You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
১৭ই আগস্ট, শুক্রবার, ১৯৭৩, ৩২শে শ্রাবণ, ১৩৮০ বঙ্গাব্দ

উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুত বিভ্রাট প্রসঙ্গ

সংবাদে প্রকাশ, গোয়ালপাড়ার ষাট মেগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন পাওয়ার স্টেশনটি গত বুধবার থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। জানা গেছে, এটা পরীক্ষামূলকভাবে চালু ছিল। পাওয়ার স্টেশনটি বন্ধ রাখার কারণে খুলনা, যশোর এবং আংশিকভাবে ঈশ্বরদী, রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জ এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি সম্পদ ও শক্তি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, গোয়ালপাড়া স্টেশনের তিনটি গ্যাস টারবাইনের মধ্যে দুইটি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রভৃতির অভাবে সম্পূর্ণ অচল হয়ে রয়েছে। অবশিষ্টটি ছয় মেগাওয়াটের জায়গায় চার মেগাওয়াট শক্তি হিসাবে চালু করায় মোট চাহিদার ঊনচল্লিশ মেগাওয়াটের স্থলে ষ্টিম ডিজেল পাওয়ার স্টেশনসমূহের উৎপাদিত বিদ্যুত নিয়ে মোট দাঁড়াচ্ছে তেইশ মেগাওয়াট। আরো জানা গেছে, গোয়ালপাড়ার গ্যাস টারবাইনগুলো এক নাগাড়ে বিশ হাজার ঘন্টা কাজ করেছে যদিও আট হাজার ঘন্টা কাজ করার পর তাদের বিরতি প্রয়োজন ছিলো। এতদসত্ত্বেও বর্তমানে রপ্তানীযোগ্য পণ্য উৎপাদন করা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে বিদ্যুত পাবার অগ্রাধিকার দেওয়া সত্ত্বেও সন্ধ্যে সাড়ে ছয়টা থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত মিলগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এক হিসাবে জানা গেছে, এমনি রেশনিং বিদ্যুত ব্যবস্থার দরুণ খুলনা ও যশোর জেলার পনেরোটি মিলের উৎপাদন পঁয়ত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া পাকশীর কাগজের মিল ও সিরাজগঞ্জের কওমী জুট মিল সহ দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন শিল্পে এই বিদ্যুত বিভ্রাট এক অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে। সরকারের প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অপ্রতিরোধ্য উদ্ভাবিত কারণ হলেও উল্লেখিত এ বিদ্যুত বিভ্রাট একটি সাংঘাতিক ক্ষতির কারণ হয়েছে। দেশের এক বুহৎ শিল্পাঞ্চলের উৎপাদন নিদারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমাদের কর্তৃপক্ষ কোন বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হননি। যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাতে করে বেশ কিছুদিন শিল্প-কারখানাকে ক্ষতি স্বীকার করতে হবে। এ ক্ষতি রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির উপর একটি মারাত্মক আঘাতস্বরূপ। দেশের বর্তমান ভেঙে পড়া অর্থনীতির ক্ষেত্রে এ ধরনের অচলাবস্থা নিঃসন্দেহে নিদারুণ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পাওয়ার স্টেশনটির সংস্কারের কাজ দ্রুত করবেন বলে আমরা আশা রাখি। দেশের অর্থনীতির এক বিরাট অংশ পর্যুদস্ত হচ্ছে একথাটা মনে রেখে বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ জরুরী ভিত্তিতে কাজটি সমাধা করবেন। বিশেষজ্ঞ প্রেরণ করেই সমস্যার সমাধান হবে এটা ভেবে বসে থাকা ঠিক নয়, বরং অত্যন্ত ও আন্তরিকতার জরুরী ভিত্তিতে গোয়ালপাড়া পাওয়ার স্টেশনটির সংস্কার সাধন হবে বলে আমরা আশা রাখি।

চিলি : দক্ষিণপন্থীদের তৎপরতা অব্যাহত

ক’দিন আগে চিলিতে যে নতুন সরকার গঠন করা হয়েছে তার মূল লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিলো জাতীয় নিরাপত্তা এবং সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধ থেকে চিলিকে রক্ষা করা। এই নয়া সরকার গঠনের পর ক’দিন যেতে না যেতেই স্বয়ং প্রেসিডেন্ট আলেন্দের বেতার ভাষণ দক্ষিণপন্থী সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা বাঁধাগ্রস্ত হয়। বিবিসি প্রচারিত খবর অনুযায়ী এই সন্ত্রাসবাদীরা প্রেসিডেন্টের ভাষণ শুরু হবার অব্যবহিত পর বৈদ্যুতিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়, ফলে চল্লিশ মিনিটকাল বেতার প্রচার বন্ধ থাকে। এই সন্ত্রাসবাদীদের অনুরূপ কার্যক্রমের আরো খবর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট আলেন্দে ঐ বেতার ভাষণেই দক্ষিণপন্থীদের কার্যকলাপের উল্লেখ করে বলেন, দেশ এখন এক গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। যদি এই অবস্থা চলতে থাকে তবে তিনি সারাদেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা এবং সামরিক শাসন বহাল করার জন্যে কংগ্রেসের অনুমোদন চাইবেন বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন।
গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের অনুসারী চিলির জনগণ দক্ষিণপন্থীদের এই সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপকে বরদাস্ত করবেন এটা আমরা বিশ্বাস করিনা। প্রেসিডেন্ট আলেন্দে ক্ষমতাসীন হবার পর থেকে চিলিতে যে প্রগতিশীল নীতি অনুসৃত হয়ে আসছে বিগত মার্চের নির্বাচনে অধিকসংখ্যায় আলেন্দে সমর্থকদের স্বপক্ষে ভোটদানের মধ্য দিয়ে সেখানকার জনসাধারণ সে নীতিসমূহকে অনুমোদন করেছেন। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও সেখানে প্রতিক্রিয়াশীল তৎপরতা হ্রাস পায়নি। দেশের অভ্যন্তরের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিই শুধু নয় প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর গণবিরোধী শক্তিও চিলির প্রতিক্রিয়াশীলদের সমর্থনে নৈতিক এবং বৈষয়িক সাহায্য-সহযোগিতা যুগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে দক্ষিণপন্থীদের সমর্থনে একটা সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর প্রচেষ্টাও চিলির শ্রমজীবী মানুষ এবং দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী নস্যাৎ করে দিয়েছে।
সেই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর চিলিতে নব্বুই দিনের জন্যে জরুরী অবস্থা ঘোষণার অনুমতি চেয়ে একটি প্রস্তাব প্রেসিডেন্ট আলেন্দে কংগ্রেসের কাছে রেখেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠ দক্ষিণপন্থী সদস্যেরা তাঁর সেই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে পরোক্ষভাবে চিলিতে দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল কার্যকলাপ অব্যাহত রাখার পথই প্রশস্ত করে দিয়েছিলেন। এখন চরম কোন সংকটের মুখে যথাযথ কোন ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব যদি আদৌ কংগ্রেসের কাছে পেশ করা হয় তবে তা কি এই দক্ষিণপন্থী প্রভাবিত কংগ্রেসের অনুমোদন লাভ করতে সক্ষম হবে? শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের যে নীতি চিলি অনুসরণ করে চলেছে তা কি প্রতিক্রিয়াশীলদের আঘাতে আঘাতে নতুন কোন মোড় নেবে?

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!