ বাড়াবার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ষাট দশকে পুলিশ কর্মকর্তাদের মার্কিনী প্রশিক্ষণের ইতিহাস “১৯৬২ সালে এইড’-এর অধীনে কেনেডী প্রশাসন জননিরাপত্তার বিশেষ ব্যুরাে সংগঠিত করার পর ‘ওপিএস’ পাকিস্তানে একটি বড় কর্মসূচি বাস্তবায়িত করলাে। পরবর্তী দশকে পরিমাণগত বিচারে কোনাে বিদেশী পুলিশ বাহিনীকে সাহায্যের দিক থেকে পাকিস্তান মার্কিন সাহায্যের চতুর্থ বৃহত্তম ভাগ লাভ করে। এর আগের ৩টি দেশ হচ্ছে যথাক্রমে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়া।… “ফ্রিডম। অব ইনফরমেশন এ্যাক্ট’-এর (স্বাধীনভাবে সংবাদ-এর সূত্র জানার আইন) সুবিধায় প্রাপ্ত ‘ওপিএস’-এর একটি দলিলে দেখা যায় যে, আলােচ্য মার্কিনী প্রশিক্ষণের। লক্ষ্য ছিল নিম্নরূপ : … আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশাসনিক কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে তােলা। লােক প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তায় একটি মিশ্র কর্মসূচি গ্রহণ করলে সবচেয়ে ভালাে হয়। আধুনিক পুলিশ প্রশাসন ও কর্মতৎপরতা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কর্মসূচির লক্ষ্য হচ্ছে মধ্যম ও উচু পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা যাতে করে প্রচলিত। পুরনাে ঔপনিবেশিক পদ্ধতির পরিবর্তনে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হন।
বাস্তবে মাত্র এক দশকের মধ্যে এসব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব দেশে এমন সব পদে উঠে এসেছেন, যেখান থেকে শুধুমাত্র প্রচলিত পদ্ধতিই নয়, তার চাইতে অনেক বড় বড় বিষয়ে এরা প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা অর্জন করেছেন। অচিরেই এরা অ্যুথান, পাল্টা অভ্যুত্থান, হত্যাকাণ্ড ইত্যাদিতে মদদ দিতে থাকেন এবং বাংলাদেশে ১৯৭৬-৭৮ সালের মধ্যে এই পুলিশ ক্যাডার রাষ্ট্রযন্ত্রের মুখ্য অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারক পদগুলাে দখল করে,..। ১৯৬৩ সালে পাকিস্তানের পরবর্তী ১০ বছরের জন্য একটা পুলিশী কর্মসূচি প্রণয়নের উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে কয়েকটা গবেষণা মিশন পাঠায়। পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) যখন ‘ওপিএস’-এর মাঠ পর্যায়ে গবেষণা চলছিল, তখন ১৯৬৩ সালের মার্চ মাসে মার্কিন মুলুকে প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য প্রথম বাঙালি শিক্ষার্থীদের আগমন ঘটে। এরা আন্তর্জাতিক পুলিশ একাডেমি, আন্তর্জাতিক পুলিশ সার্ভিস স্কুল, এফবিআই পরিচালিত জাতীয় একাডেমি এবং আরও এ ধরনের বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কোর্সে যােগদান করেন।… এ সময় পাকিস্তান এবং এই পূর্ব প্রদেশ (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে যুক্তরাষ্ট্রে। ক্রমাগতভাবে গােয়েন্দানবীশ কর্মকর্তা এবং পুলিশ যােগাযােগ কর্মকর্তারা। ‘আইপিএ’ ও ‘ইনপােলসি’তে। (কোনো কোনাে পশ্চিমা সাংবাদিকের দাবি অনুসারে এসব সিআইএ-র অঙ্গ সংস্থা) আসতে শুরু করলেন। ১৯৬১ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার বছর অর্থাৎ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত মােট ১১৩ জন উচ্চ ও মধ্যম পর্যায়ের পাকিস্তানি পুলিশ কর্মকর্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। 
‘স্বাধীনভাবে সংবাদের সূত্র জানার আইন-এর অধীনে আমরা যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছি তাতে দেখা যায় যে, আলােচ্য প্রশিক্ষণার্থীদের দলে অন্তত ৪০ জন ছিলেন পুলিশ ও গােয়েন্দা ক্যাডারের বাঙালি। … যারা তখন প্রশিক্ষণের জন্য গিয়েছিলেন তারা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন এবং সে সময় না হলেও ভবিষ্যতে এরা স্ব স্ব সার্ভিসের কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন। এ বি এস সফদার, আব্দুর রহিম, এস এ হাকিম, মুসা মিয়া চৌধুরী, সৈয়দ আমির খসরু, এম এন হুদা, এ কে মােসলেউদ্দিন, আবু সৈয়দ শাহজাহান, এ এম এম আমিনুর রহমান, গােলাম মাের্শেদ, আলী এম জামশেদ, আব্দুল খালেক খান, এ এইচ নুরুল ইসলাম, জাফরুল হক, খন্দকার গােলাম মহিউদ্দিন প্রমুখ অর্থাৎ বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রশাসনের সমস্ত শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের আইপিএ” এবং ‘ইনপিেলসি’ প্রতিষ্ঠানগুলােতে ক্লাস করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাংলাদেশে তারা রাষ্ট্রের ভেতর আরেকটা গোপন রাষ্ট্র তৈরি করে ফেললেন।… ১৯৭১-এর আগের বছরগুলােতে পুলিশ ও গােয়েন্দা কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রায় সকলেই পূর্ব পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদদের উপর নজর রাখা, তাদের উপর গােয়েন্দাগিরি করা, তাদের অন্তরীণ রাখা এবং তাদের বিচার করার কাজে জড়িত ছিলেন। শুধুমাত্র একজন (আব্দুল খালেক) উচ্চ পর্যায়ের গােয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা মুক্তিবাহিনীতে যােগদান করেছিলেন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বেঁচে রয়েছেন। এছাড়া পুলিশ সার্ভিস, ইনটেলিজেন্স ব্যুরাে | (আইবি) এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)-এর প্রায় সমস্ত উঁচু পর্যায়ের বাঙালি কর্মকর্তারা ২৫শে মার্চের পর প্রত্যক্ষভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দালালী করেছেন বলে অভিযােগ করা হয়ে থাকে।
পরবর্তীতে বাংলাদেশের এনএসআই নামে যে গােয়েন্দা সংস্থা গঠিত (১৯৭২) হয়, তার রথী-মহারথীদের যেসব কার্যক্রমের অধীনে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, ১৯৭৫ সালে মার্কিন কংগ্রেস আইন পাস করে, সেসব নিষিদ্ধ করে দেয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে এসব প্রশিক্ষণ বন্ধ হয়ে যায়।
এইড-এর অর্থে পরিচালিত পুলিশ ট্রেনিং স্কুল ১৯৭৫-এ বন্ধ হলাে
