বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ১২ই সেপ্টেম্বর, বুধবার, ২৬শে ভাদ্র, ১৩৮০
আজ পবিত্র শব-ই-বরাত
আজ পবিত্র শব-ই-বরাত। বিশ্বের সকল মুসলমান ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে এ রাত সৌভাগ্যের রাত। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ এ রাতে একটি বছরের জন্য মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। এ কারণে মুসলমান সমাজের কাছে এটা বড়ই পূণ্যের রাত। বিশ্বের অনেক জাতিই এইদিন পালন করেন। মুসলমান সমাজের গণ্ডি পেরিয়েও শব-ই-বরাত পালিত হয় অনেক জাতির ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে। বাংলাদেশের মানুষ মূলত ধর্মপ্রাণ। ধর্মের প্রতি তাদের একটি মহৎ আনুগত্য রয়েছে। এ কারণে শব-ই-বরাত আমাদের একটি মর্যাদাসম্পন্ন সরকারি ছুটির দিন। সরকার ও তার প্রচার বিভাগ এদিনের মাহাত্ম্য প্রচার করে থাকেন। ধর্মের দ্বারা মানুষ বিপথগামী হয় না। তবে ধর্মের অন্ধত্ব অনেক সময় মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে। ধর্মের উদারতা সে জন্যেই আমাদের কাম্য। বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এটা শুধু রাষ্ট্রীয় মূল আদর্শের অন্যতম নয়, আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুরও একটি মৌলিক আদর্শ। তিনি দেশের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিন্দু ও বৌদ্ধদের মিলিত ভালোবাসার ধন। তিনি সকলের ধর্মকে সমান মর্যাদা দেন। বাংলার মুসলমান ধর্মপ্রাণ মানুষের জন্য যেসকল পবিত্র দিবস রয়েছে সেগুলো মর্যাদার সঙ্গে যেমন পালিত হবে তেমনি পালিত হবে অন্যান্য ধর্মের মানুষের পবিত্র দিবসও। শব-ই-বরাত পবিত্র দিন। এ দিনে আমাদের মুসলমান সমাজের শপথ হোক দেশকে নতুন করে গড়বো। মানবতার কল্যাণের জন্য সকল সহযোগিতা প্রদান করবো। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে নিজের পবিত্রতা দিয়ে সংগ্রাম করার শপথ নিতে হবে এদিনে। সৌভাগ্যের এ রজনীতে আমরা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের কল্যাণ ও মুক্তির সংগ্রামরত মানুষের বিজয় কামনা করি। দেশের সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার হবার আশীর্বাদ কামনা করি।
কয়লা আনয়নে ঘাপলা কেন?
কয়লার অভাবে গত তেসরা সেপ্টেম্বর থেকে সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপের কাজ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে রয়েছে। ফলে ওয়ার্কশপের ৬ হাজার শ্রমিক বেকার অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। এদিকে কয়লা বাড়ন্ত এ কথাটা কিন্তু ওয়ার্কশপ কর্তৃপক্ষ অনেক আগেই সরকারকে অবহিত করেছিলেন, কিন্তু কোনো ফল হয়নি বলেই জানা গেছে।
বর্তমানে দেশে যে কয়লার অভাব উপরোক্ত খবরটুকু তার একটি সাধারন নমুনা মাত্র। কয়লার অভাব বহুদিন আগ থেকেই। এর আগেও শোনা গিয়েছিল যে, কয়লার অভাবে রেল ইঞ্জিন এবং মোটর লঞ্চ-স্টিমারে চলাচল বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। স্বাধীনতার পর পরেই দেশে কয়লা সংকটের তীব্রতা অনুভূত হলেও তখন সেই সংকট উত্তরণের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো বন্ধুরাষ্ট্র থেকে সাময়িক চাহিদা মোতাবেক কিছু কয়লা আনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল বটে। কিন্তু সেখানেই শেষ। এরপর আর নতুন করে কোন কয়লা আমদানি করার ব্যবস্থা হয়েছে, এমনটি শোনাও যায়নি। ভেতরের খবর যারা জানেন তারাই কেবল তা বলতে পারেন।
শোনা যায়, ভারত থেকে কয়লা আনার ব্যাপারে বেশ কিছু আমলাতান্ত্রিক ঘাপলা সৃষ্টি হয়েছে, যাতে করে এই মাসেই বাংলাদেশ-ভারত চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে তার আওতাধীন ২ লাখ টন ছাড়াও ভারত প্রতিদিন ৭৫ ওয়াগন করে কয়লা পাঠানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো, তা রক্ষা করাও সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশের কিছু আমলার সাথে ভারতীয় বৃহৎ ব্যবসায়ী চক্রের কারসাজিই মূল কারণ বলে অনেকে মনে করেন। এই কারসাজির পেছনে রয়েছে উভয় দেশের মধ্যকার সরকারি পর্যায়ে বাণিজ্যচুক্তি ব্যর্থ করে চোরাইপথে আশ্রয় গ্রহণ এবং সেই কারসাজির শিকারে পড়ে ভুগছেন জনগণ।
