You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.20 | ৪ পৌষ ১৩৭৮ সোমবার, ২০ ডিসেম্বর ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

 ৪ পৌষ ১৩৭৮ সোমবার, ২০ ডিসেম্বর ১৯৭১

এ দিনের পাকিস্তানী খবরঃ মিঃ জুলফিকার আলী ভুট্টো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে সরাসরি প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে পৌঁছেন। দু’ঘন্টা পর ঘোষণা দেয়া হল মিঃ ভুট্টো পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের শপথ নিয়েছে। এক রেডিও ভাষণে বললেন, পূর্বাঞ্চলের পরাজয় তিনি মেনে নিবেন না। -তিনি সামরিক বিপর্যয়ের প্রতিশোধ নেবেন। মেদসর্বস্ব অকর্মন্য ইয়াহিয়া চক্রের সামরিক অফিসারদের বরখাস্ত করলেন। Mr. Bhutto arrived in Rawalpindi on the morning of Dec. 20 and Drove immediately to the president’s place, amid the cheers of thousands of his supporters. About two hours later it was announced that he had been sworn in as ‘President and Chief Martial Law Administrator.’ IN a broadcast on Dec. 20 lasting nearly an hour, President Bhutto declared that East Pakistan was an inseparable and indissoluble part of Pakistan” and promised revenge for Pakistan’s temporary humiliation.” He also pledged himself to restore democracy and to introduce political, social and educational reforms. President Bhutto also announced in his broadcast the retirement of General Yahya Khan, General Abdul Hamid Khan (Chief of Army Staff), General S.G.M.M Pirzada (Pso to General Yahya), Major-General Ghulam Umar Khan and there other senior officers, whom he described as “the fat and feebly generals” Lieu-General Abdul Gul Hasan was appointed c-in-C of the Armed Forces of Pakistan, a post hither to held by General Yahya Khan. (সংবাদপত্র)

নাটোরে অবস্থানরত ৯ হাজার পাক-সেনা মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে শুরু করে। বগুড়া-হিলি, কুষ্টিয়া- ঈশরদি-রাজশাহী থেকে আগত হানাদার পাক সেনাদের কম্যান্ডার মেজর জেনারেল নজর হোসেন শাহ্‌র নেতৃত্ব মিত্রবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল লছমনসিং ও ব্রিগেডিয়ার পানুর নিকট পাক-সেনারা আত্মসমর্পণ করে। নাটোর পাকসেনাদের আত্মসমর্পণ মাধ্যমে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয় এদিন (২০ ডিসেম্বর)। মুক্তি ও মিত্রবাহিনী সম্মিলিত কম্যান্ডের কাছে এদিন পাক হানাদার সেনারা নওগাঁয় আত্মসমর্পণ করে। উল্লেখ্য, ১৩ ডিসেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা নওগাঁ শহর ঘেরাও করে রেখেছিল। পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের বার্তা মুক্তিযোদ্ধারা পাঠায়, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা ভীতি হানাদার সেনাদেরকে সাহস দেয়নি। পরে মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

এদিন ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবের প্রাণদন্ড আদেশ কার্যকর করতে চেয়ে মিঃ ভুট্টোর মতামত চান। মিঃ ভুট্টো বললেন, শেখ মুজিব কে হত্যা করা হলে পশ্চিম পাকিস্তানীরা আর দেশে ফিরতে পারবে না। “President Yahya Khan had proposed  Mr. Bhutto on Dec. 20, 1971 that he should order the Shiekh’s execution before handing over power, to which Mr. Bhutto had replied. “If I killed Mujib not one of the West Pakistanis will never come home.” (KCA,P. 25110)

২০ ডিসেম্বর লন্ডনে অবস্থিত পাকিস্তান দূতাবাসে “ইকনমিক মিনিষ্টার” পদে নিয়োজিত এ.এফ.এম এহসানুল কবীর বাংলাদেশের পক্ষে যোগ দিয়েছেন বলে ঘোষণা করেন। প্যারী থেকে প্রাপ্ত এক সংবাদে বলা হয়, স্থানীয় পাকিস্তানী দূতাবাসে “কমার্শিয়াল কাউন্সিলার” পদে নিয়োজিত মোসলেহউদ্দিন আহমদ এবং ব্রাসলস- এ অবস্থিত পাকিস্তান দূতাবাসে “সেকেন্ড সেক্রেটারী” পদে শৃঙ্খলার পুনঃ প্রতিষ্ঠা, যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থার পুনঃস্থাপন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পুনরুজ্জীবন, শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন, খাদ্য ও জ্বালানিসহ জরুরী পণ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, পাকিস্তানের আধাসামরিক বাহিনী ও সশস্ত্র সমর্থকদের নিষ্ক্রিয়করণ, সরবরাহকৃত অস্ত্রশস্ত্রের পুনরুদ্ধার, জাতীয় পুনর্গঠন কাজে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়োগ প্রভৃতি বিষয়ে সচিব, সাব কমিটি ও পরিকল্পনা সেলের সুপারিশসমূহ মন্ত্রীসভায় প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তের পর জেলা পর্যায় জরুরী করণীয় ও দায়িত্ব সম্পর্কে জেলা-প্রশাসকদের প্রতি নির্দেশপত্র প্রেরিত হয়। ৭ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হওয়ার পর থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে উনিশটি জেলার জন্য জেলা-প্রশাসকদের মনোয়ন ও নিয়োগ সম্পন্ন হয়। ১৭ ডিসেম্বর ঐসব জেলার সহকারী প্রশাসক পর্যায়ে নিয়োগ করা হয়। আরও ছয়চল্লিশ জন অফিসার। (মূলধারা ৭১ পৃঃ ২৩৮)

