You dont have javascript enabled! Please enable it!
প্রসঙ্গত : আরাে কিছু তথ্য
ফারুকের পুরাে নাম দেওয়ান এশায়েত উল্লাহ সৈয়দ ফারুক রহমান। ১৯৭০ সনের অক্টোবর মাসে পাকিস্তানী ক্যাপ্টেন হিসেবে সুলতানের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেবার জন্য আবুধাবীতে গমন করে। মুক্তিযুদ্ধ সময়কালীন মুজিবনগর প্রবাসী সরকারের সংস্থাপন বিভাগের সচিব জনাব নূরুল কাদের খান—ফারুকের চাচা, তাঁর চিঠি পেয়ে ফারুক ১৯৭১ সনের ১২ই নভেম্বর আবুধাবী থেকে লন্ডনের পথে যাত্রা করে। ফারুক মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে যােগদানের পূর্বে দেশ স্বাধীন হয়ে যায়। সে জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণের হেতু অন্যান্য অফিসারগণ যে প্রমােশনে উন্নীত হন—তা তার ভাগ্যে স্বাভাবিকভাবে জোটেনি। খন্দকার আবদুর রশিদ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় কাশ্মীরের নিকটে হাজিরায় ক্যাপ্টেন হিসেবে কর্মরত ছিল। ১৯৭১ সনের ২৯শে অক্টোবর সে সীমান্ত পাড়ি দেয়। মুক্তিযুদ্ধের শেষলগ্নে সে জিয়াউর রহমানের ‘জেড়’ ফোর্সের একজন অফিসার হিসেবে যােগদান করে। ১৯৭৪ সনের প্রথমার্ধে খন্দকার আবদুর রশিদ ১৪ মাসের প্রশিক্ষণের জন্য বােম্বের দিয়ােলালীতে গানারি স্টাফ কোর্সে (gunnery staff। course) যােগদানের জন্য ভারতে গমন করে। ১৯৭৫ সনের মধ্য মার্চে কোর্স সমাপ্তি করে সে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করে। প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর স্বাভাবিকভাবেই রশিদের পােস্টিং ছিল যশােহরের। গানারি স্কুলে। সেখানে রশিদের যােগদান ছিল পূর্ব নির্ধারিত ও অবধারিত, কিন্তু রশিদ সেখানে যােগদান না করে এক মাসের ছুটি গ্রহণ করে। যশােহরে তার নির্ধারিত পদে যােগদানের অর্থ হলাে আর্টিলারি বাহিনীর কমান্ড হতে তার দূরে সরে যাওয়া। ১৯৭৫ সনের এপ্রিল মাসে সে সেকেন্ড ফিল্ড আর্টিলারির কমান্ডিং পােস্ট দখল করে। 
প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, রশিদের নির্ধারিত কর্মস্থল যশােহরের ‘গানারি স্কুলে যােগদান ছিল যেখানে অবশ্যম্ভাবী সেখানে কি করে, কাদের সাহায্যে ও সহযােগিতায় সেনাবাহিনীর বিধি-নিয়ম ভঙ্গ করে তাকে ঢাকায় রাখা হলাে? সে সময় রশিদের পূর্বতন বদলীর অর্ডার কে এবং কেন বাতিল করেছিলেন তা জানা প্রয়ােজন। [এ প্রসঙ্গে ঢাকার ব্রিগেড কমান্ডার শাফায়াৎ জামিলের সাক্ষাৎকার উৎসাহী পাঠকের জন্য পরিশিষ্টে সংযােজন করা হলাে। রশিদ ১৯৭৫ সনের ২রা আগস্ট সন্ধ্যা ৭টায় মােশাররফ হােসেন মুসূ নামে মােশতাকের এক বন্ধুকে নিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। আলােচনা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে শক্তি প্রয়ােগের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়টি মােশতাককে জ্ঞাত করানাে হয় এবং মােশতাক তাতে সম্মতি প্রদান করে। এ প্রসঙ্গে এন্থনী মাসকারেনহাস লিখেছেন, “He (Rashid) was well aware of Moshtaque from Dosphara, Rashid from Chandina, Rashid’s uncle, Musharaf Hossain (Mushu) had also befriended Mushitaque while he was escaping to India in 1971 and they had been colse friends since then. Rashid asked “Mushu” to arrange an appointment for him with Khandaker Moshtaque Ahmed in Dhaka. This was easily done. Dressed in civvies to avoid attention Rashid accordingly turned up at Mostaque’s house in Aga Mashi Lane in the old quarter of Dhaka at 7 pm. on 2nd August. He took the precaution of carring with him an application for a permit to buy a scooter just in case he was noticed and someone wanted to know why an army officer was calling on a politician. Rashid was welcomed by Moshtaque in an upstairs room and after the normal courtesies, Rashid streered the conversation to the political situation. They spoke for almost two hours. Rashid recalls : We discussed political matters for some time as I was indirectly finding out how he felt. Then I asked him, being closet to Sheikh Mujib and one of the seniormost. Awami League members, how did he feel? I asked him can the nation expect progress under the leadership of Sheikh Mujibur Rahman?”
He said, No they cannot. “Then I said”, “If that is the case why don’t you leave?” He Said That is also not so easy?” It showed that they (the ministers) are quit afraid of taking such a decision though they know what he is doing. They are such cowards that they have accepted all his bad doings. Rashid convineced: “Then I asked, ‘Will there be any justification at this stage if somebody take a decision to remove Sheikh by force? He said, Well, probably for the country’s interest it is a good thing. But it is also very difficult to do it.” I asked Rashid to squeeze his mind and confirm if that was exactly what Mostaque said. He answered : Yes He said, it was very difficult to do but in the country’s interest if somebody could do it probably it would be a great thing. Question : ‘So he agreed?’ Rashid : “Yes, yes he agreed. Then Mostaque even asked me that if somebody removed him (Sheikh Mujib) who could be next? The altarnative should be there.” Rashid said his own reply was non committal. He explained to Khandaker Moshtaque that if anyone did think in terms of removing Sheikh Mujib he would also definitly think of a suitable replacement, particularly someone who could balance out the political side.”
Rashid was satisfied that in Khandaker Moshtaque Ahmed he had found a willing replacement for Sheikh Mujib. The revelations made by Rashid and Farooq concerning Khandaker Moshtaque’s prior knowledge of there plans to kill Sheikh Mujibur Rahman were made under other in a series of separate tape recorded interviews, I had with them.” রশিদ, মেজর (অবঃ) ডালিম এবং ডালিমের সঙ্গে অন্যান্য যে ২২ জন সামরিক অফিসার তাদের কার্যক্রমের কারণে বরখাস্ত হয়েছিল তাদের মধ্যে প্রথমে মেজর (অবঃ) ডালিমের সঙ্গে এবং ডালিমের মাধ্যমে মেজর (অবঃ) নূর, মেজর (অবঃ) শাহরিয়ার এবং মেজর হুদার সঙ্গে সংযোেগ স্থাপন করে। শুধু তাই নয়, সামরিক বাহিনীর অত্যন্ত ক্ষুদ্র অংশকে নিয়ে রশিদফারুক যে কুদেতা পরিকল্পনা করেছিল তাকে ব্যাপকতা দান করার জন্য রশিদ ইনফেন্ট্রি গ্রুপের একাংশকে জড়ানাের চেষ্টা করেছিল। জয়দেবপুরে অবস্থিত ষােড়শ বেঙ্গল ইনফেন্ট্রির একটি দলের কার্যকরী কমান্ডিং অফিসার তখন মেজর শাহজাহান। পূর্ব নির্ধারিত আলােচনা থাকলেও ১৫ই আগস্ট রাতে মেজর শাহজাহান রশিদের অনুরােধে রাত দশটায় নতুন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে উপস্থিত হতে সে অপারগতা প্রকাশ করে। বেঙ্গল ইনফেন্ট্রিকে কুদের সঙ্গে জড়ানাের পাশাপাশি বিমান বাহিনীর স্কোয়ার্ডন লিডার লিয়াকতের সঙ্গে রশিদ যােগাযােগ স্থাপন করে।
