You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ৮ই জুলাই, সোমবার, ২৩শে আষাঢ়, ১৩৮১

এবার ইস্পাত কারখানা বন্ধ হবার পথে

প্রতিটি খাতেই যেন লোকসানের প্রতিযোগিতা চলছে। এবারে চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানাও উৎপাদনের জন্য মাসে প্রায় কোটি টাকা লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে। ‘বাংলার বাণী’র বিশেষ প্রতিবেদনে বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যম দিয়ে বলা হয়েছে যে, চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানার পাঁচটি ইউনিটের ৩টি বন্ধ হয়ে গেছে এবং বাকি দুটি সত্বরই বন্ধ হবে। কারখানার চারটি ফার্নেসের মাত্র একটি চালু আছে–বাকি তিনটি বন্ধ রয়েছে। ফলে বছরে আড়াই লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন এর পরিবর্তে মাত্র ৭৫ হাজার টন ইস্পাত উৎপাদিত হচ্ছে। আর এত লোকসানও বিভ্রাটের মূল হল কাঁচামালের অভাবে। বিশ্বস্ত সূত্র আরও জানায়, কাঁচামাল যা আছে তা দিয়ে বড়জোড়ার দিন দশেক ইস্পাত কারখানা টি চলতে পারে।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানায় উৎপাদন লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য বছরে এক লাখ টন কাঁচা লোহা প্রয়োজন। কাঁচামালের সবই প্রায় বাংলাদেশকে বিদেশ থেকে আনতে হয় এবং সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হয়। তবে এসব কারখানায় কাঁচামালের মধ্যে পিন আয়রন ও স্নাপের অভাবেই বর্তমানে খুব প্রকট। এই সরঞ্জামাদির অভাবে উৎপাদনকে অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। এবং শুধু তাই নয়, উৎপাদন যা হয়েছে তার মধ্যে পরিমাণমতো কাঁচামালের সংমিশ্রণ ঘটাতে পারা যাচ্ছে না বলে উৎপাদিত মাল মানের দিক দিয়েও অনেকটা খারাপ হচ্ছে। এই সমাচার গুলির কোনোটিই সুখপ্রদ নয়।
যেহেতু ইস্পাত কারখানার জন্য বিদেশ থেকে কাঁচামাল আনতে হয়, তাই সময় মত তা সংগ্রহ করার প্রশ্ন আছে বৈকি! রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ বার্টার চুক্তির মাধ্যমে একবার ১০ হাজার টন কাঁচা লোহা এবং একবার বার্টার চুক্তি ছাড়াই ১০ হাজার টন কাঁচা লোহা আনবে কথা ছিল। চুক্তি অনুযায়ী যথাক্রমে ফেব্রুয়ারি এপ্রিল মাসের মধ্যেই বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। সেগুলো যথাসময়ে আসেনি এবং বর্তমান অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে।
যথাসময় কাঁচামাল না পাওয়ার কৈফিয়ৎ স্বরূপ বলা হয়েছে জাহাজের অভাবে মাল পাঠানো হয়নি। তাছাড়া বিশেষ মাল পরিবহনের ক্ষেত্রে যেসব জাহাজ আছে তা চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে পারে না। অর্থাৎ ১০ হাজার টনের জাহাজ বন্দরে বেদনা ভরাই বর্তমানের এই মর্মান্তিক অবস্থা সূচিত হয়েছে।
এরই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন জাগে দুটি। প্রথম–চুক্তি করার সময় এদের দিকে খেয়াল রাখা হয়নি কেন? দ্বিতীয়–১০ হাজার টন মালের জাহাজ বন্দরে না ভিড়তে পারলে তার বিকল্প কোনো পথ নেয়া কি সম্পূর্ণ অসম্ভব? অর্থাৎ আমরা বলতে চাই–উৎপাদন হ্রাসের অজুহাত গুলো হয়তো যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে উৎপাদন লক্ষ্যে আমরা যাচ্ছি–এইটেই দেশবাসী দেখতে চায়। আর অজুহাত দেখিয়ে উৎপাদন হ্রাসের লোকসান দেখালেই দায়িত্ব চুকে যায় না। সংশ্লিষ্ট মহলের দায়িত্ববোধের শিথিলতা আজ যে লোকসান ডেকে আনছে–আগামী বছর তাই যে করের সিন্দবাদী বুড়ো হয়ে জনগণের ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসবে এবং দুপায়ে গলায় নির্মম চাপ দেবে–সেই আতঙ্কিত চিত্রও যে মুছে ফেলা যাচ্ছে না।
মূলতঃ দেশের যেসব খাতে আজ কোটি কোটি টাকা লোকসান যাচ্ছে তার সবটাতেই দেখা যায় সংশ্লিষ্ট মহলের চরম উদাসীন্যের স্বাক্ষর। কয়েকদিন আগে জ্বালানি তেলের অভাবে জল পরিবহন বন্ধ হয়ে যাবার আশঙ্কা জানিয়ে যে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে–সেখানেও দেখা যায় সংশ্লিষ্ট মহলের উদাসীন্য ক্রিয়াশীল। চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানার ব্যাপারেও সেই একই কারণ। এর কোনো কৈফত না থাকলেও দিতে চেষ্টা করা হয়। সেইটেই আশ্চর্য কথা।
প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা দেখেছি–পত্রিকান্তরে বিভিন্ন প্রতিবেদনের মারফত সংশ্লিষ্ট বিভাগের দুর্বলতার খবরগুলো পূর্বে প্রকাশিত হয়। তখন কথা ব্যক্তিরা কুম্ভকর্ণের নিদ্রা যান। আর অবস্থা যখন শেষ তলানীতে থাকে তখন তারা সচকিত হন। এই নীতির ঐতিহ্যকেই পরিবর্তিত করতে হবে। কারণ উৎপাদনের মাধ্যমে জাতীয় গড় আয় না বাড়ালে শুধু করের দোহনে অর্থনীতির পাত্র ভরতে পারে না। এটা না জানার কথা নয় । তাই এই সাধারণ সত্য কথা কে স্বীকার করে নিয়ে সর্বতোমুখী চেষ্টার মাধ্যমে দেশীয় শিল্প কারখানার উৎপাদন আজ বহুলাংশে বাড়াতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই–থাকতে পারে না।