-ইসলামাবাদ থেকে পাক সরকার মুখপাত্র ঘোষণা করেন, কারাগার থেকে শেখ মুজিবকে মুক্তি দিয়ে গৃহবন্দী করা হয়েছে। দি গার্ডিয়ান পত্রিকায় সংবাদে প্রকাশ, শেখ মুজিবকে লায়লাপুর কারাগার থেকে আলোচনার জন্য রাওয়ালপিণ্ডি আনা হয়েছে।

-এ দিন সকালে মুজিবনগরে অবস্তানরত একদল সাংবাদিক, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠক দু’টি ষ্টল ফ্লাইটে কলকাতা থেকে ঢাকায় পৌঁছান, এদের মধ্যে ছিলেন, সর্বজনাব ফয়েজ আহমদ, এম আর আখতার মুকুল, এ বি এম মুসা, কামাল লোহানী প্রমুখ।

-২২ ডিসেম্বর (বুধবার) কলকাতা থেকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি যাত্রীবাহী বিমানযোগে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ মন্ত্রীসভার সদস্যগণ ঢাকা প্রত্যাবর্তন করেন। স্বাধীন বাংলার জনগণ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ ও তাঁদের সহ কর্মীদের বিপুল সম্বর্ধগ্না জ্ঞাপন করে। অগনিত জনতা “জয় বাংলা” ও শেখ মুজিবের মুক্তি চাই” ধ্বনিসহকারে এক অভূতপূর্ব পরিবেশ সৃষ্টি করে। (“দি ডেইলি টেলিগ্রা”, ২৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১)।

২৩ ডিসেম্বর “দি ডেইলী টেলিগ্রাফ”- এর সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়, রাজনীতি, কূটনীতি এবং মানবতার খাতিরে শেখ মুজিবকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করার অনুমতি দেওয়া উচিত। এর ফলে বাংলাদেশ তার অবিসংবাদী নেতাকে ফিরে পাবে এবং ভুট্টো ও পাকিস্তান গণতান্ত্রিক বিশ্বের, বিশেষ করে ভারতের, অভিনন্দন ও আস্থা অর্জন করবে। এই নিবন্ধে আরও বলা হয়, বাস্তব পরিস্থিতিকে অস্বীকার করে ভুট্টো এখনও “ এক পাকিস্তান”-এর কথা বলে। কিন্তু একথা উল্লেখ করার কোন অর্থ হয় না।

উপসংহারে বলা হয়, শেখ মুজিবের মুক্তির বিনিময়ে ভারত কর্তৃক দখলকৃত এলাকা এবং পাকিস্তানী যুদ্ধ-বন্দীদের ফেরত দেওয়া হবে বলে যদি ভুট্টো আশা পোষণ করে, তা’হলে সে মারত্মক ভুল করবে। (“দি ডেইলি টেলিগ্রাফ”, ২৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১)। ২০ ডিসেম্বর অখণ্ড পাকিস্তানের কাঠামোর আধীনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ- আলোচনার জন্য মিলিত’ হতে রাজী আছেন এই মর্মে ভুট্টোর ঘোষণা এবং শেখ মুজিবের আসন্ন মুক্তির সংবাদ স্বভাবতঃই বাংলাদেশের স্বাধীন ভবিষৎ সম্পর্কে নানা জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি করে। লন্ডনের টাইমস পত্রিকায় প্রতিনিধি কর্তৃক এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে তাজাউদ্দিন আহমদ স্পষ্ট ভাষায় জানান, কোন শিথিল ফেডারশনের অধীনে।

অখণ্ড পাকিস্তানের’ অধীনে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে শেখ মুজিবের সহায়তা পাওয়া যাবে এর চেয়ে হাস্যকর আর কিছু হতে পারে না। দৃঢ়তার সঙ্গেই তিনি ঘোষণা করেন, যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে তা আর কিছুতেই পরিবর্তনীয় নয়। (দি টাইমস ডিসেম্বর ২৩) (মূলধারা ১৯৭১ পৃঃ ২৫০)

Reference:

একাত্তরের দশ মাসরবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী