বড়ঘাটদিয়া অপারেশন করার পর তৃতীয় দিন তালমা এলাকায় পাকসেনাসহযােগীদের অপারেশনের তারিখ ঠিক করা হয়। ইতিমধ্যে লস্করদিয়া নিবাসী। আওয়ামী লীগ কর্মী আঃ মালেককে খবর দিয়ে এনে উক্ত অপারেশন সম্পর্কে তাকে জানান হয় এবং তার নিকট হতে ঐ এলাকার পাকসেনা সহযােগীদের ও তাদের। কার্যকলাপ সম্বন্ধে আরও সংবাদ সংগ্রহ করি। নির্ধারিত দিনে খুব ভােরে দলের অল্প বয়সী কয়েকজন মুক্তিযােদ্ধাকে স্থলপথে পূর্বাহ্নে পাঠান হল। ভালভাবে দালালদের খোজ ও গতিবিধি সম্বন্ধে জেনে আমরা সেখানে পৌছলে গােপনে যাতে খবর দিতে পারে। তারা লস্কর দিয়া গেলে কে এম হারুন-অর-রশিদ তাদের সাথে মালেক ও তার ছােট ভাই ফারুককে তালমা পাঠান। আমরা অপারেশনের তারিখ তলমা হাটের দিন ঠিক করেছিলাম। দলের কমান্ডার আঃ আজিজ মােল্লা জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি দলের সাথে যেতে পারলেন না। আমাকে বললেন, তুমি মুক্তিযােদ্ধাদের নিয়ে তালমা অপারেশন করে এস।’ সকাল ৮টার দিকে আমরা চান্দহাট কুমার নদী হতে কয়েকখান নৌকায় প্রায় ৩০ জন মুক্তিযােদ্ধাসহ রওয়ানা হলাম। চান্দহাট বড় যুদ্ধের পর এই প্রথম আমরা দিনে নৌকোয় বের হই। তবে স্থানীয় জনসাধারণ আমাদের গন্তব্যস্থলের বিষয় জানত না। নৌকো যখন কাজুলী ভাঙ্গা বিলের মাঝে গিয়ে পৌছল বেলা তখন প্রায় ১টা বাজে। বর্ষাকাল সবেমাত্র শুরু, তাই কোণাকোণি নৌকোয় যাওয়া যেত না।
অন্যদল ভিন্ন দিক হতে নেমে আক্রমণ করল। হঠাৎ আক্রমণ হওয়ায় হাটের লােকজন ভয়ে দৌড় শুরু করল। আমি এমনভাবে ছিলাম। যাতে দেখেই হঠাৎ কেউ চিনতে না পারে। পূর্ব নির্দেশ মতাে ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে অপারেশন শেষ করে সবাই নৌকোয় ওঠে, নৌকা ছাড়ালাম। ওখানে বেশিক্ষণ দেরি করা নিরাপদ ছিল না। কারণ অল্পদূরেই খানসেনাদের যাতায়াতের জন্য সি এন্ড বি রােড ছিল। এই অপারেশনে ৮ জন দালাল মারা যায়। কিন্তু বাদশা শিকদার পালিয়ে গিয়েছিল, তাকে জাফর ধরে ফায়ার করলে মিস ফায়ার হয়। ফলে ছুটে পালিয়ে যায়, তখন আর জাফর তাকে দৌড়ে ধরতে যায়নি। অবশ্য জাফর তাকে বাদশা সিকদার বলে চিনত না। চিনলে নিশ্চয় যেতে দিত না। আলতাফ ও রশিদ যখন স্টেনাে মেশিনগান দিয়ে ব্রাশ। করছিল, তখন পাকসেনা সহযােগীরা এমনভাবে ছটফট করতে করতে মরছিল, যেমন শিকারী পাখির ঝাকের উপর ফায়ার করলে পাখি ছটফট করতে করতে মরে। রাতে টিপ। টিপ করে বৃষ্টি হচ্ছিল। সারা রাত বহু কষ্ট করে ভােরে এসে চান্দহাট পৌছলাম।
সূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন – মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত