বাঙলাদেশের সগ্রাম স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে পাক সার্কাস ময়দানের জনসভায় আবদুর হাফিজের ঘােষণা
(স্টাফ রিপাের্টার)
কলকাতা, জুন– বাঙলাদেশের মানুষের বর্তমান সংগ্রাম প্রকৃতপক্ষে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক মানুষের, সাম্প্রদায়িকতাবাদীদের বিরুদ্ধে প্রগতিবাদী মানুষের সগ্রাম এটা উপলব্ধি করেই সমস্ত গণতান্ত্রিক মানুষকে বাঙলাদেশের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। আজ পাক সার্কাস ময়দানে এক জনসভায় বাঙলাদেশের জননেতা অধ্যাপক আবদুল হাফিজ একথা বলেন।
কমিউনিস্ট নেতা ডাঃ এ, এম, ও গণি তাঁর ভাষণে ভারতবর্ষের বুকে দাঁড়িয়ে বাঙলাদেশের সংগ্রামের বিরুদ্ধে যারা কুৎসা করেছেন এবং ইয়াহিয়ার পক্ষে ‘গােপনে’ প্রচার চালাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে হুশিয়ার জানান। আজ পাক সার্কাস ময়দানে বাঙলাদেশ সংগ্রাম সহায়ক সমিতির ডাকে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে অবিলম্বে বাঙলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি দাবি করা হয়। সভায় বিভিন্ন বক্তা বাঙলাদেশের মানুষের সংগ্রামে প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন এবং সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মবােধ ঘােষণা করেন।
ডাঃ এ এম ও গণি তাঁর ভাষণে বাঙলাদেশে ইয়াহিয়া খানেরা যে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে তার উল্লেখ করে বলেন মুসলমান ধর্মপ্রাণ মানুষ মাত্রেই জানেন ইসলাম ধর্ম এই নৃশংসতার শিক্ষা দেয় না।
তিনি বলেন, ইয়াহিয়া সৈন্যবাহিনীর সর্বাধিনায়ক অফিসার কিংবা কর্মীরা যেভাবে দিনযাপন করে তার সঙ্গে ইসলাম মতের কোন যােগ নেই।
গণতন্ত্রের জন্য লড়াই
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক জনাব আবদুর হাফিজ তার ভাষণে বাঙলাদেশের বর্তমান সংগ্রামকে ব্যাখ্যা করেন। তিন বলেন এই লড়াই কোন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লড়াই নয়।
কিন্তু বাঙলাদেশের মানুষ যখনই গণতন্ত্র চেয়েছে তখনই স্বৈরাচারীরা অত্যাচারের বন্যায় সকলকে ডুবিয়ে দিতে চেয়েছে। তিনি বলেন বর্তমান শাসকগােষ্ঠীই বাঙলাদেশে ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এবং বাঙালী-অবাঙালী দাঙ্গা বরাবরের জন্য লাগিয়ে রাখতে চেয়েছে কিন্তু প্রগতিবাদী মানুষ এর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। এবং এ কারণেই স্বৈরাচারীরা প্রগতিবাদী মানুষের গলা টিপে ধরতে চেয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে বাঙলাদেশের মানুষ এই সংগ্রামে নেমেছেন। তিনি বলেন যে সমস্ত শরণার্থী এই দেশে এসেছেন অবস্থা স্বাভাবিক হলেই তারা দেশে যাবেন এবং দেশে তাদের ঘরবাড়ি বুঝে নেবেন।
ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামই রাস্তা
অধ্যাপক অমিয় দাশগুপ্ত তাঁর ভাষণে বলেন বাঙলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের এখন চলছে দ্বিতীয় পর্যায়। প্রথম পর্যায়ে মানুষ স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে সংগ্রামে নেমেছিল, কিন্তু শিক্ষিত সৈন্যবাহিনীর মােকাবিলায় মুক্তিবাহিনীকেও এখন সংগঠিতভাবে এগুতে হচ্ছে।
তিনি বলেন একদিকে শরণার্থীদের সেবায় এগুতে হবে অপরদিকে এই মুক্তি বাহিনী যাতে সংগ্রামে জয়ী হয় তার জন্য সর্ব প্রকার সাহায্য করতে হবে।
বাঙলাদেশের আওয়ামী লীগ, ন্যাপ কিংবা কমিউনিস্ট পার্টি সকলেই এই মুক্তিসংগ্রামের সৈনিক। সকলেই যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সংগ্রামে অংশ নিতে পারেন তার জন্য প্রয়ােজনীয় সাহায্য করতে হবে।
পাকসার্কাসের এই জনসভায় সর্বশ্রী নাহার ঘােষ, শান্তিগাঙ্গুলী, ডাঃ পি, কে, রায় ছাত্রলীগের জনৈক নেতা প্রমুখ ভাষণ দেন। সভাপতিত্ব করেন ডাঃ এ, কে, নন্দা, সভায় ওপার বাঙলার বিশিষ্ট শিল্পীগণ সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
সূত্র: কালান্তর, ১৪.৬.১৯৭১