You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: ৫ই সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার, ১৯শে ভাদ্র, ১৩৮১

দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

জাতীয় রক্ষীবাহিনী চতুর্থ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু জাতির প্রতি রক্ষীবাহিনীর পবিত্র দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। সমাজের বুক থেকে অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার সহ যাবতীয় সামাজিক অপরাধ ও দূর্নীতি অবসানকল্পে কাজ করে যাওয়া তাদের দায়িত্ব। বিগত দিনগুলিতে রক্ষী বাহিনীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে বঙ্গবন্ধু বলেছেন এবারের বন্যার সময়ও রক্ষীবাহিনীর জনগণের দুঃখ-দুর্দশা যেভাবে কাজ করেছে তা প্রশংসাযোগ্য।
স্বাধীনতা-উত্তরকালে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত জাতীয় রক্ষী বাহিনীর বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবেলায় যে সাহসিকতাপূর্ণ বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে তার শান্তিকামী মানুষের প্রশংসা অর্জন করেছে। তখন প্রশাসনিক ব্যবস্থাও তেমন শক্ত ভিত গড়তে পারেনি। একটা সশস্ত্র বিপ্লবের পর যে অরাজকতার প্রকাশ ঘটে তা থেকে বাংলাদেশও মুক্তি পায়নি। খোদ ঢাকা শহরেই হত্যা, ছিনতাই লুঠ মানুষের নিরাপত্তাকে নিদারুণভাবে বিঘ্নিত করেছিল। রক্ষীবাহিনী সেই পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে যে কঠোর মনোবল, দৃঢ়তা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে অগ্রসর হয়েছিল তা অন্তত এই নগরবাসী স্মৃতি থেকে মুছে যাবার নয়। এর পরে অর্পিত হয় গ্রামের অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবেলার দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনে বঙ্গবন্ধুর ভাষায় বলা যায় তারা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। এর পাশাপাশি রক্ষী বাহিনীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অবাঞ্ছিত কিছু অভিযোগের কথাও উল্লেখ করা যায়। বিভিন্ন স্তরের লোকদের মধ্যে থেকে অভিযোগ এসেছে রক্ষীবাহিনী কোন কোন ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার এমনকি বাড়াবাড়ি করছে। নিরীহ নিরপরাধ লোকদের হয়রানী করা এবং ক্ষেত্রবিশেষে ব্যক্তি অথবা গোষ্ঠীর স্বার্থে রাজনৈতিক টাউটদের দ্বারা এই পবিত্র সশস্ত্র বাহিনীর পরিচালিত হবার অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। নিশ্চয় এ সকল অভিযোগ বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিগোচরীভূত হয়েছে। তাই তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন রক্ষীবাহিনীকে। নিরপরাধ লোকদের ওপর যাতে অত্যাচার অবিচার না করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য তিনি আহ্বান জানিয়েছেন নব্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণ জওয়ানদের।
স্বাধীনতা অর্জন যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম লক্ষ্য তেমনি স্বাধীনতা-উত্তরকালে সেই স্বাধীনতা সংহত করা তথা সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নয়া কোন চক্রান্ত মোকাবেলায় দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে আসাও তাদের আর এক লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য অর্জনের রক্ষীবাহিনীকে অবিরাম পরিশ্রম করে যেতে হবে। যারা স্বাধীনতার সুফল কে ব্যক্তি অথবা গোষ্ঠীর স্বার্থে গ্রাস করতে চায়, অন্যায় অত্যাচার চালিয়ে দুঃখী মানুষের ফরিয়াদি কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে রক্ষীবাহিনীকে এগিয়ে আসতে হবে মুক্তিযুদ্ধের নিয়ে। এমনিতেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাধারণ মানুষ প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে এর উপরে আবার এক শ্রেণীর লোক কালোবাজারি এবং মুনাফা বাজারি মাধ্যমে জনগণের শেষ রক্ত বিন্দু চুষে নিজেদের ভাগ্য গড়ার সর্বনাশা খেলায় মেতে উঠেছে। বঙ্গবন্ধু এই সকল বিরোধী শক্তিকে নির্মূল করার জন্য রক্ষী বাহিনীর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী এই তরুণ জওয়ানেরা এদেশের চাষে কৃষকের সন্তান। তাদের দুঃখ-দুর্দশা সম্পর্কে সন্তানের চাইতে আর বেশী ওয়াকেবহাল থাকতে পারেন। এই বাস্তব উপলদ্ধি এবং মুক্তিসংগ্রামের অভিজ্ঞতা জাতীয় রক্ষীবাহিনীকে অবশ্যই ভবিষ্যৎ যাত্রাপথে প্রদর্শন করবে। যে নেতার নির্দেশে একদিন তারা জীবনপন করতে পেরেছিল, সফল আঘাত হেনেছিল, সুসজ্জিত, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বর্বর এক সেনাবাহিনীর ওপর আগামী দিনে সেই নেতারই নির্দেশে দুঃখী মানুষের মুক্তি ও সমৃদ্ধি আনায়নে একই উদ্যম ও ত্যাগ নিয়ে তারা অগ্রসর হবে এটাই স্বাভাবিক। জাতি তাদের কাছে অনেক কিছু আশা করে, শোষিত, নির্যাতিত পিতা যেমন আশা করে তার সন্তানের নিকট থেকে। শোষণের অবসান ঘটুক, নির্যাতনের বিরুদ্ধে নির্যাতিত পিতার সন্তান অতীতের মতোই সোচ্চার শপথে বলিয়ান হোক এটাই আমাদের কামনা।

