বাঙলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে গেরিলাদের তৎপরতা অব্যাহত
কলকাতা, ৮ জুন- বাঙলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে গেরিলা যুদ্ধের তৎপরতা উত্তোরােত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। গেরিলা বাহিনীর হাতে ক্রমান্বয়ে নাস্তানাবুদ পাক হানাদাররা এখন মরিয়া হয়ে সাধারণ মানুষকে ব্যাপক হত্যা, নারী নির্যাতন ও লুঠতরাজ অব্যাহত গতিতে চালিয়ে যাচ্ছে।
আজ সন্ধ্যায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত সংবাদে ঐ কথা বলা হয়।
প্রকাশ, রাজশাহী রণাঙ্গনে লুঠতরাজ ও নারী নির্যাতনে লিপ্ত একদল পাক হানাদারকে গেরিলা বাহিনী অতর্কিতে ঘিরে ফেলে ১ জন মেজর সহ ৫৯ জন পাক হানাদারকে জীবন্ত ধরে ফেলেন। মেজর পালাবার চেষ্টা করে গেরিলাদের গুলিতে আহত হন।
মুক্তিফৌজের কমাণ্ডসূত্রে প্রকাশ, ধৃত হানাদারদের এখন বিচার চলছে।
ঢাকা থেকে বিলম্বে প্রাপ্ত এক সংবাদে প্রকাশ, গত ২৪ মে নরসুন্দিতে কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা মিঞা আব্দুল মজিদসহ ৪ জন পাক দালাল মুক্তিফৌজের অতর্কিত আক্রমণে নিহত হয়েছে।
উল্লেখিত সংবাদ সূত্রে বলা হয়েছে যে, খাজা খয়রুদ্দিনের নেতৃত্বে নিহত ঐ সব দালালরা নরসুন্দিতে দালালচক্রের একটি নতুন ইউনিট গঠনের জন্য এক বৈঠকে মিলিত হয়েছিল। সংবাদ পেয়ে মুক্তিফৌজ সভাস্থলে আক্রমণ করে। খাজা খয়রুদ্দিন কোন প্রকারে পালিয়ে গিয়ে প্রাণরক্ষা করে।
দিনাজপুরে চুনাহাটি গ্রামে পাক-পশুরা গৃহস্থ পরিবারের মেয়েদের উপর নারকীয় অত্যাচার চালায়। রাজশাহী কলেজের দু’জন ছাত্রী স্বগ্রামে পাক পশুদের হাত থেকে ইজ্জত বাঁচাবার জন্য বিষ পান করে আত্মাহুতি দেন।
ফেনী অঞ্চলের শুভপুরে গেরিলা বাহিনী পাক সৈন্যদের একটি ট্রাক ধ্বংস করে দিয়েছেন। ফলে বহু পাক-হানাদার হতাহত হয়েছেন। গেরিলারা শত্রুসেনার কাছ থেকে একটি মেশিনগান দখল করে নিয়েছেন।
গত ২৬ মে ঢাকায় গেরিলাবাহিনী ২টি স্পীড বােট দখল করে নেন। ১৪ জন শত্রুসেনা ঐ ঘটনায় নিহত হয়।
এছাড়া আরাে বহু স্থানে গেরিলাবাহিনী সাহসিকতার সঙ্গে পাক-হানাদারদের মােকাবিলা করছেন এবং স্বাধীন বাঙলাকে হানাদারমুক্ত করার সংকল্পে ব্ৰতী আছেন।
সূত্র: কালান্তর, ৯.৬.১৯৭১