You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ৮ই সেপ্টেম্বর, শনিবার, ২২শে ভাদ্র, ১৩৮০

লন্ডন থেকে চোরাইপথে টাকা পাঠানো বন্ধ করুন

লন্ডন প্রবাসী বাঙালিরা গত পাঁচ মাস যাবৎ বাংলাদেশে সরকারিভাবে টাকা পাঠাচ্ছেন না। ফলে বাংলাদেশে প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। লন্ডন প্রবাসী বাঙালিরা সরকারিভাবে টাকা না পাঠালেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা চোরাকারবারীদের মাধ্যমে টাকা পাঠানোটাকেই লাভজনক বলে মনে করছেন। গতকাল প্রকাশিত বাংলার বাণীর এক বিশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য অবগত হয়েছি। আমরা জানতে পেরেছি যে, লন্ডন থেকে প্রেরিত টাকা প্রাপকের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বিলম্বিত নীতি এবং গড়িমসির ফলেই প্রবাসী বাঙালিরা, মুদ্রা চোরাকারবারিদের খপ্পরে পড়েছেন। এই পরিস্থিতি প্রতিরোধ করার জন্য সরকার এখনও পর্যন্ত কোনো কার্যকর এবং বাস্তবভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। অথচ স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লন্ডন প্রবাসী বাঙালিদের এক সমাবেশে স্বদেশের টাকা পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রবাসী বাঙালিরা এতে দারুণ উৎসাহিত হয়েছিলেন এবং লন্ডন থেকে টাকা পাঠাতে শুরু করেছিলেন। হিসেব অনুযায়ী তখন প্রতি মাসে বাংলাদেশে প্রায় সাত থেকে আট কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আসতো। কিন্তু গত পাঁচ মাসে বাঙালিরা তেমন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা সরকারি পর্যায়ে পাঠাননি। বরং ব্যাংকের গড়িমশিজনিত কারণে তারা কালোবাজারিদের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে শুরু করেছেন। এই ব্যবস্থার ফলে বাংলাদেশ মাসে মাসে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে যে, ব্যাংকগুলোর গাফিলতির ফলে লন্ডন থেকে বাংলাদেশের টাকা আসতে প্রায় একটি মাস লেগে যায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাপক দু’মাসেও টাকা পান না। প্রবাসী বাঙ্গালীরা এই বিলম্বিত লয়ের কারণে নানা দুর্ভোগের কবলে পতিত হন। আবার এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে যে, চেক জমা হলেও ব্যাংক গুলো নাকি টাকা আসেনি কিংবা টাকা নেই বলে জানিয়ে থাকেন। এইসব ঝক্কি-ঝামেলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্যই প্রবাসী বাঙালিরা চোরাপথের লন্ডন থেকে টাকা আনার ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন এবং প্রবাসী বাঙালিরা কালোবাজারিদের মাধ্যমে ইদানিং টাকা পাঠাচ্ছেন। জানা গেছে, ঢাকা এবং সিলেটের একটি সংঘবদ্ধচক্র মুদ্রা চোরাচালানী কর্মে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে চলেছে। এর ফলে আর্থিক দিক থেকে বাংলাদেশ সরকার চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে আমাদের বক্তব্য হলো, লন্ডন প্রবাসী বাঙালিদের প্রেরিত টাকা প্রাপক যাতে দ্রুত হস্তগত করতে পারে, সে জন্য কি ব্যাংকগুলো একটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন না? চোরাইপথে মুদ্রা লেনদেনের এই ব্যাপারটি রোধ করার জন্য অবিলম্বে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার বলে আমরা মনে করি। আমরা চাই, কোন ক্রমেই যেন দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে না পড়ে। দেশের অর্থনীতিকে পাকাপোক্ত রাখার জন্যই আজ লন্ডন থেকে প্রেরিত টাকা প্রাপককে যথাসময়ে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নইলে মুদ্রা চোরাকারবারীরা সমস্ত ফায়দা লুটে নেবে। লন্ডন প্রবাসী বাঙালিরা প্রথম প্রথম যেভাবে সরকারি পর্যায়ে টাকা পাঠাতেন এখন থেকে যেন সেই ভাবে টাকা পাঠানো অব্যাহত থাকে, সেই চেষ্টা করতে হবে। এবং যথাসময়ে টাকা প্রাপক যেন পায় তারও বিধান করতে হবে। এ ব্যাপারে ব্যাংকগুলোর গাফিলতি পরিস্থিতির অবনতি ছাড়া উন্নতি ঘটাতে পারে না বলে আমরা মনে করি। এবং কামনা করি সরকার অবিলম্বে একটা কিছু সুগম ব্যবস্থা অবলম্বন করবেন।

কৃষি প্রকল্পের সমস্যাগুলোকে দূর করতে হবে

কৃষি প্রকল্প গুলো বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে -এ ধরনের বহু অভিযোগ নানা স্থান থেকে পাওয়া যাচ্ছে এবং স্থানীয় দৈনিক গুলোতেও প্রকাশ পাচ্ছে। উদ্ভূত সমস্যা গুলোর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ঔষধ, ওয়াটার পাম্প, মেশিন ইত্যাদি এবং এগুলোর খুচরা যন্ত্রাংশের অভাব সর্বশেষ উল্লেখ্য। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য যে, সরকার সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছেন এবং এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে মাঝেমধ্যে ঘোষণাও শোনা যায়। কিন্তু সত্যিকার অর্থে কতটুকু কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এক্ষণে সেটাই বিবেচ্য বিষয়।
সরকার সবুজ বিপ্লব সাধন করে খাদ্যে স্বনির্ভর করে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলার চাষী ভাইয়েরা সে আহবানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসছেন যদিও তারা এ ব্যাপারে প্রাথমিক জ্ঞানও লাভ করতে পারেননি। সবুজ বিপ্লব বাস্তবায়িত করতে হলে চাষি ভাইদেরকে সমবায়ের মাধ্যমে ছোট ছোট খামার প্রতিষ্ঠা করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আধুনিক চাষাবাদ নিয়োজিত হতে হবে। অথচ আমাদের দেশের কৃষক ভাইদের এসব বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞানটুকুও নেই বললেই চলে। সুতরাং কৃষি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রেক্ষিতে সবকিছু গোড়া থেকে শুরু করতে হবে। এবং যেহেতু এ বিষয়ে আমাদের দেশের কৃষক ভাইয়েরা অজ্ঞ সুতরাং প্রকল্পগুলোর শুরুতেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ও জিনিসপত্রের ব্যবস্থা করতে হবে। এবং সবকিছু যোগাড় রেখে কাজ আরম্ভ করা দরকার যাতে করে পরিকল্পিত প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতে খাদ্যে স্বনির্ভর হওয়া নিশ্চিত সম্ভাবনা চাষী ভাইয়েরা প্রত্যক্ষ করতে পারেন এবং অনুরূপ পদ্ধতিতে চাষাবাদে উৎসাহ-অনুপ্রেরণা লাভ করেন। কিন্তু তা না হয়ে প্রকল্পগুলোর মাঝপথে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে একদিকে যেমন কৃষক ভাইয়েরা নিরুৎসাহিত হবেন অপরদিকে সবুজ বিপ্লব সাধন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। দেশের বর্তমান অবস্থায় সেই ব্যর্থতা যে কি মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে সে কথা বলাই বাহুল্য। সুতরাং এ ব্যাপারে আমরা কৃষি মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করে সবুজ বিপ্লব সাধন উদ্ভূত সমস্যাবলী অত্যন্ত জরুরী ভিত্তিতে সমাধানের কার্যকরী ব্যবস্থা নেবার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করছি।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!