বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ৬ই জুলাই, শনিবার, ২১শে আষাঢ়, ১৩৮১
আজ আওয়ামীলীগের সভা
আজ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও সংসদ সদস্যদের একটি যৌথ সভা গণভবনে বসবে। দেশের রাজনীতির এটি সর্বোচ্চ পরিষদ। এ সভাকে কেন্দ্র করে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। দেশ-বিদেশের উৎসুক দৃষ্টি তাই ৬ই জুলাইর এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক এর প্রতি নিবদ্ধ। নিঃসন্দেহে সভাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও বিপুল গুরুত্বের অধিকারী। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ব্যাপারে এ ধরনের বৈঠক বিরাট অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।
এই সভাকে কেন্দ্র করে যে সকল কথা বাতাসে ভেসে চলেছে তার সাধারন বক্তব্য হচ্ছে, দেশে একটি পরিবর্তন আসবে। এবং এই পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে চলেছে। এই পরিবর্তন কিভাবে কোন পথের নিশানা নিয়ে আসছে সে সম্পর্কে এখনও চূড়ান্ত ধারণা গঠন করতে পারেনি। সভা শেষ হবার পূর্বে ধারণা গ্রহণ করাও সম্ভব নয়।
গত দুই যুগ ধরে বাংলাদেশের মানুষকে আওয়ামী লীগ ধাপে ধাপে একটির পর একটি বিজয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামের অতুলনীয় চূড়ান্ত পরিণতি। স্বাধীনতার সুফল জনগণের দুয়ারে পৌঁছে দেওয়া আওয়ামী লীগের প্রধান ও মুখ্য দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালন করা অতিশয় কঠিন একটি সংগ্রাম।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভায় বাংলাদেশের বিশ্বসভায় প্রবেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবার পর আওয়ামী লীগ সরকার ও পার্টি এদেশের স্বাধীনতার পতাকাকে শক্ত ভিত্তির উপর গ্রথিত করার কাজটি সম্পন্ন করছেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের একটি মহান কর্তব্য অত্যন্ত দ্রুততার সাথে সম্পাদন করেছেন। এখন কাজ হলো দেশের অর্থনীতিকে গড়ে তোলা। মানুষের কল্যাণের জন্য সম্পদ বৃদ্ধি ও আহরণ এবং তার সুফল সাধারণ মানুষের দ্বারে পৌছে দেওয়া। শত শত বছর ধরে বঞ্চিত একটি জাতির, শোষিত মানুষের জীবন যাত্রার মান, সাংস্কৃতিক চেতনার স্তর উন্নত করা। গোষ্ঠী বিশেষ নয়, সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য গণতান্ত্রিক অধিকার ও সামাজিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা। মেহনতী মানুষের সংগ্রামী আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করা। এই কঠিন দায়িত্ব আজ আওয়ামী লীগের স্কন্ধে। ভাবাবিলাশ ও অ্যামেচারিজমকে প্রশ্রয় দিয়ে নয়, গাণিতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করি আমরা এই অসাধ্য সাধন করতে পারি।
ইতোপূর্বে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অটল থেকে আওয়ামী লীগ অনেক দুর্বার সংগ্রামে বাংলার আপামর জনতাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। গলায় পরিয়ে দিয়েছে বিজয়ের বিজয়মাল্য। নতুন সংগ্রামের দ্বারে পৌছে এসে কঠিন সিদ্ধান্ত নেবে এবং বিজয়ের পথে এগিয়ে যাবে এটাই আমাদের আশা। এটাই দেশবাসীর কামনা।
কয়লা ও জ্বালানি তেলের অভাব
সংবাদ নয়। রীতিমতো দুঃসংবাদ। গতকাল বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে যে, কয়লা ও জ্বালানি তেলের অভাবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ জল পরিবহন সংস্থার বরিশাল-বরগুনা, নারায়ণগঞ্জ-গোয়ালন্দ এবং ঢাকা-বরিশাল যাত্রীবাহি স্টিমার সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আগামী রোববারের মধ্যে ঢাকা খুলনা রকেট সার্ভিসও বন্ধ হয়ে যাবে। একই কারণে সংস্থার মোট ৩৬টি টাগের মধ্যে ১২টি ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। টেলো কয়লার সরবরাহ না পাওয়া গেলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংস্থার অবশিষ্ট চারটি যাত্রীবাহী সার্ভিসসহ সমস্ত জলযান বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, এই স্টিমার সার্ভিস ও টাগ বন্ধ হয়ে পড়ায় সংস্থাকে দৈনিক প্রায় ৫ লাখ টাকা লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়েছে। গত চারদিন ধরে বন্ধ থাকায় লোকসান হয়েছে ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
সংস্থার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন যে, প্রতিমাসে সংস্থার ২লাখ ৫০হাজার গ্যালন জ্বালানি তেল ও ২ হাজার ৫ শত টন কয়লা প্রয়োজন। বর্তমানে কয়লা ও তেল দুটোই শূন্যের কোঠায়। সংস্থার ১২টি টাগ বন্ধ থাকায় দৈনিক ১২ হাজার টন মাল পরিবহন করা যাচ্ছে না। প্রতিটি টাগের পরিবহন ক্ষমতা ১২ হাজার টন। এটা গুলো বন্ধ থাকায় পাট ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহনের মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। একদিকে খাদ্যদ্রব্য পাটসহ মাল পরিবহন বিঘ্নিত হচ্ছে তেমনি যাত্রীদের দুর্ভোগও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
গোদের ওপর বিষফোঁড়া বোধহয় একেই বলে। সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য খাদ্যশস্যের মূল্য বৃদ্ধি হ্রাস করার জন্য যেখানে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন সেখানে নৌ-পরিবহনের ক্ষেত্রে এই অচলাবস্থা কি মারাত্মক পরিণতি সৃষ্টি করবে তা সহজেই অনুমেয়।
কয়লা ও তেল নিয়ে কেলেঙ্কারির অতীতেও কম হয়নি। সংশ্লিষ্ট বিভাগের টনক নড়ে তখনই যখন কয়লা ও তেলের মজুদ শূন্যের কোঠায় এসে ঠেকে।
কয়লার মজুদ ফুরিয়ে যাচ্ছে, কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এ সম্পর্কিত সংবাদ ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয়েছে। গত ১৮ই এপ্রিল বাংলার বাণীতে প্রকাশিত ‘দেশি কোস্টারে কয়লা আনলে ৩২ লাখ ডলার বাচাঁনো যায়’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে কয়লা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতার দরুন ভারত থেকে ৬ লাখ টন কয়লা আমদানির চুক্তি বাস্তবায়নে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ২২শে জুন বাংলার বাণীতে এই মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল যে, কয়লার অভাবে স্টিমার সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে ঠিকই কিন্তু কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। নড়েনি বলেই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তিয়াত্তর সালের আগস্ট মাসে ভারত থেকে ৬ লাখ ৬০ হাজার টন কয়লা আমদানির জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের চুক্তি হয়। এ চুক্তি অনুযায়ী একটা সিংহভাগই ইতিমধ্যে বাংলাদেশের পৌঁছার কথা। কিন্তু গত ১০ মাসে ভারত মাত্র ১ লাখ ৪০ হাজার টন কয়লা দিয়েছে। বাকি কয়লা কবে নাগাদ পাওয়া যাবে তা জানা যায়নি। এ কয়লা সম্পর্কিত প্রতিবেদনটিও গত ২০ই জুন বাংলার বাণীতে প্রকাশিত হয়েছিল। স্পষ্টতঃই বোঝা যাচ্ছে যে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে কয়লা আমদানি করতে সক্ষম হননি বলেই কয়লার মজুদ শূন্যের কোঠায় এসে ঠেকেছে।
জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অর্থাৎ সময়মতো তেল আসেনি বা আনার ব্যবস্থা করা হয়নি বলে তেলের ভাঁড়ার শূন্য। অতীতে আমরা দেখেছি যে, এ ধরনের মারাত্মক সমস্যা ও সংকট সৃষ্টির মূলে রয়েছে লালফিতা নামক বস্তুটি। ফাইল নড়তে-চড়তেই দিন আর মাস কাবার হয়ে যায়। তারপর যখন সমস্যা ও সংকটের সৃষ্টি হয় তখন একের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপাবার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। কয়লা ও জ্বালানি সংকট সৃষ্টি তো একদিনে হয়নি। সময় লেগেছে। আর তার জন্য দায়ী ত্রুটিপূর্ণ আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থা। এই ত্রুটির পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে না পারলে সঙ্কট বাড়বেই। যেমনটি এখন বেড়েছে।
কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক