দেশবাসীর প্রতি মেজর জলিল –আ. স. ম. রবের আহ্বান
প্রিয় দেশবাসী, আস্সালামু আলাইকুম
গােটা দেশ ও জাতির এক সংকটময় মুহূর্তে আমরা আপনাদের সামনে এই প্রচারপত্রের মাধ্যমে হাজির হচ্ছি। এর আগে একটি প্রচারপত্র আমরা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যার সম্বন্ধে একটি নাতিদীর্ঘ বক্তব্য রেখেছি। আমরা আশা করেছিলাম বর্তমান সরকার দেশবাসীকে তাদের পবিত্র দায়িত্ব সম্পর্কে ওয়াকেফহাল করবেন। কিন্তু খুবই দুঃখের বিষয় এই যে, সরকার আমাদের প্রস্তাবিত সােজা, সরল ও বাস্তবমুখী কর্মসূচি গ্রহণের পরিবর্তে কথার ধাঁধা সৃষ্টি করে। চোরাপথে জাতির সার্বভৌমত্বকে বলি দেবার অপচেষ্টা করছেন। জাতীয় পরিস্থিতির দ্রুত অবনতিকে অবিলম্বে রুখে দাঁড়ানাের জন্য আমরা আপনাদের সামনে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য ও বাস্তবমুখী কর্মসূচি পেশ করছি। আপনারা জানেন ১৯৭১ সনের ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধের পর পরই ভারতীয় সেনাবাহিনীর অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে যেয়ে এবং ১৯৭২ সনের মে মাসে শেখ মুজিবের ভারত-রাশিয়া ঘেষা আত্মঘাতি নীতি ও কুশাসনের বিরােধিতা করায় আমাদেরকে জেল-জুলুমসহ বহু নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। অবশেষে শেখ মুজিবের চরম জনপ্রিয়তার মুখেও আমরা ভারত-রাশিয়া-আমেরিকার কবল থেকে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার জন্য এ দেশের সত্যিকারের জনতার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকল্পে এবং শ্রমিককৃষক-মধ্যবিত্তসহ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বশেষে সাড়ে সাত কোটি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পথকে সুগম করার জন্য ১৯৭২ সনের অক্টোবর মাসে জাতীয় সমাজতন্ত্রী দল (জাসদ) গঠন করি।
সে মুহূর্তে আমার ছাড়া এ দেশের অন্য কোন রাজনৈতিক দল বা গােষ্ঠী বা অন্য ব্যক্তি শেখ মুজিবের কুশাসনের বিরুদ্ধে এবং ভারত-রাশিয়া-আমেরিকার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কোন প্রকার প্রতিবাদ উচ্চারণ করেনি। শেখ মুজিবের চরম নির্যাতনমূলক শাসনের মুখােমুখি দাঁড়িয়ে জাসদ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ ও জাতীয় কৃষক লীগের কর্মীরা দেশবাসীকে রাজনৈতিকভাৰ সচেতন ও সংগঠিত করার জন্য ঝাপিয়ে পড়ে। এ দেশের শতকরা ৯৭ জন শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-যুবক-মধ্যবিত্ত-বুদ্ধিজীবী-ব্যবসায়ীসহ আপামর জনসাধারণ আমাদের ডাকে সাড়া দেয় এবং সমর্থন যােগায়। শেখ মুজিবের ফ্যাসিবাদী কার্যকলাপ প্রতিরােধের জন্য আমরা খুবই গােপনে অথচ তৎপরতার সাথে গড়ে তুলি সারা দেশব্যাপী মুক্তিযােদ্ধা, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, প্রাক্তন সৈনিকদের সমবায়ে “বিপ্লবী গণবাহিনী”। অতি গােপনে আমরা সংগঠিত করি বাংলাদেশের প্রতিটি সেনানিবাসের সৈনিক ভাইদেরকে “বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার মাধ্যমে। এ সবের খানিকটা আঁচ করতে পেরে শেখ মুজিব আমাদেরকেসহ জাসদ, বাংলাদেশ। ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিকলীগ, জাতীয় কৃষকলীগের দশ হাজারেরও বেশি কর্মীকে কারাগারে নিক্ষেপ করে। হত্যা করে এক হাজারেরও অধিক কর্মীকে। কিন্তু এ সত্ত্বেও কাজ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলে। সে সময়ে জাসদ অন্যান্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে শেখ মুজিবের ফ্যাসিবাদী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরােধ গড়ে তােলার চেষ্টা করে।
খােদা হাফেজ ১৫ নভেম্বর, ১৯৭৫
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