কিন্তু কুদেতার রাতে রশিদ স্কোয়ার্ডন লিডার লিয়াকতের বাড়ি গিয়ে তাকে। মিগসহ প্রস্তুত হতে বলে। কিন্তু লিয়াকত কিছু করতে অস্বীকার করে এবং বলে যে বিমান বাহিনীর প্রধানের নির্দেশ ব্যতীত তার কিছু করার নেই। ফারুক আর্মি হেড কোয়ার্টার্সের GI-OPS-এর কর্ণেল আমিন আহম্মদ, ৪৬তম ঢাকা ব্রিগেডের ব্রিগেড-মেজর, মেজর হাফিজ, আর্টিলারির মেজর সেলিম, মেজর নাসির, মেজর গাফফার-এর সঙ্গে যােগাযােগ ও আলােচনা করে। তাদের সঙ্গে একত্রে বা একাকী আলােচনায় ফারুক বুঝতে পারে যে, তাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে অথচ ফারুকের হাতে সময় ছিল না। ১৯৭২ সনে ফার্স্ট বেঙ্গল ল্যান্সার গঠিত হয়। ল্যান্সার বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে ফারুক এই বাহিনীর মধ্য হতে কিছু সংখ্যক সদস্যকে নিয়ে কমান্ডাে স্টাইলে প্রশিক্ষণ শুরু করে। সে এই গ্রুপের নাম দেয় ‘হান্টার’ কিলার টিম। তাদের সংখ্যা ছিল ১৫০ জন, তারা ছিল ফারুকের প্রতি একান্ত অনুগত। তারা ফারুকের নির্দেশে যে কোনাে কাজ সম্পাদনে পারঙ্গম ছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী বলে কথিত নায়েক সুবেদার মােসলেম এই গ্রুপেরই অন্যতম সদস্য ছিল। ফারুক-রশীদ বহুবার শপথপূর্বক বলেছে যে, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিষয়টি মােশতাককে জুলাই মাসে জানানাে হয়েছিল। ১৯৭৫ সনের ২রা আগস্ট অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু হত্যার ১৩ দিন পূর্বে মােশতাক কুদেতার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হবে তা জানতে পারে। এই ১৩ দিন মােশতাক কি করেছিল? এ ধরনের কাজে ১৩ দিন একটি দীর্ঘ সময়। এই সময়ের মধ্যে মােশতাক তার সহযােগী ও বিশেষকরে তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের সঙ্গে বিষয়টি আলােচনা করে। এ রকম একটি দুঃসাহসিক ঘটনা সংঘটিত হলে করণীয় কার্যাদি সম্পর্কে তারা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। এমনও প্রমাণ রয়েছে যে তাদের গ্রুপের কেউ একজন মেজরকে এই প্লট সম্পর্কে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসকে অবগত করে।৬ পূর্বেই বলা হয়েছে, সি, আই, এ নেট ওয়ার্কের সঙ্গে ওতােপ্রোতভাবে জড়িত ছিল মাহবুব আলম চাষী।
তার দ্বারাই মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যােগাযােগ রক্ষা করা হয়েছিল বলে প্রখ্যাত লেখক ও সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ মনে করেন। লরেন্স লিফশুলজ লিখেছেন, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের উচ্চপদস্থ অফিসার ও বাংলাদেশের ওয়াকিফহাল মহলের সূত্র অনুয়ায়ী প্রতীয়মান হয় যে, মুজিব হত্যার বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্বেজ্ঞাত ছিল এবং এ ঘটনা ঘটার ছয় মাস পূর্বেই ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে তাদের আলােচনা অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন দূতাবাসের উচ্চ পদস্থ কূটনৈতিক সূত্রে প্রকাশ বঙ্গবন্ধুকে উৎখাত করার অভিলাষী ব্যক্তিবর্গ মার্কিন দূতাবাসের অফিসিয়ালদের সঙ্গে যােগাযােগ করে। দূতাবাস সূত্রে প্রকাশ, ১৯৭৪ সনের নভেম্বর হতে ১৯৭৫ সনের জানুয়ারির মধ্যে কুদেতার মাধ্যমে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনােভাব কি হবে তা নির্ধারণের জন্য ১৯৭৪ সনের নভেম্বর মাস হতে ১৯৭৫ সনের জানুয়ারির মধ্যে দূতাবাসে বহু মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। লরেন্স লিফশুলজ বলেছেন, দূতাবাসের এই প্রকাশ্য মিটিং বন্ধ হয়ে গেলেও ঢাকাস্থ সি, আই-এর স্টেশন চিফ ফিলিপ চেরি তার চ্যানেল ওপেন রাখেন। ফারুক বলেছে, তার লােকেরা যখন হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিল তখন মহানগরীর রাজপথে বহুসংখ্যক মার্কিন দূতাবাসের গাড়ির গুঞ্জরণ’ ও আনাগােনায় সে অবাক হয়ে যায়।১০। রশিদ-ফারুক বলেছে, তারা কোনােভাবেই মার্কিন দূতাবাসে কাউকে বিষয়টি জানায়নি এবং তাদের যােগাযােগও ছিল না।১১ তাহেরউদ্দিন ঠাকুর বিদেশী পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাঙ্কারে বলেছে, ঘটনা ঘটার দুইদিন আগে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তার বাসায় চূড়ান্ত করা হয়। এ প্রসঙ্গে ফারুক-রশিদ বলেছে, তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের বাসায় যে মিটিং হয় সেখানে উপস্থিত ছিল না। এবং তাহের উদ্দিন ঠাকুরের সঙ্গে তাদের পূর্বে যােগাযােগও ছিল না।১২ আরেকটি ঘটনা হলাে রশিদ কর্তৃক মােশতাককে রেডিও স্টেশনে নিয়ে আসার পূর্বেই তাহেরউদ্দিন ঠাকুর রেডিও স্টেশনে উপস্থিত ছিল।
মােশতাকের ভাষণ- যা তাহেরউদ্দিন ঠাকুর কর্তৃক লিখিত হয়েছিল তা নিশ্চয় পূর্ব-চিন্তিত বলে এন্থনী মাসকারেনহাস মনে করছেন।১৩ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার প্রধান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীরা রাখ ঢাক করে কথা বলেননি, প্রকাশ্যই ঘােষণা দিয়েছে, আমরাই তাকে হত্যা করেছি।’হত্যাকাণ্ডের দায়দায়িত্বের পুরােটাই তারা স্বীকারও করেছে।১৪ তবু লক্ষণীয়, খন্দকার মােশতাক তাদের বলেছে সূর্যসন্তান। এই সূর্য সন্তানগণ বহু ইন্টারভিউয়ে বলেছে বঙ্গবন্ধু হত্যা ও ক্ষমতা দখলের প্ল্যানটি খন্দকার মােশতাক ১৫ই আগস্টে ১৯৭৫ সনের পূর্বেই অবগত। অথচ মােশতাক আজ সাফাই গাইছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নাকি তিনি পূর্বাহ্নে জানতেন না।১৫ অথচ মােশতাক প্রেসিডেন্ট হয়ে সূর্য সন্তানদের বিচার করা যাবে না বলে এক বিশেষ অধ্যাদেশ জারী করে। শুধু তাই নয়, এই খুনী চক্রকে নিরাপদে বিদেশে যাবার যাবতীয় ব্যবস্থা করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বােন্টার, কাইসার এবং মােশতাক। প্রেসিডেন্ট জিয়া বিদেশে অবস্থানরত এই চক্রের ১২ জনকে বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশে দূতাবাসে চাকুরী দেন ফরেন মিনিস্ট্রির ডেপুটেশনে এবং ১৯৮০ সালে তাদেরকে বিসি এস ফরেন সার্ভিস ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা। হয়। ফারুক ও রশিদ চাকুরী না নিয়ে লিবিয়ায় অবস্থান করতে থাকে। ত্রিপােলীতে দুই জনে ব্যবসায় নেমে পড়ে। ব্যবসায় ছদ্ম আবরণে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করে এবং গাদ্দাফীর বিপ্লবী ইসলামিক সমাজতন্ত্র কায়েমে কার্যকর প্রয়াস চালাতে থাকে। শােনা যায়, এই ক্যাম্প থেকে ট্রেনিং পাওয়া বাংলাদেশীর সংখ্যা প্রায় শ খানেক যারা এখন বাংলাদেশে তৎপর।১৬। কর্নেল রশীদের ব্যবসায়িক পার্টনার জ্যাক উইলিস—(যিনি ইন্টারন্যাশনাল কনসােসিয়েটস ইনকর্পোরেটেড- এর প্রেসিডেন্ট, যার সদর দপ্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়) এবং অন্য একজন মার্কিন নাগরিক টমাস গ্যারিটি উভয়ে মেসিন গান, রাইফেল, গ্রেনেড প্লাস্টিক বােমা রশিদ- ফারুকের জন্য জোগাড়ের প্রয়াস চালায়।
এগুলাে নিয়ে আই ডি বি কোস্টার ১৯৮৩ সনের ২৪শে এপ্রিল ব্রিটেন থেকে যাত্রা করে। তুরস্ক ও গ্রিসের মাঝামাঝি জায়গা থেকে ৫৪ কেস মেশিন গান, গ্রেনেড ও গােলাবারুদ পিরেউস বন্দরে গ্রিক কর্তৃপক্ষ আটক করে।” ১৯৮৫ সনের ১৭ই মে, পুনরায়, পানমার রেজিস্ট্রিকৃত অন্য একটি জাহাজ ইটালি কর্তৃপক্ষ আটক করে। তল্লাসী করে পাওয়া যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ২৭টি ৭.৬৫ মিলিমিটার মেশিন গান রাইফেল, ২৮৯৫টি ১০৫ মিলিমিটার কামানের গােলা, ১২৩৮ টি ১০৫ মিলিমিটার। কামানের শেল চার্জ ও ১০৬ রিকেয়েলেস কামানের ৫০০টি গােলা। ঐ অস্ত্রশস্ত্রের সঙ্গে জাহাজে দুই জন বাঙালিকে পাওয়া যায়। তাদের নাম। মােহাম্মদ হায়দার আলী জমাদার ও এ. বি. কে. হামিদ। এ. বি. কে. হামিদ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের একজন সুপরিচিত কর্মী। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রকে ইসলামিক মৌলবাদী ভাবধারার সঙ্গে একীভূত করার ক্ষেত্রে মেজর জলিলের অনুসারী বলে কথিত। জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরের সঙ্গে যােগাযােগ রক্ষা করে চলতেন। এক সাথে তিনি মােশতাক ক্যাম্পের সঙ্গেও সংযােগ রাখতেন মাহবুব আলম চাষীর মাধ্যমে।১৮ শুধু তাই নয়, জিয়াউর রহমানের এ. ডি. সি ক্যাপ্টেন জিলুর ও ক্যাপ্টেন মােখলেসের দ্বারা তােফায়েল আহমদের সঙ্গেও তিনি যােগাযােগ রাখতেন।১৯ ‘রংপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর অপারেশন শিরােনামে সি, আই-এর ডকুমেন্ট ঃ (রিপাের্ট নং ৩১১/০৮৪১২-৭১ তাং ৩রা ডিসেম্বর ১৯৭১), এখানে মেজর তাহের তদানীন্তন ব্রিগেডিয়ার জিয়ার ডেপুটি হিসেবে ময়মনসিংহ এলাকার সাব সেক্টর কমান্ডার হিসেবে নিয়ােজিত ছিলেন। সেই থেকে তাদের নিবিড় যােগাযােগ। জিয়া তাহেরকে সেই সময় থেকেই ব্যবহার করতে থাকে।২০
সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যা পরিকল্পনার বিষয় ৫ মাস পূর্বেই জেনেছিলেন। হত্যাকারীদের অন্যতম মেজর ফারুক এ কথা তাকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু জিয়া কোনাে প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। অথবা চলতি চক্রান্তের আসন্ন পরিকল্পনা রাষ্ট্রপতিকে জানাননি। যদিও সেনাবাহিনীর চাকুরির শর্তে এই ধরনের পরিকল্পনার বিষয় অবগত থাকা সত্ত্বেও তা না জানানাে গুরুতর অপরাধ । এন্থনী ম্যাসকারেনহাস বলেছেন : আমিই ফারুক ও রশীদের সাক্ষাৎকার নেই। এ সময়েই ফারুক আমাকে বলে সে জেনারেল জিয়াকে ১৯৭৫ সালের ২০শে মার্চ জানিয়েছিলেন তারা সরকার পরিবর্তন করতে চায়। জেনারেল জিয়া তাদের বলেন “দুঃখিত আমি জংগী কিছু করতে পারবাে না। তােমরা ইয়ং অফিসার যা খুশী করাে গিয়ে। কোরান ছুঁয়ে ফারুক আমাকে এ কথা বলেছে। জুলাই মাসে ঢাকা এসে আমি জেনারেল জিয়াকে এ কথা ঠিক কিনা জিজ্ঞেস করি। তিনি  বলেছিলেন, ভেবে দেখবেন আমার প্রশ্নের জবাব দেবেন কিনা।”