জন্ম শাসন আন্দোলন

দক্ষিণ কোরিয়ার মেয়েরা এবছর কোন সন্তান ধারণ করবেন না বলে আন্দোলন চালাচ্ছেন। ৫০০০০ গ্রামের মহিলা কর্মীরা তীব্র গণসংযোগ অভিযান গড়ে তুলেছেন চলতি বছরে গর্ভধারণ এড়িয়ে চলার ধরার জন্য। বিশ্ব জনসংখ্যা বছর পালন উপলক্ষে ১৯৭৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত। জাতিসংঘ জন্মহারের বিস্ফোরক ঊর্ধ্বগতি কমাবার জন্য ১৯৭৪ সালটিকে ‘জনসংখ্যা’ বছর হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেন। কোরিয়ার মেয়েদের এই আন্দোলন তারই কর্মসূচি। পুরুষরা তাদের সহযোগিতা দিচ্ছে। সরকার এগিয়ে এসেছেন সর্বাত্মক সাহায্য নিয়ে। পরিবার পরিকল্পনা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা গণসংগঠনগুলির শাসনের পক্ষে তীব্র জনজোয়ার সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। আন্দোলনের প্রধান সংগঠক ছিলেন কোরিয়ার মহিলাদের ক্লাবগুলির জাতীয় ফেডারেশন ও প্লানড প্যারেন্ট হড ফেডারেশন অব কোরিয়া। এখন এটি একটি জাতীয় সংগ্রামের আকার লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। এই আন্দোলনের সফলতা সম্পর্কে এখন সকলেই আশাবাদী।
জনসংখ্যার ক্রম ঊর্ধ্বগতি চলতি বিশ্বের অন্যতম প্রধান সমস্যা। উন্নয়নকামী দেশগুলির জন্য এটি একটি সংকট। উৎপাদন হার ও জন্মহারের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং জন্মহারের একটি একাধিপত্য জাতীয় জীবন যাত্রার উন্নয়নের প্রধানতম বাধা। বাংলাদেশ তার দুঃখজনক উদাহরণ। প্রতিবছর যতগুলি অতিরিক্ত মুখ জন্ম নিচ্ছে ঠিক ততগুলো অতিরিক্ত মুঠো ভাতও আমরা সংগ্রহ করতে পারছিনা। আনুষঙ্গিক প্রয়োজনীয়তার কথা বাদই দিলাম। জণান্মসনের প্রয়োজন আমাদের অন্যদের চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুতঃ এটাই আমাদের অন্যতম জীবন-মরণ সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান আমাদের খুঁজে পেতেই হবে। কোরিয়ার মেয়েরা আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। নারী সংগঠনগুলো সরকারি সমাজ সেবিকাদের সাথে মিলে গ্রামে গ্রামে অন্ধ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন সম্ভাব্য বধূদের মধ্যে জন্ম শাসনের কুফল সম্পর্কে প্রচার চালাচ্ছেন। সরকার সর্বোত উৎসাহ দিয়ে তাদের কার্যক্রম সফল করার জন্য এগিয়ে এসেছেন। আমাদের নারী মুক্তি আন্দোলনের নেত্রীরা সমাজকর্মীরা এবং সরকার ও জন–সংগঠন গুলি কবে এদিকটার প্রতি কার্যকরী দৃষ্টি দিবেন সেটাই জিজ্ঞাসা।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!