পারস্পারিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা

আমাদের বাণিজ্য ও বর্হিবাণিজ্য মন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক আহমদ গত পরশুদিন ইরান ও আফগানিস্তান সফর শেষ করে দেশে ফিরেছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী ছয়দিন এ দুটি দেশে অবস্থান করেছিলেন, ফেরার পথে তিনি ভারতে ফিরেছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী ইরান ও আফগানিস্তান অবস্থানকালে বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় মিলিত হয়েছিলেন। আলোচনার মধ্যে বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দেশে ফিরে ঢাকা বিমানবন্দরে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের কাছে মন্ত্রী তার সফর ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছেন। ইরান বাংলাদেশের তেল রপ্তানি করতে রাজি হয়েছে। মন্ত্রী আশা করেছেন যদি ইরান থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয় তাহলে আমাদের তেল সমস্যার সমাধান হবে। কি পরিমাণ তেল আমদানি করা হবে সে সম্পর্কে মন্ত্রী কিছু বলেননি তবে আমাদের সংকট পূরণ হবে বলে আশা করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি পরিবহন সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়া ইরান পাঁচ হাজার টন গমের বীজ বাংলাদেশের সরবরাহ করতে এবং বাংলাদেশ থেকে চা ও পাটজাত দ্রব্য আমদানি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আফগানিস্তানের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা গড়ে তোলার প্রশ্নে কাবুলে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আফগান বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী যে বৈঠক হয়েছে তাতে উভয় দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাণিজ্য সম্প্রসারণে প্রশ্নটিই ছিল অন্যতম। দু’দেশের নেতাদের মধ্যে ঢাকা-কাবুল বিমান সার্ভিস প্রবর্তন এর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বস্তুত ইরান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা গড়ে তোলার ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রীকে অনুকূল পরিবেশের কথা বলেছেন তা অনুধাবনযোগ্য। উল্লেখিত দুটি দেশের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তির মাধ্যমে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন সম্ভব হতে পারে। যে সহানুভূতিও আগ্রহের সাড়া পাওয়া গেছে তাকে যথার্থ কাজে লাগাবার জন্য আমাদের কতৃপক্ষকে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ কামাল হোসেন ব্রাসেলসে বাংলাদেশ ও ইইসির মধ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য প্যারিস রয়েছেন। আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেছেন ইউরোপীয় সাধারণ বাজারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে ফরাসি ব্যাংক বাংলাদেশকে সাহায্য করতে সম্মত হয়েছে। ইউরোপীয় অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলা ও জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ফ্রান্স বাংলাদেশকে সমর্থন করবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। এদিকে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মিঃ রবার্ট ম্যাকনামারা আমাদের পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যানকে সম্প্রতি একটি চিঠিতে জানিয়েছেন যে আগামী ২২শে অক্টোবর প্যারিসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ব্যাংকের দেশ সমূহের বৈঠকে বাংলাদেশকে সাহায্য দানকারী কনসোর্টিয়াম গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মূলত বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার যে অনুকূল সারা বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে পরিলক্ষিত হচ্ছে তাকে কাজে লাগানো আমাদের কতৃপক্ষের দায়িত্ব। যারা সাহায্যের হাত প্রসারিত করে তাদের সঙ্গে বিশ্বাস ও সৌহার্দ্যের এবং অনেক ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার আবশ্যকতা রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি ইরান আফগানিস্তানসহ অন্যান্য যেসকল দেশ সম্প্রতি আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য লেনদেনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে তাদের আগ্রহের প্রতীক কর্তৃপক্ষ বাস্তব দৃষ্টির দেবেন। দেশের নাজুক অর্থনীতিকে গতিশীল করার প্রয়োজনে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। কারণ সাহায্য পাওয়া বা প্রাপ্তির সম্ভাবনা সব সময় বড় কথা নয়। সাহায্য পেয়ে তা কাজে লাগানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!