২১ “শেখ সাহেবের হত্যার সঙ্গে তার (কর্নেল তাহের) জড়িত থাকার বিষয়টি বহুল আলােচিত। এই হত্যা ষড়যন্ত্রের কিছু আভাসতে শেখ সাহেবের জীবদ্দশাতেই পাওয়া গিয়েছিল। ঐ গ্রুপে কারা জড়িত থাকার সম্ভাবনা ছিল সেটা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর জেনারেল ওসমানী তাদের ছাপান্ন জনকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ সাহেব তাদের অনুমােদন দিলেন না। বরং তাদের বিভিন্ন জায়গায়। উচ্চতর ধাপে বহাল করলেন। কর্নেল তাহেরকে তিনি আরাে কাছাকাছি নিয়ে এলেন। অপরপক্ষে যে জ্বলােক ঐ হত্যা ষড়যন্ত্র ফাস করে | দিয়েছিলেন উল্টা সেই ভদ্রলােককেই চাকুরীচ্যুত করা হয়েছিল। তাঁর পরিচয়? তিনি মেজর (অব.) মুজিব। বরিশালের অধিবাসী। তাকে চাকুরী থেকেও শেষ করে দেয়া হল।
হ্যা, তবে এটা শেখ সাহেব করেননি এ কাজ করেছেন সেনাবাহিনীর অফিসাররা। মেজর মুজিব ঐ চাকুরীচ্যুতির বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। আমি শেখ  সাহেবকে বললাম : মেজর মুজিবকে সেনাবাহিনী থেকে অপসারণ করে। সেনাবাহিনীর লােককে এ জাতীয় ষড়যন্ত্রের জন্য পরােক্ষভাবে উৎসাহ  দানই করা হলাে। তাকেও তাে খেয়ে পরে বাঁচতে হবে। তাঁকে বেসামরিক বিভাগে একটি চাকুরী দিন। তখন তিনি কি জবাব দিলেন? কাইয়ুম ভাই, আমি কি করব। তােফায়েলকে বলুন।’২২ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অনুসন্ধানে বারবার রক্ষীবাহিনীর প্রসঙ্গটি এসে যায়। কারণ দেশে-বিদেশে অপপ্রচার। চলেছিল রক্ষীবাহিনী হলাে মুজিবের প্রাইভেট বাহিনী। বঙ্গন্ধুর হত্যা প্রাক্কালে রক্ষীবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে বিতর্ক বিদ্যমান। আর রক্ষীবাহিনীকে কেন্দ্র করে তােফায়েল আহমদের ভূমিকাও পরিষ্কার নয়। যেমন জনৈক প্রাক্তন মন্ত্রী এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “তােফায়েল ওয়াজ নট দি এডমিনিস্ট্রেটিভ হেড অফ রক্ষীবাহিনী এটা ঠিক। সে এডভাইজার ছিল। তিনি রক্ষীবাহিনী অফিসে নিজে গিয়েছিলেন, না তাকে অন্য কেউ। নিয়ে গিয়েছিল তা আমার মনে নেই। তবে তার সাথে এই প্রসঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল। তিনি আমাকে বলেন তখন এ ধরনের সিদ্ধান্ত তাে। জাতির জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারতাে। আমি একা এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা ডিসিশন নিতে পারি না। তাই নেইনি।”২৩বঙ্গবন্ধু আসন্ন ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আঁচ করতে পেরেছিলেন। তিন ৩২ নং বাসাটাকে যাদুঘর করার কথা চিন্তা করেছিলেন, একই সাথে তিনি শেখ মুজিবের জন্য বনানীর একটি বাড়িতে থাকার ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন। তিনি নিজেও বঙ্গভবনে থাকার কথা ব্যক্ত করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু তার নিরাপত্তার ব্যাপারে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করেছিলেন।২৯। “একদিন রাত দশটার সময় আমরা গণভবন থেকে বেরিয়ে আসছি। হঠাৎ তাহের উদ্দিন ঠাকুর শেখ সাহেবের গাড়িতে উঠলেন। তারপর শেখ সাহেব অট্টহাসি দিলেন। মােশতাক ভাই ছিলেন, তােফায়েলও ছিল যদূর মনে পড়ে। আমি মােশতাক ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম তাহের ঠাকুরকে বঙ্গবন্ধু গাড়িতে নিলেন কেন? গাড়িতে উঠিয়ে আবার অট্টহাসিই বা কেন দিলেন মােশতাক ভাই বললেন, আমি কেমন করে বলব। মনে হচ্ছে তাহের ঠাকুরকে মন্ত্রীপদ থেকে ড্রপ করবে। … শেখ সাহেব খুব ভােরে উঠতেন। আমি গেলে আমাকে সঙ্গে নিয়ে নাশতা করলেন। তার পর গণভবনে পেীছে জিজ্ঞাসা করলাম, কালতাে গাড়িতে তাহের। ঠাকুরকে সঙ্গে নিলেন মােশতাক ভাই বললেন, তাকে নাকি আপনি ড্রপ। করবেন। এ কথায় রাগের কি হলাে বুঝলাম না। উনি বললেন, সবগুলাকে দেখে নেবাে। একটাকেও ছাড়ব না।২৫ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যখন প্রচণ্ড গোলাগুলি চলছিল তখন আশে পাশের বাড়ির লােক জেগে যায়। তদানীন্তন বাকশাল প্রেসিডিয়ামের সদস্য জনাব মহিউদ্দিন আহমদের বাড়ি বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে একটু দূরে। প্রচণ্ড গােলাগুলির শব্দে তাঁর ঘুম ভেঙ্গে যায়। তিনি অনুমান করলেন বঙ্গবন্ধুর বাড়ির আশে আশে গােলাগুলি চলছে। বঙ্গবন্ধুকে টেলিফোন করলেন। টেলিফোন এনগেজড।
তিনি তাড়াতাড়ি সর্বজনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী সাহেবের বাসায় টেলিফোন করেন, কিন্তু সেখানেও কেউ টেলিফোন ধরেনি। অতঃপর তিনি খন্দকার মােশতাককে টেলিফোন করলেন। খন্দকার মােশতাক টেলিফোন ধরলে জনাব মহিউদ্দিন বললেন, মােশতাক এদিকে খুবই গােলাগুলি হচ্ছে। মােশতাক জিজ্ঞেস করল- কোথায় গােলাগুলি হচ্ছে? মহিউদ্দিন আহমদ বললেনঃ বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে। মােশতাক খট করে টেলিফোন রেখে দিল। বলাবাহুল্য, মােশতাকের রাত ২ টায় ঘুমানাে ও সকাল ১০টায় ওঠার অভ্যাস। সেদিন ভাের ৫টায় জেগেছিল কেন?’২৬ ১৯৭৫ সনের ৪ঠা নভেম্বর। সন্ধ্যার সময় বঙ্গভবনে এল। মােশতাক এবং তার মন্ত্রী পরিষদ। কর্নেল শাফায়াত জামিল এলেন তার গ্রুপ নিয়ে। সশস্ত্র । মােশতাককে ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত করলেন। ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যােগ থাকার জন্য অভিযুক্ত করলেন জেনারেল ওসমানী, মেজর জেনারেল খলিলুর রহমানকে। বললেন তাদের ইউ অলসাে পার্টি টু দেম। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে আপনারা জড়িত ।২৭ প্রশ্ন জাগে, ঐ দিন মন্ত্রী পরিষদের অন্যান্য সদস্য বাদে শুধুমাত্র তাহের। উদ্দিন ঠাকুর, কে, এম, ওবায়দুর রহমান, শাহ মােয়াজ্জেম হােসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুরকে কেন গ্রেফতার করে রাখা হয়েছিল? কেনই বা মন্ত্রীপরিষদের বাইরে ইত্তেফাকের অন্যতম মালিক মইনুল হােসেনকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল? ১৯৭৫ সনের ১৫ই আগস্ট। সকাল হতে আবছা মেঘের আঁধারে একটি গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয় ঢুকলাে। পূর্ব দিক থেকে, পশ্চিমে গেল, বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরল। তারপর চলে গেল। ওদিকে তখন শেখ মুজিবের বাড়িতে গােলাগুলি চলছে। গাড়িটির বিবরণ ও প্লেট নম্বর প্রফেসর সরদার ফজলুল করিম দেখলেন, গাড়িটি মার্কিন দূতাবাসের। অত সকালে গাড়িটি কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিল?২৮

সূত্রঃ ফ্যাক্টস্ এন্ড ডকুমেন্টস্  বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড  অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!