১৯৭৫ সালের জুলাই মাস থেকে ইউএস এইড-এর তহবিল থেকে বিদেশী পুলিশ, কারাগার কিংবা আইন প্রয়ােগকারী সমস্ত সংস্থাকে কোনােরকম আর্থিক সাহায্য দেয়া নিষিদ্ধ করা হয়। ‘ওপিএস’ (সিআইএ-র কথিত অঙ্গ সংস্থা) নিষিদ্ধ করার অভিযান শুরু করেন সাউথ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যের সিনেটর জেমস আবু রেজক। ‘ফরেন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাক্ট-এর এই বিতর্কিত সংশােধনী সম্পর্কে বক্তব্য প্রদানকালে ১৯৭৪-এর জুন মাসে মার্কিন সিনেটর জেমস বলেন : … তৃতীয় বিশ্বের পুলিশকে ‘ওপিএস তিনভাবে সহায়তা (ইউএস এইডের আওতায়) করার অধিকার লাভ করে। প্রথমত, জননিরাপত্তা উপদেষ্টা পাঠিয়ে গ্রহীতা দেশে সাধারণ পুলিশ প্রশিক্ষণ। দেয়া—এক্ষেত্রে গ্রহীতা দেশের ব্যয়ভার বহন করার কথা; দ্বিতীয়ত, ‘আইপিএ’ ও অন্যান্য মার্কিন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণদান; এবং তৃতীয়ত, অস্ত্রশস্ত্র, গােলাবারুদ, বেতার সরঞ্জাম, গাড়ি, জিপ, তেল, রাসায়নিক ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম সরবরাহ।… গত বছর প্রাপ্ত রিপাের্টে আমি জানতে পেরেছি যে, টেকসাস-এর এক প্রত্যন্ত মরু শিবিরে মার্কিন সরকার বিদেশী পুলিশকে বােমা প্রস্তুতির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। টেকসাস-এর লস ফ্রেসনস-এ অবস্থিত সীমান্ত প্রহরা একাডেমীতে ‘আইপিএ’ ট্রেনাররা বিদেশী পুলিশকে ঘরে তৈরি বােমার ডিজাইন ও প্রস্তুত এবং সম্ভাব্য ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

বােমা প্রস্তুত প্রশিক্ষণ স্কুল ছাড়াও আমি জানতে পেরেছি যে, নর্থ ক্যারােলাইনার ফোর্ট ব্যাগ-এর মনােবিজ্ঞান কর্ম তৎপরতা স্কুলে ‘আইপিএ’ স্নাতকরা ট্রেনিং গ্রহণ করছে। স্কুলটি ফোর্ট ব্র্যাগস্থ মার্কিন সেনাবাহিনীর সামরিক সহায়তা সংস্থার অধীন। এখানে যেসব বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হয়, তার কয়েকটি শিরােনাম নিম্নরূপ : ক) বিদ্রোহী নাশকতা পদ্ধতি; খ) আভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা এবং তার রক্ষণে মনস্তাত্ত্বিক কর্মতৎপরতার ব্যবহার গ) আভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষায় গােয়েন্দাবৃত্তির ভূমিকা। “মার্কিন নাগরিকদের কিছু চিঠি রয়েছে। সেই চিঠিগুলােতে এ মর্মে আভাস দেয়া হয়েছে যে, বিদেশে নির্যাতনে মার্কিন মদদ-এর নজির রয়েছে। …. আমার মনে হয়, আমি একটা কথা সুস্পষ্ট করতে পেরেছি; বিদেশে মার্কিনী সাহায্যের যা উদ্দেশ্য, আমাদের দেশ আজ তার থেকে ভিন্নতর ও বিচ্ছিন্ন কর্মতৎপরতায় জড়িত হয়ে পড়েছে। জন নিরাপত্তা সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক পুলিশ একাডেমির কর্মকাণ্ড আমাদের অন্যান্য কর্মসূচির প্রতি মূর্তিমান কটাক্ষ স্বরূপ। এ দু’টি সংস্থা ইউএস এইডের বিভিন্ন কার্যক্রম এবং কৃতিত্বের উপর ভয়াবহ রকমের কলঙ্ক চিহ্ন এঁকে দিয়েছে।… আমার স্থির বিশ্বাস এই যে, কংগ্রেসের নির্দেশে এই কার্যক্রম এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমসহ (বিদেশী পুলিশ ট্রেনিং সংক্রান্ত) বিভিন্ন কর্মতৎপরতা অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার সময় এসেছে।” সাংবাদিক লরেন্স লিফসুজ-এর প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশের তরুণ লেখক আশফাক আলম স্বপন কর্তৃক রচিত ‘মুজিব হত্যার চক্রান্ত’ পুস্তক (ত্রিধারা প্রকাশন ঢাকা) থেকে এ অংশটি সংক্ষিপ্তাকারে গৃহীত ।-লেখক।]

সূত্রঃ মুজিবের রক্ত লাল – এম আর আখতার মুকুল