একটা গুজব রটে গেল যে, বঙ্গবন্ধুর সরকার ভারত সরকারকে যে পরিমাণ নােট ছাপাতে দিয়েছিল ভারত সরকার ইচ্ছেকৃতভাবে দেশের অর্থনীতিকে দেউলিয়া করে দেবার জন্য তার দ্বিগুণ নােট ছাপিয়েছে। এ সময় একই নম্বরের দুই একটি নােট পাওয়া যাচ্ছিল এবং সংবাদপত্রে তা ছাপা হচ্ছিল। অন্যদিকে টাকার। মূল্যও কমে যাচ্ছিল শীঘ্র ভারতীয় নােট বাজার থেকে তুলে নেয়া হােক। বঙ্গবন্ধুর সরকার ভারতীয় নােট প্রত্যাহারের জন্য এক মাস সময়। দিলেন। শুরু হয়ে গেল অপপ্রচার। বলা হলাে আওয়ামী লীগ নেতাদের লক্ষ লক্ষ টাকা ভারতে রয়েছে তা বদলানাের জন্যই এত দীর্ঘ সময় দেয়া হয়েছে। পাকিস্তানের নােট অচল ঘােষণায় মাত্র ৫ দিন সময় দেয়া হয়েছিল। আর ভারতীয় নােট প্রত্যাহারের জন্য প্রথমে ১ মাস ও পরে আরাে ১৫ দিন সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। এই মিথ্যা অভিযােগের জবাবে অর্থমন্ত্রী তাজুদ্দিন সাহেব বললেন যে, পাকিস্তানের টাকার ব্যাপারটা হলাে ডিমনিটাইজেশন ভারতের টাকার ব্যাপারটা হলাে উইথড্রয়াল, প্রথমটা হলাে নির্দিষ্ট তারিখের পর অচল ঘােষণা আর পরেরটা হলাে ভারতীয় সমস্ত টাকা প্রত্যাহার করে নেয়া। তিনি বললেন, ভারত থেকে মােট ৩৫০ কোটি টাকার নােট ছাপানাে হয়েছে। সত্যিই ভারত নির্দেশিত ৩৫০ কোটি টাকার বেশি নােট চেপে বাজারে ছেড়েছে কিনা সেটা আমি জানতে চাই। লম্বা সময় দিলাম যাতে সমস্ত নােট জমা হতে পারে এবং আমরা প্রকৃত অবস্থাটা বুঝতে পারি।
৩৫০ কোটি টাকার বেশি নােট জমা হলেই আমরা ভারত সরকারকে দায়ী করে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারব। অন্য প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন যে, এক টাকার নােট এত বিপুল পরিমাণ হওয়ায় নম্বরে দুই একটি ত্রুটি হতে পারে। ১৯৭৩ সনের ৩১ মে ভারতে মুদ্রিত টাকা জমাদানের তারিখ অতিবাহিত হলে দেখা গেল বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মূলত ইস্যুকৃত মােট অংকের চাইতে ৫৩ লক্ষ ৫৪ হাজার ৪৮০ টাকা কম জমা পড়েছে। এতে পরিষ্কার প্রমাণিত হয় যে, দ্বিগুণ ছাপা বা নােট ছাড়ার ব্যাপারটি সম্পূর্ণ গুজব। কিন্তু স্বাধীনতা বৈরীদের ব্যাপক প্রচারে বঙ্গবন্ধু ও তার সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে বিভ্রান্ত করার এটা ছিল এক মােক্ষম হাতিয়ার।
সূত্র –
সূত্রঃ ফ্যাক্টস্ এন্ড ডকুমেন্টস্ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড অধ্যাপক আবু সাইয়িদ