অন্যদিকে বাংলাদেশে প্রতি বছর কতটন কয়লার প্রয়োজন এবং তার কতটা ভারত থেকে আসবে এবং কতটা সংগ্রহ করা হবে অন্য সূত্র থেকে এ যাবতও সরকারি পর্যায়ে তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি বলেও শোনা যাচ্ছে। এমতাবস্থায় কয়লা সংকট এদেশে স্বাভাবিক করেই তোলা হয়েছে।
অপরদিকে পাকিস্তান আমলের আবিষ্কৃত জামালগঞ্জ, ফরিদপুর ও ফেনী অঞ্চলের কয়লা উত্তোলনের ব্যাপারে এযাবৎ কোন বাস্তব ও কার্যকরী ব্যবস্থা নেবার কথা শোনা যায়নি। জামালগঞ্জে বাংলাদেশের যে কয়লার ভান্ডার রয়েছে জরুরী ভিত্তিতে তাদের উত্তোলন করার ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তবে এদেশে কয়লা সংকট এদেশে সব সময়ই থাকবে।
কতৃপক্ষ কিছু বলুন–কিছু করুন
রহস্য উপন্যাসের মতো ঘটনার জটিলতা দিনের পর দিন বাড়ছে। পত্র-পত্রিকায় নানা রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে, বিভিন্ন মহল থেকে ব্যক্ত করা হচ্ছে নানা অভিমত। কেউ বলছেন এটা দুষ্কৃতিকারী অপরাধীদের আভ্যন্তরীণ বিরোধের ফল, কেউ আবার এর ওপর রাজনৈতিক রং ছড়িয়ে বাজিমাত করতে ব্যস্ত। বিশেষ করে ঘটনাস্থল যখন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর এবং ঘটনার তিন দিন পূর্ব থেকে যেখানে একটা অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজমান তখন রাজনৈতিক রং ছড়িয়ে ফল লাভ কিছু অসম্ভব নয়। কিন্তু যে পরিবারের সন্তানরা হত্যার শিকারে পরিণত হল তাদের কি হবে? তারা কি সান্ত্বনা নিয়ে বেঁচে থাকবে? যারা নিহত হয়েছেন তাদের কি পরিচয়, তারা কি অপরাধ সংগঠিত করেছিল সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। রাত সাড়ে দশটায় পাঁচজন যুবককে চোখ বেঁধে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড় করিয়ে যে হত্যালীলা সমাধা করা হলো তা শুধু দেশে নয় বিদেশেও যে কি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে তা কি একবার কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখছেন? কারা এই হত্যার নায়ক? হত্যার অভিযোগে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বক্তব্যই বা কি? বুলেটবিদ্ধ পাঁচজনের মধ্যে একমাত্র যে যুবকটি বেঁচে রয়েছে সেই বা ঘটনা সম্পর্কে কি বলছে?
আমরা বুঝি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সমূহকে যথার্থ সর্তকতা এবং গোপনীয়তা বজায় রেখে অগ্রসর হতে হচ্ছে। কিন্তু তাদের চরিত্র সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি কিছু বলতে পারেন না। পারেন না কি এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সৃষ্ট নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটাতে? গতকাল ‘বাংলার বাণী’তে বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তা যদি সত্য হয় তবে কি মনে করা যেতে পারে না যে, এক শ্রেণীর লোক বিদেশে বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুন্ন করার জন্য বিশেষ উৎসাহিত হয়ে উঠেছে। ঘটনার রাতে জাতিসংঘের জন কর্মকর্তাকে টেলিফোন করা এবং বিদেশি সাংবাদিককে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আহ্বান জানানোর পেছনে অন্য কী কারণেই থাকতে পারে?
দেশের ক্রম অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমনিতেই জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। মানুষ আজ আর জানমালের নিরাপত্তা বোধ করছেন না। খুব শিগগিরই যে এর একটা সুরাহা হবে এটাও আজ আর অনেকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। এমতাবস্থায় বিদেশে আমাদের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা এবং দেশের মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আনার জন্য সরকার কতটুকু উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসে সেটা আমরা দেখতে চাই। অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সময়ের প্রয়োজন সেটা সরকার যেমন বোঝেন, দেশবাসী তার চাইতে কম বোঝেন না। কিন্তু আভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্বাভাবিকীকরণ সেটাও কি সময় সাপেক্ষ?
কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক