You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.29 | বাঙলাদশে-প্রশ্নে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

বাঙলাদশে-প্রশ্নে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা

একই সঙ্গে ভণ্ড ও শয়তান ইয়াহিয়া খান যতই বিস্ময় প্রকাশ করে বলুক, কোনাে একটা দেশের সরকার তার নিজের জনগণকে নিধন করতে পারে কি’, তবু বিশ্বের গণতান্ত্রিক জনমতের সামনে বাঙলাদেশে ইয়াহিয়া চক্রের নগ্ন বর্বরতার কাহিনী আজ খােলা বইয়ের মতাে স্পষ্ট হয়ে গেছে। দেশে-বিদেশে প্রায় সকলেই বুঝতে পারছেন, বর্বর দমনপীড়ন চালানাে পাক হানাদার সৈন্যদের একটা নির্ধাতির নীতি। এমন কি পশ্চিম পাকিস্তানী এক সামরিক অফিসার তাে সদন্ত ঘােষণাই করেছে যে, পূর্ব বাঙলায় পাক-সৈন্যরা পাইকারীভাবে বাঙালী হত্যা করছে ও আরও বহু বাঙালীকে হত্যা করা হবে।
জনতার একটি স্পর্শকাতর ও আবেগপ্রবণ অংশ বুদ্ধিজীবী শ্রেণী। পৃথিবীর বহু জায়গা থেকেই লেখক ও সংস্কৃতিসেবীরা বাঙলাদেশে পাক বর্বরতার বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ ধ্বনিত করে তুলেছেন। সম্প্রতি কাশ্মীরের ৯৩ জন বুদ্ধিজীবী এবং বােম্বাই-এর সংস্কৃতিবিদেরা পূর্ববাঙলায় গণ-হত্যার তীব্র নিন্দা করেছেন। তারা ঠিকই অনুভব করেছেন যে, বাঙলাদেশের সাংস্কৃতিক জীবনের উৎসমুখকে নিশ্চিহ্ন করা হল ফ্যাসিস্ট চরিত্রের সামরিক জুন্টার এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বাঙলাদেশে পাক আক্রমণের প্রথম কোপ বিনা কারণে অধ্যাপক, শিক্ষক, লেখক, শিল্পী ও ছাত্রদের ওপর এসে পড়ে। জাতীর ঐতিহ্য ও অস্তিত্বের একটি প্রধান প্রবাহ সংস্কৃতি। পাক হানাদারদের কুঠার তার মুলােচ্ছেদের জন্যই উদ্যত।
বাঙলাদেশের গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করার এক বিশিষ্ট ভূমিকা বুদ্ধিজীবীরা গ্রহণ করতে পারেন। সেদিক থেকে কাশ্মীর ও বােম্বাই-এর সাংস্কৃতিবিদদের প্রাসঙ্গিক ভূমিকাটুকু নিশ্চই উল্লেখের দাবি রাখে।

সূত্র: কালান্তর, ২৯.৯.১৯৭১